আল্লাহ বলেন, তিনিই সেই সত্তা, যিনি স্বীয় রাসূলকে হেদায়াত (কুরআন) ও সত্যদ্বীন (ইসলাম) সহ প্রেরণ করেছেন, যেন তাকে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করে দেন। যদিও মুশরিকরা তা অপসন্দ করে’ (তওবা ৩৩; ছফ ৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও খেলাফতে রাশেদাহর যুগে ইসলামের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিজয় সম্পাদিত হয়েছে এবং আরব উপদ্বীপ থেকে কুফর ও শিরক চিরতরে বিদায় নিয়েছে। পরবর্তীতে উমাইয়া, আববাসীয়, ওছমানীয় খেলাফতের যুগে ইসলামের রাজনৈতিক বিজয় বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হয়েছে। অতঃপর রাজনৈতিক বিজয় সংকুচিত হয়ে গেলেও ধর্মীয় বিজয় সর্বদা ক্রমবর্ধমান রয়েছে। বর্তমানে যা অতি দ্রুতবেগে এগিয়ে চলেছে। মানুষ নাস্তিক্যবাদ ও ভোগবাদের মধ্যে এবং মানুষের মনগড়া ধর্মসমূহে মানসিক শান্তি ও সুখ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে দ্রুত বিশুদ্ধ ইলাহী ধর্ম ইসলামের দিকে ফিরে আসছে। বস্ত্তবাদীরা যতই ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে ও ইসলামী নেতৃবৃন্দের উপর যুলুম করবে, মানুষ ততই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে। এভাবে ইসলাম যখন মানুষের হৃদয় দখল করবে, তখন পৃথিবীর রাজনীতি, অর্থনীতি সবই ইসলামের দখলে চলে আসবে। সেদিকে ইঙ্গিত করেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ভূপৃষ্টে এমন কোন মাটির ঘর বা ঝুপড়ি ঘরও থাকবে না, যেখানে আল্লাহ ইসলামের কালেমা প্রবেশ করাবেন না। সম্মানীর ঘরে সম্মানের সাথে এবং অসম্মানীর ঘরে অসম্মানের সাথে। যাদেরকে আল্লাহ সম্মানিত করবেন, তাদেরকে তিনি মুসলিম হওয়ার তাওফীক দিবেন। আর যাদেরকে তিনি  অসম্মানিত করবেন, তারা ইসলামের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করবে। রাবী বলেন, তাহ’লে তো দ্বীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে (অর্থাৎ সকল দ্বীনের উপর ইসলাম বিজয়ী হবে) (আহমাদ)। অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আমার জন্য পৃথিবীকে সংকুচিত করলেন। তখন আমি তার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত দেখলাম। অদূর ভবিষ্যতে আমার উম্মতের রাজত্ব সেই পর্যন্ত পৌঁছে যাবে, যে পর্যন্ত যমীন আমার জন্য সংকুচিত করা হয়েছিল’ (মুসলিম)

মানুষ সর্বদা বিজয় তার নিজ জীবনে দেখতে চায়। এটাই তার প্রকৃতি। আল্লাহ বলেন, মানুষ বড়ই দ্রুততাপ্রিয়’ (ইসরা ১১)। কোন কোন ক্ষেত্রে দ্রুত বিজয় এলেও স্বাভাবিক নিয়ম হ’ল ধীরগতিতে ধাপে ধাপে আসা। বিশেষ করে আদর্শিক বিজয়ের স্বরূপ হ’ল আদর্শ কবুল করার মাধ্যমেই বিজয় আসা। এজন্য নেতা-কর্মীদের ত্যাগ ও নিরলস প্রচেষ্টা আবশ্যিক হয়। বিরোধীদের হামলা সহ্য করতে হয়। জান ও মাল উৎসর্গ করতে হয়। কিন্তু এটাই বাস্তব যে, ইসলামী দাওয়াতের প্রত্যেক কর্মী সর্বাবস্থায় বিজয়ী থাকে। নিজেকে সে আল্লাহর পথে সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকে। তার হায়াত-মউত, রুটি-রূযী, আনন্দ ও বিপদ, সম্মান ও অসম্মান সবই থাকে আল্লাহর হাতে। ফলে সে মনের দিক দিয়ে সর্বদা সুখী ও বিজয়ী। ইহকালে  বা পরকালে তার কোন পরাজয় নেই। তাদের বিরোধীরা সর্বদা পরাজিত এবং অসুখী। তবে এজন্য মুমিনকে সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা রেখে তাঁরই দেখানো পথে অটুট ধৈর্য্যের সাথে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাতে হয়। পৃথিবীর প্রথম রাসূল নূহ (আঃ) দীর্ঘ সাড়ে নয়শত বছর দাওয়াত দিয়েছেন। নির্মম নির্যাতন সহ্য করেছেন। অবশেষে আল্লাহ তাঁর শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন ও নূহকে বিজয়ী করেছেন। নমরূদ চূড়ান্ত নির্যাতন চালিয়েছিল ইবরাহীমের উপর। কিন্তু অবশেষে সেই-ই ধ্বংস হয়েছে এবং ইবরাহীম (আঃ) বিজয়ী হয়েছেন। ফেরাঊন অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়েছিল নিরীহ ঈমানদারগণের উপর। কিন্তু অবশেষে সে তার দলবল সহ নিশ্চিহ্ন হয়েছিল। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) স্বগোত্রীয় শত্রুদের অত্যাচারে মক্কা থেকে হিজরত করতে বাধ্য হলেন। কিন্তু মাত্র ৮ বছরের মাথায় তিনি বিজয়ী বেশে মক্কায় ফিরে এলেন। এভাবে ঈমানী আন্দোলনের বিরোধিতা যারাই করেছে, তারাই অবশেষে পরাজিত হয়েছে এবং ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

রাজনৈতিক বিজয়কে লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করলে ইসলামী বিজয় বাধাগ্রস্ত হয়। বরং ইসলামী বিজয়কে লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করলে রাজনৈতিক বিজয় ত্বরান্বিত হয়। লক্ষ্য নির্ধারণে ভুল হবার কারণে অনেক দেশে ইসলামী বিজয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ‘ম্যাসাকার’ এমনই একটি ভুলের মর্মান্তিক পরিণতি মাত্র। দৃঢ়চিত্ত, ঈমানদার ও দূরদর্শী নেতৃত্ব ইসলামী বিজয়ের জন্য অপরিহার্য। সেই সাথে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং আল্লাহর নিরংকুশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা যদি কোন আন্দোলনের লক্ষ্য না হয়, তাহ’লে সেখানে আল্লাহর সাহায্য নেমে আসে না। শিরকী আক্বীদা ও বিদ‘আতী আমল প্রতিষ্ঠার জন্য কখনোই আল্লাহর গায়েবী মদদ আসতে পারে না। তাই আপতিত বিপদকে পরীক্ষা হিসাবে মনে করে আল্লাহর নিকটে এর উত্তম প্রতিদান চাইতে হবে। সাথে সাথে আত্মসমালোচনা করে নিজেদের ভুল শুধরাতে হবে। সর্বদা এ বিশ্বাস দৃঢ় রাখতে হবে যে, ইসলাম কখনো পরাজিত হয় না। পরাজিত হই আমরা আমাদের দোষে। আমরা যত ত্রুটিমুক্ত হব, আল্লাহর রহমত তত নিকটবর্তী হবে। সাময়িক বস্ত্তগত বিজয়ে শত্রুরা হাসবে। এটাই ওদের দুনিয়াবী সান্ত্বনা। পরকালে ওরা জাহান্নামের ইন্ধন হবে। ‘তারা চায় মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতিকে নিভিয়ে দিতে। অথচ আল্লাহ স্বীয় জ্যোতিকে (ইসলামকে) পূর্ণতায় পৌঁছানো ব্যতীত ক্ষান্ত হবেন না। যদিও অবিশ্বাসীরা তা অপসন্দ করে’ (তওবা ৩২; ছফ ৮)

বাংলাদেশ পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এ দেশের মানচিত্র নির্ধারিত হয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্টতার ভিত্তিতে। তাই এ রাষ্ট্রটিকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দেয়ার জন্য শিক্ষা, সংস্কৃতি অর্থনীতি ও রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে শত্রুরা কাজ করে যাচ্ছে। ফলে শতকরা ৯০ জন মুসলমানের দেশ বলে আত্মতুষ্টি লাভের কোন সুযোগ এখন নেই। বরং মুসলমান নামধারীরাই এদেশে ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই ইসলামী বিজয়ের আকাংখীগণকে শত্রুদের পাতানো ফাঁদ থেকে বেরিয়ে এসে নবীগণের তরীকায় ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে নেবার আহবান জানাই। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন! (স.স.)






বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
মূর্তি অপসারণ ও পুনঃস্থাপন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মাহে রামাযান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আত্মহত্যা করবেন না - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
জবাবদিহিতার অনুভূতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
২০২৩ সালের সিলেবাস - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
দেশের তরুণ সমাজ বিদেশমুখী হচ্ছে কেন? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
কুরবানীর সংজ্ঞা - .
ধর্মনিরপেক্ষতার ভয়াল রূপ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মানবতা ভাসছে নাফ নদীতে! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নেপালের ভূমিকম্প ও আমাদের শিক্ষণীয় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
যেকোন নাগরিকের ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আত-তাহরীক : যাত্রা হ’ল শুরু (২য় সংখ্যা) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.