পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭ । পর্ব ৮ । পর্ব ৯ ।
ছালাতের ফযীলত
(1) عَنْ أُمِّ رُوْمَانَ قَالَتْ رَآنِيْ أَبُوْ بَكْرٍ أَتَمَيَّلُ فِي الصَّلاَةِ فَزَجَرَنِيْ زَجْرَةً كِدْتُ أَنْصَرِفُ مِنْ صَلاَتِيْ ثُمَّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ فِي الصَّلاَةَ فَلْيَسْكُنْ أَطْرَافَهُ وَلاَ يَتَمَيَّلْ تَمَيُّلَ الْيَهُوْدِ فَإِنَّ تَسْكِيْنَ الأَطْرَافِ مِنْ تَمَامِ الصَّلاَةِ-
(১) উম্মু রূমান বলেন, আবূবকর (রাঃ) আমাকে একদা ছালাতে ঝুঁকতে দেখে অত্যন্ত জোরে ধমক দিলেন। ফলে আমি ছালাত ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হ’লাম। তারপর তিনি বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি ছালাতে দাঁড়ায় তখন সে যেন তার শরীরকে স্থির রাখে। ইহুদীদের মত যেন না ঝুঁকায়। কারণ ছালাতের মধ্যে শরীরে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রাখা ছালাত পরিপূর্ণ হওয়ার অংশ।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[2] এর সনদে হাকাম ইবনু আব্দুল্লাহ নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, এর সমস্ত হাদীছই জাল।[3]
(2) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى الصَّلاَةَ لِوَقْتِهَا وَأَسْبَغَ لَهَا وُضُوْءَهَا وَأَتَمَّ لَهَا قِيَامَهَا وَخُشُوْعَهَا وُرُكُوْعَهَا وَسُجُوْدَهَا خَرَجَتْ وَهِيَ بَيْضَاءُ مُسْفِرَةٌ تَقُوْلُ حَفِظَكَ اللهُ كَمَا حَفِظْتَنِيْ وَمَنْ صَلَّى الصَّلاَةَ لِغَيْرِ وَقْتِهَا فَلَمْ يُسْبِغْ لَهَا وُضُوْءَهَا وَلَمْ يُتِمَّ لَهَا خُشُوْعَهَا وُرُكُوْعَهَا وَسُجُوْدَهَا خَرَجَتْ وَهِيَ سَوْدَاءُ مُظْلِمَةٌ تَقُوْلُ ضَيَّعَكَ اللهُ كَمَا ضَيّعْتَْنِيْ حَتىَّ إِذَا كَانَتْ حَيْثُ شَاءَ اللهُ لُفَّتْ كَمَا يُلَفُّ الثَّوْبُ الْخَلَقُ ثُمَّ ضُرِبَ بِهَا وَجْهُهُ-
(২) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ওয়াক্ত মোতাবেক ছালাত আদায় করে, ভালভাবে ওযূ করে, পূর্ণ ক্বিয়াম, রুকূ, সিজদা করে ও নম্রতা অবলম্বন করে তার ছালাত আলোকোজ্জ্বল হয়ে বের হয় এবং বলে, আল্লাহ তোমাকে হেফাযত করুন যেভাবে তুমি আমাকে হেফাযত করলে। আর যে ব্যক্তি ওয়াক্ত মত ছালাত আদায় করবে না, সুন্দরভাবে ওযূ করবে না, রুকূ-সিজদা করবে না তার ছালাত কালো কুৎসিত হয়ে বের হবে এবং বলবে, আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন যেভাবে তুমি আমাকে ধ্বংস করেছ। অতঃপর সেই ছালাতকে পুরান কাপড়ের মত জড়িয়ে তার মুখে মারা হবে।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি অত্যন্ত দুর্বল।[5] উক্ত বর্ণনার সনদে আব্দুর রহমান ও আবূ উবায়দাহ নামে দু’জন ত্রুটিপূর্ণ রাবী রয়েছে।[6]
(3) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلاَمٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا نَزَلَ بِأَهْلِهِ الضَّيْقُ أَمَرَهُمْ بِالصَّلاَةَ ثُمَّ قَرَأَ وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا الآية-
(৩) আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বলেন, যখন নবী করীম (ছাঃ)-এর পরিবারে অভাব-অনটন দেখা দিত তখন তিনি তাদেরকে ছালাত আদায় করার নির্দেশ করতেন। অতঃপর পড়তেন, ‘আর আপনি আপনার পরিবারকে ছালাতের নির্দেশ দিন এবং আপনিও তার প্রতি অটল থাকুন (সূরা ত্বো-হা ১২৩)।[7]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ।[8] ইমাম ত্বাবারাণী বলেন, আব্দুল্লাহ বিন সালাম ছাড়া এই হাদীছ আর কেউ বর্ণনা করেননি। মা‘মার এককভাবে এটা বর্ণনা করেছে।[9]
(4) عَنْ مُجَاهِدٍ َسُئِلَ ابْنُ عَبَّاسٍ عَنْ رَجُلٍ يَصُوْمُ النَّهَارَ وَيَقُوْمُ اللَّيْلَ وَلاَ يَشْهَدُ جُمُعَةً وَلاَ جَمَاعَةً قَالَ هُوَ فِي النَّارِ-
(৪) মুজাহিদ বলেন, ইবনু আববাস (রাঃ)-কে জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, যে ব্যক্তি দিনে ছিয়াম পালন করে এবং রাত্রে তাহাজ্জুদ পড়ে কিন্তু জামা‘আতে এবং জুম‘আর ছালাতে শরীক হয় না তার কী হবে? তিনি উত্তরে বললেন, সে জাহান্নামী।[10]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ।[11] উক্ত হাদীছের সনদে লাইছ ইবনু আবী সুলাইম নামে একজন দুর্বল রাবী আছে।[12]
(5) عَنْ سَهْلِ بن مُعَاذِ بن أَنَسٍ عَنْ أَبِيْهِ عَن ِالنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلْجَفَاءُ كُلُّ الْجَفَاءِ وَالْكُفْرُ وَالنِّفَاقُ مَنْ سَمِعَ مُنَادِيَ اللَّهِ يُنَادِي بِالصَّلاةِ وَيَدْعُو إِلَى الْفَلاَحِ فَلا يُجِيْبُهُ-
(৫) সাহল ইবনু মু‘আয (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ঐ লোকের কাজ অত্যন্ত যুলুম, কুফর ও শঠতাপূর্ণ যে ছালাত ও কল্যাণের দিকে আহবানকারীর ডাক শুনল কিন্তু মসজিদে উপস্থিত হ’ল না।[13]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ।[14] উক্ত হাদীছের সনদে ইবনু লাহিয়া ও যুবান ইবনু ফায়েদ নামে দু’জন দুর্বল রাবী আছে।[15]
(6) عَنْ مُسْلِمٍ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى أَبِي أُمَامَةَ وَهُوَ يَتَفَلَّى فِي الْمَسْجِدِ وَيَدْفِنُ الْقَمْلَ فِي الْحَصَى فَقُلْتُ لَهُ يَا أَبَا أُمَامَةَ إِنَّ رَجُلًا حَدَّثَنِي عَنْكَ أَنَّكَ قُلْتَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ تَوَضَّأَ فَأَسْبَغَ الْوُضُوْءَ فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ وَمَسَحَ عَلَى رَأْسِهِ وَأُذُنَيْهِ ثُمَّ قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ الْمَفْرُوْضَةِ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ فِي ذَلِكَ الْيَوْمِ مَا مَشَتْ إِلَيْهِ رِجْلُهُ وَقَبَضَتْ عَلَيْهِ يَدَاهُ وَسَمِعَتْ إِلَيْهِ أُذُنَاهُ وَنَظَرَتْ إِلَيْهِ عَيْنَاهُ وَحَدَّثَ بِهِ نَفْسَهُ مِنْ سُوءٍ قَالَ وَاللَّهِ لَقَدْ سَمِعْتُهُ مِنْ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَا أُحْصِيهِ-
(৬) আবু মুসলিম বলেন, আমি আবু উমামা (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি মসজিদের পোকা-মাকড় দূর করছিলেন এবং আবর্জনা ফেলে দিচ্ছিলেন। আমি বললাম, আপনার নিকট থেকে আমার কাছে এক ব্যক্তি এই হাদীছ বর্ণনা করেছে যে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযূ করে, দুই হাত ও মুখ ধৌত করে, মাথা ও কান মাসাহ করে অতঃপর ফরয ছালাতে দাঁড়ায় আল্লাহ তা‘আলা তার ঐ দিনের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেন। যা সে হাত, কান, চোখ, চলাফেরা এবং অন্তরের কল্পনার মাধ্যমে করেছে। অতঃপর আবু উমামা বলেন, আল্লাহর কসম! আমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট থেকে একাধিক বার এই হাদীছ শুনেছি।[16]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু মুসলিম নামে মিথ্যুক বর্ণনাকারী রয়েছে।[17]
(7) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ جَمَعَ بَيْنَ صَلاتَيْنِ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَقَدْ أَتَى بَابًا مِنْ أَبْوَابِ الْكَبَائِرِ-
(৭) ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ওযর ছাড়াই যদি কেউ দুই ছালাত একত্রিত করে পড়ে তাহলে সে কাবীরা গোনাহের যে সমস্ত দরজা রয়েছে তার একটিতে উপনীত হল।[18]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি অত্যন্ত দুর্বল।[19] ইমাম তিরমিযী বলেন, এর সনদে হানাশ নামে একজন রাবী আছে। ইমাম আহমাদ সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ তাকে যঈফ বলেছেন।[20]
(8) عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ سَهْمَ فِي الْإِسْلاَمِ لِمَنْ لاَ صَلاَةَ لَهُ وَلاَ صَلاَةَ لِمَنْ لاَ وُضُوْءَ لَهُ-
(৮) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যার ছালাত হয়না ইসলামে তার কোন অংশ নেই এবং যার ওযূ হয় না তার ছালাত হয় না।[21]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি অত্যন্ত যঈফ।[22] উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ইবনু আবু সাঈদ নামে একজন রাবী আছে। সে সকল মুহাদ্দিছের ঐকমত্যে যঈফ।[23]
(9) عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا إِيمَانَ لِمَنْ لا أَمَانَةَ لَهُ وَلاَ صَلاَةَ لِمَنْ لا طُهُوْرَ لَهُ وَلاَ دِيْنَ لِمَنْ لا صَلاَةَ لَهُ إِنَّمَا مَوْضِعُ الصَّلاَةِ مِنَ الدِّيْنِ كَمَوْضِعِ الرَّأْسِ مِنَ الْجَسَدِ-
(৯) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যার আমানত নেই তার ঈমান নেই, যার ওযূ হয় না তার ছালাত হয় না, যে ছালাত আদায় করে না তার দ্বীন নেই। মূলত: দ্বীনের মধ্যে ছালাতের স্থান অনুরূপ যেমন শরীরের মধ্যে মাথার স্থান।[24]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ইমাম তাবারাণী বলেন, মিনদিল ছাড়া উবায়দুল্লাহ বিন ওমর থেকে এই হাদীছ কেউ বর্ণনা করেনি। আর হাসান তার থেকে এককভাবে বর্ণনা করেছে।[25]
(10) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ تَرَكَ صَلاةً لَقِيَ اللَّهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ-
(১০) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন এক ওয়াক্ত ছালাত ছেড়ে দিল সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে যখন তিনি ঐ ব্যক্তির উপর রাগান্বিত থাকবেন।[26]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে সিমাক ও সাহল ইবনু মাহমূদ নামে দু’জন দুর্বল রাবী আছে।[27]
(11) عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلاثَةٌ لا يَهُوْلُهُمُ الْفَزَعُ الْأَكْبَرُ وَلاَ يَنَالُهُمُ الْحِسَابُ هُمْ عَلَى كَثِيْبٍ مِنْ مِسْكٍ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ حِسَابِ الْخَلاَئِقِ رَجُلٌ قَرَأَ الْقُرْآنَ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ وَأَمَّ بِهِ قَوْمًا وَهُمْ يَرْضَوْنَ بِهِ وَدَاعٍ يَدْعُو إِلَى الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ وَعَبْدٌ أَحْسَنَ فِيْمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ رَبِّهِ وَفِيْمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ مَوَالِيْهِ-
(১১) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তিন ব্যক্তি এমন আছে যাদের জন্য ক্বিয়ামতের কঠিন কষ্টের ভয় নেই। অন্যান্য মাখলূকের হিসাব না হওয়া পর্যন্ত তাদের হিসাব দিতে হবে না। এর পূর্বে তারা মেশকের টিলায় ভ্রমণ করবে। তাদের একজন হ’ল- যে আল্লাহর জন্য কুরআন তেলাওয়াত করেছে, এমনভাবে ইমামতি করেছে যে মুক্তাদীরা তার উপর সন্তুষ্ট। দ্বিতীয় : ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষকে ছালাতের দিকে আহবান করে। তৃতীয় : ঐ ব্যক্তি, যে তার মনীবের সাথে ও আয়ত্বাধীন লোকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।[28]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। এই বর্ণনার সনদে উছমান ইবনু ক্বায়েস আবুল ইয়াকযান ও বাশীর ইবনু আছেম নামে দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছে।[29]
(১২) عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ سَلْمَانَ أَنَّ رَجُلاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدَّثَهُ قَالَ لَمَّا فَتَحْنَا خَيْبَرَ أَخْرَجُوْا غَنَائِمَهُمْ مِنَ الْمَتَاعِ وَالسَّبْىِ فَجَعَلَ النَّاسُ يَتَبَايَعُوْنَ غَنَائِمَهُمْ فَجَاءَ رَجُلٌ حِيْنَ صَلَّى رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللَّهِ لَقَدْ رَبِحْتُ رِبْحًا مَا رَبِحَ الْيَوْمَ مِثْلَهُ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ هَذَا الْوَادِى قَالَ وَيْحَكَ وَمَا رَبِحْتَ. قَالَ مَا زِلْتُ أَبِيْعُ وَأَبْتَاعُ حَتَّى رَبِحْتُ ثَلاَثَمِائَةِ أُوقِيَّةٍ فَقَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا أُنَبِّئُكَ بِخَيْرِ رَجُلٍ رَبِحَ قَالَ مَا هُوَ يَا رَسُوْلَ اللَّهِ قَالَ رَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الصَّلاَةِ-
(১২) উবায়দুল্লাহ ইবনু সালমান থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ)-এর জনৈক ছাহাবী তার নিকট হাদীছ বর্ণনা করেছে যে, আমরা যখন খায়বার বিজয় করলাম তখন তারা তাদের গণীমত সমূহ বের করে দিল। যার মধ্যে বিভিন্ন রকমের সম্পদ ও যুদ্ধবন্দী ছিল। লোকেরা তাদের নিকট থেকে গণীমত ক্রয় করতে লাগল। তখন এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, এই ব্যবসায় আমার যা লাভ হয়েছে অন্য কারো এত লাভ হয়নি। রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কত লাভ হয়েছে? সে বলল, আমি সমানে ক্রয়-বিক্রয় করছিলাম তাতে ৩০০ উকিয়া লাভ হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি কি তোমাদের এর চেয়ে অধিক লাভবান হওয়া যায় এমন কথা বলব? সে বলল, সেটা কী হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, ফরয ছালাতের পর দুই রাক‘আত।[30]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে উবায়দুল্লাহ ইবনু সালমান নামে এক সম্পূর্ণ অপরিচিত রাবী আছে।[31]
(13) عن عبادة بن الصامت رضي الله عنه قال أوصاني خليلي رسول الله صلى الله عليه وسلم بسبع خصال فقال لا تشركوا بالله شيئا وإن قطعتم أو حرقتم أو صلبتم ولا تتركوا الصلاة متعمدين فمن تركها متعمدا فقد خرج من الملة ولا تركبوا المعصية فإنها سخط الله ولا تشربوا الخمر فإنها رأس الخطايا كلها ولا تفروا من الموت أو القتل وإن كنتم فيه ولا تعص والديك وإن أمراك أن تخرج من الدنيا كلها فاخرج ولا تضع عصاك عن أهلك وأنصفهم من نفسك-
(১৩) উবাদা ইবনু ছামেত (রাঃ) বলেন, আমার বন্ধু রাসূল (ছাঃ) আমাকে সাতটি বিষয়ে অছিয়ত করেছেন। তিনি বলেন, (১) তোমরা শিরক করবে না যদিও তোমাকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয় অথবা আগুনে পোড়ানো হয় অথবা শুলিতে চড়িয়ে হত্যা করা হয় (২) তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ছেড়ে দিওনা। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ছালাত ছেড়ে দিবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। (৩) অবাধ্যতার নিকটবর্তী হয়ো না। কারণ এটা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ। (৪) মদ্যপান করো না। কারণ উহা প্রত্যেক পাপের উৎস (৫) মৃত্যু কিংবা জিহাদ থেকে পলায়ন করো না, যদি তার মধ্যে পড়ে যাও (৬) পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ো না। যদি তারা তোমাকে দুনিয়ার সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে তুমি তাও বিরত থাক (৭) তুমি তোমার পরিবার থেকে আদর্শের লাঠি তুলে নিও না এবং তোমার পক্ষ থেকে তাদের উপর ইনছাফ করো।[32]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে সালামাহ ইবনু শুরাইহ ও ইয়াযীদ ইবনু ক্বাওযুর নামে দু’জন অপরিচিত রাবী আছে। ইমাম বুখারী ও যাহাবী তাদের অপরিচিত বলেছেন।[33] উল্লেখ্য যে, দশটি নছীহত করেছিলেন বলে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার সনদ ছহীহ।[34]
(14) عَنْ أَنَسٍ قَالَ كُنَّا عِنْدَ رَسُوْلِ الله صلى الله عليه و سلم حيث حضرته الوفاة قال فقال لنا اتقوا الله في الصلاة اتقوا الله في الصلاة ثلاثا اتقوا الله فيما ملكت أيمانكم اتقوا الله في الضعيفين المرأة الأرملة و الصبي اليتيم اتقوا الله في الصلاة فجعل يرددها و هو يقول الصلاة و هو يغرغر حتى فاضت نفسه-
(১৪) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর সময় আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা ছালাতের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। এটা তিনবার বললেন। অতঃপর তোমাদের দাসীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর এবং দুই শ্রেণীর দুর্বল লোকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর- বিধবা নারী ও ইয়াতীম বালক। তারপর তিনি বারবার বলতে থাকলেন, ছালাতের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আত্মা বের হওয়া পর্যন্ত তিনি এই ছালাতের কথা বলতেই থাকলেন।[35]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি অত্যন্ত যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে আম্মার ইবনু যুরাবী নামে মাতরূক ও মিথ্যুক রাবী আছে।[36] উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর শেষ কথা ছিল ছালাত ও নারী জাতি সম্পর্কে মর্মে যে হাদীছ ইবনু মাজাতে এসেছে তা ছহীহ।[37]
(১৫) ‘যে ব্যক্তি ফরয ছালাত সমূহের যথাযথ হেফাযত করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে পাঁচ দিক থেকে সম্মানিত করবেন। (১) সংসারের অভাব-অনটন দূর করবেন (২) কবরের আযাব মাফ করবেন (৩) বিচারের দিন ডান হাতে আমলনামা দিবেন (৪) পুলছিরাতের উপর দিয়ে দ্রুত গতিতে পার হয়ে যাবে (৫) বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ছালাতের ব্যাপারে অলসতা করে তাকে পনের প্রকারের শাস্তি প্রদান করা হবে। তার মধ্যে পৃথিবীতে পাঁচ প্রকার, মৃত্যুর সময় তিন প্রকার, তিন প্রকার কবরে, কবর হতে উঠার পর তিন প্রকার। পৃথিবীতে পাঁচ প্রকার হ’ল- (১) তার জীবনে কোন কল্যাণ আসে না (২) তার চেহারা হ’তে জ্যোতি দূর করা হয় (৩) তার সৎ আমলের কোন প্রতিদান দেওয়া হয় না (৪) তার দো‘আ কবুল হয় না (৫) সৎ ব্যক্তিদের দো‘আর মাঝে তার কোন অংশ থাকে না।
মৃত্যুর সময়ের তিন প্রকার শাস্তি হ’ল- (১) সে লাঞ্ছনার সাথে মৃত্যুবরণ করে (২) ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে (৩) এমন তৃষ্ণার্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে যে সমুদ্র পরিমাণ পানি পান করলেও তার পিপাসা দূর হবে না। কবরে তিন প্রকার শাস্তি হল- (১) তার জন্য কবর এমন সংকীর্ণ হবে যে তার বুকের একদিকের হাড় অপরদিকে ঢুকে যাবে (২) কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে (৩) এমন একটি সাপ তার কবরে রাখা হবে যার চক্ষুগুলো আগুনের এবং নখগুলো লোহার। সাপটি এত বড় যে, একদিনের পথ চলার পর শেষ পর্যন্ত পৌঁছা যাবে। এর হুংকার বজ্রের মত। সাপটি বলবে, আমার প্রভু তোমার জন্য আমাকে নির্ধারণ করেছেন, যেন ফজরের ছালাত ত্যাগ করার কারণে সূর্যোদয় পর্যন্ত তোমাকে দংশন করতে পারি, যোহরের ছালাত না পড়ার কারণে যেন আছর পর্যন্ত এবং আছরের ছালাত না পড়ার কারণে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দংশন করতে পারি। অনুরূপ মাগরিবের ছালাত না পড়ার কারণে এশা পর্যন্ত এবং এশার ছালাত নষ্ট করার কারণে সকাল পর্যন্ত দংশন করতে পারি। এই সাপ একবার দংশন করলে সত্তর হাত মাটির নীচে মুর্দা ঢুকে যাবে। এভাবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার শাস্তি হতে থাকবে।
কবর হ’তে উঠার পর তাকে তিন প্রকারের শাস্তি দেওয়া হবে। (১) কঠিনভাবে তার হিসাব নেওয়া হবে (২) আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন (৩) তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। পনের নম্বরটি পাওয়া যায় না। তবে অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তার মুখমন্ডলে তিনটি লাইন লেখা থাকবে : (ক) আল্লাহর হক বিনষ্টকারী (খ) ওহে আল্লাহর অভিশাপে অভিশপ্ত (গ) দুনিয়াতে যেমন আল্লাহর হক বিনষ্ট করেছ তেমনি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ’।[38]
তাহক্বীক্ব : পুরো বর্ণনাটি মিথ্যা ও বাতিল। কারণ এর কোন সনদ নেই, বর্ণনাকারীও নেই।[39] ফাযায়েলে আমলের মধ্যেই বর্ণনাটির পর্যালোচনায় এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘এই হাদীছ মিথ্যা’।[40]
[1]. হিলইয়াতুল আওলিয়া; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৭০।
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৬৯১।
[3]. সিলসিলা যঈফাহ ৬/২১৪ পৃঃ।
[4]. তাবারাণী, আল-আওসাত হা/৩০৯৫; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬২-১৬৩।
[5]. যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২২১।
[6]. لم يروه عن حميد عن أنس إلا عباد تفرد به عبد الرحمن وأبو عبيدة هو حميد الطويل -তাবারাণী, আল-আওসাত হা/৩০৯৫।
[7]. তাবারাণী, আল-আওসাত হা/৮৮৬।
[8]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫১।
[9].لا يروى هذا الحديث عن عبد الله بن سلام إلا بهذا الإسناد تفرد به معمر তাবারাণী, আল-আওসাত হা/৮৮৬।
[10]. তিরমিযী হা/২১৮, ১/৫২ পৃঃ; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৪০।
[11]. যঈফ তিরমিযী হা/২১৮; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২৩৬ ও৪৪৬।
[12]. তাহক্বীক্ব জামেউল উছূল হা/৩৮১১ -এর টীকা দ্রঃ; আত-তুয়ূরুইয়াত ৫/২১ পৃঃ।
[13]. মুসনাদে আহমাদ হা/১৫৬৬৫; তাবারাণী হা/১৬৮০৪; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৩৮।
[14]. যঈফ আত-তাগীব ওয়াত তারহীব হা/২৩৩; যঈফুল জামে‘ হা/২৬৫০।
[15]. তাহক্বীক্ব মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/২১৫৯, ২/৫৪ পৃঃ; তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ১৫২।
[16]. মুসনাদে আহমাদ হা/২২৩২৬; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৭৭।
[17]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৭১১, ১৪/৪৬৫ পৃঃ; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৩৪।
[18]. তিরমিযী হা/১৮৮, ১/৪৮ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়; তাবারাণী হা/১১৩৭৫; বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা হা/৫৭৭১; হাকেম হা/১০২০; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১০০।
[19]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৫৮১।
[20].حنش هذا هو أبو على الرحبي وهو حسين بن قيس وهو ضعيف عند أهل الحديث ضعفه أحمد وغيره -তিরমিযী হা/১৮৮, ১/৪৮ পৃঃ।
[21]. মুসনাদে বাযযার হা/৮৫৩৯; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১১৮।
[22]. যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩০১।
[23]. মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/৩৬৪ পৃঃ, হা/১৬১২।
[24]. তাবারাণী, আওসাত ২/৩৮৩ পৃঃ; আল-মু‘জামুছ ছাগীর হা/১৬২; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ১৯০।
[25]. لَمْ يَرْوِ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بن عُمَرَ إِلا مِنْدَلٌ وَلا عَنْ مِنْدَلٍ إِلا حَسَنٌ تَفَرَّدَ بِهِ الْحُسَيْنُ بن الْحَكَمِ-যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২১৩; যঈফুল জামে‘ হা/৬১৭৮।
[26]. তাবারাণী কাবীর হা/১১৬১৭; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ১৯১।
[27]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৫৭৩।
[28]. তাবারাণী হা/১১১৬; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ১৯৫।
[29]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৮১২; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৮৬৩।
[30]. আবুদাঊদ হা/২৭৮৫; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৮৫।
[31]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৯৪৮।
[32]. আল-আহাদীছিল মুখতারাহ হা/৩৫১; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৯৬।
[33]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৯৯১; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩০০।
[34]. আহমাদ হা/২২১২৮; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৫৭০; সনদ হাসান, মিশকাত হা/৬১।
[35]. বায়হাক্বী হা/১১০৫৩; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৮৭।
[36]. সিলসিলা যঈফা হা/৩২১৬।
[37]. ইবনু মাজাহ হা/২৬৯৮, পৃঃ ১৯৩, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়; আবুদাঊদ হা/৫১৫৬।
[38]. ফাযায়েলে আমল, ফাযায়েলে নামায অংশ (উর্দূ), পৃঃ ৩১-৩৩; (বাংলা), পৃঃ ১০৪-১০৬; ইবনু হাজার হায়ছামী, আল-যাওয়াজির আন ইক্বতিরাফিল কাবাইর, (বৈরুত: ১৯৯৯), পৃঃ ২৬৪।
[39]. আরশীফ মুলতাক্বা আহলিল হাদীছ, ৪১/১১৬।
[40]. ফাযায়েলে আমল, (উর্দূ) পৃঃ ৩৪; বাংলা, পৃঃ ১০৬।