রাজশাহী ১লা ও ২রা মার্চ বৃহস্পতি ও শুক্রবার : ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে দু’দিনব্যাপী ২৮তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনাল ময়দানে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফালিল্লা-হিল হাম্দ। ১ম দিন বাদ আছর বিকাল সোয়া ৪-টায় তাবলীগী ইজতেমা’১৮-এর সভাপতি মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর সভাপতিত্বে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে অর্থসহ পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া, রাজশাহীর হিফয বিভাগের প্রধান হাফেয লুৎফর রহমান এবং স্বাগত ভাষণ পেশ করেন তাবলীগী ইজতেমা ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক ও ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মাদ আব্দুল লতীফ। অতঃপর উদ্বোধনী ভাষণ পেশ করেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত। ভাষণে তিনি ইজতেমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন এবং সকলকে শৃংখলা ও সহমর্মিতার সাথে ইজতেমার ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য বজায় রাখার আহবান জানান। অতঃপর তিনি আল্লাহর নামে দু’দিনব্যাপী তাবলীগী ইজতেমার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
অতঃপর পূর্ব নির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত সমূহের উপর ১ম দিন রাত পৌনে ২-টা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য পেশ করেন ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম (রাজশাহী), ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য জামীলুর রহমান (কুমিল্লা), ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রূীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম (মেহেরপুর), ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’, সঊদী আরব শাখার সহ-সভাপতি হাফেয মুহাম্মাদ আখতার (নওগাঁ), পাকিস্তানের ‘আল-হুদা ইন্টারন্যাশনাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’-এর চেয়ারম্যান ড. ইদরীস যুবায়ের, ঢাকা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাবেক সভাপতি মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা), ‘আন্দোলন’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় দাঈ, বাহরাইন প্রবাসী মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম (রাজশাহী), সাতক্ষীরা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা) ও মাওলানা যাকারিয়া (বাগেরহাট)।
আমীরে জামা‘আতের ১ম রাতের ভাষণ :
২৮তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমায় এযাবৎ কালের বিশালতম মহা সমাবেশে সমবেত শ্রোতৃমন্ডলীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় শেষে তিনি ‘মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির উপায় সমূহ’ শীর্ষক সুচিন্তিত ও সারগর্ভ এক নাতিদীর্ঘ ভাষণ প্রদান করেন। তিনি বলেন, মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা ও বৃদ্ধির জন্য মানুষকে সর্বাগ্রে তার আক্বীদা-বিশ্বাসের উন্নয়ন ঘটাতে হয়। বিশুদ্ধ আক্বীদার মানুষের নিকট মানবতা সর্বদা নিরাপদ থাকে। আর বিনষ্ট আক্বীদার মানুষের নিকট মানবতা সর্বদা পর্যুদস্ত হয়। আর বিশুদ্ধ আক্বীদা কখনও মানুষ নিজে সৃষ্টি করতে পারে না। কারণ মানুষের নিজের তৈরী আইনের পিস্তল তার নিজের বক্ষ ভেদ করুক, এটা সে কখনই চায় না। সেকারণ মানুষের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসূলগণকে পাঠিয়ে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলের দিক নির্দেশনা দান করেছেন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত হেদায়াত অনুযায়ী সর্বোত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দানকারী। বর্তমান বিশ্বের পতিত মানবতাকে উদ্ধার করতে হ’লে এবং সম্মানজনক স্তরে উন্নীত করতে হ’লে মানুষকে অবশ্যই শ্রেষ্ঠ মানুষ ও শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর হেদায়াত অনুসরণ করতে হবে। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ সেই হেদায়াত সমূহের প্রচার, অনুশীলন ও সমাজে বাস্তবায়ন করতে চায়। আমরা এজন্য আল্লাহর রহমত ও সাহায্য কামনা করি।
বিদেশী মেহমানের ভাষণ :
ইজতেমায় আগত বিদেশী মেহমান পাকিস্তানের ইসলামাবাদস্থ আল-হুদা ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক ড. ইদরীস যুবায়ের প্রথম দিন রাতে প্রদত্ত ভাষণে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলেন, ইজতেমায় এসে দ্বীনী ভ্রাতৃত্বের অনুপম নযীর দেখেছি। এতে শরীক হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানোয় তিনি মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে ‘রিসালাতের মর্যাদা’ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ৩টি বিষয় উল্লেখ করেন। প্রথমতঃ রাসূল (ছাঃ)-এর পরিচয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুসলমান হিসাবে আমাদের সবচেয়ে বড় গর্বের কারণ হ’ল, আল্লাহ আমাদেরকে এমন একজন নবীর অনুসারী বানিয়েছেন যিনি সারা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ এবং সকল নবীদের সর্দার। দ্বিতীয়তঃ রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি মুসলমানদের সম্মান প্রদর্শনের অপরিহার্যতা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা এমন এক নবীর অনুসারী, যার সম্মান স্বয়ং আল্লাহ রাববুল আলামীন নিজে করেছেন। কুরআনে আল্লাহ অন্যান্য নবীদেরকে নাম ধরে ডেকেছেন। কিন্তু আমাদের নবীকে কোথাও সরাসরি তাঁর নাম ধরে ডাকেননি। বরং তাঁকে হে রাসূল বা হে নবী বলে সম্বোধন করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি মানবজাতিকেও তাঁকে সম্মানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না যেভাবে তোমরা নিজেদের মধ্যে উচুঁ করে থাক, নতুবা তোমাদের অজান্তেই তোমাদের আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে (হুজুরাত ৪৯/২)। ফলে ছাহাবীরা তাঁকে সম্মানের উচ্চাসনে বসিয়েছিলেন। তাঁর চাচা আববাস (রাঃ) ভাতিজা হওয়া সত্ত্বেও কখনও তাঁকে নাম ধরে ডাকেননি। আর একই কারণে তাঁর নাম শোনামাত্র তাঁর প্রতি দরূদ পাঠকে আমাদের জন্য আবশ্যিক করা হয়েছে। সুতরাং রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি এই সম্মানবোধ ও শ্রদ্ধা রাখা আমাদের ঈমানের অপরিহার্য দাবী। তবে অবশ্যই এই সম্মানবোধেও মধ্যমপন্থার পরিচয় দিতে হবে। আহলে কিতাবগণ যেমন ঈসা (আঃ)-কে গালিও দিয়েছে, তেমনি ‘আল্লাহর পুত্র’ বলে বাড়াবাড়ি করেছে। কিন্তু মুসলমানরা রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কোন বাড়াবাড়ি ধারণা পোষণ করে না। বরং তাঁকে তাঁর স্থানে রেখেই সম্মান প্রদর্শন করে। তৃতীয়তঃ রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণের স্বরূপ সম্পর্কে তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে সম্মান ও শ্রদ্ধা করার প্রধান দৃষ্টান্ত হ’ল, তাঁর আদেশ ও নিষেধকে মান্য করা। কেননা তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল। শরী‘আতের যাবতীয় হুকুম-আহকাম প্রণয়নের অধিকার একমাত্র তাঁকেই দেয়া হয়েছে। তাঁকে আল্লাহ রাববুল আলামীন যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত রেখেছিলেন। সুতরাং সর্বক্ষেত্রে তাঁর অনুসরণই হ’ল ঈমানের দাবী। মুসলিম সমাজে এমন অনেকেই রয়েছে যারা তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করে বটে, কিন্তু আমলের ক্ষেত্রে তাঁর অনুসরণ করে না। আর এখানেই আহলেহাদীছদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। কেননা তারাই একমাত্র দল যারা রাসূল (ছাঃ)-কে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে। সেই সাথে আমলের ক্ষেত্রেও তাঁর পূর্ণ অনুসরণ করার চেষ্টা করে। আর এটাই হ’ল পরকালে নাজাত লাভের একমাত্র উপায়। তিনি উপস্থিত সকলকে রাসূল (ছাঃ)-এর মর্যাদা অনুধাবন করা, তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং তাঁর আদেশ ও নিষেধের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করার আহবান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন। তাঁর উর্দূ ভাষণটি বাংলায় অনুবাদ করেন হাফেয মুহাম্মাদ আখতার।
২য় দিন বাদ ফজর দারুল হাদীছ বিশ্ববিদ্যালয় (প্রাঃ) জামে মসজিদে দরসে কুরআন পেশ করেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত এবং প্যান্ডেলে দরসে হাদীছ পেশ করেন সঊদী আরব শাখা ‘আন্দোলন’-এর সহ-সভাপতি হাফেয মুহাম্মাদ আখতার। সকাল ৯-টা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক জালালুদ্দীন (নরসিংদী), সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক দুররুল হুদা (রাজশাহী), শরীফুল ইসলাম (বাহরাইন)। এরপর শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মাসিক আত-তাহরীক-এর সহকারী সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম ও শরীফুল ইসলাম (বাহরাইন)।
মহিলা সমাবেশ :
ইজতেমার ২য় দিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮-টা হ’তে আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী কমপ্লেক্স-এর মহিলা শাখা ‘মহিলা সালাফিইয়াহ মাদরাসা’ ময়দানে মহিলাদের প্যান্ডেলে মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মহিলা সমাবেশে সকাল সাড়ে ১০-টায় দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে পর্দার অন্তরালে সমবেত মা-বোনদের উদ্দেশ্যে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, আল্লাহ পাক মুমিন পুরুষ ও নারী উভয়কে আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকারের দায়িত্ব প্রদান করেছেন। তার আলোকেই আমরা ‘আহলেহাদীছ মহিলা সংস্থা’ গড়ে তুলেছি। অতএব পরিবার ও সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব মুমিন নারী ও পুরুষ উভয়েরই সমান। আপনারা কেন্দ্রের পক্ষ হ’তে দেওয়া কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী স্ব স্ব এলাকায় দাওয়াত ও সংগঠনের কাজ এগিয়ে নিন। ইনশাআল্লাহ প্রতিটি পরিবারের প্রশিক্ষিত মা-বোন, সোনামণি, যুবসংঘ ও আন্দোলন-এর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ একটি সুন্দর ও শান্তিময় সমাজে পরিণত হবে। আল্লাহ আমাদের সকল শুভ প্রচেষ্টা কবুল করুন! অবশেষে তিনি দেশের দূর-দূরান্ত থেকে কষ্ট স্বীকার করে ইজতেমায় আসার জন্য ও অধিক কষ্ট স্বীকার করে এখানে দু’দিন অবস্থানের জন্য আল্লাহর নিকট উত্তম বিনিময় কামনা করে ও সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মাদ আব্দুল লতীফ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক গোলাম মুক্তাদির ও ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম, কক্সবাজার যেলা সভাপতি এডভোকেট শফীউল ইসলাম প্রমুখ।
যুবসমাবেশ :
ইজতেমার ২য় দিন সকাল ১০-টায় প্রস্তাবিত দারুলহাদীছ বিশ্ববিদ্যালয় (প্রাঃ) জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে পৃথক প্যান্ডেলে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর উদ্যোগে ‘যুবসমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, সংগঠন যত শক্তিশালী হবে, নানা ধরনের বাধা তত দেখা দিবে। সে অবস্থায় আখেরাতের চেতনা সম্পন্ন যুবকরাই কেবল সংগঠনে টিকে থাকতে পারবে। আহলেহাদীছ আন্দোলনকে প্রত্যেক মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য দুনিয়াবী লোভ-লালসার ঊর্ধেব থেকে ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর সদস্যদেরকে দিন-রাত দাওয়াত ও সংগঠনে মনোনিবেশ করতে হবে। আমাদের উপর ফরয দায়িত্ব হ’ল দাওয়াত দেওয়া। আর দাওয়াতকে বিজয়ী করার দায়িত্ব আল্লাহর। আর আল্লাহর রহমত নির্ভর করে আমাদের অকুণ্ঠ ত্যাগ ও নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টার উপর। ‘জামা‘আতের উপর আল্লাহর হাত থাকে’। অতএব সংগঠনকে মযবূত করুন এবং আন্দোলনকে এগিয়ে নিন। বিশুদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দাওয়াতকেই মানুষ গ্রহণ করবে। অশুদ্ধ ও মনগড়া দাওয়াত সমূহ থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিবে। তিনি ইজতেমা থেকে ফিরে গিয়ে সকলকে স্ব স্ব এলাকায় দুর্বার গতিতে সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার আহবান জানান।
‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশীদ আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানী মেহমান ড. ইদরীস যুবায়ের এবং ইজতেমায় আগত অন্যতম মেহমান আমীরে জামা‘আতের কারাসাথী বেক্সিমকো গ্রুপ-এর মাননীয় ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ. রহমান। এ সময়ে সমবেত যুবকদের উদ্দেশ্যে সালমান এফ. রহমান বলেন, দেশে শান্তি-শৃংখলার মূল হচ্ছে যুবসমাজ। যুবকরা সত্যিকার অর্থে কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর অনুসারী হ’লে সমাজে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদেরকে নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। এজন্য মুসলমানদের পারস্পরিক অনৈক্য যেমন দায়ী, তেমনি তাদের মধ্যে সৃষ্ট চরমপন্থী আক্বীদাও সমানভাবে দায়ী। তিনি এ বিষয়ে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র সাহসী ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বিদেশী মেহমান ড. ইদরীস যুবায়ের তাঁর ভাষণে বলেন, আজ মুসলমানদের মধ্যে যে বিভক্তি রয়েছে, তার একটিই কারণ হ’ল কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান থেকে দূরে সরে যাওয়া। যখন আমরা কুরআন ও সুন্নাহকে সার্বিকভাবে আঁকড়ে ধরতে পারব, তখনই আমাদের পরস্পরের মধ্যে মহববত সৃষ্টি হবে এবং জীবন ও মরণ একই লক্ষ্যে পরিচালিত হবে। এজন্য তিনি দ্বীনের বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জনে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন এবং এই জ্ঞানই মুসলমানদের অবস্থানকে বুলন্দ করবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যুবকরাই জাতির সঠিক কর্ণধার। আমরা আপনাদের এই সংগঠিত রূপ দেখে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করছি এবং আপনাদের আন্দোলনের শনৈঃশনৈ উন্নতির জন্য দো‘আ করছি।
উক্ত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম, যুববিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মাদ আমীনুল ইসলাম, ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ আরীফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মুস্তাক্বীম আহমাদ, ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’, সঊদী আরব শাখার সহ-সভাপতি হাফেয মুহাম্মাদ আখতার, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ আব্দুল হাই, ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া রাজশাহীর ভাইস প্রিন্সিপাল ড. নূরুল ইসলাম। যেলা দায়িত্বশীলদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন ‘যুবসংঘ’ সাতক্ষীরা যেলার সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ যেলা সাধারণ সম্পাদক মাহফূযুর রহমান, বগুড়া যেলা সভাপতি আল-আমীন, কুমিল্লা যেলা সাধারণ সম্পাদক আহমাদুল্লাহ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ-উত্তর সাংগঠনিক যেলার সভাপতি আনোয়ার হোসাইন ও নরসিংদী যেলার সভাপতি আব্দুস সাত্তার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক আবুল কালাম। সমাবেশে যুবসংঘের বিভিন্ন স্তরের বিপুল সংখ্যক কর্মী অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, অনুষ্ঠানে ‘যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সদস্য ড. শিহাবুদ্দীন আহমাদ ও ড. নূরুল ইসলামকে পি.এইচ-ডি ডিগ্রী লাভের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
জুম‘আর খুৎবা :
ইজতেমার ২য় দিন শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত এবং কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম জুম‘আর খুৎবা প্রদান করেন। এ সময় মহিলা মাদরাসা ও ট্রাক টার্মিনালের পার্শ্ববর্তী পৃথক স্থানে মহিলা প্যান্ডেল সহ ট্রাক টার্মিনালের পুরো ময়দানব্যাপী সুবিশাল প্যান্ডেল পূর্ণ হয়ে প্যান্ডেলের বাইরে ও মহাসড়কে খোলা স্থানে বসে মুছল্লীগণ খুৎবা শ্রবণ করেন। একই মাইক্রোফোনে প্রদত্ত জুম‘আর খুৎবায় সমবেত পুরুষ ও মহিলা মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশার ও প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ভিন্ন কিছুই নয়। অতএব বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলসমূহের মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভের জন্য প্রতিযোগিতা করে যেতে হবে। তিনি বলেন, বিচক্ষণ মুমিন তিনি, যিনি নিজের মৃত্যুকে সর্বদা স্মরণ করেন এবং স্বীয় জীবদ্দশায় পরকালীন মুক্তির জন্য সর্বাধিক প্রস্ত্ততি গ্রহণ করেন। তিনি স্ব স্ব গৃহকে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আলোকিত করার জন্য মুছল্লীদের প্রতি আহবান জানিয়ে খুৎবা শেষ করেন।
এ সময় বিদেশী মেহমান জনাব ড. ইদরীস যুবায়ের, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সালমান এফ রহমান, রাজশাহী মহানগরীর সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক দায়িত্বশীলবৃন্দ মঞ্চে উপস্থিত থেকে খুৎবা শ্রবণ করেন ও ছালাতে অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, ১ম দিন বাদ এশা বর্তমান মেয়র জনাব মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল প্রায় দু’ঘণ্টা মঞ্চে উপস্থিত থেকে মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের ভাষণ শোনেন।
বাদ জুম‘আ মুহাতারাম আমীরে জামা‘আত জনাব ড. ইদরীস যুবায়ের, সালমান এফ রহমান ও খায়রুজ্জামান লিটন-কে সাথে নিয়ে ইজতেমা ময়দানের আল-‘আওন স্বেচ্ছাসেবী রক্তদান সংস্থার বুথ পরিদর্শন করেন এবং তাঁরা তাদের কার্যক্রমে গভীর সন্তোষ জ্ঞাপন করেন।
অতঃপর বাদ আছর হ’তে পুনরায় ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়ে একটানা ভোর ৫-টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এই দিনে ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর শূরা সদস্য মাওলানা দুররুল হুদা (রাজশাহী), আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর ভাইস প্রিন্সিপাল ড. নূরুল ইসলাম (রাজশাহী), ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশীদ আখতার (কুষ্টিয়া), ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন (সাতক্ষীরা), ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব (রাজশাহী), ‘আন্দোলন’-এর দফতর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (রাজশাহী), মীযান বিন আব্দুল আযীয জৈনপুরী (ঢাকা), ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সঊদী আরব শাখার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ আব্দুল হাই (রাজশাহী), ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (রাজশাহী), খুলনা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (খুলনা), মাওলানা মুখলেছুর রহমান (নওগাঁ), নারায়ণগঞ্জ যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ শফীকুল ইসলাম (নারায়ণগঞ্জ) ও হাফেয শামসুর রহমান (ঢাকা) প্রমুখ।
২য় রাতের ভাষণ :
এ রাতের বিদায়ী ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ‘পবিত্র জীবন লাভের উপায় সমূহ’ শীর্ষক আলোচনায় বলেন, কুরআনের সর্বত্র প্রথমে ঈমান ও পরে সৎকর্মের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সূরা নাহল ৯৭ আয়াতে প্রথমে সৎকর্ম ও পরে ঈমানের কথা বলা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, বিশ্বাস যাই থাক না কেন, সৎকর্ম ও সদাচরণের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী। এর ভিত্তিতেই আল্লাহর নিকট পুরস্কার ও শাস্তি লাভ হয়ে থাকে। তাই পবিত্র জীবন লাভের জন্য বিশুদ্ধ ঈমান ও বিশুদ্ধ আমল আবশ্যিক পূর্বশর্ত। এ পর্যায়ে তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের জীবনী থেকে বহু দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। অতঃপর সমবেত কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্দেশ্যে আবেগঘন আবেদন জানিয়ে বলেন, আসুন! পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে আমরা আমাদের সমাজকে সুন্দর ও শান্তিময় সমাজ হিসাবে গড়ে তুলি।
বিদায়ী ভাষণ ও দো‘আ :
ইজতেমার ৩য় দিন শনিবার ইজতেমার মূল প্যান্ডেলে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত-এর ইমামতিতে ফজরের জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়। ছালাত শেষে তিনি মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বিদায়ী ভাষণ পেশ করেন এবং সকলে ছহীহ-সালামতে স্ব স্ব গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকটে দো‘আ করেন করেন। অতঃপর সভাপতি হিসাবে তিনি বিদায়কালীন ও মজলিস ভঙ্গের দো‘আ পাঠের মাধ্যমে দু’দিনব্যাপী ২৮তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
দু’দিনব্যাপী তাবলীগী ইজতেমার বিভিন্ন অধিবেশনে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর ভাইস প্রিন্সিপাল ড. নূরুল ইসলাম, ঢাকা যেলা ‘আন্দোলন’-এর অর্থ সম্পাদক কাযী হারূণুর রশীদ ও ‘যুবসংঘ’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান প্রমুখ। তাবলীগী ইজতেমার বিভিন্ন অধিবেশনে কুরআন তেলাওয়াত করেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর হিফয বিভাগের প্রধান হাফেয লুৎফর রহমান (বগুড়া), ঢাকা যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (বগুড়া), ‘আল-‘আওনে’র সমাজকল্যাণ সম্পাদক আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির (রাজশাহী), মারকাযের মক্তব বিভাগের শিক্ষক ক্বারী আব্দুল আউয়াল (রাজশাহী), হাফেয শাহরিয়ার (রাজশাহী) ও ইরতিযা আবরার (খুলনা)। ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করেন আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (বগুড়া), মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান (জয়পুরহাট), আব্দুল্লাহ আল-মামূন (সাতক্ষীরা), রোকনুয্যামান (সাতক্ষীরা), ইয়াকূব (মেহেরপুর) এবং আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর ছাত্র আসাদুল্লাহ আল-গালিব (রাজশাহী), ফরীদুল ইসলাম (নাটোর), আলে ইমরান (রাজশাহী), রামাযান আলী (রাজশাহী), আব্দুল্লাহ শাকিল (নাটোর), রেযওয়ান (রাজশাহী) ও মুসলিমু্দ্দীন (দিনাজপুর) প্রমুখ।
এবারের তাবলীগী ইজতেমায় উপস্থিতি ছিল বিগত সকল ইজতেমার তুলনায় অনেক বেশী। ট্রাক টার্মিনাল ময়দানের পাশাপাশি এ বছর মারকাযের পশ্চিম পার্শ্বস্থ ময়দানেও সম্পূর্ণ প্যান্ডেল করা হয় এবং প্রজেক্টরের মাধ্যমে ট্রাক টার্মিনাল থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তাছাড়া মহিলা মাদরাসায় অন্যান্যবার একটি প্যান্ডেল করা হয়। সেখানে এবার বৃহদাকার দু’টি প্যান্ডেল ও মোট তিনটি প্রজেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া ট্রাক টার্মিনালের দক্ষিণে স্থানীয় মহিলাদের জন্য একটি পৃথক মহিলা প্যান্ডেল ও প্রজেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়। পুরুষ, মহিলা মিলে মোট ৫টি প্যান্ডেলই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। উদ্বোধনী ভাষণের সময়েই মূল প্যান্ডেলে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
এবারের ইজতেমায় বাইরের যেলাগুলি থেকে ৩২৭টি রিজার্ভ বাস, ৩০টি মাইক্রোবাস ছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে ৫৪টি সাংগঠনিক যেলাসহ দেশের প্রায় সকল যেলা থেকে বিভিন্ন যানবাহন যোগে প্রায় লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সঊদী আরব ও বাহরাইন সহ অন্যান্য দেশ থেকেও সদ্য দেশে ফেরা অনেক প্রবাসী কর্মী ও সুধী ইজতেমায় যোগদান করেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের বিভিন্ন যেলা থেকে অর্ধশতাধিক শ্রোতা ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন। তাছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের হাযার হাযার শ্রোতা ইজতেমার সরাসরি লাইভ প্রোগ্রাম দেখেন।
ইজতেমার অন্যান্য রিপোর্ট
এজেন্ট সম্মেলন’১৮ :
ইজতেমার ২য় দিন বিকাল সাড়ে ৪-টায় আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর পশ্চিম পার্শ্বস্থ ময়দানে মাসিক আত-তাহরীক-এর এজেন্ট সম্মেলন’১৮ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে আত-তাহরীক-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক মন্ডলীর মাননীয় সভাপতি মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব সমবেত এজেন্টদের উদ্দেশ্যে বলেন, আখেরাত লাভের চেতনায় যদি আপনারা আত-তাহরীক-এর সেবা করেন, তাহ’লে পুরাটাই আপনাদের আমলনামায় নেক আমল হিসাবে লিপিবদ্ধ হবে। তিনি প্রত্যেক এজেন্ট ভাই-বোনকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০% হারে গ্রাহক বৃদ্ধির আবেদন জানান।
আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর অন্যতম কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা জনাব নূরুল ইসলাম প্রধান (গাইবান্ধা), কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর সচিব অধ্যাপক আব্দুল লতীফ প্রমুখ। সম্মেলনে লেখকদের মধ্য থেকে বক্তব্য পেশ করেন ক্বামারুয্যামান বিন আব্দুল বারী (জামালপুর) এবং এজেন্টদের মধ্য থেকে বক্তব্য পেশ করেন হাবীবুর রহমান (সাতক্ষীরা), আনীসুর রহমান (বগুড়া), কামাল হোসাইন (নারায়ণগঞ্জ), মাকছূদ আলী মুহাম্মাদী (সাতক্ষীরা), মুয্যাম্মেল হক (গাইবান্ধা), আব্দুল মুক্বীত (খুলনা), আবু বকর (বগুড়া), রেযাউল করীম (রংপুর), আব্দুল আলীম (জয়পুরহাট) ও ইউসুফ আহাম (কুমিল্লা) প্রমুখ। সম্মেলনে সর্বাধিক পত্রিকা বিক্রয়কারী এজেন্ট হিসাবে ১ম স্থান অধিকারী জনাব আনীসুর রহমান (বগুড়া), ২য়- হাবীবুর রহমান (সাতক্ষীরা) ও ৩য়- মুশতাক আহমাদ সারওয়ার মাননীয় প্রধান অতিথির নিকট থেকে বিশেষ পুরস্কার গ্রহণ করেন। এতদ্ব্যতীত সকল এজেন্টকে সাধারণ পুরস্কার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন আত-তাহরীক-এর সহকারী সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম।
জাতীয় গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান :
বিগত বছরের ন্যায় এবারও ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর উদ্যোগে ‘জাতীয় গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতা’ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচিত গ্রন্থ ছিল আমীরে জামা‘আত প্রণীত ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ; দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ (২০১-৫০৬ পৃ.)’। এতে শীর্ষস্থান অধিকারী তিনজন হ’ল যথাক্রমে- ১. মুহাম্মাদ শাহীন রেযা (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), ২. রিয়াযুল ইসলাম (নওগাঁ) ও ৩. ইমদাদুল হক (রাজশাহী)। এছাড়া ৫ জনকে বিশেষ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। তারা হ’ল যথাক্রমে- ১. আব্দুল্লাহ (কুমিল্লা), ২. মুহাম্মাদ আরিফুল ইসলাম (দিনাজপুর), ৩. মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ (ময়মনসিংহ), ৪. ইরফানুল ইসলাম ফাহীম (কুমিল্লা), ৫. মিনহাজুল ইসলাম (দিনাজপুর)। বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা সনদ ও পুরস্কার তুলে দেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত।
নতুন হাফেযদের পুরস্কার প্রদান:
আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর হিফয বিভাগ হ’তে ২০১৮ সালে হিফয সম্পন্নকারী ৬জন এবং ২০১৭ সালের ৪জন হাফেযকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালের হিফয সম্পন্নকারীগণ হ’লেন, ১. আব্দুল্লাহ রিয়াদ (ঝিনাইদহ), ২. ইমামুল আবেদীন (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), ৩. আব্দুল্লাহ আল-মামূন, (রাজশাহী), ৪. ওসামা ইসলাম (রাজশাহী), ৫. শাহাদত হুসাইন (রাজশাহী), ৬. কাযী নাফীস ইবনে হারূণ (সাতক্ষীরা)।
অতঃপর ২০১৭ সালের হিফয সম্পন্নকারীগণ হ’লেন, ১. মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান (রাজশাহী), ২. মুহাম্মাদ যাকারিয়া (রাজশাহী), ৩. শেখ নো‘মান (চাঁপাই নবাবগঞ্জ) ও ৪. নূরুল ইসলাম (জয়পুরহাট)।
উল্লেখ্য, কাযী নাফীস ২০১৮ সালে মাত্র ১৩ মাসে হিফয সম্পন্ন করে। এজন্য তার সাথে তার পিতা কাযী হারূণুর রশীদ ও প্রধান শিক্ষক হাফেয লুৎফর রহমানকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হ’তে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বিশেষ পুরস্কার প্রদান করেন।
দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশ :
তাবলীগী ইজতেমা ২০১৮ উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ মারকায এলাকার পক্ষ থেকে ‘ছওতুল মারকায’ নামে এবং ‘সোনামণি’ মারকায এলাকার পক্ষ থেকে ‘প্রতিভা’ নামে দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যা ইজতেমা প্যান্ডেলের পূর্ব পার্শ্বস্থ বুক স্টলের মধ্যখানের ফাঁকা জায়গায় প্রদর্শিত হয়।
ফৎওয়া বুথ :
২৮তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা উপলক্ষে গতবারের ন্যায় এবারও ফৎওয়া বুথের ব্যবস্থা করা হয়। আত-তাহরীক কার্যালয়ে স্থাপিত ফৎওয়া বুথে বিভিন্ন যেলা থেকে আগত কর্মী ও সুধীবৃন্দের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা সহকারী মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম। ইজতেমার দু’দিন বিকাল ৪-টা থেকে রাত ১১-টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।
ইজতেমায় গৃহীত প্রস্তাব সমূহ :
ইজতেমার ২য় দিন বাদ এশা ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম সরকারের নিকট নিম্নোক্ত প্রস্তাব ও দাবী সমূহ পেশ করেন এবং উপস্থিত সকলে হাত তুলে সমস্বরে সেগুলির প্রতি জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেন।-
(১) পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে দেশের আইন ও শাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।
(২) মানুষের রক্তচোষা সূদভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বাতিল করে অনতিবিলম্বে ইসলামী অর্থনীতি চালু করতে হবে এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সূদী এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ী মহাজনী সূদী প্রথা এবং সেই সাথে অফিস-আদালত থেকে ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
(৩) হিংসা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করে দল ও প্রার্থীবিহীন ইসলামী নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
(৪) আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে বিষোদগার বন্ধ করতে হবে এবং জঙ্গীবাদের মিথ্যা অপবাদ ও মামলা দিয়ে নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানী করা এবং ইসলামী বই-পুস্তককে ‘জিহাদী বই’ বলে আখ্যায়িত করার অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
(৫) জঙ্গীবাদের বিশ্বাসগত ত্রুটিসমূহ দূর করার জন্য এবং সামাজিক অনাচার সমূহ প্রতিরোধের জন্য শিক্ষার সর্বস্তরে বিশুদ্ধ ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
(৬) প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে জাতিকে পদ্ধতিগতভাবে মেধাশূন্য করার যে পরিস্থিতি তৈরী করা হয়েছে, তা থেকে অবিলম্বে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে হবে এবং এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতঃ চিরতরে প্রশ্ন ফাঁসের ষড়যন্ত্র থেকে জাতিকে রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
(৭) এ সম্মেলন দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে দেশের সকল বিভাগে মেধাবী, যোগ্য ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের নিযুক্ত করার আহবান জানাচ্ছে।
(৮) যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধে মাদকের অব্যাহত সয়লাব ও ইন্টারনেটের অশ্লীল কনটেন্ট সমূহ বন্ধ করার জন্য এবং পিস টিভি বাংলার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য এ সম্মেলন সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে।
(৯) রোহিঙ্গাদের উপর নির্মম নির্যাতনকারী বর্মী সরকারকে বিচারের মুখোমুখি করা এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করে সসম্মানে পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য এ সম্মেলন জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।
(১০) এ সম্মেলন সিরিয়ায় অব্যাহত বোমা হামলায় শত শত নির্দোষ নারী ও শিশু গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। সেই সাথে অবিলম্বে এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ বন্ধে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ওআইসি ও জাতিসংঘের প্রতি জোরালো আহবান জানাচ্ছে।