সমকালীন
যুগে হাদীছ শাস্ত্রের অন্যতম দিকপাল ড. মুছত্বফা আ‘যামী ২০ ডিসেম্বর
২০১৭ইং সঊদী আরবের রাজধানী রিয়াদে ৮৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ভারতীয়
বংশোদ্ভূত এই প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ ১৯৩০ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের আযমগড়
যেলার ‘মউ’ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে ফারেগ
হয়ে তিনি মিসরে গমন করেন এবং ১৯৫৫ সালে আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ.
ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি ইংল্যান্ডের কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি প্রথমে মক্কার উম্মুল কুরা
বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরবর্তীতে রিয়াদের কিং সঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা
করেন। অবসরের পর একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ‘প্রফেসর এমিরেটাস’ হিসাবে কর্মরত
ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তিনি আমেরিকার মিশিগান, প্রিন্সটন এবং কলোরাডো
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসাবে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮০ সালে ইসলামী
গবেষণার জন্য তাঁকে সম্মানজনক কিং ফায়ছাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রদান করা
হয়। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ হ’ল-دراسات في الحديث النبوي وتاريخ تدوينه
যেটি তিনি তাঁর ইংরেজী ভাষায় রচিত পিএইচডি থিসিস Studies in early Hadith
literature with a critical edition of some early texts–এর আরবী অনুবাদ
হিসাবে প্রকাশ করেন কিছুটা বিস্তৃত কলেবরে। ১৯৮০ সালে বৈরূতের আল-মাকতাবুল
ইসলামী ১ম এটি প্রকাশ করে। এছাড়া তাঁর অন্যান্য প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হ‘ল,
Schacht's origins of Muhammadan Jurisprudence, Hadith Methodology and
Literature, The History of the Qur'anic Text from Revelation to
Compilation প্রভৃতি। তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ আরবী ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি
সুনান ইবনু মাজাহ’র প্রথম কম্পিউটারাইজড ভার্সন সম্পাদনা করেন। এছাড়া তিনি
মুওয়াত্ত্বা মালেক ও ছহীহ ইবনু খুযায়মার তাহকীক করেছেন। ১৯৭৭ সালে তুরষ্কে
প্রাপ্ত ছহীহ বুখারীর একটি প্রাচীন পান্ডুলিপিও তিনি সম্পাদনা করেছেন। তিনি
আধুনিক যুগে ইসলামের মৌলিক উৎস তথা কুরআন ও হাদীছের বিরুদ্ধে প্রাচ্যবাদী
বুদ্ধিবৃত্তিক আক্রমণের সবচেয়ে শক্তিশালী জবাব দিয়েছেন। বিশেষতঃ হাদীছের
বিরুদ্ধে গোল্ডযিহের, মার্গোলিয়োথ, জোসেফ শাখত প্রমুখ প্রাচ্যবিদদের
অব্যাহত সমালোচনার গতি রুদ্ধ করতে তাঁর ইলমী জবাবসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রেখেছে। এজন্য বর্তমান যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ হিসাবে তিনি
প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে সমানভাবে সমাদৃত। পশ্চিমা পন্ডিতদের বিরুদ্ধে জবাব
দেয়ার জন্য তিনি লেখনীর মাধ্যম হিসাবে প্রধানতঃ ইংরেজীকে বেছে নিয়েছিলেন।
মৃত্যুকালে তিনি ১ কন্যা ও ২ পুত্র রেখে গেছেন। তাঁর কন্যা ড. ফাতেমা আ‘যমী
বর্তমানে আরব আমিরাতের শেখ যায়েদ ইউনিভার্সিটির গণিত বিভাগের সহযোগী
অধ্যাপিকা এবং পুত্র ড. আক্বীল আ‘যমী রিয়াদের কিং সঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। অপর পুত্র ড. আনাস আ‘যমী রিয়াদের
একটি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত আছেন।
[আমরা এই মহান গবেষক ও হাদীছের খাদেমের মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি ও তাঁর রূহের মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে সর্বোচ্চ স্থান দান করুন- আমীন (স.স)।