রাসূল (ছাঃ)-এর কথা বিভিন্ন মানুষের উপরে প্রভাব বিস্তার করতো। ফলে তারা ইসলাম কবুল করে জীবন পরিচালনা করতেন রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী। বিগত জীবনের যাবতীয় রসম-রেওয়াজ থেকে সর্বতোভাবে ফিরে আসতেন। ফেলে আসা জীবনের ভুল-ত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করতেন। তেমনি সৌভাগ্যবান ব্যক্তি ছিলেন যিমাদ ইবনু ছা‘বালা আল-আযদী (রাঃ)। খুৎবাতুল হাজাত তার ভিতরে কি প্রভাব বিস্তার করেছিল, সে সম্পর্কেই নিম্নোক্ত হাদীছ।

ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যিমাদ (রাঃ) মক্কায় আগমন করলেন। তিনি ছিলেন আযদ শানুয়া গোত্রের লোক। তিনি বাতাস লাগার ঝাঁড় ফুঁক করতেন। তিনি মক্কার কতিপয় নির্বোধ লোককে বলাবলি করতে শুনলেন যে, মুহাম্মাদ উন্মাদ। যিমাদ বললেন, আমি যদি এ লোকটিকে দেখতাম, হয়ত আমার হাতে আল্লাহ তাঁকে শিফা দিতেন। রাবী বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি ঐসব ব্যাধির ঝাঁড়-ফুঁক করে থাকি। আর আল্লাহ আমার হাতে যাকে ইচ্ছা শিফা (আরোগ্য) দান করেন। আপনি কি ঝাঁড়-ফুঁক করাতে ইচ্ছুক?

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, সকল হাম্দ ও প্রশংসা আল্লাহরই জন্য। আমি তাঁরই হাম্দ বর্ণনা করছি, তাঁরই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি। আল্লাহ যাকে হেদায়াত দেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তাকে কেউ হেদায়াত করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল।

রাবী বলেন, যিমাদ বললেন, আপনার বাক্যগুলো পূনরাবৃত্তি করুন। রাসূল (ছাঃ) তিনবার পূনরাবৃত্তি করলেন। রাবী বলেন, যিমাদ বললেন, অনেক গণক, যাদুকর ও কবিদের কথাবার্তা শুনেছি, কিন্তু আপনার এ বাক্যগুলোর মত আর শুনিনি। আপনার এ বাক্যগুলো সাগরের গভীরতায় পৌঁছে গিয়েছে।

রাবী বলেন, যিমাদ বললেন, হাত বাড়িয়ে দিন আমি আপনার কাছে ইসলামের বায়‘আত গ্রহণ করব। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে  বায়‘আত  করে  নিলেন।  এরপর রাসূলুল্লাহ  (ছাঃ) বললেন, এ বায়‘আত কি তোমার কওমের পক্ষ হ’তেও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমার কওমের পক্ষ হ’তেও। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি ছোট সেনাদল প্রেরণ করলেন। তারা যিমাদ (রাঃ)-এর গোত্রের নিকট দিয়ে অতিক্রম করল। সেনাপ্রধাণ তার সৈন্যদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি যিমাদের কওমের নিকট থেকে কোন জিনিস গ্রহণ করেছ? তখন তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলল, আমি একটি পানির (ওযূর) পাত্র নিয়েছি। সেনানায়ক বললেন, তা ফিরিয়ে দাও। এ মানুষগুলো হ’ল যিমাদ (রাঃ)-এর গোত্রের লোক’ (মুসলিম হা/৮৬৮)

শিক্ষা :

১. আরবের লোকেরা ইসলামপূর্ব যুগে জিনের আছরের প্রতি বিশ্বাসী ছিল। যাকে তারা বাতাসের মন্দ প্রভাব বলত। ইসলাম এসে তাকে স্বীকৃতি দেয় (বাক্বারাহ ২/২৭৫)

২. আরবের লোকেরা জিনের আছর থেকে ঝাঁড়-ফুঁক করতো। কখনো তারা জিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতো। ইসলাম এসে তা বাতিল করে দেয় (জিন ৭২/৬)। এখনও কোন মুসলমান রোগমুক্তি ও যাদু থেকে মুক্তির জন্য জিনের কাছে আশ্রয় চায়। যেটা বড় শিরক। যা মানুষের সকল আমল বাতিল করে দেয়।

৩. জাহেলী যুগেও কিছু মানুষ ছিল যারা বিশ্বাস করতো যে, রোগ থেকে আরোগ্য দানকারী কেবল আল্লাহ। কিন্তু বর্তমানে কিছু কিছু মুসলমান আছে, যারা বিশ্বাস করে যে, রাসূল (ছাঃ) ও পীর-আওলিয়ারা বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারেন (নাঊযুবিল্লাহ)। অথচ আল্লাহ ব্যতীত কেউ রোগমুক্তির ক্ষমতা রাখে না (শু‘আরা ২৬/৮০; বুখারী হা/৫৭৪২)

৪. যিমাদ (রাঃ) খুৎবাতুল হাজাত শ্রবণ করে রাসূল (ছাঃ)-কে তা পুনরাবৃত্তি করতে বলেন। তিনি শ্রবণ করে স্বীয় কওম সহ ইসলাম কবুল করেন।

৫. খুৎবাতুল হাজাত রাসূল (ছাঃ) ছাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিতেন। এটা বিবাহের সময়, জুম‘আয় ও অন্যান্য বক্তব্যের সময় পাঠ করা হয়।

৬. এক মুসলমানের নিকট অপর মুসলমানের জান-মাল নিরাপদে থাকবে।

মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার

পিঞ্জুরী, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ।






রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক স্বপ্নে দেখা একদল মানুষের বিবরণ - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
কুরআন তেলাওয়াতকারীর পিতা-মাতার মর্যাদা - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
জন্মভূমি থেকে আবুবকর (রাঃ)-কে বহিষ্কার ও তাঁর অসীম ধৈর্য - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
দাজ্জাল ও ইয়াজূজ-মাজূজের নৃশংসতা - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
মৃত্যুর ভয় - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
রাসূল (ছাঃ) ও মুজাহিদদের সম্পদে বরকত - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
যু-কারদ ও খায়বার যুদ্ধে ছাহাবীগণের বীরত্বের কিছু ঘটনা - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
হাদীছের গল্প - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
উওয়াইস আল-কারানী (রহঃ)-এর মর্যাদা - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
সৎ লোকের দো‘আ - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
হানযালা (রাঃ)-এর আল্লাহভীতি - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
কবরে মানুষের পরীক্ষা - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
আরও
আরও
.