রাজশাহী ২৫ ও ২৬শে ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতি ও শুক্রবার : ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর দু’দিনব্যাপী ২৬তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনাল ময়দানে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফালিল্লা-হিল হাম্দ। ১ম দিন বাদ আছর বিকাল ৪-টায় তাবলীগী ইজতেমা’১৬-এর সভাপতি ও ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর সভাপতিত্বে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে অর্থসহ পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া, রাজশাহীর হিফয বিভাগের প্রধান হাফেয লুৎফর রহমান এবং স্বাগত ভাষণ পেশ করেন তাবলীগী ইজতেমা’১৬ ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক ও ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মাদ আব্দুল লতীফ। অতঃপর উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত।

উদ্বোধনী ভাষণের শুরুতে তিনি আল্লাহর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এজন্য যে, সারা দেশে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি এমনকি রাজশাহী মহানগরীর অনেক স্থানে বৃষ্টিপাত হ’লেও প্যান্ডেল ও তার আশপাশে সুন্দর আবহাওয়া বিরাজমান ছিল। অতঃপর তিনি সম্প্রতি মৃত্যুবরণকারী আল-হেরা শিল্পীগোষ্ঠী প্রধান শফীকুল ইসলামের ও অন্যান্য মৃত কর্মীদের কথা বেদনাভরে স্মরণ করেন ও তাদের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন। অতঃপর তিনি তাবলীগী ইজতেমার গুরুত্ব ও বিশুদ্ধ তাবলীগের ফযীলত ব্যাখ্যা করে সকলকে নেকী উপার্জনে প্রতিযোগিতার আহবান জানান। সবশেষে তিনি সকলকে পাঁচটি বিষয় মেনে চলার উপদেশ দেন এবং ইজতেমার ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখার আহবান জানিয়ে আল্লাহর নামে দু’দিনব্যাপী তাবলীগী ইজতেমার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের উদ্বোধনী ভাষণের পর পূর্ব নির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত সমূহের উপরে ১ম দিন রাত ২-টা পর্যন্ত বক্তব্য পেশ করেন মুহাম্মাদ জামীলুর রহমান (কুমিল্লা), আব্দুল হালীম (রাজশাহী), মাওলানা রুস্তম আলী (রাজশাহী), ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (কুমিল্লা), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (খুলনা), অধ্যাপক মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম (যশোর), মাওলানা সাইফুল ইসলাম বিন হাবীব (ঢাকা), মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা), মাওলানা আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা), মাওলানা শফীকুল ইসলাম (নারায়ণগঞ্জ), ক্বারী সফীরুদ্দীন (ময়মনসিংহ)।

২য় দিন শুক্রবার বাদ ফজর দারুল হাদীছ জামে মসজিদে দরসে কুরআন পেশ করেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক সালাফী (নওগাঁ)। একই সময় প্যান্ডেলে দরসে হাদীছ পেশ করেন মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা)। অতঃপর দুপুর ১২-টা পর্যন্ত বিষয় ভিত্তিক বক্তব্য সমূহ পেশ করেন, মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), মাওলানা আলতাফ হোসাইন (সাতক্ষীরা), মাওলানা দুর্রুল হুদা (রাজশাহী), ক্বামারুয্যামান বিন আব্দুল বারী (জামালপুর) ও ইকবাল কবীর (নরসিংদী)।

অতঃপর ২য় দিন বাদ আছর হ’তে রাত সাড়ে ৩-টা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য পেশ করেন, আব্দুর রশীদ আখতার (কুষ্টিয়া), অধ্যাপক জালালুদ্দীন (নরসিংদী), মুহাম্মাদ আহসান (ঢাকা), নূরুল ইসলাম (রাজশাহী), সিঙ্গাপুর প্রবাসী সংগঠনের প্রশিক্ষণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দূস (পাবনা) অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম (মেহেরপুর), ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (গোপালগঞ্জ), প্রফেসর ডঃ এ.কিউ.এম. বজলুর রশীদ (ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (খুলনা), অধ্যাপক দুর্রুল হুদা (রাজশাহী), অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), মাওলানা শামসুর রহমান আযাদী (ঢাকা), মাওলানা আবুবকর (রাজশাহী), মাওলানা আব্দুল আলীম (ঝিনাইদহ) প্রমুখ।

এবারের তাবলীগী ইজতেমার উপস্থিতি ছিল বিগত সকল ইজতেমার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ফলে উদ্বোধনী ভাষণের সময়েই মূল প্যান্ডেল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অতঃপর রাতে জায়গা না পেয়ে হাযার হাযার শ্রোতাকে প্যান্ডেলের বাইরে মহাসড়কে ও অন্যত্র খোলা আকাশের নীচে অবস্থান নিতে হয়। মহিলা প্যান্ডেলের অবস্থাও তথৈবচ। প্যান্ডেলে সংকুলান না হওয়ায় উঁচু প্রাচীর ঘেরা মহিলা মাদরাসা ক্যাম্পাসের সর্বত্রই মহিলাদের বসে বক্তব্য শ্রবণ করতে হয়েছে। বাইরের যেলাগুলি থেকে সর্বমোট ২৬৮টি রিজার্ভ বাস, ৩৯টি মাইক্রোবাস, ৩২৪টি ভটভটি ও ২৫০টি ইজিবাইক ছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে ৫২টি সাংগঠনিক যেলার প্রায় সব যেলা থেকেই ট্রেন, বাস, মাইক্রো, মটর সাইকেল, বাই সাইকেল ইত্যাদি বিভিন্ন যানবাহন যোগে হাযার হাযার মুছল্লী ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন। সঊদী আরব ও সিঙ্গাপুর সহ অন্যান্য দেশ থেকেও সদ্য দেশে ফেরা অনেক প্রবাসী কর্মী ও সুধী ইজতেমায় যোগদান করেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকেও অনেকে ভিসা নিয়ে ইজতেমায় যোগদান করেন। ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে বিদেশী শাখা সমূহের কর্মীগণ ইজতেমার সরাসরি লাইভ প্রোগ্রাম শোনেন ও দেখেন।

দু’দিনব্যাপী তাবলীগী ইজতেমার বিভিন্ন অধিবেশনে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা সহকারী নূরুল ইসলাম, ‘আন্দোলন’-এর শূরা সদস্য অধ্যাপক জালালুদ্দীন (নরসিংদী), ঢাকা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ তাসলীম সরকার, অর্থ সম্পাদক কাযী হারূনুর রশীদ, সাতক্ষীরা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন, রাজশাহী-পশ্চিম যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক ড. শিহাবুদ্দীন আহমাদ প্রমুখ। তাবলীগী ইজতেমার বিভিন্ন অধিবেশনে কুরআন তেলাওয়াত করেন হাফেয লুৎফর রহমান (বগুড়া), আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (বগুড়া), আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির (সাতক্ষীরা), হাফেয আব্দুল আলীম (দিনাজপুর) ও ক্বারী মুনীরুল ইসলাম (রাজশাহী)। ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করেন আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (বগুড়া), মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান (জয়পুরহাট), আল-হেরা শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক প্রধান জনাব শফীকুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ পুত্র আসাদুল্লাহ আল-গালিব (জয়পুরহাট), আব্দুস সালাম (যশোর), আবু রায়হান (সাতক্ষীরা), আবুল হাসানাত (নারায়ণগঞ্জ) ও মুহাম্মাদ এনামুল হক (নওগাঁ) প্রমুখ। সমবেত কণ্ঠে ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করেন আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (বগুড়া) ও আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর ছাত্রবৃন্দ, যথাক্রমে ওমর ফারূক (৯ম শ্রেণী), হাবীবুর রহমান (৮ম শ্রেণী), আব্দুল হাসীব (৫ম শ্রেণী), তাওহীদ (৫ম শ্রেণী), মীর বখতিয়ার (৫ম শ্রেণী), কাওছার (৫ম শ্রেণী), আবু সাঈদ (৪র্থ শ্রেণী) ও আব্দুল্লাহ শাকিল (হেফয বিভাগ)।

আমীরে জামা‘আতের ১ম দিনের ভাষণ :

প্রথম দিন বাদ এশা রাত ৮-৫০ থেকে ৯-৪৫ পর্যন্ত ৫৫ মিনিটের ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সূরা আম্বিয়া ২৫ আয়াত তেলাওয়াত করে বলেন, মানুষের দাসত্ব পাওয়ার হকদার কেবলমাত্র আল্লাহ। কাফের-মুশরিকরা এটা আল্লাহকে দিতে চায়নি। বরং তারাই বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে তাদের দাস বানিয়েছিল। তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে স্বীকার করলেও তাঁর বিধান সমূহকে অস্বীকার করে। এতেই শুরু হয় হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব। যা আজও চলছে। তিনি সকলকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অটুটভাবে আল্লাহর দাসত্ব করার আহবান জানান এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাহ্’র প্রকৃত মর্ম বুঝে ছিরাতে মুস্তাক্বীমের অনুসারী হওয়ার জন্য আল্লাহর তাওফীক কামনা করেন।

২য় দিনের ভাষণ :

ইজতেমার ২য় দিন বাদ এশা রাত ৯-৫০ থেকে ৪৫ মিনিটের ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সূরা হুজুরাত ১৫ আয়াত তেলাওয়াত করে বলেন, সার্বিক জীবনে আল্লাহর দাসত্ব কায়েমের পথ ও পদ্ধতি স্বীয় কথা ও কর্মের মাধ্যমে বাৎলিয়ে গিয়েছেন শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম। তাঁর দেখানো পথের বাইরে গিয়ে জিহাদ ও ক্বিতালের কোন সুযোগ নেই। তিনি জিহাদের নামে ইসলামের শত্রুদের পাতানো ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য মুসলিম তরুণদের প্রতি আহবান জানান।

ইজতেমার অন্যান্য রিপোর্ট

জুম‘আর খুৎবা :

ইজতেমার ২য় দিন শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত এবং কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম জুম‘আর খুৎবা প্রদান করেন। এ সময় মহিলা মাদরাসা ও ট্রাক টার্মিনালের পার্শ্ববর্তী পৃথক স্থানে দু’টি মহিলা প্যান্ডেল সহ ট্রাক টার্মিনালের পুরো ময়দানব্যাপী সুবিশাল প্যান্ডেল পূর্ণ হয়ে প্যান্ডেলের বাইরে ও মহাসড়কে খোলা স্থানে বসে মুছল্লীরা খুৎবা শ্রবণ করেন। একই মাইক্রোফোনে প্রদত্ত জুম‘আর খুৎবায় সমবেত পুরুষ ও মহিলা মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, আল্লাহর দীদার লাভ করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর সেজন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ করা কর্তব্য। অতএব মাল ও মর্যাদার লোভকে দমন করে পরকালীন মুক্তির প্রস্ত্ততি গ্রহণ করাই হবে প্রকৃত অর্থে বুদ্ধিমানের কাজ।

ওলামা সমাবেশ  :

ইজতেমার ২য় দিন সকাল সাড়ে ৯-টায় আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর শিক্ষক মিলনায়তন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে ‘ওলামা সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। ওলামা সমাবেশে সমবেত আলেমদের উদ্দেশ্যে আমীরে জামা‘আত বলেন, আলেমগণ হলেন নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ কোন দীনার ও দিরহাম রেখে যাননি অহীর ইলম ব্যতীত। সেই ইলমকে ধারণ করা ও তদনুযায়ী নিজেকে ও সমাজকে গড়ে তোলা আলেমদের কর্তব্য। যাদের জন্য ফেরেশতারা ডানা বিছিয়ে দেয়। গর্তের পিপীলিকা ও পানির মাছ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট দো‘আ করে (মিশকাত হা/২১২-১৩)। তিনি বলেন, আলেম শত শত হবে। কিন্তু ‘আমীর’ একজন হবেন। তাঁর পিছনে ঐক্যবদ্ধ থাকা ও সার্বিক জীবনে অহি-র বিধান পালনে জামা‘আতবদ্ধভাবে চেষ্টা চালানো আমাদের প্রধান কর্তব্য হবে। অতএব আসুন আমরা নবীদের চরিত্রে চরিত্রবান হই এবং অহি-র বিধান কায়েমে সচেষ্ট হই। সমাবেশে বিভিন্ন যেলা থেকে আগত ওলামায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন।

যুবসমাবেশ :

ইজতেমার ২য় দিন সকাল ১০-টায় প্রস্তাবিত দারুলহাদীছ বিশ্ববিদ্যালয় (প্রাঃ) জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে পৃথক প্যান্ডেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর উদ্যোগে ‘যুবসমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশীদ আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, ১৯৭৪ সালে খুলনায় ‘আঞ্জুমানে শুববানে আহলেহাদীছ’ এবং ১৯৭৮ সালে ঢাকায় ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ কায়েমের সূচনা থেকে এযাবৎ আমাদের একটাই লক্ষ্য, তরুণদের ফিরক্বা নাজিয়াহর অনুসারী করে গড়ে তোলা। এপথে দৃঢ় থাকা বড়ই কঠিন। কিন্তু জান্নাত পিয়াসীদের জন্য খুবই সহজ। আমরা ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র ঘোষিত লক্ষ্য হাছিলে সকলকে দৃঢ় থাকার আহবান জানাচ্ছি।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, দফতর ও যুববিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মাদ আমীনুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ জালালুদ্দীন, ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাযী আব্দুল্লাহ শাহীন, ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক আব্দুল হালীম, ‘যুবসংঘ’ ঢাকা যেলা সভাপতি হুমায়ুন কবীর, জয়পুরহাট যেলা সভাপতি আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা যেলা সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মামূন, নারায়ণগঞ্জ যেলা সভাপতি মুস্তাফীযুর রহমান ও সিরাজগঞ্জ যেলা সভাপতি শামীম আহমাদ প্রমুখ। স্বাগত ভাষণ দেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ আরীফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জামীলুর রহমান। সমাবেশে বিপুল সংখ্যক কর্মী ও সুধীমন্ডলী অংশগ্রহণ করেন।

মহিলা সমাবেশ :

ইজতেমার ২য় দিন শুক্রবার সকাল ৮-টায় মহিলা সালাফিইয়াহ মাদরাসা ময়দানে মহিলাদের প্যান্ডেলে মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সাড়ে ১০-টায় উপস্থিত হয়ে পর্দার আড়াল থেকে সমবেত মা-বোনদের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, নারী ও পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতা ব্যতীত সত্যিকারের ইসলামী পরিবার ও সমাজ কায়েম হওয়া সম্ভব নয়। নবীগৃহে তাঁর স্ত্রীগণ ছিলেন উম্মতের প্রশিক্ষক স্বরূপ। তাঁদের মাধ্যমে আমরা ইসলামী শরী‘আতের অসংখ্য বিধান জানতে পেরেছি। অতএব আপনারাও সংগঠনের দেওয়া ‘কর্মপদ্ধতি’ অনুযায়ী স্ব স্ব পরিবার ও সমাজকে গড়ে তুলুন।

‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্যা আঞ্জুমানআরার সভানেত্রীত্বে উক্ত মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে আমীরে জামা‘আতের সাথে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তাবলীগী ইজতেমা ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক আব্দুল লতীফ ও ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক আব্দুল হালীম প্রমুখ।

হাফেয শিক্ষার্থীদের সনদ প্রদান :

২০১৫ সালে আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর হিফয বিভাগ থেকে ৫ জন ছাত্র এবং মারকাযের মহিলা শাখা মহিলা সালাফিইয়াহ মাদরাসা থেকে ১০ জন ছাত্রী পবিত্র কুরআন হিফয সম্পন্ন করেছে। ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ এশা তাদের পুরস্কার ও সনদ প্রদান করেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ও মারকাযের প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল খালেক সালাফী। সনদপ্রাপ্ত ছাত্ররা হ’ল : ১. আব্দুল হাসীব (গাইবান্ধা), ২. নাছরুল্লাহ (রাজশাহী), ৩. ছফিউর রহমান (রাজশাহী), ৪. শিহাবুদ্দীন (নাটোর)  ও ৫. যারিফ মুক্তাদির (রংপুর)।

সনদপ্রাপ্ত ছাত্রীরা হ’ল : ১. তামান্না তাসনীম (কুড়িগ্রাম), ২. মাহফূযা (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), ৩. মাহদিয়া (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), ৪. কারীমা (নওগাঁ), ৫. সুমাইয়া পারভীন (নাটোর), ৬. জুওয়াইরিয়া তাসনীম (নওগাঁ), ৭. তাসলীমা (নওগাঁ), ৮. শাহনায (বগুড়া), ৯. সুমাইয়া (বগুড়া) ও ১০. খাদীজাতুল কুবরা (চাঁপাই নবাবগঞ্জ)।

জাতীয় গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান :

বিগত বছরের ন্যায় এবারও ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ‘জাতীয় গ্রন্থপাঠ’ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচিত গ্রন্থ ছিল আমীরে জামা‘আত রচিত ‘সীরাতুর রাসূল (ছাঃ)’। এতে শীর্ষস্থান অধিকারী তিনজন হ’ল যথাক্রমে ১. আব্দুল্লাহ আল-মাহমূদ (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), ২. আরীফুল ইসলাম (দিনাজপুর) ও ৩. আব্দুল কাদের (চাঁপাই নবাবগঞ্জ)। এছাড়া ৭ জনকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা সনদ ও পুরস্কার তুলে দেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত।

বিদায়ী ভাষণ ও দো‘আ :

ইজতেমার ৩য় দিন শনিবার ইজতেমা ময়দানে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত-এর ইমামতিতে ফজরের ছালাত অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর তিনি মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বিদায়ী ভাষণ পেশ করেন। সবাইকে ছহীহ-সালামতে স্ব স্ব গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেন। অতঃপর সভাপতি হিসাবে তিনি বিদায়কালীন ও বৈঠক ভঙ্গের দো‘আ পাঠের মাধ্যমে দু’দিনব্যাপী ২৬তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

সাইকেল আরোহী :

তাবলীগী ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য সুদূর সাতক্ষীরা (অন্যূন ৩২৫ কি.মি. দূর) থেকে বাইসাইকেল যোগে নওদাপাড়ায় পৌঁছেন তালা উপযেলাধীন গড়েরকান্দা গ্রামের আব্দুল বারী (৫৯) ও সাতক্ষীরা সদর থানার কাওনডাঙ্গা গ্রামের যয়নাল আবেদীন (৭৬)। সাতক্ষীরা থেকে রাজশাহী পৌঁছতে তার সময় লাগে ২১ ঘণ্টা। তিনি ২০০৪ সাল থেকে প্রতি বছর সাইকেল যোগে ইজতেমায় আসেন। অপরদিকে আব্দুল বারীর সময় লাগে সাড়ে ১৬ ঘণ্টা। এবার নিয়ে তিনি ১৪ বার বাইসাইকেল যোগে তাবলীগী ইজতেমায় যোগদান করেছেন। তাদের এই জোশ ও আন্তরিকতাকে আল্লাহ কবুল করুন এবং তাদেরকে ইহকাল ও পরকালে উত্তম জাযা দান করুন- আমীন!  

ইজতেমায় গৃহীত প্রস্তাব সমূহ :

ইজতেমার ২য় দিন রাতে আমীরে জামা‘আতের ভাষণের পর ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম সরকারের নিকট নিম্নোক্ত প্রস্তাব ও দাবী সমূহ পেশ করেন এবং উপস্থিত সকলে হাত তুলে সমস্বরে সেগুলির প্রতি জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেন।-

(১) পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে দেশের আইন ও শাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং মানুষের রক্তচোষা সূদভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বাতিল করতে হবে।

(২) জাতি বিভক্তির প্রচলিত নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল করে দল ও প্রার্থীবিহীন ইসলামী নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

(৩) ৯০% মুসলমানদের এই দেশে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য এবং সাধারণ শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য এ সম্মেলন সরকারের প্রতি জোরালো আহবান জানাচ্ছে।

(৪) সহশিক্ষা পদ্ধতি বাতিল করে ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অথবা পৃথক শিফটিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

(৫) দেশের অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে ছবি টাঙ্গানো এবং বিভিন্ন দিবস পালন ও রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন বাধ্যতামূলক করা হ’তে বিরত থাকতে হবে।

(৬) শিশু নির্যাতন ও শিশু হত্যা বন্ধে দ্রুত ও কঠোর আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

(৭) পর্ণোগ্রাফী সহ পরিবার ও সমাজ বিধ্বংসী সকল ওয়েবসাইট ও টিভি চ্যানেলগুলির নোংরা সম্প্রচার বন্ধ করতে হবে এবং মোবাইল কোম্পানীগুলিকে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে।

(৮) থার্টি ফার্স্ট নাইট, ভালোবাসা দিবস, বর্ষবরণ, বেদী ও মিনার পূজা ইত্যাদি অপসংস্কৃতি এবং সর্বত্র মূর্তি সংস্কৃতি চালুর অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।

(৯) পদ্মা, তিস্তা ও সুরমা সহ দেশের নদীসমূহকে পানিশূন্য করার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার জন্য ও প্রস্তাবিত রামপাল পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে সুন্দরবন ধ্বংসের পাঁয়তারা থেকে বিরত থাকার জন্য এবং সর্বোপরি বিদেশের সাথে যেকোন চুক্তি করার ক্ষেত্রে নিজ দেশের স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখার জন্য এ সম্মেলন সরকারের প্রতি জোরালো আবেদন জানাচ্ছে।

(১০) বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলিকে করায়ত্ত করার হীন উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদীদের পাতানো জঙ্গীবাদের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য এ সম্মেলন মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।

[২৬ ও ২৮শে ফেব্রুয়ারী দৈনিক ইনকিলাবে ১২ পৃষ্ঠায় প্রস্তাবগুলি সহ ইজতেমার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।- সম্পাদক]


 





বিষয়সমূহ: আত্মশুদ্ধি
আরও
আরও
.