এ বছর ভারী বর্ষণ এবং উজান
থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট
যেলা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহু মানুষের বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে যায় এবং ফসলের
ব্যাপক ক্ষতি হয়। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে ২০০৪ সালের পর এটিই সবচেয়ে বড় বন্যা।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বানভাসি মানুষের সহায়তায় ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন
বাংলাদেশ’ ত্রাণ কর্মসূচী হাতে নেয়। ত্রাণ হিসাবে পানি বন্দী পরিবার সমূহের
মধ্যে খাবার প্যাকেট ও পুনর্বাসনের জন্য টিন বিতরণ করা হয়। ৪ ও ৫ই জুন
যেলার তিনটি থানার ৮৫৫টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। ত্রাণ
বিতরণে কেন্দ্র থেকে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক
ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ
আব্দুল্লাহ ছাকিব ও আত-তাহরীক টিভির অনুষ্ঠান পরিচালক মুহাম্মাদ শরীফুল
ইসলাম। বিস্তারিত নিম্নরূপ :
সিলেট ৪ জুন শনিবার : অদ্য বেলা ১১-টায় যেলার জৈন্তাপুর উপযেলাধীন মুহাম্মাদিয়া দাখিল মাদ্রাসা ময়দানে হাজারী সেনগ্রাম, ছোটরী সেনগ্রাম, কাঞ্জর, গরদনা ও আমরপুর গ্রামের ৩৯টি পরিবারের মধ্যে টিন বিতরণ করা হয়। এ সময়ে কেন্দ্রীয় মেহমানগণ ছাড়াও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এ সময়ে কেন্দ্রীয় মেহমানগণ বন্যার্ত ভাই-বোনদেরকে এই বিপদে ধৈর্যধারণ করার উপদেশ দেন এবং যাবতীয় গোনাহের কাজ পরিহার করে তাকওয়াপূর্ণ জীবন যাপনের পরামর্শ দেন। মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি মাষ্টার শফীকুল ইসলাম, সিলেট মহানগর ‘আন্দোলন’-এর আহবায়ক জাবের হোসাইন এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পেশ করেন।
সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে নেতৃবৃন্দ যেলার কানাইঘাট উপযেলাধীন বাঁশবাড়ী তাহিরিয়া সালাফিয়া দাখিল মাদ্রাসায় গমন করেন। সেখানে বেলা ২-টায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এ সময় ত্রাণ বিতরণপূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও বাঁশবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা পুরান ঢাকার বাংলাদুয়ার আহলেহাদীছ জামে মসজিদের সাবেক খতীব ও ‘যুবসংঘ’-এর প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম-আহবায়ক প্রবীণ আলেম মাওলানা শামসুদ্দীন সিলেটী বক্তব্য পেশ করেন। অতঃপর ফাগু ও বাঁশবাড়ী গ্রামের বন্যাকবলিত ৭৪টি দরিদ্র পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী এবং ১৩টি পরিবারের মধ্যে টিন বিতরণ করা হয়। এখানে ত্রাণ বিতরণ শেষে মাদ্রাসা সংলগ্ন জামে মসজিদে যোহর-আছর ছালাত আদায় শেষে স্থানীয় যুবকদের নিয়ে ‘যুবসংঘ’-এর কানাইঘাট উপযেলা কমিটি গঠন করা হয়।
অতঃপর প্রস্তাবিত আল-ফালাহ মহিলা সালাফিইয়া মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী ৫০টি পরিবারের মধ্যে এবং তিনচটি নয়াগ্রাম ১৫ পরিবারের এবং গু গোয়ালজুর দারুলহাদীছ সালাফিইয়া মাদ্রাসায় ২২ পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও ১০টি পরিবারের মধ্যে টিন বিতরণ করা হয়।
দিন ব্যাপী ত্রাণ বিতরণ শেষে নেতৃবৃন্দ গোয়ালজুর মাদ্রাসার অফিস কক্ষে মাগরিব ও এশার ছালাত জমা-কছর করে আদায় করেন। ছালাত শেষে স্থানীয় মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আহলেহাদীছ আন্দোলনের পরিচয় তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক। অতঃপর ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হারূণ হোসাইনের পিতা মাওলানা আহমাদ হোসাইনকে দেখতে তার বাড়ীতে গমন করেন। নেতৃবৃন্দ তার শারীরিক খোঁজ-খবর নেন ও সুস্থতার জন্য দো‘আ করেন। অতঃপর সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে রাত ১০-টায় তারা সিলেট শহরে ফিরে আসেন।
সিলেট ৫ই জুন রবিবার : অদ্য রবিবার দ্বিতীয় দিনের মত ত্রাণ বিতরণে বের হন নেতৃবৃন্দ। সকাল ৭-টায় রওয়ানা হয়ে প্রথমে জৈন্তাপুর উপযেলাধীন সারীঘাট খাদীজাতুল কুবরা ডিএইচ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় ত্রাণ বিতরণ করেন। সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে গুয়াইনঘাট থানাধীন দক্ষিণ জাফলং ইউনিয়নের কাফাউরা গ্রমে ত্রাণ বিতরণ করেন। কাফাউরা ও পার্শ্ববর্তী ৮টি গ্রামের ৫০০ (পাঁচ শত) বন্যার্ত দরিদ্র পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ সময়ে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ জমায়েত হয়। নেতৃবৃন্দ তাদের উদ্দেশ্যে নছীহত মূলক বক্তব্য পেশ করেন। সকলকে নিয়মিত ছালাত আদায় এবং শিরক-বিদ‘আত সহ যাবতীয় হারাম থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সহ স্থানীয় মেম্বার জনাব আব্দুল করীম ত্রাণ বিতরণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন।
পরবর্তীতে ১০শে জুন শুক্রবার যেলা নেতৃবৃন্দ কানাইঘাট উপযেলার ভাড়ারী মাটি ও সিলেট মহানগরীর মির্জা জাঙ্গালে ৪৪টি পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ, খাদ্য সামগ্রী ও টিন বিতরণ করেন।
ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা ফায়যুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ সম্পাদক সম্পাদক আব্দুল হাফীয, মহানগর ‘আন্দোলন’-এর আহবায়ক জাবের আহমাদ, যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুল খালেক, আত-তাকওয়া মসজিদের সেক্রেটারী কালাম আহমাদ চৌধুরী, যেলা ‘যুবসংঘে’র সভাপতি আব্দুর রাযযাক ও সহ-সভাপতি গোলাম আযম, সাধারণ সম্পাদক তুফায়েল আহমাদ ও অর্থ সম্পাদক মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম প্রমুখ।