পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিশুদ্ধ দাওয়াত নিয়ে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ুন

-মুহতারাম আমীরে জামা‘আত

নওদাপাড়া, রাজশাহী ২৯ ও ৩০শে আগস্ট বৃহস্পতি ও শুক্রবার : গত ২৯ ও ৩০শে আগস্ট বৃহস্পতি ও শুক্রবার ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়ায় অনুষ্ঠিত বার্ষিক কর্মী সম্মেলনে প্রদত্ত উদ্বোধনী ভাষণে সম্মেলনের সভাপতি মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত আহবান জানান। তিনি বলেন, ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হ’ল পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের শাশ্বত বিধানের প্রতি আনুগত্যের মস্তক অবনত করা। আজ মুসলিম উম্মাহ যে বিপর্যয় ও অধঃপতনের মধ্যে অতিক্রম করছে তার পিছনে মৌলিক কারণ হ’ল ইলাহী বিধান থেকে দূরে সরে যাওয়া। তিনি উপস্থিত নেতা-কর্মীদেরকে সমাজের সর্বস্তরে এই বিশুদ্ধ দাওয়াত ছড়িয়ে দেওয়ার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের আহবান জানান। তিনি বিরূপ আবহাওয়া সত্ত্বেও যথাসময়ে সকলের উপস্থিতিতে সুন্দরভাবে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু করতে পেরে মহান আল্লাহর শুকরিয়া জানান। অতঃপর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্রেফ দ্বীনের মহববতে ও সংগঠনের টানে যেসব কর্মী এখানে উপস্থিত হয়েছেন, তাদের সবাইকে সাদর অভিনন্দন জানিয়ে তিনি আল্লাহর নামে দুই দিন ব্যাপী কর্মী সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

১ম দিন বৃহস্পতিবার সকাল ৯-টায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। অতঃপর ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইনের পরিচালনায় ১ম অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম স্বাগত ভাষণ পেশ করেন। অতঃপর সকাল সোয়া ৯-টায় মুহতারাম আমীরে জামা‘আত উদ্বোধনী ভাষণ পেশ করেন।

আমীরে জামা‘আতের উদ্বোধনী ভাষণের পর বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু হয়। অতঃপর ‘সমাজ সংস্কারে নেতৃত্ব ও আনুগত্যের গুরুত্ব’ বিষয়ে কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ শিক্ষক সমিতি’র সভাপতি মাওলানা দুররুল হুদা (রাজশাহী), ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর নেতৃত্ব সংস্কার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশীদ আখতার (কুষ্টিয়া), ‘সংগঠনের আমানত ও হিসাব সংরক্ষণ পদ্ধতি’ বিষয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম (কুষ্টিয়া), ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর শিক্ষা সংস্কার বিষয়ে কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন (সাতক্ষীরা), ইসলামী পরিবার গঠনে ‘আহলেহাদীছ মহিলাসংস্থা’র করণীয় বিষয়ে কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা দুররুল হুদা (রাজশাহী), গঠনতন্ত্রের ধারা-৩ ও ৪ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা শফীকুল ইসলাম (নারায়ণগঞ্জ) এবং নেতৃত্বের গুণাবলী বিষয়ে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (যশোর) আলোচনা পেশ করেন।

অতঃপর বাদ আছর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় ২য় অধিবেশন শুরু হয়। সেখানে ‘কর্মীদের গুণাবলী’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ ওলামা ও ইমাম সমিতি’র সহ-সভাপতি মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা)।

এরপর সংগঠনের উন্নতি ও অগ্রগতি সম্পর্কে যেলা সভাপতি ও প্রতিনিধিগণের মধ্য হ’তে পরামর্শমূলক বক্তব্য সমূহ আহবান করা হয়। তাতে একে একে বক্তব্য পেশ করেন রাজশাহী-সদর সাংগঠনিক যেলা ‘আন্দোলন’-এর উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট জারজিস আহমাদ, সঊদী আরব শাখার সাবেক প্রচার সম্পাদক মুহাম্মাদ সোহরাব আলী, কুমিল্লা যেলার প্রশিক্ষণ সম্পাদক জামীলুর রহমান, জয়পুরহাট যেলার সভাপতি মাহফূযুর রহমান, বাগেরহাট যেলার সহ-সভাপতি মাওলানা আহমাদ আলী, চট্টগ্রাম যেলার সাধারণ সম্পাদক শেখ সা‘দী, নীলফামারী-পশ্চিম সাংগঠনিক যেলার সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ, কিশোরগঞ্জ যেলার সভাপতি অধ্যাপক এস. এম নূরুল ইসলাম সরকার, নওগাঁ যেলার সভাপতি মাওলানা আব্দুস সাত্তার ও রংপুর যেলার সাবেক সভাপতি মাস্টার খায়রুল আযাদ প্রমুখ। প্রবাসী প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বক্তব্য পেশ করেন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সিঙ্গাপুর শাখার তাবলীগ সম্পাদক শফীকুর রহমান (কুষ্টিয়া)।

অতঃপর বাদ মাগরিব ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ শিক্ষক সমিতি’র সভাপতি মাওলানা দুররুল হুদার পরিচালনায় ৩য় অধিবেশন শুরু হয়। সেখানে ‘তাক্বওয়া: আন্দোলনের সফলতার চাবিকাঠি’ বিষয়ে জামালপুর-দক্ষিণ যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক ক্বামারুয্যামান বিন আব্দুল বারী (জামালপুর), সংগঠনে ইখলাছের গুরুত্ব বিষয়ে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম (মেহেরপুর), সমাজ পরিবর্তনের স্থায়ী কর্মসূচী  বিষয়ে কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক জালালুদ্দীন (নরসিংদী) এবং আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর অর্থনৈতিক সংস্কার বিষয়ে কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ও আত-তাহরীক অনলাইন টিভির পরিচালক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (গোপালগঞ্জ) বক্তব্য পেশ করেন ।

দরসে কুরআন : সম্মেলনের ২য় দিন শুক্রবার বাদ ফজর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সূরা ছফের ১০-১১ আয়াতের উপর দরসে কুরআন পেশ করেন। তিনি জামা‘আতদ্ধভাবে দাওয়াতী কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।

অতঃপর ২য় দিনের ১ম অধিবেশনের শুরুতে দাঈ ইলাল্লাহর চরিত্র বিষয়ে কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও কুমিল্লা যেলা সভাপতি মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা) বক্তব্য রাখেন। অতঃপর সংগঠনের অগ্রগতিতে লক্ষ্যে অবিচল থাকার গুরুত্ব বিষয়ে কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা) এবং জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর ভূমিকা বিষয়ে ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম (জয়পুরহাট) বক্তব্য পেশ করেন। এরপর ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইনের পরিচালনায় গঠনতন্ত্রের ধারা-৭ ও ৮-এর উপর এবং কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা দুররুল হুদার পরিচালনায় ইহতিসাব ৪-৮ পৃষ্ঠার উপর সামষ্টিক পাঠ অনুষ্ঠিত হয়।

নাশতার বিরতি শেষে ২য় অধিবেশনের শুরুতে আল-‘আওন-এর পরিচয় ও প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন আল-‘আওন-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির (মারকায)। অতঃপর ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর অগ্রগতিতে সমাজকল্যাণের গুরুত্ব বিষয়ে ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম (রাজশাহী), সমাজ সংস্কারে ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র ভূমিকা বিষয়ে ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব (মারকায) ও সমাজ সংস্কারে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর ভূমিকা বিষয়ে বাংলাদেশ আহলেহাদীছ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর ভাইস প্রিন্সিপাল ড. নূরুল ইসলাম (রাজশাহী) বক্তব্য পেশ করেন। অতঃপর ২০১৭-২০১৯ সেশনের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। অতঃপর তিনি সরকারের নিকট দাবী ও প্রস্তাবনা সমূহ উপস্থাপন করেন ও তা বিপুলভাবে সমর্থিত হয়।

অতঃপর আগামী ২০১৯-২০২১ সেশনের জন্য সংগঠনের ৬১টি যেলার মধ্যে ৫৫টি যেলার মনোনীত সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম। অতঃপর তাদের বায়‘আত নেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত।

জুম‘আর খুৎবা :

কর্মী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সূরা হাশর ৭ আয়াতের উপর প্রদত্ত জুম‘আর খুৎবায় রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শে জামা‘আতবদ্ধভাবে সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে সার্বিক জীবন পরিচালনার আহবান জানান। তিনি বলেন, পৃথিবীতে প্রথম আদম (আঃ) ও হাওয়ার মাধ্যমে পারিবারিক সংগঠন কায়েম হয়েছিল। তাঁদের দু’জনের একত্রিত জীবন-যাপনের মাধ্যমে পৃথিবী আবাদ হয়েছিল। ভালোর প্রতি হিংসা মানুষের চিরন্তন অভ্যাস। আসমানে আদম (আঃ)-এর প্রতি হিংসা করেছিল ইবলীস; আর যমীনে হাবীলের প্রতি হিংসা করেছিল কাবীল। ভালো ব্যক্তি আল্লাহর পথের অনুসরণ করে। আর মন্দ ব্যক্তি শয়তানের পথের অনুসরণ করে। বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৬০০ কোটি মানুষ নূহ (আঃ)-এর কিশতীতে উদ্ধার পাওয়া ৮০ জন মুমিন নর-নারীর বংশধর। কিন্তু বর্তমানের অধিকাংশ মানুষ তাদের সেই ঈমানদার পূর্বপুরুষদের কথা ভুলে গেছে। তিনি বলেন, আমরা নবী-রাসূলদের অনুসরণে পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই। আর এজন্য বিশ্বাসের জগৎকে শিরকমুক্ত এবং আমলী জগৎকে বিদ‘আতমুক্ত করতে হবে। হাশরের মাঠে রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত পেতে হ’লে আমাদেরকে অবশ্যই তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। জাল-যঈফ ও বানাওয়াট হাদীছের অনুসরণ করলে রাসূলের শাফা‘আত পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, তাওহীদ ও সুন্নাতের অনুসরণের জন্য সাহসী হওয়া প্রয়োজন। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, ভীতু ও কাপুরুষ কখনো প্রকৃত অর্থে আহলেহাদীছ হ’তে পারে না। তিনি কর্মীদেরকে যেকোন মূল্যে নির্ভেজাল তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাহর অনুসারী হওয়ার আহবান জানান।

সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব সমূহ :

সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম নিম্নোক্ত প্রস্তাবসমূহ বিবেচনার জন্য দেশের সরকার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণের নিকটে পেশ করেন এবং উপস্থিত সকলে হাত তুলে সমস্বরে সেগুলির প্রতি জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেন।-

১. এ সম্মেলন পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে দেশের আইন, বিচার ও শাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে।

২. এই সম্মেলন জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকারের ভূমিকাকে স্বাগত জানাচ্ছে। সাথে সাথে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগঠন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ এবং তার অঙ্গ সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সমূহের দাওয়াতী ও সামাজিক কর্মসূচী সমূহ অবাধে পরিচালনার সুযোগ প্রদানের জোর দাবী জানাচ্ছে।

৩. এ সম্মেলন স্কুল-মাদরাসার সিলেবাস প্রণয়ন কমিটিতে এবং ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর পরিচালনা কমিটিতে ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর মনোনীত প্রতিনিধি রাখার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানাচ্ছে।

৪. এ সম্মেলন প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং সহ শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য জোর আবেদন জানাচ্ছে।

৫. এই সম্মেলন খুন ও ধর্ষণের ব্যাপারে স্বীকারোক্তিদানকারী অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করার আহবান জানাচ্ছে। সেই সাথে বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েদের ১৮ বছর বয়সের ইসলাম বিরোধী শর্ত এবং তালাকের ক্ষেত্রে ‘হিল্লা প্রথা’ বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে।

৬. এ সম্মেলন মাদক প্রতিরোধে সরকারের সদিচ্ছা বাস্তবায়নের সহযোগী হিসাবে দেশের একমাত্র মাদকমুক্ত রক্তদান সংগঠন ‘আল-আওন স্বেচ্ছাসেবী নিরাপদ রক্তদান সংস্থা’কে সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা দানের আহবান জানাচ্ছে।

৭. এ সম্মেলন দেশের বিভিন্ন স্থানে আহলেহাদীছ মসজিদসমূহ ভাঙ্গা, জবরদখল করা এবং আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে মহলবিশেষের আক্রমণাত্মক অবস্থানের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সরকারের নিরপেক্ষ ও সক্রিয় হস্তক্ষেপ দাবী করছে।

৮. এ সম্মেলন ছেলে ও মেয়েদের সহশিক্ষা বাতিলের দাবী জানাচ্ছে। সাথে সাথে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শালীন পোষাক ও পর্দাপ্রথা নিশ্চিত করার এবং মহিলাদের পর্দা পালনে বাধাসৃষ্টিকারীদেরকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানাচ্ছে।

৯. এই সম্মেলন বিনোদন ও সংস্কৃতির নামে টিভি-সিনেমা ও পত্র-পত্রিকা থেকে অশ্ল­ীলতা ও বেলেল্ল­াপনা বন্ধ করার এবং ইন্টারনেট থেকে অশ­ীল কন্টেন্টসমূহ অপসারণ করার দাবী জানাচ্ছে। সেই সাথে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে এবং বিশুদ্ধ ইসলামের প্রচার ও প্রসারে মাসিক আত-তাহরীক ও আত-তাহরীক অনলাইন টিভিসহ অন্যান্য সুস্থ গণমাধ্যমকে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা দানের আহবান জানাচ্ছে।

১০. এই সম্মেলন রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে তাদেরকে সসম্মানে দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য অথবা তাদের বাসভূমি রাখাইন প্রদেশকে স্বাধীন ‘আরাকান রাজ্য’ ঘোষণার জন্য জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।

১১. এই সম্মেলন ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫-ক ধারা বাতিলের মাধ্যমে কাশ্মীরী মুসলমানদের স্বাধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। সেই সাথে ১৯৪৮ সালে গৃহীত জাতিসংঘের ৪৭ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী স্বাধীন গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার বাস্তবায়নের জোর দাবী জানাচ্ছে।

১২. এ সম্মেলন ডেঙ্গু মহামারীর ক্রমাগত ব্যাপকতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং এডিস মশা নিধনের প্রয়োজনীয় ঔষধ ও টেস্টিং কিট্স সারা দেশে ব্যাপকভাবে ফ্রি সরবরাহের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে। এই সাথে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যেসব রোগী ও ডাক্তার অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছে এবং তাদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে। সাথে সাথে ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণকারী প্রত্যেক পরিবারকে যথাযোগ্য ক্ষতিপূরণ দানের জন্য সরকারের নিকট দাবী জানাচ্ছে।

কর্মী সম্মেলনের ২য় দিন শুক্রবার সকালে বিশেষ অতিথি হিসাবে ভাষণ প্রদান করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মুহাম্মাদ রবীউল ইসলাম (পাবনা)। সম্মেলনের বিভিন্ন পর্যায়ে কুরআন তেলাওয়াত করেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর হিফয বিভাগের প্রধান হাফেয লুৎফর রহমান (বগুড়া), আল-‘আওন-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির (মারকায), মারকাযের মক্তব বিভাগের শিক্ষক ক্বারী আব্দুল আউয়াল (রাজশাহী) ও ক্বারী নিযামুদ্দীন (নওগাঁ)। ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করেন আল-হেরা শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (বগুড়া), আল-হেরা শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান (জয়পুরহাট), কেরামত আলী (পাবনা)। অতঃপর ফরীদুল ইসলাম (নাটোর)-এর নেতৃত্বে আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর ছাত্রদের নিয়ে সমবেত কণ্ঠে জাগরণী পরিবেশিত হয়।

কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য সম্মেলন :

সম্মেলনের ২য় দিন শুক্রবার সকাল ৯-টায় আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর পূর্ব পার্শ্বস্থ ভবনের ৩য় তলায় ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম (মেহেরপুর)। অতঃপর ২০১৭-২০১৯ সেশনের আয়-ব্যয়ের অডিটকৃত হিসাব পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম (কুষ্টিয়া) এবং বিগত ২০১৭-১৯ সেশনের সার্বিক সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (যশোর)। এরপর সংগঠনের অগ্রগতি সম্পর্কে পরামর্শমূলক বক্তব্য আহবান করা হয়। সেখানে বক্তব্য পেশ করেন কুমিল্লা যেলার প্রশিক্ষণ সম্পাদক জামীলুর রহমান ও জয়পুরহাট যেলার সভাপতি মাহফূযুর রহমান। এরপর কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মুহাম্মাদ রবীউল ইসলাম (পাবনা)। অতঃপর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সূরা নিসা ৭৬ আয়াত তেলাওয়াত করে কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্যদের প্রতি নছীহত ও সমাপনী ভাষণ পেশ করেন। অতঃপর বৈঠক ভঙ্গের দো‘আ পাঠের মাধ্যমে সম্মেলন শেষ হয়।

সম্মেলনের অন্যান্য খবর : সুদূর সাতক্ষীরা থেকে সাইকেল চালিয়ে কর্মী সম্মেলনে যোগদান করেন সাতক্ষীরা যেলার সদর থানা কাওনডাঙ্গা গ্রামের মুহাম্মাদ যয়নুল আবেদীন সরদার। তার বর্তমান বয়স ৮০ বছর ৮ মাস। তিনি বিগত ২০০৪ সাল থেকে তাবলীগী ইজতেমা ও কর্মী সম্মেলনে নিয়মিতভাবে যোগদান করে আসছেন। তিনি গত ২৭শে আগস্ট মঙ্গলবার ভোর ৪.৪৫ মিনিটে সাতক্ষীরা থেকে রওয়ানা হয়ে ২১ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে বুধবার দিবাগত রাত প্রায় ২-টায় রাজশাহী পৌঁছেন।






আরও
আরও
.