তাঁর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়েছিল ১৯৯২ সালে, জামালপুরের মাদারগঞ্জে। ইচ্ছা হচ্ছিল তখনই ছুটে গিয়ে মেয়ের মুখ দেখতে। টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে জামালপুর খুব দূরের পথ তো নয়। যাবেন কিভাবে, স্কুল যে খোলা! চাইলেই ছুটি নিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু এ শিক্ষক তো তেমন নন। পিতৃত্বের পরম আনন্দ দায়িত্বের কাছে হার মানল। সপ্তাহের ছুটির দিনটিই বেছে নিলেন মেয়েকে দেখার জন্য।

অন্য আরও একদিন। ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে এক শুক্রবারে স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন মাদারগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে। পরদিন ভোরে রওনা হ’তে গিয়ে দেখেন হরতাল। রাস্তায় যানবাহন চলছে না। শ্বশুরবাড়ি থেকে একটি সাইকেল জোগাড় করে স্ত্রীকে নিয়ে রওনা হন। ৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সময়ের কয়েক মিনিট আগেই ক্লাসে পৌঁছেন।

টাঙ্গাইলের মধুপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাহাজুদ্দীন ফকীরের জীবনের টুকরো গল্প এসব। এই ৩৮ বছরের চাকরি জীবনে এক দিনও তিনি প্রাপ্য ছুটি কাটাননি। সম্প্রতি অবসরে যান এই মহান শিক্ষক। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে আরো দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মধুপুর উপযেলার বাসিন্দা বাহাজুদ্দীন স্নাতক (বিএ) পাস করে ১৯৭৯ সালে মধুপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন। ৩৮ বছরের চাকরী জীবনে হাসি-কান্নার অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। কিন্তু এসব ঘটনা তাঁকে স্কুলে সময়মতো হাযির হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তিনি জানান, ২০০৩ সালের ২৭শে জুন পিতা আব্দুল হামীদ ফকির মারা যান। সেদিন ছিল শুক্রবার। দাফন সম্পন্ন করে পরদিন স্কুলে সময়মতো হাযির হয়ে যান।

স্কুলে ক্যাজুয়াল লিভ (সিএল) বোনাস চালু রয়েছে। ফলে যে শিক্ষক-কর্মচারী সারা বছরে এক দিনও অনুপস্থিত থাকবেন না, তাকে এক মাসের বেতন সমপরিমাণ বোনাস দেওয়া হয়। ১৯৮৮ সালে বিধানটি চালু হওয়ার পর প্রতিবছর এই বোনাস পেয়েছেন তিনি।

বাহাজুদ্দীনের ভাষ্য, ৩৮ বছরে অন্তত ৭৬০ দিন প্রাপ্য ছুটি না নিয়ে ক’টা দিন আমি শিক্ষার্থীদের বেশী পড়াতে পেরেছি। দীর্ঘ চাকরি জীবনে এটাই আমার আনন্দ।






আরও
আরও
.