‘হয়
মাদক ব্যবসা ছাড়তে হবে, নয় জেলে যেতে হবে’ বার্তাটি দিনাজপুর পুলিশের। এই
বার্তার সাথে ১ হাযার ৬৩২ জন মাদক ব্যবসায়ীর নাম-ঠিকানা ও ফোন নম্বর সংবলিত
একটি তালিকা ছড়িয়ে দেওয়া হয় গোটা যেলার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের
কাছে। ফলে বদলে যেতে থাকে যেলার মাদক পরিস্থিতি। পুলিশ ও সামাজিক চাপে পড়ে
মাদক ব্যবসায়ীরা একে একে আত্মসমর্পণ করতে থাকে।
তাদের অনেকেই এখন ফিরছে সুস্থ জীবনে। কেউ ভ্যান চালায়, কেউ গরুর খামার দিয়েছে, কেউ চালায় মাইক্রোবাস। পুলিশ বলছে, এই প্রক্রিয়ায় গত ছয় মাসে আড়াই শতাধিক তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছে। পুনর্বাসন করতে পুলিশই তাঁদের হাতে তুলে দিচ্ছে ভ্যান ও সেলাই মেশিন। তালিকা করে, পুলিশি ভয় দেখিয়ে ও সামাজিক চাপে ফেলে মাদক ব্যবসায়ীদের সুপথে আনার এমন চিত্র দেশের উত্তরের সীমান্ত যেলা দিনাজপুরের।
এই যেলার সঙ্গে ভারতের প্রায় দেড়’শ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্ত দিয়ে মাদকের চালান আসছে অহরহ, যা বন্ধ করা খুবই কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন যেলার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা। দিনাজপুর কোতওয়ালী থানার ওসি রেযওয়ানুর রহীম বলেন, আগে দিনাজপুরে মাদকের যে রমরমা অবস্থা ছিল, এখন তা নেই।
শুধু তালিকা করেই ক্ষান্ত হয়নি দিনাজপুর যেলা পুলিশ। ৫৬ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করেছে, নাম আলোকচ্ছটা। গত ২৫শে ফেব্রুয়ারী পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকের দিনাজপুর আগমন উপলক্ষে পুস্তিকাটি প্রকাশ করা হয়। এতে যেলার ১৩টি উপযেলার মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীর নাম-ঠিকানা ও মুঠোফোন নম্বর রয়েছে। গত মার্চের শেষের দিকে দিনাজপুর কোতওয়ালী থানার ২১ জন, বীরগঞ্জ থানার ৫ জন ও বিরল থানার ১০ জন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, তাদের সবাই মাদক ব্যবসা ছেড়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এই ৩৬ জনই তখন পর্যন্ত সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন বলে জানা গেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক শহীদুল মান্নাফ কবীর বলেন, আগের চেয়ে দিনাজপুরের মাদক পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। পুলিশের উদ্যোগের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা ব্যবসা গুটিয়েছে।
গত ২৫শে ফেব্রুয়ারী কোতওয়ালী থানা-পুলিশের কাছে এসে আত্মসমর্পণকারী মাহবূব দম্পতি বললেন, ওইলাত তোবা (তওবা) দিছি ভাই। এলা গরুর খামার দিছি। হামার তানে দোয়া করেন’।
দিনাজপুরের এসপি হামীদুল আলমের ভাষ্য, ‘মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে আমরা কেবল এ বার্তাটা পৌঁছে দিতে পেরেছি যে, এই ব্যবসা করলে কোন ছাড় নয়। এরপর থেকেই আত্মসমর্পণের সংখ্যা বেড়ে গেছে। যারা আত্মসমর্পণ করছে, তাদের আমরা পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি। তাদের ভ্যান ও সেলাই মেশিনের পাশাপাশি বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। দিনাজপুরের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক বলেন, পুলিশ যে তালিকা নাম-ঠিকানাসহ প্রকাশ করেছে, তাতেই অনেক কাজ হয়েছে। সংকোচে অনেক মাদক ব্যবসায়ী অন্য পেশায় যাচ্ছেন।
[ধন্যবাদ জানাই দিনাজপুরের পুলিশ প্রশাসনকে। দেশের অন্যান্য যেলায় এটি অনুসৃত হৌক এটাই কামনা করি (স.স.)]