সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে গীবতের কুপ্রভাব
গীবত এমন এক মহাপাপ, যা শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং এর কুপ্রভাব ব্যক্তি ও পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সমাজিক জীবনে অশান্তির অন্যতম মূল কারণ এই গীবত বা পরনিন্দা। নিমেণ গীবতের কয়েকটি কুপ্রভাব উল্লেখ করা হ’ল-
(১) পরিবার ও সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে :
গীবত ও তোহমত কতটা ভয়ংকরভাবে পরিবার ও সমাজকে প্রভাবিত করতে পারে, ইফকের ঘটনা তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ। বনু মুছতালিক্ব যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে মুনাফিক্ব নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই অপবাদ আরোপের মাধ্যমে মা আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাঃ)-এর চরিত্রে যে কলংক লেপন করার অপচেষ্টা করেছিল, সাময়িকভাবে অনেক ছাহাবী তাতে প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং আয়েশা (রাঃ)-এর ব্যাপারে মন্দ ধারণা করা শুরু করেছিলেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মদীনার আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। এমনকি এই সমাজিক অশান্তির ঢেউ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পরিবারকেও সাময়িকভাবে প্রভাবিত করেছিল এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও আয়েশা (রাঃ)-এর মধ্যে দূরত্ব তৈরী করেছিল। এই কাহিনীর দিকে লক্ষ্য করলে গা শিউরে ওঠে। মহান আল্লাহ যদি সূরা নূরের ১০টি আয়াত নাযিল করে আয়েশা (রাঃ)-কে অপবাদ মুক্ত না করতেন, তবে ইতিহাস কোন দিকে মোড় নিত আল্লাহই ভালো জানেন।
এখানে লক্ষণীয় ব্যাপার হ’ল গীবত-তোহমতের প্রভাব যদি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় তাঁর সমাজ ও পরিবারকে এভাবে প্রভাবিত করতে পারে, তবে এই ঘৃণ্য পাপ আমাদের পরিবার ও সমাজকে কি জঘন্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে অহি-র মাধ্যমে সত্য জানার একটা সুযোগ ছিল, এখন তো সেটাও নেই। সুতরাং এই মহা পাপ থেকে বিরত থাকা ঈমানের অপরিহার্য দাবী।
গীবতের মাধ্যমে সমাজিক জীবন কলুষিত হয়, তেমনিভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশও দূষিত হয়। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, هَاجَتْ رِيحٌ مُنْتِنَةٌ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ‘রাসূলুল্লাহ (ছা)-এর যুগে একবার প্রচন্ড দুর্গন্ধময় বাতাস প্রবাহিত হ’ল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,إِنَّ نَاسًا مِنَ الْمُنَافِقِينَ اغْتَابُوا أُنَاسًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ، فَبُعِثَتْ هَذِهِ الرِّيحُ لِذَلِكَ، ‘মুনাফিকদের মধ্যে কিছু লোক কতিপয় মুসলিমদের দোষ চর্চা করেছে। ফলে এই দুর্গন্ধময় বাতাস প্রেরণ করা হয়েছে’।[1] জনৈক আলেমে দ্বীনকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে গীবতের দুর্গন্ধ প্রকাশিত হ’ল, কিন্তু আজকাল গীবত এত বেশী বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও তা প্রকাশিত না হওয়ার কারণ কি? জবাবে তিনি বললেন, ‘আমাদের যুগে গীবত এতো বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এর অনুভূতি পর্যন্ত নষ্ট হয়ে গেছে। যেমন : সাধারণ কেউ যদি চামড়ার ট্যানারীতে প্রবেশ করে, তবে সে দুর্গন্ধের কারণে স্থির থাকতে পারে না। অথচ কর্মরত লোকেরা সরাদিন সেখানেই থাকে। তারা সেখানে দিব্যি বসে থাকে, খাওয়া-দাওয়া করে, তাদের কোন অসুবিধা হয় না। এর কারণ হচ্ছে ঐ উৎকট গন্ধ তাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। অনুরূপভাবে আজকাল গীবত ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় তা আমাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে, অর্থাৎ আমাদের স্বাভাবিক অনুভূতি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে গীবতের দুর্গন্ধ আমরা বুঝতে পারি না’।[2] তবে এই দুর্গন্ধময় বাতাসের উপলব্ধি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মু‘জিযাও হ’তে পারে। আল্লাহু আ‘লাম।
(২) ইসলামী ভ্রাতৃত্ব বিনষ্ট হয় :
দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব যত মযবূত হয়, ইসলামের শক্তি ততই বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনগণ পরস্পর ভাই-ভাই’ (হুজুরাত ৪৯/১০)। কিন্তু শয়তান এই ভ্রাতৃত্বের প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলে ইসলামের শক্তি ভূলুণ্ঠিত করতে চায়। আর এই কাজে শয়তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে- গীবত বা দোষচর্চা। শয়তান যেন এই গীবতের অস্ত্র সফলভাবে প্রয়োগ করতে না পারে, সেজন্য মুসলিম জাতিকে নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَا تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ، وَلَا تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ، ‘তোমরা মুসলিমদের গীবত করো না এবং তাদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়িয়ো না’।[3] ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহঃ) বলেন, إِذَا ظَهَرَتِ الْغِيبَةُ، ارْتَفَعَتِ الْأُخُوَّةُ فِي اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، إِنَّمَا مَثَلُكُمْ فِي ذَلِكَ الزَّمَانِ مَثَلُ شَيْءٍ مَطْلِيٍّ بِالذَّهَبِ، أَوْ بِالْفِضَّةِ دَاخِلُهُ خَشَبٌ وَخَارِجُهُ حَسَنٌ، ‘যখন গীবত প্রকাশিত হয়, তখন আল্লাহর জন্য গড়ে ওঠা ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হয়ে যায়। সেই সময় তোমাদের উদাহরণ হ’ল সেই বস্ত্তর মতো- যার উপরে সোনা বা রূপার প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। এর ভিতরে খড়-কুটোয় ভর্তি আর বহির্ভাগ চকচকে’।[4]
পৃথিবীর কোন মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। এই প্রমাণিত সত্য উপলব্ধি করার পরেও আমরা যখন অপর কোন মুসলিম ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি জেনে যাই, তখন তার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। তাকে মন্দ ভাবা শুরু করি। কখনো কখনো মনের ভাবনাটি কথা-বার্তা ও আচার-আচরণের মাধ্যমেও প্রকাশ পেয়ে যায়। আর অপরাধী ভাইটি যদি বুঝতে পারেন যে, আমার দোষ বা অপরাধ অমুক জেনে ফেলেছে, তখন তিনি সেই ব্যক্তি থেকে নিজেকে গুটিয়ে চলেন। ফলে উভয়ের স্বাভাবিক সম্পর্ক ব্যাহত হয়। বাহ্যিক সম্পর্ক সুন্দর দেখালেও মনের দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। অথচ আমরা যদি আমাদের একে-অপরের দোষ-ত্রুটি না জানতাম, তবে আমাদের বাহ্যিক সম্পর্কগুলো যেমন মযবূত থাকতো, হৃদয়ের সম্পর্কগুলোও অটুট থাকতো।
তাছাড়া আমরা হয়ত কোন ভাইয়ের ব্যাপারে সুধারণা রাখি এবং তাকে ভালো মানুষ হিসাবে জানি, কিন্তু অন্য কেউ এসে যখন আমাদের সমানে সেই ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা শুরু করে- সেটা কথা, লেখা, অঙ্গ-ভঙ্গি, মিডিয়া যে কোন মাধ্যমেই হ’তে পারে- তখন সেই ভাইয়ের প্রতি সুধারণা রাখা খুবই কঠিন হয়ে যায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে সম্ভব হয় না। সুতরাং আমাদের সার্বিক জীবনে গীবতের চর্চা যত বেশী হবে, আমাদের ভ্রাতৃত্ব ও সম্পর্কগুলো তত বেশী কদর্যপূর্ণ হ’তে থাকবে। আর পরনিন্দার অনুশীলন যত কম হবে, আমাদের ভিতরকার সম্পর্কগুলো ততই মধুর হবে।
(৩) হিংসা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায় :
আমাদের জীবনে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি হওয়ার প্রত্যক্ষ যত কারণ আছে, তন্মধ্যে অন্যতম হ’ল গীবত। কারণ দোষচর্চার মাধ্যমে একে-অপরের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো জানাজানি হয়ে যায়। ফলে যার দোষ প্রকাশ হয়েছে সে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে অন্যের দোষ খোঁজা শুরু করে এবং তা প্রচার করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। গল্পের আড্ডায়, স্বাভাবিক আলাপচারিতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় জ্বলে ওঠে বিদ্বেষের আগুন। ড. সাঈদ ইবনে ওয়াহ্ফ আল-ক্বাহতানী (রহঃ) বলেন,أما آثار الحسد في المجتمع فهو يسبب: الغيبة، والنميمة، والبغي، والعدوان، ‘সমাজে হিংসার যে প্রভাব বিরাজমান, তার বেশ কয়েকটি কারণ আছে, যেমন: গীবত, চোগলখুরী, বিদ্রোহ, শত্রুতা ইত্যাদি...’।[5] প্রখ্যাত তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহঃ) বলেন,الغيبة توأم الحسد وليسا من أخلاق الكرماء ولا الصلحاء، ‘গীবত হচ্ছে হিংসার যমজ ভাই। এ দু’টি স্বভাব ভদ্র ও সৎ মানুষের হ’তে পারে না’।[6]
সুতরাং অপরের দোষ-ত্রুটি থেকে নিজের দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখাই নেককার মানুষের অবশ্য কর্তব্য। মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّكَ إِنِ اتَّبَعْتَ عَوْرَاتِ النَّاسِ أَفْسَدْتَهُمْ، أَوْ كِدْتَ أَنْ تُفْسِدَهُمْ، ‘যদি তুমি মুসলিম ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ কর, তবে তুমি তাদের মাঝে ফাসাদ সৃষ্টি করবে, অথবা তাদের মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করার উপক্রম হবে’।[7] অর্থাৎ কোন মানুষ যদি বুঝতে পারে যে, অমুক ব্যক্তি আমার এই দোষ-ত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করেছে, তখন সে হয়ত জেদী হয়ে ঐ দোষ-ত্রুটি থেকে ফিরে নাও আসতে পারে অথবা বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে গীবতকারীর দোষ খোঁজার চেষ্টা করতে পারে। ফলে তাদের মাঝে শত্রুতা সৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
তাছাড়া এটা প্রমাণিত সত্য যে, যে পরিবারে গীবতের চর্চা হয়, সে পরিবারের সদস্যরা পরনিন্দার স্বভাব নিয়েই বেড়ে ওঠে। এই পরিবারের সদস্যরা যেখানেই যায়, সেখানকার পরিবেশ ঘোলাটে করে ফেলে তার এই নিন্দনীয় দোষের মাধ্যমে। কখনো কখনো একজন গীবতকারীর অনিষ্টতায় একটা সমাজের মানুষ অশান্তির দাবানলে পুড়তে থাকে প্রতিনিয়ত।
(৪) সর্বব্যাপী লাঞ্ছনা নেমে আসে :
নিজের মন্দ স্বভাব, আচরণ ও দোষ-ত্রুটি অপরের নিকট প্রকাশিত হ’লে মানুষ অপমানবোধ করে এবং তাদের কাছে লাঞ্ছিত হয়। এজন্য ইসলাম অপরের খুঁত ও ত্রুটি-বিচ্যুতি প্রকাশ করা হারাম করেছে। কিন্তু যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পরনিন্দায় লিপ্ত হয়, তখন মহান আল্লাহ সেই গীবতকারীর দোষ-ত্রুটি জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ كَشَفَ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ، كَشَفَ اللهُ عَوْرَتَهُ، حَتَّى يَفْضَحَهُ بِهَا فِي بَيْتِهِ، ‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের দোষ প্রকাশ করবে, মহান আল্লাহও তার দোষ প্রকাশ করে দিবেন। এমনকি তার ত্রুটি প্রকাশ করার মাধ্যমে তাকে তার ঘরের মধ্যেই লাঞ্ছিত করবেন’।[8] অর্থাৎ সমাজের জনগণ যদি গীবতে লিপ্ত হয়, তবে তাদের দোষ-ত্রুটিগুলো একে অপরের মধ্যে জানাজানি হয়ে যাবে। তখন তারা পরস্পরের কাছে অপমানিত হবে, তাদের মধ্যকার আন্তরিক ভালোবাসা বিলুপ্ত হবে, ছোটকে সেণহ এবং বড়কে সম্মান করার রীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে লাঞ্ছনার ঘানি টানতে হবে পুরো সমাজকে।
(৫) মনস্তাত্ত্বিক অশান্তি :
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে গীবতের চর্চা ও কুপ্রভাব অন্য যে কোন যুগের তুলনায় অনেক বেশী। ইলেকট্রনিক বা প্রিন্ট মিডিয়ায় কারো দোষ-ত্রুটি যদি একবার প্রকাশিত হয়ে যায়, আর সেটা যদি ভাইরাল হয়, তাহ’লে সেই ব্যক্তি পৃথিবীর কোথাও গিয়ে মুখ দেখাতে পারে না। সে আল্লাহর কাছে তওবা করলেও, মানুষ তার থেকে মন্দ ধারণা সরাতে পারে না। ফলে এটা সেই ব্যক্তির জন্য চিরস্থায়ী যন্ত্রণা ও মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনলাইনে খুব দ্রুত সংবাদ প্রচার হওয়ার কারণে ভালো-মন্দ উভয় ইস্যু অল্প সময়ে সারা বিশে^ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে যার ব্যাপারে আমাদের জানার কোন আগ্রহ থাকে না, এমন ব্যক্তির চারিত্রিক ও স্বভাবগত ত্রুটি-বিচ্যুতি আমাদের চিন্তা-ভাবনায় প্রভাব ফেলে। অনেক সময় ভাইরাল ইস্যু আমাদের মনজগৎকে অস্থির করে তোলে এবং আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও পথচলায় ছন্দপতন ঘটায়। আমরা এগুলো এড়িয়ে যেতে চাইলেও ইউটিউব ও ফেইসবুকে এই অযাচিত সংবাদ, ফটো, ভিডিও বার বার স্ক্রীনের সামনে এসে ভীড় করে। কখনো অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু বিষয় জানা বা দেখা হয়ে যায়।
কখানো কখনো এই মিডিয়া আমাদেরকে এমনকিছু মানুষের ব্যাপারে মন্দ ধারণা পোষণ করতে বাধ্য করে, যাদের ব্যাপারে আমরা সুধারণা রাখতাম এবং মনের গহীনে তাদের ব্যাপারে হয়ত কখনো মন্দ ধারণা উঁকি দেয়নি। নিজেরা তো বটেই, আমাদের অনেক প্রিয় মানুষও যখন মিডিয়া পাড়ায় সমালোচিত হন, তখন সেটা আমাদের মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মত প্রকাশের সহজলভ্যতার কারণে মনে যা চায়, তা-ই প্রচার হয় এই মিড়িয়া পাড়ায়। ফলে কখনো কখনো নির্দোষ ব্যক্তি করুণভাবে সমালোচিত হন। যা স্রেফ মন্দ ধারণার বশবর্তী হয়ে প্রচার করা হয়েছে। এতে সবাই একমত হবেন যে, বর্তমান সময়ে মানুষের সম্মান-ইয্যতের নিরাপত্তা সবচেয়ে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে মিডিয়ার মাধ্যমে, ফলে আমাদের মনস্তাত্ত্বিক অশান্তিও বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। আর এই মানসিক অশান্তির স্পষ্ট প্রভাব ফুটে ওঠে আমাদের নিত্যদিনের সমস্ত কর্মকান্ডে।
গীবত থেকে বেঁচে থাকার উপকারিতা ও ফযীলত
ভালো কাজ করা যেমন ইবাদত, তেমনি পাপ থেকে বিরত থাকাও ইবাদত। আর যখন গুনাহ করার সুযোগ ও সামর্থ্য থাকার পরেও সেই গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা যায়, তখন সেটা আরো বড় ধরনের ইবাদতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। গীবত যেহেতু মহাপাপ, সেহেতু এই সর্বনাশা পাপ থেকে বিরত থাকাও ইবাদত এবং এই ইবাদতের কতিপয় উপকারিতা ও ফযীলত ইসলামী শরী‘আতে বিধৃত হয়েছে। সংক্ষেপে এর কয়েকটি আলোচনা করা হ’ল।
(১) প্রকৃত মুসলিমের পরিচায়ক :
গীবত থেকে বিরত থাকা প্রকৃত খাঁটি মুসলিমের পরিচায়ক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গীবত পরিত্যাগকারী মুসলিমকে সর্বশ্রেষ্ট মুসলিম হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিজ্ঞেস করল, أَيُّ الـمُسْلِمِينَ أَفْضَلُ؟ ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম কে?’ জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, مَنْ سَلِمَ الـمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ ‘যার হাত ও যবান থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে (সে-ই সর্বশ্রেষ্ট মুসলিম)’।[9] ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রা) বলেন, مَنْ أَدَّى الْأَمَانَةَ وَكَفَّ عَنْ أَعْرَاضِ الْمُسْلِمِينَ فَهُوَ الرَّجُلُ، ‘যে ব্যক্তি আমানত রক্ষা করে এবং (গীবতের মাধ্যমে) মুসলিমের সম্মান নষ্ট করা থেকে বিরত থাকে, সে-ই প্রকৃত বীর পুরুষ’।[10] তাছাড়া গীবত পরিত্যাগ করতে পারলে মুনাফিক্বীর বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্তি মেলে। আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ মুনাযিল (রহঃ) বলেন, الْمُؤْمِنُ يَطْلُبُ مَعَاذِيرَ إِخْوَانِهِ، وَالْمُنَافِقُ يَطْلُبُ عَثَرَاتَ إِخْوَانِهِ، ‘মুমিন ব্যক্তি তার ভাইয়ের (দোষ-ত্রুটির ব্যাপারে) ওযর খোঁজে, আর মুনাফিক্ব ব্যক্তি তার ভাইয়ের শুধু ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজে বেড়ায়’।[11]
(৩) নিজের দোষ-ত্রুটি গোপন থাকে :
যারা গীবতের পাপ থেকে নিজেদের পবিত্র রাখতে পারেন, মহান আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের ভুল-ভ্রান্তি, অন্যায়-অপরাধ, দোষ-ত্রুটি গোপন রাখেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا، سَتَرَهُ اللهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে, দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন’।[12] ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,فِيهِ إِشَارَةٌ إِلَى تَرْكِ الْغِيبَةِ لِأَنَّ مَنْ أَظْهَرَ مَسَاوِئَ أَخِيهِ لَمْ يَسْتُرْهُ، ‘অত্র হাদীছে গীবত পরিত্যাগের ব্যাপারে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কেননা যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে দেয়, তার দোষ-ত্রুটিও আর গোপন রাখা হয় না’।[13] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَا يَسْتُرُ عَبْدٌ عَبْدًا في الدُّنْيَا إلاَّ سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، ‘কোন বান্দা দুনিয়াতে অপর বান্দার দোষ গোপন রাখলে মহান আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন’।[14] এক মনীষী তার সাথীদের বলেছেন, ‘আচ্ছা! তোমাদের কোন ঘুমন্ত ভাইয়ের কাপড় যদি বাতাসে উড়ে সতর আলগা হয়ে যায়, তবে কি তোমরা তার সতর ঢেকে দিবে, না আরো উন্মোচন করে দিবে? তারা বলল, অবশ্যই আমরা তার সতর ঢেকে দিব। তখন তিনি বললেন, ‘না! বরং তোমরা তার সতর আরো উন্মুক্ত করে দিবে’। সাথীরা বলল, সুবহানাল্লাহ! কিভাবে আমরা আমাদের ভাইয়ের সতর উন্মুক্ত করে দেব’। তখন তিনি বললেন, ‘যদি তা-ই হয়, তাহ’লে তোমাদের সামনে যখন কোন লোকের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়, তবে তার গীবতে লিপ্ত হও কেন? তখন তো তোমরা তার সতর থেকে বাকী কাপড়টুকু নির্মমভাবে সরিয়ে দিলে’।[15] সুতরাং যারা পরনিন্দা পরিহার করে অপর ভাইয়ের মান-সম্মানের হেফাযত করবেন, আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি গোপন রেখে উভয় জগতে তাকে সুসম্মানিত করবেন।
(৪)জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি :
জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি বড় মাধ্যম হ’ল পরনিন্দা পরিত্যাগ করা। আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ ذَبَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ بِالْغِيبَةِ، كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يُعْتِقَهُ مِنَ النَّارِ، ‘যে ব্যক্তি গীবতের মাধ্যমে তার ভাইয়ের সম্মান নষ্ট হওয়াকে প্রতিহত করবে, তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেওয়া আল্লাহর কর্তব্য হয়ে যায়’।[16] অন্যত্র নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ حَمَى مُؤْمِنًا مِنْ مُنَافِقٍ، بَعَثَ اللهُ مَلَكًا يَحْمِى لَحْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ وَمَنْ رَمَى مُسْلِمًا بِشَىْءٍ يُرِيدُ شَيْنَهُ بِهِ حَبَسَهُ اللهُ عَلَى جِسْرِ جَهَنَّمَ حَتَّى يَخْرُجَ مِمَّا قَالَ، ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে মুনাফিক (এর গীবত) থেকে রক্ষা করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার শরীর জাহান্নাম থেকে রক্ষার জন্য একজন ফেরেশতা প্রেরণ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করবে, তাকে মহান আল্লাহ জাহান্নামের সেতু বা পুলছিরাতের উপর প্রতিরোধের ব্যবস্থা করবেন যতক্ষণ না তার কৃতকর্মের ক্ষতিপূরণ হয়’।[17] সুতরাং নিজে গীবত থেকে হেফাযত থাকার পাশাপাশি, কাউকে পরনিন্দা করতে দেখলেও তাকে প্রতিহত করা প্রত্যেক মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব।
(৫) জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম :
জান্নাত সৃষ্টি করা হয়েছে কেবল সেই সকল মুমিনদের জন্য, যারা প্রবৃত্তির মুখের লাগাম টেনে নিজের দেহ-মনকে সর্বদা আল্লাহমুখী করে রাখে। সেজন্য পার্থিব জগতে একজন বান্দার প্রধান দায়িত্ব হ’ল শয়তানের শৃঙ্খল ছিন্ন করে প্রবৃত্তির খায়েশকে সর্বশক্তি দিয়ে দমন করে রাখা। আর প্রবৃত্তির চাহিদা বাস্তবায়িত করার প্রধান মাধ্যম হ’ল- জিহবা ও লজ্জাস্থান। লজ্জাস্থানের হেফাযত করা অনেক মুমিনের পক্ষে সম্ভব হ’লেও জিহবার হেফাযত করাটা তত সহজ নয়। তবে যারা দেহের এই দু’টি অঙ্গকে হেফাযত করার গ্যারান্টি দিতে পারেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের জন্য জান্নাতের গ্যারান্টি দিয়েছেন। সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ)-এর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الجَنَّةَ، ‘যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী জিহবা এবং দুই উরুর মধ্যবর্তী লজ্জাস্থানের যিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের যিম্মাদার হব’।[18] শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীছের মর্মার্থ হ’ল যে ব্যক্তি হারাম কথাবার্তা, মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী, ধোঁকাবাজি প্রভৃতি থেকে নিজের জিহবাকে হেফাযত করবে এবং যিনা, সমকামিতা ও তদ্রূপ পাপাচার থেকে নিজের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করবে, ক্বিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারে যিম্মাদার হয়ে যাবেন’।[19] আবূদ্দারদা (রাঃ)-এর বর্ণনায় অপর হাদীছে নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ رَدَّ اللهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ‘যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের মান-সম্মান বিনষ্ট হওয়া প্রতিরোধ করে, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার মুখমন্ডল হ’তে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন’।[20] ইমাম মানাবী (রহঃ) বলেন,والسبب في ذلك أن عِرض المؤمن كدَمِه، فمَن هتك عرضه فكأنه سفك دمه، ومَن عمل على صون عرضه، فكأنه صان دمه، فيُجازى على ذلك بصونه عن النار يوم القيامة، ‘এর কারণ হচ্ছে মুমিনের সম্মান তার রক্তের মতো পবিত্র। যে ব্যক্তি (পরনিন্দা বা অন্য কোন মাধ্যমে) তার সম্মান নষ্ট করে, সে যেন ঐ মুমিনের রক্তপাত ঘটিয়ে ফেলে বা হত্যা করে ফেলে। সুতরাং যে ব্যক্তি মুমিনের সম্মান রক্ষা করল, সে যেন তার জীবনটাই রক্ষা করল। ফলে এর বিনিময়ে ক্বিয়ামতের দিন তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করে পুরস্কৃত করা হবে’।[21] আর যাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করা হবে, সে-ই তো কেবল জান্নাতে যেতে পারবে।
গীবতের কাফ্ফারা ও তা থেকে তওবা করার উপায়
সংশ্লিষ্টতার দিক থেকে পাপ দুই ধরনের- (১) আল্লাহর অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট পাপ, যেমন: যিনা-ব্যাভিচার, গান-বাজনা, মদ-জুয়া প্রভৃতি। (২) বান্দার অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট পাপ, যেমন: গীবত, চোগলখুরী, চুরি-ডাকাতি, যুলুম, আত্মসাৎ ইত্যাদি। যেসব পাপের সংশ্লিষ্টা আল্লাহর সাথে, সে সকল পাপের দায়বদ্বতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হয় এবং তাঁর কাছে তওবা-ইস্তিগফার করতে হয়। কিন্তু বান্দার সাথে সংশ্লিষ্ট পাপ থেকে ক্ষমা লাভ করার জন্য আগে বান্দার কাছে ক্ষমা চাইতে হয়, তারপর আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করতে হয়।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, أن كلَّ من ارتكب معصيةً لزمه المبادرةُ إلى التوبة منها، والتوبةُ من حقوق الله تعالى يُشترط فيها ثلاثة أشياء: أن يُقلع عن المعصية في الحال، وأن يندمَ على فعلها، وأن يَعزِمَ ألاّ يعود إليها. والتوبةُ من حقوق الآدميين يُشترط فيها هذه الثلاثة، ورابع: وهو ردّ الظلامة إلى صاحبها أو طلب عفوه عنها والإِبراء منها، فيجبُ على المغتاب التوبة بهذه الأمور الأربعة، لأن الغيبة حقّ آدمي، ولا بدّ من استحلاله مَن اغتابَه، ‘পাপে লিপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তির অবশ্য করণীয় হ’ল অনতিবিলম্বে তওবা করা। আর আল্লাহর অধিকাররের সাথে সম্পৃক্ত পাপ থেকে তওবা করার শর্ত তিনটি:
(১) কৃত পাপকর্ম থেকে নিবৃত্ত হওয়া।
(২) কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
(৩) ভবিষ্যতে সেই গুনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা।
আর বান্দার সাথে সম্পৃক্ত গুনাহ থেকে তওবা করার ক্ষেত্রে আরো একটি শর্ত যুক্ত হবে, সেটা হ’ল-
(৪) যার অধিকার নষ্ট করা হয়েছে তাকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে দায়মুক্ত হয়ে যাওয়া। সুতরাং গীবতকারীকে উপরিউক্ত চারটি শর্ত মেনে তওবা করা ওয়াজিব। কেননা গীবত বান্দার সাথে সংশ্লিষ্ট পাপ। সেজন্য যার গীবত করা হয়েছে তার কাছ থেকেই দায়মুক্ত হওয়া আবশ্যক’।[22]
সুতরাং গীবতের কাফফারা বা এ পাপের গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার উপায় হচ্ছে- যার গীবত করা হয়েছে তার নিকটে ক্ষমা চাওয়া। যেমন আবুবকর ও ওমর (রাঃ) একবার নিজেদের মধ্যে তাদের এক খাদেমের অনুপস্থিতিতে তার অধিক ঘুমানোর ব্যাপারে আলোচনা করেন। সামান্য এই গীবতের কারণে রাসূল (ছাঃ) পরে তাদেরকে বললেন যে, আমি তোমাদের উভয়ের দাঁতের মধ্যে তার গোশত দেখতে পাচ্ছি। অতঃপর তাঁরা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তাঁদেরকে তাদের খাদেমের নিকটে ক্ষমা চাইতে বলেন।[23] তবে সরাসরি ক্ষমা চাইতে গেলে যদি ফিৎনা সৃষ্টি হয়, তাহ’লে নিজের জন্য ও তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং যে স্থানে তার কুৎসা রটনা করা হয়েছে সেখানে তার প্রশংসা করতে হবে।[24] এ প্রসঙ্গে হুযায়ফা (রাঃ) বলেছেন, كفارة من اغتبته أن تستغفر له ‘যার গীবত করা হয়েছে তার কাফ্ফারা হচ্ছে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা’।[25]
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে গীবত ও পরনিন্দার মতো সর্বনাশা পাপ থেকে হেফাযত করুন। গীবতের দুর্গন্ধময় পরিবেশ থেকে আমাদের পরিবার ও সমাজকে পরিশুদ্ধ করুন। সার্বিক জীবনে আল্লাহ ও বান্দার অধিকার অক্ষুন্ন রেখে ছিরাতে মুস্তাক্বীমের পথ ধরে জান্নাতমুখী জীবনযাপনের তাওফীক দান করুন- আমীন!
আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
এম.এ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭৩৩, সনদ হাসান।
[2]. সামারকান্দী, তাম্বীহুল গাফিলীন, পৃ. ১৬২।
[3]. আবূদাঊদ হা/৪৮৮০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৮৪; ছহীহ।
[4]. আবূ নু‘আইম আস্ফাহানী, হিলয়াতুল আওলিয়া, ৮/৯৬; আত-তাওবীখ ওয়াত তানবীহ, পৃ. ৮৫।
[5]. ক্বাহতানী, সালামাতুছ ছাদ্র, পৃ. ১১।
[6]. বালাযুরী, আনসাবুল আশরাফ, ১০/২৩৪।
[7]. আবূদাঊদ হা/৪৮৮৮; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/২৪৮, সনদ ছহীহ।
[8]. ইবনু মাজাহ হা/২৫৪৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৩৩৮, সনদ ছহীহ।
[9]. তিরমিযী হা/২৫০৪; সনদ ছহীহ।
[10]. ইবনু আব্দিল বার্র, আহ্জাতুল মাজালিস, পৃ. ৮৬; আল-ইস্তিযকার, পৃ. ৮/৫৬৩।
[11]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ১৩/৫০৪।
[12]. মুসলিম হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪।
[13]. ফাৎহুল বারী, ৫/৯৭।
[14]. মুসলিম হা/২৫৯০।
[15]. তাম্বীহুল গাফেলীন, পৃ. ১৬৫।
[16]. ছহীহুল জামে‘ হা/৬২৪০; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৪৭, সনদ ছহীহ।
[17]. আবূদাঊদ হা/৪৮৮৩; মিশকাত হা/৪৯৮৬, সনদ হাসান।
[18]. বুখারী হা/৬৪৭৪; মিশকাত হা/৪৮১২।
[19]. উছায়মীন, শারহু রিয়াযিছ ছালিহীন, ৬/১১৮।
[20]. তিরমিযী হা/১৯৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬২৬২; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৪৮।
[21]. মানাবী, ফায়যুল ক্বাদীর, ৬/১৩৫।
[22]. নববী, আল-আযকার, পৃ. ৩৪৬।
[23]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬০৮; আমসিক আলায়কা লিসানাকা, পৃ. ৪৩।
[24]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ওয়াবিলুছ ছাইয়েব, পৃ. ১৪১।
[25]. ইবনু আব্দিল বার, বাহজাতুল মাজালিস, পৃ. ৮৬।