গীবত অতীব ভয়ংকর গুনাহ। কিন্তু দুই ধরনের গীবত আরো বেশী ভয়াবহ। তন্মধ্যে একটি হ’ল আলেম-ওলামার গীবত এবং অপরটি হ’ল মৃত মানুষের গীবত।
১. আলেমদের গীবত করা :
আলেমদের গীবত দুই রকমের। (১) সাধারণ মানুষ কর্তৃক আলেমদের নিন্দা বা গীবত করা এবং (২) আলেম কর্তৃক অপর মানুষের দোষকীর্তন করা। উভয়টাই মারাত্মক এবং দ্বীন-দুনিয়া উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।
এক- নবী-রাসূলগণের পরে হকপন্থী আলেমগণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। সাধারণ কোন মানুষের চেয়ে তাদের মর্যাদা অনেক বেশী। কেননা তারা নবীদের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,فَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ، كَفَضْلِ القَمَرِ عَلَى سَائِرِ الكَوَاكِبِ، إِنَّ العُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ، إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلَا دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا العِلْمَ، فَمَنْ أَخَذَ بِهِ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ، ‘আবেদের উপর আলেমের মর্যাদা তেমন, তারকারাজির উপর চাঁদের মর্যাদা যেমন। নিশ্চয়ই আলেমগণ নবীদের ওয়ারিছ বা উত্তরসূরী। নবীরা কোন দীনার-দিরহামের ওয়ারিছ রেখে যান না; বরং তারা ইলমের ওয়ারিছ রেখে যান। যে ব্যক্তি সেই জ্ঞান লাভ করতে পেরেছে, সে প্রভূত কল্যাণ লাভ করেছে’।[1] সুতরাং আলেমদের মান-মর্যাদা যেহেতু বেশী, তাই তাদের পরনিন্দায় পাপের ভয়াবহতাও বেশী।
সাধারণ মানুষের গীবত করা মৃত মানুষের গোশত ভক্ষণের মতো জঘন্য পাপ। কিন্তু আলেমগণের গোশত আরো বিষাক্ত। তাদের গীবত করলে বান্দার ঈমান ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। ইহ ও পরকালে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন,لحوم العلماء مسمومة، مَن شمَّها مرض، ومَن أكلها مات؛ ‘আলেমদের গোশত বিষাক্ত। যে ব্যক্তি এর ঘ্রাণ নিবে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর যে ব্যক্তি এটা ভক্ষণ করবে সে মৃত্যুবরণ করবে’।[2]
একবার এক ব্যক্তি হাসান ইবনে যাকওয়ান (রহঃ)-এর কাছে এসে জনৈক আলেমের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের কথা বলা শুরু করল। ইবনে যাকওয়ান (রহঃ) তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, مَهْ لَا تَذْكُرِ الْعُلَمَاءَ بِشَيْءٍ فَيُمِيتُ اللهُ قَلْبَكَ، ‘থামো! আলেমদের কোন দোষ বর্ণনা করবে না; তাহ’লে আল্লাহ তোমার অন্তরের মৃত্যু ঘটাবেন’।[3] ইবনু আসাকির (রহঃ) বলেন,إن من أطلق لسانه في العلماء بالثلب ابتلاه الله قبل موته بموت القلب، ‘যে ব্যক্তি আলেম-ওলামার সমালোচনায় স্বীয় জিহবাকে প্রবৃত্ত করবে, আল্লাহ তার দৈহিক মৃত্যুর আগেই অন্তরের মৃত্যু দিয়ে তাকে পরীক্ষা করবেন’।[4]
আবুবকর খাওয়ারিযমী (রহঃ) বলেন,اعلم أن درجة العلماء من أمة محمد صلّى الله عليه وسلم...وكرامتهم عظيمة، ولحومهم مسمومة من شمها مرض، ومن أكلها سقم، وأوصيكم معشر الناس والملوك بالعلماء خيرا، فمن عظمهم فقد عظم الله سبحانه وتعالى ورسوله، ومن أهانهم فقد أهان الله تعالى ورسوله، أولئك ورثة الأنبياء عليهم الصلاة والسلام وصفوة الأولياء، شجرة طيبة أصلها ثابت وفرعها في السماء، ‘জেনে রেখো! উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে আলেমগণের সম্মান ও মর্যাদা অতি উচ্চমানে। তাঁদের গোশত বিষাক্ত। যে এই গোশতের ঘ্রাণ নিবে, সে অসুস্থ হয়ে যাবে। যে তা ভক্ষণ করবে, সে আরো মারাতমকভাবে অসুস্থ হবে। আমি মানবজাতি ও শাসকদেরকে অছিয়ত করছি- তারা যেন ওলামায়ে কেরামের সাথে সদ্ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি তাদেরকে সম্মান করবে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সম্মান করবে। আর যে তাদেরকে অপমান ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অপমান করবে। কারণ তাঁরা নবী-রাসূলদের ওয়ারিছ ও আল্লাহর অলীদের শ্রেষ্ঠ দল। তাদের সিলসিলা অতি পবিত্র। কুরআনের ভাষায় তাদের মূল সুদৃঢ় এবং শাখা আকাশে উত্থিত’।[5]
সুতরাং আলাপ-আলোচনায়, গল্প-আড্ডায় এবং সোস্যাল মিডিয়ায় আলেমদের ব্যক্তিগত দোষ-ত্রুটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করা অন্যান্য কবীরা গুনাহের চেয়েও অনেক প্রভাব বিস্তারকারী মহাপাপ। কেননা এর প্রভাব শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাদের সমালোচনায় লিপ্ত হ’লে জনসাধারণের হৃদয়ে তাদের ব্যাপারে ঘৃণা সৃষ্টি হয়। ফলে জনগণ আলেমদের বর্জন করার সাথে সাথে তাদের উপকারী ইলম থেকেও নিজেদের বঞ্চিত করে বসেন। তবে কোন আলেম যদি শিরক-বিদ‘আত ও ভ্রষ্টতার দিকে মানুষকে আহবান করে, তবে তাদের থেকে জনগণকে সতর্ক করা অন্যান্য আলেমদের ওপর ওয়াজিব হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এটা ব্যক্তি পর্যায়ের দোষ নয়; দ্বীনী পর্যায়ের ত্রুটি। ফলে এটা হারাম গীবতের মধ্যে গণ্য হবে না।
দুই- আলেম কর্তৃক অন্য কারো নিন্দা করা দ্বীন-দুনিয়া উভয়ের জন্য হুমকি স্বরূপ। কারণ সমাজের মানুষ আলেম-ওলামাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে থাকেন এবং তাদের অনুসরণ করার চেষ্টা করে থাকেন। সেই আলেমরাই যখন শারঈ কোন ওযর ছাড়া অন্যায়ভাবে অন্যের দোষ-ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করেন, তখন সাধারণ মানুষ আশাহত হয়ে যায় এবং তাদের কাছ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। শায়খ ওছায়মীন (রহঃ) বলেন, غيبة العلماء تؤدي إلى احتقارهم وسقوطهم من أعين الناس، وبالتالي إلى احتقار ما يقولون من شريعة الله، وعدم اعتبارها، وحينئذ تضيع الشريعة بسبب غيبة العلماء، ويلجأ الناس إلى جهالٍ يفتون بغير علم، ‘আলেম-ওলামারা গীবত করলে সাধারণ মানুষের কাছে তারা অবজ্ঞার পাত্রে পরিণত হন এবং তাদের মর্যাদাহানি হয়। উপরন্তু তারা শরী‘আতের যে কথা বলেন, তার প্রতি মানুষের ঘৃণা সৃষ্টি হয় এবং তাদের কথার মাধ্যমে উপদেশ গ্রহণের আগ্রহ থাকে না। মূলতঃ আলেমদের দোষ চর্চা করার কারণে শরী‘আতের মর্যাদা বিনষ্ট হয়। তখন মানুষ এমন সব জাহেল-মূর্খদের দারস্থ হয়, যারা না জেনে ফৎওয়া দিয়ে থাকে’।[6] তিনি আরো বলেন, غيبة العلماء أعظم بكثير من غيبة غير العلماء، لأن غيبة غير العلماء غيبة شخصية، إن ضرت فإنها لا تضر إلا الذي اغتاب والذي قيلت فيه الغيبة، لكن غيبة العلماء تضر الإسلام كله؛ لأن العلماء حملة لواء الإسلام، فإذا سقطت الثقة بأقوالهم؛ سقط لواء الإسلام، وصار في هذا ضرر على الأمة الإسلامية، ‘সাধারণ মানুষের গীবতের চেয়ে আলেমদের গীবতের ভয়াবহতা বেশী। কেননা সাধারণ মানুষের গীবত ব্যক্তি পর্যায়ে হয়ে থাকে। এই গীবতের মাধ্যমে শুধু গীবতকারী এবং যার দোষ বর্ণনা করা হয় তার ক্ষতি হয় (অন্য কারো কোন ক্ষতি হয় না)। কিন্তু আলেমদের গীবত পুরো ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। কেননা আলেমগণ ইসলামের পতাকা বহনকারী। তাদের কথা-বার্তা বা পরনিন্দার মাধ্যমে (জনগণের কাছে তাদের) বিশ^স্ততা যখন লোপ পেয়ে যায়, তখন ইসলামের নিশান ভূলুণ্ঠিত হয়। ফলে এই ক্ষতি গোটা মুসলিম উম্মাহর উপর আপতিত হয়’।[7]
ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ গীবত হ’ল বক্তা ও ওলামায়ে কেরামের গীবত। কেননা তারা সাধু সেজে নিজেদের মাক্বছাদ প্রকাশ করে। আর মানুষ মনে করে তারা গীবত করছে না। অথচ তিনি অজ্ঞতার মধ্যে নিমগ্ন। তার জানা নেই তিনি একই সময়ে দুই গুনাহ করছেন- (১) গীবত ও (২) রিয়া। তার সামনে যখন কোন ব্যক্তির আলোচনা করা হয়, তখন তিনি বলেন, আল্লাহর শুকরিয়া যে, তিনি আমাদের বাদশাহর দরবারে আসা-যাওয়ার পরীক্ষা থেকে নিরাপদ রেখেছেন, অথবা বলেন, দুনিয়া অর্জনের লাঞ্ছনা থেকে আমাদের হেফাযত করেছেন অথবা দো‘আয় বলেন, হে আল্লাহ! আমাদেরকে অমুকের নির্লজ্জতা ও অসম্মান থেকে রক্ষা করুন। এর দ্বারা তার উদ্দেশ্য হচ্ছে অপরের দোষ প্রকাশ করা। তিনি শুকরিয়া আদায় বা দো‘আ করলেও শোকর ও দো‘আ কোনটিই তার মূল উদ্দেশ্য থাকে না।
কখনো কখনো কোন ব্যক্তির গীবত করার উদ্দেশ্যে তার প্রশংসা করা হয়। যেমন- অমুক ব্যক্তি কতই না ভালো! অমুক অনেক ইবাদত করে, তবে তার মধ্যে একটি খারাপ অভ্যাস রয়েছে, এমনকি আমাদের মধ্যেও রয়েছে, তা হচ্ছে ধৈর্য কম থাকা। লক্ষ্য করুন! বাহ্যত এ কথার মাধ্যমে তিনি নিজের নিন্দা করছেন; কিন্তু লক্ষ্য হচ্ছে অপরের দোষ বলা। কিন্তু তিনি এমন পন্থা অবলম্বন করেছেন যে, শ্রোতারা বক্তার ইখলাছ ও নিজেকে ছোট মনে করা দেখে ভাবেন তিনি কতই না পরহেযগার! অথচ বাস্তবে এই বক্তা তিনটি গুনাহে লিপ্ত (১) গীবত (২) রিয়া ও (৩) আত্মপ্রশংসা।[8]
সুতরাং হকপন্থী আলেম-ওলামার অবশ্য কর্তব্য হ’ল অপরের নিন্দা ও দোষ চর্চা থেকে বেঁচে থাকা। কেননা আলেমগণ গীবতে লিপ্ত হ’ল প্রকারান্তরে তারা দ্বীন ইসলামের ক্ষতিসাধন করেন। গীবতকারী আলেমরা মানুষের কাছে নিন্দিত হন এবং তাদের দ্বীনী উপদেশও জনগণের কাছে উপেক্ষিত হয়। ফলে আলেমের ব্যক্তিগত দোষের কারণে দ্বীনের ক্ষতি হয়ে যায় অনেক বেশী।
২. মৃত মানুষের গীবত করা :
মৃত মানুষের দোষ-ত্রুটি চর্চা করার ভয়াবহতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী। কারণ গীবত নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি মৃত মানুষের নিন্দা করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আলাদাভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন,إِذَا مَاتَ صَاحِبُكُمْ فَدَعُوهُ، وَلَا تَقَعُوا فِيهِ، ‘তোমাদের কোন সঙ্গী মারা গেলে তাকে ছেড়ে দাও। তার সম্পর্কে কোন কটূক্তি করো না’।[9] আযীমাবাদী (রহঃ) বলেন, ولا شك أن غيبة المسلم الميت أفحش من غيبة الحي وأشد؛ لأن عفو الحي واستحلاله ممكن، بخلاف الميت؛ ‘নিঃসন্দেহে জীবিত মানুষের গীবত করার চেয়ে মৃত মুসলিমের গীবত করা অধিকতর খারাপ ও ভয়াবহ। কেননা জীবিত মানুষের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া এবং মীমাংসা করে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু মৃত মানুষের ব্যাপারে সেই সুযোগটা থাকে না’।[10]
তবে মৃত ব্যক্তি যদি কোন অন্যায় বা পাপের প্রচলন করে এবং তার প্রভাব জীবিতদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়, তবে জীবিতদের সতর্ক করার জন্য সেই মৃত ব্যক্তির অন্যায় কাজের সমালোচনা করা ওয়াজিব। ইমাম মানাভী (রহঃ) বলেন,إِن غيبَة الْمَيِّت أشدّ من غيبَة الْحَيّ وَهَذَا مَا لم يَتَرَتَّب على ذكره بالسوء مصلحَة وَإِلَّا كالتحذير من بدعته فَهُوَ جَائِز بل وَاجِب، ‘জীবিত ব্যক্তির চেয়ে মৃত ব্যক্তির গীবত করা অধিক ভয়াবহ। এই গীবত শুধু তখনই না জায়েয হবে যখন মৃত ব্যক্তির দোষ বর্ণনাতে কোন সংশোধনের উদ্দেশ্য থাকে না। অন্যথা তার (মৃত ব্যক্তির) বিদ‘আত বা অন্যায় কাজ থেকে সতর্ক করা (এবং এর জন্য সমালোচনা করা) শুধু বৈধই নয়; বরং ওয়াজিব’।[11]
গীবতের কারণ সমূহ
নানাবিধ কারণে মানুষ গীবতের মতো জঘন্য পাপে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। নিমেণ কতিপয় কারণ ধারাবাহিকভাবে আলোকপাত করা হ’ল-
১. আল্লাহর ভয় কম থাকা :
যেকোন পাপ সংঘটিত হওয়ার মূল কারণ হ’ল আল্লাহর ভয় না থাকা। যদি কারো হৃদয়ে আল্লাহভীতির চিহ্ন থাকে, তাহ’লে তিনি কখনোই গীবতের মত জঘন্য পাপে জড়াবেন না। কিন্তু বাহ্যিক পরহেযগার যদি অন্যায়ভাবে গীবত চর্চা করেন, তাহ’লে তার তাক্বওয়া পূর্ণাঙ্গ নয় বলে প্রমাণিত হয়। ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী (রহঃ) বলেন,مَنْ لَمْ يَتَّقِ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ مَا قَالَ، ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে না, সে যা তা বলে ফেলে’।[12]
কিন্তু বান্দা যখন আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে, তখন সে মেপে মেপে কথা বলে। পরনিন্দা করতে তার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। কেননা আল্লাহ বলেছেন,إِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيدٌ، مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ- ‘যখন দু’জন ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমলনামা লিপিবদ্ধ করে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তা গ্রহণ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্ত্তত প্রহরী রয়েছে’ (ক্বা-ফ ৫০/১৭-১৮)। অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরকুল শিরোমণি আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, يَكْتُبُ كُلَّ مَا تَكَلَّمَ بِهِ مِنْ خَيْرٍ أَوْ شَرٍّ، حَتَّى إِنَّهُ لَيَكْتُبُ قَوْلَهُ: أَكَلْتُ، شَرِبْتُ، ذَهَبْتُ، جِئْتُ، رَأَيْتُ، حَتَّى إِذَا كَانَ يَوْمُ الْخَمِيسِ عَرَضَ قَوْلَهُ وَعَمَلَهُ، ‘সে ভালো-মন্দ যা কিছু বলে সব লিখে নেওয়া হয়। এমনকি ‘আমি খেয়েছি, পান করেছি, গিয়েছি, এসেছি, দেখেছি’ তার এই কথাগুলোও লেখা হয়। তারপর বৃহস্পতিবারে তার কথা ও আমল (লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতা আল্লাহর সামনে) পেশ করেন’।[13]
২. অলস-অবসর ও বেকারত্ব :
সবচেয়ে বেশী গীবত চর্চা হয় অবসর সময়ে। মানুষের যখন কর্ম ব্যস্ততা থাকে না, তখন সে অবসর পায়। আর এই অবসর সময় অতিবাহিত করার জন্য চলে যায় গল্পের আড্ডায়, চা স্টলে, ক্লাবে, রাস্তার মোড়ে, হাট-বাজারে অথবা ইন্টারনেটের সুবিস্তৃত প্রান্তরে। শুরু হয় অপ্রয়োজনীয় গাল-গল্প। এক পর্যায়ে মুখরোচক কথায় মানুষের নিন্দা ও দোষকীর্তন শুরু হয়ে যায়। চায়ের চুমুকে চুমুকে গীবতের চর্চা হয়। দুর্ভাগ্যজনক হ’লেও সত্য যে, আল্লাহর ঘর মসজিদে গীবত করতেও তাদের বুক কেঁপে উঠে না। ছালাতের পরে মুসলিম ভাইয়ের গোশত ভক্ষণের মহোৎসবে মেতে উঠে। মহিলারাও পিছিয়ে নেই; বরং তারা অবসর সময়ে গীবত চর্চাতে পুরুষের চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকে।
তাছাড়া অবসর সময়গুলোতে মিডিয়া পাড়াও মুখরিত হয়ে উঠে পরনিন্দার অনুশীলনে। কোথায় কে কি করেছে বা না করেছে- তা সুনিপুণভাবে ফুটে ওঠে গীবতকারীর স্ট্যাটাসে। শুরু হয় লাইক-কমেন্ট আর শেয়ারের উম্মাতাল ঝড়। যেন সবাই পাপের ভাগ-বাটোয়ারাতে উঠে পড়ে লেগেছে। জাহান্নামের পথে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলছে। তাই তো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ: الصِّحَّةُ وَالفَرَاغُ ‘অধিকাংশ মানুষ ধোঁকায় নিপতিত হয় দু’টি নে‘মতের ব্যাপারে: সুস্বাস্থ্য এবং অবসর’।[14]
৩. অধিক ঠাট্টা-মশকরা করার প্রবণতা :
অনেক সময় হাসি-তামাশা ও ঠাট্টা-মশকারার মাধ্যমে পরনিন্দা করা হয়। মানুষের শারীরিক গঠন, কথার ভঙ্গি, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাড়ি-গাড়ি প্রভৃতি নিয়ে আমরা মজা করার চেষ্টা করি। যেন আমরা হেসে-খেলে নিজের দেহকে আগুনের খোরাক বানাচ্ছি। গীবতের বিভিন্ন কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন,اللعب والهزل والمطايبة وَتَزْجِيَةُ الْوَقْتِ بالضَّحِك فَيذكر عيوب غيره بِمَا يضحك الناس على سبيل المحاكاة ومنشؤه التكبر والعجب، ‘ক্রীড়া-কৌতুক, ঠাট্টা-রসিকতা এবং কৌতুক-মশকরায় সময় কাটানোর জন্য গীবত করা হয়। মানুষকে হাসানোর জন্য অঙ্গ-ভঙ্গি নকল করে অপরের দোষ বর্ণনা করা হয়। মূলতঃ এর উৎপত্তি স্থল হ’ল অহংকার ও দাম্ভিকতা’।[15]
৪. আত্মমর্যাদা ও অহমিকা :
অহংকার ও আত্মমর্যাদাবোধ মানুষের বিবেকের চোখ অন্ধ করে দেয়। তখন সে মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে থাকে এবং নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করতে থাকে। যেমন কারো সম্পর্কে বলা সে তো মূর্খ, কিছুই বোঝে না। এই কথার উদ্দেশ্য হ’ল তার চেয়ে আমি বেশী জানি। মূলতঃ বুদ্ধি-বিবেক লোপ পাওয়ার কারণে সে অন্যের দোষকীর্তন করে থাকে। মুহাম্মাদ ইবনুল হুসাইন (রহঃ) বলেন, مَا دَخَلَ قَلْبَ امْرِئٍ شَيْءٌ مِنَ الْكِبْرِ قَطُّ إِلَّا نَقَصَ مِنْ عَقْلِهِ بِقَدْرِ مَا دَخَلَ مِنْ ذَلِكَ قَلَّ أَوْ كَثُرَ، ‘কখনো যদি কারো হৃদয়ে সামান্য অহমিকাও প্রবেশ করে, তাহ’লে সেই পরিমাণ তার বিবেক লোপ পায়, সেটা কম হোক বা বেশী হোক’।[16] সুতরাং যে নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে করবে, নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করবে, অথবা কারো ব্যাপারে মনে ঘৃণা পুষে রাখবে, নিশ্চিতভাবে তার মাধ্যমে গীবত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
৫. রাগ ও প্রতিশোধ :
রাগ মানুষকে অনেক নীচে নামাতে পারে। রাগের বশবর্তী হয়ে মানুষ অনেক অস্বাভাবিক কাজ করে ফেলতে পারে। রাগের কারণে মুখের ভাষা বল্গাহীন হয়ে যায় এবং মুখ দিয়ে বেফাঁশ কথা-বার্তা বের হয়। মনের ঝাল মিটানোর জন্য অন্যের দোষ-ত্রুটি নিয়ে লাগামহীন কথা বলা হয়। সেজন্য ভিন্নমত পোষণকারী, শত্রু ও অসদাচরণকারীর উপর রেগে গিয়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাওয়া থেকে সাবধান থাকা উচিত। কারণ শয়তান রাগের সুযোগে বান্দার উপর আক্রমণ করে বসে এবং তার মাধ্যমে গীবত করিয়ে নেয়। আর মানুষ যখন রাগের আগুনে দগ্ধ হয়, তখন সে পশুর মত প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে বললেন, أَوْصِنِي يَا رَسُولَ اللهِ ‘ হে আল্লাহর রাসূল! আমকে অছিয়ত করুন’। রাসূল (ছাঃ) বললেন, لَا تَغْضَبْ ‘তুমি রাগ করো না’। অপর বর্ণনায় এসেছে, লোকটা কয়েকবার প্রশ্ন করলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) প্রত্যেকবার একই জবাব দেন যে, রাগ করো না। রাবী বলেন,فَفَكَّرْتُ حِينَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا قَالَ، فَإِذَا الْغَضَبُ يَجْمَعُ الشَّرَّ كُلَّهُ، ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কথা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে দেখলাম, রাগ সব ধরনের অনিষ্টকারির মূল’।[17] জা‘ফর ইবনে মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেন, الْغَضَبُ مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ، ‘রাগ সকল অকল্যাণের চাবিকাঠি’।[18] ইবনে তীন (মৃ. ৬১১ হি.) বলেন, جَمَعَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قَوْلِهِ لَا تَغْضَبْ خَيْرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ لِأَنَّ الْغَضَب يؤول إِلَى التَّقَاطُعِ وَمَنْعِ الرِّفْقِ وَرُبَّمَا آلَ إِلَى أَنْ يُؤْذِيَ الْمَغْضُوبَ عَلَيْهِ فَيُنْتَقَصُ ذَلِكَ مِنْ الدِّينِ، ‘রাগ করো না, এই উপদেশের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণকে একত্রিত করেছেন। কেননা রাগ সম্পর্কচ্ছেদের দিকে ধাবিত করে এবং কোমলতা থেকে বঞ্চিত রাখে। কখনো কখনো রোষানলে পতিত ব্যক্তির ক্ষতি করতে প্ররোচিত করে। ফলে দ্বীনদারিতা চরমভাবে হ্রাস পায়’।[19] এই বিষয়টি সবার কাছে পরীক্ষিত যে, অনেক সময় মানুষ রাগের বশবর্তী হয়ে এবং প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে পরনিন্দা করে থাকে।
৬. শত্রুতা ও হিংসা :
গীবতের একটি প্রত্যক্ষ কারণ হ’ল শত্রুতা ও হিংসা। শত্রুর দোষ-ত্রুটি যত সামান্যই হোক তা প্রকাশ করে গীবতকারী মনের ঝাল মেটানোর চেষ্টা করে। অনুরূপভাবে হিংসার আগুন পরনিন্দার প্রবণতাকে উসকে দেয়। ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন, ‘হিংসার কারণে মানুষ গীবতে লিপ্ত হয়। সে যখন কাউকে দেখে যে, সবাই তার প্রশংসা করে এবং সম্মান করে তখন সে হিংসায় জ্বলে যায় এবং অন্য কোন কিছুর ক্ষমতা না থাকায় তার দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করতে থাকে, যেন তার প্রশংসা ও সম্মান না করা হয়। সে কামনা করে মানুষের মাঝে তার মর্যাদা না থাকুক, যাতে মানুষ তাকে সম্মান করা থেকে বিরত থাকে। কেননা মানুষের মুখে ঐ ব্যক্তির প্রশংসা শোনা তার কাছে অনেক কঠিন মনে হয়। এটাই হিংসা। এটা রাগ বা ক্ষোভ না। কারণ যার উপর রাগ করা হয় তার থেকে কোন অপরাধ দাবী করা হয় না। পক্ষান্তরে হিংসা উত্তম বন্ধু ও নিকটাত্মীয়দের সাথেও হয়ে থাকে’।[20]
৭. অন্যের প্রতি কুধারণা :
কুধারণাকে বলা হয় মনের গীবত। কারো ব্যাপারে মনে খারাপ ধারণা তৈরী হ’লে পরনিন্দার দুয়ার খুলে যায়। কুধারণার ভিত্তিতে করা গীবতের ভয়াবহতা বেশী। কারণ সাধাণভাবে গীবত হ’ল ব্যক্তির মাঝে যে দোষ-ত্রুটি বাস্তবেই থাকে, সেই বাস্তবসম্মত বিষয়টিই অন্যের কাছে বলে ফেলা গীবত। কিন্তু কুধারণার মাধ্যমে অধিকাংশ সময় ব্যক্তির মাঝে যে দোষ নেই তা কল্পনা করা হয় এবং সন্দেহমূলকভাবে তা অন্যের কাছে প্রচার করা হয়। সেজন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা হুজুরাতে কুধারণা পোষণ করাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الحَدِيثِ ‘তোমরা ধারণা করা থেকে বেঁচে থাক! কেননা ধরণা করে কথা বলা সবচেয়ে বড় মিথ্যা’।[21] ইবনু রাসলান বলেন, يجب عليك السكوت بقلبك عن سوء الظن، فإن سوء الظن بالمسلم غيبة بالقلب، وهي منهي عنها، ‘কুধারণা থেকে বিরত থেকে তুমি তোমার অন্তরকে নীরব রাখ। কেননা মুসলিমের ব্যাপারে খারাপ ধারণা করা অন্তরের গীবত। আর এটা নিষিদ্ধ’।[22]
৮. নিজের দোষ-ত্রুটির দিকে না তাকানো :
মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। কম-বেশী সবার মাঝে দোষ-ত্রুটি বিদ্যমান। কিন্তু যারা নিজেদের দোষ-ত্রুটির দিকে নযর দেয় না এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না, তারাই অপরের নিন্দাবাদে বেশী তৎপর থাকে। তাই তো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,يُبْصِرُ أَحَدُكُمُ الْقَذَاةَ فِي عَيْنِ أَخِيهِ، وَيَنْسَى الْجِذْعَ فِي عَيْنِهِ، ‘তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের চোখে সামান্য খড়-কুটো দেখতে পায়, কিন্তু নিজের চোখে আস্ত গাছের গুঁড়ি দেখতে ভুলে যায়’।[23] অর্থাৎ মানুষ অন্যের সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি অনেক বড় করে দেখে এবং সেগুলো নিয়ে গীবতে লিপ্ত হয়। কিন্তু নিজের মধ্যে যে তার চেয়ে শতগুণ মারাত্মক ত্রুটি আছে সেদিকে তার কোন ভ্রূক্ষেপ থাকে না।
৯. ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির নৈকট্য কামনা :
বিভিন্ন অফিস-আদালত ও সংগঠনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা নেতার কাছে ভালো সাজার জন্য অন্যের দোষ চর্চা করা কিছু মানুষের মজ্জাগত স্বভাব। অন্যকে অযোগ্য প্রমাণিত করে নিজেকে উপযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে উপস্থাপনের কোশেশ থেকে এই গীবতের উৎপত্তি হয়। আবার কখনো নিজের দোষ ঢাকার জন্য গীবত করা হয়, যাতে নিজের ত্রুটিকে হালকা প্রমাণিত করা যায়।
ইমাম গাযালী বলেন, ‘গীবতকারী যখন বুঝতে পারে যে, অমুক ব্যক্তি উচ্চপদস্থ লোকের কাছে তার দোষ বর্ণনা করবে বা তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে, তখন সে পূর্ব থেকেই ঐ লোকের দোষ বর্ণনা করা শুরু করে, যাতে তার সম্পর্কে কিছু বলা হ’লে সেটা শোনার মতো অবস্থা না থাকে। অথবা সত্য বিষয়গুলো দিয়ে আলোচনা শুরু করে, যাতে পরবর্তীতে মিথ্যা বলতে পারে। তখন প্রথম সত্যের সাথে মিথ্যা চালিয়ে
দিবে। আবার কখনো কখনো সে নিজের দোষ থেকে নির্দোষ হওয়ার জন্য অন্যের গীবত করে। এমতাবস্থায় অপর ব্যক্তির নাম নিয়ে বলা হয়- সেও তো এরকম করেছে কিংবা এ কাজে সেও আমার সাথী ছিল’।[24]
১০. গীবতের মজলিসে বসা এবং গীবতের পরিবেশে বেড়ে ওঠা :
পরিবেশ ও সঙ্গের মাধ্যমে প্রভাবিত হওয়া মানুষের স্বভাব। বিবেকের লাগাম টেনে এটাকে যদি নিয়ন্ত্রণে না রাখা যায়, তাহ’লে বন্ধু-বান্ধব ও আশ-পাশের লোকের প্রভাবে পরনিন্দার ঘেরাটোপে আটকে যাওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া গীবতের পরিবেশে বেড়ে উঠলে গীবতকে পাপ মনে করার মানসিকতা লোপ পেয়ে যায়। ইমাম গাযালী বলেন, ‘অন্যের দেখাদেখি এবং তার সুরের সাথে সুর মিলানোর জন্য অনেকে গীবতে লিপ্ত হয়। আপন সঙ্গী কারো ব্যাপারে মন্দ আলোচনা করলে সে মনে করে তার মতো না বললে সে বুঝি বেজার হয়ে যাবে কিংবা বন্ধুত্ব ছেড়ে দিবে। তখন সে তার বন্ধুর কথার ন্যায় কথা বলতে থাকে এবং এটাকে সামাজিকতা মনে করে। সে মনে করে এর মাধ্যমে সে পরিবেশের সাথে তাল মিলাচ্ছে। অনেক সময় সঙ্গী-সাথীরা কারো প্রতি রাগ দেখালে সেও তার ওপর রাগ দেখায়, সে তার বন্ধুদের একথা বুঝাতে চায় যে, বিপদ-আপদে, দুঃখ-কষ্টে সর্বদা সে তাদের সাথেই আছে’।[25]
গাযালী (রহঃ)-এর কথাটা যে কতটা বাস্তবসম্মত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক সময় আমরা শুধু মুখ রক্ষার স্বার্থে, সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য এবং সামাজিকতা বজায় রাখার নিমিত্তে গীবত চর্চা করি। এমনকি কখনো কখনো গীবত অপসন্দ করা সত্ত্বেও ঈমানী দুর্বলতার কারণে এখান থেকে নিজেকে বের করে আনতে পারি না। অথচ আমরা জানি গীবত করা যেমন মহাপাপ, তেমনি মুগ্ধ হয়ে গীবত শোনা এবং তাতে সায় দেওয়াও পাপ। মহান আল্লাহ আমাদের গীবত করা এবং শোনা থেকে হেফাযত করুন। গীবতকারী ও গীবতের পরিবেশ থেকে আমাদেরকে যোজন যোজন দূরে রাখুন- আমীন!
[চলবে]
আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
এম.এ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. আবূদাঊদ হা/৩৬৪১; তিরমিযী হা/২৬৮২; মিশকাত হা/২১২।
[2]. আব্দুল বাসেত আল-আলমাভী, আল-মু‘ঈদ ফী আদাবিল মুফীদ ওয়াল মুস্তাফীদ, পৃ. ৭১।
[3]. ইবনু আবিদ্দুনয়া, আছ-ছাম্তু, পৃ. ২৬৮।
[4]. ইবনুল আয্রাক্ব, বাদাই‘উস সুলূক, ১/৩৯০।
[5]. আবূ বকর খাওয়ারিযমী, মুফীদুল ‘উলূম ওয়া মুবীদুল হুমূম, পৃ. ৩২৯।
[6]. ওছায়মীন, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২১/৪৩; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দার্ব ২/১২।
[7]. ওছায়মীন, শরহ রিয়াযুছ ছালেহীন, ১/২৫৬।
[8]. গাযালী, ইহ্ইয়াউ ‘উলূমিদ্দীন, ৩/১৪৫-১৪৬।
[9]. আবূদাঊদ হা/৪৮৯৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৮২; সনদ ছহীহ।
[10]. আওনুল মা‘বূদ ১৩/২৪২।
[11]. মানাভী, আত-তায়সীর শারহু জামি‘ইছ ছাগীর ১/১৪২।
[12]. ইবনু হাযম, হাজ্জাতুল ওদা‘, পৃ. ৩৮৪।
[13]. তাফসীর ইবনে কাছীর ৭/৩৯৯; ফাৎহুল ক্বাদীর ৫/৯৩।
[14]. বুখারী হা/৬৪১২; মিশকাত হা/৫১৫৫।
[15]. গাযালী, ইহয়াউ উলূমিদ্দীন, ৩/১৪৭।
[16]. ইবনু আবিদ্দুনয়া, আত-তাওয়াযু‘ ওয়াল খুমূল, পৃ. ২৭২।
[17]. আহমাদ হা/২৩১৭১; বুখারী হা/৬১১৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৭৪৬; সনদ ছহীহ।
[18]. ইবনু রজব হাম্বলী, জামে‘উল উলূম ওয়াল হিকাম ১/৩৬৩।
[19]. আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী ১০/৫২০।
[20]. ইহয়াউ ‘উলূমিদ্দীন, ৩/১৭৪।
[21]. বুখারী হা/৬০৬৪; মুসলিম হা/২৫৬৩।
[22]. ইবনু রাসলান আর-রাম্লী, শরহ সুনান আবী দাঊদ ১৯/১৩৯।
[23]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৫৭৬১; ছহীহুল জামে‘ হা/৮০১৩।
[24]. ইহ্য়াউ ‘উলূমিদ্দীন ৩/১৪৬-১৪৭।
[25]. ঐ ৩/১৪৬।