দ্বিতীয় দফা চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষে অবসরে গেলেন পদ্মা সেতু প্রকল্পে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করা দেশের ২২তম মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গত ১৫ই ডিসেম্বর তিনি অবসর গ্রহণ করেন। এর পূর্বে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার অবসরের কথা জানান এবং নানা প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে তার যেসব ভুল-ত্রুটি হয়েছে, সেজন্য দেশবাসীর কাছে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

১৯৮৩ ব্যাচের একঝাঁক মেধাবী আমলার অন্যতম খন্দকার আনোয়ার একজন সৎ, কর্মবীর ও পরিশ্রমী কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিত। তার সততা, যোগ্যতাই তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। অনেকেই তাকে কোন ঘরানার নয়, বরং কর্মচঞ্চল একজন ব্যক্তি হিসাবে চিহ্নিত করত।

পেশার প্রতি যেমন তিনি একনিষ্ঠ, তেমনি ব্যক্তি জীবনেও ছিলেন ধর্মপরায়ণ। সচিবালয়ের মসজিদে অনেক সময় তিনি নিজেই ইমামতি করতেন। ফরয ছালাতের আগে পরে প্রায়ই তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে অনেক উপদেশমূলক কথা বলতেন।

খন্দকার আনোয়ার সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান পদ্মা সেতু নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যে। এরকম পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়ে তিনি তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়টি পার করেন। মূলতঃ তার বিচক্ষণতা, কর্মতৎপরতা এবং সততার কারণে পদ্মা সেতু নিয়ে পরবর্তীতে আর কোন বিতর্ক হয়নি বলে অনেকেই মনে করেন। পদ্মা সেতুর সাফল্যের কারণেই সেতু বিভাগ থেকে তিনি মন্ত্রীপরিষদ সচিব হন।

সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় হ’ল, ৪০ বছর যাবৎ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নানা পদে দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও পুরো কর্মজীবনের প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্মৃতিসৌধ সহ কোন কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন এড়িয়ে চলেছেন এই সরকারী কর্মকর্তা। তার সহকর্মী একাধিক কর্মকর্তা জানান, মুজিব শতবর্ষ উদযাপনের অংশ হিসাবে শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসাবে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত একটি কোর্টপিন বুকে ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সরকারী কর্মকর্তারা। সব কর্মকর্তা তা ধারণ করলেও ব্যতিক্রম ছিলেন খন্দকার আনোয়ার। এছাড়া যেকোন জাতীয় উৎসব এবং এতদ-সংক্রান্ত বিভিন্ন দিবস উদযাপন উপলক্ষে সরকার কর্তৃক আয়োজিত কোন অনুষ্ঠানকে নিয়মিতভাবে এড়িয়ে যেতেন তিনি। জানা গেছে, প্রতি বছর সরস্বতী পূজা উদযাপন উপলক্ষে অফিসার্স ক্লাবের উদ্যোগে প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থে মন্ত্রী পরিষদ সচিবের বাণী দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তিনি তা দেননি।

এত কিছুর পরও ২০১৯ সালে সেতু বিভাগের তৎকালীন জ্যেষ্ঠ এই সচিবকে মন্ত্রীপরিষদ সচিব পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ঐ বছর অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও একই পদে প্রথমে ১ বছরের জন্য পরে ২ বছরের জন্য তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।







আরও
আরও
.