বেসরকারী কোম্পানীকে সম্পৃক্তকরণ সহ নানা উদ্যোগের ফলে গত কয়েক বছরে দেশের অর্থনীতির অন্যতম নিয়ামক চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। চিরাচরিত সেই শ্রমিক ধর্মঘট নেই। বিদেশী জাহাযের গড় অবস্থান সময় কমে এসেছে। বন্দরের খরচ কমে আয় বেড়েছে বহুগুণে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কনটেইনার শনাক্ত করাসহ কনটেইনার আনলোডের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সন্নিবেশ করায় বন্দরের সক্ষমতা আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. শাহজাহান বলেন, পরিস্থিতির উন্নয়নে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করায় এবং বেসরকারী খাতকে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কাজে নিযুক্ত করায় চট্টগ্রাম বন্দরে এখন ঝামেলা নেই। শ্রমিকরা এখন বেসরকারী কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকায় কথায় কথায় ধর্মঘট নেই বলে জানান তিনি। জানা গেছে, বেসরকারী অপারেটর দিয়ে টার্মিনাল পরিচালনার ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়ার পাশাপাশি বন্দরের সাশ্রয় হয়েছে কয়েকশ’ কোটি টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, ২০০৭ সালের আগে ম্যানুয়েল পদ্ধতি, একাধিক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিলষ্টতা, ঘুষ-দুর্নীতি, শ্রমিক সংগঠনগুলোর যখন-তখন ধর্মঘট, অদক্ষ অপারেটরসহ বিভিন্ন কারণে ক্রমাগত অকার্যকর হয়ে পড়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর। যন্ত্র পরিচালক ও সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হ’তেন। ফলে আমদানিকারকরা নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য খালাস নিতে পারতেন না। তারা জানান, ২০০৭ সালের আগে জাহাযের গড় অবস্থান ছিল ১০ থেকে ১২ দিন। এ অবস্থায় সিসিটি ও এনসিটি বেসরকারী পরিচালনায় দেওয়ার পর থেকে জাহাযের গড় অবস্থান ৩ দিনে নেমে আসে। ২০০৭ সালের আগে প্রতি কনটেইনারে বন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যয় হ’ত ২৫০০ টাকা। একই কাজ ২০০৭ সালের পর থেকে ১২০০ টাকায় হচ্ছে। আগে যেখানে গ্যান্ট্রি ক্রেনের মাধ্যমে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১২টি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হ’ত। সেখানে বেসরকারী কোম্পানী দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৫ থেকে ৩০ কনটেইনারে উন্নীত হয়।
বন্দরের অধিকাংশ কাজে সংশ্লিষ্ট কোম্পানী সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রূহুল আমীন বলেন, শুরুতে উন্নত বিশ্বের আধুনিক বন্দর থেকে বিশেষজ্ঞ এনে টার্মিনাল পরিচালনা করি। ১৫ বছরে ধাপে ধাপে সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। নানামুখী উদ্যোগের ফলে বিশ্বের ১০০টি ব্যস্ত বন্দরের তালিকায় ৬৪তম স্থানে উঠে এসেছে বন্দরটি।