পার্শ্ববর্তী আরাকান থেকে আগত পার্বত্য চট্টগ্রামের আলীকদম ও নাইখ্যংছড়ি উপযেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় এদের বাস। ভাষাটির নাম ‘রেংমিটচ্য’। বর্তমানে এ ভাষা জানা ছয়জন লোক বেঁচে আছেন। এদের মধ্যে একজন নারী ও পাঁচজন পুরুষ। যাদের চারজনের বয়স ৬০-এর ঊর্ধ্বে। তাঁদের মৃত্যু হ’লে রেংমিটচ্য নামের ভাষাটিরও মৃত্যু ঘটবে। পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাবে একটি ভাষা ও একটি সংস্কৃতি। তারা সবাই দরিদ্র জুমচাষী এবং তাদের বসবাসের পাড়াগুলো আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপযেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম পাহাড়ে ম্রো জনগোষ্ঠীর পাড়ায়। ম্রো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যাওয়ায় সবাই ম্রো ভাষায় কথা বলে এবং নিজেদের ম্রো হিসাবেই পরিচয় দিয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য, গত শতকের ৫০ ও ৬০-এর দশকে আলীকদমে চার-পাঁচটি পাড়ায় শতাধিক রেংমিটচ্যভাষী পরিবার ছিল। তবে তাদের আদি বসবাসের স্থান ৩০০ বছরেরও বেশী প্রাচীন ক্রাংসিপাড়ায়। পাড়াটি আলীকদম উপযেলা সদর থেকে ১৭-১৮ কিলোমিটার দূরে তৈনখালের উপত্যকায় অবস্থিত। সেখান থেকে জুমচাষের জমির সন্ধানে পার্শ্ববর্তী এলাকায় রেংমিটচ্যরা সমগোত্রীয় ম্রোদের সঙ্গে মিলেমিশে আরও তিন-চারটি পাড়া গড়ে তোলে। তখন থেকে তাঁরা সংখ্যায় বেশী একই সংস্কৃতির ম্রোদের সঙ্গে ধীরে ধীরে মিশে যেতে থাকে এবং রেংমিটচ্য ভাষাও হারিয়ে যেতে থাকে।

ম্রো জনগোষ্ঠী নিয়ে ক্লাউস-ডিয়েটার ব্রাউনস ও লোরেন্স জি লোফলার ১৯৬০-এর দশকে ‘ম্রো হিল পিপল অন দ্য বর্ডার অব বাংলাদেশ’ নামে একটি বই লিখেছেন। সেখানে তাঁরা বলেছেন, আরাকান থেকে আসা খামি নামে রেংমিটচ্য ভাষার একটি উপজাতি মাতামুহুরী নদীর উজানের ম্রোদের সঙ্গে মিশে গেছে। সেখান থেকে বুঝা যায়, রেংমিটচ্য ভাষা তখন থেকে হারিয়ে যাচ্ছিল। ঐ বইয়ের সূত্র ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ডারমুথ কলেজের লিংগুইস্টিকস অ্যান্ড কগনিটিভ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড এ পিটারসন ২০১৩ সালে রেংমিটচ্য ভাষার ম্রোদের খুঁজে পেয়েছেন। তিনি ২০১৫ সালের ১১ই জানুয়ারী বান্দরবান প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে রেংমিটচ্য ভাষার বিপন্নতার কথা তুলে ধরেন।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভাষা, গবেষণা ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক জানিয়েছেন, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বাংলাদেশের নৃভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় সমতলে ও পাহাড়ে পাওয়া ৪১টি ভাষার মধ্যে ১৪টি বিপন্ন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তন্মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের রেংমিটচ্য ভাষা, সমতলের পাত্র জনগোষ্ঠীর লালেং ভাষা গুরুতর সংকটাপন্ন।

[ভাষা আল্লাহর সৃষ্টি। তিনি বলেন, আর তাঁর নিদর্শন সমূহের মধ্যে রয়েছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে (রূম ৩০/২২)। ভাষা বিলুপ্ত হবে। আবার জন্ম নিবে। কেবল আরবী ভাষা ব্যতীত। কারণ এটি ছিল জান্নাতে পিতা আদমের ভাষা, দ্বিতীয়তঃ এভাষার বুকে রয়েছে আল্লাহর কালাম পবিত্র কুরআন ও হাদীছ। বিস্তারিত ‘আমাদের লিখিত ও হাফাবা প্রকাশিত বই, শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রস্তাবনাসমূহ পৃ. ৯-২৬ (স.স.)] 






আরও
আরও
.