শিক্ষকবৃন্দ
শিক্ষকদের পরীক্ষা :
উদ্বোধনী দরসকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করা হ’ত। কারণ এটা কমবেশি এক রকমের পরীক্ষা ছিল, বিশেষত হাদীছ শাস্ত্রের ক্ষেত্রে। তবে এটা শুধু হাদীছের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বাগদাদের শায়খরা ইমাম বুখারীকে যেভাবে পরখ করে দেখেছিলেন, তাতে বিষয়টির প্রমাণ মেলে। দশজন শায়খ ভুলভাবে দশটি করে হাদীছ পাঠ করলেন। অতঃপর তাদের পাঠ শেষ হ’লে ইমাম বুখারী (রহঃ) সনদ ও মতনে বিদ্যমান সমস্ত ভুল এক এক করে ধরিয়ে দিলেন।[1]
হাদীছের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরীক্ষা কেবল উদ্বোধনী ক্লাসে সীমাবদ্ধ ছিল না। ছাত্ররা প্রায়ই তাদের শিক্ষকের সাথে চালাকি করত। তারা মাঝে-মধ্যে একটি বা দু’টি হাদীছ গুলিয়ে ফেলত অথচ শিক্ষক সে হাদীছটি আদৌ তার শিক্ষকদের বরাতে বর্ণনা করেননি, যাদের বরাতে তার বর্ণনা করার অনুমতি রয়েছে। এবার শিক্ষক যদি হাদীছটির ব্যাপারে কোন আপত্তি না করতেন বা হাদীছটি তার নিজের সংকলনে রয়েছে এবং সেটি বর্ণনা করার অনুমতিও রয়েছে বলে দাবী করতেন, তাহ’লে শিক্ষক হিসাবে তার অবস্থান সংকটাপন্ন হয়ে পড়ত। তার বিরুদ্ধে ধোঁকাবাজির অভিযোগ উঠত বা নিদেন পক্ষে তার স্মৃতিশক্তি নিয়ে সন্দেহ করা হ’ত। তবে উভয় ক্ষেত্রেই তিনি শিক্ষকের অযোগ্য বলে বিবেচিত হ’তেন।[2]
স্বভাবতই এসব পরীক্ষার ফলাফল ব্যাপকভাবে জানাজানি হয়ে যেত। কয়েকটি পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল পেলে তা একজন শিক্ষকের জন্য বিরাট সুনাম বয়ে আনত, কিন্তু মাত্র একটি নেতিবাচক ঘটনা একজন শিক্ষকের সুনাম ধূলিসাৎ করে দিত। একবার এক শায়খ ইরাকে আসলে সেখানকার ছাত্ররা সেই শায়খের বর্ণনার অনুমতি রয়েছে এমন কয়েকটি হাদীছ গুলিয়ে ফেলল। বিষয়টি শায়খের দৃষ্টি এড়িয়ে গেলে তার বিরুদ্ধে ধোঁকাবাজির অভিযোগ উঠল এবং শেষ পর্যন্ত ছাত্ররা তাকে প্রত্যাখ্যান করল।[3] একজন মুসতামলী হাদীছে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে একজন শিক্ষককে পরীক্ষা করেছিলেন বলে জানা যায়।[4] আব্দুল ওয়াহহাব আল-খাফফাফ (মৃ. ২০৪ হি.) বাগদাদে এসে হাদীছ বর্ণনা করলেন। পরে তিনি তার ভাইয়ের নিকট পত্র লিখে জানালেন, ‘আমি বাগদাদে হাদীছ বর্ণনা করেছি এবং শ্রোতারা আমাকে শিক্ষক হিসাবে গ্রহণ করেছে। আল-হামদুলিল্লাহ’।[5]
এ ধরনের পরীক্ষা কেবল হাদীছের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং অন্যান্য ক্ষেত্রেও শিক্ষকদের জ্ঞানের গভীরতা তলিয়ে দেখতে এবং তারা মানসিকভাবে সচেতন কি-না তা পরখ করতে নানা কৌশল অবলম্বন করা হ’ত। গোলাম ছা‘লাবের নিকট একবার ‘হারাতনাক’ (هرطنق) শব্দের অর্থ জানতে চাওয়া হ’ল। এটি একজন ছাত্র ‘কানতারাহ’ শব্দটিকে বিকৃত করে বানিয়েছিল। যাহোক, শিক্ষক প্রদত্ত জবাব সন্তোষজনক হয়েছিল। বেশ কয়েক মাস পর পুনরায় এই একই প্রশ্ন করা হ’লে শিক্ষক তার জবাব দিলেন, এমনকি তিনি পূর্বের ঘটনার সন তারিখও বলে দিতে পেরেছিলেন।[6] মুবার্রাদ সম্পর্কেও এ ধরনের গল্প চালু আছে। তিনি তার জবাবের পক্ষে একটি দ্বিপদী কবিতাও আবৃত্তি করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে, জবাবটা যদি তার আগেভাগেই জানা থাকে, তাহ’লে বেশ। কিন্তু জবাবটি যদি তার জানা না থাকে এবং তিনি যদি কবিতাটি তৎক্ষণাৎ রচনা করে থাকেন, তাহ’লে তিনি অতিশয় প্রশংসার হকদার।[7]
শিক্ষকদের নিকটে সাধারণত তাদের বয়স, পেশা, জন্মস্থান, যেসব শহর তারা ভ্রমণ করেছেন এবং যেসব শিক্ষকের নিকটে দরস গ্রহণ করেছেন, তা জানতে চাওয়া হ’ত। উপরন্তু তাদেরকে তাদের শিক্ষক, এমনকি শিক্ষকদের শিক্ষক সম্পর্কে, তাদের মাঝে সাক্ষাতের সময় ও স্থান সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য দিতে বলা হ’ত। এছাড়া তাদেরকে তাদের প্রত্যক্ষদর্শীর নাম বলতে হ’ত, যদি কেউ থেকে থাকে অথবা কমপক্ষে তাদের নোটবুক পেশ করতে হ’ত। সাধারণত নোটবুকের সাথে শ্রবণের (সামা‘) দলীল সংযুক্ত থাকত।[8] আবার কখনো কখনো সহপাঠীরা নোটবুকে দস্তখত করার মাধ্যমে সত্যায়ন করত। এমনও প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ছাত্ররা নোটবুক চেক করে তাতে অসঙ্গতি খুঁজে বের করে জালিয়াতদের মুখোশ উন্মোচন করে দিত।[9]
এক সময় এটি একটি স্বীকৃত রীতি হয়ে দাঁড়াল যে, যে দরস প্রদান করতে চায়, তাকে তার নোটবুক পেশ করতে হবে।[10] শায়খরা যদি তাদের নোটবুক পরীক্ষা করতে দিতে অস্বীকৃতি জানাতেন, তাহ’লে ছাত্ররা তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করত। ইবনু মাঈন (মৃ. ২৩৩ হি.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি একবার একজন শিক্ষকের নিকট থেকে তাঁর নোটবুক নিয়ে যাচাই করেছিলেন।[11] আরেকটি ঘটনা বর্ণিত আছে, খত্বীব বাগদাদী একবার একজন শিক্ষককে নোটবুক পেশ করতে বলেছিলেন, কিন্তু তিনি পেশ করতে পারেননি। ফলে তিনি পাঠদানের অনুমতিও পাননি।[12]
শ্রবণের সত্যায়ন :
শ্রবণের (সামা‘) সত্যায়ন বা অনুমতি দানের রীতি থেকে একসময় পাঠদানের অনুমতি (ইজাযত) আত্মপ্রকাশ করে। নীতিগতভাবে একজন ব্যক্তি যদি কোন কথা সরাসরি শিক্ষকের নিকট থেকে শ্রবণ না করে থাকে, তাহ’লে তা তার নামে প্রচার করতে পারবে না। যাহোক, সামা‘ বলতে কেবল শিক্ষক বা পাঠের দায়িত্বরত ব্যক্তির নিকট থেকে শ্রবণ করা বুঝায় না; বরং শ্রবণসংশ্লিষ্ট আরো কিছু বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন,
ক) শিক্ষক স্বরচিত কিতাব, নোটবুক বা স্মৃতি থেকে বলেছিলেন।
খ) কোন ছাত্র শিক্ষকের কিতাব, নোটবুক বা নিজ স্মৃতি থেকে বলেছিল।
গ) কেউ একজন কথাগুলো শিক্ষকের সামনে পেশ করেছিল।
শেষোক্ত দু’টি সম্ভাবনা যেখানে অন্য কেউ শিক্ষকের সামনে একটি ‘বিষয়’ পেশ করছে, তাকে ‘আল-আরয’ (প্রেজেন্টেশন) বলা হ’ত।
শ্রবণের সত্যায়ন ছাড়াও ‘মুনাওয়ালা’কেও (হস্তান্তর করা) ইলম প্রচারের একটি স্বীকৃত পন্থা হিসাবে বিবেচনা করা হ’ত। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি ছিল এমন,
ক) শিক্ষক যদি তার নোটবুক বা নোটবুকের অংশবিশেষ কাউকে হস্তান্তর করেন এবং সাথে সাথে এটা নিশ্চিত করেন যে, তিনি নিজে ওটা রচনা করেছেন বা তাতে উল্লেখিত শিক্ষকদের দরসে বসে লিপিবদ্ধ করেছেন।
খ) যদি কোন ছাত্র শিক্ষক রচিত কিতাব বা নোটবুকের অংশবিশেষ শিক্ষকের সামনে পেশ করে তা প্রচারের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে।[13]
সাধারণত সংকলকের (শায়খ) অনুমতি ব্যতিরেকে তার কিতাবের কোন কিছু প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হ’ত। কারণ এটা ছিল শ্রবণনীতির (সামা‘) সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। তথাপি এ ধরনের বর্ণনার উদাহরণ পাওয়া যায়।[14] অনেক সময় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি বা সংকলকের বিনা অনুমতিতে তার কিতাব থেকে পাঠদানের অভিযোগ উঠত।[15]
ইলমী যোগ্যতার সনদ/পাঠদানের অনুমতিপত্র :
প্রাথমিক অবস্থায় শ্রবণের (সামা‘) সত্যায়নই পাঠদানের অনুমতি (ইজাযা) হিসাবে কাজ করত এবং সে যুগে সত্যায়ন করা হ’ত মৌখিকভাবে।[16] ২৭৬ হিজরী সনে আহমাদ বিন আবু খায়ছামা নিজ হাতে একটি ইজাযা লিখেছিলেন এবং সম্ভবত ওটাই হ’ল এখনো বিদ্যমান সবচেয়ে প্রাচীন ইজাযা।[17] পরবর্তীতে হিজরী ৪র্থ শতকে পাঠদানের অনুমতিপত্র হিসাবে ইজাযা একটি স্বীকৃত রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কোন কোন সময় এটা নোটবুকের সাথে জুড়ে দেয়া হ’ত বা কখনো কখনো এটা স্বতন্ত্রভাবে লেখা হ’ত। উপরন্তু পাঠদানের স্থান ও কাল, ইজাযা প্রদানকারীর নাম এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের নামও ইজাযাতে উল্লেখ থাকত। প্রকৃতপক্ষে শুরুর দিকে একজন ব্যক্তি শিক্ষক হিসাবে তার অধিকার বলে ব্যক্তি বিশেষকে বা দরসে অংশগ্রহণকারীদেরকে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে পাঠদানের অনুমতি স্বরূপ ইজাযা প্রদান করতেন। কারণ সেসময় কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার পক্ষ থেকে ইজাযা প্রদান করা হ’ত না।[18]
হাদীছের ক্ষেত্রে মাত্র একটি হাদীছ বা একটি সংকলিত কিতাবের জন্য ইজাযা লাভ করা সম্ভব ছিল। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে ইজাযা দেয়া হ’ত একটি সুনির্দিষ্ট শাস্ত্র পড়ানোর জন্য। যেমন ‘ইজাযা লিত তাদরীস’ দেয়া হ’ত ফিক্বহ শাস্ত্র পড়ানোর জন্য। তবে এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মাযহাবের নির্দিষ্ট কিছু কিতাব পড়ানো হ’ত। যাহোক, এভাবে ইজাযা এক সময় প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রীর রূপ পরিগ্রহ করল। ফিক্বহী কোর্সগুলো যখন সুবিন্যস্ত হ’ল এবং সময়ের নিয়ম অনুযায়ী ছাত্রদের একটা সময়সীমা বেঁধে দেয়া হ’ল, তখন ফিক্বহ শাস্ত্র পড়ানো ও ফৎওয়া প্রদানের অনুমতি (ইজাযা লিত তাদরীস ওয়াল ইফতা) পেতে হ’লে ছাত্রদেরকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হ’তে হ’ত। যদিও সেই ইজাযা সুনির্দিষ্ট কিতাব বা কিতাবাদির জন্য প্রযোজ্য ছিল।
শিক্ষকদের তালিকা :
আরেকটি বিষয় রয়েছে, যা মূলতঃ ব্যক্তির জ্ঞানের গভীরতা নির্দেশ করে। তা হচ্ছে ‘মু‘জামুল মাশায়েখ’ (শিক্ষকদের তালিকা)। নিজ নিজ শিক্ষকের সংখ্যা গণনা করতে ছাত্ররা অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাদীছের ছাত্ররা এই তালিকা লিপিবদ্ধ করত।[19] উপরন্তু তালিকার সত্যতা নিশ্চিত করতে বা পাঠদানের অনুমতি দিতে শায়খগণ ও অন্যান্য ছাত্ররা তালিকাটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করত।
হাদীছের ছাত্রদের বহুসংখ্যক শিক্ষক থাকত। কখনো কখনো সেই সংখ্যা হ’ত শত শত। দু’জনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়, একজন তার শিক্ষকের সংখ্যা ৬০০ দেখিয়েছিল।[20] অপরদিকে আরেকজন গর্ব করেছিল যে, তার শিক্ষকের সংখ্যা ৬০০০।[21] ইমাম বুখারীর ব্যাপারে বলা হয়, তার শিক্ষক ছিল ১০০০ জন।[22]
জ্ঞান আহরণে সফর (রিহলা) :
নিঃসন্দেহে ইলমে হাদীছই ছাত্রদেরকে যত বেশি সংখ্যক শিক্ষকের নিকট থেকে সম্ভব জ্ঞান আহরণ করতে উৎসাহী করে তুলেছিল। একবার এক পিতা তার সন্তানকে এক লক্ষ দিরহাম প্রদান করে নছীহত করলেন যে, সে যেন এক লক্ষ হাদীছ না শিখে ঘরে না ফেরে।[23] মুসলিম পন্ডিতদের নীতি ছিল তারা কেবল তাদের স্থানীয় বা নিকটস্থ শহরের শিক্ষকের নিকট পড়াশোনা করে ক্ষান্ত হ’তেন না; বরং বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তেন।[24] কারণ সেসময় রিহলা (ইলম হাছিলের উদ্দেশ্যে সফর) ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছিল। যেসব শায়খদের দরসে দূরদূরান্ত থেকে ছাত্ররা হাযির হ’ত, তারা মর্যাদাপূর্ণ ‘আর-রিহলা’ অভিধায় ভূষিত হ’তেন।
নিরাপদে গন্তেব্য পৌঁছাতে ছাত্ররা অধিকাংশ সময় হজ্জযাত্রী দল কিংবা ব্যবসায়ী কাফেলার সাথে যোগ দিত।[25] বলা হয়ে থাকে, রিহলার জনপ্রিয়তার পেছনে হজ্জই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল।[26] হজ্জ কাফেলা ছাত্রদেরকে সহযাত্রী শায়খদের নিকট থেকে ইলম হাছিল করার এবং বিভিন্ন ইলমী কেন্দ্র পরিদর্শন করার সুযোগ করে দিত। হজ্জের সফরে কাফেলা গুলো সাধারণত বড় বড় শহরে যাত্রাবিরতি করত। এসব সফর যে শায়খদেরকে কতদূর নিয়ে যেত, যুহরীর (মৃ. ২৫৮ হি.) জীবন থেকে তা ভালোভাবে বুঝা যায়। তিনি নিশাপুর থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন এবং বছরা, হিজায, জাযীরা, মিশর ও সিরিয়ায় ইলম হাছিল করেছেন। পরবর্তীতে তিনি বাগদাদ, বছরা ও নিশাপুরে দরস প্রদান করেছেন।[27]
কায়রোয়ানের আরেকজন শায়খ প্রায় সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন এবং নিশাপুরে পাঠদান করেছেন। অতঃপর সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[28]
জ্ঞান আহরণের উদ্দেশ্যে করা এসব সফরের দূরত্ব যে কত গুরুত্বপূর্ণ, তার প্রমাণ মেলে একজন শায়খের জবাব থেকে। একবার তাকে তার সংকলিত হাদীছের পরিমাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি শুধু বলেন, ‘আমি কূফার নিকটবর্তী একটি ছোট শহর ‘জার‘আ’ থেকে যাত্রা শুরু করেছি এবং কাবুল ও গযনীর মধ্যবর্তী একটি শহর ‘সাজা’ পর্যন্ত ভ্রমণ করেছি’।[29]
খত্বীব বাগদাদী নিম্নোক্ত ভাষায় রিহলার উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন, ‘রিহলার উদ্দেশ্য ছিল দ্বিবিধ। প্রথমতঃ তৎকালীন শায়খদের দরসে স্বশরীরে হাযির হয়ে উচ্চতর ‘ইসনাদ’ (রাবীদের পরম্পরা) হাছিল করা। দ্বিতীয়তঃ বিভিন্ন বিষয়ের পন্ডিতদের (হুফফায) সাথে সাক্ষাৎ করা এবং তাদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ফায়েদা হাছিল করা’।[30]
কোন কোন সফরে ছাত্ররা শিক্ষকদের সঙ্গ দিত। ইমাম শাফেঈর কতিপয় ছাত্র তার সঙ্গে ইয়েমেন গিয়েছিল।[31] আরেকজন শায়খ আটজন ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে নিশাপুর থেকে বাগদাদে এসেছিলেন।[32] সুফিয়ান ছাওরী (মৃ. ১৭১ হি.) তার ছাত্রদেরকে তার সঙ্গে খুরাসান সফরের অনুমতি দেননি। কিন্তু তিনি যখন বাগদাদে যাত্রা বিরতি করলেন, তখন দেখলেন কয়েকজন ছাত্র তার আগেই সেখানে পৌঁছে গেছে। সেখান থেকে তিনি তাদেরকে হুলওয়ান পর্যন্ত এবং তারপর বুখারা ও খুরাসান পর্যন্ত সহযাত্রী হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন।[33]
অনেক সময় শিক্ষকবৃন্দই বহিরাগত ছাত্রদের (গুরাবা) দেখাশোনা করতেন। জেলখানা থেকে একজন শায়খ (মৃ. ২৩১ হি.) তার বন্ধুর নিকট এই মর্মে পত্র লেখেন যে, সে যেন বহিরাগত ছাত্রদের প্রতি সর্বোচ্চ দয়া প্রদর্শন করে।[34] আরেকজন শায়খ একজন বহিরাগত ছাত্রকে তার সঙ্গে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।[35] এমনিভাবে আরেকজন শায়খ বহিরাগত ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য পঞ্চাশটি শয্যা প্রস্ত্তত রেখেছিলেন।[36] বড় বড় শহরগুলিতে সরাইখানা ছিল। বিশেষত বাগদাদে এধরনের অতিথিশালা ছিল।[37] অনেক ছাত্র ব্যক্তিগতভাবে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত।[38] মিশরীয় মন্ত্রী আবুল ফারাজ ইয়াকূব বিন কিল্লিস (মৃ. ৩৮০ হি.) ফাতেমীয় খলীফার নিকট থেকে আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য একটি ভবন নির্মাণের অনুমতি লাভ করেছিলেন।[39] এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরকে ‘মুজাবির’ (প্রতিবেশী বা আশ্রয় প্রার্থী) বলা হ’ত। নিশাপুরে ছাত্রদেরকে ‘জীরান’ বলা হ’ত। কারণ তাদের অধিকাংশই মাদ্রাসার অভ্যন্তরে থাকত।[40]
শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে ‘খান’-এর ভূমিকা :
মূলতঃ ‘খান’ হ’ল মহাসড়কে অবস্থিত রাত্রি যাপনের সুবিধাসম্বলিত একটি বিরতিকেন্দ্র। ব্যবসায়ীরা সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করত এবং ডাকাতের হাত থেকে নিরাপদ থাকত। তবে শহরে ‘খান’ বলতে বুঝাত গুদামঘর বা দোকানপাটের সমষ্টি। উদাহরণ হিসাবে কায়রোর ‘খানে খলীলী’র নাম করা যায়। ‘খানগুলোতে’ ব্যবসায়ীরা পরিমিত ভাড়ার বিনিময়ে অবস্থান করতে পারত এবং অনেক সময় সেখানে বহিরাগত ছাত্রদের জন্য বহু শয্যাবিশিষ্ট কক্ষ বিদ্যমান থাকত। ইবনে মুবারক (মৃ. ১৮১ হি.) তারছূছ শহরের রাক্কা নামক স্থানের একটি খানে থাকতেন।[41] প্রখ্যাত কবি মুতানাববী (মৃ. ৩৫৪ হি.) বাগদাদের দারবে যা‘ফারানী এলাকায় অবস্থিত ইবনু হামীদের ‘খান’-এ অবস্থান করেছিলেন।[42] বাগদাদের একমাত্র ‘খান’ যেটি এখনো বিদ্যমান, সেটি হচ্ছে ‘খানে আবু যিয়াদ’। ইবনু যাত্বিয়া এটার কাছাকাছি এক জায়গায় অবস্থান করতেন বলে ‘তারীখে বাগদাদে’ উল্লেখিত হয়েছে।[43]
‘খানগুলো’ যে পাঠদানের কাজেও ব্যবহৃত হ’ত, তা বেশ কিছু প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত। আয-যাববী ‘খানে ইয়ামানিয়া’তে পাঠদান করতেন। আর এটি মুহাওওয়াল এলাকায় অবস্থিত ছিল।[44] অতঃপর আল-ক্বূসী সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি ২৪০ হিজরীতে ‘খানে সিন্দীতে’ পাঠদান করেছেন।[45] বাগদাদের কারখ এলাকায় অবস্থিত ‘খানে ইসহাকে’ খত্বীব বাগদাদী ও আরো অনেকে আবুল হাসান বিন গরীবের (মৃ. ৪৪৯ হি.) নিকট দরস গ্রহণ করেছেন।[46] আরেকজন ফক্বীহ-এর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, তিনি একটি ‘খানে’ অবস্থান করতেন এবং সেখান থেকে ফিক্বহের জ্ঞান ছড়িয়ে দিতেন।[47] আবুল ওয়ালীদ হাসান বিন মুহাম্মাদ বালখী নিশাপুরের ‘খানে ফুরসে’ থাকতেন এবং এই একই খানের মসজিদে তিনি হাদীছের দরস প্রদান করতেন।[48]
এখানে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে ‘খানে’র যে ভূমিকা তুলে ধরা হ’ল, প্রকৃতপ্রস্তাবে খানের ভূমিকা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি। আবু মুহাম্মাদ আস-সিজিস্তানী (মৃ. ৩৮৫হি.) বাগদাদে একটি খান নির্মাণ করে তা শাফেঈ মাযহাবের ছাত্রদের জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। এটি প্রায় দুইশত বছর পরেও হিজরী ষষ্ঠ শতকের প্রথম ভাগে বিদ্যমান ছিল।[49] বাগদাদের একটি মসজিদও তিনি নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়। মসজিদটি ছিল শাফেঈ মাযহাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র।[50] শাফেঈ মাযহাবের বিখ্যাত ফক্বীহ দারাকী (মৃ. ৩৭৫ হি.) এই মসজিদে দরস দিতেন।[51] পরবর্তীতে আবু মুহাম্মাদ আল-ওয়াফী এবং আবুল আববাস আবীওয়ারদী (মৃ. ৪২৫ হি.) পর্যায়ক্রমে তার চেয়ারের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন।[52]
বাগদাদের ক্বাতী‘আতুর রাবী‘-এ হানাফী মাযহাবের ছাত্রদের জন্যও একটি ‘খান’ ছিল। এটি অবশ্য ৪৪৩ হিজরীতে হামলা ও লুটপাটের শিকার হয়েছিল।[53] এছাড়াও এই শহরের যে মসজিদে আবু ইসহাক সিরাজীর (মৃ. ৪৭৬ হি.) দরস অনুষ্ঠিত হ’ত, তার বিপরীত দিকে অবস্থিত ‘বাবুল মারাতীবে’ শাফেঈ মাযহাবের ছাত্রদের জন্য আরেকটি খান ছিল। তাকে মাদ্রাসা নিযামিয়ায় শিক্ষকের আসন বরণ করতে বলা হ’লে প্রথমে তিনি সম্মত হননি। অবশ্য পরবর্তীতে তিনি তা অলঙ্কৃত করেন। সিরাজীর ১০-২০ জন ছাত্র সবসময় সেখানে থাকত।[54]
মসজিদ-খানের সমন্বিত ভূমিকা :
হিজরী ৪র্থ শতক নাগাদ বোধহয় মসজিদ ও খান যৌথভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা পালন করতে শুরু করেছিল। প্রসিদ্ধ খত্বীব ইসমাঈল ছাবূনী নিশাপুরের ‘খানে হোসাইনে’ দীর্ঘ ষাট বছর যাবৎ প্রতি শুক্রবার মজলিসের আয়োজন করতেন।[55] বদর বিন হাসনুওয়াইহ কুরদী (মৃ. ৪০৫ হি.) ৩৬৯ হিজরীতে আযদুদ্দৌলা পিতার মৃত্যুর পর তার শাসনামলে কয়েকটি প্রদেশের গভর্ণর ছিলেন এবং তিনি তার প্রদেশগুলিতে বিপুল পরিমাণে মসজিদ-খান নির্মাণ করেছিলেন বা মসজিদ-খানের ইলমী গুরুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে সেসময়ের এমন দুই থেকে তিন হাযার স্থাপনার কথা জানা যায়।[56] বহিরাগত ছাত্রদের এসব প্রতিষ্ঠানে থাকার ব্যবস্থা করা হ’ত এবং খুব সম্ভবত তাদেরকে খাবারও সরবরাহ করা হ’ত।[57]
প্রকৃতপক্ষে হিজরী ৪র্থ শতক থেকে মসজিদ-খান ও মাদ্রাসাসমূহ পাশাপাশি বিরাজ করেছে। বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলের নিশাপুর ও অন্যান্য জায়গায় এমনটি হয়েছিল।[58] দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায়, ৪৫৯ হিজরীতে মাত্র চার মাসের ব্যবধানে বাগদাদে ‘মাদরাসা মাশহাদে আবু হানীফা’ ও ‘মাদরাসা নিযামিয়া’র মতো দু’টি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল।[59] তবে নবনির্মিত এসব মাদ্রাসা ও পুরনো বিদ্যাপীঠগুলির মাঝে কারিকুলাম, পঠন-পাঠনের পদ্ধতি বা ছাত্র-শিক্ষকদের সামাজিক অবস্থানগত কোন পার্থক্য ছিল না। এসব প্রতিষ্ঠানে নতুন করে কোন আর্থিক বিষয়ও যুক্ত করা হয়নি। কারণ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার বহু আগে থেকেই ছাত্রদেরকে ভাতা এবং শিক্ষকদেরকে সম্মানী প্রদান করা হ’ত। মূল পার্থক্য ছিল প্রশাসনিক ক্ষমতায়। যেমন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ ও বরখাস্তের ক্ষেত্রে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও তার উত্তরাধিকারীদের পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল। যদিও পুরনো বিদ্যাপীঠগুলিতে এটি ছিল সম্পূর্ণরূপে তাদের আওতা বহির্ভূত।[60]
মাশহাদ ও খানকা :
ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে কারামতীদের খানকা বা সমাধিক্ষেত্র (মাশহাদ; মাকবার) যে ভূমিকা পালন করেছে, তা এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, কখনো কখনো সমাধিক্ষেত্রগুলিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। নিশাপুরের মাদ্রাসা ছাবূনিয়া সম্ভবত আবু নছর আব্দুর রহমান বিন আহমাদের (মৃ. ৩৮২ হি.) সমাধিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। এমনিভাবে হিজরী ৫ম শতকে সমরকন্দের কুছাম বিন আববাসের সমাধিতে দরস অনুষ্ঠিত হ’ত।[61] এক্ষেত্রে বাগদাদে ‘মাশহাদে আবু হানীফা’ ও কায়রোয় ‘মাশহাদে হুসাইনীকে’ সম্ভবত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসাবে পেশ করা যায়। এমনিভাবে খানকাহগুলিতেও মাদ্রাসা গড়ে উঠেছিল। উদাহরণস্বরূপ, মুহাম্মাদ বিন হিববান বুসতী (মৃ. ৩৫৪হি.) ও ইবনু ফারূকের (মৃ. ৪০৬ হি.) মাদ্রাসার কথা বলা যায়।[62]
লাইব্রেরী ও দারুল ইলম :
ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে লাইব্রেরীর যে ভূমিকা তা এখনো পুরোপুরি আবিষ্কৃত হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব মসজিদে লাইব্রেরী যুক্ত থাকত। যেমনটি বর্তমানেও কায়রোয়ান ও সান‘আ জামে মসজিদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাদিয়া বা উইল মারফত কিতাবাদি সংগৃহীত হ’ত। যেমন খত্বীব বাগদাদী (মৃ. ৪৬৩ হি.) তার সমস্ত কিতাব মুসলিমদের ব্যবহারের জন্য ওয়াক্ফ করে দিয়েছিলেন।[63] মাদ্রাসার সাথেও লাইব্রেরী যুক্ত থাকত। বিশেষ করে বাগদাদে মাদ্রাসা নিযামিয়ার লাইব্রেরীটি উচ্চ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। লাইব্রেরীগুলিতে দরসী কার্যক্রম চলত কি-না তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। বাগদাদের নিকটবর্তী কারকারে আলী বিন ইয়াহইয়া মুনাজ্জিমের (মৃ. ২৭৫ হি.) লাইব্রেরীতে (খিযানাতুল হিকমা) শায়খদেরকে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হ’ত।[64] শাফেঈ মাযহাবের ফক্বীহ ও কবি জা‘ফর বিন মুহাম্মাদ বিন হামদান মাওছিলী (মৃ. ৩২৩ হি.) তার নিজ শহর মাওছিলে একটি দারুল ইলম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং সেখানেও শায়খদেরকে এমনিভাবে বরণ করে নেয়া হ’ত। সেখানকার লাইব্রেরীটি (খিযানাতুল কুতুব) সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল এবং অভাবীদেরকে কাগজ সরবরাহ করা হ’ত। প্রতিষ্ঠাতা এখানে কাব্যের উপর ভাষণ দিতেন।[65] অবশ্য পরবর্তীতে আযদুদ্দৌলা লাইব্রেরীটি (খিযানাতুল কুতুব) অভিজাত শ্রেণীর জন্য সীমিত করে দিয়েছিলেন। এমনকি ইবনে সীনার মতো ব্যক্তিত্বকেও বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করতে হ’ত।[66]
শরীফ রাযীর (মৃ. ৪০৬ হি.) বাগদাদে একটি ‘দারুল ইলম’ ছিল। এটি ছিল কিতাবে পরিপূর্ণ এবং ছাত্রদের জন্য উন্মুক্ত। ছাত্রদেরকে প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক ভাতা প্রদান করা হ’ত। উপরন্তু তিনি এখানে দরস প্রদান করতেন।[67] ৩৮১/৩৮৩ হিজরীতে আবু নছর সাবূর বিন আরদাশির (মৃ. ৪১৬ হি.) নাম্নী বুওয়াহিদদের অধীন একজন মন্ত্রী বাগদাদে আরেকটি দারুল ইলম গড়ে তুলেছিলেন।[68] ‘খিযানাতুস সাবূর’ নাম থেকে যেমনটি বোঝা যায়, এটি ছিল মূলত একটি লাইব্রেরী যেখানে প্রচুর পরিমাণে কিতাব মওজুদ ছিল। তবে এটি কবি ও শায়খদের মিলনমেলাও ছিল, যেখানে বিতর্ক ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হ’ত। ৪৫১ হিজরীতে এই জ্ঞানভান্ডারের ধ্বংস দেখে ইবনু হেলাল ছাবী (মৃ. ৪৮০হি.) একটি ‘দারুল কুতুব’ প্রতিষ্ঠা করার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন এবং তিনি নির্মিতব্য গ্রন্থাগারের জন্য তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা ১০০০ কিতাব ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। কেননা তিনি অনুভব করেছিলেন, ‘খিযানাতুস সাবূরের’ অনুপস্থিতি জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতি সাধন করবে। পরবর্তীতে যখন মাদ্রাসা নিযামিয়া প্রতিষ্ঠিত হ’ল এবং এটার সাথে একটি চমৎকার লাইব্রেরীও যুক্ত হ’ল, তখন তিনি তার লাইব্রেরীটি বন্ধু করে দিয়েছিলেন। কারণ তার কাছে তখন এটা অনাবশ্যক বলে মনে হয়েছিল।[69]
যাহোক, কায়রোতে ফাতেমীয় খলীফা হাকীম কর্তৃক নির্মিত লাইব্রেরী দু’টির বৈশিষ্ট্য কিছুটা ভিন্ন ছিল। দুঃখের বিষয় এই যে, ফুসতাতে ক্ষণকালস্থায়ী সুন্নী ‘দারুল ইলম’ সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। এটি ৪০০ হিজরীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং মালেকী মাযহাবের দু’জন ফক্বীহ এটার দেখাশোনা করতেন।[70] তবে ৩৯৫ হিজরীতে নির্মিত ‘দারুল ইলমে’ লাইব্রেরীর তো বটেই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও সকল উপাদান মওজুদ ছিল। বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হ’ত এবং ছাত্রদেরকে বিনামূল্যে কালি, কলম ও কাগজ সরবরাহ করা হ’ত। মনে করা হয় দারুল ইলমে বিভিন্ন বিষয়ে দরসের পাশাপাশি বিতর্ক ও আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হ’ত। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হ’ল, ৪৩৫ হিজরীতে প্রস্ত্ততকৃত ক্যাটালগে জ্যোতির্বিদ্যা, স্থাপত্যবিদ্যা ও দর্শনশাস্ত্রের উপর ৬৫০০টি কিতাবের উল্লেখ পাওয়া যায়।
প্রাচীন শাস্ত্রসমূহ :
এধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছিল সম্ভবত এজন্য যে, এখানে ইলমের এমন সব শাখা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা মসজিদে বা প্রচলিত ইসলামী বিদ্যাপীঠগুলোতে গুরুত্ব পেত না। দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, জ্যামিতি, রসায়ন, জ্যোতির্বিদ্যা, সঙ্গীত ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতো প্রাচীন শাস্ত্রগুলি (উলূমুল আওয়ায়িল; আল-উলূমুল কাদীমাহ) মসজিদকেন্দ্রিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শেখানো হ’ত না। তবে নিজস্ব বাসভবনে বা অন্যান্য জায়গায় এসব শাস্ত্র পড়ানোয় কোন দোষ ছিল না। স্বাভাবিকভাবে এসব কিতাবাদি লাইব্রেরীতে রাখার ক্ষেত্রেও কোন বিধি-নিষেধ ছিল না। তবে ৪৫১ হিজরীতে ‘খিযানাতুস সাবূর’ ধ্বংসের পর এধরনের শাস্ত্র চর্চার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। কারণ সেখানে প্রাচীন শাস্ত্রাবলীর উপর অসংখ্য পুস্তক মওজুদ ছিল। যাহোক, যেসব প্রতিষ্ঠানে সেসব শাস্ত্র পড়ানো হ’ত, আজকের দিনে আমরা সেসবের কাঠামো ও পাঠদানের ধরন সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। তবে এটা নিশ্চিত যে, খলীফা ও মন্ত্রীদের মতো উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ এসব শাস্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।
খালিদ বিন ইয়াযীদ (মৃ. ৮৫ হি.) গ্রীক শাস্ত্রের কিতাবাদি তরজমা করিয়েছিলেন।[71] খলীফা হারূনুর রশীদ (হি. ১৭০-১৯৩) ও তার পুত্র মামূন (হি. ১৯৮-২১৮) ‘বায়তুল হিকমা’ (বা খিযানাতুল হিকমাহ) প্রতিষ্ঠার জন্য খ্যাত হয়ে আছেন। সেখানে গ্রীক, ভারতীয় এবং পারসী বইপত্র তরজমা হ’ত। এটির সাথে একটি মহাকাশীয় মানমন্দির জুড়ে দেয়া হয়েছিল।
এছাড়াও সেখানে পন্ডিতদের জন্য আলাদা কক্ষ সংরক্ষিত ছিল।[72] খলীফা মু‘তাযিদ (হি. ২৭৯-৮৯) তার নতুন প্রাসাদ ‘শাম্মাসিইয়াহ’তে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ও পন্ডিতদের জন্য আলাদা কক্ষ সংরক্ষিত রেখেছিলেন। বিশেষজ্ঞদেরকে উপযুক্ত সম্মানী দেয়া হ’ত।[73] মেডিকেল পুস্তকাদির বিখ্যাত অনুবাদক হোনাইন বিন ইসহাকের (মৃ. ২৬৪ হি.) লাইব্রেরীতে দুর্লভ কিতাবাদি ছিল।[74]
ফাতেমীয় খলীফাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্রাচীন শাস্ত্রের পাশাপাশি সব ধরনের কিতাব সংগ্রহের ব্যাপারে একইরকম আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কায়রোতে ফাতেমীয়দের লাইব্রেরীটি তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম লাইব্রেরী হিসাবে বিবেচিত হ’ত।[75] ইয়াকুব বিন কিল্লিস ও মুবাশশার বিন ফাতিকের সুবৃহৎ লাইব্রেরী ছিল এবং বিশেষ করে প্রথমজন জ্ঞানী-গুণীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তার প্রাসাদে ইসলামী ও প্রাচীন উভয় শাস্ত্রের উপর দরস, পর্যালোচনা ও প্রতিলিপিকরণ সম্পন্ন হ’ত।[76]
হাসাপাতালগুলিতে এবং সাথে সাথে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও চিকিৎসা শাস্ত্রের চর্চা হ’ত (উল্লেখ্য, হাসপাতালের প্রতিশব্দ ‘মারিস্তান’ যা ফার্সী শব্দ ‘বিমারিস্তান’-এর কিঞ্চিত পরিবর্তিত রূপ)। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো ব্যাপার হ’ল, সম্ভবত ইলমে হাদীছের সাধারণ নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেই চিকিৎসাশাস্ত্রের অধ্যয়ন সম্পন্ন হ’ত। যেমন ইবনু তাইয়িব (মৃ. ৪৩৫হি.)-এর ‘গ্যালেনের ব্যাখ্যা’ (কমেন্ট্রি অন গ্যালেন) কিতাবের উপর শ্রবণের (সামা‘) সত্যায়ন স্বরূপ মূল লেখকের যে দস্তখত ছিল, ইবনু আবী উসাইবী তা নিজে দেখেছেন। শ্রবণের সত্যায়নটি প্রমাণ করে যে, ৪০৬ হিজরীতে বাগদাদের ‘বিমারিস্তানে আযূদী’তে স্বয়ং লেখকের তত্ত্বাবধানে কিতাবটি পঠিত হয়েছিল।[77]
ইসলামী শাস্ত্রসমূহ :
মোটের উপর মসজিদ ছিল ইসলামী জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র (আল-উলূমুল ইসলামিইয়াহ/আল-উলূমুশ শারইয়াহ বা মুতাশারইয়াও বলা হয়)। ইবনে খালদূন এগুলিকে আল-উলূমুন নাক্বলিইয়াহ বলেও অভিহিত করেছেন। মূলত মুসলমানদের হাত ধরেই এসব শাস্ত্রের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটেছে। এধরনের কতিপয় শাস্ত্র হ’ল: ক) ইলমে কুরআন; খ) ইলমে হাদীছ গ) ইলমে ফিক্বহ; উছূলে ফিক্বহ ঘ) দ্বীনের উৎস ও মূলনীতি (উছূলুদ দ্বীন)। এছাড়াও অন্যান্য সহায়ক শাস্ত্রও মসজিদগুলিতে শেখানো হ’ত। যেমন, ১) আরবী ভাষাতত্ত্ব এবং এর সাথে যোগ হ’ত ভাষার বিভিন্ন দিক, যেমন, ব্যাকরণ (নাহু), অভিধান (লুগাত), রূপতত্ত্ব (ছরফ), ছন্দ (আরূয), অন্তঃমিল (কাওয়াফী), কাব্যতত্ত্ব ইত্যাদি ২) আরবদের ইতিহাস (আখবারুল আরব) ৩) আরবদের বংশধারা (আনসাব)।
জামে‘ মানছূরের ‘কাব্য বা কবি গম্বুজ’ (কুববাতুশ শু‘আরা বা শি‘র)-এ প্রতি শুক্রবার কবিতার মজলিস (মজলিসুশ শু‘আরা বা শি‘র) অনুষ্ঠিত হ’ত।[78] এই একই মসজিদে আবুল আতাহিয়া কবিতার উপর দরস দিতেন।[79] ২৫৭ হিজরীতে জামে আমরে আবুল হাসান সাররাজের আগ্রহে ত্বাবারী একটি কাব্য আসরের আয়োজন করেন।[80] সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব মদীনার প্রধান মসজিদে কবিতার উপর ভাষণ দিতেন।[81] এমনিভাবে মুসলিম বিন ওয়ালীদ স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করার জন্য বছরায় আসর বসাতেন।[82]
পরবর্তীতে বোধহয় মসজিদের মধ্যে কাব্য আসর করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। ফলে তৎপরবর্তীকালে বিদ্বানদের নিজস্ব বাসভবনে কিংবা দারুল ইলমের মতো অন্যান্য জায়গায় কবিতার মজলিস অনুষ্ঠিত হ’ত। বিখ্যাত কবি আবুল ‘আলা মা‘আর্রী (মৃ. ৪৪৯ হি.) যখনই বাগদাদে গিয়েছেন, খিযানাতুস সাবূরে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে এসেছেন। এই দারুল ইলম-ই ছিল বাগদাদের শিক্ষিত সমাজের মিলনকেন্দ্র। এমনিভাবে এটি সেখানকার অভিজাত শ্রেণীর সাহিত্যসভার ভূমিকাও পালন করত।[83] অবশ্য এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল না, বরং আমন্ত্রিত অতিথিরা কেবল প্রবেশ করতে পারত।
[ক্রমশঃ]
মূল (ইংরেজী): মুনীরুদ্দীন আহমাদ
অনুবাদ : আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ, ২য় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. তারীখু বাগদাদ, ২/২০-২১।
[2]. প্রাগুক্ত, ২/১০; ৯/৪৫৭; ১২/২৭৩।
[3]. প্রাগুক্ত, ৯/৪৫৭।
[4]. প্রাগুক্ত, ১৪/৩৪০।
[5]. প্রাগুক্ত, ১১/২২।
[6]. ইয়াকূত, মু‘জামুল উদাবা, ৭/২৮।
[7]. তারীখু বাগদাদ, ৩/৩৮০-৮১।
[8]. প্রাগুক্ত, ২/২১৯; ১৩/৪৪৫।
[9]. প্রাগুক্ত, ২/২২০; ৭/১৮৫।
[10]. প্রাগুক্ত, ৮/৪০৩-৪; ৯/৪৬৬; ১৩/১২০।
[11]. প্রাগুক্ত, ১২/২৭৯-৮০।
[12]. প্রাগুক্ত, ৮/১৬-৭; এস খোদাবখশ, ‘দি এডুকেশনাল সিস্টেম অব দ্য মুসলিমস্ ইন দ্য মিডল এজেস’ ইসলামিক কালচার ১ (১৯২৭), পৃ. ৪৫৫-৫৬।
[13]. খতীব বাগদাদী, কিতাবুল কিফায়াহ ফী ইলমির রিওয়ায়াহ (হায়দ্রাবাদ-দাক্ষিণাত্য, ১৩৫৭ হিঃ/১৯৩৮ খ্রি.), পৃ. ৩১১।
[14]. তারীখু বাগদাদ, ২/৫৪; ২/১৭৭; ৪/৭২-৪; ৭/১৭৭।
[15]. প্রাগুক্ত, ১, ৩৫৪; ১১/১৩৩; ১৪/২০১-২।
[16]. খতীব বাগদাদী, তাকয়ীদুল ইলম (দামেশক : ১৯৪৯), পৃ. ১০১।
[17]. জামালুদ্দীন কাসেমী, কাওয়াইদুত তাহদীছ (দামেশক : ১৯২৫), পৃ. ১৯০-৯১।
[18]. Cf. EI/2nd ed. under Ijaza; The Rise of Colleges. pp. 148 ff.,270 ff; "Abdallah Fayyad, al-Ijazat al-ilmiyya 'ind al-Moslimeen. (Baghdad, 1967).
[19]. তারীখু বাগদাদ, ১১/২০৩; এ এস ট্রাইটন, ম্যাটেরিয়ালস অন মুসলিম এডুকেশন ইন দ্য মিডল এজেস (লন্ডন : ১৯৫৭), পৃ. ১৯৩-৪।
[20]. তারীখু বাগদাদ, ৮/৩১৪; ১২/৩১৬।
[21]. প্রাগুক্ত, ১২/৪৪০।
[22]. প্রাগুক্ত, ২/১০।
[23]. প্রাগুক্ত, ১১/৪৪৭।
[24]. ইবনে খালদূন, মুক্বাদ্দামা, সম্পাদক : আলী আব্দুল ওয়াহিদ ওয়াফী (কায়রো : ১৩৭৬হি./১৯৫৭খ্রি.) পৃ.৩৯৯-৪০০।
[25]. প্রাগুক্ত, ৫/৩১৩-৪; ১০/১৫৭-৮; ১২/২২২।
[26]. Alfred von Kremer, Culturgescichte des Orients unter den Chalifen (Wien, 1875-77), II, p. 436.
[27]. তারীখু বাগদাদ, ৩/৪১৫-২০।
[28]. প্রাগুক্ত, ৯/১১৩।
[29]. প্রাগুক্ত, ৪/১৩৯।
[30]. সুয়ূতী, তাদরীবুর রাবী (কায়রো : ১৩০৭হি./১৮৮৯-৯০খ্রি.) পৃ. ১৭৭।
[31]. তারীখু বাগদাদ, ১০/৪৪৯।
[32]. প্রাগুক্ত, ১২/২২২।
[33]. প্রাগুক্ত, ৯/১৫২-৩।
[34]. প্রাগুক্ত, ১৪/৩০২।
[35]. প্রাগুক্ত, ৮/৩৫১।
[36]. প্রাগুক্ত, ৩/১৩৬।
[37]. প্রাগুক্ত, ৭, পৃ.২৯৫, ৩০৪; ১১/৩৩৪; ১১/৩৩৪, ৩৪৯; ১৩/৩২০; আরো দেখুন : Le Strange. বাগদাদ, পৃ. ৫৯, ২৫৫, ২৭২।
[38]. প্রাগুক্ত, ২/১৩, ৭৪-৫, ১৬৫।
[39]. মাক্বরীযী, আল-খিতাত, ২/২৭৩।
[40]. Sarifini, Muntakhab min kitāb al-Siyāq li-tārīkh Nīsābūr. fol. 36 b Z. 4.
[41]. তারীখু বাগদাদ, ৯/১৫৯।
[42]. প্রাগুক্ত, ৭/৩০৪।
[43]. প্রাগুক্ত, ১১/৩৪৯।
[44]. প্রাগুক্ত, ৭/২৯৫।
[45]. প্রাগুক্ত, ১৩/৩২০।
[46]. প্রাগুক্ত, ১১/৩৩৪।
[47]. তানূখী, নিশওয়ারুল মুহাযারা ওয়া আখবারুল মুযাকারা (বৈরূত : ১৯৭১), ১/৪৬।
[48]. 'Abd al-Ghafir al-Farisi, Siyaq li-Tarikh Nishapur, vol. 5 b Z. 9.
[49]. মুহাম্মাদ বিন আব্দুল মালিক হামাদানী, আত-তাকমিলাহ. A.Y. Kan'anকর্তৃক সম্পাদিত, (বৈরূত : ১৯৬১), পৃ. ১৮২।
[50]. Le Strange. Baghdad, pp. 58, 123, 143.
[51]. তারীখু বাগদাদ, ১০/৪৬৩-৬৫।
[52]. প্রাগুক্ত, ১০/৫১-২।
[53]. ইবনুল জাওযী, মুনতাযাম, ৭/১৫০।
[54]. প্রাগুক্ত, ১০/৩৭।
[55]. Sarifini, Muntakhab, fol. 38 b Z. 10-12.
[56]. ইবনুল জাওযী, মুনতাযাম, ৭/২৭২।
[57]. মাক্বদেসী, দি রাইজ অব কলেজেস. পৃ. ৩১।
[58]. ৩২৫ হিজরী মোতাবেক ৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে বুখারার মাদ্রাসায়ে ফারজাক আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে যায়। আর এটাই হ’ল মাদ্রাসা সংক্রান্ত সবচেয়ে প্রাচীন তথ্য, যা উদ্ধৃত হয়েছে। দেখুন: cf. Narshakhi, Ta'rikh-e Bukhara, ed. Schefer 93, viz Heinz. Halm, "Die Anfänge der Madrasa." p. 438
[59]. মা‘রূফ নাজী, মাদারিস কবলান নিযামিয়াহ, বাগদাদ (১৯৭৩); ইমাদ আব্দুস সালাম রউফ, মাদারিসু বাগদাদ ফিল আছরিল আববাসী (১৯৬৬), আসাদ তালাস, Le madrasa nizamiya et son histoire. (প্যারিস ১৯৩৯)।
[60]. মাক্বদেসী, দি রাইজ অব কলেজেস, পৃ. ২৭।
[61]. বুখারা, তাসখন্দ ও নিশাপুরের আরো উদাহরণ দেখুন: Halm,"Anfänge" p. 440.
[62]. মা‘রূফ, মাদারিস, পৃ. ২৬, ২৮।
[63]. ইয়াকূত, ইরশাদ ১/২৫২; ইবনু খাল্লিকান, ওয়াফায়াতুল আ‘য়ান (কায়রো : ১২৯৯হি./১৮৮১-২খ্রি.) খন্ড ১, পৃ. ২৭।
[64]. ইয়াকূত, ইরশাদ, ৫/৪৫৯, ৪৬৭ পৃ.।
[65]. প্রাগুক্ত, ২/৪২০; ৭/১৯৩ পৃ.।
[66]. মাক্বদেসী, আহসানুত তাক্বাসীম ফী মা‘রিফাতিল আকালীম. (M.J. de Goeje কর্তৃক সম্পাদিত) (লাইডেন, ১৯০৬), পৃ. ৪৪৯।
[67]. ইয়াকূত, ইরশাদ, ১/২৪২।
[68]. ইয়াকূত, মু‘জামুল বুলদান, মুহাম্মাদ আমীন খানজী এবং আহমাদ বিন আমীন শানক্বীতী কর্তৃক সম্পাদিত (কায়রো : ১৯০৬খ্রি.), ২/৩৪২ পৃ.।
[69]. ইবনুল জাওযী, মুনতাযাম, ৮/২১৬।
[70]. যাহাবী, তারীখুল ইসলাম (হায়দ্রাবাদ-দাক্ষিণাত্য, ১৩৩৭হি./১৯১৮-৯খ্রি.), ১/১৮৬ পৃ.; ইবনু তাগরি বিরদী, আন-নুজূমুয যাহিরা (কায়রো : ১৯৩৮), ২/৬৪, ১০৫-৬ পৃ.।
[71]. ইবনু নাদীম, আল-ফিহরিস্ত. Flügel কর্তৃক সম্পাদিত।
[72]. প্রাগুক্ত, পৃ. ২৪৩; ইবনুল কিফতী, আখবারুল ওলামা বিআখবারিল হুকামা (লিপজিগ, ১৩২০হি./১৯০২খ্রি.), পৃ. ৯৮।
[73]. মাক্বরীযী, আল-খিতাত ৪/১৯২ পৃ.; সুয়ূত্বী, হুসনুল মুহাযারা ২/১৪২ পৃ.।
[74]. আখবারুল ওলামা, পৃ. ১২০-১; ইবনুল উসায়বিয়া, ‘উয়ূনুল আমবা’ ফী তাবাকাতিল আতিববা, নিযার রিযা কর্তৃক সম্পাদিত (বৈরূত : ১৯৬৫), ১/১৮৪-২০০।
[75]. আল-খিতাত, ২/২৫৪।
[76]. প্রাগুক্ত, ৩/৪,৯; কিফতী, তাবাকাতল আতিববা, ২/৯৬-৯৯।
[77]. প্রাগুক্ত, পৃ. ৩২৩।
[78]. তারীখু বাগদাদ, ৭/৭৮; ৮/২৪৯-৫০; ১২/৯৫-৬।
[79]. ইসফাহানী, আল-আগানী, ৩/১৪৮।
[80]. ইয়াকূত, ইরশাদ, ৬/৪৩২।
[81]. ত্বাবারী ২/১২৬৬ পৃ.।
[82]. মারযুবানী, মুওয়াশশাহ, পৃ. ২৮৯-৯০।
[83]. রাসায়িলু আবিল ‘আলা (অক্সফোর্ড, ১৮৯৮). পৃ. ৩৪; আহমাদ ছা‘লাবী, হিস্টোরি অব মুসলিম এডুকেশন (বৈরূত : ১৯৫৪), পৃ. ৩২।