উপক্রমনিকা :
ঈমানের অন্যতম রুকন হচ্ছে তাক্বদীরে বিশ্বাস। জগত সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টিকুলের ভাগ্য নির্ধারণ করে স্বীয় দফতর লাওহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এ বিশ্বাসই তাক্বদীরে বিশ্বাস। এর বিপরীত বিশ্বাস বা ধারণা করা হ’ল ঈমান বিরোধী। বক্ষমান প্রবন্ধে তাক্বদীরে বিশ্বাসের বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হ’ল।-
তাক্বদীরের পরিচয় :
‘তাক্বদীর’ শব্দের অর্থ নির্ধারণ করা বা নির্দিষ্ট করা। শারঈ পরিভাষায় তাক্বদীর হ’ল আল্লাহ কর্তৃক বান্দার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল বিষয় নির্ধারণ করা।
আল্লামা
সা‘দ বলেন,هُوَ تَحْدِيْدُ كُلِّ مَخْلُوْقٍ بِحَدِّهِ الَّذِيْ يُوجَدُ
عَلَيْهِ مِنْ حُسْنٍ وَقُبْحٍ وَنَفْعٍ وَضَرٍّ وَمَا يَحْوِيهِ مِنْ
زَمَانٍ وَمَا يَتَرَتَّبُ عَلَيْهِ مِنْ ثَوَابٍ وَعِقَابٍ- ‘সৃষ্টির
যাবতীয় বিষয় তথা ভাল-মন্দ, উপকার-অপকার, ইত্যাদি স্থান-কাল এবং এ সবের শুভ ও
অশুভ, ইষ্ট-অনিষ্ট, পরিণাম পূর্ব এবং ছওয়াব ও আযাব হ’তে নির্ধারিত হওয়া’।[1]
মূলতঃ তাক্বদীর বলতে জগতের যাবতীয় বস্তু তথা মানুষ ও জিনসহ যত সৃষ্টি রয়েছে সবকিছুর উৎপত্তি ও বিনাশ, ভাল ও মন্দ, উপকার ও অপকার ইত্যাদি কখন কোথায় ঘটবে এবং এর পরিণাম কি হবে প্রভৃতি মাখলূক সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা নির্ধারণ করে রেখেছেন। জগতে যা কিছু ঘটছে এবং ঘটবে সবই তাক্বদীরে লিপিবদ্ধ আছে। এর বাইরে কিছুই নেই। ছাহাবীগণ এভাবেই তাক্বদীর-এর পরিচয় তুলে ধরেছেন। ত্বাউস বলেন,أَدْرَكْتُ نَاسًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُوْنَ كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ- ‘আমি বহু ছাহাবীর সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম, তাঁরা বলতেন, প্রত্যেক জিনিসই তাক্বদীর অনুসারে সংঘটিত হয়’।[2] রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى الْعَجْزُ وَالْكَيْسُ أَوِ الْكَيْسُ وَالْعَجْزُ ‘প্রত্যেক জিনিসই তাক্বদীর অনুসারে সংঘটিত হয়ে থাকে। এমনকি অক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা’।[3]
তাক্বদীর লেখার সময় :
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মানুষের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করেছেন আসমান-যমীন সৃষ্টির ৫০ হাযার বছর পূর্বে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,كَتَبَ اللهُ مَقَادِيْرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِخَمْسِيْنَ أَلْفَ سَنَةٍ- ‘আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি জগতের ভাগ্য লিখে রেখেছেন আকাশ সমূহ ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বে’।[4]
তাক্বদীর-এর বিষয় অজ্ঞাত :
তাক্বদীর
একটি গায়েবী বিষয়, যা মহান আল্লাহ ব্যতীত কেউ অবগত নয়। আল্লাহ তা‘আলা
তাক্বদীরের বিষয় সৃষ্টিকুল থেকে গোপন রেখেছেন। এজন্য রাসূল (ছাঃ) এ
প্রসঙ্গে অহেতুক বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে নিষেধ করেছেন।[5] একদিন ছাহাবায়ে কেরাম
রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে কেবল তাক্বদীরের উপর ভরসা করে সকল আমল ছেড়ে দেওয়ার
আবেদন জানালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তোমরা নেক আমল করে যাও। কেননা যাকে
যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার পক্ষে সে কাজ সহজসাধ্য হবে। যারা
সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত তাদের জন্য সেরূপ আমল এবং যারা দুর্ভাগাদের
অন্তর্ভুক্ত তাদের জন্য সেরূপ আমল সহজ করে দেওয়া হয়েছে’।[6]
তাক্বদীরের প্রতি ঈমান আনার গুরুত্ব :
তাক্বদীর
ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন। হাদীছে জিবরীলে এ ব্যাপারে উল্লেখ আছে
যে, জিবরীল (আঃ) যখন রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ঈমান কি? তখন রাসূল
(ছাঃ) বললেন,أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَرُسُلِهِ وَكُتُبِهِ
وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ ‘ঈমান হচ্ছে আল্লাহর
উপরে তাঁর ফেরেশতার উপরে, তাঁর রাসূলগণের উপরে, তাঁর কিতাব সমূহের উপরে,
বিচার দিবসের উপরে এবং তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপরে বিশ্বাস রাখা’।[7]
অন্যত্র তিনি বলেন, لاَ يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتَّى يُؤْمِنَ بِأَرْبَعٍ
يَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنِّى مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ
اللهِ بَعَثَنِىْ بِالْحَقِّ وَيُؤْمِنُ بِالْمَوْتِ وَبِالْبَعْثِ بَعْدَ
الْمَوْتِ وَيُؤْمِنُ بِالْقَدَر- ‘কোন বান্দাই মুমিন হ’তে পারবে না যতক্ষণ
না এই চারটি কথায় বিশ্বাস করবে, ১. এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন
ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। তিনি আমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন। ২.
মৃত্যুতে বিশ্বাস করবে। ৩. মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাস করবে। ৪.
তাক্বদীরে বিশ্বাস করবে’।[8]
তাকদীর অস্বীকার করার বিধান :
তাক্বদীর
অস্বীকার করা কবীরা গুনাহ এবং অস্বীকারকারী মুমিন থাকে না। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন, الْقَدَرِيَّةُ مَجُوْسُ هَذِهِ الأُمَّةِ إِنْ مَرِضُوْا
فَلاَ تَعُوْدُوْهُمْ وَإِنْ مَاتُوْا فَلاَ تَشْهَدُوْهُمْ ‘কাদারিয়ারা এ
উম্মতের অগ্নিপূজক। তারা অসুস্থ হ’লে দেখতে যাবে না এবং তারা মারা গেলে
জানাযায় হাযির হবে না’।[9]
তাক্বদীর বা ভাগ্যে বিশ্বাসের রুকন :
তাক্বদীর বা ভাগ্যে বিশ্বাসের মূল চারটি বিষয় রয়েছে। এ চারটি বিষয়ে বিশ্বাসের সমন্বিত নাম পূর্ণ তাক্বদীর বিশ্বাস। যথা- ১. আল্লাহর জ্ঞান সম্বন্ধে বিশ্বাস, ২. আল্লাহর লিখন বা লাওহে মাহফূযে বিশ্বাস, ৩. আল্লাহর ইচ্ছা সম্পর্কে বিশ্বাস ও ৪. আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে বিশ্বাস।
১. আল্লাহর জ্ঞান সম্বন্ধে বিশ্বাস :
আল্লাহ সকল বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন, তাঁর জ্ঞানের বাইরে কিছুই নেই।
তিনি আদি-অনন্ত ও অন্তর্যামী। আর সকল বিষয় ঘিরে আছে তাঁরই জ্ঞান। আল্লাহ
বলেন,أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ
‘তুমি কি জানো না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহ জানেন’ (হজ্জ ২২/৭০)।
অন্যত্র তিনি বলেন,وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ
هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِنْ
وَرَقَةٍ إِلاَّ يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِيْ ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلاَ
رَطْبٍ وَلاَ يَابِسٍ إِلاَّ فِيْ كِتَابٍ مُبِيْنٍ- ‘আর গায়েবের চাবিকাঠি
তাঁর কাছেই রয়েছে। তিনি ব্যতীত কেউই তা জানে না। স্থলভাগে ও সমুদ্রভাগে যা
কিছু আছে, সবই তিনি জানেন। গাছের একটি পাতা ঝরলেও তা তিনি জানেন। মাটিতে
লুক্কায়িত এমন কোন শস্যদানা নেই বা সেখানে পতিত এমন কোন সরস বা শুষ্ক ফল
নেই, যা (আল্লাহর) সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই’ (আন‘আম ৬/৫৯)।
তিনি আরো বলেন,عَالِمِ الْغَيْبِ لاَ يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ
فِي السَّمَاوَاتِ وَلاَ فِيْ الْأَرْضِ وَلاَ أَصْغَرُ مِنْ ذَلِكَ وَلاَ
أَكْبَرُ إِلاَّ فِيْ كِتَابٍ مُبِيْنٍ- ‘তিনি অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞাত।
নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে অনু পরিমাণ বস্ত্তও তাঁর অগোচরে নয়। আর তার চাইতে ছোট
ও বড় সবকিছু সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে’ (সাবা ৩৪/৩)।
হাদীছে এসেছে,سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ أَوْلاَدِ
الْمُشْرِكِيْنَ فَقَالَ اللهُ إِذْ خَلَقَهُمْ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوْا
عَامِلِيْنَ. ‘রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয় মুশরিকদের ছোট বাচ্চা
সম্বন্ধে (তারা জান্নাতে যাবে না জাহান্নামে যাবে)। তিনি বললেন, আল্লাহ ভাল
জানেন, সে (বড় হয়ে) কি আমল করত’।[10]
কুরআন-হাদীছের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ রাখেন। এসবের অণুপরিমাণ তাঁর জ্ঞানের বাইরে নেই। এমনকি মানুষ অন্তরে যে কল্পনা করে আল্লাহ তাও জানেন। সুতরাং এ বিশ্বাস থাকতে হবে যে আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে বা তাঁর অজানা কিছুই নেই।
২. সব কিছুই লাওহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ রয়েছে : সৃষ্টির পূর্বে ও পরে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সে বিষয় আল্লাহ স্বীয় জ্ঞানে একটি কিতাব লিখে রেখেছেন, যা কুরআনের ভাষায় লাওহে মাহফূয। ভাগ্যনামা লিখন সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ فِيْ إِمَامٍ مُبِيْنٍ ‘আর প্রত্যেক বস্ত্ত আমরা স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি’ (ইয়াসীন ৩৬/১২)। তিনি আরো বলেন,قُلْ لَنْ يُصِيْبَنَا إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا- ‘তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক’ (তওবা ৯/৫১)।
আব্দুল্লাহ
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিছনে ছিলাম। তিনি
বললেন, হে বালক! আমি তোমাকে কিছু কথা শিক্ষা দিব। তুমি আল্লাহর অধিকার
সংরক্ষণ কর, তবে তিনি তোমাকে হেফাযত করবেন। তুমি আল্লাহকে লক্ষ্য রাখবে,
তাহ’লে তাঁকে তোমার সামনে পাবে। আর যখন তুমি কোন সাহায্য চাইবে, তখন
আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর তুমি একথা জেনে রাখো যে, সমস্ত মানুষ যদি একত্রিত
হয় তোমার কোন উপকার করার জন্য, তবে তারা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না
অতটুকু ব্যতীত যা আল্লাহ তোমার ভাগ্যলিপিতে লিখে রেখেছেন। আর যদি তারা সকলে
একত্রিত হয় তোমার কোন ক্ষতি করার জন্য, তাহ’লে তারা তোমার কোন ক্ষতিও করতে
পারবে না অতটুকু ব্যতীত যা আল্লাহ তোমার ভাগ্যলিপিতে লিখে রেখেছেন।
ভাগ্যনামা লিখার কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর ঐ খাতাগুলো শুকিয়ে গিয়েছে’।[11]
৩. আল্লাহর ইচ্ছা কার্যকর : অর্থাৎ এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহর ইচ্ছায় সবকিছু কার্যকর হয়ে থাকে। আকাশ ও যমীনে আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কিছুই হয় না। তিনি যা করেন তাকে জিজ্ঞেস করার কেউ নেই। কিন্তু অপর সকলেই জিজ্ঞাসিত হয়। তিনি যা করতে ইচ্ছা করেন তখন সে বস্তুকে আদেশ দান মাত্র তা হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُوْلَ لَهُ كُنْ فَيَكُوْنُ- ‘যখন তিনি কিছু করতে ইচ্ছা করেন তখন তাকে কেবল বলে দেন, হও। অতঃপর তা হয়ে যায়’ (ইয়াসীন ৩৬/৮২)। অন্যত্র তিনি বলেন, وَمَا تَشَاءُوْنَ إِلاَّ أَنْ يَشَاءَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ ‘আর তোমরা ইচ্ছা করতে পারো না কেবল অতটুকু ব্যতীত যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন। যিনি বিশ্বচরাচরের পালনকর্তা’ (তাকভীর ৮১/২৯)। তিনি আরো বলেন,وَلاَ تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّيْ فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًا، إِلاَّ أَنْ يَشَاءَ اللهُ- ‘আর তুমি কোন বিষয়ে বলো না যে, ওটা আমি আগামীকাল করব। (বরং তুমি বলো) ‘যদি আল্লাহ চান’ (কাহফ ১৮/২৩)। আল্লাহ আরো বলেন,فَمَنْ يُرِدِ اللهُ أَنْ يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلاَمِ وَمَنْ يُرِدْ أَنْ يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا- ‘অতঃপর আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করতে চান তার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। আর যাকে বিপথগামী করতে চান তার বক্ষকে অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন’ (আন‘আম ৬/১২৫)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ
قُلُوْبَ بَنِى آدَمَ كُلَّهَا بَيْنَ إِصْبَعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ
الرَّحْمَنِ كَقَلْبٍ وَاحِدٍ يُصَرِّفُهُ حَيْثُ يَشَاءُ ثُمَّ قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ
صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ- ‘নিশ্চয়ই আদম সন্তানের অন্তঃকরণ সমূহ
করুণাময়ের আঙ্গুল সমুহের মধ্যেকার দু’টি আঙ্গুলের মাঝে একটি অন্তরের মত।
তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন তাকে পরিবর্তন করেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, হে আল্লাহ, হৃদয় সমূহের পরিবর্তনকারী! আমাদের হৃদয়গুলোকে তোমার
আনুগত্যে ফিরিয়ে দাও’।[12]
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোন বিষয়ে কার্যকর হওয়ার জন্য সৃষ্টিকুলের ইচ্ছা যথেষ্ট নয়। তাদের ইচ্ছার সাথে আল্লাহর ইচ্ছার মিল অবশ্যই থাকতে হবে। তাহ’লেই তা কার্যকর হবে। কারণ কাজ করার জন্য সৃষ্টিকুলের যে শক্তির প্রয়োজন হয় তা কেবল সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ই দিয়ে থাকেন। এজন্য আল্লাহর ইচ্ছার প্রয়োজন। তাই সৃষ্টিকুলের ইচ্ছা আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। অনেক সময় মানুষ কিছু করার সংকল্প করে। কিন্তু পরে দেখা যায় তা কার্যকর হয়নি। অতএব কেউ যদি নিজের ইচ্ছাকে সবকিছু মনে করে আল্লাহর ইচ্ছাকে অস্বীকার করে তবে সে বেঈমানে পরিণত হবে।
৪. আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে বিশ্বাস : আল্লাহ ব্যতীত কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। একমাত্র তিনিই জগতের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, প্রত্যেক বিচরণকারী এবং তার কাজও তিনি সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيْرًا- ‘আর তিনি সমস্ত বস্ত্ত সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে যথাযথ পরিমিতি দান করেছেন’ (ফুরক্বান ২৫/২)। তিনি আরো বলেন,الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّوْرَ- ‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো’ (আন‘আম ৬/১)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ- ‘তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। প্রত্যেকেই আকাশে আপন কক্ষপথে বিচরণ করে’ (আম্বিয়া ২১/৩৩)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন,الَّذِيْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلاً- ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন জীবন এবং মরণ যাতে তোমাদের পরীক্ষা করেন কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ’ (মুলক ৬৭/২)। তিনি বলেন,هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللهِ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ، ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন সৃষ্টিকর্তা আছে কি যিনি তোমাদেরকে আকাশ ও যমীন থেকে রিযিক দান করেন’? (ফাতির ৩৫/৩)। তিনি আরো বলেন,وَاللهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُوْنَ- ‘আল্লাহ তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা যেসব কাজ কর তাকেও’ (ছফফাত ৩৭/৯৬)।
অতএব আকাশ ও পৃথিবীর সকল কিছুই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ মানুষের কর্মশক্তি এবং তারা যা তৈরী করে তাতে আল্লাহর লিখন ও ইচছা মিলিত হ’লে তা তৈরী হয়। তাই কেউ যদি আল্লাহর কোন সৃষ্টিকে অবিশ্বাস করে তাহ’লে তাকদীরকে অবিশ্বাস করা হবে। ফলে সে ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে।
তাকদীরের প্রকারভেদ :
তাকদীর সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে। ১. অপরিবর্তনীয় (مبرم)। ২. পরিবর্তনশীল (معلق)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلاَّ وَجْهَهُ ‘প্রত্যেক বস্ত্তই ধ্বংস হবে তাঁর চেহারা ব্যতীত’ (ক্বাছাছ ২৮/৮৮)।
প্রথম আয়াতে বলা হয় প্রত্যেক প্রাণীকেই মরতে হবে। ২য় আয়াতে আল্লাহ ব্যতীত সকল জিনিসের ধ্বংস হওয়া অনিবার্য। এতে কোন পরিবর্তন নেই। এটা অপরিবর্তনীয় ভাগ্য। ২য় বিষয় যে কোন প্রাণী কখন মরবে তা আল্লাহর ইচ্ছায় কিছু আগে পরে হ’তে পারে। তাই ভাগ্যের কিছু অংশ পরিবর্তনশীল থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন,يَمْحُو اللهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ وَعِنْدَهُ أُمُّ الْكِتَابِ ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং বহাল রাখেন। আর তাঁর নিকটেই রয়েছে মূল কিতাব’ (রা‘দ ১৩/৩৯)।
এই আয়াতের তাফসীরে ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস বলেছেন, দু’টি কিতাব আছে। একটিতে কম-বেশী হয়ে থাকে। কারো দো‘আ কিংবা ভাল-মন্দ কাজের কারণে ভাগ্যলিপিতে যে পরিবর্তন হয় সেটা কোন সময়ে বিশেষ শর্তের সাথে সংযুক্ত থাকে। শর্ত পাওয়া গেলে পরিবর্তন হবে, আর শর্ত না পাওয়া গেলে পরিবর্তন হবে না। ভাগ্য পরিবর্তনের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ ‘আল্লাহর ফায়ছালাকে কোন বস্ত্ত পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না দো‘আ ব্যতীত’।[13]
অর্থাৎ আল্লাহ স্বীয় ফায়ছালার পরিবর্তন করেন যখন বান্দা তাঁর নিকটে দো‘আ করে। ছহীহ হাদীছে রয়েছে যে রক্ত সম্পর্ক রক্ষাকারীর আয়ু বৃদ্ধি পায়। আনাস বিন মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِىْ رِزْقِهِ، وَيُنْسَأَ لَهُ فِىْ أَثَرِهِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ- ‘যে ব্যক্তি পসন্দ করে যে তার রূযী বৃদ্ধি হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘায়িত হোক সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে’।[14] উক্ত আয়াত ও হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, দো‘আ ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে রিযক্ব ও আয়ু বৃদ্ধি পায়।
তাক্বদীর নিয়ে বিতর্ক করা :
তাক্বদীরের উপর ঈমান রাখা আবশ্যক। তাক্বদীর নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। কারণ এ বিতর্ক অনেক ক্ষেত্রে কুফরী ও নাস্তিকতার পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ نَتَنَازَعُ فِى الْقَدَرِ فَغَضِبَ حَتَّى احْمَرَّ وَجْهُهُ حَتَّى كَأَنَّمَا فُقِئَ فِىْ وَجْنَتَيْهِ الرُّمَّانُ فَقَالَ أَبِهَذَا أُمِرْتُمْ أَمْ بِهَذَا أُرْسِلْتُ إِلَيْكُمْ إِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حِيْنَ تَنَازَعُوْا فِىْ هَذَا الأَمْرِ عَزَمْتُ عَلَيْكُمْ أَلاَّ تَتَنَازَعُوْا فِيْهِ-
একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বের হয়ে আমাদের নিকট
আসলেন আমরা তখন তাক্বদীর সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত ছিলাম। এ দেখে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের উপর এত রাগ করলেন যে, রাগে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
চেহারা মোবারক লাল হয়ে গেল, যেন তাঁর গন্ডদেশে আনারের দানা নিংড়িয়ে দেওয়া
হয়েছে। তারপর তিনি বললেন, তোমাদেরকে কি এ বিষয়ে হুকুম করা হয়েছে, না কি আমি
এ নিয়ে তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি। তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা এ বিষয়ে
বির্তকে লিপ্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞার সাথে তোমাদেরকে
বলছি, তোমরা এ বিষয়ে কখনো যেন বিতর্কে লিপ্ত না হও’।[15]
তাক্বদীরের স্তরসমূহ :
কুরআন-হাদীছের আলোচনায় দেখা যায় ভাগ্যের পাচঁটি স্তর রয়েছে। ১. সাধারণ ভাগ্য ২. মানুষের ভাগ্য ৩. সারা জীবনের ভাগ্য ৪. বার্ষিক ভাগ্য ৫. দৈনন্দিন ভাগ্য।
১. সাধারণ ভাগ্য হচ্ছে সমস্ত সৃষ্টি জগতের ভাগ্য যা আকাশ এবং যমীন সৃষ্টির ৫০ হাযার বছর পূর্বে আল্লাহ লাওহে মাহফূযে লিখে রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, সৃষ্টি জগতের ভাগ্য আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বে লিখিত হয়েছেন।[16] এই সাধারণ ভাগ্যলিপির মাঝে সকল সৃষ্টিই অন্তর্ভুক্ত।
২. দ্বিতীয় প্রকার ভাগ্য মানুষের ভাগ্য লিপি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِيْ آدَمَ مِنْ ظُهُوْرِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوْا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُوْلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِيْنَ-ٍ ‘আর (স্মরণ কর) যখন তোমার প্রতিপালক বনু আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তানদের বের করলেন এবং তাদেরকে তাদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলল, হ্যাঁ। আমরা সাক্ষী থাকলাম। (এটা এজন্য) যাতে তোমরা ক্বিয়ামতের দিন বলতে না পার যে, আমরা এ বিষয়ে জানতাম না’ (আ‘রাফ ৭/১৭২)।
ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-কে এ আয়াত সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ
আদমকে সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি ডান হাত আদমের পিঠে বুলান। অতঃপর তা থেকে
কিছু সন্তান বের করেন। তারপর বলেন, এদেরকে আমি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি
এবং এরা জান্নাতীদের মত আমল করবে। এরপর তিনি আবার আদমের পিঠে হাত বুলান তা
থেকে কিছু সন্তান বের করে বলেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি
করেছি। এরা জাহান্নামীদের মত কাজ করবে। তখন একজন লোক বলল, তবে আমল কিসের
জন্য হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ যখন কোন
বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন এমনকি তখন তাকে জান্নাতীদের কাজে
ব্যবহার করবেন এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে জান্নাতীদের কাজ করা অবস্থায়।
অতঃপর আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যদি কোন বান্দাকে
জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন তাকে জাহান্নামীদের কাজে ব্যবহার করেন।
জাহান্নামীদের কাজে তার মৃত্যু হবে। আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ
করাবেন’।[17]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ لَهُمْ قُلُوْبٌ لاَ يَفْقَهُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لاَ يُبْصِرُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لاَ يَسْمَعُوْنَ بِهَا أُولَئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ- ‘আমরা বহু জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য। যাদের হৃদয় আছে কিন্তু বুঝে না। চোখ আছে কিন্তু দেখে না। কান আছে কিন্তু শোনে না। ওরা হ’ল চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তার চাইতে পথভ্রষ্ট। ওরা হ’ল উদাসীন’ (আ‘রাফ ৭/১৭৯)।
যারা তাদের জ্ঞান দ্বারা ভাল-মন্দের বিচার করে না বরং নিষিদ্ধ কাজ করে বেড়ায়। তারা চোখ দিয়ে দেখে, কান দিয়ে শুনে উপদেশ গ্রহণ করে না, অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হয়ে থাকে। এসব মানুষ চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট। এরাতো তারা যাদেরকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ এসব লোকদের জাহান্নামে দিচ্ছেন তাদের কৃতকর্মের জন্য। তিনি ইচ্ছা করে জাহান্নামে দিচ্ছেন না।
৩. ভাগ্যের তৃতীয় স্তর হ’ল সারা জীবনের ভাগ্য :
আল্লাহ যখন মায়ের গর্ভে মানুষের আকৃতি সৃষ্টি করে তার ভিতরে রূহ দান করে
তাকে জীবিত করেন, তখন তার ভাগ্যলিপিতে কিছু বিষয় লিখে দেওয়া হয়।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকে তার মায়ের পেটের মধ্যে চল্লিশ
দিন বীর্য রূপে জমা থাকে। তারপর পরিবর্তিত হয়ে রক্তপিন্ডের আকার হয়। তারপর
পরিবর্তিত হয়ে গোশতপিন্ড হয়। তারপর আল্লাহ তার কাছে ফেরেশতা পাঠিয়ে রূহ
ফুঁকে দেন। আর তার প্রতি চারটি নির্দেশ করা হয়। লিখে দেওয়া হয় তার আয়ু এবং
তার রূযী, তার আমল এবং সে দুর্ভাগা না সৌভাগ্যবান। অতঃপর তার মাঝে রূহ
ফুঁকে দেওয়া হয়। তোমাদের অপর কেউ জাহান্নামের কাজ করবে, অবশেষে তার এবং
জাহান্ননের মাঝে এক গজ বাকী থাকবে। তখন তার ভাগ্যলিপি অগ্রগামী হয়ে যাবে।
ফলে সে জান্নাতীদের মত কাজ করবে আর সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। তোমাদের একজন
জান্নাতবাসীদের মত কাজ করতে থাকে পরিশেষে তার ও জান্নাতে মাঝে এক গজ বাকী
থাকে। এ অবস্থায় তার ভাগ্যলিপি অগ্রগামী হয়ে যায়। ফলে সে জাহান্নামীদের মত
কাজ করবে, আর সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।[18]
হাদীছটিতে মানুষের সারা জীবনের কর্ম সম্পর্কে উল্লিখিত হয়েছে, যা তার মায়ের পেটে রূহ দেওয়ার সাথে লিখে দেয়া হয়েছে। এটাই তার সারা জীবনের ভাগ্যলিপি। হাদীছের শেষাংশে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, কোন লোক সারা জীবন জান্নাতের কাজ করে শেষে তার ভাগ্য তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। কারণ মানুষ ভাল কাজ করে অনেক ক্ষেত্রে সে অহংকারী হয়ে যায়। যেমন সে চিন্তা করে, আমি এত ভাল কাজ করছি, আমি জান্নাতে যাব না তবে কে যাবে? অথবা তার ভাল কাজের দ্বারা তার সম্মান ও খ্যাতি অর্জন লক্ষ্য ছিল ইত্যাদি। এরূপ বহু কাজের ফলে তার আমলগুলো নষ্ট হয়ে সে জাহান্নামে চলে যাবে। আর অপর ব্যক্তি সারা জীবন খারাপ কাজ করেছে। কিন্তু জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তার অনুভূতি জাগে, সে তওবা করে। সব অন্যায় কাজ পরিহার করে ও আল্লাহর নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করতে থাকে। ফলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাই সর্বাবস্থায় বান্দার জ্ঞান থাকতে হবে কিসে তার আমল নষ্ট হয়, কিসে তার আমলের নেকী বৃদ্ধি পায়। নচেৎ শিরক করে জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ করে দিবে সামান্য কথা ও কাজের মাধ্যমে।
৪. ভাগ্যের চতুর্থ স্তর হ’ল বার্ষিক ভাগ্য : বৎসরের নির্দিষ্ট এমন কোন সময় আছে যখন আল্লাহ এ বৎসরের পরিকল্পনা ফেরেশতাদের কাছে প্রদান করেন। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ، فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيْمٍ، أَمْرًا مِنْ عِنْدِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِيْنَ- ‘নিশ্চয়ই আমরা একে নাযিল করেছি এক বরকতময় রাত্রে। নিশ্চয়ই আমরা সতর্ককারী। এ রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থির করা হয়েছে। আমাদের আদেশক্রমে আমরাই প্রেরণকারী’ (দুখান ৪৪/৩-৫)।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, ওটা হচ্ছে কুরআন অবতরণের রাত। ঐ রাত্রে সৃষ্টি সম্পর্কিত সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত দেয়া হয় লাওহে মাহফূযে রক্ষিত মূল গ্রন্থ থেকে আগামী এক বৎসরের ঘটিতব্য বিষয়। অর্থাৎ এ বছর শবে ক্বদর হ’তে। আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সকল ফায়ছালা এ রাত্রিতে সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাগণের কাছে অর্পণ করা হয়। যা আল্লাহ তা‘আলা মানুষ জন্মের পূর্বে লাওহে মাহফূযে লিখে রেখেছেন। এ রাত্রিতে এগুলো স্থির করার অর্থ এই যে, ফেশেতাগণের মাধ্যমে তাক্বদীর প্রয়োগ করা হয়, তাদের কাছে এ রাত্রে অর্পণ করা হয় (কুরতবী, দুখান ৪ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ)।
৫. ভাগ্যের পঞ্চম স্তর হ’ল দৈনিক ভাগ্য :
মহান আল্লাহ বলেন,يَسْأَلُهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِيْ شَأْنٍ- ‘আকাশ সমূহে ও পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই আল্লাহর কাছে প্রার্থী। তিনি প্রত্যহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত’ (আর-রহমান ৫৫/২৯)।
তাফসীরে ইবনে কাছীরে ‘শান’-এর ব্যাখায় বলেন, আল্লাহর শান হ’ল যে তাঁকে ডাকবে তার ডাকে সাড়া দেওয়া, যে তাঁর কাছে চায় তাকে দান করা। অভাবগ্রস্তের অভাব দূর করা। গুনাহগার ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করা। সমস্ত যমীনবাসী ও আকাশবাসীর প্রতিদিনের প্রয়োজন পূরণ করা। ইবনে জারীরের বরাতে ইবনে কাছীর বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। তখন ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এ শান কি? তিনি বললেন, গুনাহ সমূহকে ক্ষমা করা, দুঃখ-কষ্ট দূর করা, মানুষের উন্নতি অবনতি করা। ইবনে কাছীর আরও বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস বলেন, আল্লাহ তা‘আলা লাওহে মাহফূযকে সাদা মূর্তি দ্বারা বানিয়েছেন তার দু’পাশ লাল ইয়াকূত পাথরের, তার কলম নূরের, তার দৈর্ঘ্য আকাশ ও যমীনের সমান, প্রতিদিন তিনশত ষাট বার দৃষ্টিপাত করেন। প্রতি দৃষ্টিপাতে তিনি নতুন সৃষ্টি করেন এবং জীবিত করেন ও মৃত্যু দান করেন। আর সম্মান দেন ও লাঞ্ছিত করেন এবং যা ইচ্ছা তিনি তা করতে পারেন। (তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা কাফ ২৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশ যখন বাকী থাকে তখন আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে নেমে এসে বলেন, কে আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে চায় আমি তাকে দান করব? কে আমার কাছে ক্ষমা চায় আমি তাকে ক্ষমা করব’।[19] সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ বান্দার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য বান্দার অভিযোগ পুরা করেন। ফলে কারো রূযী বেড়ে যায় কারো রূযী কমে যায়। কারো হায়াত বৃদ্ধি পায়, কারো কমে যায়। কেউ তওবা করে পাপের পথ পরিহার করে। এসব কাজ প্রতি দিনের ভাগ্যের অন্তর্ভুক্ত।
তাক্বদীর বিরোধী কিছু কাজ ও উক্তি :
মানুষ বিভিন্ন সময় তাক্বদীর বিরোধী কাজ করে বা কথা বলে থাকে। তা জ্ঞাতসারেও হয়। যা মারাত্মক গুনাহের কাজ। হিংসা করা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কৃত ভাগ্যের বিরুদ্ধে আপত্তি করা। কারণ হিংসুক ব্যক্তি আল্লাহর সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারে না। তাই সে বলে থাকে অমুক ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছে অথচ সে এটার যোগ্য নয়। অমুককে বঞ্চিত করা হয়েছে অথচ সে এটার যোগ্য ছিল। এ কথা বলার ফলে হিংসুক ব্যক্তি আল্লাহর সৃষ্টি কৌশল ও তাঁর নির্ধারিত তাক্বদীরের সিদ্ধান্তকে ভুল মনে করে। তাই পূর্ণাঙ্গ ঈমানের দাবী হচ্ছে হিংসা পরিহার করে সমস্ত ব্যাপারে আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করে আল্লাহর সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়া। আল্লাহ সকলের ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন। তিনি যাকে চান দান করেন, যাকে চান তার রহমত থেকে বঞ্চিত করেন। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ শুনে একথা বলা যে লোকটি অকালে মারা গেল। এরূপ বলাও ভুল। কারণ তার জন্য আল্লাহর নির্ধারিত বয়সসীমা শেষ হয়ে গেছে। আল্লাহ যেটা নিয়ে যান সেটা তার আর যেটা দেন সেটাও তার। সুতরাং আল্লাহ নির্ধারিত ভাগ্যে বিশ্বাস করা যরূরী। আর গণকদের নিকট গিয়ে ভাগ্যের বিষয় জানার এবং ভবিষ্যতের খবরাখবর জানার চেষ্টা করা, তাদেরকে সত্যবাদী মনে করা তাক্বদীরে বিশ্বাসের বিপরীত।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন,مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ
لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً- ‘যে ব্যক্তি গণকের নিকট যায় আর সে যা
বলে তা বিশ্বাস করে তার চল্লিশ দিনের ছালাত ক্ববূল হবে না’।[20]
অনিচ্ছাকৃত কোন ভুল এবং ইচ্ছাকৃত অন্যায়ের জন্য ভাগ্যের দোহাই দেয়া সম্পর্কে ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, সৌভাগ্যবান দোষের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং বিপদে ধৈর্য ধারণ করে। যেমন আল্লাহ বলেন, فَاصْبِرْ إِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ ‘অতএব তুমি ছবর কর, নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আর তুমি স্বীয় অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর’ (মুমিন ৪০/৫৫)। আর হতভাগা ব্যক্তি বিপদের সময় অধৈর্য হয় এবং ভাগ্যের দোহাই দিয়ে তা ঢাকার চেষ্টা করে।
আল্লাহর
আইন ভঙ্গকারী পাপী বান্দার বিরুদ্ধে আল্লাহর শাস্তিমূলক কোন সিদ্ধান্ত
মানুষ জানতে পারে না যতক্ষণ সে শাস্তি তার উপর কার্যকর না হয়। তাই আল্লাহর
শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। স্বয়ং রাসূল (ছাঃ) আল্লাহর
কাছে এই বলে দো‘আ করতেন, وَقِنِى شَرَّ مَا قَضَيْتَ ‘হে আল্লাহ! তুমি যে
সিদ্ধান্ত নিয়েছ তার কুফল থেকে আমাকে বাঁচাও’।[21]
তিনি
উম্মতকে এভাবে দো‘আ শিক্ষা দিয়েছেন যে,يَتَعَوَّذُ مِنْ جَهْدِ
الْبَلاَءِ، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوءِ الْقَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ
الأَعْدَاءِ- ‘তোমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করে বল, হে আল্লাহ! তোমার
কাছে আশ্রয় কামনা করছি বিপদের কঠোরতা থেকে ও দুর্ভাগ্যের ধর-পাকড় থেকে এবং
আল্লাহর সিদ্ধান্তের অনিষ্ট থেকে। আর শত্রুদের খুশি হওয়া থেকে’।[22]
মানুষ জ্ঞাতসারে অন্যায় করুক অথবা অজ্ঞাতসারে, তার ঐ অন্যায়ের জন্য অল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে কান্নাকাটি করতে হবে। কিন্তু তা না করে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে বেপরওয়া আচরণ করলে অল্লাহর ক্রোধে পড়তে হবে। জ্ঞাতসারে যে গুনাহ করবে সেটাতো মারাত্মক পাপ। কিন্তু বান্দা অপরাধ করার পর তার মধ্যে যখন অনুশোচনা আসে তখন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।
তাক্বদীর অস্বীকারকারীদের যুক্তি খন্ডন :
কুরআন ও সুন্নাহ প্রমাণ করে তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস ঈমানের রুকনসমূহের অন্তর্ভুক্ত এবং দ্বীনের মূলনীতির অন্যতম। এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত-এর আক্বীদা। এ থেকে বিচ্যুত হয়েছে ক্বাদারিয়া ও জাবারিয়ারা। এই দল দু’টি পরস্পর বিরোধী।
ক্বাদারিয়ারা বান্দার বাসনা, ইচ্ছা ও জবাবদিহিতা প্রমাণকারী দলীলসমূহ প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করেছে। বস্তুতঃ তাদের এ কাজ সঠিক। কিন্তু তারা তাক্বদীরকে ও তাক্বদীর প্রমাণকারী দলীল সমূহকে অস্বীকার করেছে। জাবরিয়ারা তাদের মোকাবিলা করেছে উল্টোভাবে, তাক্বদীর প্রমাণ করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং তাতে বাড়াবাড়িও করেছে। ফলে মানুষকে সকল কর্মের ব্যাপারে তারা অপারগ জ্ঞান করে। তারা কাদারিয়াদের সকল দলীল অস্বীকার করে।
কাদারিয়াদের বিশ্বাসের খন্ডন :
ছহীহ মুসলিমের প্রথম হাদীছের ভূমিকায় ইমাম মুসলিম বছরার একজন ব্যক্তিকে তাক্বদীরের ব্যাপারে প্রথম পথভ্রষ্ট হিসাবে উল্লেখ করেন। তার নাম মু‘আয আল-জুহানী। তার থেকেই প্রথম এই বিভ্রান্তি শুরু হয়ে যুগে যুগে নানা গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়, যারা তাক্বদীর সম্বন্ধে নিজেদের ইচ্ছামত ব্যাখ্যা প্রদান করে। যেমন মু‘তাযিলা, জাহমিয়াহ ও আশ‘আরিয়া সম্প্রদায়।
ক্বাদারিয়ারা তাক্বদীরে বিশ্বাস করে না। তারা বলে, মানুষ তার ভাগ্য নিজেই সৃষ্টি করে। মানুষ কাজ করার পূর্বে তার ভাগ্য সম্বন্ধে কোন কিছু লিখা হয় না। কাজের পরও কিছু লিখা হয় না। বিভিন্নভাবে কাদারিয়াদের বিশ্বাস খন্ডন করা যায়।
আল-কুরআনে তাক্বদীরের প্রমাণ :
তাক্বদীরে বিশ্বাসের প্রমাণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ ‘আমরা সবকিছু সৃষ্টি করেছি পরিমিতভাবে’ (ক্বামার ৫৪/৪৯)। আল্লাহ আরও বলেন, وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيرًا ‘তিনি সমস্ত বস্ত্ত সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে যথাযথ পরিমিতি দান করেছেন’ (ফুরক্বান ২৫/২)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন,أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ إِنَّ ذَلِكَ فِيْ كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ- ‘তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহ জানেন। সবই লিপিবদ্ধ আছে এক কিতাবে। আর এটা আল্লাহর নিকটে খুবই সহজ’ (হজ্জ ২২/৭০)। তিনি আরও বলেন,مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلاَ فِي أَنْفُسِكُمْ إِلاَّ فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ، لِكَيْلاَ تَأْسَوْا عَلَى مَا فَاتَكُمْ وَلاَ تَفْرَحُوا بِمَا آتَاكُمْ وَاللهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ- ‘পৃথিবীতে অথবা তোমাদের নিজেদের উপর এমন কোন মুছীবত আসে না যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রাখি না, এটা করা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ। এটা এজন্য যে, তোমাদের যে ক্ষতি হয়েছে সেজন্য তোমরা যেন হাতাশাগ্রস্ত না হও। আর তোমাদেরকে যা দান করা হয়েছে তার জন্য তোমরা যেন উৎফুল্য না হও। কেননা আল্লাহ অহংকারী ও গর্বকারীকে পসন্দ করেন না’ (হাদীদ ৫৭/২২-২৩)। আল্লাহ আরও বলেন, وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ فِيْ إِمَامٍ مُبِيْنٍ ‘সবকিছুই আমরা স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি’ (ইয়াসীন ৩৬/২১)। তিনি আরও বলেন,
وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَّرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِيْ ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِيْنٍ-
‘আর গায়েবের চাবিকাঠি তাঁর কাছেই রয়েছে। তিনি ব্যতীত কেউই তা জানে না। স্থলভাগে ও সমুদ্রভাগে যা কিছু আছে, সবই তিনি জানেন। গাছের একটি পাতা ঝরলেও তা তিনি জানেন। মাটিতে লুক্কায়িত এমন কোন শস্যদানা নেই বা সেখানে পতিত এমন কোন সরস বা শুষ্ক ফল নেই, যা (আল্লাহর) সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই’ (আন‘আম ৬/৫৯)।
হাদীছে তাক্বদীরের প্রমাণ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বলেন, جَفَّ الْقَلَمُ بِمَا أَنْتَ لاَقٍ- ‘যা কিছু তোমার পাবার তা সব লিখে কলম শুকিয়ে গেছে’।[23] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلاَّ وَقَدْ كُتِبَ مَقْعَدُهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَمَقْعَدُهُ مِنَ النَّارِ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ أَفَلاَ نَتَّكِلُ قَالَ لاَ، اعْمَلُوا فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ ثُمَّ قَرَأَ فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى، وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى، فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى إِلَى قَوْلِهِ (فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى-
‘তোমাদের প্রত্যেকের ঠিকানা লেখা হয়ে গিয়েছে, হয় তা জাহান্নামে অথবা জান্নাতে। (একথা শুনে) এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তবে কি আমরা তাক্বদীরের উপর ভরসা করব না? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, না, আমল করতে থাক। প্রত্যেককে তা-ই সহজ করে দেয়া হবে, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পরে এ আয়াত তেলাওয়াত করেন, ‘অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে ও আল্লাহকে ভয় করে আমি তার জন্য সহজ পথে চলা সহজ করে দিব। আর যে ব্যক্তি কৃপণতা করে বেপরওয়া হয়। আর যা উত্তম তা অমান্য করে আমি তার জন্য কঠিন পথ সহজ করে দিব’।[24] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ يَأْتِى ابْنَ آدَمَ النَّذْرُ بِشَىْءٍ لَمْ يَكُنْ قَدْ قَدَّرْتُهُ، وَلَكِنْ يُلْقِيْهِ الْقَدَرُ وَقَدْ قَدَّرْتُهُ لَهُ، أَسْتَخْرِجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মানুষের মানত মানার কারণে তার ভাগ্যে যা নির্ধারিত নেই তা সে পাবে না। বরং যা তার ভাগ্যে আছে তাই হবে। তবে মানতের মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু মাল বের করা হয় মাত্র’।[25] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى الْعَجْزُ وَالْكَيْسُ ‘প্রত্যেক বস্তু নির্ধারিত ভাগ্যানুযায়ী হয়ে থাকে। এমনকি অক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তাও’।[26]
কুরআনের উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছ হ’তে প্রমাণিত হয় যে, মানুষ যা কিছু করে এবং মঙ্গল-অমঙ্গল যা কিছু সংঘটিত হয় সবকিছু ভাগ্যলিপি অনুসারে হয়ে থাকে। এতে কারও কোন ক্ষমতা নেই। সুতরাং ক্বাদারিয়াদের আক্বীদা ভ্রান্ত।
জাবারিয়াদের বিশ্বাস খন্ডন :
জাবারিয়া মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা হ’লেন জা‘দ বিন দিরহাম। পরবর্তীতে জাহম বিন ছাফওয়ান এ মতবাদের প্রসার ঘটান। জাবরিয়ারা বলে মানুষ আল্লাহর লিখা ভাগ্যের অধীন, তার কোন ক্ষমতা নেই। তাকে দিয়ে যা করানো হয়, তাই সে করে। পক্ষান্তরে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মতে, বান্দার কর্মের স্বাধীনতা রয়েছে। সৎকর্ম করলে তাদেরকে প্রতিদান দেওয়া হবে। আর অসৎকর্ম করলে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে।
মানুষকে আল্লাহর পক্ষ থেকে কর্মের এমন একটি শক্তি প্রদান করা হয়েছে, যা সৃষ্টি ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু অর্জনের ক্ষমতা রাখে। মানুষের মধ্যে এই অর্জনের ক্ষমতা আছে বলেই ভালোর জন্য প্রতিদান এবং মন্দের জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। আবার এ ক্ষমতাটি স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়ায় মানুষকে নিজ ইচ্ছা ও কর্মের স্রষ্টা বলে অভিহিত করা যায় না। অনুরূপভাবে মানুষের মধ্যে এ শক্তি আছে বলে তাকে শক্তিহীন জড়-পদার্থের মতও গণ্য করা যায় না। শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ) বলেন, বান্দার ইখতিয়ার ও স্বাধীনতা তো আছে তবে এ ইখতিয়ার আল্লাহ তা‘আলার ইখতিয়ারের অধীন। অর্থাৎ কর্মের ইচ্ছা ও কর্মের শক্তি মানুষের মধ্যে আছে। কিন্তু এর সাথে আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিফলন না ঘটলে কোন কিছুই বাস্তবায়িত হবে না।
মানুষ ও মানুষের কর্ম সবই আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, وَاللهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُوْنَ ‘আল্লাহ্ই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে ও তোমরা যা কর সেগুলোকেও’ (ছফফাত ৩৭/৯৬)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,اللهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ ‘আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা। আর তিনি সবকিছুর অভিভাবক এবং কর্ম সম্পাদনকারী’ (যুমার ৩৯/৬২)।
মোটকথা আল্লাহ হ’লেন কর্মের স্রষ্টা এবং বান্দা হ’ল কর্মের বাস্তবায়নকারী। অদৃষ্টবাদী জাবারিয়ারা বান্দাকে ইচ্ছা ও কর্মশক্তিহীন বাধ্যগত জীব বলে মনে করে, যা সম্পূর্ণ ভুল।
তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাসের ফলাফল :
১. তাক্বদীরে বিশ্বাস ঈমানের একটি রুকন। যা আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি করে। কাজ ও তার কারণ ও উপায় সকলই আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্যলিপির জন্য হয়ে থাকে।
২. নিজের কর্ম কৌশলের জন্য গর্ববোধ না করে কাজে সফলতার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করা। কারণ সফলতা আল্লাহর নে‘মত যা নির্ধারিত হয়েছে আল্লাহর নির্ধারিত লিখন ভাগ্যের দ্বারা। তাই এজন্য শুকরিয়া আদায় করা হবে।
৩. মনে শান্তি ও তৃপ্তি লাভ করে। যখন সে বিশ্বাস করে কাজটি আল্লাহর সিদ্ধান্ত অনুসারে হয়েছে। তাই সে না চাইলেও বিষয়টি সংঘটিত হবেই। তখন তার অন্তরে প্রবোধ পায়। এজন্য ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাসী ব্যক্তির চেয়ে সাচ্ছন্দ্য জীবন ও শান্ত মন এবং অধিক তৃপ্ত ব্যক্তি অপর কেউ হ’তে পারে না।
৪. তাক্বদীরে বিশ্বাসী ব্যক্তি কোন কাজে আশা পূরণ না হওয়ার সময় অথবা অপসন্দনীয় কিছু ঘটার সময় হাহুতাশ করে না। সে বিশ্বাস করে এসবই আল্লাহর সিদ্ধান্তে ঘটেছে যার অধিকারে রয়েছে আকাশ সমূহের ও যমীনের রাজত্ব।
৫. ভাগ্য বিশ্বাসের ফলে দুশ্চিন্তা দূর হয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন ঈমানদার ব্যক্তির কোন দীর্ঘ কলান্তি বা সাময়িক অশান্তি এবং দুঃখ-কষ্ট বা কোন বেদনা পেঁŠছায়, এমনকি কাটা ফুটে যায়, এর কারণে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন’।[27] ফলে সে ক্ষতি থেকে নির্ভীক হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইবনে আববাস (রাঃ)-কে বলেন, সমস্ত পৃথিবীর সকলে মিলে তোমার কোন উপকার করতে পারবে না, ততটুকু ব্যতীত যা আল্লাহ তোমার ভাগ্য লিপিতে লিখে রেখেছেন।[28] তাই ভাগ্য বিশ্বাসী ব্যক্তি সৃষ্টি জগতের দ্বারা লাভ-ক্ষতির কোনই ভয় করে না।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তির ব্যাপারটা আশ্চর্য ধরনের। প্রত্যেকটা
ব্যাপারই তার জন্য কল্যাণকর। এ ব্যাপারটা ঈমানদার ছাড়া আর কারো জন্য হয় না।
তার কাছে যদি কল্যাণ পৌঁছায় তবে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এটা তার কল্যাণ
বহন করে। আর যদি তার কাছে দুঃখ-কষ্ট পৌঁছায় তবে সে ধৈর্য ধারণ করে। এটাও
তার জন্য কল্যাণকর হয়’।[29]
উপসংহার :
পরিশেষে আমরা বলতে পারি তাক্বদীর একটি গায়েবী বিষয়, যার রহস্য মহান আল্লাহ ব্যতীত কেউ অবগত নয়। এজন্য সাধারণভাবে বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় যে, যেমন একজন লোকের সামনে ফলের রস ভর্তি গ্লাস রাখা রয়েছে। সে ইচ্ছা করলে তা পান করতে পারে, নাও পারে। অর্থাৎ সে পান করতে বাধ্য নয়। অতঃপর যদি সে পান করে, তবে তা আল্লাহর জ্ঞানে পূর্ব থেকেই রক্ষিত আছে। আবার যদি পান না করে, তাও আল্লাহর জ্ঞানে আগে থেকেই রক্ষিত আছে। যদি বলা হয়, এর ব্যাখ্যা কি? জবাব এতটুকু দেওয়া যায় যে, অসীম জ্ঞানের অধিকারী মহান আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য মানুষের স্বল্পজ্ঞান দিয়ে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। মানুষের সৎ অসৎ যাবতীয় কর্মের ক্ষেত্রেও অনুরূপ বক্তব্যই প্রযোজ্য। একজন পাপাচারী পাপকর্মের দিকে প্রবৃত্ত হয় এবং নিজ হাতে তা বাস্তবায়ন করে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, নিজ ইচ্ছা ও ক্ষমতা প্রয়োগ করে সে পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে। এজন্যে তার শাস্তিও হবে।
এক্ষণে বান্দা যেহেতু নিজের তাক্বদীর জানে না, সেহেতু তাকে মন্দ কর্ম হ’তে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হবে এবং সর্বদা আল্লাহর বিধান মেনে কাজ করে সুন্দর পরিণতি লাভের চেষ্টা করতে হবে। তার সাধ্যমত চেষ্টার পরেও যেটা ঘটবে, বুঝতে হবে সেটাই ছিল তার তাক্বদীরের লিখন। সুতরাং তাক্বদীর সত্য। কাদারিয়া, জাবারিয়া সম্প্রদায়ের আক্বীদা মিথ্যা।
[1]. সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, তাকদীর শব্দের ব্যাখ্যা দ্রঃ।
[2]. মুসলিম হা/২৬৫৫; রিয়াযুছ ছালেহীন, পৃঃ ২৮২।
[3]. মুসলিম হা/২৬৫৫; মিশকাত হা/৮০।
[4]. মুসলিম হা/২৬৫৩; মিশকাত হা/৭৯।
[5]. তিরমিযী হা/২১৩৩; মিশকাত হা/৯৮।
[6]. বুখারী হা/৪৯৪৯; মুসলিম হা/২৬৪৭; মিশকাত হা/৮৫।
[7]. ইবনু মাজাহ হা/৬৩; তিরমিযী হা/২৬১০, সনদ ছহীহ।
[8]. তিরমিযী হা/২১৪৫; ইবনু মাজাহ হা/৮১; মিশকাত হা/১০৪, সনদ ছহীহ।
[9]. আবু দাউদ হা/৪৬৯১; মিশকাত হা/১০৭, সনদ হাসান।
[10]. বুখারী হা/১৩৮৩; মুসলিম হা/২৬৫৯।
[11]. তিরমিযী হা/২৫১৬; মিশকাত হা/৫৩০২, সনদ ছহীহ।
[12]. মুসলিম হা/২৬৫৪; মিশকাত হা/৮৯।
[13]. তিরমিযী হা/২১৩৯; মিশকাত হা/২২৩৩; ছহীহাহ হা/১৫৪।
[14]. বুখারী হা/৫৯৮৬; মুসলিম হা/২৫৫৭; মিশকাত হা/৪৯১৮।
[15]. তিরমিযী হা/২১৩৩; মিশকাত হা/৯৮, সনদ হাসান।
[16]. মুসলিম হা/২৬৫৩; মিশকাত হা/৭৯।
[17]. আবু দাউদ হা/৪৭০৩, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৯৫।
[18]. বুখারী হা/৩৩৩২; মুসলিম হা/২৬৪৩; মিশকাত হা/৮২।
[19]. বুখারী হা/১১৪৫; মুসলিম হা/৭৫৮; মিশকাত হা/১২২৩।
[20]. মুসলিম হা/২২৩০; মিশকাত হা/৪৫৯৫।
[21]. আবু দাউদ হা/১৪২৫; ইবনু মাজাহ হা/১১৭৮; মিশকাত হা/১২৭৩, সনদ ছহীহ।
[22]. বুখারী হা/৬৩৪৭; মিশকাত হা/২৪৫৭।
[23]. বুখারী তরজমাতুল বাব; তিরমিযী হা/৩২১৫; মিশকাত হা/৮৮।
[24]. বুখারী হা/৪৯৪৭।
[25]. বুখারী হা/৬৬০৯।
[26]. মুসলিম হা/২৬৫৫।
[27]. বুখারী হা/৫৬৪১; মিশকাত হা/১৫৩৭।
[28]. তিরমিযী হা/২৫১৬; মিশকাত হা/৫৩০২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৫৭।
[29]. মুসলিম হা/২৯৯৯; মিশকাত হা/৫২৯৭।