...আল্লাহ জিন ও ইনসান সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। আমরা তাঁর ইচ্ছায় দুনিয়াতে এসেছি। তাঁর হুকুমে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে আবার তাঁর নিকটে চলে যাব। যে সময়টুকু দুনিয়াতে আছি, সেটুকু কেবল তাঁর ইবাদতের জন্যই আছি। এখানকার কর্মতৎপরতার ভিত্তিতেই পরকালে আমাদের জন্য জান্নাত অথবা জাহান্নাম প্রস্ত্তত রাখা হয়েছে। আমরা প্রতি সেকেন্ডে ১,৮৬,০০০ মাইল আলোর গতিতে আমাদের তৃতীয় ঠিকানা কবরের দিকে এগিয়ে চলেছি। অতএব এ পৃথিবী নশ্বর, অবিনশ্বর নয়। এটি আমাদের জন্য মুসাফিরখানা, স্থায়ী ঠিকানা নয়। দ্রুত হারিয়ে যাওয়া প্রতিটি সেকেন্ড ও মিনিটে আমরা আমাদের চূড়ান্ত গন্তব্য আখেরাতে মুক্তির জন্য বেশী বেশী পাথেয় যাতে সঞ্চয় করি, রামাযান আমাদেরকে বাধ্যগতভাবে ক্ষুৎপিপাসায় কাতর রেখে সেদিকেই পথনির্দেশ করে।

হে মুসলিম! তোমার শ্রেষ্ঠ সম্পদ হ’ল তোমার জীবনটুকু। একে ব্যর্থ করে দিয়ো না। অলসতা ও বিলাসিতায় তোমার আয়ুষ্কাল শেষ করে দিয়ো না। বার্ধক্য আসার পূর্বে তোমার যৌবনকে, অসুখের পূর্বে তোমার সুস্থতাকে, ব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবসরকে, মৃত্যু আসার পূর্বে তোমার জীবনকে যথার্থভাবে কাজে লাগাও। মনে রেখ, শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সেই, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে ও তাকে নেকীর কাজে ব্যয় করেছে। রামাযান সেই পবিত্র জীবন গড়ায় আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে।

হে মুসলিম ভাই ও বোন! আসুন আমরা আল্লাহর অনুগত হই। যতটুকু করি, কেবল তাঁর জন্যই ইখলাছের সাথে করি। কোনরূপ ‘রিয়া’ ও প্রদর্শনী যেন আমাদের ইখলাছের স্বচ্ছ আকাশকে কালিমালিপ্ত না করে। কেননা আল্লাহ কেবল আমাদের ইখলাছটুকুই কবুল করবেন। আমরা যদি তাঁর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করি, তাহ’লে তিনি আমাদের বেশী বেশী দিবেন। কেননা আসমানেই সবকিছুর ফায়ছালা হয়ে থাকে, যমীনে নয়। অতএব, আসুন! আমরা আমাদের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করি। আমাদের জিহবাকে তাঁর যিকরে সিক্ত রাখি। প্রতি ওয়াক্ত ছালাত শেষে যদি এক পারা করে তেলাওয়াত করি, তাহ’লে সপ্তাহে আমরা একবার কুরআন খতম করতে পারি। রামাযানে যার প্রতি হরফে ১০ থেকে ৭০০ গুণ ও তার চেয়ে বেশী নেকী লেখা হয়ে থাকে। আসুন! আমরা সাধ্যমত ইবাদত ও তেলাওয়াতে রত হই। মানুষকে দ্বীনে হক-এর দাওয়াত দেই। কেননা আপনার দাওয়াতে কেউ ফিরে এলে তার সমপরিমাণ নেকী আপনার আমলনামায় লেখা হবে। মনে রাখবেন, রামাযানে নেকীর কাজের ছওয়াব যেমন অন্য সকল মাসের চেয়ে বেশী, এ মাসে অন্যায় কাজের শাস্তি তেমনি অন্য মাসের চেয়ে বেশী।

হে বনু আদম! তুমি সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহশীল হও, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহশীল হবেন। হে দায়িত্বশীল! তুমি দায়িত্ব সচেতন হও। তোমার দায়িত্ব যার উপরে তিনি তোমার ব্যাপারে সচেতন হবেন। প্রত্যেকে আমরা ক্বিয়মাতের দিন স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হব। চক্ষু, কর্ণ, হৃদয় তথা প্রতিটি নে‘মতকে আমরা কিভাবে ব্যয় করেছি, সে বিষয়ে আমাদের যথাযথ কৈফিয়ত সেদিন দিতে হবে।

হে ব্যবসায়ী! অন্য মাসের চেয়ে রামাযানে তুমি কম লাভ কর। যতটুকু ছাড়বে, তার চেয়ে বহু গুণ তুমি আখেরাতে পাবে। এমনকি আল্লাহর ইচ্ছা হ’লে দু&&নয়াতেও পেতে পার। সূদ-ঘুষ-মওজুদদারী ও সকল প্রকার দুর্নীতি হ’তে বিরত হও! জাহেলী আরবের কাফেররাও বছরের চারটি সম্মানিত মাসে অন্যায়-অপকর্ম ও মারামারি-কাটাকাটি হ’তে বিরত থাকত। আমরা কি সেটাও পারব না? অতএব এসো যাবতীয় হিংসা-হানাহানি, গীবত-তোহমত ও অমানবিক কর্মকান্ড হ’তে আমরা তওবা করি। প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী। আর শ্রেষ্ঠ ভুলকারী তারাই, যারা তওবাকারী। এসো আল্লাহর নিকটে চূড়ান্ত হিসাব দেওয়ার আগে নিজেই নিজের হিসাব নিই। আমার জানাযার ছালাত অন্যে আদায়ের আগে নিজের ছালাত নিজে আদায় করি। আমার দেহ গোসল করিয়ে শুভ্র কাফনে ঢাকার আগে নিজের দেহকে হালাল খাদ্য ও পোষাক দিয়ে আবৃত করি।

হ’তে পারে এটিই আমার জীবনের শেষ রামাযান। অতএব এসো এ রামাযানেই আমরা সর্বোচ্চ তাক্বওয়া ও আল্লাহভীতি অর্জন করি। ক্বিয়ামতের ভয়ংকর মুহূর্তকে স্মরণ করি। নিজ পিতা-মাতার মৃত্যুকরুণ বিদায়ী চেহারা মনে করে তাঁদের জন্য প্রাণখোলা দো‘আ করি ও সাধ্যমত দান করি। আমরা এসেছি এক, যাব একা, ক্বিয়ামতে উঠব একা, কৈফিয়ত দেব একা। অতএব সাথীদের মাঝে আত্মহারা হয়ো না হে আত্মভোলা মানুষ। রামাযান তোমায় ডাকছে তাক্বওয়ার দিকে। এসো আমরা আল্লাহভীরু হই। অতএব হে মাহে রামাযান! তোমাকে জানাই খোশ আমদেদ।

...নতুন বছরের শুরু অক্টোবর’০৪ হ’তে আত-তাহরীকের নিজস্ব ‘ওয়েবসাইট’ চালু হ’ল- ফালিল্লাহিল হাম্দ। এখন পৃথিবীর যেকোন স্থান থেকে ইন্টারনেটে www.at-tahreek.com ক্লিক করলেই ঘরে বসে আত-তাহরীক পড়তে পারবেন । আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন![1]

[1]. ৮ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা, অক্টোবর ২০০৪।






বিষয়সমূহ: ছিয়াম-রামাযান
হে আল্লাহ! সৎ ও সাহসী নেতা দাও - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নেতৃত্ব দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
কুরবানীর মাসায়েল - .
অস্ত্র ব্যবসা বনাম মানবিক কূটনীতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পর্দা নারীর অঙ্গভূষণ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ইস্রায়েল কি অপরাজেয়? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পররাষ্ট্র নীতি নিশ্চিত করুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শান্তির ধর্ম ইসলাম - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভাষার স্বকীয়তা অক্ষুণ্ণ রাখুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভাল আছি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অ্যানেসথেসিয়া দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.