ধৈর্য ও সংযমের সুমহান আদর্শ নিয়ে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ফিরে এসেছে মাহে রামাযান। আত্মত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির মাস, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মাস, রহমত ও মাগফেরাতের মাস, কাম-ক্রোধ, লোভ-মোহ বশীভূত করার মাস, জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস, আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভের মাস, সদাচার ও সদ্ব্যবহারের মাস, তাক্বওয়া ও পরহেযগারীর মাস, সর্বোচ্চ কৃচ্ছ্রতা সাধনের মাস এই মাহে রামাযান। এ মাসেই একজন মুমিন ছিয়াম সাধনার মাধ্যমে জীবনের সকল পাপ-পঙ্কিলতা ধুয়ে-মুছে নিষ্পাপ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেন। সুশৃংখল জীবন যাপনের সুতীব্র প্রেরণা নিয়ে আগামী ১১ মাসের জন্য মুমিন তার জীবনের একটি পরিকল্পনা স্থির করতে পারেন। সহনশীলতা ও সহমর্মিতার প্রশিক্ষণ নিয়ে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করতে পারেন। ধৈর্য ও সংযমের মাসব্যপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করে হ’তে পারেন আল্লাহর প্রিয় পাত্র। শান্তি ও স্থিতিশীলতার শিক্ষা নিয়ে হ’তে পারেন শান্তিকামী জনতার অগ্রসৈনিক। কামাচার, পাপাচার, মিথ্যা ও অশ্লীলতা পরিত্যাগের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে চরিত্রবান আদর্শ ব্যক্তিত্ব রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।

আরবী মাস সমূহের মধ্যে রামাযান হ’ল ৯ম মাস। বিভিন্ন কারণে মাসটি গুরুত্ববহ ও স্মরণীয়। এ মাসেই পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এ মাসের ছিয়াম মুমিনের জন্য ফরয। এ মাসেই লায়লাতুল ক্বদর রয়েছে। যা হাযার মাসের চেয়েও উত্তম। সব মিলিয়ে এই মহিমান্বিত মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। অন্য সকল ইবাদতের চেয়ে ছিয়ামের মর্যাদা অনন্য। কারণ ছিয়াম সাধনায় ‘রিয়া’ বা লোক দেখানোর কোন অবকাশ নেই। ছিয়াম পালনকারী কেবল আল্লাহর ভয়ে ও তাঁকে সন্তুষ্ট করার নিমিত্তেই খানাপিনা ইত্যাদি হ’তে বিরত থাকেন। সেকারণ আল্লাহ বলেন, ‘বান্দা একমাত্র আমার উদ্দেশ্যেই ছিয়াম পালন করে। আর আমিই এর প্রতিদান দিব’।[1]

সর্বাধিক প্রশিক্ষণের মাস রামাযান। এই এক মাসের প্রশিক্ষণেই বাকী ১১ মাস পথ চলার দিক নির্দেশনা পরিস্ফূট হয়ে উঠে। এ মাসেই জীবনের পাপ মোচনের মোক্ষম সময়। রাসূল (ছাঃ) একদা জুম‘আর খুৎবা প্রদানের জন্য মিম্বরে উঠার সময় প্রথম সিঁড়িতে পা দিয়ে বললেন, আমীন! দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা দিয়ে বললেন, আমীন! তৃতীয় সিঁড়িতে পা দিয়ে বললেন, আমীন! পরে তিনি বললেন, আমি যখন মিম্বরে উঠছিলাম তখন জিব্রীল এসে আমাকে বলেন, ‘ধ্বংস ঐ ব্যক্তির জন্য, যে রামাযান মাস পেল, অথচ তাকে ক্ষমা করা হ’ল না’। আমি বললাম, ‘আমীন’। অতঃপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অথবা তাদের একজনকে পেল, অতঃপর জাহান্নামে প্রবেশ করল। তার জন্য ধ্বংস’। আমি বললাম, আমীন। অতঃপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তির নিকট আপনার নাম উচ্চারণ করা হ’ল, অথচ সে আপনার উপর দরূদ পাঠ করল না, তার জন্য ধ্বংস’। আমি বললাম, আমীন’।[2]

দুর্ভাগ্য, এই মহিমাময় মাসকে বরণ করতে বিশ্বব্যাপী সকল প্রস্ত্ততি যখন সম্পন্ন প্রায়, মুসলিম উম্মাহ শান্তির বার্তাবাহী এ মাসটির অপেক্ষায় যখন গভীর উৎসাহের সাথে পতীক্ষায় ছিল ঠিক তখনই মানবাধিকারের স্বঘোষিত বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার সন্ত্রাসী প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন ইরাকের উপর বিমান হামলা চালায়। অর্ধশতাধিক মুসলিম হতাহত হন। ধ্বংস হয় কোটি কোটি টাকার সম্পদ। একদিনেই সে ক্ষান্ত হয়নি। পরপর কয়েকদিন সে হামলা চালায়। ইসলাম বিদ্বেষী ইহূদী-খ্রিষ্টান চক্রের এই পরিকল্পিত হামলা বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে। বিস্মিত হয়েছে ও ধিক্কার দিয়েছে সকলে বোমার উপর ‘এই নাও রামাযানের উপহার’ লেখা দেখে।

অথচ এরপরও মুসলিম বিশ্বের নীরবতা হতাশা বৈ কি হ’তে পারে? ওআইসি, আরবলীগ সহ ইসলামী সংস্থা সমূহ এক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তারই পরিচয় দিচ্ছে বলা চলে। আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলো যখন বিশ্বব্যাপী মুসলিম নিধনে তৎপর, তখন মুসলিম বিশ্বের উচিত ছিল সম্মিলিত ভাবে দুর্ভেদ্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এজন্য ইসলামী সংস্থা সমূহকে আরও তৎপরতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। বৈষয়িক শক্তি অর্জনের চেয়ে আত্মিক শক্তি অর্জনের প্রয়োজন অনেক বেশী। কেননা ঈমান ও তাক্বওয়ার শক্তিতে বলিয়ান মুমিন সমাজকে প্রতিহত করার কোন ক্ষমতা কোন যুগেও কোন শক্তির হয়নি। আজও হবে না। কিন্তু আমরা ক্রমেই বস্ত্তবাদী হয়ে যাচ্ছি। ঈমানী জগত ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। মাসব্যাপী ছিয়াম সাধনা থেকে প্রকৃত ঈমান ও তাক্বওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করে বাকী ১১ মাসের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে হবে এবং আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক উভয় ক্ষেত্রে শক্তি অর্জনে সচেষ্ট হ’তে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দিন- আমীন![3]

[1]. বুখারী হা/৭৪৯২; মুসলিম হা/১১৫১; মিশকাত হা/১৯৫৯ ‘ছিয়াম’ অধ্যায়।

[2]. হাকেম হা/৭২৫৬; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪০৯, হাদীছ ছহীহ।

[3]. ২য় বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা, জানুয়ারী’৯৯।






বিষয়সমূহ: ছিয়াম-রামাযান
নৈতিকতা ও উন্নয়ন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
গণজোয়ার ও গণঅভ্যুত্থান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
জশনে জুলূস ও আমরা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মানব জাতির ভবিষ্যৎ হ’ল ইসলামী খেলাফতে - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বিশ্বকাপ না বিশ্বনাশ? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভৌগলিক ও ঈমানী প্রতিরক্ষা চাই - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সংবিধান পর্যালোচনা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বিশ্বের শাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর তাকীদ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
যেকোন নাগরিকের ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আমরা শোকাহত, স্তম্ভিত, শংকিত - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পতিতাবৃত্তি বন্ধ করুন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আমি চাই - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.