হানাহানি কাম্য নয়

আগামী ৭ই জানুয়ারী ২০২৪ রবিবার বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারী থেকে প্রায় ১৫ বছর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই সরকারী ও বিরোধী দলের হানাহানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উভয় দলের ক্যাডাররাই এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করছে। তারা মরছে ও মারছে। কেন মরছে ও কেন মারছে কোনটাই তারা জানে না। দল জিতলে তারা হয়ত কিছু দুনিয়াবী সুবিধা পাবে। বিরোধী দল কিছুই পাবে না। বরং রাস্তা-ঘাটে বেঘোরে প্রাণ দিবে। তাদের নির্দোষ পরিবার আক্রান্ত হবে। যেল-যুলুম ভোগ করবে। এমনকি গুম-খুন বা নিখোঁজ হওয়াটাই তাদের ভাগ্যলিপি হয়ে থাকবে। ইতিপূর্বে ছিল অজ্ঞাত আসামী করে নিরীহ মানুষের নামে পুলিশের দেওয়া ‘গায়েবী মামলা’। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ৪ বছর আগে মারা যাওয়া, ৮ বা ১০ বছর আগে গুম হওয়া লোকদেরকে নিম্ন আদালতে কারাদন্ড দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বে যার কোন নযীর নেই’ (ইনকিলাব ২২.১১.২৩. ২য় পৃ.)। তাহ’লে দেশে কি কারু ভিন্নমতের সুযোগ থাকবে না? লাখো মানুষের রক্তে গড়া স্বাধীন বাংলাদেশের কি এটাই নিয়তি যে, কেউ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবে না? স্বাধীনভাবে তার চিন্তা অনুযায়ী কাজ করতে পারবে না? ভোট ও ভাতের অধিকারের কথা শুনছি কয়েক যুগ থেকে। কিন্তু আদৌ কি তা কখনো প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে? বরং ভোটকে সবাই এড়াতে চায়। কেননা কেউ কালার্ড হ’তে চায় না। তাছাড়া টাকার বিনিময়ে কিছু নিরীহ নারী-পুরুষকে ভোটকেন্দ্রে এনে লাইন করে একটা ফটো তুলতে পারলেই কেল্লা ফতে। এবারের নির্বাচনে বিদেশীদের দৌড়-ঝাঁপ খুব বেশী দেখা যাচ্ছে। তাদের এত দরদ কেন? জনগণের কল্যাণের জন্য, নাকি তাদের ভূ-রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ হাছিলের জন্য?

একদিন হরতালে দেশের গড়ে ৬ হাযার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। কথিত নেতারাই জনগণের এই ক্ষতি করছেন। আবার তারাই জনগণের ও জনকল্যাণের প্রতিভূ বলে নিজেদেরকে মনে করেন। তারা নিজেদেরকে জননেতা বলেন। অথচ তারা একা রাস্তায় বেরোলে সাধারণ জনগণ তাদের চিনবে কি না সন্দেহ। এমনকি একটি জাতীয় পত্রিকার মন্তব্য অনুযায়ী বিদেশকে হুমকিদাতা এমন অনেক ক্ষুদ্র জোট নেতা আছেন, যারা ইউনিয়ন কাউন্সিল ইলেকশনে মেম্বার পদে দাঁড়ালেও পাশ করবেন না। তারাই এখন দেশের নীতি নির্ধারক। এরাই শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘বানরবাদ’ চালু করেছে। বাচ্চাদের বানরের বংশধর বলে শিখতে বাধ্য করছে। আন্তর্জাতিক ইহূদী-নাছারা চক্র ও অমুসলিমদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে কাজ করাই যেন আমাদের নেতাদের প্রধান দায়িত্ব। অথচ দেশবাসী মুসলমান। তাদের নিকট অভ্রান্ত সত্যের উৎস পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ রয়েছে। যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণ বিধান মওজুদ রয়েছে। যা প্রতিষ্ঠা করাই মুসলিম নেতাদের কর্তব্য ছিল। আল্লাহর সার্বভৌমত্বের অধীনে আল্লাহভীরু জ্ঞানীদের পরামর্শ ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থাই মাত্র শান্তির পথ। যে ব্যক্তি ইসলামের দেখানো শান্তিপথের বাইরে অন্য কোন পথ তালাশ করবে, সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে (আলে ইমরান ৩/৮৫)। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বিগত ৫২ বছর ধরে আমরা কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই চলেছি। এর কি কোন শেষ নেই? নেতা হন দলের। সরকার হয় দেশের। কিন্তু এদেশে দল ও সরকার প্রধান একই ব্যক্তি। যারা এযাবৎ ছোট্ট দ্বীপ দেশ সিঙ্গাপুরের ন্যায় নিজ দেশে একটা উন্নতমানের হাসপাতালও গড়ে তুলতে পারেননি। তাই দেখা যায়, নেতাদের সর্দি লাগলেও ছোটেন সিঙ্গাপুরে সরকারী পয়সায়।

নেতাদের রক্তচক্ষু ও হম্বিতম্বি দেখে তরুণ প্রজন্ম রাজনীতি নিয়ে হতাশ। তারা এখন বিদেশে গিয়ে স্বস্তি লাভ করতে চায়। এটাই যদি হয় বাস্তবতা, তাহ’লে দেশ কি অবশেষে অক্ষম বৃদ্ধ-বৃদ্ধায় ভরে যাবে? নেতাদের অবশ্যই এ বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। রাস্তা কোন দলের নয়। এটি সবার। অথচ হরতাল-অবরোধের নামে সেখানে নির্বিঘ্নে মানুষ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। নিজেরা মানুষ হত্যা করে ও গাড়ী পুড়িয়ে পরদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনগণ হরতাল পালন করেছে বলে তাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়ার অন্যায় রীতি বন্ধ করুন। কর্মহীন ও ক্ষুধার্ত মানুষের প্রতি এগুলি তাচ্ছিল্য বৈ কিছুই নয়। অতএব আগে সিদ্ধান্ত নিন মানুষ কি মানুষের দাসত্ব করবে? না কি আল্লাহর দাসত্ব করবে? না, মানুষের স্বভাবধর্ম এটাই যে, সে সর্বদা আল্লাহর দাসত্ব করবে এবং তার দাসত্বের অধীনে সকল মানুষের সমানাধিকার কায়েমে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। অতএব মুসলমান হিসাবে আমাদের কাম্য হবে খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিধান সমূহ বাস্তবায়ন করা। এর বাইরে রাজনৈতিক হানাহানি ও সামাজিক অস্থিরতা বন্ধের কোন পথ খোলা নেই।

সমস্ত দল ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জীবনপাত করছে। অথচ গণতন্ত্রের ‘সোনার পাথর বাটি’ যে কি বস্ত্ত এবং এর দ্বারা তারা কোন গণতন্ত্র বুঝান, সেটা তারা বলেন না। আমেরিকার গণতন্ত্র? তা তো কেবল পুঁজিপতিদের নেতৃত্বের লড়াই। সে লড়াইয়ে সেদেশের ৯৯% সাধারণ মানুষ নিষ্পিষ্ট। ধর্ম ও বর্ণ বিদ্বেষ যেখানে প্রকাশ্য। সেখানকার ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ (কৃষ্ণাঙ্গরাও মানুষ) আন্দোলন তো অতি সাম্প্রতিক ঘটনা। ২০২০ সালের ২৫শে মে জর্জ ফ্লয়েড নামক ৪৬ বছরের এক কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানকে প্রকাশ্য দিনমানে রাস্তার উপর ফেলে তার গলায় হাঁটু দিয়ে সাড়ে ৯ মিনিট চেপে ধরে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ যে নিষ্ঠুর বর্ণ বিদ্বেষের পরিচয় দিয়েছে, বিশ্বে তার কোন নযীর নেই। অথচ খৃষ্টীয় ৭ম শতাব্দীতে কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাস বেলালকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পৃথিবীর সর্বাধিক সম্মানিত কা‘বাগৃহের ছাদের উপর দাঁড়িয়ে আযান দেওয়ার উচ্চ মর্যাদা দান করেছিলেন। তার মত অসংখ্য নির্যাতিত মানুষ ইসলামী সাম্যের অধীনে মানবতার সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হয়েছিল। যদি বলা হয় যুক্তরাজ্যের বা জাপানের গণতন্ত্র। তবে তা তো সাংবিধানিক রাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র। যদি বলা হয় চীনের গণতন্ত্র। তাহ’লে তো সেটি ১৪৪ কোটি জনসংখ্যার বিশাল দেশে কম্যুনিস্ট পার্টির এক দলীয় শাসনের দেশ। যা মাত্র ২৩০০ প্রতিনিধির ৭ সদস্য বিশিষ্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি কর্তৃক পরিচালিত। যা অবশেষে আজীবন প্রেসিডেন্ট পদে বরিত শি জিনপিং-এর একচ্ছত্র শাসনে শৃংখলিত। যেদেশের উইঘুর মুসলিমরা সর্বদা নির্যাতিত। যদি বলা হয় রাশিয়ার গণতন্ত্র। তাহ’লে সেটাও তো চীনের ন্যায় একদলীয় লৌহ শাসনে পিষ্ট। ১৯৯৭ সাল থেকে অদ্যাবধি ভ্লাদিমির পুতিন শীর্ষ পদে আছেন এবং চীনের প্রেসিডেন্টের ন্যায় বর্তমানে তিনিও আজীবন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে আছেন। যদি বলেন, ভারতের গণতন্ত্র। তবে তা তো একটি হিন্দুত্ববাদী সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী দেশ। যার প্রতিক্রিয়ায় সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তাদের পরাজয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মানুষ উল্লসিত। এক্ষণে প্রশ্ন, বাংলাদেশী নেতারা কোন গণতন্ত্র চান? ইসলামপন্থীরাও ক্ষমতার লোভে ছুটছেন গণতন্ত্রের পথে। অথচ এটি পুরা শিরকী তন্ত্র। যেখানে আল্লাহকে ছেড়ে মানুষ পূজা অবশ্যম্ভাবী। অতএব ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে নয়, দেশ ও জনগণের স্বার্থে রাজনীতি হওয়া উচিত। নিঃসন্দেহে জনগণের কল্যাণ নিহিত রয়েছে কেবলমাত্র ইসলামের খেলাফত ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েমের মধ্যে। যার কারণে ২য় খলীফা হযরত ওমর (রাঃ)-এর ১০ বছরের খেলাফতকালে যাকাত নেওয়ার মত কোন হকদার খুঁজে পাওয়া যেত না। বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশকে সে পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানাই। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন-আমীন! (স.স.)






আমরাও আল্লাহকে বলে দেব - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নির্বাচনী দ্বন্দ্ব নিরসনে আমাদের প্রস্তাব - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নববর্ষের সংস্কৃতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
চেতনার সংঘাত - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
উত্তরাঞ্চলকে বাঁচান! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
রামাযান ও বর্ষবরণ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
কসোভোয় মুসলিম নির্যাতন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
দর্শনীয় স্থানগুলি শিক্ষণীয় স্থান রূপে গড়ে তুলুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
যুলুমের পরিণতি ভয়াবহ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
স্বভাবধর্মের বিকাশ চাই! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পশুত্বের পতন হৌক! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
করোনা ভাইরাস - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.