প্রসঙ্গ : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

জনমতের ভিত্তিতে একটি সরকার হটিয়ে পরবর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পূর্বকালীন সরকারকে অন্তর্বর্তীকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলা হয়। কিন্তু অভ্যুত্থান হ’ল তার বিপরীত। এখানে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকারই সরকার। গত ৫ই আগস্ট সোমবার হাসিনা সরকারকে হটিয়ে এদেশে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে। অভ্যুত্থানকারীদের ইচ্ছায় প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাগণ ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগামী ২০২৫ সালে নির্বাচন হ’তে পারে। অতঃপর নিয়মিত সরকার আসবে। অর্থাৎ দেশ যে গর্তে ছিল সে গর্তেই ফিরে যাবে। ‘আয়নাঘর’ থেকে বেরিয়ে ‘হাওয়া ভবনে’ ঢুকবে। অতঃপর ফেলে আসা ‘অপারেশন ক্লীনহার্ট’, ক্রসফায়ার, গুম-খুন-অপহরণ, মিথ্যা মামলার অন্ধগলিতে ফিরে যেতে হবে দেশবাসীকে। তাহ’লে এটার জন্যই কি ৫ই আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘটেছিল? যাতে দুই হাযারের বেশী ছাত্র-জনতার জীবন গেল? অসংখ্য পিতা-মাতার বুক খালি হ’ল? কয়েক হাযার মানুষ বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে? চক্ষু হারিয়ে জীবনে বেঁচে থাকার আনন্দ হারিয়ে গেল? এটাই যদি হয় বাস্তবতা, তাহ’লে বাংলাদেশে আবারও একটি অভ্যুত্থান ঘটবে। যেখানে গণমানুষের আকাংখা পূরণ হবে। নিঃসন্দেহে তা কথিত গণতন্ত্রীদের ইসলাম হবে না। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ইসলাম হবে। যেখানে আল্লাহ হবেন সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস এবং কুরআন ও সুন্নাহ হবে ন্যায়-অন্যায়ের অভ্রান্ত মানদন্ড। যখন শিরক ও কুফরীর গাঢ় তমিশ্রা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে। সূদ-ঘুষের শোষণ, শোষক ও মওজূদদারদের অবাধ লুন্ঠন, গাছতলা ও পাঁচতলার ভেদাভেদ, সাদা ও কালোর বর্ণভেদ, সীমান্তে পাখির মত গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা এবং কাঁটাতারের বেড়া ও তার উপরে ফেলানী ও স্বর্ণাদের লাশ আর ঝুলবে না। অভিন্ন নদী গুলির উজানের ও ভাটির দেশ সমূহের সম অধিকার নিশ্চিত হবে।

বর্তমানে বিভিন্ন স্থাপনা থেকে শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম সমূহ মুছে ফেলার প্রতিযোগিতা চলছে। আমরা মনে করি সকল স্থাপনার নাম স্ব স্ব স্থান বা এলাকার নামে হওয়া উচিত। যেমন বঙ্গবন্ধু সেতুর বদলে যমুনা সেতু, লালন শাহ সেতুর বদলে পদ্মা সেতু-১ এবং বর্তমান পদ্মা সেতুর নাম পদ্মা সেতু-২, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট প্রভৃতি বিমান বন্দরসহ অন্যান্য স্থাপনার নাম স্ব স্ব স্থানের নামেই হওয়া উচিত।

ইতিমধ্যেই সরকারের ধীরে চলার নীতি স্পষ্ট হয়ে গেছে। শব্দ দূষণের জন্য প্রধান দায়ী গাড়ীর উচ্চ শব্দের হর্ণ বন্ধ করার মত ছোট্ট একটি কাজও সরকার গত আড়াই মাসে করতে পারেনি। যানজট দূর করতে পারেনি। পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে পারেনি। অথচ দক্ষিণ কোরিয়া মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যে সেদেশের পাচারকৃত অর্থের ৯০ শতাংশ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল। যদি কারাবন্দী ব্যবসায়ীদের উপরে পাচার করা অর্থ দ্রুত ফিরিয়ে আনার শর্তে তাদের মুক্তির বিষয়টি বিবেচনাধীন করা হয়, তাহ’লে সুফল আসতে পারে। কারণ ইতিমধ্যেই বাজারে ভোগ্যপণ্য ও ওষুধ-পত্রের মূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ঊর্ধ্বে চলে গেছে। মালিকের স্থলে বিভিন্ন কোম্পানীতে প্রশাসক বসিয়ে বরং হিতে বিপরীত হবে।

ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ। অথচ খাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলি। এর পরেও সরকার দুর্গাপূজা উপলক্ষে কলকাতায় ৩ হাযার টন ইলিশ উপহার পাঠিয়েছে। সেই সাথে চোরাচালানের রুট অবাধ রয়েছে। বিনা নোটিশে ফারাক্কা ও গজলডোবাসহ উজানের বাঁধ সমূহ খুলে দিয়ে অকস্মাৎ বিপুল পানির ঢল নামিয়ে রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা-চট্টগ্রাম ডুবিয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের সর্বাধিক দারিদ্রে্যর মধ্যে বসবাসকারী সর্বনিম্ন ৫টি দেশের মধ্যে ভারত হ’ল অন্যতম। তাদের কাছ থেকে আমাদের কিছুই পাওয়ার নেই যুলুম ছাড়া। ৭১-এর যুদ্ধের সময় দৌলতপুর বিএল সরকারী কলেজের ১৪ বছরের ইমাম ধরা পড়েছিলেন হিন্দু হিসাবে। অর্থাৎ উনি ছিলেন ভারতের চর। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত অস্থির শাসনামলে কাকডাঙ্গা মাদ্রাসায় ২য় শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় ইন্সপেক্টর ভিজিটে এসে আমাদের ক্লাসে জিজ্ঞেস করেন, বলো তো পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী কে? আমি বলেছিলাম, স্যার! সকালের মন্ত্রী না বিকালের মন্ত্রীর নাম বলব। উনি অত্যন্ত খুশী হয়ে শ্রেণীকক্ষে ঢুকে আমার পিঠ চাপড়িয়েছিলেন। এরপর ১৯৫৮ সাল থেকে একটানা ১০ বছর আইয়ুবের সামরিক শাসন চলে। তখন প্রবাদ ছিল গণতন্ত্রীদের উত্থান-পতন, আইয়ুবের সুশাসন ও মুজিবের ভাষণ’। পাকিস্তানের সময় যত উন্নতি হয়েছিল তা আইয়ুবের আমলেই হয়েছিল। আর স্বাধীন বাংলাদেশে যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে জিয়া ও এরশাদের সামরিক আমলেই হয়েছে। কারণ গণতন্ত্র এদেশে ঝগড়াতন্ত্র ও লুটপাটতন্ত্র হিসাবেই প্রমাণিত। নিঃসন্দেহে গণতন্ত্র ও জনমত এক নয়। 

গত ২৪শে সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে গলাগলি করে আসার পর থেকে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কর্মতৎপরতায় যেন ভাটা পড়েছে। বর্তমানে যে আমেরিকার মায়েরা পেটের দায়ে নিজের সন্তান বিক্রি করছে, তাদেরই প্রেসিডেন্ট টন কে টন বোমা ও মারণাস্ত্র পাঠাচ্ছে মে‘রাজধন্য পবিত্র ভূমি ফিলিস্তীন ও সিরিয়ার জনগণকে হত্যা করার জন্য। কে না জানে যে, আমেরিকা যার বন্ধু হয় তার অন্য কোন শত্রু লাগেনা’। প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের ভাষণে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদেরকে রাখাইনে তাদের স্বদেশে পুনর্বাসিত করার জন্য আহবান জানিয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে একথা বলা হচ্ছে। এখন করণীয় হ’ল, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করা। যেটা ইতিমধ্যে উপযাচক হয়ে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া করেছে। সরকার জনস্বার্থে আরেকটি আইন করতে পারেন, পুলিশ হৌক বা যেই হৌক মিথ্যা মামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা এবং অজ্ঞাত শত শত মানুষকে আসামী না করা। সাথে সাথে মামলা সমূহের দীর্ঘসূত্রিতা বন্ধ করা এবং অধিক সংখ্যক বেঞ্চ বসিয়ে মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি করা।

সেপ্টেম্বর’২৪-য়ে নিবন্ধিত ৩টি নতুন দলসহ মোট ৫৩টি রাজনৈতিক দলের অখ্যাত-বিখ্যাত নেতারা এখন পত্রিকাগুলির পাতায় বিবৃতিবাজীতে লিপ্ত। সবাই ক্ষমতায় আসার জন্য দিন-ক্ষণ গুণছেন। সেক্যুলার দলগুলির সাথে ইসলামী দলগুলিও এগিয়ে চলেছে সমান তালে। অথচ কে না জানে যে, যে ব্যক্তি দুনিয়ার জন্য দ্বীন করে, সে দ্বীন ও দুনিয়া দু’টিই হারায়’।

কে না জানে যে, দলীয় সরকার কখনই নির্দলীয় প্রশাসন উপহার দিতে পারে না। যদিনা তারা আল্লাহভীরু হয় এবং যেকোন মূল্যে নিরপেক্ষ ও সুবিচারক হয়। কিন্তু এদের বড় দলগুলির ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের ও নির্যাতিতদের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত করুণ! তাহ’লে প্রধান উপদেষ্টা কোন স্বার্থে এদের সাথে বৈঠক করে চলেছেন? এসব কারণে অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের প্রতি গণমানুষের যে বিপুল প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল, ইতিমধ্যে তা ফিকে হ’তে শুরু করেছে।

আমরা মনে করি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পিছনে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। অতএব তারা গণভোট নিলে খুব সহজে এদেশে ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে শান্তি ও সুশাসন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। যাতে জাতিসংঘের বৈঠকে গিয়ে পবিত্র কুরআন হাতে নিয়ে তিনি বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন, এটাই বাংলাদেশের সংবিধান এবং এটাই হৌক জাতিসংঘের সংবিধান। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন।-আমীন!






সত্যদর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
হে সন্ত্রাসী! আল্লাহকে ভয় কর - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
স্বভাবধর্মের বিকাশ চাই! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আল-কুরআনের আলোকে ক্বিয়ামত
হজ্জ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
হিংসা ও প্রতিহিংসা বন্ধ হৌক! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সংস্কারের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ব্যবসার নামে প্রতারণার ফাঁদ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
চরিত্রবান মানুষ কাম্য - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বাংলাদেশের সংবিধান হৌক ইসলাম - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নীরব ঘাতক মোবাইল টাওয়ার থেকে সাবধান! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.