কুরবানীর সুমহান আদর্শ নিয়ে ঈদুল আযহা সমাগত। উৎসর্গ ও সহিষ্ণুতার আহবানের মধ্যে দিয়ে পালিত হবে এই মহান ব্রত। দেওয়ার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করবে বিশ্ব মুসলিমকে। ত্যাগ এবং ভোগ উভয়ই জড়িয়ে আছে ঈদুল আযহার সাথে। ভোগের আনন্দ ক্ষণিক। কিন্তু ত্যাগের আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী ও মহিমান্বিত। ভোগের আনন্দ দুনিয়াতেই সীমিত। কিন্তু ত্যাগের আনন্দ দুনিয়া ও আখেরাতে পরিব্যপ্ত। ইসলাম ত্যাগ ও ভোগের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করেছে ও আল্লাহর জন্য ত্যাগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। ত্যাগ মানুষকে বিনয়ী, সহনশীল, সংযমী ও সর্বোপরি মানবতাবাদী হ’তে শিক্ষা দেয়। ঈদুল আযহা সেই মহান ত্যাগেরই এক অনন্য উৎসব। 

ঈদুল আযহার মূল শিক্ষা হ’ল মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠভাবে আনুগত্য প্রকাশ করা। বিত্তের মোহ, ভোগ-বিলাসের আকর্ষণ, সন্তানের স্নেহ, স্ত্রীর মহববত সবকিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহর প্রতি নিজেকে সমর্পণ করে দেওয়া।

বান্দা যখন সম্পূর্ণরূপে স্বীয় প্রভু আল্লাহর নিকটে নিজকে সমর্পণ করে দেয়, তখন আল্লাহ তার পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিবার ছিলেন এমনই এক আত্মনিবেদন ও আত্মসমর্পণের অনন্য প্রতীক।

আল্লাহর প্রতি ইবরাহীমের নিখাদ আনুগত্য আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। পিতার ছুরির নীচে কুরবানী হওয়ার জন্য পুত্র ইসমাঈলের আত্মসমর্পণ ও নির্ভেজাল আনুগত্য আমাদের ব্যাকুল করে। শিহরিত করে প্রত্যেক মুমিন বান্দাকে। একমাত্র সন্তান ইসমাঈল ও স্ত্রী হাজেরাকে মক্কার নির্জন উপত্যকায় আল্লাহর নিকটে সোপর্দ করে যখন বুকে পাষাণ বেঁধে ইবরাহীম ফিরে যাচ্ছেন, আর ব্যাকুলিত হাজেরা পিছু পিছু এগুচ্ছেন আর বলছেন, ওহে স্বামী! আপনি এ বিরান ভূমিতে আমাদের একাকী ফেলে যাচ্ছেন কেন? নির্বাক ইবরাহীমের অসহায় দৃষ্টি! জবাব না পেয়ে হাজেরা ঈমানী শক্তিতে বলে ওঠেন, তাহ’লে কি আল্লাহ আপনাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন? ইবরাহীম মাথা নাড়লেন, হ্যাঁ। তখন ঈমানী বলে বলিয়ান হয়ে হাজেরা বলে উঠেন ‘তাহ’লে আল্লাহ আমাদের ধ্বংস করবেন না’ (বুখারী হা/৩৩৬৪)

অতঃপর আল্লাহকে খুশী করার জন্য তাঁর হুকুম মোতাবেক সেই সন্তানকে নিজ হাতে যবেহ করার কঠিনতম পরীক্ষায় উত্তরণ ছিল আল্লাহর প্রতি অটুট আনুগত্য ও গভীর আল্লাহ প্রেমের এক তুলনাহীন দৃষ্টান্ত। পুত্রকে কুরবানী করে আল্লাহর আদেশই মান্য করেন ইবরাহীম। কিন্তু আল্লাহ কুরবানী চাননি, চেয়েছিলেন তার আনুগত্যের পরীক্ষা নিতে। আর সে কারণেই বেঁচে গেলেন ইসমাঈল। কুরবানী হ’ল দুম্বা। চালু হ’ল ঈদুল আযহা। আল্লাহর ভালোবাসার চেয়ে পুত্রের ভালোবাসা যে গৌণ, সেটাই প্রমাণ করেন ইবরাহীম। এর চাইতে আল্লাহ প্রেমের বড় উদাহরণ পৃথিবীতে আর আছে কি?

তৎকালীন পুঁতিগন্ধময় সমাজ ছিল শয়তানের আনুগত্যে পূর্ণ। শিরক আর অনৈতিকতায় সমাজ ভেসে চলছিল। এমনি সময় আল্লাহর প্রতি ইবরাহীমের অনন্য আনুগত্য ছিল এক বৈপ্লবিক ঈমানী জাগরণ। সে জাগরণ রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক নয়; বরং নৈতিক এবং আল্লাহর পথে নিবেদিত।

বর্তমানে আমরা এমন এক দৃশ্যপটে দাঁড়িয়ে আছি, যা নমরূদী সমাজ ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। দুর্নীতির পঙ্কে নিমজ্জিত আজ সমাজের প্রতিটি স্তর। ভোগ-বিলাসে মত্ত সবাই। মূল্যবোধ আজ তিরোহিত। ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে হানাহানি। দলে দলে সহিংসতা। নৈতিকতাহীন দলীয় রাজনীতির গরল স্রোতে ভেসে চলেছে সবাই। সুতরাং এ অধঃপতিত সমাজকে টেনে তোলার জন্য চাই আজ ইবরাহীমী তাক্বওয়াশীল নেতৃত্ব ও ইসমাঈলী আনুগত্যশীল একদল অকুতোভয় ঈমানদার যুবগোষ্ঠী। ইবরাহীমী ঈমান ও ইসমাঈলী ত্যাগের মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে। কুরবানীর পশুর গলায় ছুরি চালানোর আগে নিজের মধ্যে লুক্কায়িত পশুত্বের গলায় ছুরি চালাতে হবে। মানবিকতার উত্থান ঘটাতে হবে। আত্মত্যাগের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঈদুল আযহার এ শুভক্ষণে সত্যিকারের ঈমানদার ও আল্লাহভীরু এবং আপোষহীন সত্যসেবী হওয়ার জন্য আসুন আমরা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করি। আমরা যেন আমাদের ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইবরাহীমী ত্যাগের প্রতিফলন ঘটাতে পারি, আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দান করুন- আমীন!






বিষয়সমূহ: জুম‘আ ও ঈদ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আমরাও আল্লাহকে বলে দেব - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভালোবাসি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
স্বাধীনতার মাসে অধীনতার কসরৎ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শিক্ষার মান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
উপযেলা নির্বাচন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
এনআরসি : শতাব্দীর নিকৃষ্টতম আইন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
তাবলীগী ইজতেমা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
স্বভাবধর্মের বিকাশ চাই! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শান্তির ধর্ম ইসলাম - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পর্ণোগ্রাফী নিষিদ্ধ করুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.