আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে,  যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতকে কামনা করে এবং আল্লাহকে অধিকহারে স্মরণ করে’ (আহযাব ৩৩/২১)। নবুঅতী জীবনের ভিত্তি ছিল অহিয়ে মাতলু পবিত্র ‘কুরআন’ ও অহিয়ে গায়ের মাতলু ছহীহ ‘সুন্নাহ্’র উপরে। যাকে অস্বীকার করলে মানুষ ‘কাফের’ হয়ে যায় (আহযাব ৩৬)। কিন্তু রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে চক্রান্তে মেতে ওঠে এবং তারা এই দুই স্তম্ভকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টায় লিপ্ত হয়। তবে কুরআন সংক্ষিপ্ত ও অবিরত ধারায় বর্ণিত হওয়ায় এবং সকলের মুখস্থ থাকায় কুচক্রীরা কুরআনের ব্যাপারে নিরাশ হয়। অতঃপর তারা হাদীছের বিশাল ভান্ডারকে সন্দেহযুক্ত প্রমাণের অপচেষ্টায় মেতে ওঠে। ইহূদী-খৃষ্টান থেকে ধর্মান্তরিত নও-মুসলিমরাই মূলতঃ এইসব চক্রান্তের পিছনে নেতৃত্ব দেয়।

১ম খলীফা আবুবকর (রাঃ)-এর আড়াই বছরের খেলাফতকাল (১১-১৩ হি.) ব্যয়িত হয় মূলতঃ ইসলামের প্রতিরক্ষার কাজে। ‘মুরতাদ’ বা ধর্মত্যাগীদের ঢল ঠেকানো, যাকাত অস্বীকারকারীদের ও ভন্ডনবীদের ফেৎনা প্রতিরোধ করা, বিদেশী বৈরী শক্তির হামলা মুকাবিলা করা ইত্যাদি কাজে। ২য় খলীফা ওমর (রাঃ)-এর ১০ বছরের খেলাফতকালে (১৩-২৩ হি.) রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মুসলিম শক্তির বিজয়াভিযান এগিয়ে চলে। ৩য় খলীফা ওছমান (রাঃ)-এর ১২ বছরের খেলাফতকালের (২৩-৩৫ হি.) প্রথমার্ধ্ব ব্যাপী এই অভিযান অব্যাহত থাকে ও মুসলিম শক্তি তৎকালীন বিশ্বে একক বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। কিন্তু এরি মধ্যে কিছু বিলাসী ব্যক্তি দ্বীনকে দুনিয়া হাছিলের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে। ফলে তাঁর খেলাফতের শেষ দিকে ইয়ামনের জনৈকা নিগ্রো মাতার গর্ভজাত ইহূদী সন্তান আব্দুল্লাহ বিন সাবা বাহ্যিকভাবে মুসলমান হয় এবং স্বার্থান্ধ লোকদেরকে খেলাফতের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করতে থাকে। ফলে বিদ্রোহী ‘সাবাঈ’ দলের হাতে মহান খলীফা ওছমান (রাঃ) নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। পরবর্তীতে ৪র্থ খলীফা আলী (রাঃ) ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর মধ্যেকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে খারেজী ও শী‘আ দু’টি চরমপন্থী দলের উদ্ভব ঘটে এবং চরমপন্থী খারেজীদের হাতে আলী (রাঃ) শহীদ হন।

উপরোক্ত রাজনৈতিক বিভক্তির কারণে মুসলমানদের মধ্যে আক্বীদাগত বিভক্তি দেখা দেয়। বছরার মা‘বাদ জুহানী (মৃ. ৮০ হি.) তাক্বদীরকে অস্বীকার করে। ফলে তার অনুসারী ‘ক্বাদারিয়া’ দলের এবং তাদের বিপরীতে ‘জাবরিয়া’ বা অদৃষ্টবাদী দলের উদ্ভব হয়। জাহম বিন ছাফওয়ান সমরকন্দী (নিহত ১২৮ হি.) আল্লাহর গুণাবলীকে অস্বীকার করে। বছরায় ওয়াছিল বিন ‘আত্বা (৮০-১৩১ হি.) মু‘তাযিলা মতবাদের জন্ম দেয়। যারা তাদের যুক্তির বাইরের হাদীছ সমূহকে অস্বীকার করতে চায়। অন্যদের কেউ কেউ হাদীছের অপব্যাখ্যা ও দূরতম ব্যাখ্যা শুরু করে।

ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনে এযাম সর্বদা হাদীছের পাহারাদার হিসাবে দৃঢ় হিমাদ্রির ন্যায় ভূমিকা পালন করেন। হাদীছের নামে মিথ্যা বর্ণনা, হাদীছের অপব্যাখ্যা, দূরতম ব্যাখ্যা ইত্যাদি থেকে তাঁরা ছিলেন বহু যোজন দূরে। বরং এসব বিষয় ছিল তাঁদের স্বপ্নেরও বাইরে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করল, সে জাহান্নামে তার ঠিকানা করে নিল’ (বুখারী হা/৩৪৬১; মিশকাত হা/১৯৮)। এ কারণে ছাহাবী ও তাঁদের অনুসারীগণ জনগণের মধ্যে ‘আহলুল হাদীছ’ ‘আহলুস সুন্নাহ’ ইত্যাদি নামে পরিচিত হন। তাঁদের বিরোধীরা ‘আহলুল বিদ‘আ’ তথা বিদ‘আতী নামে অভিহিত হয় (মুক্বাদ্দামা মুসলিম ১৫ পৃ.)

ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে বছরায় গভর্ণর থাকাকালে একদিন হযরত ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে হাদীছ শুনাচ্ছিলেন। তখন একজন এসে বলল, ‘হে আবু নুজায়েদ! আপনি আমাদের কুরআন শুনান!’ তখন গভর্ণর তাকে বললেন, তোমরা কি ছালাত আদায় করোনা? তোমরা কি যাকাত আদায় করোনা? তাহ’লে তা কার দেওয়া পদ্ধতিতে আদায় করো? লোকটি বলল, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে এসব বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। অতঃপর লোকটি নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলল ‘আপনি আমাকে (জাহান্নাম থেকে) বাঁচিয়েছেন। আল্লাহ আপনাকেও বাঁচান!’ (মুস্তাদরাকে হাকেম হা/৩৭২)। তবে এই ধরনের প্রশ্ন সেসময় সমাজে ব্যাপকতা লাভ করেনি।

হাদীছ বিরোধীদের কেউ  হাদীছ ছেড়ে কেবলমাত্র কুরআনের অনুসারী বা ‘আহলে কুরআন’ হওয়ার দাবী করেন। কেউ পুরো হাদীছ শাস্ত্রে ‘সন্দেহবাদ’ আরোপ করেন। কেউ শুধুমাত্র ‘খবরে ওয়াহেদ’ পর্যায়ের হাদীছ সমূহে সন্দেহ সৃষ্টি করেছেন। ভারতে এই আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন স্যার সৈয়দ আহমাদ খান (১৮১৭-১৮৯৮ খৃ.) ও তাঁর অনুসারীবৃন্দ। মিসরে এই আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন মুফতী মুহাম্মাদ আব্দুহু (১৮৪৯-১৯০৫ খৃ.) ও তাঁর অনুসারীবৃন্দ। পাশ্চাত্যে এই আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন হাঙ্গেরীয় গবেষক গোল্ডযিহের (১৮৫০-১৯২১ খৃ.)। যিনি হাদীছের ‘মতনে’র সমালোচনায় লিপ্ত ছিলেন। অন্যজন ছিলেন বৃটিশ-জার্মান গবেষক জোসেফ শাখত (১৯০২-১৯৬৯ খৃ.)। যিনি হাদীছের ‘সনদে’র ব্যাপারে সন্দেহবাদ আরোপ করেছেন।

উপরোক্ত হাদীছ বিরোধী দল সমূহের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে উপমহাদেশের ‘আহলেহাদীছ’ সংগঠনগুলি তাঁদের লিখিত বই ও পত্রিকা সমূহের মাধ্যমে জোরালো ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে তাদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আমরা শুরু থেকেই প্রয়াস চালিয়েছি। যাতে আধুনিক যুব সমাজ কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক স্বচ্ছ ইসলাম থেকে দূরে সরে না যায়। বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই চক্রান্ত এদেশে গতি লাভ করতে যাচ্ছে। তাই আমরা এদের অপপ্রচার থেকে ঈমানদারগণকে সাবধান করছি। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন! (স. স.) 






শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার উপায় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
রামাযান ও বর্ষবরণ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মালালা ও নাবীলা : ইতিহাসের দু’টি ভিন্ন চিত্র - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
গাযায় গণহত্যা ইহূদীবাদীদের পতনঘণ্টা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বন্যায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
প্রশ্ন ফাঁস - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অহি-র আলোয় উদ্ভাসিত হৌক তারুণ্য - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
স্কুল-মাদ্রাসা থেকে প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা কোর্স বাতিল করুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভাল আছি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বিদায় হজ্জের ভাষণ : গুরুত্ব ও তাৎপর্য - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মানবতা ভাসছে নাফ নদীতে! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
হকিং-এর পরকাল তত্তব - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.