প্রতিবেশী ভারত গত ১১ ও ১৩ই মে’৯৮ যথাক্রমে ২+৩= ৫টি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে। এই বোমাগুলির সম্মিলিত ধ্বংসকারী ক্ষমতা ছিল ৫৬ কিলোটন টিএনটি (১ কিলোটন= ১০,০০০ টন টিএনটি´৫৬= ৫ লাখ ৬০ হাযার টন টিএনটি)। যা ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় ২য় মহাযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর নিক্ষিপ্ত আণবিক বোমার চেয়ে তিনগুণ বেশী ক্ষমতাসম্পন্ন। একই সাথে ভারত গর্বের সাথে ঘোষণা করেছে যে, সে মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরীর কাজ সম্পন্ন করেছে, যা পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম। ‘অগ্নি’ নামক এই ক্ষেপণাস্ত্র ১৫০০ কিঃ মিঃ (৯৩০ মাইল) দূরবর্তী স্থানে বোমা বহন করে নিয়ে যেতে সক্ষম। এছাড়াও নতুন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় এসেই ‘অগ্নি’-র আরো একটি উন্নত পদ্ধতি অনুমোদন করেছে, যার পাল্লা হবে ২৫০০ কিঃ মিঃ (১৫৫০ মাইল)। ভারতের এই পারমাণবিক প্রকল্পের যিনি রূপকার, তিনি হ’লেন প্রধানমন্ত্রীর প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা এককালে পত্রিকার হকার জনাব এ.পি.জে. আব্দুল কালাম (৬৬)। তিনি নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করেন। তিনি চিরকুমার, নিরামিষভোজী ও অত্যন্ত মিতব্যয়ী জীবন যাপন করেন এবং মাত্র দু’কক্ষ বিশিষ্ট একটি বাড়ীতে বসবাস করেন। ওদিকে পাকিস্তানী পারমাণবিক প্রকল্পের রূপকার হ’লেন ড. আব্দুল কাদির খান।

প্রশ্ন হ’ল ভারতের মত একটি উন্নয়নশীল দেশ হঠাৎ পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হবার দুঃস্বপ্নে বিভোর হ’ল কেন? যে নাগরিকদের পেটে ভাত নেই, পরনে কাপড় নেই, শিক্ষার হার বহু নিম্নে, তাদের এমন কি হ’ল যে পারমাণবিক বোমার অধিকারী হ’তেই হবে? বিশ্বের পরাশক্তিগুলি যখন তাদের স্ব স্ব পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডার ধ্বংস করছে, তখন ভারতের এত সাধ হ’ল কেন? তাদের তো নিশ্চয়ই জানা আছে যে, তাদের প্রধান মুরববী রাশিয়ার ভান্ডারে অস্ত্রের ডিপো থাকা সত্ত্বেও কোন ফায়েদা হয়নি। এক কালের দোর্দন্ড প্রতাপ পরাশক্তি সোভিয়েত রাশিয়া এখন ভেঙ্গে খান খান হয়ে পৃথক পৃথক ১৫টি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। পুরানো অস্ত্রের ভান্ডার সে এখন বেঁচে দিয়ে খাদ্য জোগাড়ে ব্যস্ত রয়েছে। পুরানো অস্ত্রের খরিদ্দারও সে পাচ্ছে না। পারমাণবিক বোমার অধিকারী যেই-ই হৌক না কেন, বোমা ফাটানো তার দ্বারা কখনোই সম্ভব হবে না বলে এক প্রকার ধরে নেওয়া যায়। কেননা ভারত বোমা মারবে পাকিস্তানে বা চীনে। হাযার বা দেড় হাযার মাইল দূরে যেখানেই সে বোমা মারুক না কেন, তার ধ্বংসকারিতা শুধু ঐখানেই কেন্দ্রীভূত থাকবে না; বরং তেজস্ক্রিয়তা ও বায়ু দূষণের মাধ্যমে তা উল্টা ভারত ও অন্যদেরকেও গ্রাস করবে। লাখ লাখ মানুষ বছরের পর বছর ধরে মরবে, পঙ্গু হবে, রোগে-শোকে শেষ হ’তে থাকবে। যেমন জাপানের নাগাসাকি-হিরোশিমার আণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তা আজও চলছে। গত ৫৩ বছর ধরে আজও সেখানে ঘাস পর্যন্ত জন্মেনি। আজও প্রতি বছর হাযার হাযার লোক ঐ বোমা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। যারা বোমা মেরেছিল ও যাদেরকে মেরেছিল, কেউ আজ বেঁচে নেই। কিন্তু মরছে নিরীহ নির্দোষ মানুষ, যারা সে সম্পর্কে কিছুই জানেনা। এসব ইতিহাস নিশ্চয়ই ভারত সরকারের জানা আছে। রাশিয়ার চেরনবিল ও ভারতের ভূপালের পারমাণবিক দুর্ঘটনার খবর সবারই জানা আছে। জানা আছে পাকিস্তান সরকারের। তবু যদি ভারতের বোমা বিস্ফোরণের জওয়াবে পাকিস্তান বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়, তবে সেও আরেকটি ভুল করবে। কেননা বোমা ফাটানোর মধ্যে জনগণের কোন কল্যাণ নেই। বরং ভবিষ্যৎ অসংখ্য অজানা ক্ষতি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে।

এক্ষণে ভারতের এই পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটানোর মূল কারণ কি? কারণ একাধিক হ’তে পারে। যেমন- (১) দুনিয়াকে জানানো যে আমরা আজ থেকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। (২) হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের খুশী করা ও দেশের মধ্যকার স্বাধীনতাকামী শক্তিগুলিকে ভয় দেখানো এবং প্রতিবেশী পাকিস্তান, চীন, বাংলাদেশ প্রভৃতি রাষ্ট্রগুলিকে স্নায়বিক চাপের সম্মুখীন করা। (৩) ভগ্নপ্রায় কোয়ালিশন পরিচালনায় নিজেদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ঢাকা দেওয়া এবং দেশের পর্বত প্রমাণ সমস্যাবলী থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে দিয়ে উগ্র স্বাদেশিকতাবাদ জাগিয়ে তোলার আত্মঘাতী রাজনৈতিক মতলব হাছিল করা। আত্মঘাতী এজন্য বলছি যে, ভারত ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক অবরোধের শিকার হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে অর্থনৈতিকভাবে সে পঙ্গু হয়ে পড়বে। ভিক্ষুকের ঝুলি নিয়ে তাকে বিশ্ব দরবারে দৌঁড়াতে হবে। ক্ষুধার্ত ও ক্রুদ্ধ জনতার চাপে ধার্মিকের মুখোশধারী বিজেপি সরকার যেকোন সময় ক্ষমতা থেকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।

ইহূদী-নাছারা ও মুশরিক মুসলিম উম্মাহর স্থায়ী শত্রু। ইতিমধ্যে তারা ইরাককে পঙ্গু করে ইস্রাঈলকে শক্তিশালী করছে। এখন তাদের টার্গেট পাকিস্তান। অতএব পাকিস্তানকে সংযম প্রদর্শন করে ওআইসি ভুক্ত মুসলিম দেশগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি পারমাণবিক শক্তিধর ইসলামী শক্তিবলয় সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কাজ করা উচিত। ভারতের বিরুদ্ধে বাফার স্টেট হিসাবে চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করে যাবে। এটা একটা বাড়তি লাভ। ইসলামী বোমা যে পাকিস্তানের কাছে প্রস্ত্তত রয়েছে- এটা এক প্রকার Open secret যা সবাই জানেন। অতএব ফাটিয়ে শক্তি ক্ষয় করে লাভ কি? বরং প্রতিপক্ষকে ভীত রাখাই ভাল।

সম্পাদকীয় লেখা শেষ না হ’তেই হঠাৎ শোনা গেল পাকিস্তান আজকে ২৮.০৫.৯৮ ইং বিকাল সাড়ে ৩-টায় বেলুচিস্তানের চাগাই পার্বত্য এলাকার ভূগর্ভে ভারতের জবাবে একই সাথে পরপর পাঁচটি পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। পাকিস্তান এর মাধ্যমে বিশ্বের ৭ম ও মুসলিম বিশ্বের ১ম পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হ’ল। ইহূদী-খ্রিষ্টান ও হিন্দু বোমার পাশাপাশি প্রথম ইসলামী পারমাণবিক বোমার অধিকারী পাকিস্তানকে তাই ধন্যবাদ জানাবো না দুঃখ প্রকাশ করব তাই ভাবছি। আল্লাহ সকলকে রক্ষা করুন- আমীন!






নৃশংসতার প্রাদুর্ভাব : কারণ ও প্রতিকার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
কারা সংস্কারে আমাদের প্রস্তাব সমূহ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
২০২৩ সালের সিলেবাস - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
কাশ্মীর ট্রাজেডী - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পর্দা নারীর অঙ্গভূষণ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ছিয়াম দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মাহে রামাযান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
জেরুযালেম দখলে ট্রাম্প - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শেষ হ’ল পালাবদল - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মালালা ও নাবীলা : ইতিহাসের দু’টি ভিন্ন চিত্র - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অস্ত্র ব্যবসা বনাম মানবিক কূটনীতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.