(এপ্রিল ২০২৪-এর পর)

প্রশ্ন-৩ : জামা‘আত নিয়ে অনেকের মধ্যে সংশয়ের কারণ কী?

উত্তর : জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার পিছনে একটা বড় কারণ হ’ল, সমালোচকের ব্যক্তিগত দুর্বলতা। যেমন- স্বভাবজাত অন্তর্মুখিতা, আত্মকেন্দ্রিকতা, অসামাজিকতা, স্বেচ্ছাচারিতা, জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত থাকার ইচ্ছা, উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়া, উপযুক্ত সংগঠন না পাওয়া, পারিবারিক বাধা, দায়িত্বহীনতা, স্বার্থপরতা, সংকীর্ণতা, নিফাকী, ঈমানী দুর্বলতা প্রভৃতি। তারা নিজেদের ব্যক্তিগত দুর্বলতা ঢাকতে সাংগঠনিক ব্যবস্থা বা জামা‘আত নিয়ে সংশয়ের জাল বিস্তার করেন। এছাড়া আধুনিক যুগের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ও পশ্চিমা ভোগবাদী দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেকে ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ বিধানকে অস্বীকার করে। এসব শয়তানী ধোঁকা বা প্রতারণার ফাঁদ ছাড়া আর কিছু নয়।

এছাড়া নেতৃত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে অজ্ঞতা জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার অন্যতম কারণ। মুসলিম সমাজ থেকে ইসলামী খেলাফত বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে নতজানুতা ও গোলামীর মানসিকতা তাদেরকে এতটাই আচ্ছন্ন করেছে যে, সমাজে ইসলামী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার স্বপ্নও হৃদয় থেকে উবে গেছে। ফলে নেতৃত্ব দেয়ার সক্ষমতা যেমন তারা হারিয়েছে, তেমনি কোন যোগ্য নেতৃত্বের অধীনে থাকার মত দায়িত্ব ও শৃংখলাবোধও হারিয়েছে। অথচ নেতা ছাড়া কোন কাজই হয় না, কোন সমাজই চলতে পারে না। আর আনুগত্যহীন কোন নেতৃত্ব চলে না। সুতরাং ইসলামী সমাজ গড়তে হ’লে জামা‘আতবদ্ধ জীবনের কোন বিকল্প নেই। দাওয়াতী ময়দানে সফলতা পাওয়া কিংবা কোন সভ্যতাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা সংঘবদ্ধ প্রয়াস ছাড়া কখনই সম্ভব নয়।

প্রশ্ন-৪ : সংগঠনগুলো কি সমাজে অনৈক্য সৃষ্টি করছে?

উত্তর : প্রায়শঃই সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর মধ্যে অনৈক্য দেখা দেয়। তবে সে অনৈক্যের জন্য সংগঠন দায়ী নয়, বরং ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি দায়ী, যারা নিজেরা ব্যক্তিস্বার্থে দ্বন্দ্ব বা অনৈক্য সৃষ্টি করে। সংগঠন তো কেবল একটি প্রতিষ্ঠান এবং সুশৃংখল ব্যবস্থাপনার অংশ মাত্র। প্রতিটি সংস্থা, মাদ্রাসা সবই মূলত এক একটি সংগঠন। এক্ষেত্রে দায়ী হবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলগণ, কোন সংস্থা, সংগঠন বা মাদ্রাসা নয়। যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ-বিবাদের জন্য তারা নিজেরা দায়ী; এজন্য বিবাহ ব্যবস্থাকে দায়ী করা যায় না। আবার মসজিদ-মাদ্রাসার পারস্পরিক দ্বন্দ্বের জন্য কমিটি দায়ী, মসজিদ-মাদ্রাসা নয়। একই ভাবে আমরা দেখি সমাজে একজন আলেম অপর আলেমের প্রতি হিংসা বা বিদ্বেষ পোষণ করেন, তার অর্থ কি এই যে, দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করা নিষিদ্ধ করতে হবে! আলেম হওয়ার কেন্দ্রসমূহ তথা মাদ্রাসাগুলোকে বন্ধ করতে হবে! কখনই নয়। কারণ এজন্য জ্ঞানার্জন দায়ী নয়, মাদ্রাসাও দায়ী নয়; দায়ী হ’ল হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি নিজেই।[1]

প্রশ্ন- : সংগঠন মানে কি সংকীর্ণতা নয়?

উত্তর : সংগঠন সংকীর্ণতা তৈরী করে না, বরং সংকীর্ণমনা ব্যক্তিরাই সংকীর্ণতা সৃষ্টির জন্য দায়ী। সেই ব্যক্তির সংকীর্ণতার দায় সংগঠনের উপর চাপিয়ে দিয়ে যারা সুযোগ খোঁজে, তারা নিছক সুবিধাবাদী কিংবা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত। কেননা এই ধরনের সংকীর্ণতা কেবল সংগঠনে কেন; ব্যক্তি, সংস্থা, মাদ্রাসা সব জায়গায় হ’তে পারে। অথচ অন্ধভাবে শুধু সংগঠনের মধ্যে দোষ খোঁজা এবং সংকীর্ণতার জন্য সংগঠনকে দায়ী করা নিছক ভাওতাবাজি এবং দূরভিসন্ধিমূলক। নতুবা নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, এক মাদ্রাসয সাথে অপর মাদ্রাসার অসুস্থ প্রতিযোগিতাকে তারা কিভাবে ব্যাখ্যা করেন? সেজন্য তারা কাকে দায়ী করবেন?

প্রশ্ন-৬ : জামা‘আত বলতে কি রাষ্ট্রকে বুঝায় কিংবা জামা‘আত কি কেবল রাষ্ট্রের সাথে খাছ?

উত্তর : না। কারণ রাষ্ট্র একটি ব্যাপকতর বিষয়, যা ক্ষমতার সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট। আর যদি জামা‘আতবদ্ধ থাকার নির্দেশটি কেবল রাষ্ট্রের সাথে খাছ হ’ত, তবে নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালানো প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরযে আইন হ’ত, যা কিনা ইসলামী নীতিবিরুদ্ধ।

যারা এই চিন্তাধারার অধিকারী তারা মনে করেন যে, খেলাফত ছাড়া নেতৃত্বই নেই। রাষ্ট্র ব্যতীত কোন সংগঠন বা জামা‘আত গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ তারা ভাল করেই জানেন যেন, সবসময় সারা দুনিয়ায় সব স্থানে ইসলামী খেলাফত বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকবে কিংবা সারাবিশ্বে একক খেলাফত থাকবে-এটা অসম্ভব ও অবাস্তব চিন্তা। কিন্তু সর্বাবস্থায় যে ইসলামী জীবন পরিচালনার লক্ষ্যে সংঘবদ্ধ থাকতে হবে-এটাই ইসলামের দাবী। ফলে বৃহত্তর জামা‘আত হিসাবে রাষ্ট্র যেমন জামা‘আত (জামা‘আতে আম্মাহ), তেমনি বিশেষ জামা‘আত হিসাবে ইসলামী সংগঠনও জামা‘আত (জামা‘আতে খাছ্ছাহ)। উভয় জামা‘আতই সমান গুরুত্বের দাবীদার। পার্থক্য এটুকু যে, বৃহত্তর জামা‘আত একটাই হয় এবং বিশেষ জামা‘আত একাধিক হয়। বৃহত্তর জামা‘আতের আনুগত্য সবার জন্য। বিশেষ জামা‘আতের আনুগত্য বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য।[2]

আর জামা‘আতকে রাষ্ট্রের সাথে খাছ করার একটি বিপদ হ’ল এই যে, তখন জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করা আমাদের প্রত্যেকের জন্য ফরয দায়িত্ব হয়ে যাবে, যেমনটি ইখওয়ানী ও খারেজীরা ধারণা করে। অথচ এই আক্বীদা সঠিক নয়।

প্রশ্ন- : একটি রাষ্ট্রে প্রচলিত সাংগঠনিক জামা‘আত গঠন করতে গেলে কি সেই রাষ্ট্রকে কাফির ঘোষণা করতে হবে?

উত্তর : এটা ভ্রান্ত চিন্তা। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, বিশেষ জামা‘আত (জামা‘আতে খাছ্ছাহ) রাষ্ট্রীয় জামা‘আত (জামা‘আতে আম্মাহ)-এর সাথে সাংঘর্ষিক নয়। রাষ্ট্রীয় জামা‘আত (জামা‘আতে আম্মাহ)-এর উপস্থিতিতেও বিশেষ জামা‘আত (জামা‘আতে খাছ্ছাহ) থাকতে পারে। তাছাড়া বর্তমানে যে কোন মুসলিম বা সেক্যুলার দেশে জামা‘আত গঠন করা বা সংগঠন করা বৈধ। সুতরাং বিশেষ জামা‘আত (জামা‘আতে খাছ্ছাহ)-এর বৈধতার জন্য সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে কাফির ঘোষণার কোন প্রয়োজন নেই।

প্রশ্ন-৮ :  হদ কায়েম করতে না পারলে, জিহাদ ঘোষণা করতে না পারলে সেটা কি জামা‘আত হয়?

উত্তর : অনেকে তাচ্ছিল্য করে বলে, যে ব্যভিচারীকে পাথর মারতে পারেন না এবং চোরের হাত কাটতে পারেন না, জিহাদের ঘোষণা দিতে পারেন না, তিনি আমীর বা ইমাম হন কিভাবে! এর উত্তর হ’ল, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ১৩ বছর মক্কায় ছিলেন। অবশেষে তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়। তিনি সেদিনগুলোতে অনেক দুর্বল অবস্থায় ছিলেন। অবস্থা অত্যন্ত নাযুক ছিল। হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ যার ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, إِنِّيْ جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا ‘আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করব’ (বাক্বারাহ ২/১২৪)। অবশেষে তিনিও জন্মভূমিকে বিদায় জানান (ছাফ্ফাত ৩৭/৯৯)। হযরত লূত (আঃ)-এর নিকটে যখন তাঁর বদমাশ সম্প্রদায় শয়তানী করার জন্য আসে, সে সময় তাঁর বাড়ীতে ফেরেশতারা মেহমান ছিলেন। লূত (আঃ) তখন আফসোস করে বলেন, لَوْ أَنَّ لِي بِكُمْ قُوَّةً أَوْ آوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ ‘হায়! যদি তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোন শক্তি থাকত অথবা আমি যদি কোন দৃঢ় স্তম্ভের আশ্রয় পেতাম!’ (হূদ ১১/৮০)। একইভাবে নূহ (আঃ)ও নিজের দুর্বলতা স্বীকার করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, فَدَعَا رَبَّهُ أَنِّي مَغْلُوبٌ فَانْتَصِرْ ‘অতঃপর সে তার পালনকর্তাকে আহবান করল, হে প্রভু! আমি পরাজিত। অতএব তুমি ওদের থেকে প্রতিশোধ নাও’ (ক্বামার ৫৪/১০)। উপরোক্ত ঘটনাসমূহ থেকে স্পষ্ট যে, অধিকাংশ নবীই শত্রুদের মুকাবিলায় দুর্বল ছিলেন। তারা ঈমানদারদেরকে বিজয়ী শক্তি হিসাবে পাননি। তাহ’লে কি তাঁরা তখন মুমিনদের ইমাম বা নেতা ছিলেন না? তাদের দলভুক্ত ঈমানদাররা কি জামা‘আতবদ্ধ ছিল না! মাক্কী জীবনে রাসূল (ছাঃ) কি আমীর ছিলেন না! ছাহাবীরা তখন জামা‘আতহীন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল! আল-ইয়াযু বিল্লাহ। এভাবেই শয়তান মানুষকে ভ্রান্ত যুক্তি দিয়ে পথভ্রষ্ট করে!

প্রশ্ন-৯ : বর্তমানে কোন সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করা কি অপরিহার্য?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) খুব স্পষ্টভাবে এবং জোর তাকীদের সাথে মুসলিম উম্মাহকে জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু জামা‘আত বলতে যদি শুধু রাষ্ট্রই বুঝায়, তবে কি এই হুকুম কেবলমাত্র খুলাফায়ে রাশেদীনের আমল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল? কেননা খুলাফায়ে রাশেদীনের পর প্রকৃত ইসলামী খিলাফত বিদায় গ্রহণ করেছে এবং ১৯২৪ সাল থেকে নামমাত্র খিলাফতের যা বাকী ছিল, তাও পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে। আর সেই সাথে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর প্রায় সবগুলোই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তাহ’লে এই পরিস্থিতিতে সমাজে দাওয়াত ও জিহাদের গুরুদায়িত্ব কিভাবে পালিত হবে? তেমনিভাবে অমুসলিম রাষ্ট্রের মুসলিম বাসিন্দারা কিভাবে ইসলামী জীবন যাপন করবে? এমতাবস্থায় একাকী দাওয়াত ও জিহাদের দায়িত্ব পালন করা কি সম্ভব? আদৌ নয়। এজন্য যে কোন বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তি অনুধাবন করবেন যে, জামা‘আতবদ্ধ জীবন ছাড়া বিকল্প কোন পন্থায় প্রকৃত ইসলামী জীবন যাপন সম্ভব নয়। আর জামা‘আতবদ্ধ জীবন অর্থই হ’ল সেখানে নেতৃত্ব ও আনুগত্য থাকা। কেননা আনুগত্য ব্যতীত কোন ইমারত বা জামা‘আত গঠিত হ’তে পারে না। যেকোন সংগঠনেই নেতাকে অনুসরণ ও তার নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়, কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও তার নিয়ম-নীতির অনুসরণ করতে হয়, অথচ ইসলামী জীবনযাপনে কারু আনুগত্যের বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে হবে না, এ কথা কি গ্রহণযোগ্য হ’তে পারে? ওমর (রাঃ) এজন্য দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, ইসলাম হয় না জামা‘আত ছাড়া, জামা‘আত হয় না ইমারত ছাড়া এবং ইমারত হয় না আনুগত্য ছাড়া।[3]

সুতরাং একক নেতৃত্ব ও একক রাষ্ট্রব্যবস্থা না থাকার এই যুগে আমাদের জন্য সাংগঠনিকভাবে জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনই বিকল্প ব্যবস্থা। এজন্য শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বিভিন্ন দেশের পৃথক পৃথক নেতৃত্ব ও তার আনুগত্যের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করেননি। তিনি তাঁর এক বক্তব্যে বলেন, إنه لا إمام للمسلمين اليوم، فلا بيعة لأحد!!- نسأل الله العافية- ولا أدري أيريد هؤلاء أن تكون الأمور فوضى ليس للناس قائد يقودهم؟ أم يريدون أن يقال: كل إنسان أمير نفسه؟ ‘অনেকে মনে করেন যে, বর্তমান যুগে মুসলমানদের কোন নেতা নেই, অতএব কারো কাছে বায়‘আতও নেই। আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাই। জানি না তারা আসলে কী চায়। তারা কি চায় যে, কোন নেতৃত্ব না থেকে সমাজটা বিশৃংখলায় ভরে যাক! তারা কি চায় যে এটা বলা হোক, প্রত্যেক মানুষ হোক নিজেই নিজের নেতা!’ অতঃপর তিনি বলেন, لأن عمل المسلمين منذ أزمنة متطاولة على أن من استولى على ناحية من النواحي، وصار له الكلمة العليا فيها، فهو إمام فيها ‘দীর্ঘদিন ধরে মুসলমানদের এই অবস্থা বিরাজমান যে, কোন এক স্থানে যদি কেউ কোনভাবে নেতৃত্বের অধিকারী হয় এবং তার কথা সমাজে কার্যকর হয়, তবে তিনিই সেই সমাজের নেতা হন’।[4] তিনি এর সপক্ষে শায়খ বিন বাযের একটি উক্তি নকল করেছেন,إن هذا لا يمكن الآن تحقيقه، وهذا هو الواقع الآن، فالبلاد التي في ناحية واحدة تجدهم يجعلون انتخابات ويحصل صراع على السلطة ورشاوى وبيع للذمم إلى غير ذلك، فإذا كان أهل البلد الواحد لا يستطيعون أن يولوا عليهم واحداً إلا بمثل هذه الانتخابات المزيفة فكيف بالمسلمين عموماً؟!! هذا لا يمكن ‘আজকের যুগে একক রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্ভব নয়, এটাই বাস্তবতা। তুমি দেখবে বিভিন্ন দেশে নির্বাচন হচ্ছে, ক্ষমতার লড়াই চলছে, সেখানে ঘুষের লেনদেন, ভোট ক্রয়-বিক্রয় চলছে। যেখানে একটি দেশের জনগণই এই বানোয়াট নির্বাচন ছাড়া তাদের নেতা নির্বাচন করতে পারছে না, সেখানে সমগ্র মুসলিমদের নেতা কিভাবে নির্বাচন করবে! এটা সম্ভব না।[5]

প্রশ্ন-১০. বায়‘আত কী? ইসলামী সমাজ জীবনে বায়‘আতে গুরুত্ব কী?

উত্তর : বায়‘আত অর্থ অঙ্গীকার। দুনিয়াবী সমাজ ব্যবস্থায় পরস্পরের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টির জন্য শপথ ও অঙ্গীকার একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুসলিম-অমুসলিম সব সমাজেই এটি রয়েছে। এমনকি মক্কার জাহেলী সমাজেও এটা চালু ছিল। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ভিন্নতা এবং কার্যের ধরন অনুযায়ী অঙ্গীকারের ধরন ও ভাষা পরিবর্তিত হয়। ইসলামের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নেতৃত্ব ও আনুগত্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই ইসলামী জীবন ও সমাজ গঠনের লক্ষ্যে নেতা ও কর্মীর মধ্যে আনুগত্যের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করতে হয়। ইসলামী পরিভাষায় যাকে বায়‘আত বলা হয়’।[6]

ঐতিহাসিক ইবনে খালদূন বলেন,أَنَّ اَلْبَيْعَةَ هِيَ اَلْعَهْدُ عَلَى اَلطَّاعَةِ كَأَنَّ اَلْمُبَايِعَ يُعَاهِدُ أَمِيرَهُ عَلَى أَنَّهُ يُسَلِّمُ لَهُ اَلنَّظَرَ فِي أَمْرِ نَفْسِهِ وَأُمُوْرِ الْمُسْلِمِيْنَ لَا يُنَازِعُهُ فِي شَيْءِ مِنْ ذَلِكَ، وَيُطِيْعُهُ فِيْمَا يُكَلِّفُهُ بِهِ مِنَ الْأَمْرِ عَلَى الْمَنْشَطِ وَالْمَكْرَهِ ‘আনুগত্যের অঙ্গীকারকে বায়‘আত বলা হয়। যেন বায়‘আতকারী তার আমীর বা নেতৃত্বের সাথে এমনভাবে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে যে, তিনি তার ও মুসলিমদের বিষয়াদির প্রতি নযর রাখবেন। আর এ ব্যাপারে সে আমীর বা নেতার বিরুদ্ধাচরণ করবে না; বরং পসন্দে-অপসন্দে নেতার প্রদত্ত দায়িত্বসমূহ পালন করবে’।[7]

সব প্রতিষ্ঠান, সমাজ, সংগঠনেই বিভিন্ন রূপে ও পদ্ধতিতে আনুগত্যের শপথ ও অঙ্গীকার রয়েছে। তবে ইসলামী সংগঠনে শপথ বা বায়‘আতের লক্ষ্য হয় পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর বিধানকে সাধ্যমত পালন করার চেষ্টা করা। জাহেলী আরবে আল্লাহর নামে শপথের রেওয়াজ ছিল। কিন্তু সেখানে আল্লাহর বিধান মানার অঙ্গীকার ছিল না।

পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সর্বত্র নেতৃত্ব ও আনুগত্য রয়েছে। যা ব্যতীত সবই অচল। সেই সাথে রয়েছে আনুগত্যের মৌখিক নিশ্চয়তার জন্য শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা। রয়েছে শপথ ভঙ্গ করলে শাস্তির ব্যবস্থা। তেমনি সুশৃংখলভাবে সংগঠন পরিচালনা ও সমাজ সংস্কারের গুরু দায়িত্ব পালনের স্বার্থে রয়েছে নেতা বা আমীরের নিকট আল্লাহর নামে আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণের ব্যবস্থা। যা সাধারণ অঙ্গীকারের ঊর্ধ্বে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত। তাই এর গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক বেশী।

প্রশ্ন-১১. বায়‘আত কত ভাগে বিভক্ত?

উত্তর : পবিত্র কুরআন ও হাদীছে বায়‘আত শব্দটি শপথ, চুক্তি, আনুগত্যের প্রকাশ, ক্রয়-বিক্রয় বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ছাহাবায়ে কেরাম রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের বায়‘আত গ্রহণ করেছেন। কখনও তা ছিল আনুগত্য অর্থে, কখনও শপথ বা চুক্তির অর্থে। সাধারণভাবে বায়‘আতকে পাঁচভাগে ভাগ করা যায়, যা নিম্নরূপ[8] :

. ইসলামের উপর বায়‘আত (البيعة على الإسلام) : যেমন জরীর বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,بَايَعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى شَهَادَةِ أنْ لا إِلَهَ إِلا اللهُ، وَأنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللهِ، وَإِقَامِ الصَّلاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ ‘আমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এ মর্মে বায়‘আত করেছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন (হক) মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল-এ বাণীর সাক্ষ্য দেয়া, ছালাত কায়েম করা, যাকাত দেয়া, নেতার আদেশ শ্রবণ করা এবং প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কল্যাণ কামনা করা’।[9]

২. পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুরক্ষা প্রদানের বায়‘আত (البيعة على النصرة والمَنَعة): যেমন আনছার ছাহাবীগণ মিনায় আক্বাবার দ্বিতীয় বায়‘আতে রাসূল (ছাঃ)-কে সহযোগিতা করা এবং সুরক্ষা দেয়ার ব্যাপারে বায়‘আত করেছিলেন। সেই বায়‘আতে রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন,وَعَلَى أَنْ تَنْصُرُونِي إِذَا قَدِمْتُ يَثْرِبَ، فَتَمْنَعُونِي مِمَّا تَمْنَعُونَ مِنْهُ أَنْفُسَكُمْ وَأَزْوَاجَكُمْ وَأَبْنَاءَكُمْ وَلَكُمُ الْجَنَّةُ ‘(যখন আমি ইয়াছরিবে আগমন করব) তখন তোমরা আমাকে সাহায্য করবে। সেসব অনিষ্ট থেকে তোমরা আমার সুরক্ষা দেবে, যা থেকে তোমরা তোমাদের নিজেদের, তোমাদের স্ত্রীদের এবং তোমাদের সন্তানদের রক্ষার ব্যবস্থা করে থাক। আর (এর বিনিময়ে) তোমাদের জন্য রয়েছে জান্নাত’।[10]

৩.জিহাদের বায়‘আত (البيعة على الجهاد): যেমন বায়‘আতুর রিযওয়ান। আল্লাহ বলেন,لَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنْزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا، ‘অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নীচে আপনার হাতে বায়‘আত গ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহ জানতেন তাদের অন্তরে কী আছে, এজন্য তিনি তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন আর পুরস্কার হিসাবে তাদেরকে দিলেন আসন্ন বিজয় এবং বিপুল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, যা তারা গ্রহণ করবেন। আর আল্লাহ হ’লেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (ফাতহ ৪৮/১৮-১৯)

৪.হিজরতের বায়‘আত (البيعة على الهجرة) : যেমন মুজাশে‘ ইবনে মাসঊদ আস-সুলামী (রাঃ) বলেন, আমি আমার ভাই আবু মা‘বাদকে নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! একে আপনি হিজরত করার উপর বায়‘আত নিন। তিনি বললেন,قَدْ مَضَتِ الْهِجْرَةُ بِأَهْلِهَا ‘যারা হিজরত করেছে, তাদেরকে নিয়ে হিজরত শেষ হয়ে গেছে’। আমি বললাম, فَبِأَيّ شَيْءٍ تُبَايِعُهُ؟ ‘তাহ’লে কোন ব্যাপারে তার বায়‘আত নিবেন? তিনি বললেন, عَلَى الْإِسْلَامِ وَالْجِهَادِ وَالْخَيْرِ ‘ইসলাম, জিহাদ ও কল্যাণকর কাজে’।[11]

৫. আনুগত্যের বায়‘আত (البيعة على السمع والطاعة): যেমন আক্বাবার তৃতীয় শপথ। উবাদাহ ইবনুছ ছমেত (রাঃ) বলেন,بَايَعْنَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي الْعُسْرِ وَالْيُسْرِ، وَالْمَنْشَطِ وَالْمَكْرَهِ، وَعَلَى أَثَرَةٍ عَلَيْنَا، وَعَلَى أَنْ لَا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ، وَعَلَى أَنْ نَقُولَ بِالْحَقِّ أَيْنَمَا كُنَّا، لَا نَخَافُ فِي اللهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ، ‘আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এ মর্মে বায়‘আত করেছি যে, দুঃখে-সুখে, অনুরাগ-বিরাগে এবং আমাদের উপর অন্যকে প্রাধান্য দিলে সর্বাবস্থায় আমরা আপনার আনুগত্য করব। আর এ মর্মে বায়‘আত করেছি যে, নেতার আনুগত্য করার ব্যাপারে আমরা পরস্পর দ্বন্দ্বে জড়াবো না, আমরা যেখানেই থাকি, হক কথা বলব এবং আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দার তোয়াক্কা করব না’। অপর বর্ণনায় এসেছে, إلاّ أَنْ تَرَوْا كُفْراً بَوَاحاً عِنْدَكُمْ مِنَ الله فِيهِ بُرْهَانٌ، ‘কিন্তু যদি (আমীরের মধ্যে) স্পষ্ট কুফরী দেখ, আর সে বিষয়ে আল্লাহর তরফ থেকে তোমাদের নিকটে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান থাকে, তাহ’লে ভিন্ন কথা’।[12]

প্রশ্ন-১২. সাংগঠনিক বায়‘আত কোন প্রকারের বায়‘আতের অন্তুর্ভুক্ত?

উত্তর : সাংগঠনিক বায়‘আত সর্বশেষ আনুগত্যের বায়‘আত (البيعة على السمع والطاعة) -এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আর আনুগত্যের বায়‘আতকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

(১) সাধারণ বায়‘আত (البيعة العامة) : এই বায়‘আত সাধারণ যে কোন আনুগত্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেটা জিহাদ, সৎকাজের নির্দেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ, দাওয়াতী সংস্থা, সংগঠন যে কোন ক্ষেত্রে হ’তে পারে।[13] সাংগঠনিক বায়‘আত এই প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। এই বায়‘আতের বৈশিষ্ট্য হ’ল- (১) নেতাকে হদ্দ কায়েমকারী শাসক হওয়া যরূরী নয়। ইবনুল ‘আরাবী (রহঃ) বলেন,وَذَلِكَ فِي الْأَمْوَالِ وَالْحُقُوقِ الَّتِي تَخْتَصُّ بِالطَّالِبِ، فَأَمَّا الْحُدُودُ فَلاَ يَحْكُمُ فِيهَا إِلاَّ السُّلْطَانَ، ‘আর এটি হ’ল মাল-সম্পদ ও অন্যান্য দাবী-দাওয়ার বিচার-ফায়ছালার ক্ষেত্রে। কিন্তু দন্ডবিধি সমূহ বাস্তবায়নের অধিকার থাকবে কেবল শাসকের’।[14] (২) এই বায়‘আত ঐচ্ছিক (إِخْتِيَارِى) অর্থাৎ যিনি বায়‘আত করবেন কেবল তার জন্যই প্রযোজ্য, অন্যদের জন্য নয়। কারো জন্য বাধ্যতামূলকও নয়। (৩) এই বায়‘আত নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত অর্থাৎ যে বিষয়ে গ্রহণ করা হবে, তার জন্যই প্রযোজ্য। (৪) এই বায়‘আত একাধিক হয় তথা একই ব্যক্তি একাধিক বিষয়ে একাধিক জনের কাছে বায়‘আত গ্রহণ করতে পারে। (৫) এই বায়‘আত করার পর শারঈ কারণ ব্যতীত তাঁর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যাওয়া কবীরা গুনাহ। কেননা আল্লাহ বলেন,وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولاً- ‘আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/৩৪)। শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত-তুওয়াইজিরী বলেন,يجب الوفاء بالعهود والعقود سواء كانت بين المسلمين أو بين المسلمين والكفار أو بين الأفراد والبيعة بجميع أنواعها داخلة في هذه العقود والعهود ‘অঙ্গীকার ও চুক্তি পূরণ করা ওয়াজিব সেই চুক্তি মুসলিমদের পরস্পরের মধ্যে হোক বা মুসলিম ও কাফেরদের মধ্যে হোক অথবা ব্যক্তি পর্যায়ে পরস্পরের মধ্যে হোক। আর সর্বপ্রকার বায়‘আত এসব চুক্তি ও অঙ্গীকারের আওতাভুক্ত।[15] 

(২) বিশেষ বায়‘আত (البيعة الخاصة) : এই বায়‘আত হ’ল রাষ্ট্রীয় বায়‘আত যা খলীফার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য প্রযোজ্য।[16] এই বায়‘আতের বৈশিষ্ট্য হ’ল- (১) এই বায়‘আত কেবল হদ্দ কায়েমকারী শাসক গ্রহণ করতে পারবেন। (২) এই বায়‘আত রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক (إجْبَارِى), যতক্ষণ খলীফা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়ে ইসলামী বিধান মোতাবেক দেশ পরিচালনা করেন।[17] (৩) এই বায়‘আত যিনি গ্রহণ করবেন তাকে কুরায়শী বংশোদ্ভূত হ’তে হবে। (৪) এই বায়‘আত একাধিক হয় না। অর্থাৎ একজন খলীফা বা আমীর থাকতে অন্য কেউ আমীর হিসাবে বায়‘আত গ্রহণ করলে তাকে হত্যা করা ওয়াজিব হয়। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِذَا بُويِعَ لِخَلِيفَتَيْنِ فَاقْتُلُوا الْآخِرَ مِنْهُمَا ‘যখন দুইজন খলীফার বায়‘আত করা হবে, তখন পরের জনকে হত্যা কর’।[18] (৫) এই বায়‘আত করার পর কুফরী ব্যতীত শাসকের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ، لَقِيَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا حُجَّةَ لَهُ، وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ، مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً ‘যে ব্যক্তি (শাসকের) আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিবে, সে ক্বিয়ামতের দিন দলীলবিহীন অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে। আর যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে, তার ঘাড়ে কোন বায়‘আত নেই, তার মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু হবে’।[19] এ ব্যাপারে হাফেয ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী বলেন,وَفِي هَذَا الْحَدِيثِ وُجُوبُ طَاعَةِ الْإِمَامِ الَّذِي انْعَقَدَتْ لَهُ الْبَيْعَةُ وَالْمَنْعُ مِنَ الْخُرُوجِ عَلَيْهِ وَلَوْ جَارَ فِي حُكْمِهِ وَأَنَّهُ لَا يَنْخَلِعُ بِالْفِسْقِ، ‘এ হাদীছে প্রমাণিত হয় যে, শাসকের হাতে বায়‘আত করা হয়েছে, তার আনুগত্য করা ওয়াজিব। তিনি যুলম করলেও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে না। কোন ফাসেকী কাজ করলেও তার আনুগত্য ছিন্ন করা চলবে না’।[20]

প্রশ্ন-১৩. শাসক ব্যতীত কারো হাতে বায়‘আত গ্রহণ করা কি সুন্নাহসম্মত?

উত্তর : হ্যাঁ। কেননা বায়‘আত শুধু শাসক নয়, অন্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে শাসকের জন্য যে বায়‘আত খাছ, তা হ’ল খিলাফতের বায়‘আত। আর শাসক ব্যতীত অন্যের কাছে সাধারণ আনুগত্যের বায়‘আত করা যায়, যা রাসূল (ছাঃ)-এর আমল দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। যেমন- সুনান নাসাঈর ‘বায়‘আত’ (اَلْبَيْعَةُ) অধ্যায়ে বিভিন্ন প্রকার বায়‘আতের ১৭টি অনুচ্ছেদ রচনা করা হয়েছে। যাতে মোট ৬০টি ছহীহ হাদীছ সংকলিত হয়েছে।[21] যেমন-

(১) بَابُ الْبَيْعَةِ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ (‘আমীরের আদেশ শ্রবণ ও মান্য করার উপরে বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (২) بَابُ الْبَيْعَةِ عَلَى أَنْ لاَّ نُنَازِعَ الأَمْرَ أَهْلَهُ (‘আমরা নেতৃত্ব নিয়ে পরস্পরে ঝগড়া করব না উপরে বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (৩) بَابُ الْبَيْعَةِ عَلَى الْقَوْلِ بِالْحَقِّ (‘সত্য কথা বলার উপরে বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (৪) بَابُ الْبَيْعَةِ عَلَى الْقَوْلِ بِالْعَدْلِ (‘ন্যায় কথা বলার উপরে বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (৫)بَابُ الْبَيْعَةِ عَلَى الأَثَرَةِ (‘অন্যকে প্রাধান্য দেওয়া হ’লে তাতে ধৈর্যধারণের উপরে বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (৬) بَابُ الْبَيْعَةِ عَلَى النُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ (‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সদুপদেশ দেওয়ার উপরে বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (৭) بَابُ الْبَيْعَةِ عَلَى أَنْ لاَ نَفِرَّ (‘যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন না করার উপরে বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (৮) بَابُ الْبَيْعَةِ عَلَى الْمَوْتِ (‘আমৃত্যু দৃঢ় থাকার উপরে বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (৯) بَابُ الْبَيْعَةِ عَلَى الْجِهَادِ (‘জিহাদের উপরে বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)।

(১০) بَابُ الْبَيْعَةِ عَلَى الْهِجْرَةِ (‘হিজরত করার উপরে বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (১১) بَابُ الْبَيْعَةِ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ (‘পসন্দনীয় ও অপসন্দনীয় সকল বিষয়ে আনুগত্য করার উপরে বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (১২) بَابُ الْبَيْعَةِ عَلَى فِرَاقِ الْمُشْرِكِ (‘মুশরিক হ’তে পৃথক থাকার উপরে বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (১৩) بَابُ بَيْعَةِ النِّسَاءِ (‘মহিলাদের বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (১৪) بَابُ بَيْعَةِ مَنْ بِهِ عَاهَةٌ (‘ব্যধিগ্রস্ত ব্যক্তির বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (১৫) بَابُ بَيْعَةِ الْغُلاَمِ (‘বালকদের বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (১৬) بَابُ بَيْعَةِ الْمَمَالِيكِ (‘ক্রীতদাসদের বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)। (১৭) بَابُ الْبَيْعَةِ فِيمَا يَسْتَطِيعُ الإِنْسَانُ (‘মানুষের সাধ্যের অধীন কাজে আনুগত্য করার উপরে বায়‘আত’ অনুচ্ছেদ)।

উপরোক্ত অধ্যায়গুলোর শিরোনাম থেকেই স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয় যে, বায়‘আত বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে শপথ, চুক্তি, অঙ্গীকার প্রভৃতি অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি কেবল খেলাফত বা রাষ্ট্রের সাথে খাছ নয় অথবা কেবল শাসকের সাথেও সম্পৃক্ত নয়। এমনকি বায়‘আত খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য সৃষ্ট বিশেষ কোন শারঈ পরিভাষাও নয়, বরং দুই পক্ষের মধ্যে কৃত যে কোন চুক্তি বা অঙ্গীকারের জন্য জাহেলী আরব থেকেই এর প্রচলন ছিল। যা আক্বাবার শপথ থেকেই প্রমাণিত। কেননা প্রথমতঃ সেখানে বায়‘আতের জন্য আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নন, বরং নবমুসলিম আনছার ছাহাবীরাই হাত বাড়িয়েছিলেন। এতে স্পষ্ট হয় যে, রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে বায়‘আতের পদ্ধতি শিখিয়ে দেননি। যা প্রমাণ বহন করে যে, এটি আরবের পূর্ব আচরিত নিয়ম ছিল।

দ্বিতীয়তঃ তারা একথা চিন্তা করেননি যে, তারা কোন শাসকের কাছে বায়‘আত নিচ্ছেন, বরং ব্যক্তি নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে তারা সুরক্ষা দেয়ার কাজ আঞ্জাম দিতেই তার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। এখানে একথা বলার সুযোগ নেই যে, রাসূল (ছাঃ) ভাবী রাষ্ট্রের অধিপতি হিসাবে বায়‘আত গ্রহণ করেছিলেন বলে সেটা শাসকদের বায়‘আতেরই সমতুল্য ছিল।

সুতরাং উক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, বায়‘আত যেমন স্থান-কাল-পাত্র ভেদে কখনও ব্যক্তিগত চুক্তি বা শপথের জন্য হ’তে পারে, তেমনি জামা‘আতে ‘আম্মাহ ও খাছছাহ উভয় জামা‘আতের প্রতি আনুগত্যের প্রকাশার্থেও হ’তে পারে।[22] কিন্তু এর পরিবর্তে বায়‘আতকে শুধুমাত্র খেলাফত বা শাসকের জন্য এবং হাদীছে বর্ণিত অন্যান্য বায়‘আতসমূহকে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে খাছ করা অতি উৎসাহী চিন্তাপ্রসূত অথবা পরবর্তী বিদ্বানদের ব্যক্তিগত ইজতিহাদ, যার কোন দলীল নেই। ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে এযাম, পূর্বসূরী বিদ্বানগণ কেউ এমন কথা বলেননি।[23] তবে নিঃসন্দেহে খিলাফতের বায়‘আতই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বোচ্চ স্তরের মর্যাদাসম্পন্ন। হাদীছে মূলত উক্ত বায়‘আত অবলম্বনেরই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।[24] উল্লেখ্য যে, বায়‘আতের সাথে ইসলামী রাষ্ট্রের কোন বিধি-বিধান বাস্তবায়নের সম্পর্ক নেই। এটা স্রেফ আনুগত্যের ঘোষণা মাত্র, যা শাসকের সাথে শাসিতের এবং নেতার সাথে কর্মীদের সম্পর্কের বন্ধন তৈরী করে।

প্রশ্ন-১. খিলাফত ব্যতীত হাদীছে বর্ণিত অন্যান্য বায়‘আত কি কেবল রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য খাছ নয়?

উত্তর : না। কেননা রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতিটি আমলই উম্মতের জন্য আদর্শ ও পালনীয়। যদি কোন আমল তার জন্য বিশেষভাবে খাছ হয়, তবে তার দলীল থাকতে হবে। ঢালাওভাবে কোন বিষয় তার জন্য খাছ করার সুযোগ নেই। নতুবা শরী‘আতের বহু বিধান অকার্যকর হয়ে পড়বে। 

ইবনুল আরাবী বলেন, وما عمل به محمد صلى الله عليه وسلم تعمل به أُمتهُ، يعني: لأن الأصل عدم الخصوصية، ‘রাসূল (ছাঃ) যে আমল করেছেন, তার উম্মাতও সেই আমল করবে। কেননা কোন বিষয়কে রাসূলের জন্য খাছ না করাই মূলনীতি’।[25] খাত্ত্বাবী বলেন, إذا فعل شيئاً من أفعال الشريعة كان علينا إتباعه والإيتساء به، والتخصيص لا يعلم إلا بدليل، ‘রাসূল (ছাঃ) যখন কোন শারঈ কাজ করেন, তখন আমাদের দায়িত্ব তাঁর যথাযথ অনুসরণ করা, খাছ করে দেয়ার বিষয়টি দলীল ছাড়া জানা যায় না’।[26] ইবনু কুদামাহ বলেন, وَلَنَا أَنْ نَقْتَدِيَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَمْ يَثْبُتْ مَا يَقْتَضِي اخْتِصَاصَهُ ‘আমাদের জন্য কর্তব্য হ’ল রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করা যতক্ষণ তা রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য খাছ প্রমাণিত না হয়’।[27] ইমাম নববী বলেন, لو فتح باب هذا الخصوص لانسد كثير من ظواهر الشرع ‘যদি এভাবে রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য (বিধানসমূহ) খাছ করে দেয়ার রাস্তা খুলে দেয়া হয়, তাহ’লে শরী‘আতের অনেক প্রকাশ্য বিধান অকার্যকর হয়ে পড়বে’।[28]

সুতরাং খিলাফতের বায়‘আত ছাড়া অন্যক্ষেত্রে রাসূল (ছাঃ) যে সকল বায়‘আত করেছেন, তা অনুরূপ কারণ ও পরিস্থিতিতে অন্যদের জন্যও জায়েয হবে। কেননা বায়আতের অন্যান্য সকল ক্ষেত্র রাসূল (ছা.)-এর জন্য খাছ করা হয়েছে, এমন কিছু ছাহাবীগণ বা পূর্বসূরী কোন বিদ্বান থেকে বর্ণিত হয়নি। (ক্রমশঃ)


[1]. দ্র. আব্দুর রহমান আব্দুল খালেক, শরী‘আতের আলোকে জামা‘আতবদ্ধ প্রচেষ্টা, পৃ. ৩৬-৪৮।

[2]. ইসলামী খেলাফত ও নেতৃত্ব নির্বাচন, পৃ. ৯৭।

[3]. দারেমী হা/২৫১, সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে, তবে বক্তব্য ছহীহ হাদীছসমূহের অনুকূলে।

[4]. ইবনুল উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতি‘ (রিয়াদ : দারু ইবনুল জাওযী, ১৪২২ হি.), পৃ. ৮/১০।

[5]. তদেব।

[6]. সীরাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃ. ২০৪।

[7]. ইবনু খালদূন, তারীখু ইবনে খালদূন (বৈরূত: দারুল ফিকর, ২য় প্রকাশ: ১৯৮৮ খ্রি), পৃ. ২৬১।

[8]. মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আত-তুয়াইজিরী, মাওসূআতিল ফিক্বহিল ইসলামী (রিয়াদ: বায়তুল আফকার আদ-দুয়ালিয়াহ, ১ম প্রকাশ: ২০০৯ খ্রি), পৃ. ৫/৩০৪-৬।

[9]. বুখারী হা/২১৫৭; মুসলিম হা/৫৬।

[10]. আহমাদ, হা/১৪৬৫৩, ছহীহ।

[11]. বুখারী হা/৪৩০৫; মুসলিম হা/১৮৬৩।

[12]. বুখারী হা/৭০৫৬; মুসলিম হা/১৭০৯।

[13]. বদর বিন ইবরাহীম আর-রাখীছ, আল-বায়‘আতু ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, পৃ. ২৬৬-৬৭।

[14]. কুরতুবী, তাফসীর সূরা মায়েদাহ ৪১ আয়াত, ৬/১৭১ পৃ.।

[15]. মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আত-তুয়াইজিরী, মাওসূআতিল ফিক্বহিল ইসলামী, পৃ. ৫/৩০৯-১০।

[16]. বদর বিন ইবরাহীম আর-রাখীছ, আল-বায়‘আতু ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, পৃ. ২৭১।

[17]. ড. যুহায়ের উছমান আলী নূর, আল-বায়‘আতু ফিস সুন্নাহ আন-নাবাভিয়াহ, পৃ. ৩৮২।

[18]. মুসলিম হা/১৮৫৩; মিশকাত হা/৩৬৭৬ রাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)।

[19]. মুসলিম হা/১৮৫১।

[20]. ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী, ১৩/৭১-৭২।

[21]. শায়েখ আলবানীর তাহকীক কৃত নাসাঈতে হা/৪১৪৯ হ’তে ৪২১১ পর্যন্ত ৪১৬০ ও ৪১৬৮ দু’টি যঈফ হাদীছ বাদে।

[22]. বদর বিন ইবরাহীম আর-রাখীছ, আল-বায়‘আতু ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, পৃ. ২৬৯।

[23]. ঐ পৃ. ২।

[24]. ঐ পৃ. ২৭০।

[25]. ইবনুল আরাবী, আরেযাতুল আহওয়াযী, ৪/২৫৯-৬০।

[26]. উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ ৫/৩৭৫।

[27]. ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ২/৩৮২।

[28]. শিহাবুদ্দীন কাস্তালানী, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ (কায়রো : মাকতাবা তাওফিকীয়াহ,) ৩/৩৯৭।






বিষয়সমূহ: সংগঠন
কা‘বাগৃহের নীচে কবরস্থান! সংশয় নিরসন - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
ছাহাবায়ে কেরাম কি আমাদের আদর্শ হওয়ার যোগ্যতা রাখেন? (২য় কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
আহলেহাদীছ ফিৎনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ কোর্স! - আত-তাহরীক ডেস্ক
জামা‘আত ও বায়‘আত সম্পর্কিত সংশয়সমূহ পর্যালোচনা - আত-তাহরীক ডেস্ক
প্রসঙ্গ : সারা বিশ্বে একই দিনে ছিয়াম ও ঈদ - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
উলুল আমর-এর সঠিক ব্যাখ্যা - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
পীরতন্ত্র! সংশয় নিরসন (পূর্বে প্রকাশিতের পর) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
সঊদী আরবের সঙ্গে একই দিনে ছিয়াম ও ঈদ পালনের পক্ষে-বিপক্ষে বাহাছ; বিপক্ষ দলের বিজয়
রাজনীতি করুন, ইসলামের অপব্যাখ্যা করবেন না - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
প্রতারণা হ’তে সাবধান থাকুন!
গোপালপুরের নব আহলেহাদীছদের উপর নির্যাতিত - জামীলুর রহমান - কোরপাই, বুড়িচং, কুমিল্লা
ছহীহ হাদীছের পরিচয়
(৩য় কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
আরও
আরও
.