প্রশ্ন (১/৩৬১) :আমার অফিসে সিসি ক্যামেরার মনিটর আছে। যাতে মানুষের ছবি/ভিডিও দেখা যায়। আমি সুন্নাত ছালাত মাঝে মধ্যে অফিসে আদায় করি। আমার ছালাত কবুল হবে কি-না এবং রহমতের ফেরেশতা আমার অফিসে প্রবেশ করবে কি-না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
-আব্দুল্লাহ, পূর্বাচল, ঢাকা।
উত্তর : সিসি ক্যামেরার ছবিযুক্ত মনিটর ছালাতের জন্য প্রতিবন্ধক নয় কিংবা ফেরেশতাদের প্রবেশের জন্যও বাধা নয়। কেননা তা ছবি, মূর্তি, প্রতিকৃতির অন্তর্ভুক্ত নয় এবং তা সম্মানের উদ্দেশ্যেও রাখা হয় না। তবে তা সম্মুখভাবে থাকলে বা ছালাত আদায়ে বিঘ্ন সৃষ্টি করলে ছালাত আদায়কালীন তা বন্ধ রাখা উচিৎ (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/১৯৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/৪৫৮)।
প্রশ্ন (২/৩৬২) :স্ত্রী আমার চাহিদা মোতাবেক আমার সাথে নির্জনবাস করে না। বরং তার চাহিদা মত আমাকে তার কাছে যেতে হয়। এরূপ কারণে স্ত্রীকে তালাক দেয়া যাবে কি?
-আমীনুল ইসলাম, ঢাকা।
উত্তর : এসকল ক্ষেত্রে স্ত্রীকে অধিক পরিমাণে নছীহত করবে। স্ত্রীর চাহিদা যেমন স্বামী পূরণ করবে, তেমনি স্বামীর চাহিদা পূরণেও স্ত্রী সচেষ্ট থাকবে। স্ত্রী সুস্থ থাকলে তার জন্য আবশ্যক হ’ল স্বামী আহবান করলে যে কোন সময় তার ডাকে সাড়া দেয়া (তিরমিযী হা/১১৬০; ছহীহুত তারগীব হা/১৯৩৮-১৯৪৮; মিশকাত হা/৩২৫৭)। এক্ষণে কোনভাবেই সংশোধন না হ’লে প্রয়োজনে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে বা দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারে।
প্রশ্ন (৩/৩৬৩) :আমি পেশায় একজন দর্জি। কাজের সময় আমি যদি মসজিদে জামা‘আতে না গিয়ে কারখানায় ছালাত আদায় করি, তাহ’লে আমার ছালাত হবে কি?
-সাগর মন্ডল, ঢাকা।
উত্তর : জামা‘আতে ছালাত আদায় করা ওয়াজিব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আযান শুনতে পেয়েও বিনা ওযরে মসজিদে আসে না তার ছালাত সিদ্ধ হবে না’ (ইবনু মাজাহ হা/৭৯৩: ছহীহ তারগীব হা/৪২৬; মিশকাত হা/১০৭৭)। অতএব সাধ্যমত মসজিদে গিয়ে জামা‘আতে ছালাত আদায় করবে। তবে কেউ গৃহে বা কারখানায় ফরয ছালাত আদায় করলে ছালাতের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু অবহেলাবশত ওয়াজিব ত্যাগ করলে সে অবশ্যই গুনাহগার হবে (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/১৩৩-১৪১)।
প্রশ্ন (৪/৩৬৪) :মূসা (আঃ) কি তোতলা ছিলেন? এটা যদি হয় তাহ’লে এটা কি নবুঅতের শানের খেলাফ নয়?
-আব্দুল্লাহ আল-বাস্সাম, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : মূসা (আঃ)-এর তোতলামী তাঁর জন্য নবুঅত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধক ছিল না। তাছাড়া তাঁর দো‘আর কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সেই ত্রুটিও দূর করে দেন। মূসা (আঃ) দো‘আয় বলেছেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রসারিত করে দাও! আমার কর্ম সহজ করে দাও! আর আমার জিহবার আড়ষ্টতা দূর করে দাও! যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে’ (তোয়াহা ২০/২৫-২৮)। আল্লাহ তা‘আলা জওয়াবে বলেন, ‘হে মূসা! তুমি যা চেয়েছ, সবই তোমাকে দেওয়া হ’ল’ (তোয়াহা ২০/৩৬)। সুতরাং এটা তার নবুঅতের শানের খেলাফ নয়। আর মুসলমানদের দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে, নবী-রাসূলগণ মা‘ছুম বা সর্বপ্রকার মানবীয় দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত ছিলেন। আর এটাই তাদের শান ও মর্যাদার বহিঃপ্রকাশ (ইবনু হাজার আসকালানী, ফাৎহুল বারী ৬/৪৩৮)।
প্রশ্ন (৫/৩৬৫) :পিতা মেয়ের অমতে জোরপূর্বক অযোগ্য পরিবারে বিবাহ দিতে চায়। এক্ষণে মেয়েটি তার মায়ের অনুমতিক্রমে অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে কি?
-মোবারক, আজিমপুর, ঢাকা।
উত্তর : পিতার অনুমতি ছাড়া মা তার মেয়েকে অন্যত্র বিবাহ দিতে পারবে না। কারণ মেয়ের বিবাহের জন্য তার বৈধ পুরুষ অভিভাবক আবশ্যক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ওলী ব্যতীত বিবাহ সিদ্ধ নয়’ (আহমাদ, সুনান চতুষ্টয়; ছহীহুল জামে’ হা/৭৫৫৫; মিশকাত, হা/৩১৩০)। তিনি আরো বলেন, ‘কোন মহিলা অপর কোন মহিলাকে বিবাহ দিবে না এবং কোন মহিলা নিজেকেও (ওলী ব্যতীত) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করবে না’ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩১৩৬: ছহীহুল জামে’ হা/৭২৯৮)। এক্ষণে পিতা যদি পাত্রের দ্বীনদারী ও যোগ্যতার ঘাটতি থাকার পরও ব্যক্তিস্বার্থে তার সাথে বিবাহ দেওয়ার জন্য যিদ করেন, তাহ’লে ধারাবাহিকভাবে দাদা, চাচা অথবা প্রাপ্তবয়স্ক ভাই অভিভাবক হয়ে অন্যত্র বিবাহের ব্যবস্থা করবে। আর কেউ না থাকলে স্থানীয় ঈমানদার সমাজনেতা বা জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করবেন (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/৩১; ওছায়মীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩/১৪৮)। উল্লেখ্য যে, মেয়ের বিবাহের জন্য যেমন ওলীর অনুমতি আবশ্যক, তেমনি মেয়ের সম্মতি থাকাও আবশ্যক (বুখারী হা/৬৯৬৮)।
প্রশ্ন (৬/৩৬৬) :অনলাইন মার্কেটিংয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে কমবেশী মেয়েদের ছবি বা ভিডিও নিয়ে কাজ করতে হয়। কারণ এতে ফলোয়ার/সাবস্ক্রাইবার/ভিজিটর বেশী হয় এবং প্রডাক্টের সেল বৃদ্ধি পায়। এর জন্য পুরো কাজটিই কি হারাম হিসাবে গণ্য হবে?
-মুরাদ পারভেয, আত্রাই, নওগাঁ।
উত্তর : যেখানে অশ্লীলতা ও পাপাচারের প্রসার ঘটে, সেখানে কাজ করা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তুমি বল, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার অশ্লীলতা হারাম করেছেন’ (আ‘রাফ ৭/৩৩)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য বা গোপন কোন অশ্লীলতার নিকটবর্তী হবে না’ (আন‘আম ৬/১৫১)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার নির্দেশ দেন এবং অশ্লীলতা, অন্যায় ও অবাধ্যতা হ’তে নিষেধ করেন’ (নাহল ১৬/৯০)। এক্ষণে যদি নারীদের ছবি/ভিডিও ব্যবহার না করে ভিন্ন পন্থায় মার্কেটিং-এর কাজ করা যায়, তাহ’লে তা বৈধ হবে; নতুবা নয়।
প্রশ্ন (৭/৩৬৭) :ইসলামী ব্যাংকে মুদারাবা সঞ্চয়ী হিসাব খোলা যাবে কি? এর মাধ্যমে যে লভ্যাংশ পাওয়া যায় তা গ্রহণ করা যাবে কি?
-রবীঊল ইসলাম, মহিষালবাড়ী
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুরোপুরি সূদমুক্ত নয় বা সন্দেহমুক্ত নয়। আর ইসলামী শরী‘আত সন্দেহ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর উভয়ের মধ্যে এমন বহু সন্দেহযুক্ত বিষয় রয়েছে, যা অনেকেই অবগত নয়। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয় হ’তে বিরত থাকবে, তার দ্বীন ও সম্মান পবিত্র থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত হবে, সে সহসাই হারামে পতিত হবে’ (বুখারী হা/৫২; মিশকাত হা/২৭৬২)। অতএব তোমরা সন্দেহযুক্ত বিষয় ছেড়ে দাও এবং নিঃসন্দেহ বিষয়ের দিকে ধাবিত হও (তিরমিযী, নাসাঈ প্রভৃতি; মিশকাত হা/২৭৭৩)। সুতরাং উক্ত ব্যাংকের লভ্যাংশ গ্রহণ করা নিরাপদ হবে না।
প্রশ্ন (৮/৩৬৮) :মালদ্বীপে অবস্থানরত অনেক প্রবাসী ভাই বিভিন্ন রিসোর্টে চাকুরী করেন। যেখানে মদ, শূকরের মাংস পরিবেশন ও যেনা-ব্যভিচার খুবই সাধারণ বিষয়। পর্যটকদের এসব সরবরাহের জন্য তাদেরকেই সহযোগিতা করতে হয়। এক্ষণে এসব চাকুরী জায়েয হবে কি?
-আফযাল হাবীব, ঢাকা।
উত্তর : এমন কাজে সহায়তা করা যাবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা যেমন অশ্লীলতার নিকটবর্তী হ’তে নিষেধ করেছেন, তেমনি সহায়তা করতেও নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা গুনাহ ও সীমালংঘনের কাজে একে অপরকে সহযোগিতা কর না’ (মায়েদাহ ৫/২)। অতএব উক্ত কোম্পানিতে গুনাহমুক্তভাবে চাকুরী করা সম্ভব না হ’লে বিকল্প আয়ের উৎস অনুসন্ধান করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য পথ খুলে দেন এবং তিনি তাকে রূযী দান করেন এমন উৎস থেকে, যা সে ধারণাও করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হন’ (তালাক ৬৫/২-৩)।
প্রশ্ন (৯/৩৬৯) :মৃত পিতা-মাতার জন্য কি কি দো‘আ করা যায়? ‘রবিবর হামহুমা কামা..-এর সাথে আল্লহুম্মাগফিরলাহু ওয়ার হামহু ওয়া ছাবিবতহূ’ দো‘আটি নিয়মিতভাবে পড়া যাবে কি?
-মুহাম্মাদ আবু সাঈদ, তানোর, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত দো‘আটি নিয়মিত পাঠ করা যায়। এর পাশাপাশি নিম্নের দো‘আসমূহ পাঠ করবে। ১. ‘রাবিবগ্ফির্লী ওয়ালি ওয়া-লি দাইয়া ওয়ালিমান দাখালা বায়তিয়া মুমিনাও ওয়া লিল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাত’। (হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে বিশ্বাসী হয়ে প্রবেশ করবে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন) (নূহ ৭১/২৮)। ২. রববানাগফিরলী ওয়ালি ওয়া-লিদাইয়া ওয়া লিল মু‘মিনীনা ইয়াওমা ইয়াক্বূমুল হিসাব। (হে আমাদের প্রভু! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং ঈমানদার সকলকে ক্ষমা কর যেদিন হিসাব দন্ডায়মান হবে) (ইবরাহীম ১৪/৪০-৪১)।
প্রশ্ন (১০/৩৭০) :সাড়ে বারো ভরি স্বর্ণ থেকে একই পরিবারভূক্ত অবিবাহিত ছেলে-মেয়েকে কিছু অংশ দান করে নিজের কাছে সাড়ে সাত ভরির কম জমা রাখলে উক্ত সোনার যাকাত দিতে হবে কি?
-নাজমুছ ছালেহীন, খোকশা, কুষ্টিয়া।
উত্তর : যাকাত ফরয হওয়ার জন্য শর্ত দু’টি (১) নিছাব পরিমাণ স্বর্ণ বা সমপরিমাণ নগদ অর্থের মালিক হওয়া বা স্বর্ণ ও নগদ অর্থের সমন্বয়ে নিছাব পরিমাণ সম্পদ মালিকানায় থাকা। (২) নিছাব পরিমাণ সম্পদ বা অর্থ পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকা। এক্ষণে কারো মালিকানায় সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হবে, কম হ’লে যাকাত দিতে হবে না। আর সন্তানকে নিজের স্বর্ণ থেকে কিছু অংশ স্থায়ীভাবে দান করলে কোন সমস্যা নেই। উল্লেখ্য যে, যাকাত ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে যদি কেউ সন্তানকে সাময়িক দান করে আবার ফিরিয়ে নেয়, তাহ’লে সেটি বড় প্রতারণা হিসাবে গণ্য হবে।
প্রশ্ন (১১/৩৭১) :আমার এক ধনী বন্ধু আমার কাছে কোন খাত নির্দিষ্ট না করে দান করার জন্য যাকাতের কিছু টাকা দিয়েছে এবং আমার মত করে ব্যয় করতে বলেছে। এখন আমি নিজেই অনেক টাকা ঋণী। এই টাকা থেকে আমি নিজেকে ঋণমুক্ত করতে পারব কি? উল্লেখ্য যে, আমি স্বাভাবিকভাবে ভরণ-পোষণ করতে পারি, কিন্তু ঋণ পরিশোধে সামর্থ্যবান নই।
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা।
উত্তর : ঋণ পরিশোধের নিমিত্তে যাকাতের অর্থ গ্রহণ করা যায় (তওবা ৯/৬০; নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/২১০; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/২৩৪)। এক্ষণে যদি ব্যক্তি প্রকৃতই যাকাতের হকদার হয় এবং ঋণ পরিশোধের কোন অবলম্বন না থাকে, তাহ’লে স্বীয় ঋণ পরিশোধে উক্ত যাকাতের অর্থ নিতে পারবে।
প্রশ্ন (১২/৩৭২) :আমাদের এলাকায় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনাগত সন্তানের কল্যাণের জন্য সপ্তম মাসে ‘সাধ’ আয়োজন করার প্রচলন আছে। এটা জায়েয হবে কি?
-ইসরাত, বাড্ডা, ঢাকা।
উত্তর : ‘সাধ’ বা ‘সাধভক্ষণ’ কোন কোন সমাজে একটি গর্ভকালীন অনুষ্ঠান হিসাবে পরিচিত। গর্ভবতী নারীর গর্ভধারণের সাত মাস পূর্ণ হ’লে অষ্টম বা নবম মাসে মা ও সন্তানের সুস্বাস্থ্য কামনায় প্রসূতিকে ভাল কিছু খাওয়ানোর প্রথাকে ‘সাধভক্ষণ’ বলা হয়। এই রেওয়াজের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। বরং গর্ভস্থ শিশুর কল্যাণে গর্ভবতী মাকে প্রথম থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্য প্রদান করতে হবে। এজন্য সাত, আট বা নয় মাস কোন শর্ত নয়। সেই সাথে আল্লাহর কাছে নিয়মিত দো‘আ করতে হবে এবং বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত, ছালাত আদায় ও দান-ছাদাক্বা করতে হবে। কেননা যাবতীয় কল্যাণের মালিক আল্লাহ। অতএব এসকল অনর্থক ও আক্বীদা বিনষ্টকারী অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকাই মুসলমানদের জন্য আবশ্যক।
প্রশ্ন (১৩/৩৭৩) :আমার তিন বছর বয়সে পিতা দ্বিতীয় বিবাহ করে আমার মাকে তালাক দেন। তারপর মা আমাকে এ পর্যন্ত নানা বাড়ি রেখে বড় করে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। এক্ষেত্রে পিতা কখনো কোন ভূমিকা পালন করেননি। এমনকি আমি যেন তার সম্পদের অংশ না পাই সেজন্য দ্বিতীয় স্ত্রীর কোন ছেলে না থাকায় সকল সম্পদ মেয়েদের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। এখন আমার বৃদ্ধ পিতা চান আমি তার দেখাশোনা এবং সার্বিক সহযোগিতা করি। কিন্তু মা চান আমি যেন তা না করি। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
-অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম
ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক।
উত্তর : সর্বাবস্থায় পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে যদিও তারা সন্তানের প্রতি যুলুম করেন (ইসরা ১৭/২৩)। পিতা তার ভাল-মন্দ কর্মের জন্য দায়ী হবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের সন্তানগণ তোমাদের উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত’ (আবূদাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২৭৭০)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘তোমাদের সন্তানগণ তোমাদের পবিত্রতম উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত। অতএব তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপার্জন থেকে ভক্ষণ কর’ (আবূদাঊদ হা/৩৫৩০; মিশকাত হা/৩৩৫৪)। রাসূল (ছাঃ) আরও বলেন, ‘তুমি ও তোমার ধন-সম্পদ তোমার পিতার জন্য’ (ইবনু মাজাহ হা/২২৯১; ইরওয়া হা/৮৩৮)। অতএব পরকালে নেকীর আশায় ধৈর্য ও ছবরের সাথে পিতাকে দেখাশোনা করাই তার কর্তব্য হবে।
প্রশ্ন (১৪/৩৭৪) :বিভিন্ন কোম্পানীতে কিংবা ফ্যাক্টরীতে শ্রমিক সরবরাহ চুক্তি নিয়ে যদি কেউ সেখানকার মালিকের সাথে এক ধরনের বেতন নির্ধারণ করে এবং শ্রমিকদেরকে তার প্রাপ্য থেকে কিছু কম বেতন বলে চুক্তি করে তাহ’লে সেই অতিরিক্ত টাকা চুক্তিকারীর জন্য গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
-আব্দুর রহীম, রিয়াদ, সঊদী আরব।
উত্তর : মিথ্যা ও প্রতারণা না থাকার শর্তে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করা জায়েয এবং এ কাজে পারিশ্রমিক নেওয়াও জায়েয। বেতনের বিনিময়ে শ্রমিক কোম্পানীর কাছে শ্রম বিক্রি করে থাকে। আর শ্রমিক সরবরাহ করাও একধরনের বেচাকেনা। এই ধরনের চুক্তিতে মধ্যস্থতাকারী নির্দিষ্টহারে ইনছাফের সাথে মুনাফা গ্রহণ করতে পারবে। তবে এর মধ্যে কোন অস্পষ্টতা, ধোঁকা, প্রতারণা থাকা যাবে না (কাসানী, বাদায়ে‘উছ ছানায়ে‘ ৫/২২৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/১৩০)। সেই সাথে শ্রমিকের প্রতি কোন যুলুম যাতে না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে (শানক্বীত্বী, শরহ যাদিল মুস্তাক্বনে‘ ৯/১৫৭)।
প্রশ্ন (১৫/৩৭৫) :অনেকদিন যাবৎ বিবাহের চেষ্টা চলছে কিন্তু হচ্ছে না। এক্ষণে কখন কোথায় বিবাহ হবে এটা কি ভাগ্যের লিখন? না সঠিক চেষ্টার অভাবে বা অন্য কোন কারণে বিবাহ হচ্ছে না। এজন্য কি কি আমল করা যায়?
-ফাতেমা, সিলেট।
উত্তর : অন্যান্য বিষয়ের মতই বিবাহ আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক পৃথিবী সৃষ্টির ৫০ হাযার বছর পূর্বে লিপিবদ্ধ (মুসলিম হা/২৬৫৩; মিশকাত হা/৭৯)। আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষার কারণে বিবাহ বিলম্বিত হ’তে পারে। কেননা তিনি ভাল-মন্দের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন (আম্বিয়া ২১/৩৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-মুছীবতে আক্রান্ত হ’লে ছবর করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর (মুসলিম হা/২৯৯৯; মিশকাত হা/৫২৯৭)।
এক্ষণে আমাদের যেকোন কল্যাণময় জিনিস পেতে সাধ্যমত চেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর নিকট দো‘আ করতে হবে। কারণ আল্লাহ বলেন, আর মানুষ কিছুই পায় না তার চেষ্টা ব্যতীত (নাজম ৫৩/৩৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘দো‘আ ছাড়া অন্য কিছুই তাক্বদীরের লিখনকে পরিবর্তন করতে পারে না এবং নেক আমল ছাড়া অন্য কিছু বয়স বাড়াতে পারে না’ (তিরমিযী হা/২১৩৯; ছহীহাহ হা/১৫৪)। এর পাশাপাশি আল্লাহভীতি ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা রেখে সাধ্যমত বৈধপন্থায় চেষ্টা করে যেতে হবে।
প্রশ্ন (১৬/৩৭৬) :অনলাইনে এক এ্যাপে গ্রামের ৯০% মানুষ টাকা রাখছে। সেখানে প্রতিদিন ৩% সূদ দেওয়া হয়। কেউ যদি কাউকে এ্যাপের সদস্য করতে পারে তবে সেও কমিশন পায়। এসব কার্যক্রমে যোগ দেয়া হালাল হবে কি?
-নাছিরুদ্দীন, চট্টগ্রাম।
উত্তর : প্রশ্নেই স্পষ্ট যে উক্ত কার্যক্রম সূদভিত্তিক ও প্রতারণাপূর্ণ। আর আল্লাহ তা‘আলা সূদকে হারাম করেছেন এবং সূদখোরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন (বাক্বারাহ ২/২৭৮-৭৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, যে আমাদের দলভুক্ত নয় (মুসলিম হা/১০১; মিশকাত হা/৩৫২০)। অতএব এ জাতীয় ব্যবসা বা লেনদেন থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
প্রশ্ন (১৭/৩৭৭) :জনৈক ব্যক্তি গোসল ফরয হওয়া অবস্থায় মারা গেলে স্থানীয় মুরববীদের পরামর্শে তাকে দু’বার গোসল দেয়া হয়। এটা সুন্নাত সম্মত হয়েছে কি?
-আব্দুল ক্বাদের, রংপুর।
উত্তর : কোন ব্যক্তি নাপাক অবস্থায় মারা গেলে তার জন্য একটি গোসলই যথেষ্ট (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/১২৩; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৩৪৫)। যেমন বদরের যুদ্ধে হানযালা (রাঃ) নাপাক অবস্থায় শহীদ হ’লে ফেরেশতাগণ একটি গোসলই দিয়েছিলেন (ছহীহাহ হা/৩২৬; ইরওয়া হা/৭১৩)। তবে দু’টি গোসলের ব্যাপারে হাসান বছরী (রহঃ) থেকে একটি অভিমত পাওয়া যায়। একটি গোসল জানাবাতের এবং আরেকটি গোসল মৃতের (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৩৪৫)। কিন্তু প্রথম অভিমতটিই বিশুদ্ধ। সুতরাং এভাবে মাইয়েতকে দু’টি গোসল দেয়া সঠিক হয়নি।
প্রশ্ন (১৮/৩৭৮) :আমি অনেকদিন থেকে মসজিদে একাকী রাফঊল ইয়াদায়েন করি। বর্তমানে মসজিদ কমিটি আমার ক্ষতি করতে চায়। পিতা-মাতাও রাফঊল ইয়াদায়েন করলে মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এক্ষণে আমি বাড়িতে ছালাত পড়ব কি? না পিতা-মাতার নির্দেশনা উপেক্ষা করে মসজিদে ছালাত আদায় করব, নাকি রাফঊল ইয়াদায়েন আপাতত বন্ধ রাখব?
-নাঈম, ময়মনসিংহ।
উত্তর : ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা সুন্নাত এবং এটা ছহীহ হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত। অতএব সবাইকে এই প্রতিষ্ঠিত সুন্নাতটি পালন করার চেষ্টা করতে হবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৭/৯৫; বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১০৮ পৃষ্ঠা)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যার নিকট রাসূল (ছাঃ)-এর কোন সুন্নাত স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, কারু কথায় তা পরিত্যাগ করা আদৌ বৈধ নয় (ইবনু ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ২/৩১৯)। যদি কেউ রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের মহববতে একটি নেকীর কাজ করেন, আল্লাহ বলেন, আমি তার নেকী ১০ থেকে ৭০০ গুণে বর্ধিত করি (বুখারী হা/৪২; মুসলিম হা/১২৯; মিশকাত হা/৪৪)। তবে ‘রাফঊল ইয়াদায়েন’-এর উপর ছালাতের বিশুদ্ধতা নির্ভরশীল নয়। এজন্য পরিস্থিতি বুঝে সাময়িক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অপরদিকে ইমাম ও মসজিদ কর্তৃপক্ষের উচিত হবে, রাসূলের সুন্নাত পালনে কাউকে বাধা না দিয়ে বরং সহায়তা করা। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে আমার নাফরমানী করল, সে আল্লাহরই নাফরমানী করল’ (বুখারী হা/৭১৩৭; মিশকাত হা/৩৬৬১)। আল্লাহ বলেন, ‘তার চাইতে বড় যালেম আর কে আছে যে আল্লাহর মসজিদ সমূহে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয়...। তাদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি’ (বাক্বারাহ ২/১১৪)।
প্রশ্ন (১৯/৩৭৯) :আমি পুলিশে চাকুরী করি। আমাকে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে হয়। আবার মিথ্যা সাক্ষ্য না দিলে বিভাগীয় শাস্তির সম্মুখীন হ’তে হয়। এ অবস্থায় আমার করণীয় কি?
-নিযামুদ্দীন, গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া কবীরা গোনাহ। এর মাধ্যমে সে নিজে যেমন তার পরকাল হারায়, তেমনি অন্যের ক্ষতি করে বাড়তি গোনাহগার হয়। অতএব একজন পুলিশের জন্য কর্তব্য হবে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান থেকে আবশ্যিকভাবে বিরত থাকা। যদি মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়ার কারণে বিভাগীয় শাস্তি দেওয়া হয় তাহ’লে প্রয়োজনে তা-ই মাথা পেতে মেনে নিবে এবং মিথ্যা বলার ভয়াবহতা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে। আর কর্তৃপক্ষের জন্য আবশ্যিক হবে সত্যবাদীকে পুরস্কৃত করা এবং মিথ্যাবাদীকে সত্যের পথে ফিরিয়ে আনা। কারণ নবী করীম (ছাঃ) একদা তিনবার বললেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহগুলি সম্পর্কে অবহিত করব না? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। তিনি হেলান দিয়ে বসেছিলেন, এবার সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, শুনে রাখ! মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া বা মিথ্যা বলা, এ কথাটি তিনি বার বার বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, আর যদি তিনি না বলতেন’ (বুখারী হা/৬৯১৯; মিশকাত হা/৫১)।
প্রশ্ন (২০/৩৮০) :পিতার কোন ছেলে সন্তান না থাকায় জীবদ্দশায় সকল সম্পদ মেয়েদের নামে হেবা করে দিয়েছেন। এক্ষণে তিনি গোনাহগার হবেন কি?
-সায়মা, লক্ষ্মীপুর।
উত্তর : অন্যান্য ওয়ারিছদের বাদ দিয়ে পুরো সম্পত্তি কোন একজনকে বা শুধু মেয়েদেরকে লিখে দেওয়া যাবে না। আর এতে অন্য ওয়ারিছদের বঞ্চিত করার নিয়ত থাকলে তিনি নিশ্চিতভাবে আল্লাহর বিধান লংঘনের কারণে গোনাহগার হবেন। তবে শারঈ কারণে ও সন্তানের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সম্পদ সন্তানকে দিতে পারে’ (রামলী, নিহায়াতুল মুহতাজ ৬/৫০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৬/৪৮৪-৮৫)।
প্রশ্ন (২১/৩৮১) :আক্বীক্বার জন্য খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা যাবে কি? না কি বাড়ি বাড়ি গোশত বিতরণ করতে হবে? অনুষ্ঠানে উপহার গ্রহণ করা যাবে কি?
-বায়েজীদ হোসাইন, চট্টগ্রাম।
উত্তর : আক্বীকার জন্য খাওয়ার আয়োজন করা কিংবা প্রতিবেশীদের মধ্যে সে গোশত বিতরণ করায় বাধা নেই। তবে স্মর্তব্য যে, একে অলীমা অনুষ্ঠানে পরিণত করা যাবে না। ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র ইমাম মালেকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘বিবাহের অলীমায় যেভাবে লোকদের দাওয়াত দেওয়া হয়, সেভাবে বিগত যুগে আক্বীক্বায় লোকদের দাওয়াত দেওয়া হ’ত না’ (ইবনুল ক্বাইয়িম, তুহফাতুল মাওদূদ বি আহকামিল মাওলূদ, পৃ. ৬০ ‘আক্বীক্বার গোশত বণ্টন’ অনুচ্ছেদ)। আর সাধারণভাবে হাদিয়া গ্রহণে বাধা নেই। তবে এটি প্রথায় পরিণত হলে তা বিদ‘আত হবে। এজন্য এব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে (বিস্তারিত দ্র. হা.ফা.বা. প্রকাশিত ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা’ বই)।
প্রশ্ন (২২/৩৮২) :পিতা-মাতার মধ্যে কোন বিষয়ে মনোমালিন্য সৃষ্টি হ’লে তাদের মাঝে সমঝোতার লক্ষ্যে সন্তান হিসাবে কিছু মিথ্যা কথা বলা যাবে কি?
-নাঈমুর রহমান নাহীদ, কুমিল্লা।
উত্তর : কেবল পিতা-মাতাই নয়, যেকোন বিবদমান দুই পক্ষের মাঝে সংশোধনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ঐ ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন করার জন্য (বানিয়ে) ভাল কথা পৌঁছে দেয় অথবা ভাল কথা বলে (বুখারী হা/২৬৯২; মিশকাত হা/৫০৩১)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে। উম্মে কুলছূম (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে কেবলমাত্র তিন অবস্থায় মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে শুনেছি- ১. যুদ্ধের ব্যাপারে ২. লোকের মধ্যে আপোস-মীমাংসা করার সময় এবং ৩. স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের আলাপ-আলোচনায় (মুসলিম হা/২৬০৫)। অতএব বৈধ পন্থায় পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, দুই ভাই বা বিবাদমান দুই দলের মাঝে মীমাংসার উদ্দেশ্যে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া দোষণীয় নয় (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ৩১/১৩১-৩২)।
প্রশ্ন (২৩/৩৮৩) :ফেসবুকে মনিটাইজেশন সহ হালাল কন্টেন্ট পোস্ট করার মাধ্যমে যে উপার্জন করা হয় তা হালাল হবে কি?
-শারাবান তাহুরা, শিরোইল, রাজশাহী।
উত্তর : যদি ফেসবুকে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং তা অশ্লীলতামুক্ত ও হালাল হয়, তাহ’লে হালাল কন্টেন্ট পোস্টের মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জিত হবে, তা গ্রহণ করা জায়েয হবে; নইলে নয়।
প্রশ্ন (২৪/৩৮৪) :কোন রোগের কারণে চিকিৎসক যদি অল্প পরিমাণে মদ্যপানে নির্দেশনা দেয় তবে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
-মাহিন, সঊদী আরব।
উত্তর : হারাম বস্ত্তর মাধ্যমে কোন চিকিৎসা নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা রোগ নাযিল করেছেন এবং প্রতিষেধকও। আর প্রত্যেক রোগের ঔষধও নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং তোমরা ঔষধ ব্যবহার করো, কিন্তু হারাম বস্ত্ত দ্বারা ঔষধ সেবন করবে না (আবূদাউদ হা/৩৮৭৪; ছহীহাহ হা/১৬৩৩ ; মিশকাত হা/৪৫৩৮)। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, যা বেশীতে মাদকতা আনে, তার অল্পটাও হারাম’ (তিরমিযী হা/৩৬৮১; মিশকাত হা/৩৬৪৫)। অতএব নিরুপায় ও বাধ্যগত অবস্থা ব্যতীত হারাম বস্ত্ত দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করা যাবে না (বাক্বারাহ ১৭৩)।
প্রশ্ন (২৫/৩৮৫) :কারো মৃত্যু সংবাদ সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ক্ষেত্রে সবাই যেন চিনতে পারে সে উদ্দেশ্যে ছবি ব্যবহার করায় শারঈ কোন বাধা আছে কি?
-মুশফিরাত, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : মাইয়েতের পরিচয়ের স্বার্থে অনলাইনে মাইয়েতের ছবি ব্যবহার করা দোষণীয় নয় (আলবানী, আহকামুল জানায়েয ৩৩. পৃ.; ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ২/১০৬)। তবে মাইয়েতের মৃতদেহের ছবি প্রচার করা তার জন্য অবমাননার শামিল। অতএব তা প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে। উল্লেখ্য যে, ছবি তোলা এবং একে ব্যবহার নিষিদ্ধের বিষয়টি তার প্রতি সম্মান দেখানো এবং ঝুলিয়ে রাখার সাথে সংশ্লিষ্ট।
প্রশ্ন (২৬/৩৮৬) :অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য মুক্বীম অবস্থায় দু’ওয়াক্তের ছালাত একত্রে জমা করে পড়া যাবে কি?
-নাদীম মাহমূদ, আগৈলঝাড়া, বরিশাল।
উত্তর : অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে দুই ওয়াক্তের ছালাত জমা‘ করে আদায় করা যায় (আবূদাউদ হা/২৯৪; নাসাঈ হা/২১৩. সনদ ছহীহ; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৩/১১৮)। যেমন যোহর ও আছরের ছালাত ক্বছর ছাড়াই জমা করবে এবং একইভাবে মাগরিব ও এশার ছালাত জমা করবে। তবে এটা নিয়মিত করা যাবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ছালাতের জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন (নিসা ৪/১০৩)। এর পরিবর্তে প্রত্যেক ছালাতের জন্য নতুন ওযূ করে সময়মত ছালাত আদায় করবে (বুখারী হা/২২৮; ছহীহাহ হা/৩০১; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৩/২১১)।
প্রশ্ন (২৭/৩৮৭) :জনৈক দিনমজুর এমন কষ্টে দিনাতিপাত করে যে, বছরে একবারও গরুর গোশত কিনে খেতে পারে না। জমি-জমা বলতে কিছুই নেই। কেবল ২ লাখ টাকা জমা করা আছে। তার জন্য কুরবানী করা যরূরী কি?
-মুঈনুল ইসলাম, বরিশাল।
উত্তর : কুরবানী করা সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। অতএব প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সাধ্যানুযায়ী কুরবারী করা আবশ্যক। তবে এটি ওয়াজিব নয়, যে সাধ্যে না কুলালেও তাকে কুরবানী করতেই হবে। এটি ইসলামের অন্যতম নিদর্শন, যা আল্লাহ কুরআনে ছালাতের পাশাপাশি উল্লেখ করেছেন (কাওছার ১০৮/০২; আন‘আম ৬/১৬২)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়’ (ইবনু মাজাহ হা/৩১২৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪৯০)।
প্রশ্ন (২৮/৩৮৮) :আমার ছাত্রের মা আমাকে কিছু উপহার দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আমিও যদি তাকে কিছু উপহার দেই তবে তা জায়েয হবে কি? যেহেতু তিনি বেগানা নারী।
-মাহমূদুল হাসান, গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : মুসলমান একে অপরকে হাদিয়া প্রদান করতে পারে। তবে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হবে পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করা এবং রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের উপর আমল করা। এছাড়া তাতে দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্যও রাখা যাবে না, নতুবা তা ঘুষে পরিণত হবে। ওমর (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ) আমাকে কিছু দান করতেন, তখন আমি বলতাম, যে আমার চেয়ে বেশী অভাবগ্রস্ত, তাকে দিন। তখন রাসূল (ছাঃ) বলতেন, তুমি গ্রহণ কর। যখন তোমার কাছে এসব মালের কিছু আসে অথচ তার প্রতি তোমার কোন লোভ নেই এবং তার জন্য তুমি প্রার্থী নও, তখন তা তুমি গ্রহণ করবে। এরূপ না হ’লে তুমি তার প্রতি অন্তর ধাবিত করবে না (বুখারী হা/১৪৭৩; মুসলিম হা/১০৪৫)। তবে অন্তরে খারাপ নিয়ত জাগ্রত হ’লে বা হাদিয়া বিনিময়ে অন্যায়ের প্রতি প্রলুব্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এরূপ হাদিয়া প্রদান করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন কোন মন্দ কাজের নিকটবর্তী হয়ো না (আন‘আম ১৫১)।
প্রশ্ন (২৯/৩৮৯) :ছেলে-মেয়ে অভিভাবক ছাড়া বিবাহের পর মেয়ের পিতা মেনে নিলেও নতুনভাবে আর বিবাহ হয়নি। কিছুদিন পর ছেলেটি মেয়েটিকে তালাক দিয়ে দেয়। এক্ষণে উক্ত বিবাহ বৈধ না হ’লে তালাক দেয়া সঠিক হয়েছে কি? সেক্ষেত্রে নতুনভাবে বিবাহ করে আবার সংসার করা যাবে কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : অভিভাবক ছাড়া বিবাহ শুদ্ধ হয় না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে নারী তার অলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করবে, তার বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল’ (তিরমিযী হা/১১০২; মিশকাত হা/৩১৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭০৯)। তবে যেহেতু বিবাহ রাষ্ট্রীয় অনুমোদনে বিবাহ সম্পাদিত হয়েছে এবং পিতা পরবর্তীতে মেনে নিয়েছেন, সেজন্য সুন্নাত মোতাবেক না হ’লেও উক্ত বিবাহ শিবহে নিকাহ হিসাবে গণ্য হবে এবং তা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য তালাক আবশ্যক। আর ছেলেটি মেয়েটিকে তিন মাসে তিন তালাক দিয়ে থাকলে তা তালাকে বায়েন হয়ে গেছে। আর এক তালাক দিয়ে থাকলে তালাকে রাজঈ সাব্যস্ত হয়েছে। তিন মাসে তিন তালাক দিয়ে থাকলে অন্যত্র স্বাভাবিক বিবাহ হওয়া এবং পরবর্তীতে তালাক প্রাপ্তা না হ’লে পূর্ব স্বামীর সাথে বিবাহের কোন সুযোগ নেই। কিন্তু তালাকে রাজঈ সাব্যস্ত হয়ে থাকলে নতুন বিবাহের মাধ্যমে সংসার করতে পারবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ৩২/৯৯-১০১, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৩/২০৪; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১৩/২৫)। উল্লেখ্য যে, ‘হিল্লা’ বিবাহ সম্পূর্ণ হারাম। এ থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রশ্ন (৩০/৩৯০) :পরিবার প্রধান হজ্জে গিয়ে কুরবানী করলে দেশে কুরবানীর করার প্রয়োজন আছে কি?
-হিরামতি আখতার
বনানী, শাহজাহানপুর, বগুড়া।
উত্তর : হজ্জের কুরবানীর সাথে দেশে থাকা পরিবারের কুরবানীর কোন সম্পর্ক নেই। অতএব প্রত্যেক হাজীর কর্তব্য হবে সামর্থ্য থাকলে পরিবারের জন্য আলাদাভাবে কুরবানীর ব্যবস্থা করা (ওছায়মীন, আল লিকাউশ শাহরী ৩৪/১৬; বিস্তারিত দ্র.
হাফাবা প্রকাশিত ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা’ বই)।
প্রশ্ন (৩১/৩৯১) :আমার বোন তার ডিভোর্সের পর প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে প্রথমে গরু কিনে দেন। আমার বড় ভাই ও আমরা সবাই মিলে সেই গরু লালন-পালন করে বেশ কয়েকটি গরু হয়। সেই গরু বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কিছু জমি আমার মায়ের নামে ক্রয় করা হয়। পরবর্তীতে আমার বোনের আগের স্বামীর সাথে বিয়ে হয় এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঐ স্বামী বর্তমান আছে। তবে তিনি বোনকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতেন না। জমি হ’তে প্রাপ্ত ফসল আমার বোনকে দেওয়া হ’ত। আমার বোন দীর্ঘদিন পর্যন্ত অসুস্থ ছিল। ২০২২ সালে তার ফুসফুস ক্যান্সার ধরা পড়ে। আমার বোনের চিকিৎসার সমস্ত খরচ আমি একাই বহন করেছি। আমার বোন তার মৃত্যুর আগে তার জমি আমাকে দিতে বলেছে। কিন্তু আমি তা গ্রহণ করতে চাই না। এক্ষণে ঐ জমি কিভাবে বণ্টন করতে হবে?
-মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম
বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : যেহেতু জায়গাটি মায়ের নামে রয়েছে, সেহেতু মায়ের সকল ওয়ারিছ উক্ত সম্পত্তির ভাগ পাবে। আল্লাহ তা‘আলা সূরা নিসায় সম্পদ বণ্টন পদ্ধতি উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের (মধ্যে মীরাছ বণ্টনের) ব্যাপারে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। যদি দুইয়ের অধিক কন্যা হয়, তাহ’লে তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাবে। আর যদি কেবল একজনই কন্যা হয়, তবে তার জন্য অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার প্রত্যেকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ করে পাবে, যদি মৃতের কোন সন্তান থাকে। আর যদি না থাকে এবং কেবল পিতা-মাতাই ওয়ারিছ হয়, তাহ’লে মা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। কিন্তু যদি মৃতের ভাইয়েরা থাকে, তাহ’লে মা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ মৃতের অছিয়ত পূরণ করার পর এবং তার ঋণ পরিশোধের পর (নিসা ৪/১১)। তাছাড়া অছিয়ত এমন সম্পদে করা যায় না যে সম্পদে তার মালিকানা নেই। আবার অছিয়ত ওয়ারিছদের জন্য করা যায় না (বুখারী হা/২৭৪৭; মিশকাত হা/৩০৭৩)। অতএব মায়ের নামে থাকা সম্পত্তি ইসলামী শরী‘আত মোতাবেক ওয়ারিছদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। তবে উক্ত বোনের কোন সন্তান থাকলে তাদেরকে কিছু দেওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন (৩২/৩৯২) :কালো জাদু কি? কালো জাদু থেকে রক্ষা পেতে হ’লে করণীয় কি?
-গাযী সুমাইয়া, লক্ষ্মীকোলা, রাজবাড়ী।
উত্তর : কালো জাদু বলতে এমন কিছু কাজ বুঝায়, যেগুলোর মাধ্যমে নিজ স্বার্থ হাছিল কিংবা অন্যের ক্ষতি সাধন করা হয়ে থাকে। যেমন বশীকরণ, তাবীয-কবয করা, বান মারা, জাদু-টোনা ইত্যাদি। এসব কাজকে যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, তা জাদু হিসাবেই পরিগণিত হবে। জাদু থেকে রক্ষা পেতে করণীয় কিছু আমল এখানে বর্ণনা করা হ’ল। (১) সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার করে সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পাঠ করা (আবুদাঊদ হা/৫০৮২)। (২) সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার এই দো‘আটি পাঠ করা- ‘বিস্মিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াযুর্রু মা‘আসমিহী শাইয়ুন ফিল্ আর্যি ওয়া লা ফিসসামা-ই ওয়া হুয়াস সামী‘উল ‘আলীম’ (হাকেম হা/১৯৩৮; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬৬০)। (৩) ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা (বুখারী হা/২৩১১)। (৪) ঘুমানোর পূর্বে সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পড়ে হাতে ফুঁক দিয়ে সর্বাঙ্গে হাত বুলানো। এভাবে ৩ বার করা’ (বুখারী হা/৫০১৭; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৫৫৪৪)। (৫) সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করা- ‘আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাম্ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী’ আবুদাঊদ হা/৫০৯০; আহমাদ হা/২০৪৩০)। (৬) সকাল-সন্ধ্যায় নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করা- ‘আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তাম্মা-তি মিন শার্রি মা খালাক্ব’ (মুসলিম হা/২৭০৯, তিরমিযী হা/৩৬০৪)। (৭) সূরা আল-বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা (বুখারী হা/৫০০৮)।
প্রশ্ন (৩৩/৩৯৩) :পিতা মেয়েদের অনুমতি ও পূর্ণ সম্মতিক্রমে ছেলেদেরকে বেশী পরিমাণে সম্পদ লিখে দিয়েছেন এবং মেয়েদের এ নিয়ে কোন দাবী নেই। এটা পিতার জন্য জায়েয হয়েছে কি? ছেলেদের জন্য তা ভোগ করা জায়েয হবে কি?
-ওবায়দুল্লাহ বাশীর, ঢাকা।
উত্তর : সুন্নাত হ’ল মৃত্যুর পরে ওয়ারিছদের মধ্যে শরী‘আত মোতাবেক সম্পত্তি বণ্টন করা। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মৃত্যুর পরে সম্পদ বণ্টনের কথা বলেছেন’ (নিসা ৪/১১-১২)। এক্ষণে যদি কেউ কোন কারণ বশত তার যাবতীয় সম্পদ বা কিছু সম্পদ ওয়ারিছদের মাঝে বণ্টন করে দিতে চায়, তাহ’লে ফারায়েয অনুযায়ী যথানিয়মে বণ্টন করে দিতে হবে (মারদাভী, আল-ইনছাফ ৭/১৪২; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৬/০২)। যেমন ছাহাবী সা‘দ বিন ওবাদা (রাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় তার যাবতীয় সম্পদ বণ্টন করে সফরে বের হয়ে যান এবং সেখানেই মারা যান (সুনান সাঈদ বিন মানছূর হা/২৯১, ২৯২)। এক্ষণে বোনদের অনুমতি ও সম্মতিক্রমে পিতা ভাইদের কিছু সম্পদ বেশী দিয়ে থাকলে তা জায়েয হয়েছে এবং তা ভোগ করাও ভাইদের জন্য গোনাহের কারণ হবে না।
প্রশ্ন (৩৪/৩৯৪) :শিক্ষার্থীদের থেকে পরীক্ষার ফী উত্তোলন করে সরকার বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া পরীক্ষা শেষে অবশিষ্ট টাকা শিক্ষকগণ নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নিতে পারবে কি?
-আব্দুল মালেক, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : প্রথমত: ছাত্রদের থেকে মাত্রাতিরিক্ত ফী উঠানো সমীচীন নয়। অতঃপর প্রয়োজন অনুযায়ী ফী উঠানোর পরও যদি টাকা অবশিষ্ট থাকে, তাহ’লে তা কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে শিক্ষকগণ নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নিতে পারবেন। অনুমতি ছাড়া এমন কাজ করলে তা খেয়ানত হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমানতের খেয়ানত কর না’ (আনফাল ৭/২৭)।
প্রশ্ন (৩৫/৩৯৫) :জনৈক ব্যক্তি চাকুরির পরীক্ষায় ভাল করতে পারবে না। তাই নিজের স্থানে অন্য কাউকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়ে এর বিনিময়ে তাকে যে পারিশ্রমিক দিবে সেটা তার গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
-*কিরণ, টাঙ্গাইল।
[সুন্দর ইসলামী নাম রাখুন (স.স.)]
উত্তর : অন্যের পক্ষ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা এবং এর বিনিময় গ্রহণ করা উভয়টি প্রতারণা ও হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে আমাদের সাথে প্রতারণা করল, সে আমাদের দলভূক্ত নয়’ (মুসলিম হা/১০১)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন কোন বিষয় হারাম করেন তখন তার পারিশ্রমিকও হারাম করেন’ (আহমাদ হা/২৯৬৪; ছহীহুত তারগীব হা/২৩৫৯)।
প্রশ্ন (৩৬/৩৯৬) :অন্যের জমি অবৈধভাবে দখল করলে তার কোন ইবাদত কবুল হয় না- কথাটি কি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত?
-আব্দুর রাফী
আড়াই হাজার, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : অন্যের জমি অবৈধভাবে দখল করা নিঃসন্দেহে মহাপাপ। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, কেউ যদি অন্যায়ভাবে কারু এক বিঘত জমি দখল করে, ক্বিয়ামতের দিন সাত তবক যমীন তার গলায় বেড়ী পরানো হবে (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২৯৩৮)। সমস্ত অবৈধ সম্পদ ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি স্বীয় স্কন্ধে বহন করে উঠবে (আহমাদ, মিশকাত হা/২৯৫৯; ছহীহাহ হা/২৪২)। এক্ষণে তার আয়ের উৎস যদি উক্ত অবৈধ যমীন হয়, তাহ’লে তার ইবাদত কবুল হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র বস্ত্ত ভিন্ন কবুল করেন না’ (মুসলিম মিশকাত হা/২৭৬০ ‘হালাল উপার্জন’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (৩৭/৩৯৭) :গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী নেই। আবার থাকলেও অনেক ছাত্র/ছাত্রী ক্লাসে উপস্থিত থাকে না। বিশেষ করে ফাযিল ও কামিল ক্লাসে উপস্থিত থাকে না বললেই চলে। এমতাবস্থায় একজন শিক্ষকের এ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে বেতন নেয়া কতটুকু শরী‘আত সিদ্ধ?
-ওবায়দুর রহমান, কদমডাঙ্গা, সাপাহার।
উত্তর : সরকারের যেকোন বৈধ প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা জায়েয এবং বেতন নেয়াও জায়েয। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার জন্য শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবেন। এরপরেও ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে শিক্ষকগণ দায়ী হবেন না। কিন্তু শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অবহেলা বা গাফলতির কারণে শিক্ষার্থীরা না আসলে শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান সেক্ষেত্রে দায়ী থাকবে। আর এমপিও নীতিমালা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। রাষ্ট্র বা কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবে এবং শিক্ষকদের বেতন পাওয়ার বিষয়টি এর উপরেই নির্ভর করবে। অতএব শিক্ষকদের জন্য বৈধ পন্থায় বেতন গ্রহণে দোষ নেই (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৫/১৫৩-১৫৬; ফাতাওয়া ওলামাইল বালাদিল হারাম ৩৭৭ পৃ.)।
প্রশ্ন (৩৮/৩৯৮) :বিবাহ করেছি, কিন্তু দ্রুত সন্তান নিতে চাই না। তবে টেস্ট করে দেখি স্ত্রী গর্ভবতী। এক্ষণে গর্ভপাত করানো জায়েয হবে কি?
-হুযায়ফা, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম।
উত্তর : গর্ভপাত করানো জায়েয হবে না। কারণ জনৈকা গামেদী মহিলা তার উপর যেনার হদ্দ কায়েম করতে বললে রাসূল (ছাঃ) তাকে সন্তান জন্ম দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন (মুসলিম হা/১৬৯৫; মিশকাত হা/৩৫৬২)। বিশেষ করে শিশুর শারীরিক গঠন শুরু হয়ে গেলে কোনভাবেই গর্ভপাত করা যাবে না। আর ৪০ দিনেই শিশুর শারীরিক গঠন শুরু হয়ে যায় (ইবনুল জাওযী, আহকামুন নিসা ১/১০৮-১০৯; ইবনু জুযাই, আল-কাওয়ানীন ১/২০৭; ইবনু হাযম, মুহাল্লা ১১/২৩৯)। কারণ গর্ভপাত ঘটানোর অর্থই সন্তান হত্যা করা। যা শরী‘আতে হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে তোমরা হত্যা করো না’ (আন‘আম ৬/১৫১)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমরা নিজেদের সন্তানদেরকে দারিদ্রে্যর কারণে হত্যা করো না। আমি তাদেরকে ও তোমাদেরকে রিযিক দান করি’ (আন‘আম ৬/১৫১)। কেবলমাত্র একটি অবস্থায় গর্ভপাত জায়েয, আর তা হ’ল যদি অভিজ্ঞ চিকিৎসক মনে করেন গর্ভধারণে মায়ের জীবনের হুমকি রয়েছে।
প্রশ্ন (৩৯/৩৯৯) :খতমে খাজেগান পড়া বিদ‘আত। কিন্তু ব্যাপক চাপের মুখে কোন এক স্থানে আমাকে পড়তে হয়েছে এবং এর জন্য আমাকে কিছু টাকাও দিয়েছে। এক্ষণে উক্ত টাকা কি আমি ব্যবহার করতে পারব?
-আবু মুহাম্মাদ, বরিশাল।
উত্তর : ছূফীদের মতে, বুযুর্গানে দ্বীন যে খতম পড়ে দো‘আ করতেন সে খতমকে খতমে খাজেগান বলে। খাজেগান শব্দের অর্থ হ’ল ছাহেবগণ বা পীর ছাহেবগণ। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল পীর ও বুযুর্গানে দ্বীন। এই খতমের নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। এসব পদ্ধতিতে দো‘আ ও যিকির পাঠের নির্দেশনা না কুরআনে, না আছে হাদীছে বা সালাফদের আমলে। অতএব তা বিদ‘আত এবং পরিত্যাজ্য। উক্ত বিদ‘আতী আমল থেকে অর্জিত সম্পদ ছওয়াবের আশা ব্যতীত ফকীর-মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করে দিতে হবে। এছাড়া মুসলমানদের কল্যাণার্থে অন্যান্য খাতে ব্যয় করা যাবে। যেমন অভাবী আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী ইত্যাদি (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/৩৫২, ১৬/৫৩২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হারাম মাল সঞ্চয় করে, অতঃপর তা থেকে ছাদাক্বা করে, তাতে সে ছওয়াব পাবে না এবং এর পাপ তার উপরই বর্তাবে’ (শু‘আবুল ঈমান হা/৩৪৭৭; হাকেম হা/১৪৪০; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৩৫৬, ছহীহুত তারগীব হা/৮৮০)।
প্রশ্ন (৪০/৪০০) : মসজিদের মুছল্লী সংকুলান হয় না। এমতাবস্থায় মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য পার্শ্ববর্তী কবরগুলোকে শামিল করে মসজিদের পিলার দেওয়া হয়েছে। নীচতলায় প্রাচীর দিয়ে কবরগুলোকে মসজিদ থেকে পৃথক করা হয়েছে। তবে উপর তলা কবরস্থানের উপর নির্মিত হয়েছে। এমতাবস্থায় উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে কি? না গেলে বিকল্প করণীয় কি?
-কামাল হোসাইন, লাকসাম, কুমিল্লা।
উত্তর : যে মসজিদের নীচে কবর রয়েছে তা পাকা করা হৌক বা ঢালাই করা হৌক তাতে ছালাত আদায় করা জায়েয নয়। কেননা কবরের ব্যাপারে তিনটি বিষয় নিষিদ্ধ- ১. কবরের উপরে ছালাত আদায় করা ২. সরাসরি কবরের দিকে ছালাত আদায় করা ৩. কবরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা মসজিদে ছালাত আদায় করা (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১১/৪০৬; ওছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ২৭/২৩৪, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২/৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘সাবধান! তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা তাদের নবীগণ ও নেককার ব্যক্তিগণের কবর সমূহকে মসজিদে পরিণত করেছিল। সাবধান! তোমরা কবর সমূহকে মসজিদে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করছি’ (মুসলিম হা/৫৩২; মিশকাত হা/৭১৩)। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ হৌক ইহূদী ও নাছারাদের প্রতি, তারা তাদের নবীগণের কবর সমূহকে মসজিদে পরিণত করেছে’ (বুখারী হা/১৩৩০; মুসলিম হা/৫২৯; মিশকাত হা/৭১২)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা কবরের উপর বসো না এবং কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করো না’ (মুসলিম হা/৯৭২; মিশকাত হা/১৬৯৮)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, তোমরা কবরের দিকে ফিরে এবং কবরের উপরে ছালাত আদায় করো না’ (ছহীহাহ হা/১০১৬)।
|
মৃত্যু সংবাদ
‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ বাগেরহাট যেলার যুববিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মাদ নূরুয্যামান ফকীর (৪৫) ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গত ৮ই জুন শনিবার সকাল সাড়ে ৯-টায় নিজবাড়ীতে মৃত্যুবরণ করেন। ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজে‘ঊন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ পুত্র ও ২ কন্যাসহ বহু সাংগঠনিক সাথী ও আত্মীয়-স্বজন রেখে যান। ঐদিন বিকাল সাড়ে ৫-টায় তার নিজ গ্রাম যেলার সদর থানাধীন সুলতানপুরস্থ বাড়ী সংলগ্ন ময়দানে তার জানাযার ছালাত অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন তার পুত্র হাফেয মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ। জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা। জানাযায় যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা যুবায়ের ঢালী, অর্থ সম্পাদক মুহাম্মাদ মামূনুর রশীদ, দফতর সম্পাদক মুহাম্মাদ ফরহাদ খান, সদর উপযেলার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মাহমূদ ফিরোযসহ যেলা ‘আন্দোলন’, ‘যুবসংঘ’ ও ‘সোনামণি’র দায়িত্বশীলবৃন্দ এবং বিপুল সংখ্যক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।
হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষা বোর্ড
শিক্ষক প্রশিক্ষণ
২৩ ও ২৪শে মে বৃহস্পতি ও শুক্রবার নওদাপাড়া, রাজশাহী : গত ২৩ ও ২৪শে মে ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষা বোর্ড’-এর উদ্যোগে নগরীর নওদাপাড়াস্থ আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর পূর্ব পার্শ্বস্থ ভবনের ৩য় তলার হল রুমে ২দিন ব্যাপী রাজশাহী জোনের ‘আঞ্চলিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ২০২৪’ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিন সকাল ৯-টায় প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে দ্বিতীয় দিন জুম‘আ পর্যন্ত চলে। প্রশিক্ষণে স্বাগত ভাষণ পেশ করেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর ভাইস প্রিন্সিপাল, ‘শিক্ষা বোর্ড’-এর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও প্রশিক্ষণ কো-অর্ডিনেটর ড. নূরুল ইসলাম এবং উদ্বোধনী বক্তব্য পেশ করেন ‘শিক্ষা বোর্ড’-এর সচিব জনাব শামসুল আলম।
অতঃপর বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (শিক্ষা সংস্কারে আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর ভূমিকা), গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষা বোর্ড’-এর প্রধান পরিদর্শক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (দরসে কুরআন : সূরা আলাক্ব-এর প্রথম পাঁচ আয়াত), ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মুহাম্মাদ বাহারুল ইসলাম (প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন পদ্ধতি), ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম (বিশুদ্ধ আক্বীদা শিক্ষাদানের গুরুত্ব ও পদ্ধতি), ধূ্রইল ডিএস কামিল মাদ্রাসা, মোহনপুর, রাজশাহীর প্রিন্সিপাল ও নওদাপাড়া মারকাযের সেক্রেটারী মাওলানা দুররুল হুদা (শিক্ষাঙ্গনে আমানতদারিতা), আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর ভাইস প্রিন্সিপাল ও ‘শিক্ষা বোর্ড’-এর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. নূরুল ইসলাম (শিক্ষার্থীর ভাষা দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয়), ‘শিক্ষা বোর্ড’-এর সচিব ও মারকাযের শিক্ষক জনাব শামসুল আলম (আভ্যন্তরীণ শিক্ষক প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও উপকারিতা), ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম (শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকদের পারস্পরিক সম্পর্ক), মারকাযের শিক্ষক ফায়ছাল মাহমূদ (আরবী ব্যাকরণ শিক্ষাদানের সহজ পদ্ধতি), শাহীন রেযা (শিক্ষার্থীদের ইংরেজী ভীতি দূরীকরণের উপায়), মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ (শিক্ষার্থীর সুপ্ত মেধা বিকাশে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের গুরুত্ব ও উপকারিতা), আব্দুর রহীম (শিশুদের বিশুদ্ধ কুরআন তেলাওয়াত শিক্ষাদান পদ্ধতি), রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক আব্দুল মান্নান (প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও উন্নয়নে প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব-কর্তব্য) প্রমুখ। অতঃপর গ্রুপ ডিসকাশন পরিচালনা করেন মারকাযের শিক্ষক মাওলানা আব্দুল্লাহ ও নাজমুল হুদা (আরবী), শাহীন রেযা ও ওয়াহীদুয্যামান (ইংরেজী), ইকবাল হোসাইন ও ফায়ছাল আহমাদ (গণিত)। প্রশিক্ষণে ২২টি প্রতিষ্ঠান থেকে ৬২জন শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন।
প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধান অতিথি ও ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষা বোর্ড’-এর প্রতিষ্ঠাতা মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর পক্ষে হেদায়াতী ভাষণ প্রদান করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল লতীফ।
সোনামণি
২২শে মার্চ শুক্রবার, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা-পশ্চিম : অদ্য বাদ আছর যেলার গোবিন্দগঞ্জ থানাধীন টিএন্ডটি সংলগ্ন আহলেহাদীছ জামে মসজিদে যেলা ‘সোনামণি’র উদ্যোগে যেলা পুনর্গঠন উপলক্ষে এক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি ডা. আওনুল মা‘বূদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় কেন্দ্রীয় মেহমান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক রবীউল ইসলাম ও ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফায়ছাল মাহমূদ। সভা শেষে হাফেয ওবায়দুল্লাহকে পরিচালক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট যেলা কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।
প্রশিক্ষণ ও পুরস্কার বিতরণী :
১৬ই মার্চ শুক্রবার মিরপুর, কুষ্টিয়া : অদ্য সকাল ১১-টায় যেলার মিরপুর উপযেলাধীন উত্তর কাঠদহ নিচপাড়া আহলেহাদীছ জামে মসজিদে এক সোনামণি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। অত্র মসজিদের ইমাম মুহাম্মাদ মুনযিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রশিক্ষণে কেন্দ্রীয় মেহমান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক রবীউল ইসলাম। অনুষ্ঠানে কুরআন তেলাওয়াত করে সোনামণি মাহিম ও ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করে আমেনা খাতুন ও রুম্মান।
২৮শে মার্চ বৃহস্পতিবার নন্দলালপুর, কুমারখালী, কুষ্টিয়া : অদ্য বাদ যোহর যেলার কুমারখালী থানাধীন নন্দলালপুর আহলেহাদীছ জামে মসজিদে দু’শতাধিক সোনামণির অংশগ্রহণে ‘সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা’ অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর দুপুর আড়াইটায় যেলা ‘সোনামণি’র পরিচালক রেযাউল ইসলামের সভাপতিত্বে সোনামণি প্রশিক্ষণ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি ডা. আলী মুর্তাযা ও বিশেষ অতিথি ছিলেন যেলা ‘যুবসংঘে’র সভাপতি হাবীবুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান, কেন্দ্রীয় সহ-পরিচালক নাজমুন নাঈম ও মাহফূয আলী। প্রশিক্ষণ শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও ইফতার বিতরণ করা হয়।
৩০শে মার্চ শনিবার কোরপাই বাজার, বুড়িচং, কুমিল্লা : অদ্য সকাল ৯-টায় যেলার বুড়িচং থানাধীন কোরপাই আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী আব্দুল আযীয আফিয়া মহিলা মাদ্রাসায় দু’শত পঞ্চাশ জন সোনামণির অংশগ্রহণে ‘সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা’ অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর বাদ যোহর যেলা ‘সোনামণি’র পরিচালক আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে সোনামণি প্রশিক্ষণ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মেহমান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক রবীউল ইসলাম। প্রশিক্ষণ শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
মারকায সংবাদ
দাখিল পরীক্ষা ২০২৪-এর ফলাফল
আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী :
বাংলাদেশ মাদ্রাসাশিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২৪ সালের দাখিল পরীক্ষায় এ বছর সাধারণ বিভাগ থেকে ৫৩ জন ছাত্র ও ১৭জন ছাত্রীসহ সর্বমোট৭ ০জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তন্মধ্যে ৫০জন জিপিএ ৫ (এ+) (এরমধ্যে ২০জন্য গোল্ডেন (এ+), ১৯ জন (এ) ও ১ জন (এ-) গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। মোট ছাত্র ৪৭জন। তন্মধ্যে ২৭ জন জিপিএ ৫ (এ+), ১৮ জন (এ) গ্রেড ও ১ জন (এ) গ্রেড পেয়েছে। মোট ছাত্রী ২৩ জন। তন্মধ্যে ২৩ জন জিপিএ ৫ (এ+) (এর মধ্যে ৯জন গোল্ডেন (এ+) পেয়েছে।
আর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ বছর ১৩ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তন্মধ্যে ১২জন জিপিএ ৫ (এ+), ১ জন (এ) গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। আর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তন্মধ্যে ৪ জনই জিপিএ ৫ (এ+) পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
দারুলহাদীছ আহমাদিয়া সালাফিইয়াহ, বাঁকাল, সাতক্ষীরা : ২০২৪ সালের দাখিল পরীক্ষায় অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। তন্মধ্যে ৭ জন জিপিএ ৫.০০ (এ+), ৩ জন গোল্ডেন সহ ৯ জন (এ) পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।