উত্তর : মুক্বীম অবস্থায় ভাগে কুরবানী করার কোন বিধান নেই। বরং একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করাই যথেষ্ট। তবে সামর্থ্য থাকলে একাধিক পশুও কুরবানী করতে পারবে। সফর অবস্থায় ভাগা কুরবানী করা সম্পর্কে ছহীহ দলীল রয়েছে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হ’ল।
(১) আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি শিংওয়ালা সুন্দর সাদা-কালো দুম্বা আনতে বললেন... অতঃপর দো‘আ পড়লেন
بِسْمِ اللهِ اَللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ-
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা তাক্বাববাল মিন মুহাম্মাদিন ওয়া আলি মুহাম্মাদিন ওয়া মিন উম্মাতি মুহাম্মাদিন।
অর্থঃ ‘আল্লাহ্র নামে, হে আল্লাহ। আপনি কবুল করুন মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে, তার পরিবারের পক্ষ হ’তে ও তাঁর উম্মতের পক্ষ হ’তে’। এরপর উক্ত দুম্বা কুরবানী করলেন (ছহীহ মুসলিম, ছহীহ তিরমিযী হা/১২১০, ছহীহ আবুদাঊদ হা/২৪২৩; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩১২৮; মিশকাত, পৃঃ ১২৭, ২৮, হা/১৪৫৪ কুরবানী অনুচ্ছেদ)
(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদায় হজ্জে আরাফার দিনে সমবেত জনমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে জনমন্ডলী! নিশ্চয়ই প্রতিটি পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী’ (সনদ ছহীহ, ছহীহ তিরমিযী হা/১২২৫; ছহীহ আবুদাঊদ হা/২৪২১; ছহীহ নাসাঈ হা/৩৯৪০; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/২৫৩৩; মিশকাত হা/১৪৭৮)
(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরেও তাঁর সুন্নাত অনুযায়ী ছাহাবীগণের মধ্যে প্রত্যেক পরিবারের পক্ষ থেকে একটা করে কুরবানী করার প্রচলন ছিল। যেমন আতা ইবনু ইয়াসির ছাহাবী আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ)-কে রাসূলের যুগে কেমনভাবে কুরবানী করা হ’ত মর্মে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘একজন লোক একটি বকরী দ্বারা নিজের ও নিজের পরিবারের পক্ষ হ’তে কুরবানী দিত। অতঃপর তা নিজে খেত ও অন্যকে খাওয়াত (ছহীহ তিরমিযী হা/১২১৬ কুরবানী অধ্যায়; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/২৫৩৩ নিজ পরিবারের পক্ষ হতে একটা বকরী কুরবানী করা অনুচ্ছেদ, কুরবানী অধ্যায়)
(৪) প্রখ্যাত ছাহাবী আবু সারীহা (রাঃ) বলেন, ‘একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটা অথবা দু’টা করে বকরী কুরবানী  করা  হ’ত (ছহীহ  ইবনু  মাজাহ  হা/২৫৪৭)।  ইমাম শাওকানী (রহঃ) উপরোক্ত পরপর তিনটি হাদীছ পেশ করে বলেন, হক কথা হ’ল, একটি পরিবারের পক্ষ হ’তে একটি ছাগলই যথেষ্ট, যদিও সেই পরিবারের সদস্য সংখ্যা শতাধিক হয়’ (নায়লুল আওত্বার ৬/১২১ পৃঃ, একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কুরবানী করাই যথেষ্ট অনুচ্ছেদ)
ভাগা কুরবানী : সফরে থাকাকালীন সময়ে ঈদুল আযহা উপস্থিত হ’লে একটি পশুতে একে অপরে শরীক হয়ে ভাগে কুরবানী করা যায়। যেমন-
(ক) আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হ’ল। তখন আমরা সাত জন একটি গরুতে ও দশ জন একটি উটে শরীক হ’লাম (ছহীহ তিরমিযী হা/১২১৪; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩১২৮, ছহীহ নাসাঈ হা/৪০৯০; সনদ ছহীহ, আলবানী, মিশকাত হা/১৪৬৯, কুরবানী অনুচ্ছেদ)
(খ) জাবির (রাঃ) বলেন, হুদায়বিয়ার সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তখন একটি গরুতে সাত জন ও একটি উটে সাত শরীক হয়ে কুরবানী করেছিলাম (ছহীহ মুসলিম হা/১৩১৮ হজ্জ অধ্যায়; ছহীহ আবুদাঊদ হা/২৪৩৫; ছহীহ তিরমিযী হা/১২১৪; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩১৩২)
(গ) জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে হজ্জের সফরে ছিলাম। তখন সাত জনের পক্ষ থেকে একটি উট এবং সাত জনের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেছিলাম (ছহীহ মুসলিম ২/৯৫৫ পৃঃ)। উল্লেখ্য, উক্ত রাবী জাবির থেকে ছহীহ মুসলিমে সফর সংক্রান্ত আরো হাদীছ রয়েছে।
বিভ্রান্তির কারণ হ’ল, জাবের (রাঃ) বর্ণিত আবুদাঊদের ব্যাখ্যাশূন্য হাদীছটি। সেখানে বলা হয়েছে, গরুতে সাতজন আর উটে সাতজন’। এখানে সফর না মুক্বীম তা বলা হয়নি। কিন্তু এটি যে সফরের হাদীছ তা জাবের (রাঃ) বর্ণিত অন্যান্য হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। দ্বিতীয়তঃ ইমাম আবূদাঊদ জাবের বর্ণিত সফরের হাদীছগুলি যে অধ্যায়ে  বর্ণনা করেছেন এই ব্যাখ্যাশূন্য হাদীছটিও সে অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং বিষয়টি আরো স্পষ্ট। তৃতীয়তঃ হাদীছে বলা হয়েছে ‘সাত জনের’ পক্ষ থেকে অথচ সমাজে (মুক্বীম অবস্থায়) চালু আছে সাত পরিবারের পক্ষ থেকে। অথচ সফর অবস্থাতেও সাত পরিবারের অনুমতি নেই। আরো স্পষ্ট হ’ল সাত জনের প্রেক্ষাপট কেবল সফর অবস্থায় সৃষ্টি হয়। আর মুক্বীম অবস্থায় কুরবানী পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন রাসূল (ছাঃ) মদীনায় থাকা অবস্থায় করতেন। চতুর্থতঃ অনেকে বলেন, সফরের হাদীছগুলো আম। যদি আম হয় তাহ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ মুক্বীম অবস্থায় ভাগা কুরবানী করতেন মর্মে দলীল কোথায়? ‘উপরন্তু কুরবানী হ’ল পিতা ইবরাহীমের সুন্নাত। আর তা ছিল ইসমাঈলের জীবনের বিনিময়ে আল্লাহ্র পক্ষ হ’তে পাঠানো একটি পশুর জীবন। অর্থাৎ দুম্বা। এক্ষণে যদি আমরা ভাগা কুরবানী করি, তাহ’লে পশুর হাড়-হাড্ডি ও গোশত ভাগ করতে পারব, কিন্তু তার জীবনটা কার ভাগে পড়বে? অতএব ইবরাহীমী ও মুহাম্মাদী সুন্নাতের অনুসরণে নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হ’তে আল্লাহ্র রাহে একটি জীবন তথা একটি পূর্ণাঙ্গ পশু কুরবানী দেওয়া উচিত, পশুর দেহের কোন খন্ডিত অংশ নয়’ (বিস্তারিত দ্রঃ আত-তাহরীক জানুয়ারী ২০০২, প্রশ্নোত্তর সংখ্যা (১/১০৬; মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা পৃঃ ১৯-২০)





বিষয়সমূহ: কুরবানী
প্রশ্ন (১৫/২৫৫) : পিতা-মাতার কথা মনে আসলে তাদের জন্য আমি দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করি। এরূপ আমল শরী‘আতসম্মত কি?
প্রশ্ন (১৯/৩৭৯) : পরীক্ষার কারণে আমি কয়েকটি ছিয়াম রাখতে পারিনি। এক্ষেত্রে আমাকে কি ক্বাযা ও কাফফারা দু’টোই দিতে হবে? - -আনীসুল হক, বৃ-কুষ্টিয়া, বগুড়া।
প্রশ্ন (৯/২৪৯) : হজ্জের সফরে আরাফার দিনে গোসল করা কি সুন্নাত? - -মুশতাক আহমাদ, মোহনপুর, রাজশাহী।
প্রশ্ন (২৮/৩৪৮) : ডাক্তারের নিকটে কোন রোগের চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি শারঈ ঝাড়-ফুঁকের চিকিৎসা নেওয়া যাবে কি?
প্রশ্ন (২৮/২২৮) : স্বামীর চাচা বা মামা তথা চাচা শ্বশুর বা মামা শ্বশুর কি স্ত্রীর মাহরাম হিসাবে গণ্য হবেন। তাদের সামনে কি পর্দা করতে হবে?
প্রশ্ন (৩/১৬৩) : হালীমা, সালমা, রহীমা ইত্যাদি নাম রাখার বিধান কী? এগুলি আল্লাহর গুণবাচক নাম কি? - -বদীউয্যামানকালিয়াকৈর, গাযীপুর।
প্রশ্ন (৩৯/৭৯) : দাইয়ূছ কাদেরকে বলা হয়? এদের পরিণতি কি?
প্রশ্ন (২৭/৬৭) : উপরে উঠতে ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নীচে নামতে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতে হবে’ বিষয়টি কি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত?
প্রশ্ন (৩৯/১১৯) : ফরয ছালাতের পরে ইমাম মুছল্লীদের দিকে ফিরে বসতে পারেন কি? মাত্র দুই বা তিন ওয়াক্ত ছালাতে বসতে হবে মর্মে কোন বিধান আছে কি?
প্রশ্ন (৩/৩৬৩) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, হাদীছে সূরা ফাতিহা শেষে কেবল একবার নয় তিনবার আমীন বলার নির্দেশও এসেছে। সুতরাং হাদীছ নয়, বরং ফক্বীহগণ হাদীছ থেকে কি দলীল নিয়েছেন তা দেখতে হবে। একথা সঠিক কি? - -মুরশেদ খান, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
প্রশ্ন (৯/৩২৯) : ইমামের পিছনে প্রথম কাতার থেকে শারঈ পর্দাসম্মতভাবে মহিলারা কাতারের বামে ও পুরুষরা ডানে দাঁড়ায়। এভাবে জামা‘আতে ছালাত আদায় বৈধ হবে কি? উল্লেখ্য যে, মহিলাদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে মসজিদের পিছনের দিকে ছালাতের ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে যায়। - -রফীকুল ইসলাম, কোরপাই, বুড়িচং, কুমিল্লা।
প্রশ্ন (৩১/১৫১) : চার রাক‘আত সুন্নাতের শেষ দু’রাক‘আতে কী অন্য সূরা মিলাতে হয়? - -নুহা, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী।
আরও
আরও
.