মহান আল্লাহ আদম ও হাওয়া থেকে মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন (নিসা ৪/১)। সে হিসাবে পৃথিবীর সব মানুষের মধ্যেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন রয়েছে। তবে বিশেষ ভাবে মুসলিম জাতি সৃষ্টি ও আক্বীদাগত উভয় দিক দিয়ে সুদৃঢ় ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ إِخْوَةٌ ‘মুমিনগণ পরস্পরে ভাই ব্যতীত নয়’ (হুজুরাত ৪৯/১০)। সুতরাং ভাই ভাই হিসাবে তাদের পারস্পরিক আচরণ কেমন হবে এবং তাদের কিরূপ শিষ্টাচার বজায় রাখতে হবে এ বিষয়ে বিস্তর বিবরণ রয়েছে ইসলামে। যেগুলি পালন করলে ইহকালে জীবন-যাপন যেমন সুন্দর ও সুখময় হবে, তেমনি পরকালে প্রভূত কল্যাণ লাভ করা যাবে। ভ্রাতৃত্বের আদব সম্পর্কে আলোচ্য নিবন্ধে আলোচনা করা হ’ল।-
১. সদাচরণ করা :
প্রত্যেক মানুষের সাথে উত্তম আচরণ করা মুমিনের কর্তব্য। বিশেষ করে মুসলিম ভাইদের সাথে সদা সুন্দর আচার-ব্যবহার বজায় রাখা যরূরী। আর এটা রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশও বটে। আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বলেছেন,اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ- ‘তুমি যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর, মন্দ কাজের পরপরই ভাল কাজ কর, ভাল কাজ মন্দকে দূরীভূত করে দিবে। আর মানুষের সাথে উত্তম আচরণ কর’।[1] একই মর্মে আবুদ দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি,مَا مِنْ شَىْءٍ يُوضَعُ فِى الْمِيزَانِ أَثْقَلُ مِنْ حُسْنِ الْخُلُقِ وَإِنَّ صَاحِبَ حُسْنِ الْخُلُقِ لَيَبْلُغُ بِهِ دَرَجَةَ صَاحِبِ الصَّوْمِ وَالصَّلاَةِ- ‘সচ্চরিত্র ও সদাচারই দাঁড়িপাললায় সবচাইতে ভারী হবে। সচ্চরিত্রবান ও সদাচারী ব্যক্তি তার সদাচার ও চরিত্র মাধুর্য দ্বারা অবশ্যই ছায়েম ও মুছল্লীর পর্যায়ে পৌঁছে যায়’।[2]
২. দোষ-ত্রুটি গোপন করা :
মানুষ মাত্রেরই দোষ-ত্রুটি থাকে। মানুষের এ দোষ সংশোধনের জন্য তাকেই বলা উচিত। অন্যথা তা প্রকাশ না করে গোপন রাখা উচিত। কাউকে অপদস্ত করার জন্য তার দোষ জনসমক্ষে প্রকাশ করা আদৌ উচিত নয়। বরং দোষ গোপন রাখাতে অশেষ ছওয়াব রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ، وَمَنْ كَانَ فِى حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللهُ فِى حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না এবং তাকে যালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। যে কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের একটি বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তা‘আলা কিবয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন’।[3]
৩. সৎকর্মশীল ব্যক্তিকে বন্ধু হিসাকে নির্বাচন করা :
বন্ধু নির্বাচনে বা ভ্রাতৃত্ব স্থাপনে সর্বদা সৎকর্মশীল ব্যক্তিকে নির্বাচন করা উচিত। কেননা প্রত্যেক মানুষের মাঝে তার বন্ধু বা সাথীর প্রভাব প্রতিফলিত হয়। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন,الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ- ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে’।[4] রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ হচ্ছে মুমিন-মুত্তাক্বীকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা। এ মর্মে অন্য একটি হাদীছে এসেছে, আবূ সাঈদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِىٌّ- ‘তুমি মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন কেবল পরহেযগার লোকে খায়’।[5]
৪. মন্দদের সাহচর্য থেকে দূরে থাকা :
খারাপ লোকদের থেকে দূরে থাকাই ইসলামের নির্দেশ। যাতে তাদের কোন মন্দ প্রভাব অন্যদের মধ্যে না পড়ে। আল্লাহ বলেন,لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللهَ وَرَسُولَهُ، ‘আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায়কে তুমি পাবে না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করে’ (মুজাদালাহ ৫৮/২২)। তিনি আরো বলেন,وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا- ‘আর তুমি ঐ ব্যক্তির আনুগত্য করো না যার অন্তরকে আমরা আমাদের স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং সে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও তার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে গেছে’ (কাহফ ১৮/২৮)। তিনি অন্যত্র বলেন,وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ، ‘আর যে ব্যক্তি আমার অভিমুখী হয়েছে, তুমি তার রাস্তা অবলম্বন কর’ (লোক্বমান ৩১/১৫)।
আর হাদীছে সৎসঙ্গী ও খারাপ সঙ্গীর উদাহরণ দেওয়া হয়েছে আতর ওয়ালা ও হাফর ওয়ালার সাথে। আবূ মূসা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالسَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الْكِيرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيحًا خَبِيثَةً- ‘সৎসঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হ’ল কস্ত্তরীওয়ালা ও কামারের হাপরের ন্যায়। কস্ত্তরীওয়ালা হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তার নিকট হ’তে তুমি কিছু খরীদ করবে কিংবা তার নিকট হ’তে তুমি সুবাস পাবে। আর কামারের হাপর হয়তো তোমার কাপড় পুড়িয়ে দিবে কিংবা তুমি তার নিকট হ’তে দুর্গন্ধ পাবে’।[6] সুতরাং মন্দদের থেকে দূরে থাকার সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে। যাতে তাদের মাধ্যমে ভাল যারা তারা প্রভাবিত হয়ে মন্দ গুণ পরিগ্রহ না করে।
৫. আচার-ব্যবহারে লজ্জাশীলতা বজায় রাখা :
লজ্জাশীলতা ঈমানের অঙ্গ। তাই মুমিনের মাঝে সদা লাজুকতা থাকা বাঞ্ছনীয় এবং তার সকল আচরণে লজ্জার প্রভাব থাকা কর্তব্য। হাদীছে লজ্জাকে ঈমানের বিশেষ শাখা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মর্মে হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,الإِيْمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُوْنَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيْقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيْمَانِ- ‘ঈমানের সত্তরটিরও অধিক শাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হ’ল ‘আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই’- এ ঘোষণা দেওয়া। সর্বনিম্ন শাখা হ’ল রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত অপসারণ করা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি শাখা’।[7]
৬. হাসি মুখে থাকা :
যারা সর্বদা হাসি-খুশি থাকে তাদেরকে সকলে পসন্দ করে। গম্ভীর হয়ে থাকা মানুষকে অন্যরা পসন্দ করে না। তাছাড়া সদা হাসিমুখে থাকা ও মানুষের সাথে সহাস্য বদনে আচার-ব্যবহার করা ছওয়াব লাভের উপায়। হাদীছে এসেছে, আবূ যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, تَبَسُّمُكَ فِى وَجْهِ أَخِيكَ لَكَ صَدَقَةٌ، ‘তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য ছাদাকাস্বরূপ’।[8] অপর একটি হাদীছে এসেছে, আবু যর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বলেছেন,لاَتَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوْفِ شَيْئًا وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلِيْقٍ- ‘ভাল কাজের কোনটাকেই তুচ্ছ মনে করবে না। যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎও হয়’।২১
৭. ওয়াদা ভঙ্গ না করা :
প্রতিশ্রুতি পূরণ করা ঈমানের পরিচায়ক। পক্ষান্তরে ওয়াদা ভঙ্গ করা মুনাফিকীর লক্ষণ। আর ওয়াদা ভঙ্গকারীকে কেউ পসন্দ করে না। তাই মুমিনকে সদা ওয়াদা রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন,آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاَثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ- ‘মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি- ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ২. যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং ৩. আমানত রাখা হ’লে খিয়ানত করে’।[9] সুতরাং মুমিন ভাইয়ের সাথে কৃত ওয়াদা রক্ষা করার সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে।
৮. ওযর বা কৈফিয়ত গ্রহণ করা :
মানুষকে আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ করে সৃষ্টি করেননি। প্রত্যেকের কিছু না কিছু অক্ষমতা ও অপারগতা আছে। সুতরাং কারো কোন ক্ষেত্রে ত্রুটি বা কাজে অক্ষমতা পরিলক্ষিত হ’লে সেক্ষেত্রে তার ওযর বা কৈফিয়ত শুনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কেননা মানুষের ভুল বা অপরাধের ক্ষেত্রে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া উচিত। মুগীরাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, সা‘দ ইবনু উবাদাহ (রাঃ) বলেছেন,... وَلاَ شَخْصَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْعُذْرُ مِنَ اللهِ مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ بَعَثَ اللهُ الْمُرْسَلِينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ وَلاَ شَخْصَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْمِدْحَةُ مِنَ اللهِ مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ وَعَدَ اللهُ الْجَنَّةَ- ‘...আর মানুষের ওযর-আপত্তি দূর করা আল্লাহর চেয়ে অধিক কেউ ভালবাসে না। এ কারণে তিনি মানুষের মাঝে সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী নবী-রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন, আর আল্লাহ নিজের প্রশংসা-স্ত্ততি শুনতে সর্বাপেক্ষা ভালবাসেন বলে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন’।[10]
৯. ভাই ও বন্ধুদের প্রয়োজন পূরণ করা :
মানুষের নানা প্রয়োজন থাকে। তাদের চাহিদা পূরণ করা এবং তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা প্রত্যেকের কর্তব্য। আর মানুষের প্রয়োজন পূরণ করা অন্যতম ছওয়াবের কাজ। যাকে মসজিদে নববীতে মাসাধিককাল ই‘তিকাফ করা অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন,
أَحَبُّ النَّاسِ إِلَى اللهِ أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ وَأَحَبُّ الأَعْمَالِ إِلَى اللهِ سُرُورٌ تُدْخِلُهُ عَلَى مُسْلِمٍ أَوْ تَكْشِفُ عَنْهُ كُرْبَةً أَوْ تَقْضِي عَنْهُ دِينًا أَوْ تَطْرُدُ عَنْهُ جُوعًا وَلَأَنْ أَمْشِيَ مَعَ أَخِيهِ فِي حَاجَةٍ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَعْتَكِفَ فِي هَذَا الْمَسْجِدِ يَعْنِي مَسْجِدَ الْمَدِينَةِ شَهْرًا وَمَنْ كَفَّ غَضَبَهُ سَتَرَ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ كَظَمَ غَيْظَهُ وَلَوْ شَاءَ أَنْ يُمْضِيَهُ أَمْضَاهُ مَلأَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ قَلْبَهُ أَمْنًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ مَشَى مَعَ أَخِيهِ فِي حَاجَةٍ حَتَّى أَثْبَتَهَا لَهُ أَثْبَتَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ قَدَمَهُ عَلَى الصِّرَاطِ يَوْمَ تَزِلُّ فِيْهِ الأَقْدَامُ-
‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় লোক হ’ল সেই ব্যক্তি যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশী উপকারী। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হ’ল, একজন মুসলিমের হৃদয়কে খুশীতে পরিপূর্ণ করা অথবা তার কোন কষ্ট দূর করে দেওয়া অথবা তার পক্ষ থেকে তার ঋণ আদায় করে দেওয়া অথবা তার ক্ষুধা দূর করে দেওয়া। এই মসজিদে (নববীতে) একমাস ধরে ই‘তিকাফ করার চাইতে মুসলিম ভাইয়ের কোন প্রয়োজন মিটাতে যাওয়া আমার নিকট অধিক পসন্দনীয়। যে ব্যক্তি নিজ ক্রোধ সংবরণ করে নিবে, আল্লাহ তার দোষ গোপন করে নিবেন। যে ব্যক্তি নিজ রাগ সামলে নিবে; অথচ সে ইচ্ছা করলে তা প্রয়োগ করতে পারত, সে ব্যক্তির হৃদয়কে আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন সন্তুষ্ট করবেন। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য যাবে এবং তা পূরণ করে দিবে, আল্লাহ সেদিন তার পদযুগলকে সুদৃঢ় রাখবেন, যেদিন পদযুগল পিছলে যাবে’।[11]
১০. প্রয়োজনের সময় তাদের খেদমত করা :
বিভিন্ন সময়ে মানুষ অপরের মুখাপেক্ষী হয়। যে সময়ে অন্যের সাহায্য ভিন্ন চলা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই তাদের প্রয়োজনের সময় তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা যরূরী। এতে ভ্রাতৃত্ব মযবূত ও স্থায়ী হয়। আর এতে ছওয়াব পাওয়া যায় এবং আল্লাহর সাহায্য লাভ করা যায়। এ মর্মে আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللهُ عَلَيْهِ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَاللهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِى عَوْنِ أَخِيهِ وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِى بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلاَّ نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلاَئِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ وَمَنْ بَطَّأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ-
‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের দুনিয়ার বিপদসমূহের কোন একটি বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা তার আখিরাতের বিপদসমূহের মধ্য হ’তে একটি (কঠিন) বিপদ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত লোকের অভাব (সাহায্যের মাধ্যমে) সহজ করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তাকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুমিনের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকেন, যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে। যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের জন্য কোন পথ অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। যখন কোন দল আল্লাহর কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং জ্ঞানচর্চা করে, তাদের ওপর আল্লাহর তরফ থেকে প্রশান্তি নাযিল হ’তে থাকে, আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয় এবং ফেরেশতাগণ তাদেরকে ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকটবর্তীদের (ফেরেশতাগণের) নিকট তাদের উল্লেখ করেন। আর যার আমল তাকে পিছিয়ে দেয় তার বংশমর্যাদা তাকে এগিয়ে দিতে পারে না’।[12]
১১. মুসলিম ভাইয়ের কল্যাণ করার চেষ্টা করা :
পার্থিব ও পরকালীন উভয় দিক দিয়ে মুসলিম ভাইয়ের কল্যাণ করার চেষ্টা করা। তার অকল্যাণ হয় এমন কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকা যরূরী। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কর না, ক্ষতিগ্রস্ত হইও না’।[13] তাই অন্য ভাইয়ের কল্যাণের চেষ্টা করতে হবে। জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, نَهَى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الرُّقَى فَجَاءَ آلُ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّهُ كَانَتْ عِنْدَنَا رُقْيَةٌ نَرْقِى بِهَا مِنَ الْعَقْرَبِ وَإِنَّكَ نَهَيْتَ عَنِ الرُّقَى. قَالَ فَعَرَضُوهَا عَلَيْهِ. فَقَالَ مَا أَرَى بَأْسًا مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَنْفَعْهُ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঝাড়ফুঁক করা হ’তে নিষেধ করেছেন। (এ নিষেধের পর) আমর ইবনু হাযম-এর বংশের কয়েকজন লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাদের কাছে এমন একটি মন্ত্র আছে, যার দ্বারা আমরা বিচ্ছুর দংশনে ঝাড়ফুঁক করে থাকি। অথচ আপনি ঝাড়ফুঁক হ’তে নিষেধ করেছেন। রাবী বলেন, অতঃপর তারা মন্ত্রটি নবী করীম (ছাঃ)-কে পড়ে শুনাল। তখন তিনি বললেন, আমি এতে দোষের কিছু দেখছি না। অতএব তোমাদের যে কেউ নিজের কোন ভাইয়ের কোন উপকার করতে পারে, সে যেন অবশ্যই তার উপকার করে’।[14]
১২. অসুস্থ হ’লে তাদের দেখতে যাওয়া :
অসুখ-বিসুখ আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। যা মুমিনের জন্য পরীক্ষা। তাই কোন মুসলিম ভাইয়ের অসুখ হ’লে তাকে দেখতে যাওয়া ও তাকে সান্ত্বনা দেওয়া কর্তব্য। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لِلْمُؤْمِنِ عَلَى الْمُؤْمِنِ سِتُّ خِصَالٍ يَعُوْدُهُ إِذَا مَرِضَ وَيَشْهَدُهُ إِذَا مَاتَ وَيُجِيْبُهُ إِذَا دَعَاهُ وَيُسَلِّمُ عَلَيْهِ إِذَا لَقِيَهُ وَيُشَمِّتُهُ إِذَا عَطَسَ وَيَنْصَحُ لَهُ إِذَا غَابَ أَوْ شَهِدَ- ‘এক মুমিনের জন্য আরেক মুমিনের উপর ছয়টি দায়িত্ব রয়েছে, (১) সে অসুস্থ হ’লে তাকে দেখতে যাবে, (২) মারা গেলে তার জানাযায় উপস্থিত হবে, (৩) ডাকলে তাতে সাড়া দিবে, (৪) দেখা হ’লে তাকে সালাম করবে, (৫) হাঁচি দিলে তার জবাব দিবে এবং (৬) তার অনুপস্থিতি কিংবা উপস্থিতি সকল অবস্থায় তার শুভ কামনা করবে’।[15]
১৩. তাদের সাথে সাক্ষাৎ করা ও তাদের অবস্থা জানা :
ভাই-বোন, সঙ্গী-সাথীদের সাথে মাঝে-মধ্যে সাক্ষাৎ করে তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া যরূরী। এতে বহু নেকী রয়েছে এবং এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
أَنَّ رَجُلاً زَارَ أَخًا لَهُ فِىْ قَرْيَةٍ أُخْرَى فَأَرْصَدَ اللهُ لَهُ عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكًا فَلَمَّا أَتَى عَلَيْهِ قَالَ أَيْنَ تُرِيْدُ قَالَ أُرِيْدُ أَخًا لِى فِىْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ. قَالَ هَلْ لَكَ عَلَيْهِ مِنْ نِعْمَةٍ تَرُبُّهَا قَالَ لاَ غَيْرَ أَنِّى أَحْبَبْتُهُ فِىْ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ. قَالَ فَإِنِّى رَسُولُ اللهِ إِلَيْكَ بِأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أَحْبَبْتَهُ فِيْهِ-
‘এক ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করল। সে আরেক গ্রামে থাকে। আল্লাহ রাস্তায় তার অপেক্ষায় একজন ফেরেশতা বসিয়ে দিলেন। সে যখন সেখানে পৌঁছল, ফেরেশতা জিজ্ঞেস করল, কোথায় যেতে ইচ্ছা করেছ? সে বলল, ঐ গ্রামে আমার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে। ফেরেশতা বলল, তার কাছে তোমার কোন পাওনা আছে যে, তুমি তা আনবে? সে বলল, না, আমি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাকে ভালবাসি। তখন ফেরেশতা বলল, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার কাছে প্রেরিত হয়েছি। আল্লাহ তোমাকে এ সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আল্লাহর তোমাকে অনুরূপ ভালবাসেন, যেরূপ তুমি তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালবেসেছ’।[16] ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللهِ لَأُنَاسًا مَّا هُمْ بِأَنْبِيَاءَ وَلاَشُهَدَاءَ، يَغْبِطُهُمُ الْأَنْبِيَاءُ وَالشُّهَدَاءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِمَكَانِهِمْ مِّنَ اللهِ. قَالُوْا: يَارَسُوْلَ اللهِ تُخْبِرُنَا مَنْ هُمْ؟ قَالَ: هُمْ قَوْمٌ تَحَابُّوْا بِرَوْحِ اللهِ عَلَى غَيْرِ أَرْحَامٍ بَيْنَهُمْ، وَلاَ أَمْوَالٍ يَّتَعَاطَوْنَهَا، فَوَاللهِ إِنَّ وُجُوْهَهُمْ لَنُوْرٌ وَّإِنَّهُمْ لَعَلَى نُوْرٍ، لاَيَخَافُوْنَ إِذَا خَافَ النَّاسُ، وَلاَيَحْزَنُوْنَ إِذَا حَزِنَ النَّاسُ، وَقَرَأَ هَذِهِ الْآيَةَ: أَلاَ إِنَّ أَوْلِيْاءَ اللهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَهُمْ يَحْزَنُوْنَ-
‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা নবীও নন এবং শহীদও নন। কিন্তু ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাদের মর্যাদা দেখে নবী-শহীদগণও ঈর্ষা করবেন। ছাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে বলুন তারা কারা? তিনি বললেন, তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা শুধু আল্লাহর রূহ (কুরআনের সম্পর্ক) দ্বারা পরস্পরকে ভালবাসে। অথচ তাদের মধ্যে কোন প্রকার আত্মীয়তা নেই এবং তাদের পরস্পরে মাল-সম্পদের লেনদেনও নেই। আল্লাহর কসম! তাদের চেহারা হবে জ্যোতির্ময় এবং তারা উপবিষ্ট হবেন নূরের উপর। তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হবে না, যখন সমস্ত মানুষ ভীত থাকবে। তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না, যখন সকল মানুষ দুশ্চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে। অতঃপর তিনি কুরআনের এই আয়াত পড়েন, ‘জেনে রাখ! নিশ্চয়ই আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না’।[17]
১৪. হাদিয়া গ্রহণ করা :
কোন মুসলিম ভাই কোন হাদিয়া বা উপহার প্রদান করলে তা গ্রহণ করা উচিত। আর তা প্রত্যাখ্যান করা সুন্নাত পরিপন্থী কাজ। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন,أَجِيبُوا الدَّاعِىَ وَلاَ تَرُدُّوا الْهَدِيَّةَ وَلاَ تَضْرِبُوا الْمُسْلِمِينَ. ‘তোমরা দাওয়াত দানকারীর ডাকে সাড়া দাও, উপহারাদি ফেরত দিও না এবং মুসলিমদেরকে প্রহার করো না’।[18]
১৫.হাদিয়া প্রদান করা :
মুসলিম ভাইকে মাঝে-মধ্যে উপহার-উপঢৌকন প্রদান করা উচিত। কারণ এতে পারস্পরিক মহববত বৃদ্ধি পায়। হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, تَهَادُّوْا تَحَابُّوْا، ‘তোমরা উপহার বিনিময় কর, পারস্পরিক সম্প্রীতি লাভ করবে’।[19]
১৬. তাদের সম্মান রক্ষা করা ও তাদের দোষ-ত্রুটি দূর করা :
প্রতিটি মানুষের নিজস্ব সম্মান-মর্যাদা রয়েছে। তাদের সম্মান-মর্যাদা রক্ষা করা অপর মুমিনের দায়িত্বের অন্তর্গত। এতে বহু নেকী রয়েছে। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবূদ দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ رَدَّ اللهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- ‘যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের মান-সম্মানের উপর আঘাত প্রতিরোধ করে, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার মুখমন্ডল হ’তে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন’।[20] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ ذَبَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيْهِ بِالْغِيْبَةِ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يُّعْتَقَهُ مِنَ النَّارِ، ‘যে ব্যক্তি অন্য ভাইয়ের গীবত দমন করে তার সম্মান রক্ষা করল, আল্লাহর হক হ’ল তিনি তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন’।[21]
কোন মুসলিম ভাইয়ের মাঝে কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হ’লে তা দূর করার চেষ্টা করা কর্তব্য। কেননা কোন মানুষ নিজের দোষ সহসা অনুধাবন করতে পারে না। সেজন্য অন্যের কাছে সেটা ধরা পড়লে প্রচার না করে, তা সংশোধনের চেষ্টা করা যরূরী। এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,اَلْمُؤْمِنُ مِرْآةُ الْمُؤْمِنِ، وَالْمُؤْمِنُ أَخُو الْمُؤْمِنِ- ‘এক মুমিন অপর মুমিনের দর্পণ এবং এক মুমিন অপর মমিনের ভাই’।[22]
১৭. তাদের দোষ গোপণ করা এবং গুণ প্রকাশ করা :
কথায় বলে, দোষে-গুণে মানুষ। প্রতিটি মানুষের যেমন কিছু দোষ থাকতে পারে, তেমনি তাদের কোন না কোন গুণও অবশ্যই আছে। সুতরাং মুসলিম ভাইয়ের দোষ গোপন রেখে তার গুণ প্রকাশ করা উচিত। কারণ প্রত্যেকেই তার দোষ প্রকাশ হওয়া ও গুণ প্রচার হওয়াকে পসন্দ করে। অতএব মানুষ নিজের জন্য যা পসন্দ করে, অন্য ভাইয়ের জন্যও তাই পসন্দ করবে। আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ- ‘তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেটাই পসন্দ করবে, যা তার নিজের জন্য পসন্দ করে’।[23]
১৮. তাদের দেওয়া কষ্ট সহ্য করা ও রাগ না করা :
মানুষের সাথে চলাফেরায় অনেক সময় তাদের কোন আচরণে মনে কষ্ট হ’তে পারে। মুসলিম ভাইয়ের দেওয়া এই কষ্টে ধৈর্যধারণ করা উচিত। এতে অনেক ছওয়াব রয়েছে। ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,الْمُؤْمِنُ الَّذِى يُخَالِطُ النَّاسَ وَيَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ أَعْظَمُ أَجْرًا مِنَ الْمُؤْمِنِ الَّذِى لاَ يُخَالِطُ النَّاسَ وَلاَ يَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ- ‘যে মুমিন মানুষের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের জ্বালাতনে ধৈর্যধারণ করে সে ঐ মুমিন অপেক্ষা অধিক নেকীর অধিকারী হয়, যে জনগণের সাথে মেলামেশা করে না এবং তাদের জ্বালাতনে ধৈর্য ধারণ করে না’।[24]
মুসলিম ভাইয়ের কোন ব্যবহারে কষ্ট পেলেও রাগ না করে ধৈর্য ধারণ করা এবং রাগ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এমর্মে হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রাহ হ’তে বর্ণিত,أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَوْصِنِى قَالَ لاَ تَغْضَبْ فَرَدَّدَ مِرَارًا، قَالَ لاَ تَغْضَبْ- ‘এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট বলল, আপনি আমাকে অছিয়ত করুন। তিনি বললেন, তুমি রাগ করো না। লোকটি কয়েকবার তা বললে নবী করীম (ছাঃ) প্রত্যেক বারেই বললেন, রাগ করো না’।[25]
১৯. তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের জন্য দো‘আ করা :
মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দো‘আ করা। এতে প্রার্থনাকারীর জন্য ফেরেশতাগণ অনুরূপ দো‘আ করে থাকেন। এ মর্মে হাদীছে এসেছে, ছাফওয়ান ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনে ছাফওয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قَدِمْتُ الشَّامَ فَأَتَيْتُ أَبَا الدَّرْدَاءِ فِى مَنْزِلِهِ فَلَمْ أَجِدْهُ وَوَجَدْتُ أُمَّ الدَّرْدَاءِ فَقَالَتْ أَتُرِيْدُ الْحَجَّ الْعَامَ فَقُلْتُ نَعَمْ. قَالَتْ فَادْعُ اللهَ لَنَا بِخَيْرٍ فَإِنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ دَعْوَةُ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ لأَخِيْهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ عِنْدَ رَأْسِهِ مَلَكٌ مُوَكَّلٌ كُلَّمَا دَعَا لأَخِيْهِ بِخَيْرٍ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهِ آمِيْنَ وَلَكَ بِمِثْلٍ-
‘আমি সিরিয়াতে আবুদ দারদা (রাঃ)-এর ঘরে গেলাম। আমি তাকে পেলাম না; বরং সেখানে উম্মুদ দারদাকে পেলাম। তিনি বললেন, আপনি কি এ বছর হজ্জ পালন করবেন? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর নিকট আমাদের কল্যাণের জন্যে দো‘আ করবেন। কেননা নবী করীম (ছাঃ) বলতেন, একজন মুসলিম বান্দা তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দো‘আ করলে তা কবুল হয়। তার মাথার নিকটে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন, যখন সে তার ভাইয়ের জন্য প্রার্থনা করে তখন নিয়োজিত ফেরেশতা বলে থাকে, ‘আমীন এবং তোমার জন্যও অনুরূপ হোক’।[26]
২০. তাদের প্রতি বিনয়ী হওয়া ও তাদের সাথে অহংকার না করা :
বিনয়-নম্রতা মুমিন চরিত্রের ভূষণ। সবার সাথে এই নম্র আচরণ বজায় রাখা কর্তব্য। আর গর্ব-অহংকার সর্বদা পরিত্যাজ্য। কারো সাথে অহংকারী আচরণ করা সমীচীন নয়। নম্র-ভদ্র আচরণ ও শালীন ব্যবহার মানুষকে অন্যের কাছে প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য করে তোলে। তাই ইসলামে নম্র আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাদীছে এসেছে, ইয়ায ইবনু হিমার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ اللهَ أَوْحَى إِلَىَّ أَنْ تَوَاضَعُوْا حَتَّى لاَ يَبْغِىَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ وَلاَ يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ- ‘মহান আল্লাহ আমার নিকট (এ মর্মে) অহী পাঠিয়েছেন যে, তোমরা বিনয়ী হও, যতক্ষণ না একে অপরের উপর যুলুম করে এবং অহংকার করে’।[27]
২১. তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করা :
প্রত্যেক মানুষের কিছু না কিছু গোপনীয় বিষয় থাকে। তাই মুসলিম ভাইয়ের কোন গোপন বিষয় অবগত হ’লে তা গোপন রাখা কর্তব্য। এ মর্মে হাদীছে এসেছে, জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا حَدَّثَ الرَّجُلُ بِالْحَدِيثِ ثُمَّ الْتَفَتَ فَهِىَ أَمَانَةٌ- ‘কোন ব্যক্তি কোন কথা বলার পর মুখ ঘুরালে (অন্য কেউ শুনছে কি-না তা লক্ষ্য করলে) তা আমানত স্বরূপ’।[28]
২২. তাদেরকে সদুপদেশ প্রদান করা :
বিভিন্ন বিষয়ে মুসলিম ভাইকে উপদেশ দেওয়া উচিত। যাতে তার ত্রুটি সংশোধিত হয় এবং সে ইবাদতের কাজে উৎসাহিত হয়। এমর্মে হাদীছে এসেছে, তামীম আদ-দারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,الدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ قُلْنَا لِمَنْ قَالَ لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُوْلِهِ وَلأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَعَامَّتِهِمْ- ‘দ্বীন হচ্ছে উপদেশ দানের নাম। আমরা আরয করলাম, কার জন্য? তিনি বললেন, আল্লাহর, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূল, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের জন্য’।[29]
২৩. তাদের প্রতি সহমর্মী হওয়া :
ভ্রাতৃত্বের মযবূত বন্ধনে আবদ্ধ মুসলিম ভাইয়ের সুখে যেমন আনন্দিত হওয়া উচিত, তেমিন তার দুঃখে ব্যথিত হওয়া এবং তাকে সান্ত্বনা প্রদান করা কর্তব্য। এ মর্মে আবূ মূসা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ الْمُؤْمِنَ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ، يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا. وَشَبَّكَ أَصَابِعَهُ. ‘এক মুমিন আপর মুমিনের জন্যে প্রাচীর, যার একাংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে থাকে। এই বলে তিনি তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো একটার মধ্যে আরেকটা প্রবেশ করালেন’।[30]
২৪. তাদেরকে পরিত্যাগ না করা :
কোন কারণে মুসলিম ভাইয়ের সাথে মনোমালিন্য হ’লেও তাকে পরিত্যাগ করা বা তার সাথে কথা-বার্তা ও দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। আবূ আইউব আনছারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,قَالَ لاَ يَحِلُّ لِرَجُلٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثِ لَيَالٍ، يَلْتَقِيَانِ فَيُعْرِضُ هَذَا وَيُعْرِضُ هَذَا، وَخَيْرُهُمَا الَّذِى يَبْدَأُ بِالسَّلاَمِ- ‘কোন লোকের জন্য বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে যে, দু’জনে দেখা হ’লেও একজন এদিকে আরেকজন ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখবে। তাদের মধ্যে যে আগে সালাম দিবে, সেই উত্তম’।[31]
২৫. তাদের ব্যাপারে অন্যের গীবত-তোহমত ও চোগলখুরী না শোনা :
মুসলিম ভাইয়ের দোষ অন্যের কাছে প্রকাশ করা থেকে যেমন বিরত থাকতে হবে, তেমনি কোথাও কোন ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা হ’লে তা বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। নতুবা তা শ্রবণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে সাহল ইবনু মু‘আয ইবনু আনাস আল-জুহানী (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ حَمَى مُؤْمِنًا مِنْ مُنَافِقٍ. بَعَثَ اللهُ مَلَكًا يَحْمِى لَحْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ وَمَنْ رَمَى مُسْلِمًا بِشَىْءٍ يُرِيدُ شَيْنَهُ بِهِ حَبَسَهُ اللهُ عَلَى جِسْرِ جَهَنَّمَ حَتَّى يَخْرُجَ مِمَّا قَالَ-
‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে মুনাফিক থেকে রক্ষা করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার শরীর জাহান্নাম থেকে রক্ষার জন্য একজন ফেরেশতা প্রেরণ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করবে, তাকে মহান আল্লাহ জাহান্নামের সেতুর উপর প্রতিরোধ ব্যবস্থা করবেন যতক্ষণ না তার কৃতকর্মের ক্ষতিপূরণ হয়’।[32]
উপসংহার :
পৃথিবীতে সকল মানুষ ভাই ভাই হিসাবে মিলেমিশে বসবাস করতে পারলে এবং পারস্পরিক শিষ্টাচার বজায় রাখতে পারলে সমাজ সুন্দর হবে। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করবে এবং অনাচার-অবিচার, অস্থিতিশীলতা দূরীভূত হবে। সকলের জীবন যাত্রা হবে নিরাপদ। কেউ কারো হক নষ্ট করতে প্রবৃত্ত হবে না। বরং একে অন্যের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হবে। পরকালীন জীবনেও তেমনি অশেষ ছওয়াব লাভ করা যাবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভ্রাতৃত্বের আদব সমূহ পালনের তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
[1]. তিরমিযী হা/১৯৮৭; মিশকাত হা/৫০৮৩, সনদ হাসান।
[2]. তিরমিযী হা/২০০৩; ছহীহাহ হা/৮৭৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭২৬।
[3]. বুখারী হা/২৪৪২, ৬৯৫১; মুসলিম হা/২৫৮০; মিশকাত হা/৪৯৫৮।
[4]. আবূদাঊদ হা/৪৯৩৩; তিরমিযী হা/২৩৭৮; মিশকাত হা/৫০১৯; ছহীহাহ হা/৯২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫৪৫।
[5]. আবূদাঊদ হা/৪৮৩২; তিরমিযী হা/২৩৯৫; মিশকাত হা/৫০১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৩৪১।
[6]. বুখারী হা/৫৫৩৪, ২১০১; মুসলিম হা/২৬২৮; মিশকাত হা/৫০১০।
[7]. বুখারী হা/৯; মুসলিম হা/৩৫; মিশকাত হা/৫।
[8]. তিরমিযী হা/১৯৫৬; মিশকাত হা/৫০১৮; ছহীহাহ হা/৫৭২।
[9]. বুখারী হা/৩৩, ২৬৮২, ২৭৪৯; মুসলিম হা/৫৯; মিশকাত হা/৫৫।
[10]. বুখারী হা/৭৪১৬; মুসলিম হা/১৪৯৯; মিশকাত হা/৩৩০৯।
[11]. ত্বাবারানী, আল-আওসাত্ব; ছহীহুত তারগীব হা/২৬২৩; ছহীহাহ হা/৯০৬।
[12]. মুসলিম হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪।
[13]. ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০; ছহীহাহ হা/২৫০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫১৭।
[14]. মুসলিম হা/২১৯৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৬০১৬৯; মিশকাত হা/৪৫২৯।
[15]. তিরমিযী হা/২৭৩৭; মিশকাত হা/৪৬৩০; ছহীহাহ হা/৮৩২।
[16]. মুসলিম হা/২৫৬৭; মিশকাত হা/৫০০৭।
[17]. আবূদাঊদ হা/৩৫২৭; মিশকাত হা/৫০১২, ছহীহ লি-গায়রিহি।
[18]. আহমাদ হা/৩৮৩৮; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১৫৭; ইরওয়া হা/১৬১৬; আত-তা‘লীকাতুল হিসান হা/৫৫৭৪।
[19]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫৯৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৩০০৪; ইরওয়া হা/১৬০১।
[20]. তিরমিযী হা/১৯৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬২৬২; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৪৮।
[21]. আহমাদ হা/২৭৬০৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৬২৪০; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৪৭-৪৮।
[22]. আবূদাঊদ হা/৪৯১৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯২৬, হাদীছ হাসান।
[23]. বুখারী হা/১৩; মুসলিম হা/৪৫।
[24]. তিরমিযী হা/২৫০৭; ইবনু মাজাহ হা/৪০৩২; মিশকাত হা/৫০৮৭; ছহীহাহ হা/৯৩৯।
[25]. বুখারী হা/৬১১৬।
[26]. মুসলিম হা/২৭৩৩; ছহীহাহ হা/১৩৩৯।
[27]. মুসলিম হা/২৮৬৫; আবূদাঊদ হা/৪৮৯৫।
[28]. আবূদাঊদ হা/৪৮৬৮; তিরমিযী হা/১৯৫৯; ছহীহাহ হা/১০৮৯।
[29]. মুসলিম হা/৫৫; নাসাঈ হা/৪১৯৭; মিশকাত হা/৪৯৬৬।
[30]. বুখারী হা/৪৮১, ৬০২৬; মুসলিম হা/২৫৮৫; মিশকাত হা/৪৯৫৫।
[31]. বুখারী হা/৬০৭৭, ৬২৩৭; মুসলিম হা/২৫৬০।
[32]. আবূদাঊদ হা/৪৮৮৩; মিশকাত হা/৪৯৮৬, সনদ হাসান।