গোবরচাকা (নবীনগর), সোনাডাঙ্গা, খুলনা ২১শে মার্চ রবিবার : অদ্য বাদ আছর ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ খুলনা যেলার উদ্যোগে যেলা সদরের গোবরচাকা (নবীনগর) পল্লীমঙ্গল হাইস্কুল ময়দানে অনুষ্ঠিত যেলা সম্মেলনে প্রদত্ত প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব জনগণের প্রতি উপরোক্ত আহবান জানান। তিনি বলেন, নবী-রাসূলগণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াত প্রাপ্ত। তাই তাদের দেখানো পথই মুক্তির পথ। অথচ শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে সমসাময়িক অধিকাংশ মানুষ তাদেরকে মানেনি। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) ছিলেন মানব জাতির মুক্তির পথের দিশারী। সার্বিক জীবনে তাঁর দেখানো পথেই মানুষের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তি নিহিত। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ সে পথেই মানুষকে আহবান জানায়।

তিনি বলেন, খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতকে দিল্লী থেকে এসে বৃহত্তর খুলনা-যশোর সহ সুন্দরবন ঘেঁষে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে খান জাহান আলী ইসলামী খেলাফত কায়েম করেছিলেন। রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত অনুসরণে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ষাট গুম্বজ মসজিদ থেকেই তিনি শাসন পরিচালনা করতেন। মসজিদে তাঁর বসার জায়গাটির নমুনা আজও আছে। আর সেই মসজিদেই তিনি ছালাত রত অবস্থায় ৯০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তখন বাগেরহাটের নাম ছিল ‘খলীফাবাদ’। তাঁরই খননকৃত ৩৬৫ বিঘার বিশালায়তন দীঘির পাড়ে তাঁর কবর হয়। এখন লোকেরা সেই বীর সেনাপতি ও খলীফাকে বানিয়েছে ‘পীর’ এবং তাঁর কবরকে পূজার স্থান বানিয়ে জাঁকজমকের সাথে বিনা পুঁজির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা হয়েছে সিলেটের কথিত পীর শাহজালাল ও শাহ পরানের।

পরবর্তীকালে গত শতাব্দীতে আমার আববা মাওলানা আহমাদ আলী (১৮৮৩-১৯৭৬) ও তাঁর ছাত্ররা দক্ষিণবঙ্গ এলাকা আবাদ করেন। এমনকি জোঁকের কামড় খেয়ে খাল-বিল সাঁতরে, পায়ে হেঁটে ও নৌকায় চড়ে খোলপেটুয়া নদীর তীরে আশাশুনি থানার বিছট, গরালি, নাকনা পেরিয়ে সুন্দরবনের সর্বশেষ মানব বসতি নলিয়ান, সুতারখালি ও কালাবগী অঞ্চলে দাওয়াতী কাজ করেন। ২০০৯ সালে ‘আইলা’ দুর্গতদের সাহায্য দিতে গিয়ে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ কালাবগীর বয়োবৃদ্ধ মিশকাত শেখ, আহমাদ আলী শেখ প্রমুখ সমাজ নেতাগণ বলেন, আপনার আববা আমাদেরকে মুসলমান বানিয়েছেন। মেশকাত শেখ বলেন, আমার ছোট দাদা নঈমুদ্দীন শেখ আপনার আববার হাতে বায়‘আত করে ‘আহলেহাদীছ’ হন। বৃহত্তর খুলনা-যশোর, ফরিদপুর ও ২৪ পরগণা ছিল তাঁর দাওয়াতী অঞ্চল। বর্তমানে আমাদের যুগে এসে আমরা দক্ষিণবঙ্গ সহ সিলেট থেকে বাগেরহাট পর্যন্ত দেশের সর্বত্র বহু মসজিদ-মাদ্রাসা, ইয়াতীমখানা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ইসলামিক কমপ্লেক্স এবং অসংখ্য গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন করেছি। কেবল মসজিদেরই সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২০০। উত্তর কালাবগীতে ১৯৯২ সালে মোজাইক করা জামে মসজিদ ও মিঠা পানির পুকুর খনন করেছি। এভাবে সুন্দরবনের কোল  ঘেঁষে  শিবসা  নদীর  তীরের  সর্বশেষ  গ্রামটি

আজও আহলেহাদীছ গ্রাম হিসাবে বেঁচে আছে। ফালিল্লাহিল হাম্দ

তিনি বলেন, আমরা ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-কে সমাজ সংস্কার আন্দোলন বলে বিশ্বাস করি। জামা‘আতবদ্ধভাবে এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। বিনিময়ে আমরা স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টি চাই। তিনি বলেন, সাংগঠনিক শক্তি যত বৃদ্ধি পাবে, আন্দোলন তত গতিশীল হবে। সংগঠন ব্যতীত ঘরে বসে একাকী ফেসবুক চালিয়ে হাযারো প্রচার করেও সমাজের তেমন কোন পরিবর্তন হবে না। মাত্র স্বল্প সময়ের মোবাইল নোটিশে খুলনা মহানগরীতে এমন একটি সুন্দর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়াটা কেবল আল্লাহর রহমতে এবং সংগঠনের বরকতে সম্ভব হয়েছে। তিনি খুলনা যেলা সংগঠনকে এজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন।  

যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, ঢাকা মাদারটেক আহলেহাদীছ জামে মসজিদের খতীব মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল, সাতক্ষীরা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান, খুলনা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুল্লাহ আল-আমীন, আল-ফুরক্বান ইসলামিক সেন্টার, বাহরাইন-এর দাঈ মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম, বাগেরহাট যেলার শরণখোলা উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর আহবায়ক মাওলানা যাকারিয়া হোসাইন ও আনাস বিন আমানুল্লাহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি শো‘আইব হোসাইন। 

উল্লেখ্য যে, ট্রেনযোগে রাজশাহী থেকে দুপুরে খুলনা পৌঁছলে আমীরে জামা‘আতসহ সফরসঙ্গীদের স্টেশনে অভ্যর্থনা জানান খুলনা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জনাব গোলাম মুক্তাদিরসহ ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী। এসময় তাদেরকে হোটেল টাইগার গার্ডেনে আপ্যায়ন করেন খুলনা সরকারী হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মাদ মাসঊদ সাত্তার।

সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা ও বাগেরহাট যেলা সমূহ থেকে রিজার্ভ বাসযোগে বিপুল সংখ্যক কর্মী ও সূধী যোগদান করেন। শিক্ষা সফরের সাথীগণ সংগঠনের যেলা মারকায গোবরচাকা আহলেহাদীছ জামে মসজিদে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য যে, ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে সুন্দরবন সফরের সময় আমীরে জামা‘আতের সাথীগণ সংগঠনের প্রতিষ্ঠিত শিপইয়ার্ড আহলেহাদীছ জামে মসজিদে অবস্থান করেন।






আরও
আরও
.