আলো এমন এক উপাদান যার সাহায্যে অন্ধকারে পথ চলা যায়। আলোর যেমন ভিন্নতা রয়েছে, তেমনি রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সুবিধা। আলো প্রকাশ্য হ’তে পারে আবার অপ্রকাশ্যও হ’তে পারে। সর্বপ্রকারের আলোই উপকারী। এই আলো মূলতঃ ঈমানের আলো, যে আলোর মাধ্যমে মুমিন সঠিক পথে পরিচালিত হয় দুনিয়াতে এবং এর সাহায্যে পরকালে পুলছিরাত অতিক্রম করতে পারে। এই আলো প্রাপ্ত হওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। বিভিন্ন সৎকর্মের মাধ্যমে এই আলো অর্জন করা সম্ভব। তবে আমলের কমবেশির কারণে আলোর পরিমাণও কমবেশি হয়। এই আলোর মূল উৎস আল্লাহ তা‘আলা। নবী-রাসূল ও নেককার বান্দাগণ সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নিকট থেকে এই আলো প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা কখনো নিজেকে নূর বলেছেন। কখনো নবী-রাসূল বা কিতাব তথা কুরআনকে নূর বলা হয়েছে। কারণ নবী-রাসূলগণের অনুসরণ বা কিতাব পঠনের মাধ্যমে লোকেরা হেদায়াত প্রাপ্ত হয়ে থাকে। আবার কখনো লোকেরা বিভিন্ন সৎকর্ম পালনের মাধ্যমে আলো প্রাপ্ত হয়। এই আলো সবার কাম্য। আলোহীন জীবন যেমন দুনিয়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন তেমনি পরকালে হবে নিরাশাপূর্ণ। যার সর্বশেষ পরিণতি হবে জাহান্নাম। পক্ষান্তরে নূর বা জ্যোতিপূর্ণ জীবন ইহকালে যেমন উজ্জ্বল, পরকালেও হবে উজ্জ্বল, ফলে বান্দা জান্নাত লাভে ধন্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اللهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ الْمِصْبَاحُ فِي زُجَاجَةٍ الزُّجَاجَةُ كَأَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُوقَدُ مِنْ شَجَرَةٍ مُبَارَكَةٍ زَيْتُونَةٍ لَا شَرْقِيَّةٍ وَلَا غَرْبِيَّةٍ يَكَادُ زَيْتُهَا يُضِيءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ نُورٌ عَلَى نُورٍ يَهْدِي اللهُ لِنُورِهِ مَنْ يَشَاءُ وَيَضْرِبُ اللهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ-
‘আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের জ্যোতি। তাঁর জ্যোতির উপমা একটি তাক-এর ন্যায়। যাতে রয়েছে একটি প্রদীপ। যা রয়েছে একটি কাঁচপাত্রের মধ্যে। পাত্রটি একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত। যা প্রজ্বলিত করা হয় বরকতময় যয়তুন বৃক্ষের তৈল দ্বারা। যা পূর্বমুখীও নয় পশ্চিম মুখীও নয়। আগুন স্পর্শ না করলেও ঐ তৈল যেন স্বচ্ছ আলো। জ্যোতির উপর জ্যোতি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা স্বীয় জ্যোতির দিকে পরিচালিত করেন। আল্লাহ মানুষের জন্য উপমাসমূহ বর্ণনা করেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সকল বিষয়ে জ্ঞাত’ (নূর ২৪/৩৫)। অন্ধকার রাতে আলো দেখে যেমন সবাই পথ চলে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে তেমনি আল্লাহ্কে কেন্দ্র করেই সবকিছু চলে। তিনিই সবকিছুর ধারক ও পরিচালক। তিনিই সৃষ্টিকে পরিচালনা করেন ও তাদের সুপথ দেখান। আল্লাহ নিজেই সত্তাগতভাবে নূর এবং তাঁর প্রেরিত হেদায়াত ও কিতাব জ্যোতির্ময়। তাতে মিথ্যার কোন লেশমাত্র নেই। যদি আল্লাহ প্রেরিত সত্যের জ্যোতি না থাকত, তাহ’লে সবকিছু মিথ্যার অন্ধকারে ডুবে যেত। তাঁর নূরের উপমা মুমিনের হৃদয়ে প্রক্ষিপ্ত ঈমান ও কুরআনের ন্যায়, যা তাঁর দিকে মানুষকে পরিচালিত করে। সেটি মুমিনের হৃদয়ে রক্ষিত একটি তাক-এর ন্যায়। যাতে রয়েছে একটি প্রদীপ। একটি কাঁচপাত্রের মধ্যে যে প্রদীপ জ্বালানো হয় যয়তুন বৃক্ষের স্বচ্ছ তেল দ্বারা। যার আলো পূর্বমুখী নয়, পশ্চিমমুখীও নয়। প্রদীপটি এমনভাবে স্থাপিত যে, মধ্যাহ্ন সূর্য্যের ন্যায় সর্বাবস্থায় সোজাভাবে তাতে আলোকসম্পাত হয়। জ্যোতির উপর জ্যোতি। অর্থাৎ তৈল ও তৈল পাত্রটাও যেমন উজ্জ্বল, তার আলোটাও তেমনি উজ্জ্বল। মুমিনের হৃদয়টাও অনুরূপ। তার বিশ্বাসটাও নির্ভেজাল তাওহীদের আলোকে সমুজ্জ্বল। তার কর্মটাও কুরআনের অনুসরণে প্রোজ্জ্বল। এমনিতরো উদাহরণ সমূহ দিয়ে আল্লাহ মানুষকে বুঝ দিয়ে থাকেন। আর আল্লাহ মানুষের ভিতর-বাহির সবকিছুর খবর রাখেন।
আল্লাহ তা‘আলা আসমানী কিতাব বিশেষত কুরআনকে নূর বলে উল্লেখ করে বলেন,فَآمِنُوا بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَالنُّورِ الَّذِي أَنْزَلْنَا وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ، ‘অতএব তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং যে জ্যোতি আমরা নাযিল করেছি, তার উপর বিশ্বাস স্থাপন কর। বস্ত্ততঃ আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবহিত’ (তাগাবুন ৬৪/০৮)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,يَاأَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِمَّا كُنْتُمْ تُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ- ‘হে আহলেকিতাবগণ! তোমাদের কাছে আমাদের রাসূল এসেছেন, যিনি বহু বিষয় তোমাদের সামনে বিবৃত করেন, যেসব বিষয় তোমরা তোমাদের কিতাব থেকে গোপন কর। আরও বহু বিষয় তিনি এড়িয়ে যান। বস্ত্ততঃ তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হ’তে এসেছে একটি জ্যোতি ও আলোকময় কিতাব (মায়েদাহ ৫/১৫)।[1] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,أَفَمَنْ شَرَحَ اللهُ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ فَهُوَ عَلَى نُورٍ مِنْ رَبِّهِ فَوَيْلٌ لِلْقَاسِيَةِ قُلُوبُهُمْ مِنْ ذِكْرِ اللهِ أُولَئِكَ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ - ‘যার বক্ষকে আল্লাহ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার প্রতিপালকের দেওয়া জ্যোতির মধ্যে রয়েছে, (সে কি অন্যের মত হ’তে পারে?)। অতএব দুর্ভোগ ঐ লোকদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে কঠোর। তারা সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে রয়েছে’ (যুমার ৩৯/২২)। রাসূল (ছাঃ) স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাকে নূর হিসাবে উল্লেখ করে দো‘আ করতেন। যেমন ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَ يَقُولُ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ: اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ‘নবী (ছাঃ) রাতে যখন তাহাজ্জুদের ছালাত আদায় করতেন তখন এ দো‘আ করতেন, হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তোমারই, তুমিই আসমান ও যমীনের নূর বা জ্যোতি। রাসূল (ছাঃ) দো‘আয় নূর প্রার্থনা করে বলতেন,اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِىْ قَلْبِى نُوْرًا وَفِىْ لِسَانِى نُوْرًا وَاجْعَلْ فِىْ سَمْعِىْ نُوْرًا وَاجْعَلْ فِىْ بَصَرِى نُوْرًا وَاجْعَلْ مِنْ خَلْفِى نُوْرًا وَمِنْ أَمَامِى نُوْرًا وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِىْ نُوْرًا وَمِنْ تَحْتِى نُوْرًا. اللَّهُمَّ أَعْطِنِى نُوْرًا، ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য আমার হৃদয়-মনে নূর দান কর, আমার জিহবা বা বাকশক্তিতে নূর দান কর। আমার শ্রবণশক্তিতে নূর দান কর, আমার দৃষ্টিশক্তিতে নূর দান কর, আমার উপর দিকে নূর দান কর, আমার নীচের দিকে নূর দান কর, আমার ডান দিকে নূর দান কর, আমার বাম দিকে নূর দান কর, আমার সামনে নূর দান কর, আমার পিছন দিকে নূর দান কর, আমার নিজের মধ্যে নূর সৃষ্টি করে দাও। হে আল্লাহ! আমাকে নূর দান কর’।[2]
আলামে আরওয়াহ’তে নূর গ্রহণ :
আলামে আরওয়াহ বা রূহের জগতে আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষকে নূর প্রদান করেন এবং তা গ্রহণের সক্ষমতা দান করেন। দুনিয়াতে যারা সৌভাগ্যবান কেবল তারাই সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নূর বা জ্যোতি গ্রহণ করতে পারে। আর এই নূর দ্বারাই ক্বিয়ামতের দিন তারা সফলতা অর্জন করবে। আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَمَّا خَلَقَ اللهُ آدَمَ مَسَحَ ظَهْرَهُ، فَسَقَطَ مِنْ ظَهْرِهِ كُلُّ نَسَمَةٍ هُوَ خَالِقُهَا مِنْ ذُرِّيَّتِهِ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ، وَجَعَلَ بَيْنَ عَيْنَيْ كُلِّ إِنْسَانٍ مِنْهُمْ وَبِيصًا مِنْ نُورٍ، ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى آدَمَ فَقَالَ: أَيْ رَبِّ، مَنْ هَؤُلاَءِ؟ قَالَ: هَؤُلاَءِ ذُرِّيَّتُكَ، فَرَأَى رَجُلاً مِنْهُمْ فَأَعْجَبَهُ وَبِيصُ مَا بَيْنَ عَيْنَيْهِ، فَقَالَ: أَيْ رَبِّ مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: هَذَا رَجُلٌ مِنْ آخِرِ الأُمَمِ مِنْ ذُرِّيَّتِكَ يُقَالُ لَهُ دَاوُدُ، ‘আল্লাহ তা‘আলা যখন আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন তখন তাঁর পিঠে হাত বুলালেন। এতে তাঁর যেসব সন্তান-সন্ততি ক্বিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করবেন সব প্রাণই তাঁর পিঠ থেকে বের হয়ে আসল। প্রত্যেকটি মানুষের দু’চোখের মাঝে জ্যোতির ঔজ্জ্বল্য প্রকাশ করলেন। এরপর তাদেরকে আদম (আঃ)-এর সামনে পেশ করলন। তিনি বললেন, হে পরওয়ারদিগার এরা কারা? আল্লাহ বললেন, এরা তোমার বংশধর। আদম (আঃ) এদের মধ্যে একজনকে দেখলেন তার দু’চোখের মাঝের উজ্জ্বলতায় তিনি বিস্মিত হ’লেন। তিনি বললেন, হে আমার রব! এটি কে? আল্লাহ বললেন, এ হ’ল তোমার সন্তানদের শেষের দিকের উম্মতদের একজন। তার নাম দাঊদ’।[3]
এই নূরই হবে পরকালে নাজাতের কারণ :
যারা সৎ কর্মের মাধ্যমে নূর অর্জন করতে পেরেছে তারাই পরকালে সর্বাধিক কামিয়াবী হবে। যার সৎকর্ম যত বেশি হবে তার নূর তত বেশি উজ্জ্বল হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
وَيُعْطَى كُلُّ إِنْسَانٍ مِنْهُمْ مُنَافِقًا، أَوْ مُؤْمِنًا نُورًا، ثُمَّ يَتَّبِعُونَهُ وَعَلَى جِسْرِ جَهَنَّمَ كَلَالِيبُ وَحَسَكٌ، تَأْخُذُ مَنْ شَاءَ اللهُ، ثُمَّ يُطْفَأُ نُورُ الْمُنَافِقِينَ، ثُمَّ يَنْجُو الْمُؤْمِنُونَ، فَتَنْجُو أَوَّلُ زُمْرَةٍ وُجُوهُهُمْ كَالْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ سَبْعُونَ أَلْفًا لَا يُحَاسَبُونَ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ كَأَضْوَأِ نَجْمٍ فِي السَّمَاءِ،
‘মুনাফিক কি মুমিন, প্রতিটি মানুষকেই নূর প্রদান করা হবে। তারপর তারা এর অনুসরণ করবে। জাহান্নামের পূলের উপর থাকবে কাটাযুক্ত লৌহ শলাকা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সেগুলো পাকড়াও করবে। অতঃপর মুনাফিকদের নূর নিভে যাবে। আর মুমিনগণ নাজাত পাবেন। প্রথম দল মুক্তি পাবে। তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল। তারা হবে সত্তর হাযার। তাদের কোন হিসাবই নেয়া হবে না। তারপর আরেক দল আসবে, তাদের মুখমন্ডল হবে আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত দীপ্ত। এভাবে পর্যায়ক্রমে সকলে পার হয়ে যাবে।[4]
রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন বলবেন, ‘তোমরা মাথা উঠাও। অতঃপর তারা মাথা উঠালে তাদের আমল অনুপাতে নূর প্রদান করা হবে। তাদের কেউ এমনও থাকবে যাদের বড় পাহাড়সম নূর প্রদান করা হবে যার আলোতে তারা চলবে। আবার কাউকে তা অপেক্ষা ছোট নূর প্রদান করা হবে। আবার খেজুর গাছ সমতুল্য নূর কারো ডান হাতে প্রদান করা হবে। আবার কাউকে তা অপেক্ষা ছোট নূর প্রদান করা হবে। অবশেষে একজনকে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলীতে নূর প্রদান করা হবে। যা একবার প্রজ্জ্বলিত হবে আরেকবার নিভে যাবে। যখন আলোকিত হবে তখন সে পা উঠাবে এবং নির্বাপিত হ’লে দাঁড়িয়ে যাবে। সেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাদের সামনে অবস্থান করবেন। অতঃপর জাহান্নামের উপর রাস্তা বানানো হবে, যা পিচ্ছিল ও তরবারী অপেক্ষা ধারালো। এরপর বলা হবে, তোমরা অতিক্রম করো। তারা নিজেদের নূর অনুযায়ী অতিক্রম করবে। কেউ চোখের পলকে, কেউ বিদ্যুৎ গতিতে, কেউ মেঘের গতিতে, কেউ নিক্ষিপ্ত তারকার গতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে, কেউ দ্রুতগামী পদচারীর গতিতে পুলছিরাত অতিক্রম করবে। আর যার বৃদ্ধাঙ্গুলিতে আলো প্রদান করা হবে সে মুখমন্ডল, পা ও হাতের উপর ভর করে অতিক্রম করতে যাবে। এক সময় সে এক পায়ের ভরে ঝুলে যাবে এবং জাহান্নামের আগুনের প্রভাব অনুভব করবে। এভাবে চলতে চলতে সে নাজাত পেয়ে যাবে। নাজাত প্রাপ্তির পর সে বলবে, الْحَمْدُ لِلَّهِ لَقَدْ أَعْطَانِي اللهُ مَا لَمْ يُعْطِ أَحَدًا أَنْ نَجَّانِي مِنْهَا بَعْدَ إِذْ رَأَيْتُهَا ‘সেই আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাকে এমন আলো দিয়েছেন যা আমার দেখার পর অন্য কাউকে প্রদান করেননি’।[5] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ لَمْ يَجْعَلِ اللهُ لَهُ نُوْرًا فَمَا لَهُ مِنْ نُورٍ ‘বস্ত্ততঃ আল্লাহ যাকে আলো দেন না, তার কোন আলো থাকে না’ (নূর ২৪/৪০)।
হৃদয়ে নূর বৃদ্ধি করার উপায়সমূহ :
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার প্রতি দয়াবান। সেজন্য এই নূর অর্জন করার জন্য তাকীদ দিয়েছেন। যাতে বান্দা আলোর অভাবে ছিরাত অতিক্রম করতে গিয়ে জাহান্নামে পড়ে না যায়। আর রাসূল (ছাঃ) আলো বা নূর অর্জনের পথ ও পদ্ধতিও বাতলে দিয়েছেন। আল্লাহর নূর অর্জনের কতিপয় পথ ও পদ্ধতি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল-
(১) কালেমা ত্বাইয়েবাহ :
কালেমা ত্বাইয়েবায় যেমন আল্লাহর অস্তিত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হয় তেমনি এর বহু ফযীলত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নূর বা আলো বৃদ্ধির উপাদান। কেউ যদি এর মর্ম অনুধাবন করে পাঠ করে তাহ’লে সে এই কালেমা থেকে নূর বা আলো অর্জন করতে পারবে। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ্কে বললেন, ‘কী ব্যাপার? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর থেকে দেখছি তোমার এলোমেলো চুল ও ধুলিধুসরিত মুখ। তোমার চাচাতো ভাই আমীর নিযুক্ত হওয়ায় বোধ হয় তোমার মন খারাপ। তালহা বললেন, আল্লাহর নিকটে পানাহ চাই! আমি আপনাদের সবার চেয়ে এ ব্যাপারে অধিক উপযুক্ত যে, এমন মনোভাব পোষণ না করি। আসল ব্যাপার হ’ল, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমি এমন একটি বাণী জানি, যা কোন ব্যক্তি তার মৃত্যুকালে পাঠ করলে তার আত্মা বহির্গত হবার সময় একটা প্রবল সুঘ্রাণ ছড়াবে এবং ক্বিয়ামতের দিন তাঁর আত্মা তাঁর জন্য একটা জ্যোতিতে পরিণত হবে। সেই বাণীটি কি, তা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করিনি, আর তিনিও আমাকে জানাননি। ঐ জিনিসটাই আমার (মনের) মধ্যে ঢুকে আছে। (অর্থ্যাৎ ঐ বাণীটি কী সেই কথা ভাবতে ভাবতেই আমি এত বিহবল হয়ে পড়েছি।) ওমর (রাঃ) বললেন, আরে ওটা তো আমি জানি। তালহা বলে উঠলেন, তাহ’লে তো আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা! সেটি কী? ওমর (রাঃ) বললেন, সেটি হ’ল সেই কালেমা, যা তিনি তাঁর চাচা (আবু তালিব)-কে বলেছিলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’! তালহা বললেন, আপনি সত্যই বলেছেন’।[6]
(২) ওযূ :
ওযূ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ছালাত কবূলের জন্য যেমন পূর্ব শর্ত, তেমনি এর রয়েছে নানাবিধ ফযীলত। যে সকল আমলের মাধ্যমে নূর বা আলো অর্জন করা যায়, তার মধ্যে ওযূ অন্যতম। সেকারণ রাসূল (ছাঃ) প্রচন্ড ঠান্ডায়ও পরিপূর্ণভাবে ওযূ করতে ছাহাবীদের উৎসাহ প্রদান করতেন। নু‘আঈম ইবনে আব্দুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَنَّهُ رَأَى أَبَا هُرَيْرَةَ يَتَوَضَّأُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ حَتَّى كَادَ يَبْلُغُ الْمَنْكِبَيْنِ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ حَتَّى رَفَعَ إِلَى السَّاقَيْنِ، ثُمَّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ أُمَّتِي يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ أَثَرِ الْوُضُوءِ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ- ‘তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে ওযূ করতে দেখলেন। ওযূ করতে তিনি মুখমন্ডল ও হাত দু’টি এমনভাবে ধুলেন যে, প্রায় কাঁধ পর্যন্ত ধুয়ে ফেললেন। এরপর পা দু’টি এমনভাবে ধুলেন যে, পায়ের নালার কিছু অংশ ধুয়ে ফেললেন। এভাবে ওযূ করার পর বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমার উম্মত ওযূর প্রভাবে ক্বিয়ামতের দিন দীপ্তিময় মুখমন্ডল ও হাত-পা নিয়ে উঠবে। কাজেই তোমরা যারা সক্ষম তারা অধিক বিস্তৃত দীপ্তিসহ উঠতে চেষ্টা করে’।[7] অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হাযেম (রাঃ) বলেন, كُنْتُ خَلْفَ أَبِي هُرَيْرَةَ، وَهُوَ يَتَوَضَّأُ لِلصَّلَاةِ فَكَانَ يَمُدُّ يَدَهُ حَتَّى تَبْلُغَ إِبْطَهُ فَقُلْتُ لَهُ: يَا أَبَا هُرَيْرَةَ مَا هَذَا الْوُضُوءُ؟ فَقَالَ: يَا بَنِي فَرُّوخَ أَنْتُمْ هَاهُنَا؟ لَوْ عَلِمْتُ أَنَّكُمْ هَاهُنَا مَا تَوَضَّأْتُ هَذَا الْوُضُوءَ، سَمِعْتُ خَلِيلِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: تَبْلُغُ الْحِلْيَةُ مِنَ الْمُؤْمِنِ، حَيْثُ يَبْلُغُ الْوَضُوءُ- ‘একদা আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তিনি ছালাতের জন্য ওযূ করছিলেন। অতঃপর তিনি হাত (ধোয়ার সময়) লম্বা করে দিলেন। এমনকি (ধুতে ধুতে) বগল পর্যন্ত পৌঁছলেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, হে আবু হুরায়রা! এটা কেমন ওযূ! তিনি বললেন, হে ফারূকের বংশধর! তোমরা এখানে আছ নাকি? আমি যদি জানতাম তোমরা এখানে আছ, তাহ’লে এরকম ওযূ করতাম না। (এজন্য এরকম করেছি যে), আমি আমার বন্ধু মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, মুমিনের ওযূর পানি যে পর্যন্ত পৌঁছবে, ক্বিয়ামতের দিন তার উজ্জ্বলতাও সে পর্যন্ত পৌঁছবে’।[8] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,تَرِدُ عَلَيَّ أُمَّتِي الْحَوْضَ، وَأَنَا أَذُودُ النَّاسَ عَنْهُ، كَمَا يَذُودُ الرَّجُلُ إِبِلَ الرَّجُلِ عَنْ إِبِلِهِ، قَالُوا يَا نَبِيَّ اللهِ أَتَعْرِفُنَا؟ قَالَ: نَعَمْ لَكُمْ سِيمَا لَيْسَتْ لِأَحَدٍ غَيْرِكُمْ تَرِدُونَ عَلَيَّ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوءِ، ‘আমার উম্মতেরা হাওযে কাওছারের নিকট ভিড় জমাবে। আর আমি কিছু সংখ্যক লোককে তা থেকে ফিরিয়ে দিতে থাকব, যেমনিভাবে লোকেরা তার হাউয থেকে অন্যের উট ফিরিয়ে দেয়। ছাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সেদিন কি আপনি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? তিনি বললেন, হ্যঁা তোমাদের এমন চিহ্ন হবে, যা অন্য কোন উম্মতের হবে না। ওযূর বদৌলতে তোমাদের মুখমন্ডল নুরানী ও হাত-পা দীপ্তিমান অবস্থায় তোমরা আমার কাছে আসবে’।[9]
(৩) ছালাত :
ছালাত কেবল ফরয ইবাদতই নয়; বরং এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। ছালাত এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে নূর বা আলো অর্জন করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,الطُّهُورُ شَطْرُ الْإِيْمَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ، وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَآَنِ أَوْ تَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، وَالصَّلَاةُ نُورٌ، وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ، وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ، كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَايِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا- ‘পাক-পবিত্রতা হ’ল ঈমানের অর্ধেক। ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ মানুষের আমলের পাল্লাকে ভরে দেয় এবং ‘সুবহানাল্লাহ-হি’ ওয়ালহাম্দুলিল্লা-হি’ ছওয়াবের পাল্লাকে পরিপূর্ণ করে দেয় অথবা বলেছেন, আকাশমন্ডলী ও যমীনের মধ্যে যা কিছু আছে তা পরিপূর্ণ করে দেয়। ছালাত হ’ল নূর বা আলো। দান-খয়রাত (দানকারীর পক্ষে) দলীল। ছবর বা ধৈর্য হ’ল জ্যোতি। কুরআন হ’ল তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক মানুষ ভোরে ঘুম হ’তে উঠে নিজের আত্মাকে তাদের কাজে ক্রয়-বিক্রয় করে। হয় তাকে সে আযাদ করে দেয় অথবা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়’।[10] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُوراً وَبُرْهَاناً وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهُ نُورٌ وَلاَ بُرْهَانٌ وَلاَ نَجَاةٌ وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَأُبَىِّ بْنِ خَلَفٍ- ‘যে ব্যক্তি ছালাতের হেফাযত করবে, ক্বিয়ামত দিবসে তা তার জন্য নূর, দলীল-প্রমাণ ও জাহান্নাম হ’তে মুক্তির কারণ হবে। আর যে ব্যক্তি তা (ছালাত) হেফাযত করবে না, ক্বিয়ামত দিবসে তা তার জন্য নূর, দলীল-প্রমাণ ও জাহান্নাম হ’তে মুক্তির কারণ হবে না। আর এ ব্যক্তি ক্বিয়ামত দিবসে ক্বারূন, ফির‘আঊন, হামান ও উবাই ইবনু খালাফ-এর সাথে থাকবে’।[11]
(৪) জুম‘আয় উপস্থিত হওয়া :
জুম‘আর দিনকে সাপ্তাহিক ঈদ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। জুম‘আয় উপস্থিত হওয়ার যেমন বিশেষ ফযীলত রয়েছে, তেমনি এতে উপস্থিত হয়ে ছালাত আদায় করা আল্লাহর নূর অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَبْعَثُ الْأَيَّامَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى هَيْئَتِهَا، وَيَبْعَثُ الْجُمُعَةَ زَهْرَاءَ مُنِيرَةً، أَهْلُهَا يَحُفُّونَ بِهَا كالْعَرُوسِ تُهْدَى، إِلَى كَرِيمها تُضِيءُ لَهُمْ، يَمْشُونَ فِي ضَوْئِهَا، أَلْوَانُهُمْ كالثَّلْجِ بَيَاضًا، وَرِيحُهُمْ تَسْطَعُ كَالْمِسْكِ يَخُوضُونَ فِي جِبَالِ الْكَافُورِ، يَنْظُرُ إِلَيْهِمُ الثَّقَلَانِ لَا يُطْرَفُونَ تَعَجُّبًا حَتَّى يَدْخُلُوا الْجَنَّةَ، لَا يُخَالِطُهُمْ أَحَدٌ إِلَّا الْمُؤَذِّنُونَ الْمُحْتَسِبُونَ - ‘আল্লাহ তাবারাক ওয়া তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন দিনসমূহকে নিজ অবস্থায় উত্থিত করবেন। তবে জুম‘আর দিনকে আলোকোজ্জ্বল ও দ্বীপ্তিমান করে উত্থিত করবেন। জুম‘আ আদায়কারীগণ আলো দ্বারা বেষ্টিত থাকবে যেমন নতুন বর বেষ্টিত থাকে, যা তাকে প্রিয় ব্যক্তির কাছে নিয়ে যায়। তারা অলো বেষ্টিত থাকবে এবং সেই আলোতে চলবে। তাদের রং হবে বরফের মত উজ্জ্বল ও সুগন্ধি হবে কাফূরের পর্বত থেকে সঞ্চিত মিশকের মত। তাদের দিকে জিন ও মানুষ তাকাতে থাকবে। তারা আনন্দে দৃষ্টি ফিরাতে না ফিরাতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের সাথে একনিষ্ঠ ছওয়াব প্রত্যাশী মুওয়ায্যিন ছাড়া কেউ মিশতে পারবে না’।[12]
(৫) অন্ধকারে মসজিদে হেঁটে যাওয়া :
ওযূ করে মসজিদে হেঁটে যাওয়ার অনেক ফযীলত রয়েছে। আর যদি কেউ অন্ধকার রাতে তথা এশা ও ফজরের ছালাত জামা‘আতে আদায় করার জন্য মসজিদে গমন করে তাহ’লে এটি তার জন্য নূর হবে। যে নূরের আলোতে সে পুলছিরাত অতিক্রম করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,بَشِّرِ المَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى المَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ القِيَامَةِ- ‘রাত্রির অন্ধকারে মসজিদে যাতায়াতকারী লোকদেরকে, ক্বিয়ামতের দিনে পরিপূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ জানিয়ে দাও’।[13] অন্যত্র তিনি বলেছেন,إِنَّ اللهَ لَيُضِيءُ لِلَّذِينَ يَتَخَلَّلُونَ إِلَى الْمَسَاجِدِ فِي الظُّلْمِ بِنُورٍ سَاطِعٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন ঐ লোকদেরকে উজ্জ্বল আলো দ্বারা আলোকিত করবেন, যারা অন্ধকারে মসজিদে হেঁটে যায়’।[14] তিনি আরো বলেন,مَنْ مَشَى فِي ظُلْمَةِ لَيْلٍ إِلَى صَلَاةٍ، آتَاهُ اللهُ نُورًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘যে ব্যক্তি রাতের অন্ধকারে ছালাতের দিকে হাঁটবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাকে নূর প্রদান করবেন’।[15] কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, সে নূর সাথে নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে।[16]
(৬) কুরআনুল কারীম :
যে সকল মাধ্যমে নূর বা জ্যোতি অর্জন করা যায় তন্মধ্যে কুরআন তেলাওয়াত একটি বিশেষ মাধ্যম। কুরআনের মধ্যে বিশেষ কিছু সূরা রয়েছে যেগুলো নূর অর্জনে অধিক সহায়ক। কেবল কুরআন তেলাওয়াতকারীই এই মর্যাদা লাভ করবে না; বরং তেলাওয়াকারীর পিতা-মাতাও সে মর্যাদা পাবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوْحًا مِنْ أَمْرِنَا مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلَا الْإِيْمَانُ وَلَكِنْ جَعَلْنَاهُ نُورًا نَهْدِي بِهِ مَنْ نَشَاءُ مِنْ عِبَادِنَا وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ-
‘আর এভাবেই আমরা তোমার নিকট প্রেরণ করেছি রূহ, আমাদের আদেশক্রমে। অথচ তুমি জানতে না কিতাব কি বা ঈমান কি? বস্ত্ততঃ আমরা একে করেছি জ্যোতি। যার মাধ্যমে আমরা পথ প্রদর্শন করি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে আমরা যাকে ইচ্ছা করি। আর নিশ্চয়ই তুমি পথ প্রদর্শন করে থাক সরল পথের দিকে’ (শূরা ৪২/৫২)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ وَتَعَلَّمَهُ وَعَمِلَ بِهِ أُلْبِسَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تَاجًا مِنْ نُوْرٍ ضَوْءُهُ مِثْلُ ضَوْءِ الشَّمْسِ، وَيُكْسَى وَالِدَيْهِ حُلَّتَانِ لَا يَقُوْمُ بِهِمَا الدُّنْيَا فَيَقُوْلَانِ: بِمَا كُسِيْنَا؟ فَيُقَالُ: بِأَخْذِ وَلَدِكُمَا الْقُرْآنَ، ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে, কুরআনের ইলম অর্জন করবে ও সে অনুসারে আমল করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাঁর পিতা-মাতাকে নূরের মুকুট পরানো হবে, যার আলো সূর্যের আলোর মতো এবং তাঁর পিতা-মাতাকে দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে মূল্যবান এক প্রশস্ত পোশাক পরানো হবে। তারা বলবেন, কিসের জন্য আমাদের এসব পরানো হচ্ছে? তাঁদেরকে বলা হবে, তোমাদের সন্তান কুরআন গ্রহণ করেছে এজন্য তোমাদেরকে এভাবে সম্মানিত করা হচ্ছে’।[17]
(ক) সূরা ফাতিহা ও বাক্বারার শেষ দু’আয়াত পাঠ করা : কুরআনুল কারীমের বিশেষ কিছু সূরা বা আয়াত আছে যেগুলো আল্লাহর নূর বা জ্যোতি অর্জনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তার মধ্যে সূরা ফাতিহা ও সূরা বাক্বারাহ অন্যতম। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,بَيْنَمَا جِبْرِيلُ قَاعِدٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، سَمِعَ نَقِيضًا مِنْ فَوْقِهِ، فَرَفَعَ رَأْسَهُ، فَقَالَ: هَذَا بَابٌ مِنَ السَّمَاءِ فُتِحَ الْيَوْمَ لَمْ يُفْتَحْ قَطُّ إِلَّا الْيَوْمَ، فَنَزَلَ مِنْهُ مَلَكٌ، فَقَالَ: هَذَا مَلَكٌ نَزَلَ إِلَى الْأَرْضِ لَمْ يَنْزِلْ قَطُّ إِلَّا الْيَوْمَ، فَسَلَّمَ، وَقَالَ: أَبْشِرْ بِنُورَيْنِ أُوتِيتَهُمَا لَمْ يُؤْتَهُمَا نَبِيٌّ قَبْلَكَ: فَاتِحَةُ الْكِتَابِ، وَخَوَاتِيمُ سُورَةِ الْبَقَرَةِ، لَنْ تَقْرَأَ بِحَرْفٍ مِنْهُمَا إِلَّا أُعْطِيتَهُ. ‘একদিন জিবরীল (আঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে বসেছিলেন। সে সময় তিনি উপর দিক থেকে দরজা খোলার একটা আওয়াজ শুনতে পেয়ে মাথা উঠিয়ে বললেন, এটি আসমানের একটি দরজা। আজকেই এটি খোলা হ’ল ইতিপূর্বে আর কখনো খোলা হয়নি। আর এ দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা পৃথিবীতে নেমে আসলেন। আজকের এ দিনের আগে আর কখনো তিনি পৃথিবীতে আসেননি। তারপর তিনি সালাম দিয়ে বললেন, আপনি আপনাকে দেওয়া দু’টি নূর বা আলোর সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনার পূর্বে আর কোন নবীকে তা দেয়া হয়নি। আর ঐ দু’টি নূর হ’ল ‘ফা-তিহাতুল কিতাব’ বা সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাক্বারাহর শেষাংশ। এর যে কোন হরফ আপনি পড়বেন তার মধ্যকার প্রার্থিত বিষয় আপনাকে দেয়া হবে’।[18] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ كَتَبَ كِتَابًا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ بِأَلْفَيْ عَامٍ، أَنْزَلَ مِنْهُ آيَتَيْنِ خَتَمَ بِهِمَا سُورَةَ الْبَقَرَةِ، وَلَا يُقْرَآنِ فِي دَارٍ ثَلَاثَ لَيَالٍ فَيَقْرَبُهَا شَيْطَانٌ، ‘আল্লাহ তা‘আলা আসমান-যমীন সৃষ্টির দুই হাযার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখেছেন। সেই কিতাব হ’তে তিনি দু’টি আয়াত নাযিল করছেন। সেই দু’টি আয়াতের মাধ্যমেই সূরা বাক্বারাহ সমাপ্ত করেছেন। যে ঘরে তিন রাত এ দু’টি আয়াত তিলাওয়াত করা হয় শয়তান সেই ঘরের নিকটে আসতে পারে না’।[19] অন্যত্র তিনি এই দু’টি আয়াতের ব্যাপারে বলেন,الآيَتَانِ مِنْ آخِرِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ مَنْ قَرَأَ بِهِمَا فِى لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ، ‘সূরা বাক্বারাহর শেষে এমন দু’টি আয়াত রয়েছে, যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত দু’টি তিলাওয়াত করবে তার জন্য এ আয়াত দু’টিই যথেষ্ট হবে’।[20] অর্থাৎ রাত্রে কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করার যে হক রয়েছে, কমপক্ষে সূরা বাক্বারাহর শেষ দু’টি আয়াত তেলাওয়াত করলে তার জন্য তা যথেষ্ট বা জিন-শয়তানের অনিষ্ট থেকে হেফাযতের জন্য যথেষ্ট হবে।[21]
(খ) সূরা কাহ্ফ পাঠ করা : যে সকল সূরার মাধ্যমে আল্লাহর নূর বা জ্যোতি অর্জন করা যায় তার মধ্যে সূরা কাহফ তেলাওয়াত করা অন্যতম। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْكَهْفِ فِيْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ أَضَاءَ لَهُ مِنَ النُّورِ مَا بَيْنَ الْجُمُعَتَيْنِ، ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন সূরা কাহ্ফ পাঠ করে, সে ব্যক্তির জন্য দুই জুম‘আর মধ্যবর্তী সময় জ্যোতির্ময় হয়ে যায়’।[22] অন্যত্র তিনি বলেন, مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْكَهْفِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَضَاءَ لَهُ مِنَ النُّورِ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْبَيْتِ الْعَتِيقِ، ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন সূরা কাহ্ফ পাঠ করবে, তার জন্য তার ও বায়তুল আতিক্ব (কা‘বা)-এর মধ্যবর্তী জায়গা নূরে আলোকিত হয়ে যাবে’।[23] তিনি আরো বলেন,مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْكَهْفِ كَانَتْ لَهُ نُورًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ مَقَامِهِ إِلَى مَكَّةَ، ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহফ তেলাওয়াত করবে সেটি ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য তার স্থান থেকে মক্কা পর্যন্ত আলোকিত হবে’।[24]
(৮) ইসলামের ছায়াতলে বার্ধক্যে উপনীত হওয়া :
যে সকল মাধ্যমে আল্লাহর নূর বা জ্যোতি অর্জন করা যায় তার মধ্যে অন্যতম হ’ল ইসলামী বিধান পালনের মাধ্যমে বার্ধক্যে উপনীত হওয়া। কারণ কেউ যদি বার্ধক্যে পৌঁছে আর তার চুল পেকে যায় তাহ’লে তার এই চুলই ক্বিয়ামতের দিন নূর বা জ্যোতি হিসাবে উপকারে আসবে। তবে অবশ্যই ইসলামী বিধানের ছায়াতলে থাকতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ شَابَ شَيْبَةً فِيْ سَبِيلِ اللهِ كَانَتْ لَهُ نُورًا يَوْمَ القِيَامَةِ ‘যে ব্যক্তির মুসলিম অবস্থায় কিছু পরিমাণ চুলও সাদা হবে ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য বিশেষ প্রকারের নূর হবে’।[25] রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,مَنْ شَابَ شَيْبَةً فِى سَبِيلِ اللهِ كَانَتْ نُوراً يَوْمَ الْقِيَامَةِ. فَقَالَ رَجُلٌ عِنْدَ ذَلِكَ فَإِنَّ رِجَالاً يَنْتِفُونَ الشَّيْبَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ شَاءَ فَلْيَنْتِفْ نُورَهُ ‘যে ব্যক্তির মুসলিম অবস্থায় কিছু পরিমাণ চুলও সাদা হবে ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য বিশেষ প্রকারের নূর হবে। তখন জনৈক ছাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! লোকেরাতো সাদা চুল তুলে ফেলে। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি পসন্দ করে সে তার নূর বা জ্যোতিকে উপড়ে ফেলুক’।[26] তিনি আরো বলেন,لَا تَنْتِفُوا الشَّيْبَ فَإِنَّهُ نُورٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ شَابَ شَيْبَةً فِي الْإِسْلَامِ كُتِبَ لَهُ بِهَا حَسَنَةٌ وَحُطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ وَرُفِعَ له بها درجة ‘তোমরা শুভ্র কেশ তুলে ফেল না। কেননা তা ক্বিয়ামতের দিন নূর (জ্যোতি) হবে। ইসলামে যে ব্যক্তির একটি কেশ শুভ্র হবে, সে ব্যক্তির প্রত্যেক শুভ্র কেশের পরিবর্তে আল্লাহ তার জন্য একটি করে নেকী লিপিবদ্ধ করবেন, একটি করে গোনাহ মুছে দিবেন এবং একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন’।[27]
(৯) ইনছাফ কায়েম করা :
প্রত্যেক দায়িত্বশীল তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। আর এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যারা ইনছাফ কায়েম করতে পারবে তাদের এই ইনছাফপূর্ণ আচরণই ক্বিয়ামতের দিন নূর বা জ্যোতি হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ الْمُقْسِطِينَ عِنْدَ اللهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ، عَنْ يَمِينِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ، وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ، الَّذِينَ يَعْدِلُونَ فِي حُكْمِهِمْ وَأَهْلِيهِمْ وَمَا وَلُوا ‘আল্লাহর নিকট যারা ন্যায়পরায়ণ তারা দয়াময়ের ডান পার্শ্বে জ্যোতির মিম্বরের উপর অবস্থান করবে। আর তাঁর উভয় হস্তই ডান। (ঐ ন্যায়পরায়ণ তারা) যারা তাদের বিচারে, পরিবারে এবং তার কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বাধীন ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে ন্যায়নিষ্ঠ’।[28]
(১০) আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালোবাসা :
মুসলমানদের পারস্পরিক ভালবাসা এক প্রকারের ইবাদত। কারণ এতে যেমন রয়েছে প্রভূত ছওয়াব তেমনি এই ভালোবাসা ক্বিয়ামতের দিন নূর বা জ্যোতি হিসাবে গণ্য হবে। আত্মীয়তার সম্পর্ক থাক বা না থাক মুসলিম হিসাবে পরস্পরকে ভালবাসলে আল্লাহ তাদের জন্য নূরের মিম্বার স্থাপন করবেন। যেমন হাদীছে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ বলেন,المُتَحَابُّونَ فِي جَلَالِي لَهُمْ مَنَابِرُ مِنْ نُورٍ يَغْبِطُهُمُ النَّبِيُّونَ وَالشُّهَدَاءُ، ‘আমার মর্যাদার ওয়াস্তে যারা আপোসে ভালবাসা স্থাপন করবে, তাদের (বসার) জন্য হবে নূরের মিম্বর; যা দেখে নবী ও শহীদগণ ঈর্ষা করবেন’।[29] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللهِ لأُنَاسًا مَا هُمْ بِأَنْبِيَاءَ وَلاَ شُهَدَاءَ يَغْبِطُهُمُ الأَنْبِيَاءُ وَالشُّهَدَاءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِمَكَانِهِمْ مِنَ اللهِ تَعَالٰـى قَالُوا يَا رَسُوْلَ اللهِ تُخْبِرُنَا مَنْ هُمْ قَالَ هُمْ قَوْمٌ تَحَابُّوا بِرُوحِ اللهِ عَلَى غَيْرِ أَرْحَامٍ بَيْنَهُمْ وَلاَ أَمْوَالٍ يَتَعَاطَوْنَهَا فَوَاللهِ إِنَّ وُجُوهَهُمْ لَنُورٌ وَإِنَّهُمْ عَلَى نُورٍ لاَ يَخَافُونَ إِذَا خَافَ النَّاسُ وَلاَ يَحْزَنُونَ إِذَا حَزِنَ النَّاسُ وَقَرَأَ هَذِهِ الآيَةَ (أَلاَ إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ- ‘কিছু লোক আছে যারা নবী নয়, শহীদও নয়। অথচ নবী ও শহীদগণ আল্লাহর নিকট তাদের মর্যাদা দেখে ঈর্ষা করবেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাদেরকে বলে দিন তারা কারা? তিনি বললেন, ঐ লোক হ’ল তারা, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আপোসে বন্ধুত্ব কায়েম করে; যাদের মাঝে কোন আত্মীয়তার বন্ধন থাকে না এবং থাকে না কোন অর্থের লেনদেন। আল্লাহর কসম! তাদের মুখমন্ডল হবে জ্যোতির্ময়। তারা নূরের মাঝে অবস্থান করবে। লোকেরা যখন ভীত-সন্ত্রস্ত হবে, তখন তারা কোন ভয় পাবে না এবং লোকেরা যখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে, তখন তাদের কোন দুশ্চিন্তা থাকবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, সতর্ক হও! নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের কোন ভয় নেই। তারা দুঃখিতও হবে না। যারা মুমিন এবং পরহেযগার, তাদের জন্য ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে রয়েছে সুসংবাদ। আল্লাহর কালামের (বাক্যাবলীর) কোন পরিবর্তন নেই। এটাই হ’ল মহাসাফল্য।[30] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَضَعُ اللهُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ فَيُجْلِسُهُمْ عَلَيْهَا فَيَجْعَلُ وُجُوهَهُمْ نُورًا، وَثِيَابَهُمْ نُورًا، يَفْزَعُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يَفْزَعُونَ، وَهُمْ أَوْلِيَاءُ اللهِ الَّذِينَ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ – ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য নূর বা জ্যোতির মিম্বার স্থাপন করবেন। অতঃপর তাতে তিনি তাদের বসাবেন। এরপর তাদের মুখমন্ডল ও পোষাকসমূহ আলোকিত করা হবে। লোকেরা যখন ভীত-সন্ত্রস্ত হবে, তখন তারা কোন ভয় পাবে না। নিশ্চয়ই তারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের কোন ভয় নেই। তারা দুঃখিতও হবে না’।[31] অন্যত্র তিনি বলেন, لَيَبْعَثَنَّ اللهُ أَقْوَامًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي وُجُوهِهِمُ النُّورُ، عَلَى مَنَابِرِ اللُّؤْلُؤِ، يَغْبِطُهُمُ النَّاسُ، لَيْسُوا بِأَنْبِيَاءَ وَلَا شُهَدَاءَ ... قَالَ: هُمُ الْمُتَحَابُّونَ فِي اللهِ، مِنْ قَبَائِلَ شَتَّى، وَبِلَادٍ شَتَّى، ‘আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন এমন এক দল লোক উঠাবেন যাদের মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে। তাদেরকে মণি-মুক্তার মিম্বারে বসানো হবে যাদের দেখে লোকেরা ঈর্ষা করবে। অথচ তারা নবী-রাসূল বা শহীদ নন।...তারা হ’ল বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গোত্রের লোক যাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও পরস্পরকে ভালোবাসে’।[32]
(১১) তওবা করা :
প্রত্যেক মানুষই কোন না কোন ভুল করে থাকে। তবে শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে ভুল করে আল্লাহর নিকটে তওবা করে। তওবাকারীরা গুনাহমুক্ত ব্যক্তিদের ন্যায়। সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা তওবা করাকে নূর বা জ্যোতি অর্জনের মাধ্যম হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يَوْمَ لَا يُخْزِي اللهُ النَّبِيَّ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ نُورُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা। নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। যেদিন আল্লাহ স্বীয় নবী ও তার ঈমানদার সাথীদের লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের জ্যোতি তাদের সামনে ও ডাইনে ছুটাছুটি করবে। তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর উপরে সর্বশক্তিমান’ (তাহরীম ৬৬/৮)।
(১২) হজ্জে পাথর নিক্ষেপ করা :
হজ্জের সময় তিন জামরায় পাথর নিক্ষেপ করা ছওয়াবের কাজ। এর অফুরন্ত প্রতিদান আল্লাহ নিজেই দিবেন।[33] কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের বিনিময়ে কবীরা গুনাহ ক্ষমা করা হবে।[34] এই ইবাদতটি কেবল ছওয়াবেরই কাজ নয় বরং এটিও ক্বিয়ামতের দিন নূর তথা জ্যোতির কারণ হবে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا رَمَيْتَ الْجِمَارَ كَانَ لَكَ نُورًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ‘তুমি যখন (হজ্জে) পাথর নিক্ষেপ করবে তখন তা ক্বিয়ামতের দিন তোমার জন্য নূর বা জ্যোতি হয়ে যাবে’।[35]
(১৩) আল্লাহর রাস্তায় তীর নিক্ষেপ করা :
আল্লাহর পথে জিহাদ করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যার ফযীলত অত্যধিক। তবে এই জিহাদ হ’তে হবে সঠিক পদ্ধতিতে। এই পথে যে বা যারা নিয়োজিত থেকে তীর বা এই জাতীয় অস্ত্র ব্যবহার করবে, তাদের জন্য এই তীর নিক্ষেপই ক্বিয়ামতের দিন নূর বা জ্যোতি হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ رَمَى بِسَهْمٍ فِي سَبِيلِ اللهِ كَانَ لَهُ نُورًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একটি তীর নিক্ষেপ করবে সেটি তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন নূর বা জ্যোতি হবে।[36] আর এই পথে যুদ্ধ করতে গিয়ে যারা শহীদ হবেন তাদেরকে নূরের মুকুট পরানো হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الوَقَارِ، اليَاقُوتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، ‘তার মাথায় মর্মর পাথর খচিত মর্যাদার টুপি পরিয়ে দেওয়া হবে। এর এক একটি পাথর দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু হ’তে উত্তম’।[37]
দুনিয়ায় নূরের কার্যকারিতা :
নূর বা জ্যোতি এমন এক ইলাহী নে‘মত, যার মাধ্যমে নবী-রাসূল ও আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দারা আল্লাহর নির্দেশে লোকদেরকে ভ্রষ্টতার পথ থেকে আলোর পথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে অন্ধকার হ’তে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা অবিশ্বাস করে, শয়তান তাদের অভিভাবক। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। ওরা হ’ল জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (বাক্বরাহ ২/২৫৭)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَآمِنُوا بِرَسُولِهِ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِنْ رَحْمَتِهِ وَيَجْعَلْ لَكُمْ نُورًا تَمْشُونَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ، ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি স্বীয় অনুগ্রহে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরষ্কার দিবেন। তিনি তোমাদেরকে দিবেন নূর। যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াবান’ (হাদীদ ৫৭/২৮)।
পরকালে নূরের কার্যকারিতা :
সৎ আমলের মাধ্যমে নূর অর্জন করতে পারলে এই নূরের আলোতে ক্বিয়ামতের দিন সফলতা অর্জন করা যাবে। এই নূরের মাধ্যমে মানুষ আলোকিত হবে হাশরে, ছিরাতে ও জান্নাতে। তারা সর্বদিক থেকে নূর দ্বারা বেষ্টিত থাকবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعَى نُورُهُمْ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ، ‘যেদিন তুমি ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের দেখবে তাদের সম্মুখে ও ডাইনে তাদের ঈমানের জ্যোতি বিচ্ছুরিত হবে। (এ সময় তাদের) বলা হবে, তোমাদের জন্য আজ সুসংবাদ হ’ল জান্নাতের, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত। যেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। আর সেটাই হ’ল মহা সফলতা’ (হাদীদ ৫৭/১২)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, يَوْمَ يَقُوْلُ الْمُنَافِقُوْنَ وَالْمُنَافِقَاتُ لِلَّذِينَ آمَنُوا انْظُرُونَا نَقْتَبِسْ مِنْ نُورِكُمْ قِيلَ ارْجِعُوا وَرَاءَكُمْ فَالْتَمِسُوا نُورًا فَضُرِبَ بَيْنَهُمْ بِسُورٍ لَهُ بَابٌ بَاطِنُهُ فِيهِ الرَّحْمَةُ وَظَاهِرُهُ مِنْ قِبَلِهِ الْعَذَابُ- ‘সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও নারীরা ঈমানদারগণকে বলবে, তোমরা একটু থাম, তোমাদের থেকে কিছু আলো নিয়ে নিই। তখন বলা হবে, পিছনে ফিরে যাও! সেখানে আলোর সন্ধান কর। অতঃপর উভয়ের মাঝে প্রাচীর খাড়া করে দেওয়া হবে। যাতে একটা দরজা থাকবে। যার ভিতরের দিকে থাকবে রহমত ও বাইরে থাকবে আযাব’ (হাদীদ ৫৭/১৩)। তিনি আরো বলেন,يَوْمَ لَا يُخْزِي اللهُ النَّبِيَّ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ نُورُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘তাদের জ্যোতি তাদের সামনে ও ডাইনে ছুটাছুটি করবে। তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর উপরে সর্বশক্তিমান’ (তাহরীম ৬৬/৮)।
উপসংহার : আলামে আরওয়াহ বা রূহের জগতে পাওয়া নূর বা জ্যোতি সবার কাছে রয়েছে। যারা ঈমান ও সৎকর্মের মাধ্যমে এই নূর বা জ্যোতিকে ধরে রাখতে পারে তারাই সফলকাম। আর যারা ঈমান বিধ্বংসী কর্মের মাধ্যমে নূর বা জ্যোতিকে বিনষ্ট করবে তারা দুনিয়াতে যেমন ভ্রষ্টতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে তেমনি পরকালে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। নূর বা জ্যোতি অর্জন করার জন্য সৎকর্মের কোন বিকল্প নেই। তবে এই নূর কোন পীর বা ছূফীদের মাধ্যমে পাওয়া যায় না। বরং এই নূর সৎকর্মের মাধ্যমে অর্জন বা বৃদ্ধি করতে হয়। কেউ কেউ ধারণা করে যে, আদম (আঃ)-এর নূর ছিল সবুজ ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নূর ছিল সাদা। এরূপ বক্তব্যের কোন ভিত্তি নেই। সুতরাং কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত নূর হ’ল ঈমানী নূর যা সৎকর্মের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় এবং অসৎকর্মের কারণে হ্রাস পায়। এমনকি ঈমান বিনষ্টকারী আমলের মাধ্যমে এই নূর বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই নূর বা জ্যোতি নবী-রাসূল ও আল্লাহর সৎ বান্দাগণ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তারা সৎকর্ম ও আল্লাহর যিকর-আযকারের মাধ্যমে এই নূর প্রাপ্ত হয়েছিলেন। আমরাও যদি সৎ কাজ করি তাহ’লে আমরাও নূর বা জ্যোতি অর্জন করতে পারব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সকলকে নূর বা জ্যোতি অর্জন করে তার মাধ্যমে পরকাল আলোকিত করার তাওফীক দান করুন- আমীন!
মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
[1]. এখানেنُورٌ ও كِتَابٌ مُبِيْنٌ একই অর্থ ‘কুরআন’। যেমন সূরা নিসা ১৭৪ আয়াতেبُرْهَانٌ ও نُورًا مُبِينًا বলতে ‘কুরআন’ বুঝানো হয়েছে। এখানে ‘নূর’ ও ‘কিতাব’ যদি পৃথক দু’টি বস্ত্ত হ’ত, তাহ’লে পরের আয়াতে আল্লাহيَهْدِي بِهِ (‘তার দ্বারা’) না বলেيَهْدِي بِهِمَا (ঐ দু’টি দ্বারা) বলতেন। অতএব এর অর্থ ‘মুহাম্মাদ’ ও ‘নূরে মুহাম্মাদী’ নয়, যা বিদ‘আতীরা প্রচার করে থাকে।
[2]. বুখারী হা/৬৩১৬; মিশকাত হা/১১৯৫।
[3]. তিরমিযী হা/৩০৭৬; মিশকাত হা/১১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৫২০৮।
[4]. মুসলিম হা/১৯১; আহমাদ হা/১৪৭৬৩।
[5]. হাকেম হা/৩৪২৪; ছহীহুত তারগীব হা/৩৫৯১, ৩৭০৪; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৮৩৫২।
[6]. আহমাদ হা/১৮৭; নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/১০৮৭১; মুসনাদে ফারূক হা/১২৫, সনদ ছহীহ।
[7]. মুসলিম হা/২৪৬; ইবনু হিববান হা/১০৪৯।
[8]. মুসলিম হা/২৫০; মিশকাত হা/২৯১; ছহীহাহ হা/২৫২।
[9]. মুসলিম হা/২৪৭; ছহীহাহ হা/৩৯৫২।
[10]. মুসলিম হা/২২৩; মিশকাত হা/২৮১।
[11]. দারেমী হা/২৭৬৩; আহমাদ হা/৬৫৭৬; মিশকাত হা/৫৭৮।
[12]. হাকেম হা/১০২৭; ইবনু খুযায়মাহ হা/১৭৩০; ছহীহাহ হা/৭০৬; ছহীহুত তারগীব হা/৬৯৮।
[13]. তিরমিযী হা/২২৩; মিশকাত হা/৭২১।
[14]. মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৮৪৩; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৭।
[15]. দারেমী হা/১৪৬২; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৮, ৪২৪।
[16]. ছহীহুত তারগীব হা/৪২৪।
[17]. হাকেম হা/২০৮৬; ছহীহুত তারগীব হা/১৪৩৪।
[18]. মুসলিম হা/৮০৬; মিশকাত হা/২১২৪।
[19]. তিরমিযী হা/২৮৮২; ছহীহুত তারগীব হা/১৪৬৭।
[20]. বুখারী হা/৫০৪০; মুসলিম হা/৮০৭; মিশকাত হা/২১২৫।
[21]. ফাৎহুল বারী ৯/৫৬।
[22]. হাকেম হা/৩৩৯২; মিশকাত হা/২১৭৫; ছহীহুত তারগীব হা/৭৩৬।
[23]. দারেমী হা/৩৪৫০; ছহীহুত তারগীব হা/৭৩৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪৭১।
[24]. ছহীহাহ হা/২৬৫১; ছহীহুত তারগীব হা/২২৫।
[25]. তিরমিযী হা/১৬৩৫; মিশকাত হা/৩৮৭৩; ছহীহুত তারগীব হা/২০৯৪।
[26]. আহমাদ হা/২৩৯৯৮; ছহীহাহ হা/৩৩৭১; ছহীহুত তারগীব হা/২০৯২।
[27]. ইবনু হিববান হা/২৯৮৫; ছহীহুত তারগীব হা/২০৯৬।
[28]. মুসলিম হা/১৮২৭; মিশকাত হা/৩৬৯০; ছহীহুত তারগীব হা/১৯৫০।
[29]. তিরমিযী হা/২৩৯০; ছহীহুত তারগীব হা/৩০১৯।
[30]. সূরা ইউনুস ৬২-৬৪; আবূদাউদ হা/৩৫২৭; মিশকাত হা/৫০১২; ছহীহুত তারগীব হা/৩০২৩,৩০২৬।
[31]. আহমাদ হা/২২৯৫৭; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৭৯৯৬; ছহীহুত তারগীব হা/৩০২৭।
[32]. তাবারানী, হায়ছামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১৬৭৭০; ছহীহুত তারগীব হা/১৫০৯।
[33]. ছহীহুত তারগীব হা/১১৫৫।
[34]. ছহীহুত তারগীব হা/১১১২।
[35]. মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৫৫৮৮; ছহীহাহ হা/২৫১৫; ছহীহুত তারগীব হা/১৫৫৭।
[36]. ছহীহাহ হা/২৫৫৫।
[37]. তিরমিযী হা/১৬৬৩; মিশকাত হা/৩৮৩৪; ছহীহাহ হা/২৮২৯।