লাগাতার
২ দিন, ৩ দিন, ৪ দিন সহ মোট ৭০ দিন হরতাল, অবরোধ ও লাগাতার ২২ দিন সহ ২৬
দিন অসহযোগ মিলে মোট ৯৬ দিনের তান্ডব ও তাতে সহিংসতায় নিহত শতাধিক ও আহত
সহস্রাধিক মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে ১৯৯৬ সালের ২৬শে
মার্চ ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন সম্পর্কিত
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বিল পাস হয় এবং ৩০শে মার্চ তাতে প্রেসিডেন্টের
সম্মতির পর বিলটি সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়। বিলটি পাসের পর তৎকালীন বিরোধী
নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ন্যায় ও সত্যের সংগ্রাম সবসময়
জয়ী হয়’। নিঃসন্দেহে এটি অতীব সত্য কথা যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা
এদেশের মানুষের কাছে শান্তির রক্ষাকবচ হিসাবে গণ্য। মানুষ তাকিয়ে থাকে, কখন
ঐ ৯০ দিন আসবে। দলীয় হিংস্রতা ও সীমাহীন দুর্নীতির কবল থেকে তারা বাঁচবে।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধী নেত্রী ছিলেন এর ঘোর বিপক্ষে।
কিন্তু সকল বিরোধী দলের লাগাতার সহিংসতায় অতিষ্ট হয়ে তিনি অবশেষে এতে সম্মত
হন ও বিল পাস করেন। ইতিহাসের চাকা কিভাবে ঘুরে গেল যে, তখনকার বিরোধী
নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হাতেই আবার সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলের
অপমৃত্যু ঘটল। পার্থক্য এই যে, এবার কেউ এ বিল বাতিলের জন্য আন্দোলন করেনি
বা দাবীও তোলেনি। এমনকি কোন কারণও ঘটেনি। স্রেফ নিজেদের খেয়াল-খুশীতে ও
সংখ্যাগরিষ্টতার জোরে এটা করা হয়েছে। সংবিধান নিয়ে নেতাদের এরূপ
স্বেচ্ছাচারিতা সংবিধানের পবিত্রতার দাবীর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের
শামিল।
প্রশ্ন হ’ল, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলের মূল স্পিরিট কি ছিল? এক কথায় যার উত্তর হ’ল ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন’ হওয়া। ঐ সময় সকল বিরোধী দল একমত ছিলেন যে, দলীয় সরকারের অধীনে কোনরূপ নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বরং এটাই বাস্তব কথা যে, দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকতে পারে না।
প্রশ্ন হ’ল, একথা যদি তখন সঠিক হয়ে থাকে, তাহ’লে এখন বেঠিক হ’ল কেন? এর মাধ্যমে নাকি রাজনীতিবিদগণ কলংকমুক্ত হলেন। ভাল কথা- আপনাদের নিষ্কলুষ হওয়ার সার্টিফিকেট কে দিল? একই নেতারা তখন ছিলেন কলংকিত, আজ কেমন করে নিষ্কলংক হ’লেন? সংখ্যাগরিষ্টতার জোর আজ আছে, কাল যখন থাকবে না, তখন কেমনটি হবে?
হাঁ, সকল দলের নেতাদের ও সেই সাথে জনগণের কল্যাণে আমরা একটি প্রস্তাব রাখতে চাই। ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখবেন এটা মেনে নিলে এর মধ্যে আমাদের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তি নিহিত রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে এবং সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি নেতৃত্বে আসার সুযোগ পাবে। প্রস্তাবটি নিম্নরূপ : দল ও প্রার্থীবিহীন নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করুন। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনতা দিন। তারা রাষ্ট্রের জ্ঞানী-গুণীদের কাছ থেকে ইভিএম পদ্ধতিতে হৌক বা অন্য কোন বিশ্বস্ত মাধ্যমে হৌক, প্রথমে একটি বিষয়ে মতামত নিন যে, তারা এদেশে ইসলামী খেলাফত চান, না নিজেদের মস্তিষ্কপ্রসূত শাসন ব্যবস্থা চান। দ্বিতীয় মতামত নিন যে, তারা কাকে আমীর বা প্রেসিডেন্ট হিসাবে চান। এরপরে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে একইভাবে মতামত নিন। তবে জ্ঞানী-গুণীদের মতামত হবে অগ্রগণ্য। জ্ঞানী-গুণীদের অধিকাংশ এখন দলীয় জ্বরে আক্রান্ত। কিন্তু যখন নির্দলীয় এবং প্রার্থীবিহীন নির্বাচন হবে এবং তাদের উপরেই সবকিছু নির্ভর করবে এবং এটিকে পরকলীন দায়িত্বানুভূতির সাথে গ্রহণ করা হবে, তখন আশা করি তাদের কাছ থেকে সুচিন্তিত মতামত আসবে। এভাবে আমীর বা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর তিনি একটি মুসলিম দেশের উপযোগী পরামর্শ পরিষদ নিয়োগ দিবেন ও তাদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করবেন। এম, পি নির্বাচনের প্রচলিত প্রথা থাকবেনা। সরকারী ও বিরোধী দল বলে কিছু থাকবেনা। ক্ষমতা চেয়ে নেবার বা আদায় করে নেবার মানসিকতা থাকবে না। রাজনৈতিক দলগুলি প্রকৃত অর্থে জনসেবায় ব্রতী হবে। নেতৃত্ব নিয়ে কোনরূপ হিংসা-হানাহানির সুযোগ থাকবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকবে। জনগণ সুবিচার পাবে ইনশাআল্লাহ। (দ্র: ইসলামী খেলাফত’ বই ও সম্পাদকীয় : জানু’১১)।