ইসলাম প্রচারমুখী ধর্ম। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই উত্তম জাতি, তোমাদেরকে সমগ্র মানব জাতির মধ্য থেকে নির্বাচন করা হয়েছে এজন্য যে, তোমরা লোকদেরকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে’ (আলে ইমরান ৩/১১০)। দ্বীন প্রচারের বিষয়ে পবিত্র কুরআনে অনুরূপ বহু আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে তোমরা যদি একটি আয়াতও জেনে থাক, তবে তা অন্যের নিকটে পৌঁছে দাও’ (বুখারী, মিশকাত, হা/১৯৮)। দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের মত রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছেও নানামুখী নির্দেশনা সুস্পষ্ট। দ্বীন প্রচারের গুরুত্ব এত বেশি যে, মহান আল্লাহ দ্বীন প্রচারে বিমুখ থাকার কারণে ইতিপূর্বে বহু সম্প্রদায়কে নানা রকম গযবের দ্বারা ধ্বংস করে দিয়েছেন। উম্মতে মুহাম্মাদীর উদ্দেশ্যেও তিনি অত্যন্ত কঠিন হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ঈমান আনয়ন এবং সৎকর্ম সম্পাদনের পর যদি তোমরা পরস্পরকে হক্বের দাওয়াত না দাও এবং প্রয়োজনে ধৈর্য ধারণ না কর, তবে অবশ্যই অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে (আছর)। দ্বীনের প্রচারের প্রতি গুরুত্বারোপ করে রাসূল (ছাঃ)ও শপথ করে বলেন, ‘তোমরা হয় লোকদেরকে ন্যায়ের আদেশ করবে এবং অন্যায়ের নিষেধ করবে, অন্যথা তোমরা আযাবে নিপতিত হবে’ (তিরমিযী, হা/২৩২৩)। এ থেকে দ্বীন প্রচারে দাওয়াতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। যদিও প্রেক্ষাপট ও পরিবেশের উপর ভিত্তি করে দাওয়াতের হুকুম সমূহ বিশ্লেষণ করে দাওয়াতের তিনটি স্তর বিন্যাস (ফরযে আইন, ফরযে কেফায়া, মুবাহ) করা হয়েছে। তথাপি বর্তমানে দেশীয় ও বিশ্ব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ কথা অত্যন্ত জোর দিয়ে বলা যায় যে, বর্তমানে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরযে আইন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বীন প্রচারের গুরুত্ব উপলব্ধি করে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ তার সাংগঠনিক কর্মসূচীর মধ্যে প্রথম দফা কর্মসূচী নির্ধারণ করেছে ‘তাবলীগ’ বা প্রচার।

অত্র সংগঠনের সাংগঠনিক কর্মকান্ডের দ্বারা দ্বীন প্রচারের যতগুলো মাধ্যম বা পদ্ধতি আছে, তার মধ্যে ‘বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা’ অন্যতম। ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ ১৯৭৮ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী প্রতিষ্ঠা লাভের পরপরই মাত্র দু’বছরের মাথায় ১৯৮০ সালে সর্বপ্রথম ঢাকায় জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে। অতঃপর দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯১ সাল থেকে রাজশাহীর নওদাপাড়াতে নিয়মিত প্রতি বছরই দু’দিনব্যাপী তাবলীগী ইজতেমার আয়োজন করে আসছে। শুরুর দিকে ইজতেমায় জনগণের উপস্থিতি তুলনামূলক কম হ’লেও উত্তরোত্তর লোক সমাগম এত বেশি হচ্ছে যে, দিনে দিনে জায়গার ব্যবস্থা করা কর্তৃপক্ষের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। অত্র তাবলীগী ইজতেমা দুই দিনে বিষয় ভিত্তিক বক্তব্য ছাড়াও দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপস্থাপন করা হ’ল।

প্রতি বছর তাবলীগী ইজতেমা আয়োজন করার কমপক্ষে চার মাস আগে থেকে সংগঠন নানা রকম প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে থাকে। যেমন-

বৈঠকাদি : কেন্দ্রীয় সংগঠন বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা’র বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর তা সর্বসাধারণের অবগতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রথমে যেলার দায়িত্বশীলদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। অতঃপর তাবলীগী ইজতেমা সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি ইজতেমা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন এবং তার অধীনে বিভাগভিত্তিক বিভিন্ন সাব-কমিটি গঠন করা হয়। অতঃপর প্রয়োজন মত সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে পরামর্শ ও কর্মতৎপরতার খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য বার বার বৈঠক করা হয়। একই সাথে যেলাসহ অন্যান্য অধঃস্তন স্তরগুলোতেও ইজতেমা বাস্তবায়নের জন্য বৈঠক হয়ে থাকে। এসব বৈঠকে তাবলীগী ইজতেমার প্রস্ত্ততির পাশাপাশি দ্বীন ও সংগঠনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে।

কূপণ : তাবলীগী ইজতেমা সফলভাবে সম্পন্ন করতে প্যান্ডেল ডেকোরেশন, মাইক, প্রচারপত্র ইত্যাদি খাতে বেশ মোটা অংকের অর্থ খরচ হয়ে থাকে। সেই খরচ নির্বাহ করার জন্য প্রতি বছরই তাবলীগী ইজতেমার তারিখ, স্থান উল্লেখসহ সংগঠনের নাম ও শ্লোগান দিয়ে কূপণ ছাপিয়ে তা এক/দুই মাস আগে যেলায় যেলায় দায়িত্বশীলদের মাঝে বিতরণ করা হয়। উক্ত কূপণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বশীল ও কর্মীরা অর্থ আদায় করে থাকেন। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন অর্থ আদায় হয়, অন্যদিকে কূপণে ইজতেমার তারিখ ও স্থানের পাশাপাশি সংগঠনের নাম ও শ্লোগান থাকার কারণে সাংগঠনিক প্রচারও হয়ে থাকে।

প্রচারপত্র : তাবলীগী ইজতেমার খবর সর্বসাধারণের নিকটে পৌঁছানো এবং এর মাধ্যমে ইজতেমায় লোক সমাগম বেশি করার জন্য প্রতি বছরই ইজতেমার পোষ্টার, হ্যান্ডবিল এবং বিশেষ দাওয়াত কার্ড ছাপানো হয়ে থাকে। উক্ত প্রচারপত্রগুলো প্রত্যেক যেলার দায়িত্বশীল ও কর্মীদের মাধ্যমে সারা দেশের গ্রামে-গঞ্জের দেওয়ালে মেরে, বিতরণ করে এবং দেশের বিশিষ্ট জনের নিকটে বিশেষ দাওয়াতপত্র দ্বারা ইজতেমায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। যা ইজতেমার প্রচারের পাশাপাশি সংগঠনের প্রচার ও প্রসারে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।

বিজ্ঞাপন : কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রত্যেক সাংগঠনিক যেলায় নির্দেশনা দেওয়া হয় যে, ইজতেমার দু’তিন দিন আগে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে ইজতেমায় অংশগ্রহণ ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে বিজ্ঞাপন প্রকাশের। সে লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সংগঠন রাজশাহীর স্থানীয় ও কমপক্ষে দু’টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। সাথে সাথে সকল যেলায় সম্ভব না হ’লেও বেশ কিছু যেলা তাদের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। যা সংগঠনের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে।

ব্যানার : তাবলীগী ইজতেমাকে সামনে রেখে রাজশাহী শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তোরণ নির্মাণ করে প্রায় ১৫দিন পূর্বে তোরণের উভয় পাশে সংগঠনের নামাংকিত ইজতেমার ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়। সাথে সাথে বিভিন্ন যেলাতেও বিভিন্ন মাপের ব্যানার লিখে স্থানীয় শহর ও এলাকার জনবহুল স্থানগুলোতে টানানো হয়। এটিও সংগঠনের প্রচারের একটা বড় মাধ্যম।

রিজার্ভ গাড়ি : তাবলীগী ইজতেমায় সমাগত অধিকাংশ লোক দেশের বিভিন্ন যেলা থেকে রিজার্ভ গাড়িতে আসে। যে সকল যেলা থেকে রিজার্ভ বাস আসে, সেসব বাসের সামনে বা পাশে তাবলীগী ইজতেমার ব্যানার টাঙানো থাকে। এই আসা যাওয়ার পথে এসব ব্যানার দেখে রাস্তার লোকজন ও পথচারীরা জানতে পারে যে, এরা আহলেহাদীছ আন্দোলনের লোক এবং তারা রাজশাহীতে তাবলীগী ইজতেমায় যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন যেলার লোকজন সহজেই অত্র সংগঠন সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা লাভ করে। যেমন সুদূর কুমিল্লা থেকে একটি রিজার্ভ বাস রাজশাহী আসতে গেলে তাকে প্রায় ১০টি যেলার উপর দিয়ে আসতে হয়। সুতরাং ঐ ১০টি যেলার এমন অনেক লোক হয়তো থাকে যারা এর আগে কখনো এ সংগঠন সম্পর্কে কোন ধারণা পায়নি। ইজতেমা থেকে ফেরার পথেও অনুরূপ পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই রিজার্ভ গাড়ির বহর সংগঠনের একটা বড় প্রচার মাধ্যম।

প্রশাসনের অনুমতি : তাবলীগী ইজতেমার স্থানটি রাজশাহী মহানগরের মধ্যে হওয়ার কারণে বিধি মোতাবেক প্রতি বছরই ইজতেমা করার জন্য মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে অনুমতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে সংগঠনের প্যাডে তাবলীগী ইজতেমার ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়কের স্বাক্ষরে অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়ে থাকে। পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে তখন বিষয়টি তদন্তের জন্য স্থানীয় থানাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট দফতর তখন নিজস্ব প্রক্রিয়ায় তদন্ত কার্য সম্পাদন করে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে প্রতিবেদন পেশ করে থাকে। উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট দফতর যখন বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে, তখন তারা ইজতেমাসহ সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকেন। সরকারী দফতরের কর্মকর্তাগণ মাঝে মাঝে বদলী হয়ে ঐ সকল দফতরে নতুন নতুন কর্মকর্তা আসেন। তাদের অনেকের সংগঠন সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না থাকলেও কর্তব্যের খাতিরে জানার সুযোগ হয়ে যায়। সংঠনের জন্য এটা একটা বড় উপকার। কারণ আজ যিনি রাজশাহী আছেন, অদূর ভবিষ্যতে তিনি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং সরকারী কর্মকর্তাদেরকে সংগঠন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার এটা একটা বড় সুযোগ।

মাইকিং : প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সংগঠনের উদ্যোগে ইজতেমার নির্ধারিত তারিখের চার-পাঁচদিন পূর্ব থেকে প্রতিদিন সমগ্র রাজশাহী যেলার প্রতিটি অঞ্চলসহ শহরে ব্যাপকভাবে মাইকিং করা হয়। ইজতেমার তারিখ ও স্থান উল্লেখসহ সংগঠনের নাম এবং সংগঠনের বিভিন্ন শ্লোগানও প্রচার করা হয়।

ইজতেমার মূল কার্যক্রম : তাবলীগী ইজতেমার মূল কার্যক্রম সংগঠনের প্রচার ও প্রসারে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতি বছরই প্রথম দিন বাদ আছর তাবলীগী ইজতেমার মাননীয় সভাপতি ও ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের উদ্বোধনী ভাষণের মাধ্যমে তাবলীগী ইজতেমার মূল কার্যক্রম শুরু হয়। শনিবার ফজর পর্যন্ত ইজতেমা চলে।

দু’দিনব্যাপী তাবলীগী ইজতেমায় বক্তাগণ কেন্দ্রীয় সংগঠন কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে তত্ত্ব ও তথ্যবহুল আলোচনা উপস্থাপন করেন। বক্তার বক্তব্যে সংগঠনের মূল আদর্শ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে।

আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে প্রতি বছর নিয়মিত তাবলীগী ইজতেমা হওয়ার কারণে সারা দেশেই ইজতেমাকে উপলক্ষ করে একটা উৎসবের আমেজ বইতে থাকে। প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন যেলা থেকে বহু মাযহাব ও তরীক্বাপন্থী ভাইয়েরা এ ইজতেমায় আসেন এবং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছভিত্তিক আলোচনা শুনে অনেকে বাতিল আমল ও আক্বীদা পরিহার করে অহিভিত্তিক জীবন গড়ার দীপ্ত শপথ নিয়ে আহেলহাদীছ হয়ে যান। তারা আবার নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে অন্যদের মাঝেও এবিষয়টি বুঝিয়ে থাকেন। এমনিভাবে তাবলীগী ইজতেমার প্রভাবে প্রতি বছরই জানা-অজানা বহু মানুষের আক্বীদা ও আমলের পরিবর্তন ঘটছে।

তাবলীগী ইজতেমায় বিষয়ভিত্তিক বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর পরিবেশনায় পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে রচিত অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর, সমাজসংস্কারমূলক ও হৃদয়গ্রাহী ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করা হয়। যা মানুষকে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি সংগঠনের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

গণজমায়েত : সমগ্র বাংলাদেশে প্রায় তিন কোট আহলেহাদীছ বসবাস করে। কিন্তু অঞ্চলভেদে বেশিরভাগ আহলেহাদীছেরই এ বিষয়ে তেমন কোন ধারণা নেই। সে কারণে প্রকৃত হক্বের অনুসারী হয়েও মানসিক হীনমন্যতার কারণে অনেকে নিজের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতেও কুণ্ঠাবোধ করে থাকেন। ঐসকল ব্যক্তি যখন তাবলীগী ইজতেমায় এসে এধরনের আহলেহাদীছ গণজমায়েত দেখেন, তখন তাদের অন্তরে পূর্বের সংকীর্ণতা দূরীভুত হয়ে এক ধরনের সাহস ও আবেগ তৈরি হয়ে থাকে। তার এরূপ মনোভাব সৃষ্টির পেছনে সংগঠনের ভূমিকাই মুখ্য।

বুক স্টল : তাবলীগী ইজতেমার দুই দিন ইজতেমার মূল প্যান্ডেলের পাশে অস্থায়ী ভিত্তিতে ডেকোরেটরের মাধ্যমে কিছু দোকান করা হয়। যেখানে মূলতঃ হাদীছ ফাউন্ডেশন প্রকাশিত বই এবং দেশের রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাঁরা সংগঠনের নীতি ও আদর্শের অনুকূলে বইপত্র লিখেছেন, শুধুমাত্র সেই সব বইপত্রই বিক্রয় হয়। এর মাধ্যমে যারা বই প্রেমিক তারা এবং যারা সংগঠনের নীতি-আদর্শ সম্পর্কে গভীর এবং বিস্তারিত জ্ঞানার্জন করতে ইচ্ছুক, তারা নিজ নিজ পসন্দের বইসমূহ এক জায়গাতেই পেয়ে থাকেন। এমন অনেকে আছেন যারা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছভিত্তিক বই কিনতে আগ্রহী, তারা বছরের এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। তাই একথা নির্দ্ধিধায় বলা চলে যে, তাবলীগী ইজতেমার বুক স্টলগুলো সংগঠনের প্রচার ও প্রসারে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

মহিলা প্যান্ডেল : যুগে যুগে ইসলাম প্রচারে নারীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশের নারী সমাজ শিক্ষার দিক দিয়ে যেমন পিছিয়ে, ধর্মীয় শিক্ষায় তার চেয়ে আরও পিছিয়ে। অথচ একটি দেশ পরিপূর্ণভাবে ইসলামী দেশে পরিণত করতে গেলে প্রথমেই আসতে হবে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম শাখা পরিবার থেকে। আর একটি পরিবার সুন্দর ও শান্তিময় করে গড়ে তোলার জন্য নারীর ভূমিকাই মুখ্য। তাই নারী সমাজকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার অন্যতম একটা সুযোগ হ’ল তাবলীগী ইজতেমা। এক্ষেত্রে মহিলাদের আগ্রহও নিতান্তই কম নয়। তাবলীগী ইজতেমায় যত লোকের সমাগম হয় তার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হ’ল মহিলা। আবার মহিলাদের আগমনের কারণে ইজতেমায় পুরুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। কারণ অনেকে আছেন যিনি নিজে ইজতেমায় আসতে চান না, কিন্তু তার স্ত্রী আসতে চান। এক্ষেত্রে স্ত্রীর দাবী মানতে গিয়ে তার সঙ্গে নিজেকেও আসতে হচ্ছে। প্রতি বছরই তাবলীগী ইজতেমায় যে সকল মহিলা আসেন, তারা নিজ নিজ গ্রামে গিয়ে অন্যের মাঝেও সাধ্যমত তা প্রচার করে থাকেন। ফলে প্রতি বছরই ইজতেমায় মহিলার উপস্থিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিধায় বর্তমানে মহিলাদের জন্য স্বতন্ত্রভাবে প্যান্ডেল তৈরি করতে হচ্ছে। এমনিভাবে তাবলীগী ইজতেমায় মহিলাদের ব্যবস্থাপনার কারণে সংগঠনের প্রচার ও প্রসার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অডিও-ভিডিও : তাবলীগী ইজতেমায় যেসব বক্তব্য দেওয়া হয়ে থাকে, তা অডিও ও ভিডিও আকারে সিডি বা ডিভিডি করে বিক্রয় করা হয়ে থাকে। যা দেশে এবং দেশের বাইরেও ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে একদিকে যারা কোন কারণে তাবলীগী ইজতেমায় আসতে পারেন না, তারা তাবলীগী ইজতেমার আলোচনা শুনে নিতে পারেন। অপরদিকে যারা একই বক্তব্য বার বার শুনতে চান অথবা যাদের কোনভাবেই তাবলীগী ইজতেমায় আসা সম্ভব নয়, তাদের মাঝে ইজতেমার বক্তব্যগুলো শুনানো সহজ হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা হ’ল, সিডির মাধ্যমে একটি বক্তব্য প্রয়োজনমত কপি করে প্রচার করা যায়।

সংবাদ মাধ্যম : তাবলীগী ইজতেমা উপলক্ষে সারা দেশ থেকে রাজশাহীতে হাযার হাযার লোকের সমাগম হয়ে থাকে। এ সংবাদ স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ হয়ে থাকে। যা সংগঠনের প্রচার ও প্রসারে একটা বড় ভূমিকা রাখে। সাথে সাথে প্রথম দিকে না থাকলেও বর্তমানে যেহেতু বহু বেসরকারী টিভি চ্যানেল হয়েছে, তাদের অনেকেই এই ইজতেমার সংবাদ প্রচার করে থাকে।

আত-তাহরীক সংবাদ : অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে তাবলীগী ইজতেমার যে সংবাদ প্রচারিত হয়, তা নিতান্তই সামান্য। অপরদিকে প্রতিবছর তাবলীগী ইজতেমার সকল বিষয় নিয়ে পরবর্তী মাসে আত-তাহরীকে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এর ফলে তাবলীগী ইজতেমায় না এসেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলা ভাষাভাষী হাযার হাযার আত-তাহরীকের পাঠকের নিকটে সংগঠনের দাওয়াত পৌঁছে যায়।

ইন্টারনেট : বর্তমানে প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বের অন্যান্য মাধ্যমের পাশাপাশি দ্বীন ও সংগঠন প্রচারে ইন্টারনেট একটা বড় মাধ্যম। পাশ্চাত্যের বহু বিধর্মী স্কলার ইসলাম সম্পর্কে জানার মাধ্যম হিসাবে ইন্টারনেটকে বেছে নিয়েছে। এই সুযোগে আহলেহাদীছ আন্দোলনের সকল প্রকাশনা, মুতারাম আমীরে জামাআতের জুম‘আর খুৎবাসহ অন্যান্য বক্তব্য ইন্টারনেটে দেওয়া হয়ে থাকে। সাথে সাথে তাবলীগী ইজতেমার বেশিরভাগ বক্তব্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়। এতে যে কেউ ইচ্ছা করলে সেখান থেকে ডাউনলোড করে যেকোন বক্তব্য শুনতে পারেন। ইতিমধ্যে অনেকেই এভাবে আমাদের ওয়েবসাইট ব্রাউস করে আমাদের লেখনী ও বক্তব্য পড়ছেন ও শুনছেন। সাথে সাথে তাঁদের সুচিন্তিত মতামতও পাঠাচ্ছেন। তাই বর্তমান বিশ্বের এই অত্যাধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা সারা বিশ্বের দরবারে আমাদের দাওয়াত পৌঁছে যাচ্ছে।

তাই সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত তাবলীগী ইজতেমার মাধ্যমে সংগঠনের প্রচার ও প্রসার সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এজন্য তাবলীগী ইজতেমাকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর ও সফল করে সংগঠনের প্রচার-প্রসারে অবদান রাখার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন!






সৃজনশীল প্রশ্ন, অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাস - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
সীমালংঘন ও দুনিয়াপূজা : জাহান্নামীদের দুই প্রধান বৈশিষ্ট্য (৪র্থ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের উপায় - শামসুল আলম
মানব জাতির সাফল্য লাভের উপায় (৬ষ্ঠ কিস্তি) - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
কুরআন নিয়ে চিন্তা করব কিভাবে? - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
মহামনীষীদের পিছনে মায়েদের ভূমিকা - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আশূরায়ে মুহাররম - আত-তাহরীক ডেস্ক
ঘোড়ার গোশত : হালাল নাকি হারাম? একটি পর্যালোচনা - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
পাপ বর্জনের শিষ্টাচার সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ছাহাবায়ে কেরামের প্রতি আমাদের কর্তব্য - আব্দুল আলীম বিন কাওছার
ইসলামে পানাহারের আদব বা শিষ্টাচার - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
পবিত্র কুরআনের ১৩৭০ বছর আগের কয়েকটি পৃষ্ঠা উদ্ধার
আরও
আরও
.