(খ) মাওকূফ বর্ণনাসমূহ :
দলীল-১ : ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) লিখেছেন,
رَوَاهُ أَبُو عُبَيْدٍ فِيْ كِتَابِ الطُّهُورِ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ مَهْدِيٍّ عَنْ الْمَسْعُودِيِّ عَنْ الْقَاسِمِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ مُوسَى بْنِ طَلْحَةَ قَالَ: مَنْ مَسَحَ قَفَاهُ مَعَ رَأْسِهِ وُقِيَ الْغُلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
‘আবু ওবায়দাহ এটি ‘কিতাবুত
তুহূরে’ বর্ণনা করেন আব্দুর রহমান ইবনু মাহদী হ’তে, তিনি মাসঊদী হ’তে, তিনি
কাসেম বিন আব্দুর রহমান হ’তে, তিনি মূসা বিন ত্বালহা হ’তে। তিনি বলেন, ‘যে
ব্যক্তি মাথার সাথে গর্দান মাসাহ করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে বেড়ী পরানো
হ’তে মুক্ত রাখা হবে’।[1]
তাহক্বীক্ব : এটি মুরসাল রেওয়ায়াত, যা যঈফ এবং দলীলের অনুপযুক্ত নিম্নোক্ত কারণে।
(১) ইবনে হাজার (রহঃ) নিজেই একে মুরসাল বলেছেন।[2]
(২)
ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেছেন, وَالْمُرْسَلُ مِنَ الرِّوَايَاتِ فِي أَصْلِ
قَوْلِنَا، وَقَوْلِ أَهْلِ الْعِلْمِ بِالْأَخْبَارِ لَيْسَ بِحُجَّةٍ
‘আমাদের মৌলিক কথা এবং হাদীছ বিশারদগণের উক্তি হ’ল, মুরসাল বর্ণনা দলীল
নয়’।[3]
(৩) ইমাম তিরমিযী বলেছেন,والْحَدِيث
إِذا كَانَ مُرْسلا فَإِنَّهُ لَا يَصح عِنْد أَكثر أهل الحَدِيث قد ضعفه
غير وَاحِد مِنْهُم ‘আর হাদীছ যখন মুরসাল হবে তখন অধিকাংশ মুহাদ্দিছের মতে
তা (তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা) শুদ্ধ হবে না। নিশ্চয়ই মুরসাল বর্ণনাকে
একাধিক মুহাদ্দিছ যঈফ বলেছেন’।[4]
(৪) হাফেয ইরাক্বী লিখেছেন,
وَرَدَّهُ جَمَاهِرُ النُّقَّادِ... لِلجَهْلِ بِالسَّاقِطِ في الإسْنَادِ
‘জমহূর মুহাদ্দিছগণ একে (মুরসাল বর্ণনাকে) বাতিল বলেছেন।... সনদের মধ্যে রাবীর পতিত হওয়ার বিষয়টি অজ্ঞাত থাকার কারণে।[5] অর্থাৎ মুরসাল বর্ণনাতে কোন্ রাবী বাদ পড়ে গিয়েছেন তা অজানা থাকার কারণে একে যঈফ হিসাবে গণ্য করা হয়।
(৫)
যয়নুদ্দীন আল-ইরাক্বী বলেন,وما ذكرناه من سقوط إلاحتجاج بالمرسل والحكم
بضعفه هو المذهب الذي استقر عليه آراء جماهير حفاظ الحديث ونقاد إلاثر
‘মুরসাল বর্ণনা দ্বারা দলীল পেশ করার বিষয়টি বর্জিত হওয়া এবং তার যঈফ হওয়ার
হুকুম সম্পর্কে আমরা যা উল্লেখ করেছি, এ ব্যাপারে জমহূর হাদীছের হাফেয এবং
নাক্কাদুল আছারগণ (হাদীছের সমালোচক মুহাদ্দিছগণ) স্বীকৃতি দিয়েছেন’।[6]
(৬)
ইমাম নববী (রহঃ) লিখেছেন,ثُمَّ الْمُرْسَلُ حَدِيْثٌ ضَعِيْفٌ عِنْدَ
جَمَاهِيرِ الْمُحَدِّثِينَ وَالشَّافِعِيِّ وَكَثِيْرٍ مِنَ الْفُقَهَاءِ
وَأَصْحَابِ الْأُصُولِ ‘অতঃপর মুরসাল হাদীছ অধিকাংশ মুহাদ্দিছ, শাফেঈ,
অধিকাংশ ফক্বীহ ও আছহাবুল উছূলদের নিকটে যঈফ’।[7]
(৭)
ইমাম আবূদাঊদ লিখেছেন,فَإِذا لم يكن مُسْند غير الْمَرَاسِيل وَلم يُوجد
الْمسند فالمرسل يحْتَج بِهِ وَلَيْسَ هُوَ مثل الْمُتَّصِل فِي الْقُوَّة
‘আর যখন মুরসাল ব্যতীত কোন মুসনাদ বর্ণনা থাকবে না এবং কোন মুসনাদ পাওয়া না
যায় তখন মুরসাল দ্বারা দলীল পেশ করা যাবে। আর এটি মুত্তাছিল-এর ন্যায়
শক্তিশালী নয়।[8]
‘দলিলসহ নামাযের মাসায়েল’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ইমাম আবূ দাঊদ বলেছেন,وَأما الْمَرَاسِيل فقد كَانَ يحْتَج بهَا الْعلمَاء فِيمَا مضى مثل سُفْيَان الثَّوْريّ وَمَالك بن أنس وَالْأَوْزَاعِيّ حَتَّى جَاءَ الشَّافِعِي فَتكلم فِيْهَا অর্থাৎ মুরসাল হাদীছ দ্বারা প্রমাণ পেশ করতেন পূর্বেকার আলেমগণ। যেমন, সুফিয়ান ছাওরী, মালেক ও আওযাঈ। অবশেষে শাফেঈ এসে এতে আপত্তি করেছেন (পৃঃ ৪১৬)। এখানে ইমাম আবূদাঊদের উক্তির বাকী অংশ উল্লেখ করা হয়নি। তিনি বলেছেন,وَتَابعه على ذَلِك أَحْمد بن حَنْبَل وَغَيره رضوَان الله عَلَيْهِم ‘আর তাকে আহমাদ বিন হাম্বল এবং অন্যরা অনুসরণ করেছেন’।[9] সবশেষে ইমাম আবূদাউদ বলেছেন,فَإِذا لم يكن مُسْند غير الْمَرَاسِيل وَلم يُوجد الْمسند فالمرسل يحْتَج بِهِ وَلَيْسَ هُوَ مثل الْمُتَّصِل فِي الْقُوَّة ‘আর যখন মুরসাল ব্যতীত কোন মুসনাদ বর্ণনা না থাকে এবং কোন মুসনাদ পাওয়া না যায় তখন মুরসাল দ্বারা দলীল পেশ করা যাবে। আর এটি মুত্তাছিল-এর ন্যায় শক্তিশালী নয়।[10] অর্থাৎ ইমাম আবূদাঊদ শর্ত সাপেক্ষে মুরসাল বর্ণনা গ্রহণ করার কথা বলেছেন। নিঃশর্তভাবে মুরসাল রেওয়ায়াত গ্রহণ করার কোন ভিত্তি নেই। আর ছাহাবীগণও নিরীক্ষা করে হাদীছ গ্রহণ করতেন। এমনকি এক ছাহাবী আরেক ছাহাবীর কথাকেও যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ করতেন।
তাক্বলীদপন্থীদের দাবী অনুসারে চার মাযহাবই সঠিক। সুতরাং যদি ইমাম শাফেঈ বা ইমাম চতুষ্টয়ের মধ্য হ’তে কোন একজন ইমাম মুরসাল রেওয়ায়াতকে গ্রহণ করা বেঠিক মনে করেন তবে তা তাক্বলীদপন্থীদের নিকটে সঠিক অভিমত হিসাবে গণ্য হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।
মুরসাল রেওয়ায়াত সম্পর্কে বাংলাভাষী হকপিয়াসু ভাই-বোনদের অত্যন্ত প্রিয় মাসিক পত্রিকা ‘আত-তাহরীক’ প্রদত্ত ফৎওয়া নিমণরূপ-
যে
হাদীছ কোন তাবেঈ মধ্যবর্তী রাবীর নাম উল্লেখ না করে সরাসরি রাসূল (ছাঃ)
থেকে বর্ণনা করেন, তাকে ‘মুরসাল’ হাদীছ বলে। ‘মুরসাল’ হাদীছ যঈফ হাদীছের
শ্রেণীভূক্ত। এ জন্য জমহূর মুহাদ্দিছীনের নিকটে মুরসাল হাদীছ সাধারণভাবে
দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।[11]
তবে
শর্তসাপেক্ষে ‘মুরসাল’ হাদীছ গ্রহণযোগ্য হ’তে পারে। যেমন ইমাম শাফেঈ সহ
অপরাপর ইমামগণ উল্লেখ করেছেন- ১. রাবী উঁচু স্তরের তাবেঈ হওয়া। ২. রাবী যে
রাবীর কাছ থেকে ‘ইরসাল’টি করেছেন তাঁকে ‘ছিক্বাহ’ বা বিশ্বস্ত বলে উল্লেখ
করা। ৩. বিশ্বস্ত অন্য কোন রাবী’র বিরোধিতা না থাকা এবং ৪. নিম্নোক্ত চারটি
শর্তের যে কোন একটি থাকা- যেমন (ক) অন্য কোন মুসনাদ সূত্রে বর্ণিত হওয়া।
(খ) অপর কোন মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হওয়া। (গ) ছাহাবীর কওল দ্বারা সমর্থিত
হওয়া। অথবা (ঘ) অধিকাংশ বিদ্বানের মতামতের অনুকূলে হওয়া। এ সকল শর্ত পাওয়া
গেলেই কেবল মুরসাল হাদীছ দলীল হিসাবে বিবেচিত হ’তে পারে।[12]
মোটকথা, মুরসাল রেওয়ায়াত শর্তহীনভাবে দলীলযোগ্য নয়। কেননা এতে রাবী মাজহূল থেকে যান এবং এর সনদে রাবীর বিচ্ছিন্নতা রয়ে যায়। যদি মুরসাল বর্ণনার পক্ষে গ্রহণযোগ্য শাহেদ বা মুতাবা‘আত বিদ্যমান থাকে তাহ’লে তা দলীলের যোগ্য হ’তে পারে।
উক্ত বর্ণনার রাবী ‘মাসঊদী’ সম্পর্কে বিদ্বানগণের বক্তব্য নিমণরূপ-
(১) ইবনে সা‘দ বলেছেন,
المسعودي واسمه عبد الرحمن بن عبد الله بن عتبة بن عبد الله بن مسعود، مات ببغداد، وكان ثقة كثير الحديث إلا أنه اختلط في آخر عمره-
‘মাস‘ঊদীর
নাম হ’ল আব্দুর রহমান বিন আব্দুল্লাহ বিন উতবাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ।
তিনি বাগদাদে মারা যান। তিনি ছিক্বাহ ও অত্যধিক হাদীছ বর্ণনাকরী ছিলেন।
তবে শেষ বয়সে ইখতিলাত্বের শিকার হয়েছিলেন’।[13] ইমাম ইজলী বলেছেন, إلا أنه تغير بآخرة‘তবে শেষ জীবনে তার স্মৃতিশক্তি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল’।[14]
(২)
ইবনুল জাওযী মাসঊদী সম্পর্কে লিখেছেন,قَالَ الْعقيلِيّ تغير فِي آخر عمره
فِي حَدِيثه اضْطِرَاب ‘উক্বায়লী বলেছেন, তার শেষ জীবনে স্মৃতি পরিবর্তন
হয়ে গিয়েছিল। তার হাদীছে অসংগতি রয়েছে’।[15]
(৩)
হাফেয যাহাবী উল্লেখ করেছেন, قَالَ ابْن نمير ثِقَة اخْتَلَط بِآخِرهِ
وَقَالَ ابْن حبَان كَانَ صَدُوقًا إِلَّا أَنه اخْتَلَط فِي آخر عمره-
‘ইবনে নুমায়ের বলেছেন, তিনি ছিকবাহ। তার শেষ জীবনে ইখতিলাত্ব হয়েছিল এবং
ইবনে হিববান বলেছেন, তিনি সত্যবাদী ছিলেন। তবে তার শেষ বয়সে তিনি
ইখতিলাত্বে পতিত হয়েছিলেন’।[16]
(৪) হাফেয আলাঈ[17] ও হাফেয বুরহানুদ্দীন তাকে ‘মুখতালিত্বীনদের’ মধ্যে উল্লেখ করেছেন।[18]
(৫)
আছ-ছিফাদী উল্লেখ করেছেন,قَالَ أَبُو حَاتِم تغير قبل مَوته بِيَسِيْر سنة
أَو سنتَيْن وَكَانَ أعلم أهل زَمَانه بِحَدِيث ابْن مَسْعُود ‘আবূ হাতিম
বলেছেন, তার মরণের এক বা দু’বছর আগে স্মৃতি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। তিনি তার
যামানায় ইবনে মাসঊদ হ’তে হাদীছ বর্ণনায় সর্বাধিক জ্ঞানী ছিলেন’।[19]
মোদ্দাকথা, তিনি আস্থাভাজন রাবী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁর মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে গিয়েছিল। ফলে তিনি যঈফ রাবীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছেন।
দলীল-২:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ إِذَا مَسَحَ رَأْسَهُ مَسَحَ قَفَاهُ مَعَ رَأْسِهِ. هَذَا مَوْقُوْفٌ وَالْمُسْنَدُ فِيْ إِسْنَادِهِ ضَعْفٌ وَاللهُ أَعْلَمُ-
ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি যখন তার মাথা মাসাহ করতেন তখন তার ‘ক্বাফা’-কেও মাথা সহ মাসাহ করতেন। এটি মাওকূফ। আর মুসনাদ বর্ণনাটির সনদে দুর্বলতা আছে।
আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।[20]
পর্যালোচনা : এটি অত্যন্ত যঈফ। কারণ এতে আবূ ইসরাঈল নামক রাবী রয়েছেন, যিনি অত্যন্ত দুর্বল। তার সম্পর্কে মনীষীগণের উক্তিসমূহ নিমণরূপ-
(১)
শামসুদ্দীন আয-যাহাবী বলেন, إسماعيل بن خليفة هو أبو إسرائيل الملائي واه-
‘ইসমাঈল বিন খলীফা হ’লেন আবূ ইসরাঈল আল-মুলাঈ যিনি অত্যন্ত দুর্বল।[21] তিনি আরো বলেন, أبو إسرائيل الملائي، أحد الضعفاء، ‘ইসরাঈল অন্যতম যঈফ রাবী’।[22]
অন্যত্র তিনি উল্লেখ করেন, ضعفوه، وقد كان شيعيا بغيضا من الغلاة الذين
يكفرون عثمان رضي الله عنه- ‘মুহাদ্দিছগণ তাকে যঈফ বলেছেন। নিশ্চয়ই তিনি
চরমপন্থী শী‘আদের অন্যতম ছিলেন। যারা ওছমান (রাঃ)-কে কাফের বলতেন’।[23]
(২) ইবনুত তুরকুমানী হানাফী[24], ইমাম দারাকুৎনী[25], ইবনুল জাওযী[26], ইবনে শাহীন[27], জালালুদ্দীন সয়ূতী[28] প্রমুখ বলেন, আবূ ইসরাঈল যঈফ রাবী।
(৩)
ইমাম উক্বায়লী বলেছেন,إِسْمَاعِيلُ بْنُ أَبِي إِسْحَاقَ أَبُو
إِسْرَائِيلَ الْمُلَائِيُّ فِي حَدِيثِهِ وَهْمٌ وَاضْطِرَابٌ، ‘ইসমাঈল
বিন আবী ইসহাক্ব আবূ ইসরাঈল আল-মুলাঈ- তার হাদীছে ভুল এবং অসংগতি আছে’।[29]
(৪) মুহাম্মাদ ইবনু তাহের মাকদেসী বলেন, والملائي مَتْرُوك الحَدِيث ‘আর মুলাঈ হ’লেন মাতরূকুল হাদীছ’।[30]
অর্থাৎ তার হাদীছ প্রত্যাখ্যাত। অন্যত্র আছে,وَأَبُو إِسْرَائِيل هَذَا
كَذَّاب مَتْرُوك الحَدِيث، ‘এই আবূ ইসরাঈল একজন মিথ্যুক, মাতরূকুল হাদীছ’।[31]
(৫)
আবুল হাসান আলী আল-কেনানী বলেন,كَانَ رَافِضِيًّا تَركه ابْن مهْدي،
وَقَالَ ابْن حبَان مُنكر الحَدِيث واتهمه الْعقيلِيّ بِحَدِيث ‘সে (আবূ
ইসরাঈল আল-মুলাঈ) রাফেযী ছিলেন। ইবনে মাহদী তাকে বর্জন করেছেন এবং ইবনে
হিববান বলেছেন, তিনি মুনকারুল হাদীছ। উক্বায়লী একটি হাদীছের ব্যাপারে তার
উপর হাদীছ জালকরণের অভিযোগ আরোপ করেছেন’।[32]
(৬)
ইমাম বুখারী (রহঃ) লিখেছেন,تَركه بن مهْدي وَقَالَ كَانَ يشْتم عُثْمَان
وَضَعفه أَبُو الْوَلِيد ‘ইবনে মাহদী তাকে বর্জন করেছেন। তিনি ওছমান
(রাঃ)-কে গালি দিতেন’।[33] ইমাম ইবনে হিববানও অনুরূপ বলেছেন।[34]
(৭)
ইমাম নাসাঈ (রহঃ) লিখেছেন,إِسْمَاعِيل بن أبي إِسْحَاق الْملَائي أَبُو
إِسْرَائِيل لَيْسَ بِثِقَة ‘ইসমাঈল বিন আবী ইসহাক্ব আল-মুলাঈ আবূ ইসরাঈল
ছিক্বাহ ছিলেন না’।[35]
(৮) ইমাম দারা-কুৎনী তাকে যঈফ এবং প্রত্যাখ্যাত রাবীদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।[36]
(৯)
নাছিরুদ্দীন আলবানী বলেছেন,وأبو إسرائيل واسمه إسماعيل بن خليفة ضعيف لسوء
حفظه ‘আবূ ইসরাঈল... যঈফ। তার মন্দ স্মৃতিশক্তির জন্য’।[37]
(১০)
যুবায়ের আলী যাঈ বলেছেন, ابو اسرائيل الملائي اسمعيل بن خليفة ضعيف، ضعفه
الجمهور من جهة حفظه- ‘আবূ ইসরাঈল ... যঈফ তার হিফযের কারণে জমহূর
মুহাদ্দিছগণ তাকে যঈফ বলেছেন’।[38]
ঘাড় মাসাহ সম্পর্কে ইমামদের ফৎওয়াসমূহ :
(১) শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, নবী করীম (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের কারো থেকে ওযূতে ঘাড় মাসাহ করার ব্যাপারে কোন ছহীহ বর্ণনা আছে কি? উত্তরে তিনি বলেন,
لَمْ يَصِحَّ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ مَسَحَ عَلَى عُنُقِهِ فِي الْوُضُوءِ بَلْ وَلَا رُوِيَ عَنْهُ ذَلِكَ فِي حَدِيثٍ صَحِيحٍ بَلْ الْأَحَادِيثُ الصَّحِيحَةُ الَّتِي فِيهَا صِفَةُ وَضَوْءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَمْسَحُ عَلَى عُنُقِهِ؛ وَلِهَذَا لَمْ يَسْتَحِبَّ ذَلِكَ جُمْهُورُ الْعُلَمَاءِ كَمَالِكِ وَالشَّافِعِيِّ وَأَحْمَد فِي ظَاهِرِ مَذْهَبِهِمْ وَمَنْ اسْتَحَبَّهُ فَاعْتَمَدَ فِيهِ عَلَى أَثَرٍ يُرْوَى عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَوْ حَدِيثٍ يَضْعُفُ نَقْلُهُ: {أَنَّهُ مَسَحَ رَأْسَهُ حَتَّى بَلَغَ الْقَذَالَ} وَمِثْلَ ذَلِكَ لَا يَصْلُحُ عُمْدَةً وَلَا يُعَارِضُ مَا دَلَّتْ عَلَيْهِ الْأَحَادِيثُ وَمَنْ تَرَكَ مَسْحَ الْعُنُقِ فَوُضُوءُهُ صَحِيحٌ بِاتِّفَاقِ الْعُلَمَاءِ. وَاَللهُ أَعْلَمُ-
‘নবী করীম (ছাঃ) থেকে ছহীহ সূত্রে প্রমাণিত হয়নি যে, তিনি
ওযূতে ঘাড় মাসাহ করেছেন। বরং তাঁর থেকে এ বিষয়ে একটি ছহীহ হাদীছও বর্ণিত
হয়নি। এমনকি যে সকল ছহীহ হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ওযূর পদ্ধতি বর্ণিত
হয়েছে, সেখানেও তাঁর ঘাড় মাসাহ উল্লেখ করা হয়নি। এ কারণেই জমহূর বিদ্বানগণ
একে মুস্তাহাব মনে করেননি। যেমন মালেক, শাফেঈ ও আহমাদ তাঁদের প্রকাশ্য
অভিমতে। আর যারা একে মুস্তাহাব করেছেন, তারা একটি আছারের উপরে নির্ভর
করেছেন। যা আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে। কিংবা কোন হাদীছের উপরে,
যেটির বর্ণনাকে দুর্বল বলা হয়- ‘নিশ্চয়ই তিনি তার মাথাকে মাসাহ করতেন
ক্বাযাল পর্যন্ত’। এর অনুরূপ যার গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত নয় এবং এর বিরুদ্ধে
যেগুলি হাদীছ নির্দেশনা করে সেগুলির সাথে সাংঘর্ষিকও নয়। যে ঘাড় মাসাহকে
বর্জন করবে, আলেমদের ঐক্যমতে তার ওযূ বিশুদ্ধ হবে। আর আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।[39]
(২) শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন,ولا يشرع مسح العنق، وإنما المسح يكون للرأس والأذنين فقط، كما دل على ذلك الكتاب والسنة. ‘ঘাড় মাসাহ করা শরী‘আত সম্মত নয়। আর মাসাহ স্রেফ মাথা এবং দু’কানের জন্যই হবে। যেমনভাবে এ ব্যাপারে কিতাব এবং সুন্নাতে প্রমাণিত’।[40]
(৩) ‘ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ’-তে বলা হয়েছে,لم يثبت في كتاب الله تعالى ولا في سنة الرسول صلى الله عليه وسلم أن مسح الرقبة سنة من سنن الوضوء. فلا يشرع مسحها ‘ওযূতে ঘাড় মাসাহ করা সুন্নাত হিসাবে না কুরআনে প্রমাণিত হয়েছে আর না হাদীছে নববীতে। অতএব ঘাড় মাসাহ করা
শরী‘আত সম্মত নয়’।[41]
(৪)
শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ (রহঃ) বলেছেন, ছহীহ এবং হাসান হাদীছ সমূহে মাথা এবং
কান মাসাহের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ঘাড় মাসাহর কথা উল্লেখ নেই।[42]
উপসংহার : উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হ’ল যে, ওযূতে ঘাড় মাসাহ করা বিদ‘আত, যা বহুল প্রচলিত। যারা এই বিদ‘আতে লিপ্ত, তাদেরকে ফিরে আসতে হবে সুন্নাতের দিকে। আল্লাহ আমাদেরকে ছিরাতে মুস্তাক্বীমের উপরে অটল থাকার তওফীক্ব দিন-আমীন!
[1]. ক্বাসেম বিন সাল্লাম, আত-তুহূর হা/৩৬৮; আত-তালখীছুল হাবীর হা/৯৭; নবীজির নামায, সম্পাদনায় : মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক ছাহেব, (ঢাকা : মুমতায লাইব্রেরী), পৃঃ ১১৪-১১৫।
[2]. তালখীছ হা/৯৭।
[3]. মুক্বাদ্দামা মুসলিম ১/২৯।
[4]. আল-ইলালুছ ছগীর, পৃঃ ৭৫৩।
[5]. ফাৎহুল মুগীছ, ক্রমিক নং ১২৩।
[6]. আত-তাক্বঈদু ওয়াল ঈযাহ, পৃঃ ৭৩।
[7]. তাদরীবুর রাবী শরহে তাক্বরীবুন নববী ১/২২২।
[8]. রিসালাতু আবী দাঊদ ইলা আহলি মাক্কাহ, পৃঃ ৩৫।
[9]. রিসালাতু আবী দাঊদ ইলা মাক্কাহ, পৃঃ ৩৪।
[10]. রিসালাতু আবী দাঊদ ইলা আহলি মাক্কাহ, পৃঃ ৩৫।
[11]. তাদরীবুর রাবী ১/১৯৮।
[12]. আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ৬/২০৬, তায়সীরু মুছত্বলাহিল হাদীছ পৃঃ ৬০; মাসিক আত-তাহরীক, পৃঃ ৮০, এপ্রিল ২০১৫ইং।
[13]. আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা, রাবী নং ২৬২০; খত্বীব বাগদাদী, তারীখে বাগদাদ ১০/২২০।
[14]. আছ-ছিক্বাত, রাবী নং ৯৬২।
[15]. আয-যু‘আফাউল মাতরূকীন, রাবী নং ১৮৮১।
[16]. আল-মুগনী ফিয যু‘আফা, রাবী নং ৩৫৯০, সনদবিহীন।
[17]. আল-মুখতালিত্বীন, রাবী নং ২৮।
[18]. আল-ইগতিবাত্ব, রাবী নং ৬২।
[19]. আল-ওয়াফী বিল ওয়াফায়াত ৪/৭৬।
[20]. বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/২৭৯।
[21]. মীযানুল ই‘তিদাল, রাবী নং ৮৬৮।
[22]. মীযানুল ই‘তিদাল রাবী নং ৮৪৯।
[23]. ঐ, রাবী নং ৯৯৫৭; আল-মুগনী ফিয-যু‘আফাহ, রাবী নং ৭২৯৯।
[24]. আল-জাওহারুন নাক্বী ৪/৩৪০।
[25]. ইলালুদ দারাকুৎনী, ক্রমিক নং ১০৪৩।
[26]. আল-মাওযূ‘আত ৩/১২৯।
[27]. তারীখুয যু‘আফাহ ওয়াল কায্যাবীন, রাবী নং ৪১।
[28]. আল-লাআলী আল-মাছনূ‘আহ ২/১৬৩।
[29]. আয-যু‘আফাহ, ক্রমিক নং ৮০।
[30]. যাখীরাতুল হুফ্ফায, ক্রমিক নং ৩৫৮।
[31]. ক্রমিক নং ৫৯২৬।
[32]. তানযীহুশ শরী‘আহ, ক্রমিক নং ২৮২।
[33]. আত-তারীখুল আওসাত্ব, রাবী নং ২১২৬।
[34]. আল-মাজরূহীন, রাবী নং ৪১।
[35]. আয-যু‘আফাউল মাতরূকীন, রাবী নং ৪৩।
[36]. আয-যু‘আফাউল মাতরূকীন, রাবী নং ৭৩।
[37]. যঈফা হা/৪৭৩৫।
[38]. আনওয়ারুছ ছহীফাহ, যঈফ তিরমিযী হা/১৯৮।
[39]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২১/১২৭, ১২৮।
[40]. ঐ, ১০/১০২।
[41]. ঐ, ৫/২৫৪, ফৎওয়া নং ৯২৩৩।
[42]. হাদিয়াতুল মুসলিমীন, পৃঃ ১৫।