‘মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ হিন্দ’-এর সাবেক আমীর  হাফেয মুহাম্মাদ ইয়াহ্ইয়া দেহলভী (৯৫) গত ২২শে নভেম্বর’২০ রবিবার সকাল ৯-টায় দিল্লীতে মৃত্যুবরণ করেন। ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেঊন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ পুত্র, ৩ কন্যা ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ঐদিন বাদ আছর জানাযা শেষে তাঁকে পারিবারিক গোরস্থান শীদীপুরা, দিল্লীতে দাফন করা হয়।

হাফেয মুহাম্মাদ ইয়াহ্ইয়া দেহলভী ১৯২৫ সালে দিল্লীতে এক ঐতিহ্যবাহী আহলেহাদীছ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হাফেয হামীদুল্লাহ দেহলভী ‘অল ইন্ডিয়া আহলেহাদীছ কনফারেন্স’-এর সহ-সেক্রেটারী এবং দীর্ঘ দিনের অর্থ সম্পাদক ছিলেন। অল ইন্ডিয়া আহলেহাদীছ কনফারেন্সের বার্ষিক কনফারেন্স সমূহে তিনি হাযার হাযার রূপিয়া খরচ করতেন। ত্রিশের অধিক মাদ্রাসায় নিয়মিত মাসিক অনুদান দিতেন। হাফেয মুহাম্মাদ ইয়াহ্ইয়া স্থানীয় মাদ্রাসায় হিফয সমাপ্ত করার পর দারুল হাদীছ রহমানিয়া, দিল্লীতে ভর্তি হয়ে দ্বীনী জ্ঞান হাছিল করেন। মাওলানা ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মাওলানা আব্দুল জলীল রহমানী প্রমুখ মুহাদ্দিছগণ তাঁর শিক্ষক।

অতঃপর পৈতৃক পেশা ব্যবসায়ে নিয়োজিত হন। ১৯৪৪ সালে তিনি ‘অল ইন্ডিয়া আহলেহাদীছ কনফারেন্স’-এর সদস্য মনোনীত হন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় আহলেহাদীছ জামা‘আতের অধিকাংশ ব্যক্তি পাকিস্তানে হিজরত করেন। এ সময় দাঙ্গার ফলে ছিন্নভিন্ন আহলেহাদীছ জামা‘আতকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস চালান। ১৯৫১ সালে কনফারেন্স-এর সভাপতি মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব আরাভী তাঁকে কনফারেন্স-এর সেক্রেটারী নিযুক্ত করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেন। ১৯৫২ সালে তিনি দ্বিতীয়বার জেনারেল সেক্রেটারী হন। ১৯৫২ সালে জমঈয়তের মুখপত্র ‘তারজুমান’ প্রকাশ করেন এবং যাবতীয় ব্যয়ভার তিনি বহন করেন।

১৯৫৪ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে ওয়াকফ সম্পর্কিত কাযেমী বিল পেশ করা হয়। এতে আহলেহাদীছ জামা‘আতের নাম ছিল না। তিনি স্বীয় প্রচেষ্টায় এতে আহলেহাদীছদের নাম  অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৯৭৪ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় তিনি দাঙ্গা থামানো ও সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৯ সালে ওখলা, নয়া দিল্লীতে আহলেহাদীছ কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ৭৫ হাযার স্কয়ার ফিট জায়গা ক্রয়েও তাঁর প্রচেষ্টা ছিল অতুলনীয়। ১৯৯৫ সালে তিনি মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ, হিন্দ-এর নায়েবে আমীর নির্বাচিত হন। মাওলানা মুখতার আহমাদ নাদভী ও মাওলানা ছফিউর রহমান মুবারকপুরীর ইস্তেফা দেওয়ার পর তিনি ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি জমঈয়তের আমীর নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালে দ্বিতীয়বারের মতো আমীর হন এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমীর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।






আরও
আরও
.