অনলাইনভিত্তিক এমএলএম ব্যবসা করে বছর না ঘুরতেই ২২ লাখ গ্রাহকের ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এবার আলোচনায় ‘এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস’ নামে কোম্পানীটি। চলতি বছরের শুরুতে আল-আমীন প্রধান নামে সাবেক ডেসটিনি চাকুরে এই যুবক বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অনলাইন ভিত্তিক প্রতারণার সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। তার লক্ষ্যই ছিল বিশ্বের সেরা ধনী হওয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ই-কমার্স ব্যবসার লাইসেন্স নিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অনলাইনে অ্যাপসের মাধ্যমে শুরু করেন অবৈধ এমএলএম ব্যবসা। মাত্র ১০ মাসের ব্যবধানে সেই সিন্ডিকেটটি এ ব্যবসা ছড়িয়ে দেয় বাংলাদেশসহ ৭০টি দেশে। উচ্চ কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে তারা ২২ লাখ ২৪ হাযার ৬৬৮ জন সদস্য তৈরীতে সক্ষম হয় এবং তাদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। অনলাইন অ্যাপভিত্তিক হওয়ায় বাংলাদেশের বাইরেও ১৭টি দেশে থাকা বাংলাদেশী প্রবাসীর পাশাপাশি প্রায় ৫ লাখ বিদেশী সদস্য রয়েছে। এ টাকা বৈধ করার জন্য নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের বিভিন্ন জায়গায় কেনা হয়েছে জমি। ইতিমধ্যে এ চক্রের মূল হোতা আল-আমীনসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। ডিবিসূত্রে জানা গেছে, সে আগে ডেসটিনিতে চাকরী করত এবং সেখান থেকেই প্রতারণার খুঁটিনাটি শিখে নেয়।

এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস ঠিকানার ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে শত শত পোস্টের মাধ্যমে ই-কমার্সের কথা বলে উচ্চমাত্রার কমিশনের লোভ দেখিয়ে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। আগ্রহীরা একটি মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করেন। রেজিস্ট্রেশনের সময় বাধ্যতামূলকভাবে আপলিঙ্ক আইডির রেফারেন্সে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট (বিকাশ, নগদ, রকেট) নম্বরে প্রতি আইডির জন্য ১ হাযার ২০০ টাকা করে দিতে হ’ত। গ্রাহকদের দেখানো হ’ত রেফার, জেনারেশন ও রয়্যাল কমিশনের প্রলোভন। এ ক্ষেত্রেও অবলম্বন করা হ’ত ডেসটিনির পদ্ধতি। রেফার করা ব্যক্তি তার নিচের তিনটি আইডি থেকে ৪০০ টাকা করে কমিশন লাভ করবেন। এরপর ঐ তিনটি আইডি থেকে যখন ৯ আইডি হবে তখন আপলিঙ্কের আইডি ২০ শতাংশ কমিশন পাবে। এরপর ডাউনলিঙ্কের যত আইডি হবে তার আইডি ১০ শতাংশ হারে কমিশন পাবে। এ ধরনের ব্যবসা দেশের আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। চক্রটি এমএলএম ব্যবসা আড়াল করার জন্য নামমাত্র কয়েকটি পণ্য- যেমন অ্যালোভেরা শ্যাম্পু, ফেসওয়াশ, চাল, ডাল, মরিচের গুঁড়া তাদের রেজিস্টার্ড সদস্যদের কাছে বিক্রি করত। এর লভ্যাংশ থেকে প্রতি আইডি হোল্ডারকে কোম্পানীর বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখার বিনিময়ে ১০ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস কোম্পানিতে শুরুর দিকে বিনিয়োগ করে লাভের মুখ দেখেন অনেকে। তাদের আয়ে প্রলুব্ধ হয়ে শত শত মানুষ শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে বিনিয়োগ করতে থাকেন, যা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তারা। তেমনই একজন মিরপুরের বাসিন্দা আবু নাসীম। বন্ধুদের মাধ্যমে প্রলুব্ধ হয়ে পৈতৃক ভিটা বন্ধক রেখে প্রায় ৮৩ হাযার টাকায় মোট ৬৯টি আইডি কেনে। লাভ দূরের কথা, সব টাকা হারিয়ে এখন নিঃস্ব আবু নাসীম। শুধু নাসীম নয়, সর্বস্ব বিক্রি করে এ ব্যবসায় আসা হাযারো ব্যক্তি রাতারাতি নিঃস্ব হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।






আরও
আরও
.