দেশে চলছে চরম অরাজকতা। সর্বত্র আতংক। কারু জান-মাল ও ইযযতের নিরাপত্তা নেই। এক দল অপর দলকে দায়ী করেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। কিন্তু ফলাফল একটাই, মরছে মানুষ, পুড়ছে গাড়ী, চলছে গুম-খুন-অপহরণ। শিল্প কারখানায় দৈনিক ১২ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে সরকারী নির্দেশ জারি হয়েছে। বিদেশী কূটনীতিক নিহত হচ্ছেন। স্বদেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বলতে গেলে শূন্য। চালু কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি উপমহাদেশের সব দেশের চাইতে বেশী, যা এখন ১৪ শতাংশে পেঁŠছে গেছে। অর্থনীতি কার্যতঃ স্থবির। সামনে সচল হবার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু এর মূল কারণ কি?

সমস্যার গভীরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে যে, মানুষ যখনই আল্লাহকে ভুলে যাবে ও আখেরাতে জওয়াবদিহিতার কথা বিস্মৃত হবে, তখনই সে শয়তানের খপ্পরে পড়ে যাবে। আর একবার শয়তানের কব্জায় চলে গেলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব হবে, যদি না আল্লাহর বিশেষ রহমত থাকে। এজন্যই বলা হয়েছে ‘শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (বাক্বারাহ ২/২০৮)। সে মানুষের রগ-রেশায় প্রবেশ করে ধোঁকা দেয়। অথবা মানুষের বেশে এসে ধোঁকা দেয়। শয়তানের লোভনীয় ফাঁদে পড়ে মানুষ বুঝতে পারে না কোন্ পথে তার মুক্তি নিহিত। আর এখানেই তাকে আত্মসমর্পণ করতে হয় একটি সার্বভৌম সত্তার কাছে। যাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। যার বিধান শাশ্বত সত্য ও অপরিবর্তনীয়। মানুষ যখন সেই সত্যকে অাঁকড়ে ধরে, তখন সে একটি মযবুত হাতল করায়ত্ত করে, যা ভাঙবার নয়। সেই হাতল হ’ল ঈমান। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ যার বুনিয়াদ। যখনই মানুষ উক্ত হাতল কঠোরভাবে অাঁকড়ে ধরে, তখনই শয়তান তাকে ছেড়ে যায়। যেমন আযান শুনে শয়তান বায়ু নিঃসরণ করতে করতে পালিয়ে যায় (বুখারী, মুসলিম)। মুমিন যখন সিজদার আয়াত পড়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে, তখন শয়তান কেঁদে উঠে বলে, হায়! বনু আদমকে সিজদার আদেশ দিলে সে সিজদা করল ও জান্নাতী হ’ল। আর আমাকে সিজদার আদেশ দিলে আমি অবাধ্যতা করলাম ও জাহান্নামী হ’লাম (মুসলিম)

ছালাত অবস্থাতে শয়তানের উপস্থিতি বুঝতে পারলে বাম দিকে তিনবার থুক মেরে নাঊযুবিল্লাহ বলে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (মুসলিম)। ব্যবহারিক জীবনেও মানুষ যদি শয়তানকে থুক মেরে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, তাহ’লে সমাজে হিংসা ও অরাজকতা হ্রাস পাবে। যিয়াদ বিন হুদায়েরকে একদিন ওমর ফারূক (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান কোন কোন্ বস্ত্ত ইসলামকে ধ্বংস করে? তিনি বললেন, না। তখন ওমর (রাঃ) বললেন, তিনটি বস্ত্ত ইসলামকে ধ্বংস করে? ১. আলেমের পদস্খলন ২. আল্লাহর কিতাবে মুনাফিকদের বিতন্ডা ৩. পথভ্রষ্ট নেতাদের শাসন (দারেমী)। বর্তমানে আমাদের সমাজে উক্ত তিনটি কারণ প্রকটভাবে বিরাজ করছে। ইহুদী আলেমদের মত মুসলিম আলেমরা ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী ইসলামের ব্যাখ্যা না দিয়ে নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা পেশ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। দুনিয়াপূজারী কপটবিশ্বাসী লোকেরা কুরআনের অপব্যাখ্যায় লিপ্ত হয়েছে। পথভ্রষ্ট শাসকরা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী দেশ শাসন না করে নিজেদের খেয়াল-খুশীমত বিধান রচনা করে সে অনুযায়ী দেশ শাসন করছেন ও জনগণের উপর যুলুম চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ আমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে ক্বিয়ামতের দিন স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হ’তে হবে (মুসলিম)। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের কান, চোখ ও হৃদয় প্রত্যেকে ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে (ইসরা ১৭/৩৬)। ৩য় খলীফা হযরত ওছমান (রাঃ) যখন বিদ্রোহী দল কর্তৃক স্বগৃহে অবরুদ্ধ হন, তখন তাঁর পক্ষে অস্ত্র ধারণের জন্য ছাহাবীগণ বারবার তাঁর অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু অন্যূন চল্লিশ দিন অবরুদ্ধ থাকার পরেও তিনি আল্লাহর কসম দিয়ে তাদেরকে নিষেধ করেছিলেন। যাতে মুসলমানদের মধ্যে ফিৎনা ছড়িয়ে না পড়ে (আল-বিদায়াহ)। শেষ পর্যন্ত তিনি শহীদ হলেন। কিন্তু ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র চালনার অনুমতি দিলেন না। অতএব দেশে শান্তি রক্ষার জন্য শাসকদের দায়িত্ব সবচাইতে বেশী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যখন আল্লাহ কাউকে জনগণের নেতৃত্বে আনেন, অতঃপর যদি সে তার দায়িত্বের প্রতি বিশ্বাসঘাতক হিসাবে মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তার উপর জান্নাতকে হারাম করে দেন (মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী। আর শ্রেষ্ঠ ভুলকারী হ’ল তওবাকারীগণ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)

অতএব আসুন! আমরা ধৈর্য্যশীল হই এবং আমরা যে যে পর্যায়ে আছি, নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করি। আসুন, আমরা স্ব স্ব পাপের জন্য অনুতপ্ত হই ও তওবা করি। অতঃপর নিজেদের জীবন, পরিবার ও সমাজ এবং আমাদের এ প্রিয় দেশটিকে শান্তি, সেŠহার্দ্য ও সমৃদ্ধিময় দেশে পরিণত করি। ঐ শুনুন আল্লাহর ওয়াদা- ‘যদি জনপদের অধিবাসীরা বিশ্বাসী ও আল্লাহভীরু হয়, তাহ’লে অবশ্যই আমরা তাদের উপর আসমান ও যমীনের সমৃদ্ধির দুয়ার সমূহ খুলে দেব... (আ‘রাফ ৭/৯৬)। অতএব হে মানুষ! আল্লাহকে ভয় কর। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ক্ষমা কর ও আমাদের দেশকে শান্তির দেশে পরিণত কর- আমীন! (স.স.)






বিষয়সমূহ: রাজনীতি
মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মানুষকে ভালবাসুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
তাওহীদ দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বন্যায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মৌলিক পরিবর্তন কাম্য - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বাবরী মসজিদের রায় : ভূলুণ্ঠিত ন্যায়বিচার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নির্বাচনী দ্বন্দ্ব নিরসনে আমাদের প্রস্তাব - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভাষার স্বকীয়তা অক্ষুণ্ণ রাখুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আল্লাহর সামনে ঝগড়া - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সংবিধান পর্যালোচনা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ইসলামের বিজয় অপ্রতিরোধ্য - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
রামাযান ও বর্ষবরণ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.