‘হে তরুণ! তোমার দেহের প্রতি ফোঁটা রক্ত আল্লাহর পবিত্র আমানত। এসো তা ব্যয় করি আল্লাহর পথে’। ‘অহি-র আলোয় উদ্ভাসিত হৌক বাংলার প্রতিটি ঘর’। ‘সকল বিধান বাতিল কর, অহি-র বিধান কায়েম কর’। ‘আসুন পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ি!’ এই শ্লোগানগুলি নিয়ে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ তেজোদীপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে ১৯৭৮ সাল থেকে অদ্যাবধি। সেযুগের খালেদ, তারেক, মূসা, মুহাম্মাদ বিন ক্বাসেমের তারুণ্যকে যেমন কোন শক্তিই প্রতিহত করতে পারেনি, এযুগেও তেমনি আহলেহাদীছ তরুণদের এই দীপ্ত পদচারণা বাংলার তরুণ সমাজকে নেতৃত্ব দিক আমরা সেটাই কামনাই করি।

৫ই আগস্ট যে তারুণ্যের মাধ্যমে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটেছে, তাদের সামনে কোন পরকালীন লক্ষ্য ছিল না। আর সেকারণেই গত সাড়ে ৩ মাসে স্থায়ী কল্যাণমূলক কোন দৃঢ় পদক্ষেপ দেখা যায়নি। জনগণ পরিবর্তনের স্বস্তি ভোগ করছে মাত্র। এখনও সংশয় কাটেনি যে, পুনরায় আরেক যুলুমশাহী চেপে বসে কি না!

সবাই সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু এটাও বাস্তব যে, দেশের অধিকাংশ মানুষ কুসংস্কারে নিমজ্জিত। সূদ-ঘুষ, দুর্নীতি ও বেপর্দা গা সওয়া হয়ে গেছে। পূঁজিবাদ যে ইসলামের শত্রু, সেকথা মুসলমান ভুলে গেছে। অথচ সংস্কারের জন্য সংস্কারক ও যোগ্য মানুষগুলিকে সামনে আনতে হবে। বর্তমানে ‘সার্চ কমিটি’র কথা প্রায়ই শোনা যায়। এর দ্বারা নির্দলীয় যোগ্য লোকদের সার্চ করে বের করার চেষ্টা বুঝানো হয়। কিন্তু সার্চকারীর মানসিকতা যদি নির্দলীয় না হয়, তাহ’লে তার সার্চের আলো কেবল তার মত লোকদের উপরেই পড়বে। অন্যদের দিকে নয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মুজিব সৎ ও যোগ্য ১০০ ব্যক্তি খুঁজতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পাননি। অবশেষে সখেদে বলেছিলেন, লোকেরা পায় সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি’। ২০০৭ সালে ফখরুদ্দীন আহমদ অনেক কষ্টে ১৩জনকে খুঁজে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। তিনি ৯০ দিনের নির্ধারিত মেয়াদের বাইরে ৫দিন কম দু’বছর দেশ পরিচালনা করেন। এ দুই বছরের নির্দলীয় শাসনে মানুষ স্বস্তিতে ছিল। কিন্তু রেওয়াজের কাছে তিনি হার মানলেন। নির্বাচন দিলেন। ক্ষমতায় এলেন শেখ হাসিনা। ৬ই জানুয়ারী ২০০৯ থেকে ১৫ বছর ৬ মাস ৩০ দিন পর ৫ই আগস্ট ২০২৪ সোমবার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তিনি বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে পালালেন। বেরিয়ে আসতে থাকে মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতা-উপনেতাদের এমনকি নেতাদের ড্রাইভার ও কাজের লোকদের আকাশছোঁয়া দুর্নীতি ও পাহাড় প্রমাণ সম্পদ অর্জনের ও পাচারের অবিশ্বাস্য ও পিলে চমকানো খবর সমূহ। এখন অপেক্ষায় দিন গুণছে ক্ষুধার্ত পুরানো রাঘব-বোয়ালরা। যাদের আমলে (২০০১-২০০৬) দেশ দুর্নীতিতে পরপর ৫ বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। নির্দলীয় শাসনামলে নয়, বরং বহু দলীয় গণতন্ত্রীদের আমলেই দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব হয়েছে। ২০১৬ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়। যার ১৮ মিলিয়ন মাত্র এযাবৎ ফেরৎ এসেছে।

একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মজলিসে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় এক বেদুঈন এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ক্বিয়ামত কবে হবে? জবাবে তিনি বললেন, যখন আমানত বিনষ্ট হবে তখন তুমি ক্বিয়ামতের অপেক্ষা কর। লোকটি বলল, আমানত কিভাবে নষ্ট হবে? তিনি বললেন, যখন অযোগ্য লোকদের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা হবে, তখন তুমি ক্বিয়ামতের অপেক্ষা কর’ (বুখারী হা/৬৪৯৬; মিশকাত হা/৫৪৩৯)। ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর জলীল সম্ভবত ১৯৭৩ সালে খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে উপচেপড়া জনসভায় বলেছিলেন, ব্যাটারী না থাকলে যেমন রেডিও চলেনা, চরিত্র না থাকলে তেমনি দেশ চলেনা’। তাই দেশ চালাতে গেলে সর্বাগ্রে চরিত্রবান ও দেশপ্রেমিক যোগ্য লোকদের খুঁজে বের করে তাদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে। যারা কখনই দায়িত্ব চেয়ে নেওয়ার মত নিম্ন চরিত্রের হবেন না। দলীয় গণতন্ত্রে যার কোন অবকাশ নেই। সেখানে ক্ষমতা চেয়ে নিতে হয়। সেখানে কেবল দলীয় লোকদেরই মূল্যায়ন হয়, অন্যদের নয়। নবী-রাসূলগণ নিঃসন্দেহে ঈমানদার গণের নেতা ছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে ছিল গভীর আল্লাহভীরুতা ও নির্দলীয় মানসিকতা। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী নন বা ক্ষতিকর নন, এমন ব্যক্তিদের তারা মূল্যায়ন করেছেন। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) একজন ইহূদী বালককে তার ব্যক্তিগত কাজে নিযুক্ত করেছেন। মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের রাতে আব্দুল্লাহ বিন উরাইক্বিত নামের একজন কাফেরকে তার উষ্ট্র চালক নিয়োগ দিয়েছেন। বদরের যুদ্ধে বিরোধী কুরায়েশ সৈন্যদের দলভুক্ত চাচা আববাস সহ অনেককে ক্ষতি না করার জন্য তিনি নিজ দলের লোকদের নির্দেশ দিয়েছেন। এতে বুঝা যায় যে, দলীয়তার বাইরে উন্নত চরিত্র ও যোগ্যতাকে স্থান দেওয়া আবশ্যক। নইলে দেশ যে অন্ধকারে ছিল সেই অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।

গত ২২শে অক্টোবর থেকে একজন সমন্বয়ককে আহবায়ক করে ৪ সদস্যের একটি ছোট্ট কমিটি দিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অভ্যুত্থানের ১০০ দিন পেরিয়ে গেছে। এখন তারা সারা দেশে তাদের সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তুলতে চাচ্ছে। আমরা মনে করি, আল্লাহ প্রদত্ত অভ্রান্ত ও অপরিবর্তনীয় ইসলামী বিধানের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাদের কাজ করা উচিত। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিমের দেশে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’, ‘ছূফীবাদ’ ও ‘জাতীয়তাবাদী’ শাসনের কোন যুক্তি নেই। এখানে স্রেফ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক শাসন চলতে পারে। এর বাইরে যা কিছু করা হবে, সবকিছুই হবে যবরদস্তি এবং তা অবশেষে ব্যর্থ হবেই।

তারুণ্যের উদ্দীপনা নিয়ে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক সংস্কারে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ডাইনে-বামে তাকানো চলবে না। লক্ষ্য হবে কেবল জান্নাত। ইনশাআল্লাহ বিজয় দ্রুত পদচুম্বন করবে। আযারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ১১-২২ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠানরত কপ-২৯ বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে প্রদত্ত ১৩ই নভেম্বরের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনুস শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বণ নিঃসরণ এই ৩ শূন্যের ধারনা পেশ করেছেন। আমরা ঐ সঙ্গে যোগ করতে চাই ‘শূন্য দুর্নীতি’। আল্লাহভীতিপূর্ণ সমাজেই কেবল সেটি সম্ভব। যেমন সম্ভব হয়েছিল সপ্তম শতাব্দীতে মক্কা-মদীনায় ইসলামের বরকতে। যখন হযরত ওমরের খেলাফতকালে যাকাত নেওয়ার কোন হকদার খুঁজে পাওয়া যেত না (ইরওয়া হা/৮৫৬-এর আলোচনা)। আমরা আশা করি পুনরায় সেদিন ফিরে আসবে। গড়ে উঠবে এক নতুন বাংলাদেশ। তারুণ্যদীপ্ত যুবকদের মধ্যেই কেবল আমরা সেদিনের স্বপ্ন দেখি। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন।-আমীন! (স.স.)






বিষয়সমূহ: যুবসমাজ
কল্যাণমুখী প্রশাসন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
তবে কি বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
চেতনার সংকট - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
জাতীয় সংসদ নির্বাচন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অহি-র আলোয় উদ্ভাসিত হৌক তারুণ্য - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ট্রাম্পের বিজয় ও বিশ্বের কম্পন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নির্বাচনী যুদ্ধ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মানব জাতির ভবিষ্যৎ কি গণতন্ত্রে? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অহি-র বিধান বনাম মানব রচিত বিধান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
গাযায় গণহত্যা ইহূদীবাদীদের পতনঘণ্টা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শিশু আয়লানের আহবান : বিশ্বনেতারা সাবধান! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
স্কুল-মাদ্রাসা থেকে প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা কোর্স বাতিল করুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.