আত-তাহরীকের প্রতি এক অদম্য ভালোবাসা

জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা হৃদয়ে এমন দাগ কাটে, যা চিরকাল থেকে যায় স্মৃতির পাতায়। আমার জীবনে আত-তাহরীক এক স্মরণীয় অধ্যায়, যার সঙ্গে আমার আবেগ-অনুভূতি ও আত্মিক টান আজও গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই আবুল কালাম আযাদের হাত ধরেই আমার পড়ালেখার সূচনা। শরতের এক পড়ন্ত বিকেলে আমাদের গ্রামের জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে আমাকে এনে দিলেন আত-তাহরীক। আমার হাতে একটি ভিন্নধর্মী পত্রিকা। বয়স ও বুদ্ধির সীমাবদ্ধতায় তখন পত্রিকার অনেক কিছুই বুঝিনি। কিন্তু এর শব্দ ও শিরোনামগুলো আমার মনে এক নতুন কৌতুহল জাগিয়ে তোলে। নতুন শব্দ জানার তীব্র আগ্রহ জন্ম নেয়। সেখান থেকেই আমার জ্ঞানের যাত্রা শুরু।

পত্রিকাটি প্রথম পাওয়া :

২০০৮ সালের মে মাস থেকে আমরা পত্রিকার নিয়মিত গ্রাহক হয়ে যাই। এরপর ষষ্ঠ শ্রেণীতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর চুয়ামালিকপাড়া রেজওয়ানুল উলূম আলিম মাদ্রাসায় ভর্তি হই আমার পিতা-মাতার অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনায়। মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর দেখতাম আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের অনেকেই এই পত্রিকাটি পাঠ করতেন। সেখান থেকেও আমি অনুপ্রাণিত হই। মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী বাজারের লাইব্রেরীতে প্রতি মাসের ১০ তারিখে গিয়ে আত-তাহরীক-এর খোঁজ নেওয়া আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। পত্রিকাটি আমার ভাল লাগায় পরিণত হয়। এটাকে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের চিন্তা করি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের তাবলীগী ইজতেমায় পত্রিকাটির প্রথম প্রকাশিত (সেপ্টেম্বর ’৯৭) সংখ্যাটি সংগ্রহ করতে সক্ষম হই। এরপর এলাকার অন্যান্য পাঠকদের কাছেও খোঁজ নিই। কিন্তু আর কোন সংখ্যা পাওয়া যায়নি। কিছুটা হতাশ হ’লেও আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই।

২০২২ সালের ২৫শে নভেম্বর শুক্রবার তাওহীদের ডাক পত্রিকার জন্য যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাবেক সভাপতি মাওলানা গোলাম যিল কিবরিয়ার সাক্ষাৎকার নিতে যাই। সাক্ষাৎকার শেষে আমি আত-তাহরীক-এর সকল কপি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কথা জানালে তিনি আমাকে তাঁর রিডিং রুমে নিয়ে গিয়ে একটি আলমারী খুলে বললেন, ‘তোমার প্রয়োজনীয় সংখ্যাগুলো খুঁজে বের করে নাও’। সেখান থেকে আমি কিছু সংখ্যা সংগ্রহ করি।

সবশেষে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে কুষ্টিয়া-পশ্চিম সাংগঠনিক যেলা ‘আন্দোলনে’র প্রধান উপদেষ্টা এবং মাসিক আত-তাহরীকের এজেন্ট মাস্টার আমীরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আন্তরিকভাবে বলেন, ‘তুমি একটি তালিকা দাও, আমি তোমার প্রয়োজনীয় সংখ্যাগুলো বের করে রাখব’। তাঁর সহায়তায় আমার বহু বছরের স্বপ্ন পূরণ হয়। আত-তাহরীক-এর প্রথম সংখ্যা থেকে বর্তমান পর্যন্ত সবকিছুই আমার সংগ্রহে আসে। ফালিল্লাহিল হামদ

আত-তাহরীক সংগ্রহে যারা আমাকে সহায়তা করেছেন, তাদের জন্য আমি আল্লাহর নিকট উত্তম প্রতিদান কামনা করছি। বর্তমানে আমি পত্রিকাটির সম্পাদকীয়, দরসে কুরআন, দরসে হাদীছ, বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ সমূহ ও প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে নিয়মিত উপকৃত হচ্ছি। এসব লেখা আমার জ্ঞান সমৃদ্ধ করছে ও দাওয়াতী কাজ সহজ করে দিচ্ছে । এছাড়াও আমি চাই আত-তাহরীক পত্রিকাটি মাসিক না হয়ে পাক্ষিক হিসাবে প্রকাশিত হোক, যেন পাঠকরা আরো বেশী উপকৃত হ’তে পারেন।

আমি পত্রিকাটির প্রথম বর্ষ থেকে ২৮তম বর্ষ পর্যন্ত সকল সংখ্যাই বর্ষ ভিত্তিক বাঁধাই করে সযত্নে সংরক্ষণ করেছি। পাশাপাশি প্রতিটি বছরের বর্ষসূচী আলাদাভাবে ফটোকপি করে রেখেছি, যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী বিষয়বস্ত্ত সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।

পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব স্যারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য আমি আল্লাহর দরবারে দো‘আ করি, আল্লাহ যেন তাঁদের এই খেদমত কবুল করেন এবং উত্তম প্রতিদান দান করেন। আত-তাহরীক-এর বহুল প্রচার এবং এর মাধ্যমে সমাজে শিরক ও বিদ‘আত দূর হয়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক একটি সুষ্ঠু ও ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক এই প্রত্যাশা করি।

পাঠকদের প্রতি আহবান :

পরিশেষে পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত আহবান ও অনুরোধ রেখে আমার এই নাতিদীর্ঘ রচনার ইতি টানছি।

১. নিয়মিত আত-তাহরীক পাঠ করুন। ২. পরিবার ও প্রিয়জনদের মধ্যে প্রচার করুন। ৩. গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো সংরক্ষণ করুন। ৪. আলোচনা ও দাওয়াতের উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করুন। ৫. লেখক ও সম্পাদকদের উৎসাহ দিন। ৬. নতুন পাঠক তৈরি করুন এবং এর প্রচার বৃদ্ধিতে সার্বিক সহযোগিতা করুন। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন!

মামূন বিন হাসমত

লাউবাড়ীয়া, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া। 






আরও
আরও
.