অভ্যাসগত বিশ্বাস থেকে চিন্তাশীল বিশ্বাসের পথে যাত্রা

মানুষের সাথে পশুর একটি বড় ব্যবধান হচ্ছে পশুর ভবিষ্যৎ বলে কোন বিষয় নেই। একটি কুকুরকে কিছু গোশত, হাড় দেখিয়ে আগামীকাল বা আগামী সপ্তাহে খেলে বেশী পাবে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া যাবে না। তার কাছে আগামীকাল বলে কোন বিষয় নেই। তারা বর্তমানে বসবাস করে। অথচ মানুষ অনেক সময় ২০-৩০, এমনকি ৫০ বছরের পরিকল্পনাও করে থাকে। এই চিন্তা-চেতনার পার্থক্য যেমন মানুষ এবং পশুতে (দু’টিই সৃষ্টিজীব) রয়েছে, সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যে তা সীমাহীন পর্যায়ে বিদ্যমান। মানুষ হিসাবে স্রষ্টার ধরন, ধ্যান, কার্যাবলী, উদ্দেশ্য ইত্যাদি অনেক কিছুই আমাদের চিন্তার ধারণাশক্তির বাহিরে। ইসলামে এটাকে গায়েব বলা হয়।

পারিবারিকভাবে ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে উঠা অধিকাংশ শিশুই কিছুটা পারিবারিক প্রথা হিসাবে কিছুটা সামাজিক পরিবেশের কারণে ধর্ম পালন শুরু করে থাকে। পরবর্তীতে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হয় জাগতিক উন্নতি, নিরাপত্তার লক্ষ্যে ধর্ম পালন, আমিও তার ব্যতিক্রম নই। খুবই ক্ষুদ্র চিন্তাশীলতায় একটা বয়সে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, আসল ব্যাপারটা কি, কেন আমরা ধর্মীয় বিধি-বিধান অনুসরণ করছি, আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসের ভিত্তিই বা কি? বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন প্রচুর সময় দিয়ে ধর্মীয় কাজ করছে, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পেছনেও একটি যুক্তি থাকে। সেক্ষেত্রে আমাদের যুক্তিটা কি? কেউ কেউ বলছেন, এসবই আন্দায-অনুমান, অন্ধবিশ্বাস, যুক্তিহীন, ভিত্তিহীন কথাবার্তা। আমিও ভাবতে লাগলাম আল্লাহ, পরকাল, জান্নাত, জাহান্নাম, বিচার দিবস কেউ তো দেখে আসেনি বা কোনভাবে এর প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিক সেই সময়ই আমার হস্তগত হয় সঊদী আরবের ‘আরব নিউজ’ নামক এক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধ। ইংরেজীতে লিখা। ঐ নিবন্ধে গায়েব শব্দের ব্যাখ্যায় বলা হয়-

'To believe in Allah (limitless He is in His glory) is to believe in what lies beyond the reach of human perception. It is not possible for human beings to comprehend the nature of Allah. When they believe in Him, they recognize the results of His actions but they cannot conceive His nature or how He works. Similarly, the life to come is something that lies beyond the reach of human perception. Everything that relates to the Day of Judgment, the reckoning, the reward and the punishment all belong to the world beyond. We believe in that because Allah through His Prophets has told us about them and all we have seen teaches us to trust ALLAH for all we have not seen'.

অর্থাৎ ‘আল্লাহকে (যিনি তাঁর গৌরবে সীমাহীন) বিশ্বাস করার অর্থ হ’ল মানুষের ধারণা ও চিন্তার নাগালের বাইরে যা রয়েছে তাতে বিশ্বাস করা। মানুষের পক্ষে আল্লাহর প্রকৃতি বোঝা সম্ভব নয়। যখন তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তখন তারা আল্লাহর কাজের ফলাফলগুলি দেখতে পায়, বুঝতে পারে, স্বীকৃতি দেয়। তবে তারা আল্লাহর প্রকৃতি বা তিনি কিভাবে কাজ করেন তা কল্পনা করতে পারে না। একইভাবে, পরবর্তী জীবন এমন একটি বিষয় যা মানুষের উপলব্ধির নাগালের বাইরে। ক্বিয়ামত দিবসের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত কিছুই যেমন হিসাব-নিকাশ, পুরষ্কার এবং শাস্তি সবকিছুই মানব চিন্তাশক্তির বাইরের বিষয়। আমরা এতে বিশ্বাস করি যেহেতু আল্লাহ তাঁর নবীগণের মাধ্যমে এসকল বিষয়ে আমাদেরকে বলেছেন এবং আমরা যা দেখছি তা সবই আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, সে বিষয়গুলোও বিশ্বাস করতে যা কিছু আমরা দেখছি না’।

পবিত্র কুরআনের শুরুতেই মহান আল্লাহ বলেন, ‘এই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই। যা আল্লাহভীরুদের জন্য পথ প্রদর্শক। যারা গায়েবে বিশ্বাস করে ও ছালাত কায়েম করে এবং আমরা তাদেরকে যে রূযী দান করেছি, তা থেকে ব্যয় করে’ (বাক্বারাহ ২/২-৩)

কুরআনে উল্লিখিত যে কোন বিধি নিষেধকে ফরয বলা হয় এবং তা অমান্য করাকে কবীরা বা বড় গুনাহ বলা হয়। গায়েবে বিশ্বাস করা পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত আল্লাহর সরাসরি নির্দেশনা। ‘গায়েব’ শব্দটি পবিত্র কুরআনে ৫৭ বার এসেছে। যদিও বিভিন্ন প্রকাশনায় এর বাংলা অনুবাদ  করা হয়েছে ‘অদৃশ্য’ বলে। তবে উপরে আরবদের বর্ণিত অর্থ অনুযায়ী অদৃশ্যই গায়েবের একমাত্র অর্থ নয়। গায়েব বিষয়ে অদৃশ্য বিষয়টি থাকতেও পারে বা নাও থাকতে পারে। গায়েবের সঠিক এবং সর্বাঙ্গীণ অর্থ আরব নিউজে বর্ণিত ব্যাখ্যাই সঠিক। হাদীছে হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমাকে এমন ভাষা দিয়ে পাঠানো হয়েছে যার একটি ছোট অংশই ব্যাপক অর্থ, মর্মার্থ বহন করে’ (মুসলিম হা/৫২৩)। গায়েবের একটি উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, একটি কারখানার শ্রমিকের পক্ষে সম্ভব নয় বা প্রয়োজন নেই যে, সে কারখানার পরিচালকের সকল চিন্তা, চেতনা, উদ্দেশ্য, সিদ্ধান্ত, নির্দেশনার যৌক্তিকতা বুঝতে সক্ষম হবে। পরিচালকের কার্যক্রমের অনেক বিষয়েই তার চিন্তার ধারণ শক্তির বাইরে। তাই বলে শ্রমিক কিন্তু পরিচালকের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, আদেশ নিষেধকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ করছে না। কেননা সে এটা বুঝে যে এগুলো তার জানার প্রয়োজন নেই বা তার দায়িত্বও নয়।

গায়েবের একটা দৃশ্যমান উদাহরণ হ’তে পারে আমরা চোখে দেখলেও সূর্য, আকাশ, বাতাস এগুলো গায়েব। এগুলো কিভাবে কাজ করছে, কি দিয়ে তৈরী, এগুলোর উৎস কি, কত বছর যাবৎ চলছে বা চলবে এসকল বিষয় জানলে আমরা অনুরূপ আরো কিছু তৈরী করতে পারতাম। এগুলো দেখা গেলেও এগুলোর পুরো জ্ঞান কখনই আমাদের অর্জন হয়নি বা হবে না। এজন্য এগুলো দৃশ্যমান হ’লেও গায়েব। আমার পকেটে একটা ১০০ টাকার নোট আছে আমি তার ধরন, আকৃতি, ব্যবহার, উপকার সবই বলতে পারব, হ’তে পারে তা কোথায় কি দিয়ে তৈরী তাও আমার জানা। এমনকি অনেকে নকল টাকা তৈরী করে দিব্যি লেনদেন করছেন। ফলে অদৃশ্য হ’লেও এটা গায়েব নয়।

যাই হোক গায়েব শব্দের সঠিক অর্থ বুঝার পর ধর্মের বিষয়ে একটি বিশাল ধুম্রজাল আমার চিন্তার জগৎ থেকে সরে যায়। আমি বুঝতে পারি আমাদের সীমাবদ্ধ চিন্তা, বোধশক্তি দিয়ে সীমাহীন মহান আল্লাহকে বা তাঁর কার্য, আদেশ-নিষেধ অনেক কিছুই আমাদের বোধগম্য হওয়া অবাস্তব। ঘটনাক্রমে এর পর পরই আরও দু’টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধারণা আমার সামনে প্রকাশ পায়। এই তিনটি ধারণার সমন্বয়ে পুরো ধর্মীয় ব্যাপারগুলো আমার নিকট দিবালোকের মতো পরিস্কার হয়ে যায়।

দ্বিতীয় ঘটনাটি হচ্ছে একটি কারখানার ছাদের উপর প্রায় ২০ ফুট দীর্ঘ একটি নিয়ন সাইনে লেখা দেখতে পাই 'Perfection is not an accident'। এখানে পারফেকশন বলতে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মানের কথা বুঝাচ্ছেন হয়ত। যাই হোক আমি এর থেকে বুঝতে পারি ত্রুটিহীন কোন কিছুই দুর্ঘটনাক্রমে হয় না। কেউ কেউ বলে থাকেন, মহাবিশ্ব, পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, মানবজাতি সব কিছুই প্রাকৃতিকভাবে (Naturally) বা দুর্ঘটনাক্রমে বা প্রাকৃতিক বিবর্তনের ধারায় ঘটে গেছে। এক্ষেত্রে একটা বিষয় বুঝতে হবে, প্রাকৃতিক বিবর্তন তাহ’লে হাযার হাযার বছর ধরে থেমে আছে কেন? নতুন নতুন সৃষ্টি, নতুন নতুন পৃথিবী, মানুষ অন্য জাতি প্রজাতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে না কেন?

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘যিনি সাত আসমান সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে। দয়াময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোন ত্রুটি দেখতে পাবে না। পুনরায় দৃষ্টি ফিরাও! তুমি কোন ফাটল দেখতে পাওকি? অতঃপর তুমি বারবার দৃষ্টি ফিরাও! যা ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে’ (মূলক ৬৭/৩-৪)

তিনি আরো  বলেন, ‘ঐ পানি দ্বারা তিনি তোমাদের জন্য উৎপাদন করেন ফসল, যয়তুন, খেজুর, আঙ্গুর ও সর্ববিধ ফল। এর মধ্যে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি, দিন, সূর্য ও চন্দ্রকে। আর নক্ষত্ররাজিও অনুগত হয়েছে তাঁরই হুকুমে। নিশ্চয়ই এর মধ্যে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে’ (নাহল ১৬/১১-১২)

চিন্তাশীলদের জন্য এগুলো নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন, সকল মানুষের জন্য এগুলো নিদর্শন/প্রমাণ কিন্তু বলেননি। বর্তমান যুগে অধিকাংশ মানুষই চিন্তাশীল হ’তে পারছেন না বা ইচ্ছাও নেই। ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধা, ভোগ-বিলাস অর্জন নিয়ে এতই ব্যস্ত যে ধর্মীয় চিন্তাশীলতার জগতটা পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে গেছে। যেটুকুই ধর্ম পালন করছেন এর অধিকাংশই গতানুগতিক, অভ্যাস, পারিবারিক, সামাজিক বা পার্থিব অর্জন বা নিরাপদ জীবনের সহায়ক হিসাবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি সেখানে মূখ্য বিষয় নয়।

এর থেকে বুঝা যায়, মহাবিশ্ব, পৃথিবী, পৃথিবীর সকল সৃষ্টি, মানবজাতি নিজ থেকেই সৃষ্টি হয়ে যায়নি। কাউকে বা কাউকে পুরো বিষয়টি পরিকল্পনা করতে হয়েছে। তৈরির আদেশ দিতে হয়েছে, তৈরির ধরন নির্ধারণ করতে হয়েছে। মরুভূমিতে কেউ একটা গাড়ী দেখতে পেয়ে যদি চিন্তা করে যে এটা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়ে সেখানে অবস্থান করছে। তা হবে মস্তবড় ভুল।

তৃতীয় ঘটনাটি হচ্ছে একটি রেডিওর ধর্ম সংক্রান্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে একজন অংশগ্রহণকারীকে প্রশ্ন করা হয়, পুনরুত্থান, বিচার দিবস, জান্নাত, জাহান্নাম বিষয়গুলো কি অলৌকিক, অস্বাভাবিক মনে হয় না? তার উত্তরে তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের বর্তমান জীবনটাই তো পুরোপুরি অলৌকিক, বিস্ময়কর ঘটনায় ভরপুর। আমাদের পৃথিবী, পৃথিবীর সকল জীব, মানুষ, মানুষের শারীরিক, মানসিক ক্ষমতা, সমুদ্র, সূর্য, চন্দ্র, ভূমন্ডল এই সকল বিষয়গুলিও অলৌকিক এবং অস্বাভাবিক বিষয়। জন্মের পর থেকেই এবং প্রাত্যহিকভাবে জড়িত হওয়ায় আমরা এই সকল অলৌকিক এবং অস্বাভাবিক বিষয়ের সঙ্গে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। এগুলোকে স্বাভাবিক, গতানুগতিক, প্রাকৃতিক বলে ধরে নিয়েছি।

বিষয়টির আরো উদাহরণ হ’তে পারে, আমরা যখন বনে থাকি, তখন আমরা গাছ দেখি, আমরা কিন্তু বনকে দেখি না। বা আমরা যখন নদীর পানির নিচে থাকি আমরা পানি দেখি, বিশাল নদীটিকে দেখি না। একইভাবে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে প্রতিনিয়ত থেকে আমরা সূর্যের আলো, গাছগাছালি, আকাশ, পানি আমাদের চোখ দিয়ে এগুলো দেখি, উপভোগ করি। কিন্তু এগুলোর অলৌকিকতা দেখি না। আমাদের শরীর, চোখ, আঙ্গুল, প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেভাবে কাজ করে এ সবই অলৌকিক। এগুলো স্বাভাবিক হ’লে আমরা এগুলো তৈরির কারখানা করতে পারতাম। যেমন আমরা টাকা তৈরির কারখানা তৈরি করতে সক্ষম। প্রকৃতপক্ষে ধর্মে বিশ্বাসীগণ অন্ধবিশ্বাসী নয়; বরং অবিশ্বাসীরা অন্ধ এবং অবিশ্বাসী, তারা আল্লাহর বিশাল বিশাল সৃষ্টি দেখেও অন্ধ হয়ে আছে। চিন্তা করে না এবং বিশ্বাসও করে না।

অনেকেই বিষয়টির ভুল ব্যাখ্যা করে থাকেন এবং বলেন, ঈমানের (বিশ্বাসের) ব্যাপারে প্রমাণ দেখতে চাওয়াটা বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রমাণ নির্ভর বিশ্বাস হ’লে সেটা আর বিশ্বাস থাকে না। এভাবে তারা অন্ধ বিশ্বাসকে উসকে দিচ্ছেন। আল্লাহ নিজেই পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন সূরায় অসংখ্যবার তাঁর নিদর্শনের প্রমাণ দিচ্ছেন। আমরা যে বিশাল, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নিদর্শন, অলৌকিকতার মধ্যে ২৪ ঘণ্টা বসবাস করছি, সেটাকে বিবেচনায় না নেয়া আল্লাহর নির্দেশনা এবং নিদর্শনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা। জাগতিক যে কোন লেনদেনে যেমন পাওনা টাকার স্বপক্ষে সুষ্ঠু চুক্তি বা বিল প্রমাণ হিসাবে দেখাতে হয়, সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি বান্দাদের বুঝার সুবিধার্থে নিজ থেকে তাঁর নির্দশনের উল্লেখ করেছেন বহুবার। পবিত্র কুরআনের সত্যতাও আল্লাহ এবং পরকালীন জীবন বিশ্বাসের একটি শক্তিশালী ভিত্তি। ১৪শত বছরেও পবিত্র কুরআন অবিকৃত এবং প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের আবিষ্কার পবিত্র কুরআনের তথ্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। সূরা নামলে উল্লেখ করা হয়েছে, পিঁপড়াদের নেতৃত্ব দানকারী যে কি-না সমস্ত পিঁপড়াকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, সেটা ছিল একজন নারী পিঁপড়া, (আরবীতে বিভিন্ন লিঙ্গের জন্য বিভিন্ন ক্রিয়া ব্যবহার করা হয়)। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে পিঁপড়া এবং মৌমাছিদের মধ্যে নেতৃত্ব দেয় নারী।

অনেকেই পয়গম্বরদের সততাকে বিশ্বাসের ভিত্তি বলে উল্লেখ করেন। পরোক্ষ হ’লেও এটা শক্তিশালী প্রমাণ এবং ফেরেশতা, জ্বিন ইত্যাদি অনেক অদেখা বিষয়ে এটা অকাট্য দলীল। তবে সেক্ষেত্রে অন্যান্য ধর্মের লোকজন বলবেন, তাদের পয়গম্বরও সত্যবাদী ছিলেন। সুতরাং তাদের ধর্মই সত্য।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের চার পার্শ্বের সৃষ্টির নিদর্শন দেখে চিন্তা করে, উপলব্ধি করে আল্লাহর উপর বিশ্বাস, তাঁর প্রেরিত নবী-রাসূলগণ এবং ধর্মগ্রন্থ বিশ্বাসের ভিত্তি অনেক শক্তিশালী, টেকসই ও সার্বক্ষণিক হয়ে থাকে। নতুবা রোগ দেখে ভয়ের ভিত্তিতে আল্লাহকে বিশ্বাস, রোগের বিপক্ষে বিজ্ঞানের ব্যর্থতা দেখে বিশ্বাস বা মত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে এসে আনন্দের বিশ্বাস বা কোন ধর্মীয় গুরু বা দলের সংস্পর্শে বা জ্বালাময়ী বক্তৃতার ভিত্তিতে বিশ্বাস টেকসই নাও হ’তে পারে। আল্লাহ, নবী-রাসূল, ধর্মগ্রন্থ, পরকাল, বিশ্বাস শক্তিশালী হ’লে জীবনের দিক নির্দেশনা বেছে নিতে খুবই সহজ হয়। জীবন অনেক সুবিধাজনক হয়।

গায়েবের সঠিক ধারণা আমাদেরকে অনেক জটিল প্রশ্নের সহজ উত্তর দিয়ে থাকে। আল্লাহর আগে কি ছিল বা আল্লাহর শুরু কোথা থেকে ইত্যাদি। আল্লাহর পূর্বে বা শেষ বলে কিছু নেই। আমাদের মানুষের শুরু শেষ আছে। কেননা আমার জ্ঞান সীমাবদ্ধ, আল্লাহ অসীম, সীমাহীন। আমাদের শরীর, সময়, জায়গা, জীবন, চিন্তা, দৃষ্টি সবকিছুই সীমাবদ্ধ। এ সকল সীমাবদ্ধতা নিয়ে অসীমকে বুঝা সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিককালে আবিষ্কার করেছেন যে মহাবিশ্ব সর্বদা কোন সীমানা ছাড়াই বিস্তৃত হচ্ছে এবং এর কোন শেষ নেই।

এ ধরনের আরো অনেক জটিল ও কঠিন প্রশ্নের সহজ উত্তর ইসলামে রয়েছে। এমনই একটি প্রশ্ন হচ্ছে মহান আল্লাহ কর্তৃক পৃথিবী, মানবজাতি, মহাকাশ, পরকাল এত আয়োজনের উদ্দেশ্য কি? এর একটা উদ্দেশ্য যা কুরআনে আছে, মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। তবে হাদীছে কুদসীতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য এসেছে তা হচ্ছে, আল্লাহ, আল্লাহর গুণাবলী, রাজত্ব, সৃষ্টি, ক্ষমতা, দয়া-মায়া, ক্ষমাশীলতা ইত্যাদি আরো অন্যান্য গুণাগুণ তার সৃষ্টির সঙ্গে শেয়ার করতে চেয়েছেন। মানুষ হিসাবে আমরাও ভাল কিছু শেয়ার করে থাকি। আর সেই শেয়ার করার জন্যই পৃথিবী এবং মানবকুল সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর গুণাবলী যেমন সততা, শৃঙ্খলা, ন্যায়বান, দয়া-দক্ষিণা, অহিংসা, লোভহীন গুণাবলী মানুষের মধ্যে দেখতে চান। আল্লাহ শয়তানের গুণাবলী যেমন হিংসা, অহংকার, অশ্লীলতা, মিথ্যা, ধোঁকা, কৃপণতা, অন্যায়-অবিচার, অত্যাচার মানুষের মধ্যে দেখতে চান না।

দুঃখজনক হচ্ছে যেই ইসলাম, পবিত্র কুরআন, নবী মুহাম্মদ (ছাঃ)-এর দ্বারা এত সকল যুক্তিনির্ভর সত্য, তথ্য, ভাল গুণাবলী, জটিল প্রশ্নের উত্তর আমরা পেয়েছি, সেই নবীকে বুঝে না বুঝে অপমানিত করা হচ্ছে। অভ্যাসগত ঈমানের কারণে অনেক মুছল্লী ফাসেক, মুনাফিক, যালিম ও কাফেরের পক্ষ নিচ্ছেন। আল্লাহ আমাদের বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝার এবং সেই অনুযায়ী কার্যে প্রয়োগ করার সৌভাগ্য নছীব করুন- আমীন!







কুরআন ও হাদীছের আলোকে ‘সোনামণি’র ৫টি নীতিবাক্য - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
খারেজীদের আক্বীদা ও ইতিহাস - মীযানুর রহমান মাদানী
অসুস্থ ব্যক্তির করণীয় ও বর্জনীয় - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
যাকাত ও ছাদাক্বা - আত-তাহরীক ডেস্ক
পথশিশুদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব - মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ
ইসলামে ভ্রাতৃত্ব (৫ম কিস্তি) - ড. এ এস এম আযীযুল্লাহ
আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কতিপয় ভ্রান্ত আক্বীদা (শেষ কিস্তি) - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
মুসলিম সমাজে মসজিদের গুরুত্ব (৬ষ্ঠ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
শরী‘আতের আলোকে জামা‘আতবদ্ধ প্রচেষ্টার মূলনীতি (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত - মুযাফফর বিন মুহসিন
মুহাসাবা (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
পেরেনিয়ালিজম এবং ইসলাম - প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া
আরও
আরও
.