পূর্ববর্তী পৃষ্ঠাসমূহে (প্রবন্ধে) কুরআন মাজীদের অনুবাদ ও তাফসীরে ভারতীয় উপমহাদেশের আহলেহাদীছ আলেমগণের অগ্রণী ভূমিকার কথা সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন হাদীছে তাঁদের অগ্রণী ভূমিকার কথা আলোচনা করছি। তবে তার পূর্বে কিছু যরূরী কথা লক্ষণীয়।
উপমহাদেশের অগণিত আলেম সবিশেষ গুরুত্বের সাথে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছের খিদমত করেছেন এবং করছেন। কেউ দরস-তাদরীসের (পাঠদান) মাধ্যমে এই দায়িত্ব পালনের দৃঢ় সংকল্প করেছেন। কেউ বিভিন্ন হাদীছ গ্রন্থের ব্যাখ্যা ও টীকা-টিপ্পনী লিপিবদ্ধ করার প্রতি মনোনিবেশ করেছেন। কেউ কোন গ্রন্থের উর্দূ বা অন্য কোন ভাষায় অনুবাদ করা আবশ্যক মনে করেছেন। কেউ হাদীছের তাখরীজকে গবেষণার বিষয় নির্ধারণ করেছেন এবং কেউ হাদীছের প্রকার সমূহ ব্যাখ্যা করেছেন। হাদীছের খিদমতের এ পদ্ধতি সমূহ অত্যন্ত গুরুত্ববহ। বিশেষত আহলেহাদীছ আলেমগণ এই মর্যাদাপূর্ণ কাজের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং তাদের প্রচেষ্টার বদৌলতে হাদীছের জ্ঞান সমূহের প্রচার-প্রসারের পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত হয়। অতঃপর পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে উপনীত হয় যে, এ ব্যাপারে তাদের দৃঢ় সংকল্প ও সাহসিকতার কারণে এটি একটি বিশাল বড় আন্দোলনের রূপ ধারণ করে। শায়খ মুহাম্মাদ মুনীর দামেশকী যাকে ‘একটি বড় পুনর্জাগরণ’ (نهضة عظيمة) বলে বর্ণনা করছেন। আর এর বর্ণনা দিতে গিয়ে হিজরী চতুর্দশ শতকের মিসরের খ্যাতিমান গ্রন্থকার ও মুহাক্কিক আল্লামা রশীদ রিযা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলেছেন-
لولا عناية إخواننا علماء الهند فى هذا العصر لقضى عليها بالزوال من أمصار الشرق، فقد ضعف فى مصر والشام والعراق والحجاز منذ القرن العاشر للهجرة حتى بلغت منتهى الضعف فى أوائل هذا القرن الرابع عشر.
‘যদি এই যুগে আমাদের ভারতীয় আহলেহাদীছ
ভাইগণ হাদীছের ব্যাপারে গুরুত্ব না দিতেন, তাহলে প্রাচ্যের দেশগুলো থেকে তা
বিলুপ্ত হয়ে যেত। কারণ হিজরী দশম শতক থেকেই মিসর, সিরিয়া, ইরাক ও হিজাযে
উহার চর্চা স্তিমিত হয়ে পড়েছিল এবং চতুর্দশ শতকের প্রথমার্ধে তা বিলুপ্তির
দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল’।[1]
সত্যের স্বীকৃতি :
উপমহাদেশের
আলেমগণ হাদীছের প্রচার ও প্রসারের জন্য যে সীমাহীন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন,
আল্লামা রশীদ রিযা ছাড়াও আরব বিশ্বের আরো অনেক মুহাক্কিক আলেম তার বর্ণনা
দিয়েছেন। খোদ ভারতের প্রসিদ্ধ হানাফী আলেম মাওলানা মানাযির আহসান গীলানী
স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন যে, এই বিষয়ে মৌলিক কাজ আহলেহাদীছ আলেমগণই করেছেন।
মাওলানা বলছেন- ‘এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, দ্বীনের মৌলিক উৎস সমূহের
(কুরআন ও হাদীছ) দিকে ভারতীয় হানাফী মুসলমানদের প্রত্যাবর্তনে আহলেহাদীছ ও
গায়ের মুক্বাল্লিদদের আন্দোলনের প্রভাব রয়েছে। সাধারণ জনগণ গায়ের
মুক্বাল্লিদ হয়নি বটে, তবে গোঁড়া তাক্বলীদ ও অন্ধ অনুকরণের ভেল্কিবাজি
অবশ্যই ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে’।[2]
হানাফী
জামা‘আতেরই একজন বুযুর্গ মাওলানা সাইয়িদ রশীদ আহমাদ আরশাদের ‘হিন্দ ও
পাকিস্তান মেঁ ইলমে হাদীছ’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ মাসিক ‘আল-বালাগ’-এ
(করাচী) প্রকাশিত হয়েছিল। ঐ প্রবন্ধে তিনি লিখছেন- ‘শেষ যামানায় হাদীছের
পাঠদান ও প্রচার-প্রসারের ফলে ভারতবর্ষে আহলেহাদীছ নামে একটি ফের্কা সৃষ্টি
হয়ে গিয়েছিল। যারা ইমামদের তাক্বলীদ করার বিরোধিতা করত। এর ফলে হানাফী
আলেমদের মধ্যেও হাদীছের গ্রন্থাবলী অধ্যয়নের আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং তারা
ফিকহী মাসআলাগুলোকে হাদীছের আলোকে প্রমাণ করার প্রতি মনোযোগী হয়। এভাবে এই
ফের্কার অস্তিত্ব ইলমে হাদীছের অগ্রগতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়’।[3]
এই লাইনগুলোতে প্রবন্ধকার মাযহাবী গোঁড়ামিবশত আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে বিষোদগারের যে বিষাক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন, তাতো একেবারেই সুস্পষ্ট। আমরা এখন এর প্রতিবাদ করতে চাচ্ছি না। এখানে শুধু এটা পেশ করা উদ্দেশ্য যে, আহলেহাদীছদের কঠিন বিরোধিতাকারীও এই সত্য স্বীকার করতে বাধ্য যে, উপমহাদেশে আহলেহাদীছগণই নবী করীম (ছাঃ)-এর হাদীছের প্রকৃত মুবাল্লিগ। হানাফীরা আহলেহাদীছদেরকে দেখে এই বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হয় এবং এটাও স্রেফ কাটছাঁট করে হাদীছ থেকে নিজেদের কতিপয় ফিকহী মাসআলা প্রমাণ করার জন্য। মাশাআল্লাহ তারা এই কল্যাণকর কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
আহলেহাদীছ কোন ফের্কা নয় :
ঘটনাসমূহের আলোকে যদি দেখা যায় তাহলে আহলেহাদীছ ভারতবর্ষে সৃষ্ট কোন ফের্কা নয়। বরং ইসলামের ইতিহাস আমাদেরকে অবগত করে যে, এই ভূখন্ডের লোকজন হিজরী প্রথম শতকেই ইসলামের সাথে পরিচিত হয়ে গিয়েছিল এবং তারা নবী করীম (ছাঃ)-এর নির্দেশ সমূহের সংবাদ পেতে শুরু করেছিল। কারণ হযরত ওমর ফারূক (রাঃ)-এর কল্যাণকর যুগে (১৫ হিঃ) এই ভূখন্ডে ছাহাবায়ে কেরামের আগমন শুরু হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের শুভাগমনও এখানে হয়েছিল। এই পুণ্যবান জামা‘আতের মর্যাদাবান সদস্যগণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছ নিজেদের সাথে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁরা এখানে যার তাবলীগ করেন এবং এই ভূখন্ডের বাসিন্দারা সেগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়। এরই ফলশ্রুতিতে বহু জায়গায় ‘ক্বালাল্লাহ’ ও ‘ক্বালার রাসূল’ (অর্থাৎ কুরআন ও হাদীছ)-এর মর্মস্পর্শী ধ্বনি গুঞ্জরিত হতে শুরু করে। কিন্তু বর্তমান যুগের ন্যায় ঐ সময় জনবসতি এত নিকটে ছিল না এবং মানুষজনের মধ্যে যোগাযোগও ছিল না। মনুষ্যবসতির পরিধি ছিল সীমাবদ্ধ এবং লোকজন পরস্পর থেকে দূর-দূরান্তে বসবাস করত। লেখালেখির কোন উল্লেখযোগ্য মাধ্যম ছিল না এবং সেই সময় এই অঞ্চল সমূহে গ্রন্থ রচনারও কোন প্রচলন ছিল না। মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং কোথাও ছাপাখানার চিহ্ন পাওয়া যেত না। লেখাপড়া এবং হাদীছের পাঠ গ্রহণ ও প্রদানের পরিধি খুবই সংকীর্ণ ছিল। তবে যতটুকু ছিল তা ছিল প্রভাব বিস্তারকারী এবং এর প্রভাব-প্রতিক্রিয়া ধীরে ধীরে বিস্তৃত হতে শুরু করে।
হাদীছ প্রসারের ঢেউ :
হিজরী তের ও চৌদ্দ শতকে সারা পৃথিবীতে উন্নতি-অগ্রগতির ঢেউ উঠে এবং শিক্ষার প্রচলনও ব্যাপক হয়। বিপুলসংখ্যক মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়, গ্রন্থ রচনার জন্য পরিবেশ অনুকূল হয়, প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় এবং গ্রন্থসমূহের প্রকাশনাও ব্যাপক হওয়া শুরু করে। উপমহাদেশের মানুষদের উপরও এর প্রভাব পড়ে এবং নিজ নিজ ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী তারা কাজে নিমগ্ন হয়। এই সময়ে (হিজরী দ্বাদশ শতক) শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভীর প্রচার ও লেখনীর মহোদ্যম প্রসিদ্ধি লাভ করে। অতঃপর তাঁর সম্মানিত পুত্রগণ (শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ, শাহ রফীউদ্দীন ও শাহ আব্দুল কাদের) ও এঁদের ছাত্রদের পাঠদান ও গ্রন্থ রচনার খিদমতের এক সুদীর্ঘ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। মাওলানা ইসমাঈল শহীদ, মিয়াঁ সাইয়িদ নাযীর হুসাইন দেহলভী, নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান, মাওলানা শামসুল হক ডিয়ানবী আযীমাবাদী, মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, মাওলানা হাফেয আব্দুল্লাহ গাযীপুরী, মাওলানা মুহাম্মাদ ইবরাহীম আরাভী, হাফেয মুহাম্মাদ লাক্ষাবী, সাইয়িদ আব্দুল্লাহ গযনভী, সাইয়িদ আব্দুল জাববার গযনভী, মাওলানা হাফেয আব্দুল মান্নান ওয়াযীরাবাদী এবং অন্যান্য অসংখ্য উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন আলেম এই সোনালী-পরম্পরার উজ্জ্বল মুক্তাদানায় পরিণত হন। আল্লাহ তাঁদের প্রতি রহম করুন! ভূমিকামূলক এসব কথার পর সামনে চলুন!
ইলমে হাদীছে শাহ অলিউল্লাহ দেহলভীর খিদমত :
শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী কুরআন সম্পর্কে যে খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন, সম্মানিত পাঠকবৃন্দ তা পূর্ববর্তী পৃষ্ঠা সমূহে (প্রবন্ধে) অবগত হয়েছেন। অবস্থানুযায়ী স্বীয় যুগে নবী করীম (ছাঃ)-এর হাদীছেরও তিনি সীমাহীন খিদমত করেছেন। হিজাযের উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন শিক্ষকদের নিকট তিনি হাদীছ অধ্যয়ন করেন এবং এ সম্পর্কিত জ্ঞান সমূহে গভীর পান্ডিত্য হাছিল করেন। এরপর ভারতে ফিরে এসে এই মৌলিক জ্ঞানকে অধিকতর মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেন। ইতিপূর্বে উপমহাদেশের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মূলত ইলমে হাদীছের খুব একটা বেশী প্রচলন ছিল না। এজন্য তিনি এই জ্ঞানের (হাদীছ) প্রচার-প্রসারকে তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেন। এর জন্য তিনি পাঠদান ও গ্রন্থ রচনা উভয় খিদমতই আঞ্জাম দেন।
লেখনীর ক্ষেত্রে তাঁর অবদান হল তিনি মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেকের দু’টি শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখেছেন। এটি হাদীছের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থ। এর বিন্যাস ও রচনাশৈলী দ্বারা শাহ ছাহেব খুবই প্রভাবিত ছিলেন। তিনি এটিকে হাদীছের মূল ও ভিত্তি বলে আখ্যায়িত করতেন। এজন্য তিনি ‘আল-মুছাফফা’ (المصفَّى) নামে এর আরবী শরাহ লেখেন। ঐ সময় ভারতবর্ষে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রগুলোতে ফার্সী ভাষার প্রচলন বেশী থাকায় তিনি ফার্সীতেও এর একটি শরাহ লিখেন। তিনি এর নামকরণ করেন ‘আল-মুসাওয়া’ (المسوَّى)।
তাছাড়া ছহীহ বুখারীর অধ্যায় শিরোনামের ব্যাখ্যা সম্বলিত ‘শারহু তারাজুমি আবওয়াবি ছহীহিল বুখারী’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। অতঃপর ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ লিপিবদ্ধ করেন। যেটি শরী‘আতের নিগূঢ় তত্ত্ব ও ইসলামী বিধি-বিধান সমূহের দার্শনিক ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি বড় ও প্রসিদ্ধ গ্রন্থ। এই গ্রন্থের বৃহদাংশ বিষয় হাদীছের উপর ভিত্তিশীল। এটি অধ্যয়ন করলে জানা যায় যে, শাহ ছাহেব ইলমে হাদীছে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি উপমহাদেশে ইলমে হাদীছের এমন খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন, ইতিপূর্বে এই ভূখন্ডের কোন আলেমের কল্পনাতেও কখনো যা আসেনি।
লেখনী ছাড়া এই ভূখন্ডে শাহ ছাহেব পাঠদানেরও এক ব্যাপক সিলসিলা জারি করেছিলেন। অসংখ্য জ্ঞানান্বেষী তাঁর নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করে। অতঃপর এই পরম্পরা সামনে এগুতে থাকে এবং এখনও এগুচ্ছে। ইনশাআল্লাহ এগুতে থাকবে। এর প্রভাব উপমহাদেশের সীমানা পেরিয়ে অন্যান্য দেশসমূহেও গিয়ে পৌঁছে। বিভিন্ন দেশের অসংখ্য মানুষ এখানে আসে এবং এই দেশের বিভিন্ন শিক্ষকের নিকট থেকে হাদীছ পড়ে।
শাহ ছাহেবের সম্মানিত পুত্রগণ :
শাহ অলিউল্লাহর পরে তাঁর সম্মানিত পুত্রগণও পাঠদান ও গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে ইলমে হাদীছের প্রসারের জন্য সীমাহীন প্রচেষ্টা চালান। শাহ আব্দুল আযীয ফার্সী ভাষায় ‘বুসতানুল মুহাদ্দিছীন’ নামে মুহাদ্দিছগণের জীবনী সম্বলিত একটি গ্রন্থ লিখেন। এর পূর্বে এই বিষয়ে ভারতবর্ষে কোন ভাষাতেই কোন গ্রন্থ ছিল না। তিনি আরো অনেক সুন্দর সুন্দর গ্রন্থ রচনা করেছেন। এই চার ভাই (শাহ আব্দুল আযীয, শাহ রফীউদ্দীন, শাহ আব্দুল কাদের ও শাহ আব্দুল গণী) পাঠদানের মাধ্যমেও লোকজনের অনেক উপকার সাধন করেছেন।
নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান :
পূর্ববর্তী পৃষ্ঠা সমূহে (প্রবন্ধে) সংক্ষিপ্তাকারে নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খানের কুরআনী খিদমত সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। হাদীছ সম্পর্কে আরবী, ফার্সী, উর্দূ তিন ভাষাতেই তিনি গ্রন্থ রচনা করেছেন। হাদীছ সম্পর্কে আরবীতে তাঁর অনেকগুলো গ্রন্থ রয়েছে। তন্মধ্যে কতিপয় গ্রন্থ হ’ল:-
১. আওনুল বারী লিহাল্লি আদিল্লাতিল বুখারী ২. আস-সিরাজুল ওয়াহ্হাজ ফী কাশফি মাতালিবি মুসলিম বিন হাজ্জাজ ৩. ফাতহুল আল্লাম শারহু বুলূগুল মারাম ৪. আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ আস-সিত্তাহ ৫. আর-রাওযুল বাসসাম মিন তারজামাতি বুলূগুল মারাম ও মুওয়াল্লিফিহিল ইমাম ৬. নুযুলুল আবরার বিল ইলমিল মা’ছূর ফিল আদ‘ইয়্যাহ ওয়াল আযকার ৭. আর-রহমাতুল মুহদাত ইলা মাইঁ য়ুরীদু যিয়াদাতাল ইলম আলা আহাদীছিল মিশকাত ৮. আল-ইবরাতু বিমা জাআ ফিল গাযবি ওয়াশ শাহাদাতি ওয়াল হিজরাহ। এসব গ্রন্থ ছাড়াও আরবীতে এ বিষয়ে তাঁর রচনাবলী রয়েছে।
ফার্সীতে নওয়াব ছাহেবের হাদীছ সম্পর্কিত কতিপয় গ্রন্থ হ’ল : ১. সিলসিলাতুল আসজাদ ফী মাশায়িখিস সিন্দ ২. মিসকুল খিতাম শারহু বুলূগুল মারাম ৩. মানহাজুল উছূল ইলা ইছতিলাহি আহাদীছির রাসূল ৪. মাওয়াইদুল আওয়াইদ মিন উয়ূনিল আখবার ওয়াল ফাওয়াইদ।
এখন হাদীছ সম্পর্কে উর্দূতে রচিত নওয়াব ছাহেবের কতিপয় গ্রন্থের নাম পড়ুন! ১. বুগয়াতুল কারী ফী তারজামাতি ছুলাছিয়্যাতিল বুখারী ২. ইত্তিবাউল হাসানাহ ফী জুমলাতি আইয়্যামিস সানাহ ৩. তামীমাতুছ ছাবী ফী তারজামাতি আহাদীছিন নবী ৪. তাওফীকুল বারী লিতারজামাতিল আদাব আল-মুফরাদ লিল-বুখারী ৫. গুনইয়াতুল কারী ফী তারজামাতি ছুলাছিয়্যাতিল বুখারী ৬. মাহাসিনুল আ‘মাল ৭. যূউশ শামস ফী শারহি হাদীছি বুনিয়াল ইসলামু আলা খামস। উর্দূতে হাদীছ বিষয়ে তাঁর আরো অনেক গ্রন্থ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে অনেক গুণে গুণান্বিত করেছিলেন।
হাফেয মুহাম্মাদ লাক্ষাবী লিখিত হাশিয়া সমূহ :
পূর্ববর্তী পৃষ্ঠাসমূহে (প্রবন্ধে) হাফেয মুহাম্মাদ লাক্ষাবীকৃত কুরআনের ফার্সী ও পাঞ্জাবী অনুবাদ এবং ‘তাফসীরে মুহাম্মাদী’র বর্ণনা এসে গেছে। হাফেয ছাহেব আরবীতে সুনানে আবুদাঊদ ও মিশকাতের হাশিয়া লিখেছেন। তিনিই ছিলেন প্রথম পাঞ্জাবী আলেম, যিনি আরবীতে এই খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। মাওলানা শামসুল হক আযীমাবাদী যখন আবুদাঊদের ভাষ্য ‘আওনুল মা‘বূদ’ লিখছিলেন, তখন তিনি হাফেয মুহাম্মাদ লাক্ষাবীকৃত আবুদাঊদের হাশিয়া দ্বারা উপকৃত হয়েছিলেন। এর অর্থ হল তিনি মাওলানা আযীমাবাদীর পূর্বে এই খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। ১২৭১ হিজরীতে তিনি আবুদাঊদের হাশিয়া লিখেন এবং ১২৭২ হিজরীতে তা মুদ্রিত হয়। মিশকাতের হাশিয়া লিখেন ১২৭২ হিজরীতে, যা ঐ বছরই প্রকাশিত হয়। এর মানে হল উপমহাদেশের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রগুলোতে হাফেয ছাহেবের গবেষণাপূর্ণ লেখনীগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করা হত।
গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশনায় গযনভী আলেমদের খিদমত :
সাইয়িদ আব্দুল্লাহ গযনভী[4]
উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ বুযুর্গ ছিলেন। তিনি ১২৩০ হিজরীতে (১৮১৫ খ্রিঃ)
আফগানিস্তানের গযনী যেলার ‘বাহাদুর খায়ল’ দুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি
স্বীয় যুগের খ্যাতনামা আলেমদের কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করেন। দিল্লী গিয়ে
মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভীর কাছে ছহীহ বুখারী পড়েন। অত্যন্ত মুত্তাক্বী
আলেম এবং নিজ জন্মভূমি আফগানিস্তানে তাওহীদ ও সুন্নাতের অনেক বড় মুবাল্লিগ
ছিলেন। বিদ‘আত ও শিরকী রসম-রেওয়াজের ঘোর বিরোধী ছিলেন। আফগানিস্তানের
দুষ্টু আলেমগণ এই মৌলিক বিষয়ে তাঁর কঠিন বিরোধিতা করে এবং তদানীন্তন
সরকারকে বলে যে, এই ব্যক্তি দেশে ফিতনা ছড়াচ্ছে। এজন্য তাকে শাস্তি দেয়া
হোক। সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে কঠিনভাবে প্রহার করে এবং তিনপুত্র মাওলানা
সাইয়িদ মুহাম্মাদ গযনভী, মাওলানা সাইয়িদ আব্দুল্লাহ ও মাওলানা সাইয়িদ
আব্দুল জাববার গযনভী সহ তাঁকে জেলখানায় বন্দী করে।[5]
কঠিনতম শাস্তি প্রদানের পর আফগানিস্তান সরকার সাইয়িদ আব্দুল্লাহ গযনভী এবং তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছিল। দেশ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর এই পুণ্যবান লোকগুলো বিভিন্ন স্থান ঘুরেফিরে পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরে পৌঁছেন এবং সেখানে তাঁরা মাদরাসাও প্রতিষ্ঠা করেন। যেটি ‘মাদরাসা গযনভিয়াহ’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। কুরআন-হাদীছ সম্পর্কে তাঁরা নিজেরাও গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করেন এবং পুরনো গ্রন্থগুলো প্রকাশও করেন। যার মধ্যে ইমাম ইবনু তাইমিয়া ও ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িমের গ্রন্থগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। হাদীছ সম্পর্কিত অসংখ্য গ্রন্থ এঁদেরই প্রচেষ্টায় প্রথমবারের মতো প্রকাশনার মুখ দেখে। সাইয়িদ আব্দুল্লাহ গযনভী ১২৯৮ হিজরীর ১৫ই রবীঊল আওয়াল (১৫ই ফেব্রুয়ারী ১৮৮১ খ্রিঃ) অমৃতসরে মৃত্যুবরণ করেন।
নিম্নে এই পরিবারের আলেমদের গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশনা সংক্রান্ত যাবতীয় খিদমতের বর্ণনা পেশ করা হচ্ছে। যার মধ্যে কুরআনী খিদমতও শামিল রয়েছে। তাঁদের সব খিদমতকে একত্রিত করে দেয়া হয়েছে।
যখন সাইয়িদ আব্দুল্লাহ গযনভী আফগানিস্তান থেকে হিজরত করে ভারতে আসেন, তখন তার ১২ পুত্র ও ১৫ কন্যা ছিল। এক ছেলের নাম ছিল আব্দুল্লাহ। হিজরতের সময় এদের অধিকাংশই তাঁর সহযাত্রী হয়ে এখানে আসে। এখানকার আবহাওয়া কারো কারো অনুকূলে হয়নি বিধায় তারা এদেশে আসার পর খুব বেশী দিন বাঁচেনি। এঁরা সকলেই কুরআন ও হাদীছে অভিজ্ঞ আলেম, মুবাল্লিগ ও শিক্ষক ছিলেন। এঁদের গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশনাগত খিদমতের তালিকা নিম্নরূপ:
১. তাফসীরে জামেউল বায়ান মা‘আ হাশিয়া জামেউল বায়ান : এটি (জামেউল বায়ান ওরফে তাফসীরে তাবারী) কুরআন মাজীদের প্রসিদ্ধ এবং আলেমদের মধ্যে প্রচলিত তাফসীর। মাওলানা আব্দুল্লাহ গযনভীর জ্যেষ্ঠপুত্র মাওলানা মুহাম্মাদ গযনভী এর হাশিয়া লিখেন। মাওলানা মুহাম্মাদ গযনভীর হাশিয়া সহ এই তাফসীরটি ১৮৯২ সালে দিল্লীর ফারূকী প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। এই তাফসীরের সাথে নিম্নোক্ত তেরটি গ্রন্থের সারনির্যাস প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয় :
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতীর ইকলীল ফী ইসতিমবাতিত তানযীল ও মুফহিমাতুল আকরান ফী মুবহামাতিল কুরআন, ইমাম ইবনু তাইমিয়ার তাফসীর সুরাতুন নূর, ফাওয়াইদ শারীফিয়্যাহ, ফুতয়া ফী মাসআলাতি কালামিল্লাহি তা‘আলা, রিসালাহ ফিল কুরআন, কাইদাহ ফিল কুরআন, তাফসীর সম্পর্কিত বিভিন্ন ফায়েদা সংবলিত গ্রন্থ ‘ফাওয়াইদ শাত্তা’, খাতিমাতুত তাবইল মুশতামালাহ আলাল ফাওয়াইদ আল-মুবহামাহ, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের কিতাবুর রাদ্দ আলাল জাহমিয়্যাহ, শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভীর আল-ফাওযুল কাবীর ফী উছূলিত তাফসীর, আহাদীছুত তাওহীদ ওয়া রাদ্দুশ শিরক ও আসবাবুল ইহতিরায মিনাশ শায়তান।
২. হামায়েলে গযনভিয়াহ : এটা ঐ গযনভী হামায়েল (ছোট কুরআন শরীফ), যার অনুবাদ ও টীকা নওয়াব ওয়াহীদুয্যামান খান লিখিত। এটি মাওলানা আব্দুল্লাহ গযনভীর পৌত্র এবং মাওলানা মুহাম্মাদ গযনভীর পুত্র মাওলানা আব্দুল আওয়াল গযনভী আল-কুরআন ওয়াস সুন্নাহ প্রেস, অমৃতসর থেকে প্রকাশ করেন।
৩. হামায়েলে গযনভিয়াহ : এটি ঐ গযনভী হামায়েল, যার অনুবাদ শাহ রফীউদ্দীন দেহলভী এবং হাশিয়া মাওলানা আব্দুল আওয়াল গযনভীকৃত। এটি সর্বপ্রথম মাওলানা আব্দুল গফুর বিন মাওলানা মুহাম্মাদ গযনভী অমৃতসর থেকে প্রকাশ করেন এবং তারপর কয়েকবার প্রকাশিত হয়। কতিপয় বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি দারুণ প্রসিদ্ধি অর্জন করে এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এখন এটা দুষ্প্রাপ্য।
৪. মুছাফফা মা‘আ মুসাওয়া : এই গ্রন্থ দু’টি শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী রচিত মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেকের দু’টি ভাষ্য। মুসাওয়া ফার্সীতে এবং মুছাফফা আরবীতে রচিত। এই দু’টি শরাহ একসাথে প্রথমবার মাওলানা সাইয়িদ মুহাম্মাদ গযনভী দিল্লী থেকে প্রকাশ করেন।
৫. কাশফুল মুগাত্তা : এটি নওয়াব ওয়াহীদুয্যামান খানকৃত মুওয়াত্ত্বা মালেকের উর্দূ অনুবাদ। প্রথমবারের মতো এটি মাওলানা সাইয়িদ মুহাম্মাদ গযনভী দিল্লীর মুর্তাযাবী প্রেস থেকে প্রকাশ করেন।
৬. রিয়াযুছ ছালেহীন : সাইয়িদ আব্দুল্লাহ গযনভীর ইঙ্গিতে এটি প্রথমবারের মতো লাহোর থেকে প্রকাশিত হয় এবং এর উর্দূ অনুবাদ করেন তাঁর শিষ্য মাওলানা আহমাদুদ্দীন কুমাবী। ‘কুম’ লুধিয়ানা যেলার (পূর্ব পাঞ্জাব) একটি গ্রাম। এটি রিয়াযুছ ছালেহীনের প্রথম উর্দূ অনুবাদ।
৭. মাশারিকুল আনওয়ার[6] : এটি ইমাম হাসান বিন মুহাম্মাদ ছাগানী লাহোরীকৃত (মৃঃ ৬৫০ হিঃ) হাদীছের একটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ। কোন এক সময় এটি পাঠ্যসূচীভুক্ত ছিল। ‘তুহফাতুল আখয়ার’-এর অনুবাদ সহ এটি সর্বপ্রথম গযনভী আলেমগণ প্রকাশ করেন।
৮. ইকাযু হিমামি উলিল আবছার : এই গ্রন্থটি তাক্বলীদের বিরুদ্ধে রচিত। মাওলানা সাইয়িদ আব্দুল্লাহ গযনভীর ইঙ্গিতে মিয়াঁ আব্দুল আযীয বারএটল’র পিতা মৌলভী ইলাহী বখশ উকিলের (মৃঃ ১৭ই রামাযান ১৩৩৮ হিঃ/৫ই জুন ১৯২০ খ্রিঃ) অর্থায়নে প্রথমবার লাহোর থেকে প্রকাশিত হয়।
৯. তরজমা মিশকাতুল মাছাবীহ : মাওলানা আব্দুল আওয়াল গযনভী মিশকাতের উর্দূ অনুবাদ করেন। এটি কয়েকবার প্রকাশিত হয় এবং খুব গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে।
১০. নুছরাতুল বারী : মাওলানা আব্দুল আওয়াল গযনভী ‘নুছরাতুল বারী’ নামে হাশিয়া সহ ছহীহ বুখারীর উর্দূ অনুবাদ শুরু করেছিলেন। মাত্র ৮ পারা সমাপ্ত হয়েছিল।
১১. ইন‘আমুল মুন‘ঈম : মাওলানা আব্দুল আওয়াল গযনভী ‘ইন‘আমুল মুন‘ঈম’ নামে ছহীহ মুসলিমের উর্দূ অনুবাদ শুরু করেছিলেন। এর শুধুমাত্র ১ পারা প্রকাশিত হয়েছিল। সম্পূর্ণ অনুবাদ হয়েছিল কি-না তা জানা যায়নি।
১২. ইজতিমাউল জুয়ূশ আল-ইসলামিয়্যাহ আলা গাযবিল মু‘আত্তালাত আল-জাহমিয়্যাহ : এটি ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িমের রচনা। প্রথমবার মাওলানা আব্দুল গফুর ও আব্দুল আওয়াল গযনভী আল-কুরআন ওয়াস সুন্নাহ প্রেস, অমৃতসর থেকে প্রকাশ করেন।
১৩. রিসালাতুল হাকীকাতি ওয়াল মাজায : এটি ইমাম ইবনু তাইমিয়ার ছোট্ট পুস্তিকা। যেটি প্রথমবার মাওলানা আব্দুল গফুর ও মাওলানা আব্দুল আওয়াল গযনভী প্রকাশ করেন।
১৪. জালাউল আফহাম ফিছ-ছালাতি ওয়াস সালাম আলা খায়রিল আনাম : এটি ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম রচিত। মাওলানা আব্দুল কুদ্দূস বিন মাওলানা আব্দুল্লাহ গযনভীর প্রচেষ্টায় মাওলানা আব্দুল গফুর ও আব্দুল আওয়াল গযনভী প্রথমবার আল-কুরআন ওয়াস সুন্নাহ প্রেস, অমৃতসর থেকে প্রকাশ করেন।
১৫. শারহু হাদীছিন নুযূল : এটি ইমাম ইবনু তাইমিয়া রচিত। মাওলানা আবদুল গফুর ও আব্দুল আওয়াল গযনভী আল-কুরআন ওয়াস সুন্নাহ প্রেস, অমৃতসর থেকে এটি প্রথমবার প্রকাশ করেন।
১৬. শারহু খামসীন : ইবনু রজব হাম্বলীর রচনা। মাওলানা আব্দুল গফুর ও আব্দুল আওয়াল গযনভী প্রথমবার অমৃতসর থেকে প্রকাশ করেন।
১৭. তুহফাতুল ইরাকিয়্যাহ ফিল আ‘মাল আল-ক্বালবিয়্যাহ : ইমাম ইবনু তাইমিয়ার রচনা। মাওলানা আব্দুল গফুর ও আব্দুল আওয়াল গযনভী প্রথমবার অমৃতসর থেকে প্রকাশ করেন।
১৮. ফাতাওয়া আল-হামাবিয়্যাহ : এটির রচয়িতাও ইমাম ইবনু তাইমিয়া। এটিও প্রথমবার অমৃতসর থেকে মাওলানা আব্দুল গফুর ও আব্দুল আওয়াল গযনভী প্রকাশ করেন।
১৯. মাজমূ‘আতুল বায়ান আল-মুবদী লিশানাআতিল কাওল আল-মুজদী : আল্লামা সুলায়মান বিন সাহমান নাজদী এর রচয়িতা। এটিও মাওলানা আব্দুল গফুর ও আব্দুল আওয়াল গযনভী প্রথমবারের মতো অমৃতসর থেকে প্রকাশ করেন।
২০. মাজমূ‘আতুত তাওহীদ আন-নাজদিয়্যাহ ওয়া মাজমূ‘আতুল হাদীছ আন-নাজদিয়্যাহ : এটিও গযনভী আলেমগণ প্রথমবারের মতো দিল্লীর আনছারী প্রেস থেকে প্রকাশ করেন।
২১. ফাতহুল মাজীদ শারহু কিতাবুত তাওহীদ : এই গ্রন্থটি মাওলানা আব্দুল গফুর ও আব্দুল আওয়াল গযনভী প্রথমবার প্রকাশ করেন।
২২. ফাতহুল হামীদ শারহু কিতাবুত তাওহীদ : এই গ্রন্থটি মাওলানা আব্দুল গফুর ও আব্দুল আওয়াল গযনভীর ব্যবস্থাপনায় প্রথমবারের মতো আল-কুরআন ওয়াস সুন্নাহ প্রেস, অমৃতসর থেকে প্রকাশিত হয়।
২৩. ইছবাতু উলুবিবর রাবব ওয়া মুবায়ানাতুহু আনিল খালক : এটি মাওলানা আব্দুল জাববার গযনভীর আরবী রচনা।
২৪. ইছবাতুল ইলহাম ওয়াল বায়‘আহ : এটিও মাওলানা আব্দুল জাববার রচিত উর্দূ গ্রন্থ।
২৫. ই‘আনাতুল মিল্লাতিল ইসলামিয়্যাহ : কাফেরদের অধীনে চাকুরী করা নাজায়েয সম্পর্কিত মাওলানা আব্দুল জাববার গযনভী রচিত উর্দূ পুস্তিকা।
২৬. মা‘আরিজুল উছূল বিআন্নাল উছূল ওয়াল ফুরূ বায়নাহার রাসূল : এটি মাওলানা আব্দুল ওয়াহিদ গযনভী রচিত পুস্তিকা।
২৭. দারেমীর হাশিয়া : মাওলানা আব্দুল্লাহ গযনভীর যোগ্য পুত্র মাওলানা আব্দুর রহীম গযনভী হাদীছের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সুনানে দারেমীর আরবী হাশিয়া (পাদটীকা) লিপিবদ্ধ করেছিলেন। দুঃখের বিষয় হল এটি হারিয়ে গেছে। এর শেষ খন্ডটির পান্ডুলিপি মওজুদ ছিল। এখন কারও নিকট আছে কি-না তা জানা যায়নি।
কুরআন ও হাদীছ সম্পর্কিত এই ২৭টি গ্রন্থ গযনভী পরিবারের আলেমগণ লিখেছেন বা তাঁদের প্রচেষ্টায় প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়েছে। এটি দ্বীনের অনেক বড় খিদমত, যা নিজেদের যুগে উক্ত আলেমগণ করেছিলেন।
সঊদী সরকারের সাথে সম্পর্ক :
এখানে এটা উল্লেখ করা সম্ভবত সংগত হবে যে, গযনভী পরিবারের আলেমদের সঊদী শাসকদের সাথেও সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের সূচনা এভাবে হয়েছিল যে, কোন এক সময়ে ব্যবসায়িক কারণে সাইয়িদ আব্দুল্লাহ গযনভীর দুই পুত্রের (মাওলানা আব্দুর রহীম গযনভী ও মাওলানা আব্দুল ওয়াহিদ গযনভী) আরবের কিছু এলাকায় যাতায়াত ছিল। এই সূত্রে একবার তারা কুয়েত গেলে সেখানে নাজদ ও হিজাযের শাসক সুলতান আব্দুর রহমান ও তাঁর সম্মানিত পুত্র সুলতান আব্দুল আযীয বিন সঊদের সাথে সাক্ষাৎ ঘটে। ঐ সময় এই দুই পিতা-পুত্র কুয়েতে অবস্থান করে নাজদ আক্রমণের প্রস্ত্ততি নিচ্ছিলেন। গযনভী ভ্রাতৃদ্বয়ের কাছে পিতা-পুত্র কিছু শিক্ষাও অর্জন করেন। নাজদ বিজয়ের পর তারা সেখানে তাদেরকে দরস-তাদরীসের সিলসিলা শুরু করারও দাওয়াত দেন। এভাবে এই দু’জন ব্যক্তি প্রায় পাঁচ বছর সেখানে অবস্থান করেন এবং সঊদ বংশের কতিপয় ব্যক্তি ও নাজদবাসী তাঁদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করেন।
এসময় তাঁদের মাধ্যমে ইমাম ইবনু তাইমিয়া ও ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িমের কতিপয় গ্রন্থের পান্ডুলিপিও উপমহাদেশে আসে। যেগুলো গযনভী বংশের আলেমগণ এবং এখানকার কতিপয় প্রকাশক প্রকাশ করে। মাওলানা ইসমাঈল গযনভী ও মাওলানা দাঊদ গযনভী বেঁচে থাকা পর্যন্ত সঊদ বংশের সাথে তাঁদের সম্পর্ক অটুট থাকে। উপমহাদেশের গযনভী বংশের আলেমগণ এই সম্মান অর্জন করেছিলেন যে, বর্তমান সঊদী শাসকদের সাথে সর্বপ্রথম তাদেরই সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। যার ভিত্তি ছিল স্রেফ ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি।
কা‘বার গিলাফ :
গযনভী বংশ সম্পর্কে আরো একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, মহামান্য বাদশাহ আব্দুল আযীয বিন সঊদের হিজায বিজয়ের পর ১৩৪৬ হিজরীতে (১৯২৮ খ্রিঃ) সাইয়িদ আব্দুল্লাহ গযনভীর দুই পৌত্র মাওলানা সাইয়িদ মুহাম্মাদ দাউদ গযনভী বিন সাইয়িদ আব্দুল জাববার গযনভী ও সাইয়িদ ইসমাঈল গযনভী বিন মাওলানা সাইয়িদ আব্দুল ওয়াহিদ গযনভী অমৃতসরের অত্যন্ত দক্ষ বুননশিল্পীদের দ্বারা কা‘বার গিলাফ তৈরী করান এবং এই দুই নওজোয়ান এই গিলাফ মক্কা মুকাররমায় নিয়ে গিয়ে বাদশাহ আব্দুল আযীযের নিকট পেশ করেন। আর এটি কা‘বা ঘরে লটকানো হয়। এটিই প্রথম (এবং শেষ) কা‘বার গিলাফ ছিল, যেটি অত্যন্ত সংগোপনে উপমহাদেশের গযনভী বংশের দুই তরুণ আলেম মক্কায় নিয়ে যান এবং এর দ্বারা কা‘বা ঘরকে সৌন্দর্যমন্ডিত করা হয়।
মাওলানা ইসমাঈল গযনভী ১৩৭৯ হিজরীর ১৯শে যিলহজ্জ (১৩ই জুন ১৯৬০ খ্রিঃ) মৃত্যুবরণ করেন এবং মাওলানা সাইয়িদ মুহাম্মাদ দাউদ গযনভী ১৮৯৫ সালের জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ বা ১৮৯৫ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে অমৃতসরে জন্মগ্রহণ করেন (১৩১৩ হিঃ) এবং ১৯৬৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর (২৯শে রজব ১৩৮৩ হিঃ) পরপারে পাড়ি জমান।
মাওলানা গোলাম রসূল মেহেরের কীর্তি :
পূর্বে ইমাম ইবনু তাইমিয়া ও ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িমের রচনাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, গযনভী আলেমদের প্রচেষ্টায় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম সেগুলো প্রকাশের সূচনা হয় এবং ঐ সকল সম্মানিত ইমামদের কতিপয় গ্রন্থের পান্ডুলিপিও আরব দেশ থেকে উক্ত খান্দানের মাধ্যমেই উপমহাদেশে পৌঁছে। এ ব্যাপারে এটাও শুনুন যে, মাওলানা গোলাম রসূল মেহেরই সর্বপ্রথম ইমাম ইবনু তাইমিয়ার জীবনী গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করেন এবং ১৩৪৩ হিজরীতে (১৯২৫ খ্রিঃ) এই গ্রন্থটি ‘সীরাতে ইমাম ইবনে তাইমিয়া’ শিরোনামে ফারূকগঞ্জ, লাহোরে অবস্থিত আল-হেলাল বুক এজেন্সীর মালিক ও প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আযীয আফেন্দী প্রকাশ করেন। এটি সংক্ষিপ্ত হলেও ইমাম ইবনু তাইমিয়ার প্রথম জীবনীগ্রন্থ। এর পূর্বে (উপমহাদেশে) আরবী বা উর্দূ কোন ভাষাতেই গ্রন্থাকারে ইমাম ছাহেবের জীবনী লিপিবদ্ধ করা হয়নি। অবশ্য তাঁর সম্পর্কে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ প্রবন্ধ লিখেছিলেন এবং দারুল উলূম নাদওয়াতুল ওলামা, লক্ষ্মৌর পত্রিকা ‘আন-নাদওয়াহ’তেও এ বিষয়ে কতিপয় প্রবন্ধ ছাপানো হয়েছিল।
মাওলানা গোলাম রসূল মেহের ১৩১২ হিজরীর ১৮ই শাওয়াল (১৩ই এপ্রিল ১৮৯৫ খ্রিঃ) জালন্ধর যেলার (পূর্ব পাঞ্জাব) ফুলপুর নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ গ্রন্থকার ও উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন সাংবাদিকদের মধ্যে গণ্য করা হত। বিংশ শতকের সাথে সম্পর্কিত উপমহাদেশের রাজনৈতিক ও ইসলামী আন্দোলনসমূহের তিনি প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। বাদশাহ আব্দুল আযীযের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। হিজায বিজয়ের পর তাঁর দাওয়াতেই তিনি মক্কা মু‘আযযামায় গিয়ে হজ্জ করেন এবং বিভিন্ন সময় মহামান্য বাদশাহর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। তিনি ১৯৭১ সালের ১৬ই নভেম্বর (২৭শে রামাযান ১৩৯২ হিঃ) লাহোরে মৃত্যুবরণ করেন।
নওয়াব ওয়াহীদুয্যামানের খিদমত :
নওয়াব ওয়াহীদুয্যামান খান হায়দারাবাদীর পূর্বপুরুষদের মধ্যে এক বুযুর্গ কোন এক সময়ে আফগানিস্তান থেকে হিজরত করে মুলতানে বসতি গেড়েছিলেন। নওয়াব ছাহেবের দাদা মাওলানা মুহাম্মাদ মুলতানে পাঠদানরত অবস্থায় কোন কাজে লক্ষ্ণৌ যান। অতঃপর ওখানকার জ্ঞানপিপাসুদের পীড়াপীড়িতে সেখানে পড়াতে শুরু করেন। তাঁর এক পুত্রের নাম ছিল মাওলানা মসীহুয্যামান। তিনি কানপুর যাত্রা করে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যে মশগুল হয়ে যান। সেখানে তাঁর গৃহে ১২৬৭ হিজরীতে (১৮৫০ খ্রিঃ) এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। যার নাম রাখেন ওয়াহীদুয্যামান। বড় ভাই হাফেয বদীউয্যামানের কাছে ওয়াহীদুয্যামানের পড়াশোনার হাতে খড়ি হয়। অতঃপর বিভিন্ন শিক্ষকের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করেন। শায়খ হুসাইন বিন মুহসিন আনছারীর নিকট থেকেও জ্ঞানার্জনের সুযোগ তাঁর ঘটে। হাদীছের দরস গ্রহণের জন্য দিল্লী যাত্রা করে মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভীর ইলমের দরজায় কড়া নাড়েন এবং তাঁর কাছ থেকে হাদীছের সনদ লাভ করে গর্বিত হোন। অতঃপর অনেক জায়গায় যান এবং অসংখ্য আলেমের সাথে সাক্ষাৎ করেন। পিতার সাথে হজ্জ সম্পাদন করেন। তিনি হায়দারাবাদে (দাক্ষিণাত্য) চাকুরী শুরু করেন এবং দ্রুততার সাথে পদোন্নতি পেতে থাকেন। এক সময় তাঁকে সেখানকার হাইকোর্টের জজ নিযুক্ত করা হয়। কুরআন, হাদীছ, ফিকহ, উছূলে ফিকহ প্রভৃতি বিষয়ে পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। ১৯০০ সালে (১৩১৭ হিঃ) চাকুরী পাওয়ার পর ৩৪ বছর হায়দারাবাদ রাজত্বে চাকুরী করেন। তিনি অধিক অধ্যয়নকারী ও গভীর মনীষার অধিকারী আলেম ছিলেন। মেধা ছিল খুবই তীক্ষ্ণ এবং ধীশক্তি ছিল প্রখর। তিনি কুরআন মাজীদের অনুবাদ করেন, যেটি প্রথমবার মাওলানা আব্দুল গফুর গযনভী ও মাওলানা আব্দুল আওয়াল গযনভী অমৃতসর থেকে প্রকাশ করেন। ইতিপূর্বে যা উল্লেখিত হয়েছে।
উপমহাদেশের ইনিই প্রথম আলেম যিনি মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেক, ছহীহ বুখারী, ছহীহ মুসলিম, সুনান আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহর সহজ-সরল ও বোধগম্য উর্দূ অনুবাদ করেন। এই অনুবাদগুলো দারুণ গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে। নওয়াব ওয়াহীদুয্যামান খান ১৩৩৮ হিজরীর ২৫শে শা‘বান (১৫ই মে ১৯২০ খ্রিঃ) হায়দারাবাদে (দাক্ষিণাত্য) মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর এক বছর পূর্বে তিনি স্বীয় পিতা মসীহুয্যামানকে স্বপ্নে দেখেন। তিনি বলেন, ‘এখন কলস জীবনের পানি থেকে শূন্য হয়ে গেছে’। এর ব্যাখ্যা হল এবার মৃত্যু অত্যাসন্ন।
মাওলানা মুহাম্মাদ আবুল হাসান শিয়ালকোটী :
মাওলানা মুহাম্মাদ আবুল হাসান শিয়ালকোটী ছিলেন পাঞ্জাব প্রদেশের একজন উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন আলেম, যিনি মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভীর প্রথম যুগের ছাত্রদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি ‘ফায়যুল বারী’ নামে ছহীহ বুখারীর উর্দূ অনুবাদ করেন ও শরাহ লিখেন। এই শরাহটি ছহীহ বুখারীর সাতটি শরাহকে সামনে রেখে লেখা হয়েছিল। শরাহগুলো হল- ফাতহুল বারী, উমদাতুল কারী, ইরশাদুস সারী, কাওয়াকিবুদ দারারী, তায়সীরুল কারী, মিনাহুল বুখারী ও হাশিয়া সিন্ধী। ফায়যুল বারী বড় সাইজের দশটি বৃহৎ খন্ডে হাযার হাযার পৃষ্ঠাব্যাপী। উর্দূতে এ বিষয়ে এটিই প্রথম অনুবাদ ও শরাহ, যা মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভীর ছাত্র এবং শিয়ালকোটের খ্যাতিমান আলেমের আয়াসসাধ্য অতুলনীয় কীর্তি। ১৩১৮ হিজরীতে (১৯০১ খ্রিঃ) এই অনুবাদ ও শরাহ সম্পন্ন হয় এবং লাহোরের পুস্তক ব্যবসায়ী মাওলানা ফকীরুল্লাহ এটি প্রকাশ করেন। মাওলানা ফকীরুল্লাহ স্বীয় যুগের খ্যাতিমান আলেমদের মধ্যে গণ্য হতেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন অনুবাদক, ভাষ্যকার এবং প্রকাশককে জান্নাতুল ফেরদাউসে ঠাঁই দেন।
(ক্রমশঃ)
মূল (উর্দূ) : মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক ভাট্টি
অনুবাদ : নূরুল ইসলাম
পিএইচ.ডি গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. মিফতাহু কুনূযিস সুন্নাহ-এর ভূমিকা (লাহোর : সুহাইল একাডেমী, ২য় সংস্করণ, ১৪০৮ হিঃ/১৯৮৭ খ্রিঃ)।
[2]. মাসিক ‘বুরহান’, দিল্লী, আগস্ট ১৯৮৫।
[3]. মাসিক ‘আল-বালাগ’, করাচী, যিলহজ্জ ১৩৮৭ হিঃ।
[4]. মাওলানা আব্দুল্লাহ গযনভী সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন : অনুবাদক প্রণীত মনীষী চরিত, মাসিক আত-তাহরীক, মার্চ ২০১৪, পৃঃ ৬৩-৬৬।-অনুবাদক
[5]. সাইয়িদ আব্দুল্লাহ গযনভীর এক ছেলের নামও ছিল আব্দুল্লাহ। সরকার তাকেও পিতার সাথে বন্দী করেছিল।
[6]. ফিকহী বিষয় ভিত্তিক এই হাদীছ গ্রন্থটি ৭ম শতাব্দী হিজরীর মধ্যভাগে দিল্লীতে আসে। মুহাম্মাদ তুগলকের সময়ে (৭২৫-৫২ হিঃ/১৩২৫-৫১ খ্রিঃ) দিল্লীতে এর একটি মাত্র কপি মওজুদ ছিল। সুলতান তার রাজকর্মচারীদের পবিত্র কুরআন ও এই গ্রন্থটি স্পর্শ করে আনুগত্যের শপথ নিতেন। ড. মুহাম্মাদ ইসহাক বলেন, ‘তৎকালীন সময়ে ফিকহের জালে আবদ্ধ হিন্দুস্থান ও মধ্য এশিয়ায় এই কিতাবখানিই মাত্র ইলমে হাদীছের পতাকা উড্ডীন রেখেছিল’ (দ্র. আহলেহাদীছ আন্দোলন (পিএইচ.ডি থিসিস), পৃঃ ২৩১ ও ২২৫)।-অনুবাদক