শোকরের ছওয়াব ইচ্ছার সাথে যুক্ত নয় :
আল্লাহ তা‘আলা অনেক আমলের প্রতিদান তাঁর ইচ্ছার সাথে যুক্ত করে রেখেছেন। চাইলে তিনি ছওয়াব দিবেন, না চাইলে না দিবেন। যেমন দো‘আ কবুল করা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, بَلْ إِيَّاهُ تَدْعُونَ فَيَكْشِفُ مَا تَدْعُونَ إِلَيْهِ إِنْ شَاءَ ‘বরং তখন তো তোমরা কেবল তাঁকেই ডাকবে। অতঃপর তোমরা যে বিপদের জন্য তাঁকে ডেকেছিলে তিনি ইচ্ছা করলে তা দূরও করে দেন’ (আন‘আম ৬/৪১)।
ক্ষমা করা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, يَغْفِرُ لِمَنْ يَشَاءُ ‘তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন’ (আলে ইমরান ৩/১২৯)। রূযী প্রদান সম্পর্কে তার বক্তব্য وَاللهُ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ ‘আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রূযী দান করে থাকেন’ (বাক্বারাহ ২/২১২)। তওবা সম্পর্কে উক্ত হয়েছে,وَيَتُوبُ اللهُ عَلَى مَنْ يَشَاءُ ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তার তওবা কবুল করেন’ (তওবা ৯/১৫)।
কিন্তু ইচ্ছা যুক্ত করা ছাড়াই শোকরকে নিঃশর্তভাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, سَنَجْزِي الشَّاكِرِينَ ‘আমরা সত্বর কৃতজ্ঞ বান্দাদের পুরস্কৃত করব’ (আলে ইমরান ৩/১৪৫)। অন্য আয়াতে আছে, وَسَيَجْزِي اللهُ الشَّاكِرِينَ ‘আল্লাহ সত্বর তার কৃতজ্ঞ বান্দাদের পুরস্কৃত করবেন’ (আলে ইমরান ৩/১৪৪)। তিনি আগের মতো বলেননি যে,سيجزي الشاكرين إن شاء ‘তিনি চাইলে শোকরকারীদের অচিরেই প্রতিদান দিবেন’। অথবা বলেননি, سيجزي إن شاء الشاكرين ‘অচিরেই তিনি ইচ্ছা হ’লে শোকরকারীদের প্রতিদান দিবেন’।
শোকরকারীদের আল্লাহর গুণে বিভূষিত করা :
মহান আল্লাহ স্বয়ং নিজেকে শাকের (شَاكِرًا) ও শাকূর (شَكُورًا) নামে নামাঙ্কিত করেছেন। আবার শোকরকারীদেরও তিনি শাকের (شَاكِرِينَ) নামে অভিহিত করেছেন।
প্রিয় পাঠক, এতেই আপনি বুঝুন- শোকরকারীদের সাথে আল্লাহর মহববত কতখানি এবং তাদের মর্যাদা কত বেশী।[1]
দো‘আ কবুল হওয়া :
ইবরাহীম
বিন আদহাম (রহঃ) ছিলেন একজন বিখ্যাত সাধক। তাকে একবার বলা হয়েছিল, আমরা
দো‘আ করি কিন্তু তা কবুল হয় না কেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তার কারণ তোমরা
আল্লাহকে চেন, কিন্তু তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চল না। তোমরা রাসূলকে চেন,
কিন্তু তাঁর সুন্নাহর অনুসরণ কর না। তোমরা কুরআনকে চেন-জান, কিন্তু
তদনুযায়ী আমল কর না। তোমরা আল্লাহর নে‘মত ভোগ কর কিন্তু সেজন্য তাঁর শোকর
আদায় কর না। তোমরা জান্নাত সম্পর্কে জান, কিন্তু তা তালাশ কর না। তোমরা
জাহান্নাম সম্পর্কে জান কিন্তু তা থেকে পালাও না। তোমরা শয়তানকে চেন-জান,
কিন্তু তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে বরং তার সাথে সহমত পোষণ কর। মৃত্যুকে
তোমরা জান কিন্তু তার জন্য কোন প্রস্ত্ততি গ্রহণ কর না। তোমরা মৃতজনদের
দাফন করে থাক কিন্তু তা থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ কর না। তোমরা নিজেদের
দোষ-ত্রুটি ছেড়ে দিয়ে মানুষের দোষ-ত্রুটি ধরায় ব্যস্ত থাক। (এসব কারণে
তোমাদের দো‘আ কবুল হয় না)।[2]
মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা :
ইসলামী শরী‘আত আমাদেরকে মানুষের উপকার ও অনুগ্রহ লাভ হেতু তাদের শোকর আদায়ের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আমাদেরকে বিশেষভাবে যাদের শোকর আদায়ের আদেশ দেওয়া হয়েছে তারা হ’লেন, আমাদের মাতা-পিতা। আল্লাহ বলেন, أَنِ اشْكُرْ لِيْ وَلِوَالِدَيْكَ ‘তুমি আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও’ (লোকমান ৩১/১৪)।
আলেমগণ
বলেছেন,أَحَقُّ النَّاسِ بَعْدَ الْخَالِقِ الْمَنَّانِ بِالشُّكْرِ
وَالْإِحْسَانِ وَالْتِزَامِ البر والطاعة له وَالْإِذْعَانِ مَنْ قَرَنَ
اللهُ الْإِحْسَانَ إِلَيْهِ بِعِبَادَتِهِ وَطَاعَتِهِ وَشُكْرِهِ
بِشُكْرِهِ وَهُمَا الْوَالِدَانِ، ‘অনুগ্রহশীল সৃষ্টিকর্তার পরে যাদের
শোকর, উপকার, সদাচার, আনুগত্য ও মান্য করার প্রয়োজন সর্বাধিক তারা হ’লেন
মাতা-পিতা। আল্লাহ তা‘আলা নিজের ইবাদত-বন্দেগী, আনুগত্য ও শোকরের আদেশের
সাথে যুক্ত করে তাদের প্রতি সদাচার ও উপকার করার আদেশ দিয়েছেন’।[3]
যেমন
নবী করীম (ছাঃ) আমাদেরকে যে ব্যক্তি কারো উপকার করল তার শোকর আদায় করতে
আদেশ দিয়েছেন। জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, মহানবী (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ
أُعْطِىَ عَطَاءً فَوَجَدَ فَلْيَجْزِ بِهِ فَإِنْ لَمْ يَجِدْ فَلْيُثْنِ
بِهِ فَمَنْ أَثْنَى بِهِ فَقَدْ شَكَرَهُ وَمَنْ كَتَمَهُ فَقَدْ كَفَرَهُ
‘যাকে কোন উপহার দেওয়া হয়েছে সামর্থ্য থাকলে সে যেন তার প্রতিদান (উপহারের
বিনিময়ে উপহার) দেয়। আর যদি সামর্থ্য না থাকে তাহ’লে সেজন্য যেন তার
প্রশংসা করে। যে (উপহারের বিনিময়ে) উপহারদাতার প্রশংসা করে সে তার শোকর
আদায় করে। আর যে তা (উপহারের কথা) লুকিয়ে রাখে সে তার প্রতি অকৃতজ্ঞতা
প্রকাশ করে’।[4]
অতএব হে বন্ধু! তুমি যদি
প্রতিদান দেওয়ার সামর্থ্য না রাখ তাহ’লে দাতার প্রশংসা করো। যেমন তুমি মুখে
বল,جَزَاكَ اللهُ خيْرًا ‘আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন’। কেননা দো‘আ
শোকরের একটি মাধ্যম। বলা হয়েছে, من
قصرت يداه عن المكافآت فليطل لسانه بالشكر ‘প্রতিদান দানে যার দু’টি হাত খাটো, সে যেন শোকরের ভাষা বর্ণনায় তার জিহবা দীর্ঘ করে’।
মানুষের
শোকরের বা কৃতজ্ঞতার একটি দিক উপহারের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করা।
আল-মুনাভী (রহঃ) বলেছেন,ومن تمام الشكر أن يستر عيوب العطاء ولا يحتقره
‘শোকরের পরিপূর্ণতার মধ্যে রয়েছে প্রাপ্ত উপহারের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা এবং
তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করা’।[5]
আবার মানুষের শোকর আদায়ের সাথে আল্লাহর শোকর আদায় যুক্ত করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَشْكُرُ اللهَ مَنْ لاَ يَشْكُرُ النَّاسَ ‘যে ব্যক্তি মানুষের শোকর আদায় করে না, সে আল্লাহর শোকর আদায় করে না’।[6] হাদীছটির মর্মার্থ হ’ল : বান্দা আল্লাহর প্রতি যে শোকর প্রকাশ করে তা তিনি কবুল করেন না যখন সে তার প্রতি মানুষের করা অনুগ্রহের শোকর প্রকাশ করে না। অথবা উহার অর্থ এই যে, মানুষের অকৃতজ্ঞ হওয়া যার স্বভাব ও অভ্যাস, মানুষের স্রষ্টার প্রতি অকৃতজ্ঞ হওয়াও তার স্বভাবে অচিরেই প্রকাশ পাবে।
এখানে মানুষের শোকর ও রবের শোকরের মধ্যে তফাত রয়েছে। রবের শোকরের মধ্যে রয়েছে নত হওয়া, ছোট হওয়া, উবূদিয়াত বা দাসত্ব করা। আর মানুষের শোকর হ’ল, তার অনুগ্রহের বদলা দেওয়া, তার জন্য দো‘আ করা, তার প্রশংসা করা ইত্যাদি। মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে তার সামনে নত হওয়া, নিজের তুচ্ছতা যাহির করা ও উবূদিয়াত বা দাসত্ব করা মোটেও বৈধ হবে না।
জনৈক ব্যক্তি বলেছেন,
‘তোমার থেকে যে ঊর্ধ্বে- অর্থাৎ আল্লাহ তাঁর শোকর হবে আনুগত্য দ্বারা, যে
তোমার সমান তার শোকর হবে প্রতিদান দ্বারা, আর যে তোমার নীচে তার শোকর হবে
উপকার করা দ্বারা’।[7]
তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা
হ’লেন সার্বিক ও পরিপূর্ণ শোকর লাভের যোগ্য। পক্ষান্তরে বান্দা সীমিত
কৃতজ্ঞতার অধিকারী। আল্লাহই তাকে যতটুকু কল্যাণ করার সুযোগ করে দিয়েছেন, তা
করার দরুন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হচ্ছে। যেমন সন্তান প্রতিপালনের জন্য
মাতা-পিতার কৃতজ্ঞতা, শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষকের কৃতজ্ঞতা ইত্যাদি।[8]
সুতরাং মাখলূকের কৃতজ্ঞতা প্রকাশে সৃষ্টিকর্তার কৃতজ্ঞতায় কোনই সমস্যা তৈরী হয় না। সমস্যা হয় তাকে নিয়ে যে মাখলূকের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার শোকর আদায় করে না। আর মুছীবত তো এখানেই।
মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা দাবী করা :
একজন মুসলিম যখন তার কোন ভাইয়ের উপকার করে তখন তার জন্য ঐ ভাইয়ের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা লাভের অপেক্ষায় থাকা উচিত নয়। সে বরং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ছওয়াব ও প্রতিদান লাভ এবং ঐ ভাইয়ের থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করার অপেক্ষায় থাকবে। উপকৃত ব্যক্তি থেকে যদি সে কৃতজ্ঞতা লাভের আশায় উপকার করে তাহ’লে সে হয়ে পড়বে রিয়াকারী এবং খ্যাতি প্রত্যাশী (যা সম্পূর্ণ হারাম এবং ছোট শিরক বলে খ্যাত)। আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমরা এহেন আচরণ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য আশ্রয় চাই।
বিজ্ঞজনরা তো বরং উপকারকারীর মাঝে প্রশংসা লাভের বাসনা
অাঁচ করা গেলে উপকৃত ব্যক্তির জন্য তার সামনে প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
উচিত হবে না বলেছেন। কেননা কৃতজ্ঞতা দাবী করা এক প্রকার যুলুম। আর আমাদেরকে
যুলুমের কাজে সহযোগিতা করতে নিষেধ করা হয়েছে।[9]
নে‘মতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা :
অকৃতজ্ঞতা (الْكُفْر) কৃতজ্ঞতা (الشُّكْر)-এর বিপরীত শব্দ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের যেসব নে‘মত দিয়েছেন সে সবের প্রতি অকৃতজ্ঞতা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সাবধান করে দিয়েছেন। এজন্যই সালাফে ছালেহীন আল্লাহর কোন নে‘মত ভোগ করে তার প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ হয়ে যায় কি না তা নিয়ে প্রায়শই তটস্থ থাকতেন।
খলীফা
ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ)-কে দেখুন তিনি আল্লাহ তা‘আলার দেওয়া কোন
নে‘মতের মাঝে যখন চোখ বুলাতেন তখন এই বলে দো‘আ করতেন,اللَّهُمَّ أَعُوْذُ
بِكَ أَنْ أُبَدِّلَ نِعْمَتَكَ كُفْرًا، أَوْ أَكْفُرَهَا بَعْدَ
مَعْرِفَتِهَا، أَوْ أَنْسَاهَا فَلاَ أُثْنِيَ بِهَا- ‘হে আল্লাহ! আমি
তোমার আশ্রয় চাচ্ছি তোমার দেওয়া নে‘মতকে অকৃতজ্ঞতায় রূপান্তর করা থেকে অথবা
নে‘মতকে জানা-বুঝার পর গোপন করে ফেলা থেকে অথবা নে‘মতের কথা ভুলে যাওয়ায়
তার প্রশংসা না করা থেকে’।[10]
কোন কোন মানুষ কিছু কিছু অবস্থায় নে‘মতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা দেখিয়ে থাকে। এরূপ কিছু অবস্থা নিম্নে তুলে ধরা হ’ল :
বিপদকালে অকৃতজ্ঞতা :
আল্লাহ
তা‘আলা এরশাদ করেন,وَلَئِنْ أَذَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنَّا رَحْمَةً ثُمَّ
نَزَعْنَاهَا مِنْهُ إِنَّهُ لَيَئُوْسٌ كَفُوْرٌ- ‘আর যদি আমরা মানুষকে
আমাদের রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই। অতঃপর তার থেকে আমরা তা ছিনিয়ে নেই, তখন
সে নিরাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে’ (হূদ ১১/৯)। ইবনু জারীর
বলেন,كَفُوْرٌ لِمَنْ أَنْعَمَ عَلَيْهِ، قَلِيْلُ الشُّكْرِ لِرَبِّهِ
الْمُتَفَضِّلُ عَلَيْهِ بِمَا كَانَ وَهَبَ لَهُ مِنْ نِعْمَتِهِ- ‘যে তার
উপর নে‘মত বর্ষণ করেছে (আল্লাহ) তাকে সে অনুগ্রহকারী বলে স্বীকার করতে
পারে না, বরং তার অনুগ্রহকারী প্রভুর কৃতজ্ঞতা সে অল্পই প্রকাশ করে’।[11]
আর যখন কোন মানুষ জানবে বুঝবে যে, তার জীবনে দেখা দেওয়া বিপদ-আপদ তারই অপরাধের কারণে হয়েছে, তখন সে বরং পাপ মোচনের সুযোগ পেয়ে আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং নিজের মনকে ত্রুটির জন্য ভৎর্সনা করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيْبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلاَ فِيْ أَنْفُسِكُمْ إِلاَّ فِيْ كِتَابٍ مِّنْ قَبْلِ أَنْ نَّبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ- لِكَيْلاَ تَأْسَوْا عَلَى مَا فَاتَكُمْ وَلاَ تَفْرَحُوْا بِمَا آتَاكُمْ وَاللهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ-
‘না যমীনের বুকে নেমে আসা কোন মুছীবত, না তোমাদের নিজেদের মধ্যে দেখা দেওয়া কোন বিপদ এমন আছে যা আমা কর্তৃক অস্তিত্বদানের পূর্বেই একটি গ্রন্থে লেখা নেই। এ কাজ আল্লাহর জন্য খুব সহজ। এ লিখে রাখা এজন্য যে, তোমাদের (জীবন থেকে) যা ছুটে গেছে সেজন্য যেন তোমরা আফসোস না করো এবং তিনি তোমাদের যা মিলান সেজন্য দুর্বীনিত অহংকারী না হও। আল্লাহ কোন উদ্ধত অহংকারীকে ভালবাসেন না’ (হাদীদ ৫৭/২৩)।
এদিকে
আল্লাহ তা‘আলা ‘কানূদ’ (كَنُوْدٌ)-এর নিন্দা করেছেন। কানূদ ঐ ব্যক্তি যে
বিপদে পড়ে নে‘মতের কথা ভুলে যায়। হাসান বাছরী (রহঃ) আল্লাহর বাণী সম্পর্কে
বলেছেন, إِنَّ الْإِنْسَانَ لِرَبِّهِ لَكَنُوْدٌ ‘নিশ্চয়ই মানুষ তার
পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ’ (আদিয়াত ১০০/৬)। মানুষ তার উপর আপতিত মুছীবতগুলো গণনা করে কিন্তু তাকে প্রদত্ত নে‘মত সমূহের কথা ভুলে যায়।[12]
আজকের দিনে হে পাঠক! আপনি যদি কোন ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করেন যার আয় ছিল লাখ টাকা যা এখন পঞ্চাশ হাযারে এসে দাঁড়িয়েছে। আর আপনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, অবস্থা কেমন যাচ্ছে? তখন সে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলবে, বেচা-কেনা একেবারে নেই। খুব লসের মধ্যে কালাতিপাত করছি। অথচ তার কর্তব্য ছিল সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা করা।
এ বিষয়টা মেয়েদের বেলায় আরো বেশী স্পষ্ট। আপনি যদি তাদের কারো যুগ যুগ ধরে উপকার করেন আর তারপর সে আপনার থেকে কোন একটা ত্রুটি দেখতে পায়, তাহ’লে সে বলে বসে যে, আমি তোমার থেকে ভাল কিছু কখনো হ’তে দেখলাম না। এমন মন্তব্য বড় স্বৈরাচারমূলক। জাহান্নামীদের অধিকাংশই হবে মহিলা। তার কারণ তারা স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। অতএব স্বামীর নে‘মতের শোকর ত্যাগের জন্য যখন জাহান্নামে যেতে হচ্ছে, তখন যারা আল্লাহর নে‘মতের শোকর ত্যাগ করে তাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে একবার ভাবুন।
ছবর ও শোকর :
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন,الْإِيْمَانُ نِصْفَانِ نِصْفٌ صَبْرٌ وَنِصْفٌ شُكْرٌ ‘ঈমান দু’ভাগে বিভক্ত। অর্ধেক শোকর, আর অর্ধেক ছবর’।[13] বিদ্বানমন্ডলী ধৈর্যশীল দরিদ্র ও শোকরকারী ধনীর মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে মতভেদ করেছেন। কোন কোন বিদ্বানের মতে নিরাপত্তা ও সুস্থতার সাথে শোকর বালা-মুছীবতে পতিত হয়ে ধৈর্য ধরা থেকে শ্রেয়।
মুতার্রিফ বিন
আব্দুল্লাহ বলেন,لَأَنْ أُعَافَى فَأَشْكُرَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ
أُبْتَلَى فَأَصْبِرَ- ‘আমি নিরাপদ ও সুস্থ থেকে শোকর আদায় করি এহেন অবস্থা
আমার নিকট আমার ঐ অবস্থা থেকে বেশী পসন্দনীয় যাতে আমি মুছীবতে পতিত হয়ে
ছবর করি’।[14]
অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন, ‘যদি আমি নে‘মত পেয়ে শোকর করতে সমর্থ হই, তাহ’লে তা আমার মুছীবতের শিকার হয়ে ছবর করা থেকে উত্তম হবে’। আর নবী করীম (ছাঃ)ও উপদেশ দিয়েছেন যে, سَلُوا اللهَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ ‘তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা এবং সুস্থ-নিরাপদ জীবনের জন্য দো‘আ করো’।[15] তিনি আমাদেরকে আল্লাহর নিকট বালা-মুছীবত চাইতে এবং তাতে ধৈর্য ধরার সামর্থ্যের জন্য দো‘আ করার উপদেশ দেননি।
আবার
কোন কোন বিদ্বান বালা-মুছীবতে ধৈর্য ধারণকে সুস্থ-নিরাপদ থেকে শোকর আদায়
অপেক্ষা শ্রেয় বলেছেন। তবে বাহ্য দৃষ্টিতে দেখলে শোকর ও ছবর উভয়ই তাদের
অধিকারীর জন্য উত্তম। ধনীর জন্য শোকর উত্তম এবং গরীবের জন্য ছবর উত্তম। আবু
সাহল আছ-ছা‘লূকীকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, ‘শোকর ও ছবরের মধ্যে কোনটি উত্তম?
তিনি বললেন, ক্ষেত্র অনুসারে উভয়ই সমান। শোকর হ’ল সুখের সময় পালনীয় আর ছবর
হ’ল দুঃখ-কষ্টে পালনীয়’।[16]
মুছীবতে শোকর :
মুছীবতে ছবর করা থেকে যদি আল্লাহর শোকর ও প্রশংসা করা হয় তাহ’লে সেটাই হবে সবচেয়ে উঁচু স্তরের কাজ। কবি বলেন,
أزيحت لنفسي علتاها فأعرضت
عن البث والشكوى الى الشكر والحمد
‘মুছীবতের পাহাড় যখন চেপে বসে আমার পরে
দুঃখ-ব্যথায় পাশ কাটিয়ে শোকর করি প্রভুর তরে’।
মুছীবতও
আসলে নে‘মতশূন্য নয়। তাইতো মুছীবতেও শোকর করা কর্তব্য। ইমামুল হারামাইন
আবু আলী আল-জুওয়াইনী (রহঃ) বলেন,شدائد الدنيا مما يلزم العبد الشكر عليها
لأنها نعم بالحقيقة، بدليل أنها تعرض العبد لمنافع عظيمة ومثوبات جزيلة
وأغراض كريمة تتلاشى في جنبها شدائد- ‘দুনিয়ার বিপদাপদ বান্দার পক্ষে শোকর
আদায়েরই বিষয়। এগুলোও প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর নে‘মত। তার প্রমাণ এই যে,
বিপদাপদ বান্দার জন্য অনেক অনেক উত্তম কল্যাণ, প্রচুর ছওয়াব ও মহৎ উদ্দেশ্য
বয়ে আনে, যার তুলনায় আপতিত বালা-মুছীবত কিছুই না’।[17]
শুরাইহ (রহঃ) বলেছেন,ما أصيب عبد بمصيبة إلا كان لله عليه فيها ثلث نعم إلا يكون في دينه وأن لا تكون أعظم مما كانت وأنها لا بد كائنة فقد كانت- ‘যে কোন বান্দাকে একটি মুছীবত স্পর্শ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাতে তার জন্য তিনটি নে‘মত অবশ্যই থাকে। (১) মুছীবতটা তার দ্বীন সংক্রান্ত নয় (২) যে মুছীবত চেপেছে তার থেকেও বড় মুছীবত চাপতে পারত, কিন্তু তা চাপেনি। (৩) মুছীবতটা অবশ্যই হওয়ার কথা ছিল এবং তা হয়ে গেছে’।[18] সুতরাং বান্দা যখন এসব কথা জানতে পারল, তখন আগত মুছীবতে এই ভেবে সে শোকর করবে যে, মুছীবতটা তার দ্বীন-ধর্ম সংক্রান্ত নয়, যা হয়েছে তার থেকে বড় বিপদ তো হয়নি এবং বিপদটা হয়ে তার শেষও হয়ে গেছে।
মুছীবতের ভাল দিকগুলো চিন্তা করতে পারলে মুছীবতেও শোকর করা যায়। যেমন মুছীবতগ্রস্ত ব্যক্তি আগত মুছীবতের বিনিময়ে ছওয়াব পেয়ে থাকে।
ইমাম
গাযালী (রহঃ) বলেন,ومن لا يؤمن بأن ثواب المصيبة أكبر من المصيبة لم يتصور
منه الشكر على المصيبة ‘মুছীবত থেকে মুছীবতের ছওয়াব অনেক বড় ও বেশী বলে
আস্থাশীল নয় তার থেকে মুছীবতে শোকর আশা করা যায় না’।[19]
উপসংহার :
আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নানা নে‘মত দ্বারা আমাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন। সুতরাং হে পাঠকবৃন্দ! আপনারা তার ইবাদত-বন্দেগীতে তার সঙ্গে কাউকে শরীক করবেন না, বরং এককভাবে কেবল তারই শোকর ও ইবাদত করবেন।
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে শোকরকারী মানুষের সংখ্যা কম বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন,وَقَلِيْلٌ مِنْ عِبَادِيَ الشَّكُوْرُ- ‘বস্ত্ততঃ আমার বান্দাদের মধ্যে কৃতজ্ঞদের সংখ্যা খুবই কম’ (সাবা ৩৪/১৩)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,إِنَّ اللهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَشْكُرُوْنَ- ‘বস্ত্ততঃ আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না’ (বাক্বারাহ ২/২৪৩)।
মহান
খলীফা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) একবার এক লোককে এই বলে দো‘আ করতে শুনলেন
যে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে স্বল্পসংখ্যকদের অন্তর্ভুক্ত কর। তিনি তাকে
বললেন, এটা কী দো‘আ? সে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আল্লাহ তা‘আলা তো বলেছেন,
وَمَا آمَنَ مَعَهُ إِلاَّ قَلِيْلٌ ‘আর অল্প কয়েকজন ব্যতীত কেউই তার সাথে
ঈমান আনেনি’ (হূদ ১১/৪০)। তিনি বলেন, وَقَلِيْلٌ مِنْ عِبَادِيَ الشَّكُوْرُ ‘বস্ত্ততঃ আমার বান্দাদের মধ্যে কৃতজ্ঞদের সংখ্যা খুবই কম’ (সাবা ৩৪/১৩)।
তিনি আরও বলেন,إِلاَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَاتِ
وَقَلِيْلٌ مَا هُمْ- ‘তবে তারা ব্যতীত যারা আল্লাহর উপরে বিশ্বাস স্থাপন
করে ও সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করে। আর তারা সংখ্যায় কম’ (ছোয়াদ ৩৮/২৪)। ওমর (রাঃ) শুনে বললেন, তুমি সত্য বলেছ’।[20]
এর কারণ, অভিশপ্ত ইবলীস শয়তান লা‘নতপ্রাপ্ত হওয়ার সময় তার কাঁধে এই দায়িত্ব তুলে নিয়েছিল যে, সে মানুষকে গোমরাহ করবে এবং তাদেরকে শোকর করতে বাধা দিবে। তার কথা কুরআনে এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে,ثُمَّ لَآتِيَنَّهُمْ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيْهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَائِلِهِمْ وَلاَ تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِيْنَ- ‘অতঃপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে আসব তাদের সামনে, পিছনে, ডাইনে, বামে, সবদিক থেকে। আর তখন আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’ (আ‘রাফ ৭/১৭)। ইবলীস শোকরের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব ঠিকই বুঝেছিল। সেজন্যই মানবজাতিকে সে শোকর আদায়ে বাধা দিতে প্রতিজ্ঞা করেছে।
জনৈক
ব্যক্তি বলেছেন,لو علم الشيطان أن طريقا توصل إلى الله أفضل من الشكر لوقف
فيها ‘শয়তান যদি জানত আল্লাহর নিকট পৌঁছার জন্য শোকর থেকে শ্রেষ্ঠ কোন পথ
আছে, তাহ’লে সেই পথেই সে অবস্থান নিত’।[21]
এজন্যই
শোকর আদায় মহা কঠিন কাজের অন্তর্ভুক্ত। আল্লামা আলূসী (রহঃ) বলেন,وذكر أن
توفية شكر الله تعالى صعبة ولذلك لم يثن سبحانه بالشكر على أحد من أوليائه
إلا على اثنين نوح وإبراهيم عليهما السلام ‘বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর শোকর
পুরোপুরি আদায় করা একটা কঠিন ব্যাপার। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অলীদের
মধ্য হ’তে কেবল নূহ (আঃ) ও ইবরাহীম (আঃ) ছাড়া আর কারো শোকরের জন্য প্রশংসা
করেননি’।[22]
সূরা বালাদের ৪নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِيْ كَبَدٍ ‘নিশ্চয়ই আমরা সৃষ্টি করেছি মানুষকে শ্রমনির্ভর রূপে’। এ প্রসঙ্গে হাসান বছরী (রহঃ) বলেন, يُكَابِدُ الشُّكْرَ عَلَى السَّرَّاءِ وَيُكَابِدُ الصَّبْرَ عَلَى الضَّرَّاءِ ‘সে সুখের দিনে সচ্ছল অবস্থায় মেহনত করে শোকর আদায় করে এবং দুঃখের দিনে কষ্টের অবস্থায় মেহনত করে ধৈর্য ধারণ করে’।[23] সুতরাং যথার্থ শোকর করতে হ’লে অনেক চেষ্টা ও কষ্ট-ক্লেশ সইতে হবে।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে তাওফীক দিন- আমরা যেন সঠিক কথার নাগাল পাই এবং আপনার গ্রন্থ ও আপনার নবীর সুন্নাহ মযবূত করে অাঁকড়ে ধরি, আর আপনি আমাদের উপর যেসব অনুগ্রহ করেছেন আমরা যেন তার শোকর আদায় করতে পারি সে সামর্থ্য আমাদের দিন। যেভাবে শোকর করলে আপনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট হন সেভাবে শোকর আদায়ের ক্ষমতা দিন। আর আমাদেরকে ইবলীসের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করুন। নিশ্চয়ই আপনি দো‘আ শ্রবণকারী, অতি নিকটে সাড়া দানকারী। আর আল্লাহ রহম করুন নিরক্ষর নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর ছাহাবীগণের সকলের উপর, সেই সঙ্গে তাঁদের সকলের উপর অজস্র সংখ্যায় শান্তি বর্ষণ করুন- আমীন!
[1]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন ২/২৪২-২৪৪।
[2]. তাফসীরে কুরতুবী ২/৩০৩ পৃঃ।
[3]. তাফসীরে কুরতুবী ৫/১৭১।
[4]. আবুদাঊদ হা/৪৮১৩; তিরমিযী হা/২০৩৪; মিশকাত হা/৩০২৩; ছহীহাহ হা/৬১৭।
[5]. মুনাভী, ফায়যুল কাদীর ৬/২২।
[6]. আবুদাঊদ হা/৪৮১১; তিরমিযী হা/১৯৫৪; মিশকাত হা/৩০২৫।
[7]. আলূসী, রূহুল মা‘আনী ১/২৫৮।
[8]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ১৪/৩৩৯।
[9]. ইমাম নবভী, আল-আযকার, পৃঃ ৬১৫।
[10]. শু‘আবুল ঈমান হা/৪৫৪৫।
[11]. তাফসীরে ত্বাবারী ৭/৯ পৃঃ।
[12]. তাফসীর ইবনু কাছীর ৪/৭০০ পৃঃ।
[13]. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৪/৩০৪।
[14]. শু‘আবুল ঈমান হা/৪৪৩৫; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২০৪৬৮।
[15]. তিরমিযী হা/৩৫৫৮, হাদীছটি তাঁর মতে হাসান।
[16]. সূয়ূতী, আদ-দুররুল মানছূর ১/৩৭১।
[17]. মানাবী, ফায়যুল ক্বাদীর ২/১৩৩।
[18]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশক ২৩/৪২।
[19]. গাযালী, এইহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৪/১৩১।
[20]. ইমাম আহমাদ, আয-যুহদ, পৃ. ১১৪।
[21]. ফায়যুল ক্বাদীর ১/৫২৬।
[22]. রুহুল মা‘আনী ১৩/১৮৯।
[23]. তাফসীরে কুরতুবী ২০/৫৬।