ভূমিকা :
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর পৃথিবী হচ্ছে কষ্ট-ক্লেশের স্থান। কষ্টের অন্যতম দিক হ’ল রোগ-ব্যাধি। মানব জীবনে রোগ-শোক নিত্যকার ঘটনা। রোগ এমন এক ভয়াবহ জিনিস, যাতে আক্রান্ত হয়ে অহংকারী ব্যক্তিও শক্তিহীন হয়ে পড়ে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য পরীক্ষা। যাতে মানুষ রোগ-শোকে নিজের অসহায়ত্ব অনুভব করতে পারে এবং মহান আরোগ্যদাতা আল্লাহর দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে নিজেকে তাঁরই কাছে সোপর্দ করে। আমরা সাধারণত দুই ধরনের রোগে আক্রান্ত হই। (ক) মানসিক রোগ ও (খ) দৈহিক রোগ। বক্ষমাণ নিবন্ধে আমরা দৈহিক রোগের ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
সুস্থতা আল্লাহর এক অনন্য নে‘মত :
সুস্থতা শব্দটি রোগের সাথেই সম্পৃক্ত। আমাদের জীবনে রোগ ও সুস্থতা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। যা পালাক্রমে আগমন করে। আল্লাহ এজন্য রোগ দেন যে, মানুষ যেন রোগের মাধ্যমে সুস্থতার গুরুত্ব অনুভব করে এবং মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ করে। কারণ রোগ যেমন দেহের সজীবতা ম্লান করে দেয়, তেমনি মৃত্যু জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটায়। জান্নাতপিয়াসী আল্লাহর বানদাগণ মৃত্যুর আগেই আখেরাতের চিরসুখের জন্য জীবনের সময়গুলোকে তাঁরই পথে ব্যয় করে। আর জীবনের সুস্থতার সময়গুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য এক মহামূল্যবান নে‘মত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيْهِمَا كَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ: الصِّحَّةُ وَالفَرَاغُ، ‘দু’টি নে‘মতের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই ধোঁকায় পতিত হয়। আর তা হচ্ছে সুস্থতা ও অবসর’।[1] বান্দার প্রতি আল্লাহর সবচেয়ে বড় নে‘মত হ’ল এই সুস্থতা। কারণ সুস্থ না থাকলে আল্লাহর কোন নে‘মতই ভালভাবে উপভোগ করা যায় না। আল্লাহ যাকে সুস্থতা দান করেন, তার মাঝে যেন পৃথিবীর সমুদয় কল্যাণ কেন্দ্রীভূত হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمْ آمِنًا فِي سِرْبِهِ مُعَافًى فِي جَسَدِهِ عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ فَكَأَنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا، ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয়, সুস্থ শরীরে দিনাতিপাত করে এবং তার নিকট সারা দিনের খাদ্য থাকে, তবে তার মাঝে যেন দুনিয়ার সকল কল্যাণ একত্রিত করা হ’ল’।[2]
রোগ আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা :
জীবন মানেই পরীক্ষা। জীবনের পরতে পরতে মানুষকে দুঃখ-দুর্দশার সম্মুখীন হ’তে হয়। অমুসলিমদের নিকটে এই দুঃখ-কষ্টগুলো অতিশয় যাতনার। কিন্তু মুসলিমদের দুনিয়াবী কষ্টগুলো এক ধরনের পরীক্ষা এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার উপায়। কারণ আল্লাহ যাকে যত বেশী ভালবাসেন তাকে তত বেশী পরীক্ষা করে থাকেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ যাচাই করেন, কারা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ, আর কারা অকৃতজ্ঞ। কারা বিপদে ধৈর্য ধারণ করে, আর কারা অধৈর্য হয়ে পড়ে। মুমিন বান্দারা যখন এই পরীক্ষার ময়দানে ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে পারেন, তখন মহান আল্লাহ তাদেরকে অপরিমেয় পুরস্কারে ভূষিত করেন। তাদের পাপ মোচন করেন এবং জান্নাতে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ- الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ- أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ، ‘আর অবশ্যই আমরা তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন ও প্রাণের ক্ষতির মাধ্যমে এবং ফল-শস্যাদি বিনষ্টের মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যাদের কোন বিপদ আসলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকে ফিরে যাব। তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে রয়েছে অফুরন্ত দয়া ও অনুগ্রহ। আর তারাই হ’ল সুপথপ্রাপ্ত’ (বাক্বারাহ ২/১৫৫-১৫৭)।
আল্লাহ আমাদেরকে কখনো সুখ-শান্তি দিয়ে পরীক্ষা করেন। আবার কখনো রোগ-ব্যাধি দিয়ে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ বলেন, وَنَبْلُوكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ ‘আর আমরা তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমাদের কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে (অতঃপর আমরা যথাযথ প্রতিফল দেব)’ (আম্বিয়া ২১/৩৫)। ইবনে আববাস (রাঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘ভাল-মন্দের মাধ্যমে পরীক্ষা করার অর্থ হ’ল কষ্ট-সুখ, সুস্থতা-অসুস্থতা, সচ্ছলতা-দরিদ্রতা, হালাল-হারাম, আনুগত্য-অবাধ্যতা, হেদায়াত-পথভ্রষ্টতা প্রভৃতির মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করে থাকেন’।[3] এজন্য জীবনে আরাম-আয়েশ, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এলে প্রত্যেক মুসলিমের উচিত সর্বাগ্রে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং বিপদ এলে ধৈর্য ধারণ করা। দুনিয়াবী সুখ-শান্তি দেখে কারো এমনটি ভাবা উচিত হবে না যে, তার ধার্মিকতা ও সদাচরণের কারণেই আল্লাহ তাকে ঐশ্বর্য দান করেছেন। উপরন্তু আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণ দুনিয়াবী আরাম-আয়েশ খুব কমই ভোগ করতে পারেন। কারণ তাদের নিকটে আখেরাতের চির শান্তির তুলনায় পার্থিব সুখ মূল্যহীন। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الدُّنْيَا سِجْنُ الـمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الكَافِرِ، ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার এবং কাফেরের জন্য জান্নাত স্বরূপ’।[4] অর্থাৎ কারাগারে মানুষ যেভাবে বাস করে আল্লাহর মুমিন বান্দারা দুনিয়াতে সেভাবে বাস করে। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ নবী-রাসূলগণ। কারণ তাঁরা পৃথিবীতে সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ ছিলেন। তথাপি তাঁরাই ছিলেন এই পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদগ্রস্থ ও নির্যাতিত মানুষ। সালাফগণ বলেন, لولا مصائب الدنيا لوردنا القيامة مفاليس ‘যদি আমাদের উপর দুনিয়ার বিপদাপদ না থাকত, তাহ’লে ক্বিয়ামতের দিন আমরা নিঃস্ব অবস্থায় উপস্থিত হতাম’।[5]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লে আমি তাঁকে দেখতে গেলাম এবং আলাপচারিতার ফাঁকে বললাম,
يَا رَسُولَ اللهِ أَيُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلَاءً؟ قَالَ: الْأَنْبِيَاءُ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: ثُمَّ الصَّالِحُونَ، إِنْ كَانَ أَحَدُهُمْ لَيُبْتَلَى بِالْفَقْرِ، حَتَّى مَا يَجِدُ أَحَدُهُمْ إِلَّا الْعَبَاءَةَ يَحُوبُهَا، وَإِنْ كَانَ أَحَدُهُمْ لَيَفْرَحُ بِالْبَلَاءِ، كَمَا يَفْرَحُ أَحَدُكُمْ بِالرَّخَاءِ-
‘হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে সর্বাধিক বিপদগ্রস্থ কে? তিনি বললেন, ‘নবীগণ’। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বললেন, ‘সৎকর্মশীল বান্দাগণ। তাদের কেউ কেউ এতটা দারিদ্রপীড়িত হয়ে পড়ত যে শেষ পর্যন্ত তার কাছে পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া আর কিছু থাকে না। তবুও তাদের কেউ বিপদে এতটা প্রশান্ত ও উৎফুল্ল থাকে, যেমন তোমাদের কেউ ধন-সম্পদ প্রাপ্তিতে আনন্দিত হয়ে থাকে’।[6] বোঝা গেল, বিপদ বা রোগ-শোকের ঝাপটা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের উপর বেশী আঘাত হানে, যাতে বান্দা রোগের কষ্টের বিনিময়ে পাপ মুক্ত হ’তে পারে। হযরত আইয়ুব (আঃ) রোগাক্রান্ত হয়ে কতই না কষ্ট সহ্য করেছিলেন, বিনিময়ে আল্লাহ তাঁকে মহা পুরস্কারে ধন্য করেছেন। সুতরাং আল্লাহর নেককার বান্দার জীবনে পরীক্ষা আসবেই। কখনো রোগ দিয়ে, কখনো দরিদ্রতা দিয়ে, কখনো সম্পদ দিয়ে, কখনো সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে। আবার কখনো হালাল বস্ত্ত দিয়েও আল্লাহ বান্দাকে পরীক্ষা করে থাকেন। দুনিয়ায় রোগ-শোকের বিবিধ পরীক্ষার কণ্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়েই আখেরাতে সফলতার স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করা সম্ভব হয়।
রোগাক্রান্ত হওয়ার উপকারিতা
1. রোগের মাধ্যমে বান্দার পাপ ক্ষমা হয় :
মুমিন বান্দার জীবনে রোগ একটি রাবারের মত, যার মাধ্যমে তার হৃদয় শ্লেটের সকল পাপের কালিমা মুছে দেওয়া হয়। আল্লাহ বলেন, وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ، ‘তোমাদের যেসব বিপদাপদ হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মের ফল। আর তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ মার্জনা করে দেন’ (শূরা ৪২/৩০)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَـا يُصِيبُ المـسْلِمَ، مِنْ نَصَبٍ وَلا وَصَبٍ، وَلا هَـمٍّ وَلا حُزْنٍ وَلا أذىً وَلا غَمٍّ، حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا، إِلا كَفَّرَ اللهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ ‘মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমনকি তার দেহে যে কাঁটা ফুটে, এসবের বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন’।[7]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘উদ (রাঃ) বলেন, ‘আমি একদিন আল্লাহর রাসূলের কাছে গেলাম। তিনি তখন জ্বরাক্রান্ত ছিলেন। আমি তাঁকে আমার হাতে স্পর্শ করে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার তো ভীষণ জ্বর? তিনি বললেন, হ্যাঁ! তোমাদের দু’জন ব্যক্তি যতটুকু জ্বরাক্রান্ত হয়, আমি একাই ততটুকু জ্বরে আক্রান্ত হই। আমি বললাম, এজন্য তো আপনার দ্বিগুণ ছওয়াব হবে? তখন তিনি বললেন, مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى مِنْ مَرَضٍ، فَمَا سِوَاهُ إِلَّا حَطَّ اللهُ بِهِ سَيِّئَاتِهِ، كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا ‘কোন মুসলিম ব্যক্তি রোগ-ব্যাধি বা অন্য কোন মাধ্যমে কষ্টে পতিত হ’লে, আল্লাহ এর দ্বারা তার পাপগুলোকে এমনভাবে মুছে দেন, যেমনভাবে গাছ থেকে পাতাগুলে ঝরে পড়ে’।[8]
মহিলা ছাহাবী উম্মুল ‘আলা বলেন, একবার আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাকে দেখতে এসে (আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে) বললেন,أَبْشِرِي يَا أُمَّ الْعَلَاءِ، فَإِنَّ مَرَضَ الْمُسْلِمِ يُذْهِبُ اللهُ بِهِ خَطَايَاهُ، كَمَا تُذْهِبُ النَّارُ خَبَثَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ ‘হে ‘আলার মা! সুসংবাদ গ্রহণ করো, আগুন যেভাবে সোনা-রূপার ময়লা দূর করে দেয়, তদ্রূপ মহান আল্লাহ মুসলিম বান্দার রোগের মাধ্যমে তার পাপগুলোকে দূর করে দেন’।[9] অপর বর্ণনায় তিনি বলেন,مَا يَزَالُ البَلَاءُ بِالـمُؤْمِنِ وَالـمُؤْمِنَةِ فِي نَفْسِهِ وَوَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى اللهَ وَمَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ ‘মুমিন নর-নারীর জীবনে এবং তার সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদের উপর অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। অবশেষে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করে’।[10] তবে এই ফযীলত শুধু মুমিন বান্দাদের জন্য। কেননা মুমিন ও পাপীর রোগ-ব্যাধির তাৎপর্য ব্যতিক্রমধর্মী। একদিন সালমান (রাঃ) কিন্দায় এক রোগীকে দেখতে গিয়ে তাকে বলেন,أَبْشِرْ، فَإِنَّ مَرَضَ الْمُؤْمِنِ يَجْعَلُهُ اللهُ لَهُ كَفَّارَةً وَمُسْتَعْتَبًا، وَإِنَّ مَرَضَ الْفَاجِرِ كَالْبَعِيرِ عَقَلَهُ أَهْلُهُ ثُمَّ أَرْسَلُوهُ، فَلَا يَدْرِي لِمَ عُقِلَ وَلِمَ أُرْسِلَ ‘তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর! কেননা আল্লাহ মুমিন বান্দার রোগকে তার গুনাহ সমূহের কাফফারা ও অনুশোচনার মাধ্যম করে দেন। আর পাপাচারী লোকের রোগ-ব্যাধি সেই উটের মত, যাকে তার মালিক বেঁধে রাখল। অতঃপর ছেড়ে দিল। অথচ সে জানতে পারল না- কেন তাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং কেনইবা তাকে ছেড়ে দেওয়া হ’ল’।[11]
২. নেকী লাভ হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় :
রোগের কষ্টে ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে মুমিন বান্দার নেকী অর্জিত হয় এবং মহান আল্লাহ রোগীকে এমন মর্যাদা দান করেন, যা আমলের মাধ্যমে অর্জন করতে সে সক্ষম ছিল না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন,إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا سَبَقَتْ لَهُ مِنَ اللهِ مَنْزِلَةٌ، لَمْ يَبْلُغْهَا بِعَمَلِهِ ابْتَلَاهُ اللهُ فِي جَسَدِهِ، أَوْ فِي مَالِهِ، أَوْ فِي وَلَدِهِ ثُمَّ صَبَّرَهُ عَلَى ذَلِكَ حَتَّى يُبْلِغَهُ الْمَنْزِلَةَ الَّتِي سَبَقَتْ لَهُ مِنَ اللهِ تَعَالَى، ‘যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এমন মর্যাদা নির্ধারিত থাকে, যা সে তার আমলের মাধ্যমে লাভ করতে সক্ষম ছিল না। তখন আল্লাহ তার দেহ, সম্পদ অথবা তার সন্তানকে বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর তাকে সেই বিপদে ধৈর্য ধারণের সক্ষমতা দান করেন। অবশেষে তাকে সেই মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেন, যা আললাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ছিল’।[12] অপর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُشَاكُ شَوْكَةً، فَمَا فَوْقَهَا إِلَّا كُتِبَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ، وَمُحِيَتْ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ ‘কোন মুসলিমের গায়ে একটি কাঁটা বিদ্ধ হ’লে কিংবা তার চেয়েও ছোট কোন আঘাত লাগলে, এর বিনিময়ে তার এক স্তর মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার একটি গুনাহ ক্ষমা করা হয়’।[13]
৩. মুমিনের রোগ আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নে‘মত :
মুমিনদের জন্য সুখকর সংবাদ হ’ল রোগ-ব্যাধিসহ যাবতীয় বিপদাপদ তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নে‘মত। সেকারণ আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং সালাফে ছালেহীন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে যেমন খুশী হ’তেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করতেন, ঠিক তেমনি রোগ-ব্যাধিতে তারা সন্তুষ্ট থাকতেন। রাসূল (ছাঃ) সৎকর্মশীল বান্দাদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, وَإِنْ كَانَ أَحَدُهُمْ لَيَفْرَحُ بِالْبَلَاءِ، كَمَا يَفْرَحُ أَحَدُكُمْ بِالرَّخَاءِ، ‘তাদের কেউ বিপদে এত প্রফুল্ল থাকে, যেমন তোমাদের কেউ ধন-সম্পদ পেয়ে আনন্দিত হয়’।[14]
সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, لَيْسَ بِفَقِيهٍ مَنْ لَمْ يَعُدَّ الْبَلَاءَ نِعْمَةً، وَالرَّخَاءَ مُصِيبَةً ‘সেই ব্যক্তি প্রকৃত জ্ঞানী নয়, যে বিপদকে নে‘মত মনে করে না এবং প্রাচুর্য-ঐশ্বর্যকে মুছীবত হিসাবে গণ্য করে না’।[15]
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ارض عن الله في جميع ما يفعله بك، فإنه ما منعك إلا ليعطيك، ولا ابتلاك إلا ليعافيك، ولا أمرضك إلا ليشفيك، ولا أماتك إلا ليحييك، فإياك أن تفارق الرضى عنه طرفة عين، فتسقط من عينه، ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে আরোপিত সকল বিষয়ের প্রতি তুমি সন্তুষ্ট থাক। কেননা তোমাকে বিশেষ কিছু প্রদান করার জন্য তিনি কোন কিছু পাওয়া থেকে তোমাকে বিরত রাখেন। তোমাকে বিপদমুক্ত করার জন্যই কোন পরীক্ষায় ফেলেন। তোমাকে সুস্থ করার জন্য তিনি তোমাকে রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত করেন। নতুন জীবন দানের জন্যই তোমাকে মৃত্যু দেন। সুতরাং সাবধান! এক পলকের জন্য হ’লেও আল্লাহর সন্তুষ্টির সীমানা থেকে পৃথক হয়ো না, তাহ’লে তুমি তাঁর দৃষ্টি থেকে ছিটকে পড়বে’।[16]
৪. রোগী সুস্থাবস্থার মত নেকী পেতে থাকে :
বান্দা অসুস্থ হয়ে গেলে স্বাভাবিক অবস্থার মত ইবাদত করতে পারে না। কিন্তু তিনি যদি সুস্থ অবস্থায় কোন আমল নিয়মিত করে থাকেন, তাহ’লে অসুস্থ হয়ে গেলে ঐ আমল সম্পাদন না করেও নেকী লাভ করবেন। আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন,إِذَا مَرِضَ العَبْدُ، أَوْ سَافَرَ، كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيمًا صَحِيحًا، ‘বান্দা যখন অসুস্থ হয়ে যায় অথবা সফরে থাকে, তখন তার আমলের নেকী এমনভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়, যেন সে মুকীম হালতে সুস্থাবস্থায় আমল সম্পাদন করছে’।[17] আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا ابْتَلَى اللهُ الْعَبْدَ الْمُسْلِمَ بِبَلَاءٍ فِي جَسَدِهِ، قَالَ لِلْمَلَكِ: اكْتُبْ لَهُ صَالِحَ عَمَلِهِ الَّذِي كَانَ يَعْمَلُ، فَإِنْ شَفَاهُ، غَسَّلَهُ وَطَهَّرَهُ، وَإِنْ قَبَضَهُ، غَفَرَ لَهُ وَرَحِمَهُ ‘আল্লাহ যখন মুসলিম বান্দাকে তার শরীরে কোন রোগ দিয়ে পরীক্ষা করেন, তখন তিনি ফেরেশতাকে বলেন, বান্দা যে নেক আমল নিয়মিত করত, তার সেই আমলের নেকী লিপিবদ্ধ করতে থাক। এরপর আল্লাহ যদি তাকে আরোগ্য দান করেন, তাহ’লে তাকে গুনাহ থেকে ধুয়ে পাক-সাফ করে দেন। আর যদি তাকে মৃত্যু দান করেন, তাহ’লে তাকে মাফ করে দেন এবং তার প্রতি রহমত দান করেন’।[18] তিনি আরো বলেছেন, إِن الْعَبْدَ إِذَا كَانَ عَلَى طَرِيْقَةٍ حَسَنَةٍ مِنَ الْعِبَادَةِ ثُمَّ مَرِضَ قِيلَ لِلْمَلَكِ الْمُوَكَّلِ بِهِ: اكْتُبْ لَهُ مِثْلَ عَمَلِهِ إِذَا كَانَ طَلِيقًا حَتَّى أطلقهُ أَو أكفته إِلَيّ ‘বান্দা যখন কোন সুন্দর পদ্ধতিতে ইবাদত-বন্দেগী করতে থাকে, অতঃপর অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন তার আমলনামা লেখার জন্য নিযুক্ত ফেরেশতাকে বলা হয়, এই বান্দা সুস্থ অবস্থায় যে আমল করত (অসুস্থ অবস্থাতেও) তার আমলনামায় তা লিখতে থাক। যতক্ষণ না আমি তাকে মুক্ত করে দেই অথবা তাকে আমার কাছে ডেকে আনি’।[19]
শাদ্দাদ ইবনে আওস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ: إِذَا ابْتَلَيتُ عَبْدًا مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنًا، فَحَمِدَنِي وَصَبَرَ عَلَى مَا ابْتَلَيْتُهُ بِهِ، فَإِنَّهُ يَقُومُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ مِنَ الْخَطَايَا، وَيَقُولُ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ لِلْحَفَظَةِ: إِنِّي أَنَا قَيَّدْتُ عَبْدِي هَذَا وَابْتَلَيْتُهُ، فَأَجْرُوا لَهُ مَا كُنْتُمْ تُجْرُونَ لَهُ قَبْلَ ذَلِكَ وَهُوَ صَحِيحٌ ‘মহামহিম আল্লাহ বলেন, আমি যখন আমার কোন মুমিন বান্দাকে বিপদে ফেলি, আর সে আমার প্রশংসা করে এবং আমার পক্ষ থেকে আরোপিত বিপদে ধৈর্য ধারণ করে, তাহ’লে সে তার বিছানা থেকে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে উঠে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। অতঃপর আল্লাহ হেফাযতকারী ফেরেশতাদের বলেন, আমি আমার এই বান্দাকে আবদ্ধ করে রেখেছি এবং মুছীবতে ফেলেছি। সুতরাং তোমরা তার ঐ আমলগুলোর নেকী জারী রাখ, সুস্থাবস্থায় যে আমলের নেকীগুলো তার জন্য তোমরা জারী রাখতে’।[20] অর্থাৎ রোগে-শোকে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর প্রশংসা করা এমন এক মহান ইবাদত, যে ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে যায়। উপরন্তু রোগাক্রান্ত অবস্থায় তার সুস্থাবস্থায় সম্পাদিত আমলের নেকীগুলো জারী থাকে। এজন্যই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে আমলের মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে বলেছেন।
৫. রোগের মাধ্যমে মুমিন বান্দা জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে :
অসুস্থ ব্যক্তি তার রোগের মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়। ফলে সে আখেরাতে জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি লাভ করতে পারে। একবার আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে এক জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখতে গেলেন। তিনি রোগীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,أَبْشِرْ فَإِنَّ اللهَ يَقُولُ: هِيَ نَارِي أُسَلِّطُهَا عَلَى عَبْدِي الْمُؤْمِنِ فِي الدُّنْيَا، لِتَكُونَ حَظَّهُ مِنَ النَّارِ فِي الْآخِرَةِ، ‘সুসংবাদ গ্রহণ কর! কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘এই (রোগ) আমার আগুন, যা আমি দুনিয়াতে আমার মুমিন বান্দার উপর চাপিয়ে দেই, যাতে আখেরাতের আগুনের পরিপূরক হয়ে যায়’।[21] অন্যত্র তিনি বলেন, الْحُمَّى حَظُّ كُلِّ مُؤْمِنٍ مِنَ النَّارِ ‘প্রত্যেক মুমিনের জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য জ্বর তাক্বদীরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ’।[22]
৬. রোগ জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম :
আল্লাহ রোগ-ব্যাধি দিয়ে মুমিন বান্দাকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। বান্দা যদি এই পরীক্ষায় ধৈর্য ধারণ করতে সক্ষম হয়, তাহ’লে দুনিয়ার এই কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ তাকে আখেরাতে সম্মানিত করেন এবং তাকে এত বিশাল পুরস্কার প্রদান করেন যে, দুনিয়ার সুস্থ ব্যক্তিরা নিজেদের রোগ না হওয়ার জন্য আক্ষেপ করবে। জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন,يَوَدُّ أَهْلُ العَافِيَةِ يَوْمَ القِيَامَةِ حِيْنَ يُعْطَى أَهْلُ البَلَاءِ الثَّوَابَ لَوْ أَنَّ جُلُودَهُمْ كَانَتْ قُرِضَتْ فِي الدُّنْيَا بِالـمَقَارِيْضِ، ‘ক্বিয়ামতের দিন বিপদে পতিত ব্যক্তিদের যখন প্রতিদান দেওয়া হবে, তখন (পৃথিবীর) বিপদমুক্ত মানুষেরা আফসোস করে বলবে, হায়! দুনিয়াতে যদি কাঁচি দ্বারা তাদের শরীরের চামড়া কেটে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হ’ত!’।[23] দুনিয়াতে অসুস্থ ব্যক্তিরা অনেক সময় সুস্থ ব্যক্তিদের দেখে নিজের রোগের কারণে মনস্তাপে ভোগেন। কিন্তু তিনি যদি ধৈর্যশীল হ’তে পারেন, তাহ’লে এই সুস্থ ব্যক্তিরা ক্বিয়ামতের দিন তার পুরস্কারের পরিমাণ দেখে আফসোস করবেন। যেহেতু জান্নাতের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়, সেহেতু মুমিন বান্দাকে জীবনের পরতে পরতে রোগ-ব্যাধি, বালা-মুছীবতের কষ্ট সহ্য করেই জান্নাতের পথ সুগম করতে হয়। কেননা জান্নাতকে কষ্টদায়ক জিনিস দ্বারা পরিবেষ্টন করে রাখা হয়েছে।[24]
৭. রোগ বান্দাকে আল্লাহমুখী করে এবং তওবার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় :
মানুষের যখন পাপ বেড়ে যায়, তখন আল্লাহ তাকে যেকোন ধরনের বালা-মুছীবতে ফেলেন। যাতে সে পাপ থেকে ফিরে আসে। কখনো রোগ-ব্যাধির মাধ্যমেও মানুষ মুছীবতের সম্মুখীন হয়। কারণ একজন মানুষ অসুস্থ শরীর নিয়ে বিছানায় পড়ে থাকা অবস্থায় যখন চলাফেরা করতে থাকা সুস্থ লোকদের দেখতে থাকে, তখন তার মাঝে জেগে ওঠে তওবার মনোভাব। আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে তার মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَنُذِيقَنَّهُمْ مِنَ الْعَذَابِ الْأَدْنَى دُونَ الْعَذَابِ الْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ‘(আখেরাতে) কঠিন শাস্তির পূর্বে (দুনিয়াতে) আমরা তাদের অবশ্যই লঘু শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবো। যাতে তারা (আল্লাহর পথে) ফিরে আসে’ (সাজদাহ ৩২/২১)। আল্লাহ বলেন, وَمَا نُرِيهِمْ مِنْ آيَةٍ إِلَّا هِيَ أَكْبَرُ مِنْ أُخْتِهَا وَأَخَذْنَاهُمْ بِالْعَذَابِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ‘আর আমরা তাদেরকে এমন কোন নিদর্শন দেখাইনি, যা তার অনুরূপ আগের নিদর্শনের চাইতে বড় ছিল না। এভাবে আমরা তাদের শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম যাতে তারা (কুফরী থেকে) ফিরে আসে’ (যুখরুফ ৪৩/৪৮)।
পৃথিবীতে এমন অনেক পাপী মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পাপ ছেড়ে আল্লাহর আনুগত্যে ফিরে এসেছে। অবাধ্যতার জীবন থেকে পবিত্র জীবনের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছে। নিঃসন্দেহে তাদের জন্য এই রোগ-ব্যাধি কল্যাণকর ছিল। তাছাড়া রোগে-শোকে মানুষের মন সবসময় আল্লাহমুখী থাকে। বান্দা রোগাক্রান্ত হয়ে আল্লাহকে যে আবেগ ও মিনতি নিয়ে ডাকে, সুস্থ অবস্থায় সেই আবেগ ও বিনয়ীভাব নিয়ে খুব কমই ডাকতে পারে। সুতরাং রোগ পাপী বান্দাকে তওবার সুযোগ করে দেয়। আল্লাহ বলেন,فَأَخَذْنَاهُمْ بِالْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُونَ ‘অতঃপর (তাদের অবিশ্বাসের কারণে) আমরা তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যাধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম। যাতে কাকুতি-মিনতিসহ আল্লাহর প্রতি বিনীত হয়’ (আন‘আম ৬/৪২)।
ইমাম তাবারী (রহঃ) বলেন, এই আয়াতের অর্থ হ’ল- فامتحنَّاهُم بشدة الفقر والأسقام لعلهم يتضرعون إليَّ، ويُخلصوا لي العبادة، ‘আমরা তাদেরকে কঠিন দারিদ্র্য ও রোগ্য-ব্যাধি দিয়ে পরীক্ষা করেছি। যাতে তারা আমার নিকট কাকুতি-মিনতি করে এবং ইবাদত-বন্দেগীতে একনিষ্ঠ হয়’।[25] ফলে গাফেল বান্দা রোগ-শোকে বল্গাহীন জীবন ছেড়ে তার রবের দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। আল্লাহ বলেন,وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الْإِنْسَانِ أَعْرَضَ وَنَأَى بِجَانِبِهِ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ فَذُو دُعَاءٍ عَرِيضٍ، ‘যখন আমরা মানুষের উপর অনুগ্রহ করি, তখন সে এড়িয়ে যায় ও দূরে সরে যায়। আর যদি তাকে মন্দ স্পর্শ করে, তখন সে দীর্ঘ প্রার্থনায় রত হয়’ (ফুছ্ছিলাত ৪১/৫১)। তবে যাদের হৃদয়ে খাঁটি ঈমানের ছোঁয়া নেই, তারা বিপদাপদে হতাশ ও নিরাশ হয়ে পড়ে। আল্লাহ বলেন, وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الْإِنْسَانِ أَعْرَضَ وَنَأَى بِجَانِبِهِ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ كَانَ يَئُوْسًا، ‘যখন আমরা মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও অহংকারে দূরে সরে যায়। আর যখন তাকে মন্দ স্পর্শ করে, তখন সে হতাশ হয়ে পড়ে’ (শূরা ১৭/৮৩)।
তাছাড়া রোগ-ব্যাধি আমাদেরকে বারংবার মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ আমাদের জীবনটা একটি মৃত্যুপুরীর মত। জীবনের বাঁকে বাঁকে আমরা মৃত্যুর মুখোমুখি হই। আমরা যখন ঘুমাই তখন মৃত্যুবরণ করি। যখন অসুস্থ হয়ে যাই, তখন সুস্থতার মৃত্যু ঘটে। জীবনের নতুন ধাপে পৌঁছলে আগের ধাপের মৃত্যু ঘটে। যেমন যৌবনে শৈশবের মৃত্যু ঘটে। আবার বার্ধক্য যৌবনের মৃত্যু ডেকে আনে। আমরা জীবনের সাথে যতটুকু মিশি, তার চেয়ে অধিক মিশি মৃত্যুর সাথে। এজন্য আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন,اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ، وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ، وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ، وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ، وَحَيَاتِكَ قَبْلَ مَوْتِكَ، ‘পাঁচটি বস্ত্তকে পাঁচটি বস্ত্তর পূর্বে গনীমত মনে কর। বার্ধক্যের পূর্বে তোমার যৌবনকে, অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতাকে, দরিদ্রতার পূর্বে তোমার সচ্ছলতাকে, ব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবসরকে এবং মরণের পূর্বে তোমার জীবনকে’।[26]
৮. রোগ বান্দার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে :
রোগ-ব্যাধি মুমিন বান্দার আখেরাতের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে। কারণ দুনিয়ার রোগ-শোকের বিনিময়ে আল্লাহ তাকে আখেরাতের কষ্ট-ক্লেশ থেকে হেফাযত করেন। বারা ইবনে আযেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَا اخْتَلَجَ عِرْقٌ وَلَا عَيْنٌ إِلَّا بِذَنْبٍ، وَمَا يَدْفَعُ اللهُ عَنْهُ أَكْثَرُ. ‘(দুনিয়াতে) পাপের কারণেই মানুষের দৃষ্টি ও শিরা-উপশিরা আন্দোলিত (রোগাক্রান্ত) হয়। বিনিময়ে আল্লাহ তার থেকে (আখেরাতের) অনেক অকল্যাণ দূরীভূত করে দেন’।[27] আর আখেরাতের শাস্তির চেয়ে দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট কতই না নগণ্য। জনৈক বিদ্বান বলেন, من أنفع الأمور للمصاب: أن يطفئ نار مصيبته ببرد التأسي بأهل المصائب، ‘বিপদাপদের অন্যতম উপকারী দিক হ’ল- মুছীবতের আগুন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির ধৈর্যের শীতলতা দিয়ে নির্বাপিত হয়ে যায়’।[28]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبْدِهِ الخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ العُقُوْبَةَ فِي الدُّنْيَا، وَإِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِيَ بِهِ يَوْمَ القِيَامَةِ، ‘আল্লাহ তাঁর কোন বান্দার কল্যাণ চাইলে আগে-ভাগে দুনিয়াতেই তাকে তার গুনাহখাতার জন্য কিছু শাস্তি দিয়ে দেন। আর কোন বান্দার অকল্যাণ চাইলে, দুনিয়ায় তার পাপের শাস্তি প্রদান হ’তে বিরত থাকেন। পরিশেষে ক্বিয়ামতের দিন তাকে পূর্ণ শাস্তি দিবেন’।[29]
৯. কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ :
মহান আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাকে এমন কতিপয় রোগ দিয়ে থাকেন, যে রোগে মৃত্যুবরণকারী বান্দাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। সুলাইমান ইবনে ছুরাদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ قَتَلَهُ بَطْنُهُ لَمْ يُعَذَّبْ فِيْ قَبْرِهِ، ‘পেটের অসুখ যাকে হত্যা করেছে, তাকে কবরের শাস্তি দেওয়া হবে না’।[30] অত্র হাদীছে ‘পেটের অসুখ’ বলতে প্রসূতী অবস্থা, কৃমির সংক্রমণ, ডায়রিয়া প্রভৃতি রোগকে বুঝানো হয়েছে।[31]
১০. কখনো রোগ না হওয়া জাহান্নামী হওয়ার লক্ষণ :
কখনো অসুখ-বিসুখ না হওয়া জাহান্নামী হওয়ার লক্ষণ। কারণ যার অসুখ হয় না, আল্লাহ তাকে ভালবাসেন না, এটাই ধরে নিতে হবে। ফলে আখেরাতে সে জাহান্নামী হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,جَاءَ أَعْرَابِيٌّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَلْ أَخَذَتْكَ أُمُّ مِلْدَمٍ ؟. قَالَ: وَمَا أُمُّ مِلْدَمٍ؟ قَالَ: حَرٌّ بَيْنَ الْجِلْدِ وَاللَّحْمِ. قَالَ: لَا. قَالَ: فَهَلْ صُدِعْتَ؟ قَالَ: وَمَا الصُّدَاعُ؟ قَالَ: رِيحٌ تَعْتَرِضُ فِي الرَّأْسِ، تَضْرِبُ الْعُرُوقَ. قَالَ: لَا. قَالَ: فَلَمَّا قَامَ قَالَ: مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَلْيَنْظُرْهُ ‘একজন গ্রাম্য লোক আগমন করলে নবী (ছাঃ) বললেন, তোমার কি কখনো উম্মু মিলদাম (এক প্রকার জ্বর) হয়েছে? লোকটি বলল, উম্মু মিলদাম আবার কি? তিনি বললেন, এটা চামড়া ও গোশতের মধ্যকার তাপমাত্রা (জ্বর)। সে বলল, না। নবী (ছাঃ) বললেন, তোমর কি মাথাব্যথা হয়? সে বলল, মাথাব্যথা আবার কি? তিনি বললেন, এক প্রকার বাতাস, যা মাথায় প্রবেশ করে এবং শিরা-উপশিরায় আঘাত হানে। সে বলল, এটা আমার হয় না। এরপর লোকটি যখন উঠে দাঁড়াল, নবী (ছাঃ) তখন বললেন, যে ব্যক্তি কোন জাহান্নামী ব্যক্তিকে দেখে আনন্দবোধ করে, সে যেন এই লোকটাকে দেখে নেয়’।[32]
১১. শহীদের মর্যাদা লাভ করে :
দ্বীনের হেফাযতের জন্য মৃত্যুবরণকারী প্রকৃত শহীদ। কিন্তু কিছু রোগ-ব্যাধি আছে, যারা সেই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে, তারা শহীদের মর্যাদা লাভ করতে পারে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,الشَّهَادَةُ سَبْعٌ سِوَى الْقَتْلِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ: الْمَطْعُوْنُ شَهِيْدٌ، وَالْغَرِقُ شَهِيْدٌ، وَصَاحِبُ ذَاتِ الْجَنْبِ شَهِيْدٌ، وَالْمَبْطُوْنُ شَهِيْدٌ، وَصَاحِبُ الْحَرِيْقِ شَهِيْدٌ، وَالَّذِيْ يَمُوْتُ تَحْتَ الْهَدْمِ شَهِيْدٌ، وَالْمَرْأَةُ تَمُوْتُ بِجُمْعٍ شَهِيْدٌ، ‘আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি ছাড়াও আরো সাতজন ‘শহীদ’ রয়েছে। তারা হ’ল মহামারীতে মৃত (মুমিন) ব্যক্তি, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি, ‘যাতুল জাম্ব’ (নানা ধরনের পেটের রোগ, যেমন গর্ভে সন্তান মরে যাওয়া প্রভৃতি) নামক কঠিন রোগে মৃত ব্যক্তি, (কলেরা, ডায়রিয়া বা অনুরূপ) পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি, দেয়াল ধ্বসে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মারা যাওয়া মহিলা’।[33] অন্যত্র তিনি বলেন, যে মহিলা নিফাসগ্রস্ত হয়ে মারা যায়, সে শহীদ’।[34] ফুসফুসের প্রদাহ বা যক্ষ্মা রোগে মৃত ব্যক্তিও শহীদ’।[35]
১২. দৈহিক রোগের মাধ্যমে অন্তরের রোগ সেরে যায় :
দেহের রোগের চেয়ে অন্তরের রোগ বেশী ভয়ঙ্কর ও মারাত্মক। দৈহিক রোগের মাধ্যমে মৃত্যুর চেয়ে বেশী কিছু হয় না। কিন্তু অন্তরের রোগের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টাই বরবাদ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে দৈহিক রোগের মাধ্যমে বান্দার অন্তরের রোগের চিকিৎসা হয়। মুনাফিকী, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, ক্ষমতা ও দুনিয়ার প্রতি মোহ প্রভৃতি অন্তরের ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষগুলো দৈহিক রোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের সম্বিৎ ফিরে পায়। কারণ দৈহিক কষ্টের আগুনে তার মনের ময়লাগুলো ছাফ হয়ে যায়। আমাদের সমাজে এর নযীর খুব সহজেই খঁজে পাওয়া যায়। তাই তো ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,انتفاع القلب والروح بالآلام والأمراض أمرٌ لا يحس به إلا مَن فيه حياة، فصحة القلوب والأرواح موقوفة على الآم الأبدان ومشاقِّها، ‘দৈহিক রোগ-ব্যাধি ও ব্যথা-বেদনার মাধ্যমে অন্তর ও রূহ উপকৃত হওয়াটা এমন একটি বিষয়, যার ভিতরে ঈমান আছে একমাত্র সেই এটা উপলব্ধি করতে পারে। কেননা অন্তর ও রূহের সুস্থতা শারীরিক কষ্ট-ক্লেশের উপরে নির্ভরশীল’।[36]
১৩. রোগ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম উপায় :
রোগ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ যাকে ভালবাসেন তাকে বিভিন্ন রোগ ও বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ عِظَمَ الجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ البَلَاءِ، وَإِنَّ اللهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلَاهُمْ، فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ، ‘বড় পরীক্ষায় বড় পুরস্কার। আল্লাহ কোন জাতিকে ভালোবাসলে তাদেরেকে বিভিন্ন বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা এতে সন্তুষ্ট থাকে, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যারা এই বিপদে নাখোশ হয়, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি’।[37] সুতরাং রোগ-ব্যাধিতে হতাশ ও পেরেশান না হয়ে ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করা প্রকৃত মুমিনের পরিচয়।
১৪. রোগের মাধ্যমে নিজের অসহায়ত্ব টের পাওয়া যায় :
রোগ-ব্যাধির অন্যতম বড় উপকারিতা হ’ল রোগের মাধ্যমে বান্দা নিজের অসহায়ত্ব টের পায় এবং স্বীয় রবের নিকটে নিজের মুক্ষাপেক্ষিতা উপলব্ধি করতে পারে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হ’ল বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা ভাইরাসের মহামারী। এই মহামারীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ পৃথিবাসীকে দেখিয়েছেন যে, আমরা কত অসহায়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও দেশগুলো আল্লাহর অদৃশ্য সৃষ্টি এই করোনা রোগের নিকটে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। বিশ্ববাসী উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, এই আকাশ-যমীনের একচ্ছত্র অধিপতি একমাত্র মহান আল্লাহ। আল্লাহর হুকুমের সামনে আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও যাবতীয় টেকনলজির পাঁচ পয়সার মূল্য নেই। যদিও মানুষের লাগামহীন পাপাচারের কারণে আল্লাহ বিভিন্ন বিপদাপদ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এর উদ্দেশ্য হ’ল মানুষ যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। কেননা বিপদাপদ ও রোগ-ব্যাধি না হ’লে মানুষ অধিকাংশ সময় তার সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে যায়। তাইতো শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেছেন,مصيبة تقبل بها على الله خير لك من نعمة تنسيك ذكر الله، ‘যে বিপদে পতিত হলে আল্লাহর প্রতি অভিমুখী হওয়া যায়, এমন বিপদ সে নে‘মত থেকে উৎকৃষ্ট, যে নে‘মত তোমাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ রাখে’।[38]
উপসংহার :
পরিশেষে বলব, রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ধৈর্য ধারণ করলে প্রভূত কল্যাণ ও প্রতিদান লাভ হয়। দুনিয়াতে মানুষের রোগ-ব্যাধি হবে এটা স্বাভাবিক; কিন্তু সেজন্য মুষড়ে না পড়ে আল্লাহর উপরে ভরসা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন-আমীন!
আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
এম.এ শেষ বর্ষ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. বুখারী হা/৬৪১২; তিরমিযী হা/ ২৩০৪; ইবনু মাজাহ হা/৪১৭০।
[2]. তিরমিযী হা/২৩৪৬; ইবনু মাজাহ হা/৪১৪১; মিশকাত হা/৫১৯১, সনদ হাসান।
[3]. তাফসীরে ত্বাবারী, তাহক্কীক: আহমাদ শাকির, ১৮/ ৪৪০।
[4]. মুসলিম হা/২৯৫৬; তিরমিযী হা/২৩২৪; মিশকাত হা/ ৫১৫৮।
[5]. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ, ৪/১৭৬।
[6]. ইবনু মাজাহ হা/৪০২৪; ‘ফিতান’ অধ্যায়, ‘বিপদে ধৈর্য ধারণ’ অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ।
[7]. বুখারী হা/৫৬৪১; মুসলিম হা/২৫৭৩।
[8]. ছহীহ মুসলিম হা/২৫৭১।
[9]. তিরমিযী হা/৩০৯২; সিলসিলা ছহীহাহ/৭৪১।
[10]. তিরমিযী হা/৩২৯৯; ছহীহাহ হা/২২৮০, সনদ হাসান।
[11]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/১০৮১৩, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৯৩, সনদ ছহীহ।
[12]. আহমাদ হা/২২৩৩৮; আবূদাঊদ হা/৩০৯০, সনদ ছহীহ।
[13]. মুসলিম হা/২৫৭২; ছহীহুল জামে’ হা/১৬৬০।
[14]. ইবনু মাজাহ হা/৪০২৪; ছহীহাহ হা/১৪৪, সনদ ছহীহ।
[15]. হিলয়াতুল আউলিয়া ৭/৫৫।
[16]. মাদারিজুস সালেকীন ২/২১৬।
[17]. বুখারী হা/২৯৯৬; মিশকাত হা/১৫৪৪।
[18]. আহমাদ হা/ ১৩৭১২; ছহীহুল জামে‘ হা/২৫৮; ইরওয়া হা/৫৬০; মিশকাত হা/১৫৬০, সনদ হাসান।
[19]. আহমাদ হা/৬৮৯৫; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬৬২০; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪২১; মিশকাত হা/১৫৫৯, সনদ ছহীহ।
[20]. তাবারাণী, মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৪৭০৯; ছহীহাহ হা/২০০৯; মিশকাত হা/ ১৫৭৯।
[21]. ইবনু মাজাহ হা/৩৪৭০; ছহীহাহ হা/৫৫৭।
[22]. বায্যার হা/১৮২১; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪৪৭; ছহীহাহ হা/১৮২১; ছহীহুল জামে‘ হা/৩১৮৭।
[23]. তিরমিযী হা/২৪০২; মিশকাত হা/১৫৭০, সনদ হাসান।
[24]. মুসলিম হা/২৮২২; তিরমিযী হা/২৫৫৯; দারেমী হা/২৮৮১।
[25]. তাফসীরে ত্বাবারী, ৭/১৯২।
[26]. নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/১১৮৩২; মুস্তাদরাকে হাকেম হা/৭৮৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/১০৭৭; মিশকাত হা/৪১২, সনদ ছহীহ।
[27]. তাবারাণী, আল-মু‘জামুছ ছাগীর হা/১০৫৩; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২১৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৪২১, সনদ ছহীহ।
[28]. তাসলিয়াতু আহলিল মাছাইব, পৃঃ ১৪।
[29]. তিরমিযী হা/২৩৯৬; ছহীহাহ হা/১২২০; মিশকাত হা/১৫৬৫, সনদ ছহীহ।
[30]. তিরমিযী হা/১০৬৪; ছহীহুত তারগীব হা/১৪১০; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪৬১; মিশকাত হা/১৫৭৩, সনদ ছহীহ।
[31]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৪/১৪৭; মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৩/১১৪৫।
[32]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৯৫; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/২৯১৬; মুস্তাদরাকে হাকেম হা/১২৮৩, হাদীছ হাসান ছহীহ।
[33]. আবুদাঊদ হা/৩১১১; মিশকাত হা/১৫৬১, সনদ ছহীহ।
[34]. নাসাঈ হা/৩১৬৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৪৪১, সনদ ছহীহ।
[35]. ছহীহুল জামে’ হা/৩৬৯১, সনদ ছহীহ।
[36]. ইবনুল ক্বাইয়িম, শিফাউল ‘আলীল, পৃঃ ৫২৪।
[37]. তিরমিযী হা/২৩৯৬; ছহীহাহ হা/১৬৪; ছহীহুল জামে‘ হা/২১১০; মিশকাত হা/১৫৬৬, সনদ হাসান।
[38]. তাসলিয়াতু আহলিল মাছায়িব, পৃ: ১৭৫।