পবিত্র হজ্জ ১৪৩৫ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন
হজ্জের ভাষণে বিশ্বের শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা
ইসলামের অন্যতম রুকন হজ্জব্রত পালনের জন্য এবং আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় পবিত্র মক্কা নগরীর অদূরে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের মধ্য দিয়ে গত ৪ঠা অক্টোবর ২০১৪ মোতাবেক ৯ই যিলহজ্জ ১৪৩৫ হিজরী শুক্রবার পবিত্র হজ্জ পালন করেছেন গোটা বিশ্ব থেকে আগত লাখ লাখ মুসলমান। প্রত্যেকবারের ন্যায় এবারও বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম দৃশ্যের অবতারণা হয় এই ময়দানে।
হজ্জের খুৎবায় সঊদী আরবের বর্তমান গ্রান্ড মুফতী শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ (৭৩) আলে শায়েখ সিরিয়াসহ আরববিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলমান সহিংসতার বর্ণনা তুলে ধরে মুসলিম জাতির উদ্দেশ্যে বিভক্তি, বিশৃংখলা এবং সাম্প্রদায়িকতা পরিত্যাগের উদাত্ত আহবান জানান। তিনি পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর মূলনীতির ভিত্তিতে বিশ্ব মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, বিশুদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষার অনুসরণ ব্যতীত কখনোই শান্তির আশা করা যায় না। তাই পরস্পর ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
খুৎবায় গ্রান্ড মুফতী বলেন, অনৈসলামিক শক্তিসমূহ ইসলাম ও মুসলিম দেশসমূহের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে। ইসলামের মূল ধারা থেকে বিচ্যুত ‘খারেজী’ চরমপন্থীরা এখনো মুসলমানদেরকে দলে দলে বিভক্ত করে ফেলছে। সমাজে ফিৎনা-ফাসাদ ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, নিরীহ মানুষকে হত্যা করা সবচেয়ে বড় নিষ্ঠুরতা। কারণ ইসলাম বলেছে, একজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা পুরো মানব জাতিকে হত্যা করার শামিল।
তিনি বলেন, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হওয়াই সারাবিশ্বে মুসলমানদের সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার অন্যতম কারণ। ইসলামের পতাকাকে বিশ্বসভায় ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে মুসলিম দেশসমূহের সংবাদ মাধ্যমের যথাযথ ভূমিকা পালন করা উচিত।
গ্রান্ড মুফতী বলেন, মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সমৃদ্ধির জন্য মুসলিম দেশসমূহের নেতাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা উচিত। ইসলাম সহজ-সরল ধর্ম। ইসলাম মানবতার ধর্ম। এর ভিত্তি সত্য ও ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটি মানুষের সার্বিক জীবন পরিচালনার সকল নীতিকে ধারণ করে। পবিত্র কুরআন মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ উম্মাহ হিসাবে ঘোষণা করেছে। কারণ তারা সৎকাজের আদেশ করে এবং অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে। তিনি ইসলামের সঠিক শিক্ষা তুলে ধরা এবং মানুষকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে পথ দেখানোর জন্য আলেম সমাজের প্রতি আহবান জানান।
দৃষ্টিশক্তি হারানো গ্রান্ড মুফতী সমগ্র মুসলিম জাহানকে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়ে বলেন, মুসলমানরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহ’লে ইসলামই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে বিজয়ী ও শক্তিশালী আদর্শ। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হ’ল আমরা আজ ঐক্যবদ্ধ নই। আমাদের কেউ আক্বীদাগত, কেউ আমলগত দিক দিয়ে বিভক্ত। ঐক্যবদ্ধ না থাকায় মুসলমানরা আজ যেখানে-সেখানে মার খাচ্ছে। অথচ মহান আল্লাহ কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। কিন্তু মুসলমান আজ শতধা বিচ্ছিন্ন। অথচ এটা কোনভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। বরং মুসলমান একটা দেহের মত। সে পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক অন্য প্রান্তে কোন মুসলমান যদি আক্রান্ত হয়, তবে সে কষ্ট সে ততটুকু অনুভব করবে।
নেক আমলের গুরুত্ব সম্পর্কে গ্রান্ড মুফতী বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নেক আমল, তথা- ছালাত, ছিয়াম, তাসবীহ, তাহলীল ইত্যাদি। নেক আমলের গুরুত্ব অপরিসীম। আমলশূন্য মুসলমান ফলশূন্য গাছের মতো। তার দিকে কেউ দৃকপাত করে না। কারণ সে ফলবান নয়। সেকারণে পরকালীন মুক্তির জন্য আমলে ছালেহের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, মুসলমানের সবচেয়ে বড় জিহাদ হচ্ছে স্বীয় নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ। কারণ এই নফসই তাকে কু-প্রবৃত্তির দিকে ধাবিত করে।
তিনি মুসলিম উম্মাহকে পরস্পরে ভালবাসা ও মানবতা প্রসারে কাজ করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, সাদা-কালো, ধনী-গরীবের মধ্যে ইসলাম কোন পার্থক্য করেনি। ইসলামে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের জন্য যোর দেয়া হয়েছে। আল্লাহ রববুল আলামীন ইসলামকে মানুষের অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং ইসলামকেই একমাত্র জীবন ব্যবস্থা বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
খুৎবায় তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর উত্তম চরিত্রের বিভিন্ন দিক বর্ণনা করেন এবং মুসলিম জাতিকে তাঁর আদর্শ ধারণ করে উত্তম চরিত্রবান হওয়ার আহবান জানান।
আরব নিউজ সূত্র মতে, এ বছর প্রায় ৩০ লাখ মুসলমান হজ্জ পালন করেছেন। এর মধ্যে বিশ্বের ১৫০টি দেশের ২০ লাখ এবং সঊদী আরবের অভ্যন্তরীণ প্রায় ১০ লাখের মতো হাজী রয়েছেন। এবার বাংলাদেশী হাজীর সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাযার ২৭৯ জন। সঊদী আরবের অভ্যন্তরে বসবাসকারী বিদেশীদের হজ্জের জন্য বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। একজন বিদেশী প্রতি ৫ বছরে একবার হজ্জের অনুমতি পেয়ে থাকেন। হজ্জের অনুমোদনবিহীন বিদেশীদের ঠেকানোর জন্য বসানো চেকপোস্ট থেকে এবছর ৬০ হাযারের মতো হজযাত্রীকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
তুরস্কে স্কুলছাত্রীদের হিজাব পরার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
তুরস্কে হাইস্কুলের ছাত্রীদের হিজাব পরার ওপর যে নিধেষাজ্ঞা ছিল তা তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তুর্কি সরকার। তুরস্কের উপপ্রধানমন্ত্রী বুলেন্ট আরিঙ্ক জানিয়েছেন, হাইস্কুলের ছাত্রীদের হিজাব পরার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তাতে সংশোধনী আনা হচ্ছে, যাতে মাথা অনাবৃত রাখতে কোন ছাত্রীকে বাধ্য করা না হয়। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠকের পর আরিঙ্ক সাংবাদিকদের বলেন, আমি জানি যে হাইস্কুলের এই বিধিমালা সংশোধনের জন্য বহু ছাত্রী দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিল। প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাবুতোগলু এই সংশোধনী সম্পর্কে বলেন, এটাকে শুধু হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হিসাবে দেখলেই চলবে না, প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মুছতফা কামাল আতাতুর্ক প্রতিষ্ঠিত ধর্মনিরপেক্ষতার অধীনে তুরস্কে সবিকছুতেই স্বাধীনতা ছিল, শুধু ইসলামী বিধিবিধান পালন ছাড়া। তবে প্রেসিডেন্টে রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বিভিন্ন ইসলামী বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা ধাপে ধাপে তুলে নিচ্ছেন।
[ধন্যবাদ তুর্কী প্রেসিডেন্টকে। হারানো খেলাফত পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আপনারা এগিয়ে চলুন (স.স.)]