এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন ইথিওপিয়ার জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী আবু আহমাদ আলী। শান্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য তাঁকে এ পুরস্কার দেয়া হয়েছে। গত ১১ই অক্টোবর নোবেল কমিটি উক্ত পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে তিনি ৮ম মুসলিম হিসাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করলেন।

দুর্নীতি, একনায়কতন্ত্র, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাত-সংঘর্ষ, বাক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর নিজেদের মধ্যে বিবাদে প্রায় গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল ইথিওপিয়া। গত বছর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর আফ্রিকা মহাদেশের সর্বকনিষ্ঠ ৪৩ বছর বয়স্ক এ সরকারপ্রধান ইরিত্রিয়ার সঙ্গে ২০ বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান, হাযারো রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তিদান, সেন্সরশিপের নামে বন্ধ থাকা শত শত ওয়েবসাইট চালুকরণ, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের বহিষ্কার ইত্যাদি পদক্ষেপ খুব দ্রুততার সাথে নিয়ে সৎ ও যোগ্য নেতা হিসাবে ইথিওপীয়দের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছেন। এমনকি ক্ষমতায় এসেই আগের সরকারগুলোর সময়ে রাজনৈতিক বন্দীদের ওপর চালানো নির্যাতনের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ইরিত্রিয়া একসময় ইথিওপিয়ার অংশ ছিল। ১৯৯৩ সালে  ইরিত্রিয়া রাষ্ট্র হিসাবে স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সংঘাতময় বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করছিল। ১৯৯৮ সালে যা যুদ্ধে রূপ লাভ করে এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাযার মানুষ এতে নিহত হয়। এছাড়া ইথিওপিয়ায় ৯০টিরও বেশী সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আছে। যাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টি জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ।

১৯৭৪ সাল থেকে ইথিওপিয়ায় সেনা শাসন জারী রেখেছেন একনায়ক মেঙ্গিস্টু হাইলে মারিয়াম। ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি রাজনৈতিক বিবেচনায় হাযার হাযার মানুষকে হত্যা করেন এবং তার সময়ে দুর্ভিক্ষে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ মারা গেছে। দেশের অস্থিরতা দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত বছর তিনি পদত্যাগ করেন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাসীন হন।

আবু আহমাদ আফ্রিকা অঞ্চলের অন্যান্য রাষ্ট্রনায়কের মতো নন। বরং বিস্ময়করভাবে সব নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সমান জনপ্রিয়। যার মূল কারণ হ’ল সকল গোষ্ঠীর প্রতি তার উদার দৃষ্টিভঙ্গি। এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি এ সময়ের গর্বিত নাগরিক হ’তে চান, তবে সব নৃ-গোষ্ঠীর মানুষকে সমান মর্যাদা দিতে হবে। সবাইকে সমান ইথিওপীয় হিসাবে গণ্য করতে হবে’। বিশ্লেষকদের মতে, আফ্রিকার ইতিহাসে সেরা রাষ্ট্রনেতা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে।

উল্লেখ্য, ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়ার মধ্যে কৃত উক্ত শান্তি চুক্তি সঊদী বাদশাহ সালমানের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৮ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর জেদ্দায় আয়োজিত এক শীর্ষ সম্মেলনে সম্পন্ন হয়।






আরও
আরও
.