১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যার বিস্ময়কর কর্মতৎপরতায় আপাদমস্তক পাল্টে যায় মালয়েশিয়ার চালচিত্র, সেই সফল রাজনীতিক ও শাসক ‘আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক’ বলে খ্যাত মাহাথির মুহাম্মাদ পুনরায় ফিরে এসেছেন দেশটির শাসনক্ষমতায়। তার নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলীয় জোট পাকাতান হারপান গত ৯ই মে দেশটির চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। সংসদের ২২২টি আসনের মধ্যে তার দল পেয়েছে ১২২টি আসন। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ছিল ১১২ আসন। প্রধানমন্ত্রী নাজীব রাজাকের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট বারিসান ন্যাশনাল পেয়েছে ৭৯ আসন। পরদিন ১০ই মে দেশটির বর্তমান রাজা অং সুলতান মুহাম্মাদের নিকটে মাহাথির শপথবাক্য পাঠ করেন।
১৯৮১ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি এক নাগাড়ে ২২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। আর এ সময়ে একটি দরিদ্র দেশ মালয়েশিয়াকে বিশ্বের উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যান। ১৯৯৮ সালে তার উপপ্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমকে দুর্নীতি আর সমকামিতার অভিযোগে তিনি কারাগারে নিক্ষেপ করেন। ২০০৩ সালে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা ও রাজনীতি থেকে ব্যতিক্রমধর্মী অবসর গ্রহণ করেন। উপ-প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আহমদ বাদাবীর নিকটে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পর তিনি বলেছিলেন, ‘কাঁধ থেকে দেশ পরিচালনার বোঝা সরাতে পেরে স্বস্তি পাচ্ছি’।
কিন্তু বাদাবীর ওপর ভরসা রাখতে পারেননি বেশী দিন। পেছন থেকে সুতার টানে পালাবদল ঘটিয়ে ২০০৯ সালে দেশটির ক্ষমতায় আনেন তারই একান্ত শিষ্য নাজীব রাজাককে। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে। তখনও নাজীবের বিএন পার্টির সঙ্গে যুক্ত মাহাথির। দুর্নীতি বুঝতে পেরে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি। ২০১৬ সালে দল থেকে বেরিয়ে যোগ দেন বিরোধী দল হাকাতান হারাপানের সঙ্গে। ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার। পুরনো শত্রুতা ভুলে একসময় তারই ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমের সঙ্গে জোট বাঁধেন। এসময় তিনি তাকে জেলে ভরার বিষয়টি তার জীবনের অনেক ভুলের মধ্যে অন্যতম ভুল হিসাবে স্বীকার করেন।
এভাবে নিজের শত্রুর সঙ্গে জোট বেঁধে নিজের দলের বিরুদ্ধেই মাঠে নামেন মাহাথির। সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়ে আবারও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন। এখন তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী।