বৃহদাকারের
দু’টি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে খুলনা শিপইয়ার্ড দেশের
নৌ-নির্মাণশিল্পে নতুন মাইলফলক অতিক্রম করতে যাচ্ছে। গত ৬ই আগস্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা শিপইয়ার্ডে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর জন্য দু’টি
‘লার্জ পেট্রোল ক্রাফট’ (এলপিসি) নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী ৩০ মাসের মধ্যে
খুলনা শিপইয়ার্ড এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবে।
দেশের নৌ-নির্মাণশিল্পে এটিই এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ কর্মকান্ড। জাপানের নৌ
জরিপ ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ক্লাস এনর্কে’র তত্ত্বাবধানে চীনা কারিগরি
সহযোগিতায় টর্পেডো, এন্টি এয়ার ক্রাফট গান ও মিসাইলসমৃদ্ধ এ যুদ্ধজাহায
নির্মাণকাজ সম্পন্নের মাধ্যমে খুলনা শিপইয়ার্ড সমর শিল্পে উপমহাদেশে বিশেষ
স্থান করে নিতে পারবে বলে আশা করছেন ওয়াকিফহাল মহল। প্রতিটি যুদ্ধ জাহাজে
৭০ জন করে নৌসেনা ও নাবিক থাকতে পারবে এবং এগুলিতে ১০ কিলোমিটার দূরে
শত্রুর লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানার মতো মিসাইলসহ সমর সরঞ্জাম সংযোজন করা হবে।
এছাড়া এটি ঘণ্টায় প্রায় ৪৭ কিলোমিটার বেগে সাগরে ও উপকূলের লক্ষ্যস্থলে
চলতে সক্ষম হবে। এসব যুদ্ধজাহায বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হ’লে তা
দেশের সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় অতন্দ্রপ্রহরীর ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা
যায়। এর আগে খুলনা শিপইয়ার্ড সাফল্যজনকভাবে আরো ৫টি পেট্রোল ক্রাফট
নির্মাণের গৌরব অর্জন করে।
উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ এ নৌ-নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটিতে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশ সামরিক-বেসামরিক নৌযান নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ব্রুনাই ও ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের নৌবাহিনী প্রধানরা খুলনা শিপইয়ার্ড পরিদর্শন করে অভিভূত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিরাষ্ট্রীয়করণ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড ১৯৯৯ সালে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পরে শত কোটি টাকার দায় দেনা কাটিয়ে গত ১৫ বছরে আরো প্রায় সোয়া ২শ’ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষসহ এর কমকর্তা-কর্মচারীদের সততা ও আন্তরিকতার পাশাপাশি দক্ষতার কারণেই খুলনা শিপইয়ার্ড আজ গোটা জাতীর সামনে এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান ‘আইএসও’র সনদ লাভকারী খুলনা শিপইয়ার্ড বিশ্বসেরা নৌ-নির্মাণ পরামর্শক ও জরিপ প্রতিষ্ঠান জাপানের এনকে, ফ্রান্সের ব্যুরো অব ভেরিটার্স ছাড়াও লয়েডস, সিসিএস ও জিএল-এর মতো বিশ্বে সেরা নৌ-নির্মাণ পর্যবেক্ষণ ও সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের তত্ত্বাবধানে কাজ করারও গৌরব অর্জন করেছে।