আমার অভি জিপিএ ফাইভ পায়নি। সেজন্য আর ঘরে ফেরেনি সে। ফিরবেই বা কিভাবে? আমরা পিতা-মাতা বলেই তো ফেলেছিলাম, ফাইভ না পেলে তোর মুখ আর কোনদিন দেখব না। আজকে আমি নিঃসন্তান। শুধু জিপিএ ফাইভের জন্য। আমি তাকে এতটাই চাপ দিয়েছি যে, ভয়ে ছেলে আমার অনেক দূরে চলে গেছে। ক্যামেরার সামনে কাঁদতে থাকা এই মা বলেন, ‘মা হিসাবে আমি ব্যর্থ। আমি সন্তানকে কখনো বোঝার চেষ্টা করিনি। সারাক্ষণ শুধু বলেছি, পড় পড় পড়। পড়তে হবে, জিপিএ ফাইভ পেতে হবে, ব্যারিস্টার হ’তে হবে। শুধু জিপিএ ফাইভ পাওয়ার আশায় জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ সন্তানকে যেন কেউ হারিয়ে না ফেলেন। তার মত যেন আর কোন মাকে কাঁদতে না হয়। তার জীবন থেকে শিক্ষাগ্রহণের জন্য নিজের কঠিন সময়ের কথাগুলি প্রকাশ করেন নাম ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক এই মা।
তিনি বললেন, আমার একমাত্র সন্তান অভি। ব্যবসায়ী পিতা চাইতেন ছেলে বড় ব্যারিস্টার হবে। সামান্য রেজাল্ট খারাপ করলেই ভীষণ রেগে যেতেন। তাই ছেলের পড়াশুনা কেন্দ্রিক হয়ে যায় আমার জীবন।
অষ্টম শ্রেণীতে ভালো ফলাফল করলে আমাদের আকাঙ্ক্ষা আরো বেড়ে যায়। যেভাবেই হৌক এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেতে হবে। স্বামী বলতেন, ছেলে জিপিএ ফাইভ না পেলে তাঁর মান-সম্মান নষ্ট হবে। চাপাচাপির আধিক্য তাই আরো বেড়ে যায়। অভি খেলতে পসন্দ করত, ছবি আঁকত। আস্তে আস্তে সে কেমন যেন চুপ হয়ে গেল।
মূল পরীক্ষার আগে বিভিন্ন টেস্ট পরীক্ষায় অভির ফল ভালো হচ্ছিল না দেখে তার পিতা আরো রেগে যান। বলে দেন, অভি জিপিএ ফাইভ না পেলে তিনি তার মুখ দেখবেন না।
পরীক্ষার পর থেকে সে চুপচাপ হয়ে যায়। সারাক্ষণ ঘরের কোণায় পড়ে থাকত। এভাবে রেজাল্টের দিন এসে গেল। সকালে ভয়ে কাতর চেহারা নিয়ে অভি বের হয়। দুপুর পার হয়ে গেল, তারপরেও তার কোন খবর নেই। সন্ধ্যায় থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরী করি। দু’দিন পর থানা থেকে ফোন আসে। পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, তাদের প্রিয় অভি আর বেঁচে নেই। বাড়ির কাছের একটি রেললাইনের পাশে পড়ে ছিল তার লাশ।
[শিক্ষাক্ষেত্রের হোমড়া-চোমড়াগণ বিষয়টি ভেবে দেখবেন কি? (স.স.)]