চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টাঙ্গাইলে সুধী সমাবেশ ও যেলা সম্মেলন সমূহে যোগদানের উদ্দেশ্যে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব গত
২৯শে অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকালের কোচে ঢাকায় অতঃপর পরদিন সকাল ৮-টার
ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছেন। চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে তাঁকে
অভ্যর্থনা জানান যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ শামীম আহসান,
সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শেখ সাদী সহ যেলা ‘আন্দোলন’ ও
‘যুবসংঘ’-এর অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ঢাকা থেকে আমীরে জামা‘আতের সফরসঙ্গী হন
লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি কলেজের প্রভাষক মুহাম্মাদ আশরাফুল ইসলাম।
চট্টগ্রাম পৌঁছে তিনি উত্তর পতেঙ্গাস্থ জনাব আব্দুর রহমানের বাড়ীতে
আতিথেয়তা গ্রহণ করেন।
জুম‘আর খুৎবা : দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী, সাগর তীরবর্তী ঐতিহ্যবাহী নগরী চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানাধীন ষ্টীল মিল সংলগ্ন হোসেন আহমাদ পাড়ায় নব প্রতিষ্ঠিত এবং ‘ইসলামিক কমপ্লেক্স’ রাজশাহীর অধীনে পরিচালিত ‘বায়তুর রহমান আহলেহাদীছ জামে মসজিদ কমপ্লেক্স’-য়ে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী জুম‘আর খুৎবা প্রদান করেন। সমবেত মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত খুৎবায় তিনি বলেন, জ্ঞান সম্পন্ন প্রাণী হিসাবে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক মতভেদ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সেটি দূরীকরণের একটি পথই মাত্র রয়েছে আল্লাহর বিধানের সামনে মাথা নত করা। যারা সেটা করেন তারাই ‘মুসলিম’। আর আল্লাহর বিধান সমূহ রয়েছে পবিত্র কুরআনে ও ছহীহ হাদীছ সমূহে। অতএব দুনিয়ায় শান্তি ও পরকালে মুক্তি চাইলে মানুষকে কুরআন ও হাদীছের অনুসারী হ’তে হবে। আর তার ব্যাখ্যা হ’তে হবে সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী। নিজেদের মনগড়া বুঝ অনুযায়ী নয়। তিনি বলেন, মতভেদ দূর করার জন্য আমাদেরকে এ পথেই এগিয়ে আসতে হবে।
এ সময়ে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত নগরীর এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আহলেহাদীছ জামে মসজিদ কমপ্লেক্স-এর জন্য জমি দান করায় আমেরিকা প্রবাসী জনাব আব্দুশ শাকূরের জন্য খাছ দো‘আ করেন এবং এটিকে অত্রাঞ্চলে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলনে’র মারকায হিসাবে কবুলের জন্য মহান আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করেন।
উল্লেখ্য যে, সারাদিন টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যেও শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক মুছল্লী আমীরে জামা‘আতের খুৎবা শুনার জন্য মসজিদে সমবেত হন। কিন্তু মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেককে বাহিরে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুনতে হয়। অতঃপর খুৎবা শেষে পর পর তিনটি জামা‘আতে ছালাত আদায় করতে হয়। মসজিদে মহিলাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা ছিল।
যেলা কার্যালয় উদ্বোধন : জুম‘আর ছালাত শেষে আমীরে জামা‘আত মসজিদ সংলগ্ন যেলা ‘আন্দোলন’-এর নতুন কার্যালয় উদ্বোধন করেন। এ সময়ে সমবেত দায়িত্বশীলদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবে এখানে সারা দেশ থেকে মানুষ আসবে। তাদের নিকটে আহলেহাদীছ আন্দোলনের দাওয়াত পেশ করা এবং প্রতিবেশী ভাই-বোনদের মধ্যে বিশেষ করে যুবসমাজের মধ্যে দাওয়াত প্রসারের জন্য সাংগঠনিক নির্দেশনা অনুযায়ী আপনারা নিয়মিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করুন। সেই সাথে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে দাওয়াত প্রসারে আত্মনিয়োগ করুন।
সুধী সমাবেশ : অতঃপর বাদ আছর থেকে পূর্ব ঘোষিত সুধী সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। যেলা সভাপতি মুহাম্মাদ শামীম আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ‘আলেমদের মধ্যে মতভেদের স্বরূপ ও তা দূরীকরণের উপায়’ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন (নেট থেকে শুনুন)।
সুধী সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন।
কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা অতঃপর ফিরে আসা : পরদিন ৩১শে অক্টোবর শনিবার সকাল ৯-টার গ্রীনলাইন কোচ যোগে আমীরে জামা‘আত ও তাঁর সফরসঙ্গীগণ কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। উল্লেখ্য, ‘কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে’ যেলা ‘আন্দোলন’-এর উদ্যোগে যেলা সম্মেলনের সকল প্রস্ত্ততি সম্পন্নের পর স্থানীয় প্রশাসন বিনা কারণে মাত্র একদিন আগে সম্মেলনের অনুমতি বাতিল করে দেয়। ফলে দায়িত্বশীলদের সাথে মতবিনিময় এবং পূর্বেই বিমানের টিকেট কাটা থাকায় কক্সবাজার হয়ে ঢাকা ফেরার উদ্দেশ্যে আমীরে জামা‘আত কক্সবাজারের পথে রওয়ানা হন। দুঃখজনক যে, ৯০ কিলোমিটার পথ যাওয়ার পর বাধ সাধে কক্সবাজারের স্থানীয় প্রশাসন। কক্সবাজার প্রবেশ করলেই গ্রেফতার করা হবে এমন ন্যক্কারজনক হুমকি প্রদান করে প্রশাসনের কান্ডজ্ঞানহীন কর্তা ব্যক্তিরা। বাধ্য করা হয় মাঝপথ থেকে পুনরায় চট্টগ্রাম ফিরে আসতে। অতঃপর ভাড়া করা মাইক্রো যোগে বেলা আড়াইটার দিকে রওয়ানা হয়ে ভাঙ্গা রাস্তা মাড়িয়ে অত্যন্ত কষ্ট করে রাত ৮-টায় তারা চট্টগ্রাম পৌঁছেন। অতঃপর চট্টগ্রামে রাত্রি যাপন করে পরদিন সকাল ৯-টার বিমান যোগে আমীরে জামা‘আত ও তাঁর সাথীরা ঢাকায় পৌঁছেন।
টাঙ্গাইল যেলা সম্মেলনে যোগদান : চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আমীরে জামা‘আত ঢাকায় অধ্যাপক আশরাফুল ইসলামের বাসায় রাত্রি যাপন করেন। অতঃপর পরদিন ২রা নভেম্বর টাঙ্গাইল যেলা সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে ভোর ৬-টার ধূমকেতু ট্রেন যোগে তিনি টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সকাল সাড়ে ৮-টায় টাঙ্গাইল ষ্টেশনে পৌঁছলে সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ আল-মামূন ও অন্যান্য কর্মীগণ। ছাতিহাটীতে পৌঁছে তিনি জনাব ওছমান গণীর বাড়ীতে অবস্থান করেন। অতঃপর যেলার কালীহাতী থানাধীন ছাতিহাটী সম্মিলিত ঈদগাহ ময়দানে সকাল ১০-টা থেকে মাগরিব পর্যন্ত অনুষ্ঠিত যেলা সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে সমবেত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আসুন আমরা নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করি। সর্বব্যাপী জাহেলিয়াতের গাঢ় অন্ধকারে ছিরাতে মুস্তাক্বীমের পথে চলি। সমাজের উল্টা স্রোতকে সোজা পথে ফিরিয়ে আনার জন্য আসুন আমরা সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করি।
যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি জনাব মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াজেদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন, ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, ঢাকা মাদারটেক আহলেহাদীছ জামে মসজিদের খত্বীব মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল, ঢাকা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিন হাবীব, জামালপুর-দক্ষিণ যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক ক্বামারুযযামান বিন আব্দুল বারী, যেলা ‘আন্দোলন’-এর প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামূন, যেলা ‘যুবসংঘে’র সভাপতি আব্দুল মাজেদ, সহ-সভাপতি ছালাহুদ্দীন প্রমুখ। ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করেন ‘আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠী’র প্রধান মুহাম্মাদ শফীকুল ইসলাম ও মাদরাসা মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, যাত্রাবাড়ী, ঢাকার ছাত্র ইবরাহীম ও আব্দুর রহমান।
দায়িত্বশীল সভা : বাদ আছর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত যেলার দায়িত্বশীলগণের সাথে বৈঠকে মিলিত হন এবং যেলার সার্বিক দাওয়াতী ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হন। তিনি তাঁদেরকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। এ সময় যেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মজলিসে শূরা সদস্য জামালপুর-দক্ষিণ যেলা সভাপতি অধ্যাপক বযলুর রহমান।
উল্লেখ্য যে, বক্তব্য শুরুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে আমীরে জামা‘আত হঠাৎ নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে অসুস্থ বোধ করেন। অতঃপর কিছু সময় চুপ থাকেন ও পানি পান করেন। উপস্থিত সকলে তাঁর জন্য খাছ দো‘আ করতে থাকেন। ক্ষণিক পর স্বস্তিবোধ করলে তিনি ধীরে ধীরে বক্তব্য শুরু করেন। ফালিল্লা-হিল হাম্দ। সম্মেলন শেষে আমীরে জামা‘আত যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাবেক সহ-সভাপতি গত ২৪শে অক্টোবর ষ্ট্রোক করে আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণকরী ক্বারী আব্দুর রশীদের বাড়ীতে গমন করেন এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন ও তাদেরকে ধৈর্যধারণের উপদেশ দেন। ইতিপূর্বে তিনি তার কবর যেয়ারত করেন। মুহতারাম আমীরে জামা‘আত এখানে ১৯৯৭ সালে জামে মসজিদ নির্মাণ করে দেন। যা এখন দোতলা করা হয়েছে।
রাজশাহী প্রত্যাবর্তন : একটানা পাঁচ দিনের সাংগঠনিক সফর শেষে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত টাঙ্গাইল হ’তে সন্ধ্যা সাতটায় মাইক্রো যোগে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে রাত সাড়ে দশটায় নওদাপাড়া মারকাযে পৌঁছেন। ফালিল্লা-হিল হাম্দ।