অদৃশ্য করোনা ভাইরাসের ভয়ে
আতংকিত মানুষ দিগ্বিদিক জ্ঞানহারা হয়ে ছুটছে। সরকারী-বেসরকারী কোন হিসাবেই
কারো আস্থা নেই। সবাই অজানা আশংকায় বিষণ্ণ বদনে স্বেচ্ছা লকডাউনে বন্দী
জীবন যাপন করছেন। এরি মধ্যে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মাহে রামাযান আমাদের
নিকট সমাগত। এটা জগদ্বাসীর জন্য সুসংবাদ যে, সর্বত্র একটানা ছ’মাস দিন এসে
পড়েনি বা সূর্য মাথার উপর দু’মাইলের মধ্যে এসে পড়েনি। এখনো বাংলাদেশে
ষড়ঋতুর আসা-যাওয়া চলছে। এখনো মানুষ সহনীয় তাপমাত্রার মধ্যে বসবাস করছে।
সূর্যপৃষ্ঠের ২০০ কোটি ভাগের একভাগ তাপমাত্রা পৃথিবী আগের মতই পাচ্ছে। তার
চাইতে তাপমাত্রা একটু বাড়লে পুরা পৃথিবী জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যেত। তার চাইতে
তাপমাত্রা একটু কম হলে পুরা পৃথিবী ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে যেত। এখনো
পৃথিবীটা সূর্য থেকে নিরাপদ দূরত্বে ২৩.৫ ডিগ্রী কোণে হেলে আছে। ওটা এক
ডিগ্রী বেড়ে গেলে সব চোখের পলকে শেষ হয়ে যেত। মানুষ হৈ চৈ করারও সময় পেত
না। এখনো মৃদুমন্দ বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে। আকাশ থেকে বারি বর্ষণে যমীন সিক্ত
হচ্ছে। এখনো মাটি থেকে শস্য উৎপন্ন হচ্ছে। এখনো বৃক্ষকুল আমাদের জন্য
সারাদিন অক্সিজেন সরবরাহ করছে। যা না হলে এ ভূভাগে কোন প্রাণী এক মিনিটও
বেঁচে থাকতো না। ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে পাঁচটি স্তরে প্রায় সাড়ে এগারো শত
কি.মি. ব্যাপী বায়ু মন্ডল আজও আমাদের জন্য প্রটেকশন শীল্ড বা নিরাপত্তা
ব্যুহ হিসাবে কাজ করছে। যেখানে প্রতিদিন ঊর্ধ্বাকাশ থেকে সেকেন্ডে ৬ থেকে
৪০ মাইল বেগে গড়ে ২ কোটির মত উল্কাপাত হচ্ছে। যার কিছু অংশ পৃথিবীতে পৌছলে
পুরা প্রাণীজগত এক নিমেষে ধ্বংস হয়ে যেত। অথচ আমরা নিরাপদ আছি। কারণ বায়ু
মন্ডলে পৌছে জ্বলন্ত উল্কাগুলো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এখনো পৃথিবীতে
দিবারাত্রির আগমন-নির্গমন ঘটছে। রাতের পোষাকে আমরা ঘুমিয়ে যাচ্ছি। আবার
দিনের তাপ মাত্রায় জেগে উঠছি। এখনো সূর্য কিরণ চন্দ্রপৃষ্ঠে পতিত হয়ে তা
উত্তাপহীন মায়াময় জ্যোতিতে পরিণত হচ্ছে। যা পৃথিবীতে প্রতিফলিত হয়ে এখানকার
অধিবাসীকে পেলব পরশে পরম মমতায় লালন করছে। সাগরে-নদীতে জোয়ার-ভাটার কল্যাণ
প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এখনো ফসল ভরা মাঠ, পাখ-পাখালীভরা জঙ্গল, মাছ ভরা
সাগর ও পুকুর বান্দার সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। এখনো মৃত্যুর সাথে জন্মের
সিলসিলা জারি আছে। তবে কেন মানুষ করোনার ভয়ে অমানুষ হচ্ছে? মৃত্যুভয়ে
পালিয়ে তুমি যাবে কোথায়? যদি করোনায় তোমার মৃত্যু লেখা থাকে, তাহ’লে তাকে
ঠেকানোর ক্ষমতা কার আছে? প্রত্যেক ঔষধের গায়ে যেমন তার মেয়াদকাল লেখা থাকে,
প্রত্যেক প্রাণীর তেমনি আয়ুষ্কাল লেখা থাকে। তার আগে কেউ মরবে না। কে
কিভাবে কোথায় মরবে, সবই আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত। মরতে আমাদের হবেই, এটা
নিশ্চিত। অতঃপর তার কাছে ফিরে যেতে হবে, যিনি আমাদের সৃষ্টি করে দুনিয়ায়
পাঠিয়েছেন তাঁর দাসত্বের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। আমরা আল্লাহর দাসত্ব যথাযথ
ভাবে করছি কি-না সেটাই আমাদের জন্য মুখ্য বিষয়। করোনায় ধরবে কি ধরবে না,
সেটা মুখ্য বিষয় নয়। কেবল সামাজিক দূরত্ব মেনে চল। কেননা রাসূল (ছাঃ)
আমাদেরকে কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাকতে বলেছেন (বুখারী হা/৫৭০৭; মিশকাত হা/৪৫৭৭)। অতএব এখনি লকডাউন শিথিল করা আত্মঘাতি কাজ হবে।
সাময়িক মেয়াদে ওটা আল্লাহ পাঠিয়েছেন আমাদের সাবধান করার জন্য। যাতে আমরা শয়তানের দাসত্ব ছেড়ে আল্লাহর দাসত্বে ফিরে আসি। বাড়াবাড়ি বন্ধ করলে ওটাকে আল্লাহ উঠিয়ে নিবেন। যেকোন সময় তিনি তার কোন বিজ্ঞানী বান্দার হৃদয়ে চিকিৎসার ফর্মূলা ইলহাম করে দিবেন। ধীরে ধীরে বিশ্ব করোনা মুক্ত হয়ে যাবে। যেমন ইতিপূর্বেকার ভাইরাস সমূহ বিদায় হয়ে গেছে। এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। মূল কথা হ’ল মানুষ কি পাপ পরিত্যাগ করবে? মানুষ কি শয়তানের দাসত্ব ছাড়বে? মানুষ কি তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে মাথা নত করবে?
প্রতিবছর একবার করে রামাযান আসে মানুষের মুক্তির সওগাত নিয়ে। হিংসা-বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা-কৃপণতা, সীমাহীন লোভ-লালসা মানুষের সমাজকে হিংস্র পশুর সমাজে পরিণত করেছে। করোনা কান্ডে প্রতিদিন মানুষের চরম অমানবিকতার খবর শিরোনাম হচ্ছে। করোনা সন্দেহে নিজের পিতা-মাতাকে সন্তান ও প্রতিবেশীরা পরিত্যাগ করছে। আবার কেউ সর্বোচ্চ মানবিকতায় প্রশংসিত হচ্ছে। কেউ করোনা রোগীর সাথে দিনরাত কাটিয়ে তৃপ্তি পাচ্ছে এবং সে করোনামুক্ত থাকছে। তাহ’লে ফলাফল তো একটাই হচ্ছে যে, করোনা কাউকে মারে না। বরং করোনার যিনি প্রেরক, সেই আল্লাহর হুকুমেই সে তোমাকে ধরবে। আবার আল্লাহর নির্দেশ না পেলে সে তোমাকে সুস্থ ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে। অতএব করোনাকে নয়; বরং আল্লাহকে ভয় কর। সকল পাপ থেকে তওবা কর। আল্লাহকে খুশী করার চেষ্টা কর। আমাদের জীবনের সফরসূচী যদি আজই শেষ হয়ে যায়, তাহ’লে কাল থেকে শুরু হওয়া চিরস্থায়ী জীবনে যেন জান্নাতবাসী হই, সেই চেষ্টা কর। আর এটাই হল বিচক্ষণ মানুষের কাজ। যারা আল্লাহকে চেনে না, জাহান্নামের ভয়ে ভীত হয় না, জান্নাতের আকাংখা করে না, তারা কেবল করোনা কেন, একটা গিরগিটি দেখলেও ভয়ে মরে যাবে। আল্লাহর উপর ভরসাকারী ও তাক্বদীরে বিশ্বাসী মুমিন কোনকিছুতেই ভয় পায় না। সে যতক্ষণ বাঁচে বীরের মত বাঁচে। দু’হাতে কেবল নেকী সঞ্চয় করে। যাতে পাল্লাভর্তি নেকী নিয়ে সে খুশীমনে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারে। তার সর্বদা কেবল একটাই চিন্তা থাকে, পরকালে জাহান্নাম থেকে বাঁচা ও জান্নাত লাভ করা। যেদিন তার সাথে কেউ থাকবে না, কারু কোন সুফারিশ কাজে লাগবে না। কেবল বিশুদ্ধ আক্বীদা, বিশুদ্ধ আমল ও পরিপূর্ণ ইখলাছ ব্যতীত। সেজন্যেই তো রামাযানের প্রতি রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি আহবান জানানো হয়, হে কল্যাণের অভিযাত্রী, এগিয়ে চলো! হে অকল্যাণের অভিসারী, থেমে যাও! এমাসে বহু জাহান্নামী মুক্তিপ্রাপ্ত হবে আল্লাহর হুকুমে’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৯৬০)। রামাযানের এই কল্যাণ আহবানে সাড়া দেবার কেউ আছে কি? (স.স.)।