উক্ত তাকীদ এসেছে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের পক্ষ থেকে। সঠিক সময়ে সঠিক আহবান জানানোর মাধ্যমে ইতিমধ্যেই তিনি সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছেন। গত ১৮ই জুলাই ২০২০ শনিবারে তিনি তাঁর আহবানে বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়া অসমতার বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক করে বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বে ‘বিস্তর অসমতা’র বিষয়টি সামনে তুলে এনেছে। যা এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। যেকোন সময়ে বিপর্যয় ঘটাতে পারে। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস হচ্ছে একটি এক্স-রে। যার মাধ্যমে আমাদের গড়ে তোলা সমাজ ব্যবস্থার ভঙগুর কংকাল প্রকাশ পেয়েছে। আমরা সবাই এক নৌকায় আছি। অতএব সবার জন্য সমান সুযোগ, সবার মানবাধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে নতুন বৈশ্বিক চুক্তি ও নতুন সামাজিক তত্ত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে এই মহামারি মোকাবেলা করা আবশ্যক। তিনি বর্তমান অসমতার মূল কারণ উদঘাটন করে বলেন, ৭০ বছর আগে ক্ষমতার শীর্ষে উঠে আসা দেশগুলো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অথচ এই সংস্কার খুবই যরূরী’ (দৈনিক প্রথম আলো ২০শে জুলাই ২০২০, পৃ. ৭)

সেই সাথে যোগ হয়েছে নতুন খবর ‘দুর্নীতির অভিনবত্বে’ বিশ্বের সেরা এখন বাংলাদেশ। পৃথিবীর সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সোমালিয়া প্রসিদ্ধ। তাদের হাসপাতাল থেকে করোনার সুরক্ষা সামগ্রী চুরি হয়ে তা খোলাবাজারে পাওয়া যায় খুব সহজে। করোনা পরীক্ষার জন্য নিম্নমানের কীট কেনার দায়ে জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরখাস্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত সবদেশেই করোনা মহামারির আতংকের মধ্যেও লোভী মানুষের কুকীর্তির খবর মাঝে-মধ্যেই শিরোনাম হচ্ছে। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইম্সে শিরোনাম হয়েছে, ‘বিগ বিজনেস ইন বাংলাদেশ : সেলিং ফেক করোনা ভাইরাস সার্টিফিকেট’। অর্থাৎ ‘বাংলাদেশে বড় ব্যবসা : করোনা ভাইরাসের ভুয়া সনদ বিক্রি’। যেটা এযাবৎ কেউ কল্পনাও করেনি, সেটা করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ঐ ভুয়া সনদ বিক্রেতা হাসপাতাল বা-কায়েদা সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন নিয়ে কাজ করেছে। চুক্তি অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বয়ং এবং অন্যান্য সচিবগণের ছবি পত্রিকায় এসেছে। অথচ ইতিপূর্বে মন্ত্রী বা তার দফতর এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলেছিলেন। ছবি প্রকাশ পাওয়ার পর মন্ত্রী আস্ফালন করে বলেছেন, দৈনিক এরূপ অজস্র চুক্তিতে আমরা সই করি। কিন্তু পড়ে দেখি নাকি?’

দেশের দুর্ভাগ্য যে, শত শত অভিজ্ঞ ডাক্তার থাকতেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন অ-ডাক্তাররা। জানিনা মন্ত্রী নির্বাচন ও পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কতটুকু? ছয় হাযার ভুয়া সার্টিফিকেটদাতা হাসপাতালের তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর আরও কয়েকটি ভুয়া সনদদাতা হাসপাতালের খবর শিরোনাম হয়েছে। না জানি আরও কতটি আসবে। কিন্তু এইসব হাসপাতালের অনুমোদনদাতা স্বাস্থ্য অধিদফতর বা মন্ত্রণালয়ের কোন শাস্তি হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরখাস্ত হননি। বরং তার আস্ফালন বেড়েছে। মন্ত্রীরা বিদেশী কীট ও ভেণ্টিলেটর কেনায় উৎসাহী কেন? কারণ সবাই জানেন। অথচ দেশেই ‘গণস্বাস্থ্য’ কীট বানালো, কিন্তু সেটা গ্রহণ করা হলোনা। যদিও তাতে লাভ ছিল জনগণের। যারা অতি সুলভ মূল্যে এমনকি বিনামূল্যে সেগুলি পেত। ইউক্রেন ও কম্বোডিয়ার মত ছোট ছোট দেশগুলি তাদের সরকারী ক্রয় পণ্যের নাম, দাম, কেনাকাটার শর্ত এবং সরবরাহকারীদের তালিকা অনলাইনে প্রকাশ করে। আরও কয়েকটি দেশ তাদের অনুসরণে দুর্নীতি কমাতে সফল হয়েছে। বাংলাদেশের কি সে সাহস আছে?

ফিরে যাই জাতিসংঘ মহাসচিবের কথায়। যিনি সমস্যার গোড়ায় হাত দিয়েছেন। তিনি গোটা বিশ্বের শাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে বলেছেন। নইলে অতিসত্বর পুরা বিশ্ব ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। এমনকি পৃথিবী নামক গ্রহটিই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে অপরিণামদর্শী শাসকদের কারণে। বিশ্বের সেই শাসন ব্যবস্থা কেমন হবে, তার কোন রূপরেখা মহাসচিব দেননি। আর তা দেওয়াও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তবে বাস্তবতা উপলব্ধি করার জন্য তিনি অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। রাজতন্ত্র থেকে বেরিয়ে মানুষ গণতন্ত্রকে বেছে নিয়েছিল। যা এখন সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরতন্ত্রে রূপ নিয়েছে।

দুর্বলদের উপর সবলদের অত্যাচার পূর্বের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সর্বদা পুকুরচুরি হচ্ছে। যে কথা প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জাতীয় সংসদে বলেছেন, সেটিই চলছে গণতন্ত্রের মানসপুত্রদের মাধ্যমে। রিজেণ্ট-জিকেজি-সাহাবুদ্দীন, সাবরিনা-আরিফ প্রমুখ করোনার ভুয়া সনদ দাতা হাসপাতালের নায়করা কি সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট নয়? দ্বিদলীয় সরকার ও জোট দেশ চালাচ্ছেন স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৫০ বছর ধরে। এর মধ্যে ডজন খানেক রেলমন্ত্রী এলেন ও গেলেন। কিন্তু এখনও সারা দেশে রেলের প্রায় ৮ হাযার একর জমি উদ্ধার হয়নি কেন? কারা এগুলি দখলে রেখেছেন? ঢাকার নাভি বলে খ্যাত বুড়িগঙ্গা এখন বিষাক্ত পানির ভাগাড় কেন হ’ল? মাত্র ৬৩ মি.মি. সাধারণ বৃষ্টি বর্ষণে রাজধানী ঢাকা তলিয়ে যাচ্ছে কেন? বালু ও তুরাগ নদীর অববাহিকায় অপরূপ সৌন্দর্যের আধার আশুলিয়া ভরাট হয়ে গেল কেন? একই অবস্থা প্রায় প্রতিটি বিভাগীয় শহরের। যখন যারাই সরকারে এসেছে, এসব তো তাদেরই অপকর্ম। বন্যায় ছিন্নমূলদের উপর কিভাবে এনজিওদের কিস্তি আদায়ের যুলুম চলছে, গ্রামের শোষক দাদন ব্যবসায়ীদের ভয়ে মানুষ কিভাবে ভিটেছাড়া হচ্ছে, জনপ্রতিনিধিরা কি তা দেখতে পাননা? হেন কোন পাপকর্ম নেই, যা বুক ফুলিয়ে করছেনা শয়তানের দোসররা। তাহ’লে প্রশাসন কিজন্য? দুর্বল ও অসহায়রা তাহ’লে যাবে কোথায়? অথচ সর্বদা গণতন্ত্রের মধুবর্ষণ চলছে।

মূলতঃ গণতন্ত্রে বা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় যে মৌলিক গলদটি রয়েছে সেটি হ’ল তাদের নিকটে সত্য-মিথ্যার কোন মানদন্ড না থাকা এবং নিজেদেরকে কৈফিয়তের ঊর্ধ্বে মনে করা। জনগণের নিকট কৈফিয়ত বিষয়টি খুবই দূরতম। অস্ত্রশক্তির দম্ভে স্ফীত ব্যক্তিরাই এখন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মালিক। হেন অপকর্ম নেই, যা তারা করেন না। এথেকে বাঁচার একটাই মাত্র পথ আছে। আর তা হ’ল আল্লাহভীতি। দুনিয়ার বিনিময়ে আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয়ের লক্ষ্যে প্রতি পদক্ষেপে যারা আল্লাহর ভয়ে কাজ করেন, এমন মানুষ যখন কোন দেশে বা বিশ্বসংস্থায় ক্ষমতাসীন হবেন, তখনই কেবল বিশ্বে পরিবর্তন আসবে। সেই পথে ধাবিত হওয়াই সকলের কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন! (স.স.)

[সংশোধনী : গত সংখ্যার সম্পাদকীয়তে মুতার যুদ্ধে ২ লক্ষ ৪০ হাযার-এর স্থলে ‘দুই লক্ষাধিক’ এবং কয়েকশ’ পুলিশ-এর স্থলে ‘প্রায় অর্ধশতাধিক’ পুলিশ হবে (সম্পাদক)।]






বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
সত্যের সন্ধানী - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
গাযায় গণহত্যা ইহূদীবাদীদের পতনঘণ্টা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
থার্টি-ফার্স্ট নাইট - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
চেতনার সংকট - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সার্বভৌমত্ব দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
গ্রাহক ও এজেন্ট সংগ্রহের ফরম
পার্থক্যকারী মানদন্ড - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
১লা বৈশাখ ও নারীর বস্ত্রহরণ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বর্বর ইস্রাঈলী হামলা; ফিলিস্তীনের বিজয় আসন্ন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নারীর উপর সহিংসতা : কারণ ও প্রতিকার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভারত ভাগ হয়ে যাচ্ছে - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
কুরবানীর মাসায়েল - .
আরও
আরও
.